যশোর
যশোরে পেট্রল ঢেলে স্ত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ
যশোরে শিরিনা বেগম (২৮) নামে এক সন্তানের জননীর শরীরে পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সদরের আরবপুর এলাকায় মঙ্গলবার দুপুরের এই ঘটনায় নিহতের স্বামী জুয়েল পলাতক রয়েছেন।
পুলিশ বলছে, গৃহবধূ মৃত্যুর ঘটনায় দুই ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেছে। তবে, যেহেতু এটি স্পর্শকাতর ঘটনা, সে কারণে পুলিশ বিষয়টি গভীরভাবে খতিয়ে দেখছে।
নিহতের ছোট ভাই সোহেল রানা অভিযোগ করেন, যৌতুকের টাকার কারণে তার দুলাভাই বোনের শরীরে পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। মঙ্গলবার দুপুরে তার বোনকে নিজবাড়িতে ঘরের ভেতরে আটকে রেখে গায়ে পেট্রল ঢেলে দেয়। এরপর আগুন দিলে তার চিৎকারে স্থানীয়রা এসে উদ্ধার করে এবং যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে৷
অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে খুলনায় রেফার করেন সংশ্লিষ্ট ডাক্তাররা। সেখান থেকে শিরিনাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে রেফার করা হয়। খুলনা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথেই শিরিনা রাত ১০টার দিকে মারা যান।
সোহেল রানা জানান, শিরিনার লাশ বর্তমানে যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।
পেট্রল পাম্পের কর্মচারী জুয়েল ইতোপূর্বে আরও একটি বিয়ে করেন। সেই স্ত্রীকেও সে হত্যা করেছে বলে সোহেল রানা দাবি করেছেন।
আরও পড়ুন: চাঁদপুরে স্বামীর করা যৌতুকের মামলায় স্ত্রী কারাগারে
জুয়েলের পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, রান্নাঘরে থাকা গ্যাস সিলিন্ডার থেকে গ্যাস বের করে গৃহবধূ নিজেই শরীরে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
যশোর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনা জানার পর সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। আমরা গৃহবধূর মৃত্যুর বিষয়ে দুই ধরনের বক্তব্য পাচ্ছি। বিষয়টি তদন্তসাপেক্ষে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
জানতে চাইলে যশোর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ডাক্তার আহম্মেদ তারেক শামস বলেন, দাহ্য পদার্থে ওই নারীর শরীরের অধিকাংশ জায়গা পুড়েছে। তার অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় তাকে খুলনা রেফার করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: বগুড়ায় যৌতুক নিয়ে বিরোধে জামাইয়ের ছুরিকাঘাতে শ্বশুর খুন
যৌতুক না পেয়ে স্ত্রীকে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠানোর অভিযোগ
গবাদিপশুর সাথে মানুষের বসবাস
বৃষ্টি ও উজানের ঢলে বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধতায় যশোরের মনিরামপুর উপজেলার ভবদহ বিলপাড়ের হাজারো মানুষ রাস্তার উপর ঠাঁই নিয়েছে। এসব মানুষদের রাস্তার উপর টংঘর বানিয়ে গবাদি পশুর সাথে বসবাস করতে হচ্ছে।
এদিকে, টিউবওয়েল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকটের সাথে গো খাদ্যেরও সংকট দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি প্রাকৃতিক কাজ সারতেও চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এতে করে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে ভুক্তভোগী। এককথায় জলাবদ্ধতায় কারণে ভবদহ বিলপাড়ের ৮০ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
