যুক্তরাজ্য
বাংলাদেশের ‘বিস্ময়কর’ প্রবৃদ্ধি ও ‘অপ্রকাশিত’ উন্নয়ন সফলতার গল্প রয়েছে: ব্রিটিশ প্রধান অর্থনীতিবিদ
পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ ও উন্নয়ন কার্যালয়ের (এফসিডিও) অর্থনীতি ও মূল্যায়ন অধিদপ্তরের প্রধান অর্থনীতিবিদ ও পরিচালক অধ্যাপক আদনান খান বলেছেন, তারা বাংলাদেশকে 'বিস্ময়কর' প্রবৃদ্ধির 'অপ্রকাশিত' উন্নয়নের সফলতার গল্প বলে মনে করেন, যা সারা বিশ্বে প্রায়ই বলা হয় না।
তিনি বলেন, ‘এটি একটি বড় অপ্রকাশিত উন্নয়নের সফলতার গল্প বলে মনে করেন। এটি একটি অলৌকিক গল্প। তবে এটি এমন একটি গল্প যা প্রায়শই সারা বিশ্বে বলা হয় না। আমি আমার কর্মজীবনে যেখানেই ছিলাম, সেখানেই আমি বিস্ময়কর প্রবৃদ্ধির গল্প বলেছি।’
বুধবার(১৩ সেপ্টেম্বর) ব্রিটিশ হাইকমিশনারের বাসভবনে ইউএনবিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
কর্মজীবনে উন্নয়ন অর্থনীতি, রাজনৈতিক অর্থনীতি, উদ্যোক্তা ও সরকারি খাতের সংস্কারের বোঝার দিকে মনোনিবেশ করেছেন অধ্যাপক আদনান। তিনি বলেছেন, তারা বাংলাদেশের অর্জনগুলোকে অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের জন্য একটি দুর্দান্ত উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেছেন।
তিনি বলেন, ‘অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশ বিস্ময়কর গল্পে পরিণত হয়েছে। এই ঘটনা কেবল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোতেও প্রতিফলিত হয়েছে, তা আমরা সবাই জানি। মানব উন্নয়ন ও শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা অন্যান্য মাত্রায় সহায়তা করে।’
প্রধান অর্থনীতিবিদ বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়া ও অধিকাংশ উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় বাংলাদেশ অনেক ভালো করেছে। যেমন- শিক্ষা, শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সুযোগ-সুবিধা।
আরও পড়ুন: দৃঢ় রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিসহ বাংলাদেশের উত্তরণ আনন্দের উপলক্ষ হবে: ওইসিডি
হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের সাবেক শিক্ষক এবং স্কুল অব পাবলিক পলিসির একাডেমিক সাবেক ডিরেক্টর অধ্যাপক আদনান বলেছেন, বড় সাফল্য ভবিষ্যতের সাফল্যের জন্য নিজস্ব চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসে।
তিনি বলেন,‘এটি কেবল চ্যালেঞ্জ নয়, বিশাল সুযোগ নিয়ে আসে। তাই, আরও অগ্রগতির জন্য, নতুন উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।’
আরও অগ্রগতির জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষা ও মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার ওপর জোর দেন অধ্যাপক আদনান।
তিনি বলেন, ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন হবে। শুধু শিক্ষিত জনগণ নয়, ভবিষ্যতের অগ্রগতির জন্য একটি লক্ষ্যযুক্ত সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি চিহ্নিত করা প্রয়োজন। কারা দারিদ্র্যের মধ্যে রয়েছে এবং কাদের কী ধরনের সহায়তা প্রয়োজন তা দক্ষতার সঙ্গে চিহ্নিত করতে হবে।
অর্থনীতিবিদ বলেছেন, ‘দক্ষতার সঙ্গে এ কাজ সম্পন্ন করা চ্যালেঞ্জের পরবর্তী ধাপ। একইভাবে, তৈরি পোশাকের গল্পটি আমরা সবাই জানি। মূল্য শৃঙ্খল বৃদ্ধির সঙ্গে আরও অগ্রগতি করার সম্ভাবনা রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সুতরাং, বাংলাদেশের যদি মালয়েশিয়া বা ভিয়েতনামে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তবে এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় আরও কিছু করতে হবে।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ সামরিক খাতের আধুনিকীকরণসহ উভয় দেশ একসঙ্গে অনেককিছু করতে পারে: মার্কিন কর্মকর্তা মিরা রেসনিক
অধ্যাপক আদনান বলেন, অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সংগ্রহ একটি বড় চ্যালেঞ্জ, যা মোকাবিলা করা প্রয়োজন। ‘সেই অর্থ সঠিক প্রকল্পে ব্যয় করার বিষয়েও চ্যালেঞ্জ থাকে, যাকে আমরা পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট বলি।’
অধ্যাপক আদনান বলেন, বিশ্বব্যাপী উন্নয়নশীল দেশগুলোর গড় কর ও জিডিপির অনুপাত জিডিপির ১০ থেকে ১৫ শতাংশ।
উন্নত দেশগুলোর গড় কর ও জিডিপি অনুপাত জিডিপির ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ।
বাংলাদেশে কর ও জিডিপির অনুপাত প্রায় ৭ দশমিক ৬ শতাংশ, যা মধ্যম আয়ের দেশগুলোর গড় ১০ দশমিক ৭ শতাংশের কম।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ যেহেতু উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ হতে যাচ্ছে, তাই উচ্চমানের সরকারি সেবা প্রদানের জন্য উচ্চ পর্যায়ের রাজস্বের প্রয়োজন হবে।
ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ বলেন, জনসেবা প্রদানে রাষ্ট্রের কার্যকারিতার মধ্যে কর ব্যবস্থার উন্নতির চাবিকাঠি রয়েছে।
তিনি বলেছেন, যে দেশগুলো অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সংগ্রহে ভালো করে, তাদের রাজস্ব ঘাটতি বা বাজেট ঘাটতির মুখোমুখি হতে হয় না। তাদের বাইরের সহায়তার উপরও নির্ভর করতে হয় না।
অর্থনীতিবিদ বলেছেন, ‘সুতরাং এটি সামষ্টিক অর্থনীতির ভারসাম্যের জন্য ভালো। উচ্চ মানের সরকারি বিনিয়োগ, রাস্তা, সেতু, অবকাঠামো, স্বাস্থ্য, শিক্ষার জন্যও এটি গুরুত্বপূর্ণ।’
বৈশ্বিক সংকটে বাংলাদেশ আক্রান্ত হলেও দেশটির এখনও বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন অধ্যাপক আদনান।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের জন্য এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়: মাইকেল কুগেলম্যান
তিনি বলেন, ‘সুতরাং বাইরের পরিস্থিতি আরও কঠিন। যাই হোক, আমার মতে, সুযোগগুলো ঝুঁকির চেয়ে অনেক বেশি।’
অর্থনীতিবিদ বলেন, সরকার চ্যালেঞ্জের প্রকৃতি উপলব্ধি করে এবং এটি খুবই উন্মুক্ত। ‘তারা জ্ঞান ভাগ করে নেওয়ার মাধ্যমে অন্যান্য দেশ থেকেও শিখতে আগ্রহী।’
উন্নয়ন সহযোগীদের ভূমিকা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির চাহিদাও পরিবর্তিত হচ্ছে, এজন্য জোর দেওয়া হচ্ছে।