আরও পড়ুন: প্রবল বর্ষণে ঝিনাইদহে জলাবদ্ধতা, তলিয়ে গেছে ২০ চাতাল
মনিরামপুর উপজেলার সুজাতপুর, বাজেকুলটিয়া, হাটগাছাসহ একাধিক গ্রামে সরেজমিনে দেখা গেছে, ওই সব এলাকার অধিকাংশ বাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিতে নিমজ্জিত ঘরবাড়ি হারা এসব ভুক্তভোগী মানুষ মনিরামপুর ও নওয়াপাড়া সড়কের হাটগাছা এলাকার সড়কের উপর টংঘর বানিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। সচ্ছ পরিবারগুলো যাতায়াতের জন্য বাড়ির উঠানে বাঁশের সাঁকো বানিয়ে নিলোও অসচ্ছল পরিবারগুলো রাস্তার উপর টংঘর বানিয়ে গৃহপালিত পশুর সাথে দিন পার করছে। একপাশে থাকছে গরু-ছাগল আরেকপাশে চৌকি বানিয়ে রাতযাপন করছেন তারা। সেখানেই চলছে খাওয়া দাওয়া।
আরও পড়ুন: রানীনগরে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছে কয়েক গ্রামের মানুষ
শার্শায় ট্রাক-মাহিন্দ্রা সংঘর্ষে নিহত ২
যশোরের শার্শা উপজেলার নীলকান্তপুর মোড়ে ট্রাকের সাথে মাহিন্দ্রার মুখোমুখি সংঘর্ষে দু’জন নিহত হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নাভারন- সাতক্ষীরা মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়া সাতমাইল গ্রামের রহিম বক্রের ছেলে মাহেন্দ্রা চালক নুরু বক্র (৪৫) ও একই উপজেলার সামটা গ্রামের মফিজুর রহমানের ছেলে মাহিন্দ্রার যাত্রী রাকিবুল ইসলাম রাকিব (১৮)।
আরও পড়ুন: নেত্রকোণায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩
নাভারন হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, আগআঁচড়া থেকে ছেড়ে আসা নাভারনমুখী একটি মাহিন্দ্রা নীলকান্তপুর মোড়ে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি খালি ট্রাকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে নুরু ও রাকিব গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নেয়ার পথে তাদের মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন: সিলেটে সড়ক দুর্ঘটনায় দাদা-নাতি নিহত
তিনি জানান, ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে। তবে ট্রাকচালক ও তার সহকারী পালিয়ে গেছে। তাদের আটকের চেষ্টা চলছে।
চৌগাছায় ১৮০ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন শিম চাষ
শিম শীতকালীন সবজি হলেও বেশ কয়েক বছর থেকে গ্রীষ্মে এ সবজি চাষ করে কৃষকরা বেশ লাভবান হচ্ছেন। যশোরের চৌগাছায় এবারের গ্রীষ্ম মৌসুমে ১৮০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হয়েছে। শীত মৌসুম শুরুর দিকে উৎপাদন কম হওয়ায় বাজারে শিমের দাম বেশি থাকে। বেশি দামে শিম বিক্রিয় আশায় যশোরের চৌগাছার চাষিরা গ্রীষ্মকালীন শিম চাষে ঝুঁকে পড়েছেন।
এরমধ্যে অধিকাংশ জমির প্রতিটি গাছ ফুলে ফুলে ভরে গেছে। কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে চলতি মৌসুমে শিম বিক্রি করে চাষিরা বেশ লাভবান হবেন বলে আশায় বুক বেঁধেছেন।
শীত মৌসুম শুরুর আগে ভাগেই কৃষকরা খেত প্রস্তুত করে শিমের বীজ বপন করেন। পুরো শীতে শিম বিক্রি করে বেশ লাভবান হন তারা। শীতের শিম এখন চাষ হচ্ছে গরমেও। নতুন চাষ পদ্ধতি অবলম্বন করে অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছেন। শিমে অন্যান্য সবজির মত ভাইরাস নেই বললেই চলে। সব ধরনের মাটিতেই শিমের চাষ হয়। বাজারে শিমের চাহিদা ভালো, দামও বেশি পাওয়া যায়। তাই গ্রীষ্মের শিম চাষে ঝুঁকছেন এ জনপদের চাষিরা।
আরও পড়ুন: সবজিতে সবুজ দিগন্ত!