অধ্যাপক আদনান বলেন, ‘যে দেশ এলডিসি থেকে উত্তরণ করছে, সে দেশ ভালো করেছে। এর জন্য প্রত্যক্ষ আর্থিক সহায়তা কম প্রয়োজন এবং নীতিগত ও প্রযুক্তিগত সহায়তার বেশি প্রয়োজন। কারণ সঠিক নীতি, সঠিক প্রতিষ্ঠান থাকলে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল বিশ্বের কয়েকটি দেশের মধ্যে একটি হবে, যা প্রচুর আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে পারে।’
তিনি চলতি সপ্তাহে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের সঙ্গে পঞ্চম কৌশলগত সংলাপে যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধি দলেও ছিলেন।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্য অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়ে একটি নতুন সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করার কথা ভাবছে।
তিনি অবশ্য এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি।
২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের রেকর্ড ভাঙা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য এবং ২০২২ সালে যুক্তরাজ্য থেকে সর্বোচ্চ ৫৬১ মিলিয়ন ডলারের বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগে (এফডিআই) সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।
এ ছাড়া ব্যবসা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রসারে নতুন প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা গড়ে তুলতে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্য।
আরও পড়ুন: যারা মিয়ানমারের পরিস্থিতি প্রত্যাবাসনের ‘উপযোগী নয়’ বলে দাবি করছে, তারা কখনোই রাখাইন যায়নি: চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও
অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে ঢাকা-লন্ডন সমঝোতা স্মারক সইয়ের পরিকল্পনা
বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্য অর্থনৈতিক সহযোগিতা বিষয়ে একটি নতুন সমঝোতা স্মারক সই করার কথা ভাবছে।
২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ৬ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের রেকর্ড-ব্রেকিং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য এবং ২০২২ সালে যুক্তরাজ্য থেকে সর্বোচ্চ ৫৬১ মিলিয়ন ডলারের সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগে (এফডিআই) সন্তোষ প্রকাশ করে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্য ব্যবসা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের প্রসারে নতুন প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা গড়ে তুলতে সম্মত হয়েছে।
১২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত পঞ্চম বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য কৌশলগত সংলাপে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও যুক্তরাজ্যের ফরেইন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসের (এফসিডিও) স্থায়ী আন্ডার সেক্রেটারি স্যার ফিলিপ বার্টনের নেতৃত্বে এই সংলাপে কমনওয়েলথভুক্ত দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা, অভিবাসন ও গতিশীলতা, জলবায়ু ও উন্নয়ন অংশীদারিত্বসহ ঐতিহাসিক সম্পর্কের সার্বিক দিক পর্যালোচনা করা হয়।
স্যার বার্টন গত এক দশকে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি ও স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রশংসা করেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য হিসেবে যুক্তরাজ্যের অব্যাহত বাজার প্রবেশাধিকার সহায়তার প্রশংসা করেন। ২০২৬ সালে বাংলাদেশের নির্ধারিত স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণের পর ২০২৯ সাল পর্যন্ত এবং পরেও এর মেয়াদ বাড়ানোর আহ্বান জানান।
উভয় পক্ষ সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে সহযোগিতার জন্য একটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের বিষয়েও সম্মত হয়েছে।
আরও পড়ুন: ঢাকা-প্যারিস দুটি সমঝোতা স্মারক সই
১৯৭১ সাল থেকে তাদের দীর্ঘদিনের মূল্য-ভিত্তিক সম্পর্ক এবং ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক লন্ডন সফরের কথা স্মরণ করেন তারা।
আন্ডার সেক্রেটারি স্যার বার্টন যুক্তরাজ্যের প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাষ্ট্রীয় শেষকৃত্য এবং রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলার ঐতিহাসিক রাজকীয় রাজ্যাভিষেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অংশগ্রহণের জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আশা প্রকাশ করা হয়, রাজা তৃতীয় চার্লস তার স্থগিত হওয়া বাংলাদেশ সফর যত দ্রুত সম্ভব পুনঃনির্ধারণ করবেন।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্য অভিবাসন ও গতিশীলতা সহযোগিতা বৃদ্ধি, বিশেষ করে নার্সিং, আতিথেয়তা, কৃষি, নির্মাণ ও রাজমিস্ত্রি এবং অন্যান্য সেবা খাতে লাভজনক কর্মসংস্থানের বিষয়ে সম্মত হয়েছে।
অভিবাসন, গতিশীলতা ও যোগ্যতার পারস্পরিক স্বীকৃতি নিয়ে আলোচনার জন্য উভয় পক্ষ একটি 'জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ' গঠনে সম্মত হয়েছে।
তারা যুক্তরাজ্যে অনিয়মিত পরিস্থিতিতে থাকা বাংলাদেশি নাগরিকদের প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে একটি এসওপি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর) সই করতে সম্মত হন।
বাংলাদেশ ২০২২ সালে শিক্ষা, ভ্রমণ ও ব্যবসা ভিসা প্রদান উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় যুক্তরাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছে।
উভয় পক্ষ ফৌজদারি বিষয়ে পারস্পরিক আইনি সহায়তা নিয়েও আলোচনা করেছে।
আরও পড়ুন: হাসিনা-মোদি আলোচনার পর ঢাকা-নয়াদিল্লি ৩ সমঝোতা স্মারক সই
চলতি বছরের মার্চে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে স্বাক্ষরিত জলবায়ু চুক্তির কথা স্মরণ করে উভয় পক্ষ দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় জলবায়ু কার্যক্রমে সহযোগিতার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে।