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, চৌগাছাতে এবারের গ্রীষ্ম মৌসুমে ১৮০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হয়েছে। রুপবান ও ইসপা-২ জাতের শিম বেশি চাষ হচ্ছে।
উপজেলার সিংহঝুলী, ফুলসারা, নারায়নপুর, স্বরুপদাহ ইউনিয়নে সরেজমিনে দেখা গেছে, চাষিরা গ্রীষ্মের শিম অত্যন্ত যত্ন সহকারে মাচায় চাষ করেছেন। অধিকাংশ জমির শিমে ইতোমধ্যে ফুলে ফুলে ভরে গেছে। আর সপ্তাহ দুয়েক পরেই কৃষক তার পরিশ্রমের ফল ঘরে তুলতে পারবেন বলে আশা করছেন।
পেটভরা গ্রামের শিম চাষি মোসত বিশ্বাস বলেন, ‘শিম মূলত শীতের সবজি, কিন্তু গ্রীষ্মেও এর চাষ হচ্ছে ,ফলনও আশানুরুপ। তাই আগাম শিম চাষ করছি।’
আরও পড়ুন: ভাসমান সবজি চাষে সাবলম্বী খুলনার ভূমিহীন কৃষকরা
চলতি মৌসুমে তিনি ১ বিঘা জমিতে রুপবান জাতের শিমের চাষ করেছেন। এ পর্যন্ত তার প্রায় ১০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। কোন দুর্যোগ দেখা না দিলে লাখ টাকার শিম বিক্রি করতে পারবেন বলে মনে করছেন মোস্ত বিশ্বাস।
তিনি বলেন, ‘গ্রীষ্মের শিম চাষে পোকা মাকড়ের উপদ্রুপ কিছুটা বেশি থাকে, তবে নিয়মিত জমি পরিচর্যা করলে পোকায় শিম বেশি ক্ষতি করতে পারে না। নিয়মিত সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করলে শীতের মতই শিম গাছের বৃদ্ধি খুবই ভালো থাকে।’
কৃষক মোস্ত বিশ্বাসের মত কৃষক আব্দুল খালেক, শরিফুল ইসলাম, হাবিবুল্লাহ এক বিঘা করে ও সাইফ দুই বিঘা জমিতে শিম চাষ করেছেন।
উপজেলার ফুলসারা ও সিংহঝুলী ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রামের চাষিরা তুলনামূলক নিচু জমিতে গ্রীষ্মের শিম চাষ করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন:কুড়িগ্রামে বন্যার ক্ষতি পোষাতে আগাম সবজি চাষ
কৃষকরা জানান, যে সব জমিতে বছরের বেশির ভাগ সময় পানি জমে থাকে সেই জমিতে শিম চাষ করে কৃষকরা লাভবান হয়েছেন। গত সাত বছর ধরে কৃষকরা নিচু জমিতে উঁচু বেড তৈরি করে সেই বেডে শিমের বীজ রোপন করেন। একাধারে বৃষ্টিপাত হলেও এসব জমির শিম নষ্ট হওয়ার সম্ভবনা খুবই কম থাকে।
উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সমরেন বিশ্বাস জানান, নতুন নতুন ফসল উৎপাদনে চৌগাছার কৃষকেরা বেশ পারদর্শী। অনেক আগে থেকেই এ অঞ্চলে গ্রীষ্মের শিম চাষ হচ্ছে। কৃষকরা যাতে এ সব ফসল উৎপাদনে কোন সমস্যায় না পড়েন তার জন্য কৃষি অফিস সর্বদা কাজ করে যাচ্ছে।
সবজিতে সবুজ দিগন্ত!
সবজি চাষে বিপ্লব ঘটিয়েছে যশোরের মুনিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জের শাহপুর ও হায়াতপুরের কৃষকরা। এই খানে বছরের ১২ মাস সবজি চাষ করা হয়। শাহপুর ও হায়াতপুর গ্রামের অন্তত ৫০০ পরিবার সবজি চাষ করে এখন স্বাবলম্বী।
উপজেলার পশ্চিমে রাজগঞ্জ বাজারের পাশেই শাহপুর ও হায়াতপুর সবজি চাষের মাঠ। মাঠের পর মাঠ নানা ধরনের সবজি ছড়িয়ে আছে। গ্রাম দু’টিতে বিশাল খেত জুড়ে ১২ মাসই বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ হচ্ছে। আর এই খেতে কাজ করছে শত শত নারী-পুরুষ ।
কৃষি বিভাগ জানায়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে এই মাঠে সবজি চাষিদের সব সময় উৎসাহ এবং সঠিক পরামর্শ দিয়ে থাকে।
আরও পড়ুন: আবাদ মৌসুমে সারের দাম বৃদ্ধি, ফরিদপুরে আমন উৎপাদনে শঙ্কিত চাষিরা
বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সরোজমিনে শাহপুর ও হায়াতপুরে দেখা গেছে, সবজি খেতগুলোতে ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, ঢেঁড়স, মুলা, লাউ, শিম, বরবটি,ক্ষীরা, মিষ্টিকুমড়া, টমেটো, লালশাক, পালংশাক, কাঁচ কলা, বেগুন, শসা, মেটে আলু, ডাটা,পটল, ঝিংগা, উচ্ছে, কাকরোল, গাজর, চিচিঙ্গা ও ওলসহ বিভিন্ন ধরনের শীতের ও বারোমাসি সবজিতে ভরপুর। বিশাল এই মাঠে উত্তম কৃষি চাষের মাধ্যমে নিরাপদ ও বালাইমুক্ত সবজি উৎপাদন করা হচ্ছে।এখানে সবজি চাষে জৈব সারও ব্যবহার করা হয়।
আরও পড়ুন: বিশ্বনাথে ফসলের পোকা নিধনে পরিবেশবান্ধব ‘আলোক ফাঁদ’
স্থানীয় চাষি রবিউল ইসলাম জানান, এই মাঠের উৎপাদিত সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যশোর, খুলনা ও ঢাকার বড় বড় বাজারেও সরবরাহ করা হয়।
শাহপুর গ্রামের চাষি শরিফুল ইসলাম জানান, তিনি এবার ২ বিঘা জমিতে শিম চাষ করেছেন। সেই খেত থেকে বুধবারও (১৫ সেপ্টেম্বর) তিনি তিন মণ শিম তুলে বাজারে বিক্রি করেছেন। দামও ভালো পেয়ে খুব খুশি তিনি।
একই গ্রামেরে সবজি চাষি ফয়সাল আহম্মেদ, রাজু, মেহেদীসহ অনেকেই জানান, কষ্ট করে রোদ-বৃষ্টির মধ্যে মাঠে কাজ করে বিভিন্ন ধরনের সবজি ফলাই। সেই সবজি তারা স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে অন্য জেলা-উপজেলা শহরে সরবরাহ করে। সপ্তাহের সোমবার ও বৃহস্পতিবার রাজগঞ্জ বাজারে বড় হাট বসে। এই দু’দিন শাহপুর ও হায়াতপুরের কৃষকরাই বেশিভাগ সবজি বিক্রির জন্য এই হাটে আনে। রাজগঞ্জ বাজার থেকে পাইকারি দরে সবজি কিনে বিভিন্ন জেলা শহরে নিয়ে যান ব্যাপারিরা।
আরও পড়ুন: রূপসা পাড়ে অফ সিজনাল তরমুজের বাম্পার ফলন, কৃষকের মুখে হাসি
স্থানীয় ইউনিয়ন উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা এসএম মারুফুল হক ও হাসানুজ্জামান জানান, কৃষি বিভাগ থেকে রাজগঞ্জের শাহপুর ও হায়াতপুর মাঠের সবজি চাষিদের সবধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ দেয়া হয়। এছাড়া নতুন জাত ও নতুন ফসল সম্প্রসারণে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রদর্শনী প্লটও স্থাপন করা হয়।
রাজগঞ্জের নারীদের তৈরি হস্তশিল্প যাচ্ছে ইউরোপে
হস্তশিল্প একদিকে যেমন দরিদ্র নারীদের কর্মসংস্থান তৈরি করেছে, অপরদিকে আর্থ সামাজিক উন্নয়নের দ্বারও খুলে দিয়েছে। তেমনি যশোরের মনিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জ এলাকার নারীদের নিপুণ হাতে তৈরি হস্তশিল্পের নানা সামগ্রী ইউরোপের ৩২ দেশে যাচ্ছে। এতে দরিদ্র এসব নারীরা সংসারে অর্থের যোগান দেয়ার পাশাপাশি নিজেদের খরচ চালিয়ে নিতে পারছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে,ওই গ্রামের নারীদের কেউ কেউ নিজের বাড়ির আঙ্গিনায়, আবার কেউ দল বেঁধে গাছ তলায় বসে আপন মনে নিপুণ হাতে নানা সামগ্রী তৈরি করে চলেছেন।