তারা জলবায়ু চুক্তির আওতায় একটি গ্রিনহাউজ গ্যাস শূন্যে নামিয়ে আনা এবং প্রকৃতিবান্ধব বিশ্ব গড়ার লক্ষ্যে জলবায়ু চুক্তির অধীনে সময়সীমা কার্যক্রমের সঙ্গে একটি যৌথ কর্মপরিকল্পনা সই করতে সম্মত হন।
একটি ন্যায়সঙ্গত, শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ বিনির্মাণে এসডিজি-১৬ এর আওতায় এর জাতীয় লক্ষ্য অর্জনে অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব সন্ত্রাস, সহিংস চরমপন্থা ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের 'জিরো টলারেন্স' নীতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
ভারত মহাসাগরে সামুদ্রিক ও বিমান নিরাপত্তা ও সুরক্ষাসহ পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যুতে সহযোগিতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে।
যুক্তরাজ্য জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের আওতায় বিশ্ব শান্তিতে বাংলাদেশের, বিশেষ করে নারী শান্তিরক্ষীদের সর্বোচ্চ অবদানের প্রশংসা করে।
দুই দেশ ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম প্রতিরক্ষা সংলাপে সন্তোষ প্রকাশ করে এবং লন্ডনে দ্বিতীয় সংলাপে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই করতে সম্মত হয়।
যুক্তরাজ্য মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের উদার আশ্রয়ের প্রশংসা করেছে এবং বাংলাদেশ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ও কমনওয়েলথসহ রোহিঙ্গা সংকটে যুক্তরাজ্যের মানবিক ও রাজনৈতিক সহায়তার প্রশংসা করেছে।
উভয় পক্ষই দীর্ঘায়িত রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসনে নিবিড়ভাবে কাজ করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে।
রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতার বিষয়ে আন্তর্জাতিক জবাবদিহির ওপর গুরুত্বারোপ করে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে (আইসিজে) রোহিঙ্গাদের বিচারের মামলায় যোগ দেওয়ায় যুক্তরাজ্যকে ধন্যবাদ জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব।
যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের সম্প্রতি ঘোষিত 'ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক'কে স্বাগত জানিয়েছে।
অভিন্ন সমৃদ্ধির জন্য একটি অবাধ, উন্মুক্ত, শান্তিপূর্ণ, সুরক্ষিত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ইন্দো-প্যাসিফিক নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উভয় পক্ষ নতুন অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে সম্মত হয়েছে।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্য জাতিসংঘ, কমনওয়েলথ, আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক সংস্থা (আইএমও) ও ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশনসহ (আইওআরএ) বিভিন্ন আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীয় খাতে সহযোগিতা জোরদারে সম্মত হয়েছে।
যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক নিজ নিজ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দুই দেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগ দেন।
কৌশলগত সংলাপের পরবর্তী অধিবেশন ২০২৪ সালে লন্ডনে অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: যুক্তরাজ্য ও জার্মানির পর বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম বাজার হবে বাংলাদেশ: কমনওয়েলথ বিনিয়োগকারীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী
যুক্তরাজ্য ও জার্মানির পর বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম বাজার হবে বাংলাদেশ: কমনওয়েলথ বিনিয়োগকারীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী
কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর বিনিয়োগকারীদের আরও বড় পরিসরে বাংলাদেশে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশ ৩ বিলিয়ন মানুষের বাজারের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত। আমাদের নিজস্ব ১৭০ মিলিয়ন মানুষ আছে। ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের বিত্তশালী জনসংখ্যা দাঁড়াবে ৩৫ মিলিয়নে। ফলে জার্মানি ও যুক্তরাজ্যকে পেছনে ফেলে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম বাজারে পরিণত হবে বাংলাদেশ।’
বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দুই দিনব্যাপী 'কমনওয়েলথ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফোরাম বাংলাদেশ-২০২৩' এ প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন।
কমনওয়েলথ স্বীকৃত ব্যবসায়িক নেটওয়ার্ক কমনওয়েলথ এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কাউন্সিল, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং অসহায় মানুষদের সহায়তা প্রদানকারী পরিবার পরিচালিত ফাউন্ডেশন জেডআই ফাউন্ডেশন যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
এর লক্ষ্য হচ্ছে উদ্ভাবন, বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশের টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়নের উপায় অনুসন্ধান করা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জনের জন্য উন্নয়ন অংশীদার প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর মধ্যে আলোচনা চলছে
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে আমাদের আরও উচ্চমানের এবং টেকসই বিনিয়োগ প্রয়োজন।’
তিনি উল্লেখ করেন, বিনিয়োগ উন্নয়নের পূর্বশর্ত হিসেবে তার সরকার সাংগঠনিক সংস্কার, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) গঠনকে অগ্রাধিকার দিয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয় সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে এবং বিনিয়োগ পরবর্তী সেবা নিশ্চিত করে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য প্রায় সব খাত উন্মুক্ত রয়েছে।