আরও পড়ুন: মামলা জটিলতায় স্কুল ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধ, ঝুঁকিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা
মুক্তা, নাইমা, নাহার, হাসিনাসহ একাধিক নারী জানান, পাশের ঝিকরগাছা উপজেলার শিমুলিয়ার সাহেব বাড়ি মিশন থেকে তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়ার পর দীর্ঘ ২১ বছর ধরে অবসর সময় তারা এসব সামগ্রী তৈরি করছেন। যা এএসকের (হ্যান্ডিক্রাফট লিমিটেডের) মাধ্যমে পরিচালিত হয়।কোম্পানির ব্যবস্থাপক (সাহেব বাড়ি) সৈদয় আরাফাত হোসেন রাজিবের নির্দেশনা মতো খেজুর গাছের শুকনো কচিপাতা ও খড়ের উপকরণ দিয়ে পয়সা সেট, বিভিন্ন আকৃতির ড্রাম (লন্ডি নামে পরিচিত) ওভাল, কাসারুল, বাটিসেট, বলবাটি, হাড়ি, কড়াই, বালতি ইত্যাদি সামগ্রী তৈরি করেন। এতে করে প্রতি মাসে এসব নারীরা তিন থেকে ৯ হাজার টাকা পর্যন্ত রোজগার করেন। ফলে সংসারে যোগান দেয়ার পাশাপাশি নিজেদের খরচ চলে।
কারিগর মুক্তা জানান, পয়সা সেট বিভিন্ন আকৃতির হয়। এটি আকৃতিভেদে দেড়শ টাকা থেকে ২৫০ টাকায় কিনে নেয়া হয়। খরচ হয় ৫০ টাকার মতো। কাজের ফাঁকে এটি তৈরিতে তিন দিন সময় লাগে। তবে একটানা তৈরি করলে একদিনে বানানো সম্ভব।
একসঙ্গে ৪ সন্তানের মা হলেন লাক্সমিয়া
যশোরে সাত বছর নিঃসন্তান থাকার পর একসঙ্গে চার সন্তানের মা হলেন লাক্সমিয়া (৩০)।যশোর শহরের কুইন্স হসপিটালে সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে দুটি ছেলে ও দুটি মেয়ে সন্তানের জন্ম দেন তিনি।
বর্তমানে ওই চার নবজাতক ও তাদের মা পুরোপুরি সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন: কুমিল্লায় চার সন্তানের জন্ম দিলেন এক নারী
লাক্সমিয়ার স্বজনরা জানান, ২০১৪ সালে যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার জামদিয়া ইউনিয়নের ভাঙ্গুড়া গ্রামের আব্দুর রহমান গাজীর ছেলে আবুল বাশারের সাথে একই উপজেলার বাসুয়াড়ি ইউনিয়নের চাড়াভিটা গ্রামের ইমামুল খার মেয়ে লাক্সমিয়া খাতুনের বিয়ে হয়। অনেকদিন এই দম্পতির কোন সন্তান না হওয়ায় উভয় পরিবারে মধ্যে হতাশা বিরাজ করছিল। এক সময় সন্তানের প্রত্যাশায় তারা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। অবশেষে হতাশার সকল অবসান ঘটিয়ে সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে যশোর শহরের বেসরকারি ক্লিনিক কুইন্স হসপিটালে সিজারিয়ানের মাধ্যমে চার সন্তানের জন্ম দেন লাক্সমিয়া।
আরও পড়ুন: একসাথে চার সন্তান প্রসব করলেন নোয়াখালীর বৃষ্টি
যশোর মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক নার্গিস আক্তার তার সিজার করেন। এদিকে, চার সন্তানের জন্মের খবরে হাসপাতালে হৈ চৈ পড়ে যায়।
যশোর থেকে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে ইউএস-বাংলার ফ্লাইট শুরু
দেশের প্রাচীনতম জেলা যশোর থেকে চট্টগ্রাম ও পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার এবং দেশের উত্তরাঞ্চলের অন্যতম গন্তব্য সৈয়দপুর থেকে চট্টগ্রামে ফ্লাইট শুরু করতে যাচ্ছে ইউএস-বাংলা।
আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর যশোর ও সৈয়দপুর থেকে চট্টগ্রাম এবং ১ অক্টোবর যশোর থেকে কক্সবাজার রুটে উদ্বোধনী ফ্লাইট শুরু করতে যাচ্ছে তারা।
বুধবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যাত্রীদের সময় ও খরচকে প্রাধান্য দিয়ে দেশের অন্যতম বেসরকারি এয়ারলাইন্স ইউএস-বাংলা প্রাথমিকভাবে সপ্তাহে তিনদিন যশোর থেকে চট্টগ্রামে ফ্লাইট পরিচালনা করবে। রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার যশোর থেকে সকাল পৌনে ৯টায় চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। একই দিন বিকাল ৫টা ১০ মিনিটে চট্টগ্রাম থেকে যশোরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে।
আরও পড়ুন: যাত্রী রেখে ফ্লাইট, ইউএস বাংলার বিরুদ্ধে অভিযোগ
উত্তরের একমাত্র বিমানবন্দর সৈয়দপুর থেকে প্রাথমিকভাবে সপ্তাহে তিন দিন চট্টগ্রামে ফ্লাইট শুরুর কথা রয়েছে। রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার সৈয়দপুর থেকে সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে উড্ডয়ন করবে। একই দিন দুপুর ১২ টা ৩৫ মিনিটে চট্টগ্রাম থেকে সৈয়দপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে।
এছাড়া ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য যশোর থেকে দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজারে সপ্তাহে চারদিন ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। প্রাথমিকভাবে শনি, সোম, বুধ ও শুক্রবার যশোর থেকে দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। অপরদিকে, কক্সবাজার থেকে বিকাল ৩টা ২৫ মিনিটে যশোরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে।
সকল প্রকার ট্যাক্স ও সারচার্জসহ যশোর থেকে চট্টগ্রামে ওয়ানওয়ের নূন্যতম ভাড়া ৬,০০০ টাকা ও রিটার্ন ভাড়া ১২,০০০ টাকা। এছাড়া যশোর থেকে কক্সবাজারে ওয়ানওয়ের নূন্যতম ভাড়া ৬,৫০০ টাকা ও রিটার্ন ভাড়া ১৩,০০০ টাকা। অন্যদিকে সৈয়দপুর থেকে চট্টগ্রামের ওয়ানওয়ের নূন্যতম ভাড়া ৬,২০০ টাকা ও রিটার্ন ভাড়া ১২,৪০০ টাকা।
আরও পড়ুন: কক্সবাজার রুটে ইউএস বাংলার ফ্লাইট শুরু ১ জুন
যশোর থেকে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং সৈয়দপুর থেকে চট্টগ্রাম রুটের টিকেট রিজার্ভেশনের জন্য নিকটস্থ ট্রাভেল এজেন্সি কিংবা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের নিজস্ব সেলস সেন্টার ছাড়াও বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করুন ০১৭৭৭৭৭৭৮০০-৬ অথবা ১৩৬০৫ নম্বরে।
যশোরে লক্ষ্যমাত্রার ৩ গুণ বেশি মাছ উৎপাদন
যশোরে মাছ চাষে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার, অভয়াশ্রম তৈরি, নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টিসহ নানান পদক্ষেপে চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার তিন গুণ বেশি উৎপাদন হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। যা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের অভ্যন্তরসহ বিদেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ইতোমধ্যে প্রায় ২৯৪ কোটি টাকার রাজস্বও আয় করেছে বাংলাদেশ। এছাড়া গত ছয় বছরে জেলাতে প্রায় ৪৫ হাজার মেট্রিক টন মাছের উৎপাদন বেড়েছে।
যশোর মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে যশোরে মাছের চাহিদা ছিল ৬৫ হাজার ৫৮৯ মেট্রিক টন। সেখানে উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ২৪ হাজার ৮৫৮ দশমিক ১৪ মেট্রিক টন। যা চাহিদার তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেশি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাছ উৎপাদন হয়েছে যশোর সদর উপজেলায়। এখানে ২৯ হাজার ৭২ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়েছে। এছাড়া মনিরামপুরে ৩৮ হাজার ৩৪০, কেশবপুরে ৩৩ হাজার ৯৯৯, ঝিকরগাছায় ৩১ হাজার ১০৫, অভয়নগরে ২৯ হাজার ৭৯১, শার্শায় ২৫ হাজার ৮৩৮, চৌগাছায় ১৭ হাজার ৯৩১ ও বাঘারপাড়ায় ৮ হাজার ৭৮৩ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়েছে।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে সাড়ে ১০ লাখ বেল পাট উৎপাদন, দাম নিয়ে হতাশ চাষিরা