তবে এর মধ্যে কৃষিপণ্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, চিকিৎসা সরঞ্জাম, অটোমোবাইল ও জাহাজ নির্মাণ এবং আইসিটি খাতে আরও বিনিয়োগ উৎসাহিত করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আপনার নিজ দেশে লভ্যাংশ বা বেনিফিট ফিরিয়ে নেওয়ার সহজ প্রক্রিয়াসহ এই সেক্টরগুলোতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বিনিয়োগ সুবিধা রয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের প্রায় ৭০ শতাংশ আসে পুনঃবিনিয়োগ থেকে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশের চমৎকার বিনিয়োগ পরিবেশের একটি প্রমাণ।
তিনি উল্লেখ করেন, সরকারের বিভিন্ন বিভাগের সেবা নিয়ে বিনিয়োগকারীদের সুবিধার্থে বিডা ওয়ান স্টপ ফাস্ট ট্র্যাক ডেলিভারি সেবা চালু করেছে এবং এই সেবার মাধ্যমে ২৬টি বিভাগের ৭৮টি সেবা এক প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে গ্রহণ করা যাবে।
বিনিয়োগের পূর্বশর্ত অবকাঠামো উন্নয়ন উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করতে আকর্ষণীয় প্রণোদনা প্যাকেজসহ সরকার সারা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল, ১০৯টি হাই-টেক ও সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক এবং আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করেছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের সার্বভৌম নীতির স্বাধীনতাকে সম্মান করে ফ্রান্স: প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর সঙ্গে আলোচনার পর প্রধানমন্ত্রী
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের স্থল, রেল ও বিমান যোগাযোগের উন্নয়ন করছি। দেশের প্রায় সব মহাসড়কই ৪ বা ততোধিক লেনে উন্নীত করা হয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলাকে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অংশের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত করেছে।
তিনি বলেন, ‘শিগগিরই ঢাকা ও খুলনার মধ্যে পদ্মা সেতুর মাধ্যমে রেল যোগাযোগ শুরু হবে।’
তিনি আরও বলেন, শিগগিরই সরকার কর্ণফুলী আন্ডারওয়াটার টানেল উদ্বোধন করবে, যা শুধু বাংলাদেশে নয়, দক্ষিণ এশিয়ায় এ ধরনের প্রথম অবকাঠামো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সঙ্গে চট্টগ্রামের রেল যোগাযোগ স্থাপনের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে এবং ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর সরকার স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচির ভিত্তিতে দেশ গড়তে শুরু করে।
তিনি বলেন, ‘একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সরকারের ধারাবাহিকতা এবং সর্বোপরি কাঠামোগত উন্নয়ন কর্মসূচি বাংলাদেশের দ্রুত আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সহায়তা করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করে যাচ্ছে, যা বাস্তবায়িত হবে স্মার্ট সরকার, স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট অর্থনীতি এবং স্মার্ট সোসাইটির স্তম্ভ নির্মাণের মাধ্যমে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে জ্ঞানভিত্তিক ও উন্নত স্মার্ট দেশ এবং ২১০০ সালের মধ্যে একটি সমৃদ্ধ বদ্বীপে পরিণত হওয়া।’
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া, সিডব্লিউইআইসির কৌশলগত উপদেষ্টা জিল্লুর হোসেন এবং কমনওয়েলথ এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কাউন্সিলের (সিডব্লিউইআইসি) চেয়ারম্যান লর্ড মারল্যান্ড অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কমনওয়েলথ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রিন ইনভেস্টমেন্ট অ্যাওয়ার্ড উগান্ডার ইকো ব্রিক্সের হাতে তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শিত হয়।
আরও পড়ুন: আপনার অর্জন খুবই আকর্ষনীয়: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে বাইডেন
বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, সহিংসতামুক্ত নির্বাচন চায় যুক্তরাজ্য: পররাষ্ট্র সচিব
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশে একটি ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও সহিংসতামুক্ত’ নির্বাচন দেখার আশা প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্য।
ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দুই দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত পঞ্চম কৌশলগত সংলাপের সময় যুক্তরাজ্যের পক্ষ বাংলাদেশের সঙ্গে নির্বাচন ইস্যু নিয়ে আলোচনা করে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘যেহেতু তারা আমাদের পুরনো বন্ধু এবং উন্নয়ন সহযোগী, তাই আমাদের নির্বাচনে তাদের আগ্রহ রয়েছে। আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছি (সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য)। আমরা ইতিবাচক আলোচনা করেছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘অংশগ্রহণমূলক’ শব্দের অনেক অর্থ হতে পারে।
সব মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগ এক ধরনের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। তিনি বলেন, কোন দল কী ভাবছে তা তারা জানে না।
মাসুদ মোমেন বলেন, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আমাদের কোনো দ্বিমত নেই।
আরও পড়ুন: দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং অবকাঠামোতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা অন্বেষণে আগ্রহ পুনর্ব্যক্ত বাংলাদেশ-ফ্রান্সের
গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে আলোচনায় যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে উৎসাহিত করেছে যাতে বাংলাদেশের জনগণ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারে।
যুক্তরাজ্য মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতাকে সম্মান করার প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দিয়েছে।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বাংলাদেশও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের স্বাগত জানাচ্ছে যা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, অনিয়মিত হয়ে পড়া বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনার উপায় খুঁজতে দুই দেশ স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) সই করতে সম্মত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আরও বেশি শিক্ষার্থী ও শ্রমিক যুক্তরাজ্যে যাচ্ছে বলে একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপও গঠন করা হবে।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, সংলাপে জলবায়ু পরিবর্তন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, গতিশীলতা ও অভিবাসন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, শাসন, মানবাধিকার, ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল, সাইবার নিরাপত্তা এবং মানবাধিকারের মতো বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন,‘আমরা এই ইস্যুতে আমাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছি,’তারা রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়েও আলোচনা করেছেন।
উভয় পক্ষ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং সাইবার নিরাপত্তা আইন কীভাবে এগিয়ে চলেছে তা নিয়েও আলোচনা করেন।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসের স্থায়ী আন্ডার সেক্রেটারি স্যার ফিলিপ বার্টন এই সংলাপের সহ-সভাপতিত্ব করেন। যা একটি আধুনিক অর্থনৈতিক, বাণিজ্য ও নিরাপত্তা অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার জন্য দুই দেশের যৌথ অঙ্গীকার প্রতিফলিত করে।
সংলাপে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক, অর্থনৈতিক, বাণিজ্য ও উন্নয়ন অংশীদারিত্ব এবং রোহিঙ্গা সঙ্কটসহ বৈশ্বিক, আঞ্চলিক ও নিরাপত্তা বিষয়ক আলোচনা হয়।
এটি দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতা, কপ২৮-এ সহযোগিতা এবং জলবায়ু অর্থায়ন, জলবায়ু প্রভাবগুলোর অভিযোজন এবং সহনশীলতার উপর যৌথ কাজ এবং যুক্তরাজ্যের উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিনিয়োগের প্রস্তাব প্রদর্শনের সুযোগ প্রদান করেছে।
চতুর্থ বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য কৌশলগত সংলাপ ২০২১ সালে লন্ডনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
সর্বশেষ কৌশলগত সংলাপের সময় যুক্তরাজ্য ২০২৯ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের বাজারে শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার প্রদানের মাধ্যমে একটি মসৃণ এবং সফল এলডিসি অর্জন এবং রপ্তানি-নেতৃত্বাধীন বৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশকে সমর্থন করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে।
যুক্তরাজ্য ডব্লিউটিওর কার্যকারিতা উন্নত করে এবং বৈশ্বিক বাণিজ্য বিধি আধুনিকীকরণের মাধ্যমে অবাধ ও সুষ্ঠু বাণিজ্য সরবরাহের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা সংকটের দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের জন্য চাপ অব্যাহত রাখছে যুক্তরাজ্য
যুক্তরাজ্যের ল্যান্ডমার্ক ডেভেলপিং কান্ট্রিস ট্রেডিং স্কিম (ডিসিটিএস) এই বছরের জুন থেকে কার্যকর হয়েছে যা বাংলাদেশ সহ ৬৫টি উন্নয়নশীল দেশ থেকে যুক্তরাজ্যে প্রবেশকারী পণ্যের উপর শুল্ক হ্রাস করে এবং ট্রেডিং নিয়মগুলোকে সহজ করে।
যুক্তরাজ্য সরকার বলেছে, ডিসিটিএস বাণিজ্য ও চাকরি বৃদ্ধি এবং টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। এই নতুন স্কিমটি বাংলাদেশের সঙ্গে একটি আধুনিক এবং পারস্পরিকভাবে উপকারী অংশীদারিত্বের প্রতি যুক্তরাজ্যের প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এখন পর্যন্ত তারা জানে যে তিনি সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছেন।
আরও পড়ুন: আপনার অর্জন খুবই আকর্ষনীয়: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে বাইডেন
রোহিঙ্গা সংকটের দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের জন্য চাপ অব্যাহত রাখছে যুক্তরাজ্য
যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসের (এফসিডিও) পার্মানেন্ট আন্ডার সেক্রেটারি স্যার ফিলিপ বার্টন কক্সবাজার ও ভাসানচরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তার জন্য নতুন করে আরও ৩০ লাখ পাউন্ড (প্রায় ৪২ কোটি টাকা) সহায়তা ঘোষণা করেছেন।
যুক্তরাজ্য সরকারের এই নতুন সহায়তা জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারের (ইউএনএইচসিআর) মাধ্যমে দেওয়া হবে।
স্যার ফিলিপ বার্টন পঞ্চম যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশ কৌশলগত সংলাপে অংশগ্রহণের জন্য বর্তমানে বাংলাদেশ সফর করছেন।
যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে দুই দেশের মধ্যে একটি আধুনিক অর্থনৈতিক, বাণিজ্য ও নিরাপত্তা অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার যে অঙ্গীকার, এই কৌশলগত সংলাপ তাকেই প্রতিফলিত করে।
যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসের (এফসিডিও) পার্মানেন্ট আন্ডার সেক্রেটারি স্যার ফিলিপ বার্টন বলেন, ‘আমি ইউএনএইচসিআর-এর মাধ্যমে যুক্তরাজ্য সরকারের আরও তিন লাখ পাউন্ড সহায়তা ঘোষণা করতে পেরে আনন্দিত।’
আরও পড়ুন: যুক্তরাজ্যের পার্মানেন্ট আন্ডার সেক্রেটারি পঞ্চম কৌশলগত সংলাপে যোগ দিতে সোমবার ঢাকা আসছেন
তিনি বলেন, ‘নতুন এই সহায়তা কক্সবাজার ও ভাসানচরে বসবাসরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্বাস্থ্যসেবা, বিশুদ্ধ পানি, স্বাস্থ্যবিধি ও স্যানিটেশন পরিষেবা এবং রান্না করার জন্য জ্বালানি নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের উপর নৃশংসতার পর তারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। এর পর ছয় বছর অতিবাহিত হয়েছে। যুক্তরাজ্য রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী, বাংলাদেশ ও এই সংকটদ্বারা আক্রান্ত সকলের পাশে আছে।’