সূত্র জানায়, জেলায় মাছ উৎপাদনের রেণু পোনার চাহিদা ছিল ১৮ দশমিক ৯০ মেট্রিক টন। চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ৬৯ দশমিক ২৮ মেট্রিক টন। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রেণু পোণা উদ্বৃত্ত থেকেছে ৫০ দশমিক ৩৮ মেট্রিক টন। এছাড়া মনোসেক্স তেলাপিয়ার চাহিদা ছিল ২৮৭ লাখ পিস। সেখানে উৎপাদন হয়েছে ১৪ হাজার ১১৮ লাখ পিস। যা চাহিদার প্রায় পাঁচ গুণ বেশি।
জেলা মৎস্য অফিস জানায়, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে মাছ উৎপাদিত হয়েছিলো এক লাখ ৭৯ হাজার ৯৯৮ মেট্রিক টন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দুই লাখ পাঁচ হাজার ৮১১ মেট্রিক টন, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে দুই লাখ ২০ হাজার ৬৪৩ মেট্রিক টন, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে দুই লাখ ২১ হাজার ৩৫৮ মেট্রিক টন, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে দুই লাখ ২২ হাজার ১৬৮ মেট্রিক টন, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে দুই লাখ ২৩ হাজার ৭৯২ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদিত হয়েছিলো। চলতি অর্থবছরে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ২৪ হাজার ৮৫৮ দশমিক ১৪ মেট্রিক টন।
আরও পড়ুন: তিন বছর ঘুরেও কৃষি সহায়তা পাচ্ছেন না কব্জি হারানো মুক্তার
শেখ হাসিনা সফটওয়্যার পার্কে লংকাবাংলার বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে যশোরের শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে লংকাবাংলা ফাউন্ডেশন এক বৃক্ষরোপণ কর্মসূচীর আয়োজন করে।
‘বৃক্ষরোপণ করি, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ি’এই প্রতিপাদ্যে লংকাবাংলা ফাইন্যান্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও খাজা শাহরিয়ার এবং টেকসিটি বাংলাদেশ লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার মেজর মোহাম্মদ মোসলেম উদ্দিন সিকদার চারা রোপণের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন
এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, যশোরে ফলজ, বনজ সহ বিভিন্ন সৌন্দর্যবর্ধক প্রজাতির বৃক্ষের প্রায় ২ হাজার চারা রোপন করা হবে। দেশের বনজ সম্পদ বৃদ্ধি ও পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার লক্ষ্যে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীকে বিশেষ অর্থবহ করে তুলতে সকলকে স্বপ্রণোদিত হয়ে বৃক্ষরোপণে উৎসাহিত করাই লংকাবাংলার ফাউন্ডেশনের এই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচীর প্রধান উদ্দেশ্য।
ভূমি ক্ষয়রোধ, ফল উৎপাদন, দীর্ঘমেয়াদী পরিবেশের ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষনের কথা বিবেচনা করে লংকাবাংলা ফাউন্ডেশন প্রতি বছর কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কার্যক্রমের অংশ হিসেবে দেশে নানা বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির আয়োজন পরিচালনা করে আসছে।
আরও পড়ুন: নাটোরে নর্থবেঙ্গল সুগারমিলের শ্রমিকদের বিক্ষোভ
মাস্ক বিতরণ কর্মসূচি পালন শক্তি ফাউন্ডেশনের