পার্মানেন্ট আন্ডার সেক্রেটারি বলেন, আমরা দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের জন্য চাপ অব্যাহত রাখছি। যাতে করে শরণার্থীরা নিরাপদে, স্বেচ্ছায় ও মর্যাদার সঙ্গে মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারে; যখন সেখানকার অবস্থা তাদের জন্য অনুকূলে থাকে। যতদিন তা না হয়, যুক্তরাজ্য রোহিঙ্গা শরণার্থী ও বাংলাদেশের স্থানীয় সম্প্রদায়কে সহায়তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সাল থেকে যুক্তরাজ্য রোহিঙ্গা ও স্থানীয় সম্প্রদায়কে সহায়তা করার জন্য ৩৬৫ মিলিয়ন পাউন্ড (৫ হাজার কোটি টাকার বেশি) অর্থ প্রদান করেছে।
এর মধ্যে রয়েছে খাদ্য, আশ্রয়, নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন, স্বাস্থাসেবা ও সুরক্ষা পরিষেবা।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য ৫ম কৌশলগত সংলাপ মঙ্গলবার
জাতিসংঘের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল বাংলাদেশ সফরে আসছেন ৯ সেপ্টেম্বর
বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য ৫ম কৌশলগত সংলাপ মঙ্গলবার
আধুনিক অর্থনৈতিক, বাণিজ্য ও নিরাপত্তা অংশীদারিত্ব বিকাশে দুই দেশের যৌথ অঙ্গীকার প্রতিফলিত করে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্য মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় পঞ্চম কৌশলগত সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসের পার্মানেন্ট আন্ডার সেক্রেটারি স্যার ফিলিপ বার্টন এই সংলাপে সহ-সভাপতিত্ব করবেন। সোমবার ঢাকায় আসেন ফিলিপ বার্টন।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের (উত্তর আমেরিকা) অনুবিভাগের মহাপরিচালক খন্দকার মাসুদুল আলম।
পার্মানেন্ট আন্ডার সেক্রেটারি হলো এফসিডিও-এর সবচেয়ে সিনিয়র বেসামরিক কর্মকর্তা ও কূটনীতিক। পার্মানেন্ট আন্ডার সেক্রেটারি হিসেবে এটাই তার প্রথম বাংলাদেশ সফর।
তিনি ২০০৮ সালে এফসিও’র ডিরেক্টর, সাউথ এশিয়া পদে থাকাকালীন বাংলাদেশ সফর করেছিলেন।
যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে দুই দেশের মধ্যে একটি আধুনিক অর্থনৈতিক, বাণিজ্য ও নিরাপত্তা অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার যে অঙ্গীকার, এই কৌশলগত সংলাপ তাকেই প্রতিফলিত করে।
যুক্তরাজ্য সরকারের মতে, এই সংলাপে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক; অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও উন্নয়নমূলক অংশীদারিত্ব; এবং রোহিঙ্গা সংকটসহ অন্যান্য আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয় আলোচনা করা হবে।
আরও পড়ুন: যুক্তরাজ্যের পার্মানেন্ট আন্ডার সেক্রেটারি পঞ্চম কৌশলগত সংলাপে যোগ দিতে সোমবার ঢাকা আসছেন
সেই সাথে এই সংলাপ দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং কপ২৮ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় সহায়তা বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করবে। এবং যুক্তরাজ্যের শক্তিশালী অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিনিয়োগ প্রস্তাব তুলে ধরবে।
ঢাকায় থাকাকালীন পার্মানেন্ট আন্ডার সেক্রেটারি রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজের সংগঠন, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ও যুব প্রতিনিধিদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন।
চতুর্থ বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য কৌশলগত সংলাপ ২০২১ সালে লন্ডনে অনুষ্ঠিত হয়।
সর্বশেষ কৌশলগত সংলাপের সময় যুক্তরাজ্য ২০২৯ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের বাজারে শুল্ক-মুক্ত, কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার প্রদানের মাধ্যমে একটি মসৃণ ও সফল স্নাতক অর্জন এবং রপ্তানি- বৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশকে সমর্থন করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে।
যুক্তরাজ্য ডব্লিউটিওর কার্যকারিতা উন্নত করে এবং বৈশ্বিক বাণিজ্য বিধি আধুনিকীকরণের মাধ্যমে অবাধ ও সুষ্ঠু বাণিজ্য সরবরাহের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
যুক্তরাজ্যের ল্যান্ডমার্ক ডেভেলপিং কান্ট্রিস ট্রেডিং স্কিম (ডিসিটিএস) এই বছরের জুন থেকে কার্যকর হয়েছে। যা বাংলাদেশসহ ৬৫টি উন্নয়নশীল দেশ থেকে যুক্তরাজ্যে প্রবেশকারী পণ্যের উপর শুল্ক হ্রাস করে এবং ট্রেডিং নিয়মগুলোকে সহজ করে।
ডিসিটিএস বাণিজ্য বৃদ্ধি, চাকরি বৃদ্ধি এবং টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
যুক্তরাজ্য সরকার বলেছে, এই নতুন স্কিমটি বাংলাদেশের সঙ্গে একটি আধুনিক এবং পারস্পরিকভাবে উপকারী অংশীদারিত্বের প্রতি যুক্তরাজ্যের প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।
আরও পড়ুন: সম্ভাব্য সব ক্ষেত্রে ঢাকার সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াবে রিয়াদ: সৌদি ক্রাউন প্রিন্স
বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে চান বাইডেন: মোমেন
যুক্তরাজ্যের পার্মানেন্ট আন্ডার সেক্রেটারি পঞ্চম কৌশলগত সংলাপে যোগ দিতে সোমবার ঢাকা আসছেন
যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসের পার্মানেন্ট আন্ডার সেক্রেটারি স্যার ফিলিপ বার্টন দুই দিনের সফরে সোমবার (১০ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় আসছেন।
পার্মানেন্ট আন্ডার সেক্রেটারি হলো এফসিডিও-এর সবচেয়ে সিনিয়র বেসামরিক কর্মকর্তা ও কূটনীতিক।
পার্মানেন্ট আন্ডার সেক্রেটারি হিসেবে স্যার ফিলিপের এটাই প্রথম বাংলাদেশ সফর।
তিনি ২০০৮ সালে এফসিও’র ডিরেক্টর, সাউথ এশিয়া পদে থাকাকালীন বাংলাদেশ সফর করেছিলেন।
এই সফরে স্যার ফিলিপের প্রধান লক্ষ্য হবে পঞ্চম যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশ কৌশলগত সংলাপ, যাতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সভাপতিত্ব করবেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য কৌশলগত সংলাপ আগামী মাসে
আগামী ১২ সেপ্টেম্বর দুই দেশের মধ্যে কৌশলগত সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে।
যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে দুই দেশের মধ্যে একটি আধুনিক অর্থনৈতিক, বাণিজ্য ও নিরাপত্তা অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার যে অঙ্গীকারের লক্ষ্যেই এই কৌশলগত সংলাপ।
যুক্তরাজ্য সরকারের মতে, এই সংলাপে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক; অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও উন্নয়নমূলক অংশীদারিত্ব এবং রোহিঙ্গা সংকটসহ অন্যান্য আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয় আলোচনা করা হবে।
সেই সঙ্গে এই সংলাপ দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং কপ২৮ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় সহায়তা বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করবে। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যের শক্তিশালী অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিনিয়োগ প্রস্তাব তুলে ধরবে।
ঢাকায় থাকাকালীন পার্মানেন্ট আন্ডার সেক্রেটারি রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজের সংগঠন, ব্যবসায়ী নেতা ও যুব প্রতিনিধিদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহী যুক্তরাজ্য: প্রধানমন্ত্রীকে সারাহ কুক
বাংলাদেশে ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে রয়েছে যুক্তরাজ্য: সারাহ কুক
নতুন ডিসিটিএস স্কিম যুক্তরাজ্যের সঙ্গে শক্তিশালী বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অংশীদারিত্ব তৈরি করতে পারে: বিজিএমইএ সভাপতি
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বলেছেন, নতুন ‘উন্নয়নশীল দেশগুলোর ট্রেডিং স্কিম (ডিসিটিএস)’ বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশের একীভূতকরণে অবদান রাখবে এবং যুক্তরাজ্যের সঙ্গে শক্তিশালী বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অংশীদারিত্ব তৈরি করবে।
তিনি বলেন, বিজিএমইএ পোশাক কূটনীতি উদ্যোগের অধীনে বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে ক্রমাগত কাজ করছে।
তিনি বিজিএমইএ সদস্যদের একটি চিঠিতে বলেছেন, তিনি ডিসিটিএস প্রকল্প স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে একটি শক্তিশালী পরামর্শ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছেন।
যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম রপ্তানি বাজার।
ফারুক হাসান বলেন, যুক্তরাজ্য ছাড়াও তারা কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার বাজারে ইতিবাচক ফলাফল অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন।
তিনি বলেন, আমরা গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে যুক্তরাজ্যে ৫ দশমিক ০২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পোশাক রপ্তানি করেছি। ২০২১-২২ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার; অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় ১১ দশমিক ৭৮ শতাংশ বেড়েছে।
আরও পড়ুন: মিরপুরে বিজিএমইএ হাসপাতালের দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন
তিনি আরও বলেন, ২০২৩ সালের জানুয়ারি-জুলাই সময়কালে যুক্তরাজ্যে আমাদের তৈরি পোশাক রপ্তানি ৩ দশমিক ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। যা ২০২২ সালের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ২ দশমিক ৭২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় ১৪ দশমিক ১১ শতাংশ বেড়েছে।
বিজিএমইএ প্রধান বলেন, আমরা আমাদের বাণিজ্যের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক সমস্ত সমস্যা সমাধান করেছি এবং সেগুলি ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করার জন্য আমরা ব্রিটিশ সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ।
যুক্তরাজ্য সরকার সম্প্রতি ‘উন্নয়নশীল দেশগুলোর ট্রেডিং স্কিম (ডিসিটিএস)’ নামে একটি নতুন ট্যারিফ স্কিম চালু করেছে।
এই স্কিমটি ইউরোপিয় ইউনিয়নের জিএসপি স্কিমের জায়গায় নিয়েছে। এর অধীনে বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পায়।
নতুন স্কিম অনুযায়ী বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর তৈরি পোশাকগুলো যুক্তরাজ্যে রপ্তানি করার সময় যুক্তরাজ্যের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাচ্ছে।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ডিসিটিএস আমদানি করা কাঁচামাল ব্যবহার করে শুল্কমুক্ত বাজারে প্রবেশাধিকার সহজ করবে।
ডিসিটিএস ইউরোপীয় ইউনিয়নের জিএসপি প্লাস স্কিমের অনুরূপ। ২০২৪-৩৪ সালের জন্য ইইউ'র খসড়া জিএসপি প্রস্তাবে বাংলাদেশের পোশাক পণ্যগুলো টেক্সটাইল সুরক্ষা ব্যবস্থার সম্মুখীন হতে পারে। কিন্তু যুক্তরাজ্যের ডিসিটিএসে এ ধরনের টেক্সটাইল সুরক্ষা বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
তিনি বলেন, বিজিএমইএ এও বাংলাদেশ সরকার ইউরোপীয় কমিশনের সঙ্গে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছে।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, এমনকি অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল দেশগুলোর জন্য কিছু আন্তর্জাতিক কনভেনশন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ডিসিটিএস আরও নমনীয় বলে মনে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, যাইহোক আমরা সামাজিক ও পরিবেশগত মান অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং আরও এগিয়ে যেতে চাই।
তিনি বলেন, যেহেতু আমরা আমাদের শিল্পকে নিরাপদ এবং টেকসই করার জন্য প্রচুর পরিমাণে বিনিয়োগ করছি ওকরছি। আমরা ব্রিটিশ পোশাকের ব্র্যান্ড ও খুচরা বিক্রেতাদের মধ্যে একটি ক্রমবর্ধমান প্রতিশ্রুতি ও আগ্রহ দেখতে পাচ্ছি।
যুক্তরাজ্যের বাজার নিয়ে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে সম্ভাব্য সব ধরনের প্রচেষ্টা চালানোর জন্য সবাইকে উৎসাহিত করেন বিজিএমইএ সভাপতি।
বিশেষত বাসার বাইরে পরার পোশাক, প্রথাগত পোশাক (ফরমাল) ও সব সময় ব্যবহারের উপযোগী পোশাক এবং সুতি ছাড়া অন্য কাপড়গুলো নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলতে পারে।
যুক্তরাজ্যের উন্নয়নশীল দেশগুলোর ট্রেডিং স্কিম (ডিসিটিএস) কার্যকর হয়েছে যা বাংলাদেশসহ ৬৫টি উন্নয়নশীল দেশ থেকে যুক্তরাজ্যে প্রবেশকারী পণ্যের উপর ট্রেডিং নিয়মগুলোকে সহজ করে এবং শুল্ক কমিয়ে দেয়।
বাণিজ্য বৃদ্ধি, চাকরি বৃদ্ধি ও টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সাহায্য করবে ডিসিটিএস। এই নতুন পরিকল্পনা আধুনিক ও পারস্পরিক সুবিধার ভিত্তিতে অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাজ্যের প্রতিশ্রুতির নিদর্শন।
ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশন বলেছে, ডিসিটিএস-এ পরিবর্তনের অর্থ হলো বাংলাদেশ তৈরি পোশাকসহ রপ্তানির ৯৮ শতাংশ শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাবে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-ইরাক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে আশাবাদী বিজিএমইএ সভাপতি
বাংলাদেশ জুলাইয়ে আরএমজি রপ্তানি করে ৩.৯৫ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে: বিজিএমইএ
বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য কৌশলগত সংলাপ আগামী মাসে
সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে ঢাকায় বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে পরবর্তী দফায় কৌশলগত সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে।
উভয় পক্ষের কর্মকর্তারা এখন সংলাপের এজেন্ডা নিয়ে কাজ করছেন এবং ২৭ আগস্ট একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এক কর্মকর্তা ইউএনবিকে বলেন, কৌশলগত সংলাপটি ১২ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে পারে।
সংলাপে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক, বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক ইস্যু, অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন অংশীদারিত্ব এবং নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষাসহ সমগ্র দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
২০২১ সালে লন্ডনে চতুর্থ বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য কৌশলগত সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
আরও পড়ুন: যুক্তরাজ্যের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ পলকের
সর্বশেষ কৌশলগত সংলাপে যুক্তরাজ্য ২০২৯ সাল পর্যন্ত দেশটির বাজারে শুল্কমুক্ত, কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি মসৃণ ও সফল উত্তরণ অর্জনে সহায়তা এবং রপ্তানিমুখী প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে।
যুক্তরাজ্য বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) কার্যকারিতা উন্নয়ন এবং বৈশ্বিক বাণিজ্য বিধিমালার আধুনিকায়নের মাধ্যমে অবাধ ও ন্যায্য বাণিজ্য প্রদানে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করেছে।
যুক্তরাজ্যের ল্যান্ডমার্ক ডেভেলপিং কান্ট্রিস ট্রেডিং স্কিম (ডিসিটিএস) চলতি বছরের জুন থেকে কার্যকর হয়েছে, যা বাংলাদেশসহ ৬৫টি উন্নয়নশীল দেশ থেকে যুক্তরাজ্যে প্রবেশকারী পণ্যের ওপর শুল্ক হ্রাস করে এবং লেনদেনের নিয়ম সহজ করে।
ডিসিটিএস বাণিজ্য বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করবে উল্লেখ করে যুক্তরাজ্য সরকার বলেছে, এই নতুন প্রকল্পটি বাংলাদেশের সঙ্গে একটি আধুনিক ও পারস্পরিক লাভজনক অংশীদারিত্বের প্রতি যুক্তরাজ্যের অঙ্গীকারকে প্রতিফলিত করে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহী যুক্তরাজ্য: প্রধানমন্ত্রীকে সারাহ কুক
সংসদ সদস্যদের গোলটেবিল বৈঠক: কপ-২৮ এর আগে বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্যের ককাস গঠনের প্রস্তাব
যুক্তরাজ্যের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ পলকের
যুক্তরাজ্যের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। সেই সঙ্গে যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিদলকে বাংলাদেশে সফরের আমন্ত্রণও জানান মন্ত্রী।
শনিবার (১৯ আগস্ট) ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে হোটেল তাজ ওয়েস্ট এন্ডে বিশ্বের উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশসমূহের ফোরাম জি-২০ সম্মেলন শেষে যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞান, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিমন্ত্রী পল স্কুলির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন পলক।
আরও পড়ুন: স্মার্ট বাংলাদেশ ও ত্রিপুরা বিনির্মাণে দুই দেশ একসাথে কাজ করতে পলকের আহ্বান
এসময় তারা দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় বিশেষ করে দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা-বাণিজ্য, ক্যাশলেস ইকোনমি, স্টার্টআপ বিনিময়, বিটুবি ম্যাচমেকিং নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
সবার উপকারে আসে এমন একটি ডিজিটাল অর্থনীতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো চিহ্নিত করার জন্য তারা একমত পোষণ করেন তারা।
এ ছাড়া সিঙ্গাপুরের যোগাযোগ ও তথ্যমন্ত্রী জোসেফাইন টিও, নেদারল্যান্ডের ইন্টেরিয়র অ্যান্ড কিংডম বিষয়ক স্টেট সেক্রেটারি আলেকজান্দ্রা কার্লা ভ্যান হাফেলেন, ইউএনডিপি-এর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল উলরিকা মোদেরসহ জি-২০ এবং অতিথি দেশসমূহের প্রতিনিধিদের সঙ্গে পৃথক পৃথক সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য, জি-২০ হচ্ছে বিশ্বের উন্নত এবং উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলোর ফোরাম। ১৯টি দেশ এবং ইইউ নিয়ে গঠিত ফোরামটি বৈশ্বিক অর্থনীতির পাশাপাশি, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি প্রশমন এবং স্থিতিশীল উন্নয়নের মতো বিভিন্ন বৈশ্বিক বিষয়ে আলোচনার প্ল্যাটফর্ম এটি।
আরও পড়ুন: জি-২০ সম্মেলনে পারস্পরিক সহযোগিতার আহ্বান পলকের
পলকের সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