ইলিশ
চাঁদপুরের জেলেরা ইলিশ ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছে
ইলিশের পোনা জাটকা রক্ষায় মার্চ-এপ্রিল দুই মাস চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীর ৭০ কিলোমিটার অভয়াশ্রম এলাকায় মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে রবিবার রাত ১২টায়।
নদীতে মাছ আহরণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন জেলেরা।
আরও পড়ুন: জাটকা নিধন বন্ধ হলে দেশের মানুষ বড় ইলিশ খাওয়ার সুযোগ পাবে: প্রাণিসম্পদমন্ত্রী
জেলার প্রায় ৪৪ হাজার নিবন্ধিত জেলে মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত নৌ সীমানায় মাছ আহরণে নামবেন।
তবে জাটকা রক্ষায় সরকার যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তা বাস্তবায়ন নিয়ে অভিযোগ করেছেন জেলেরা।
জেলা টাস্কফোর্সের দাবি, জাটকা রক্ষায় এবার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিল।
চাঁদপুর পদ্মা-মেঘনা উপকূলীয় এলাকার অধিকাংশ মানুষই মাছ আহরণ ও কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। জেলেদের মধ্যে অধিকাংশ জেলে গুল্টি জাল ব্যবহার করে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ আহরণ করে।
কিন্তু এক শ্রেণির জেলে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল দিয়ে জাটকা আহরণ করে। আইন অমান্য করে জাটকা ধরায় ১ মার্চ থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত ৩৭১ জেলে আটকের পর বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এদিকে দুই মাস বেকার অবস্থায় থাকার পর নৌকা ও জাল মেরামত করে প্রস্তুতি নিয়েছে জেলেরা।
সরেজমিনে সদর উপজেলার তরপুরচন্ডী ইউনিয়নের আনন্দ বাজার, শহরের টিলাবাড়ী এলাকা, পুরান বাজার রনাগোয়াল, দোকানঘর, লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের সাখুয়া, বহরিয়া, হানারচর ইউনিয়নের হরিণা মাছঘাট, আখনের হাট এলাকায় দেখা গেছে জাল ও নৌকা মেরামত কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলেরা।
কিছু লোক ঠিক এই সময়ে শুধু জাল মেরামত করার জন্য বিভিন্ন স্থান থেকে আসেন।
সাখুয়া এলাকার জেলে শাহজাহান রাঢ়ী বলেন, সরকার জাটকা না ধরার জন্য যে অভিযান দেয় আমরা তা মানি। কিন্তু মুন্সীগঞ্জ, মোহনপুর ও শরীয়তপুর এলাকার জেলেরা এসে অধিকাংশ জাকটা ধরে নিয়ে যায়। যে কারণে অভিযান শেষ হলে আমরা কোনো মাছ পাই না। ঋণ করে নতুন জাল ক্রয়, নৌকা মেরামত ও এসব কাজে শ্রমিকদের টাকা দিতে হয়। এরপর নদীতে মাছ না পাওয়া গেলে আমাদের খুবই খারাপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
আরও পড়ুন: ইলিশ ধরার ওপর দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে রবিবার মধ্যরাতে
ইলিশ ধরার ওপর দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে রবিবার মধ্যরাতে
জাতীয়ভাবে মাছ ধরা, বিক্রি ও পরিবহনের দুই মাসের নিষেধাজ্ঞার অবসান হওয়ায় জেলেরা আবারও রবিবার মধ্যরাত থেকে ইলিশ ধরতে পারবেন।
দেশের বিভিন্ন স্থানে ইলিশ ধরতে নদীতে যাওয়ার জন্য জাল ও নৌকা তৈরিতে এখন ব্যস্ত জেলেরা।
ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দুই মাসের ইলিশ ধরা, বিক্রি, মজুদ ও পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল সরকার।
আরও পড়ুন: নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ শিকার, ৪ জেলের জেল-জরিমানা
ইলিশের অভয়ারণ্য বরিশাল, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, ভোলা, শরীয়তপুর ও পটুয়াখালী- এই ছয় জেলা নিষেধাজ্ঞার আওতায় ছিল।
অভয়ারণ্য এলাকাগুলো মেঘনা নদীর চাঁদপুরের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার, ভোলার শাহবাজপুর চ্যানেলে ৯০ কিলোমিটার, ভোলার তেঁতুলিয়া নদীর ১০০ কিলোমিটার, চাঁদপুর জেলার নড়িয়া ও ভেদেরগঞ্জ উপজেলায় ২০ কিলোমিটার এবং হিজলা, মেহেন্দিগঞ্জ ও বরিশাল সদর উপজেলা, গজারিয়া ও মেঘনা নদীতে ৮২ কিলোমিটার।
এই নিষেধাজ্ঞার সময় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় নিবন্ধিত জেলেদের জন্য ৮০ কেজি চাল বরাদ্দ করেছে।
একক মাছের প্রজাতি হিসেবে দেশের মৎস্য উৎপাদনে ইলিশের অবদান সবচেয়ে বেশি।
প্রতি বছর ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে সরকার দুই মাসের জন্য ইলিশ ধরা, বিক্রি, মজুদ ও পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
আরও পড়ুন: বঙ্গোপসাগরে ধরা পড়েছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ, কক্সবাজারের জেলেদের মুখে হাসি
২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে আজ থেকে ইলিশ ধরা শুরু
রামগতিতে ৪ হাজার কেজি জাটকা ইলিশ জব্দ, আটক ৯
লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে শনিবার সকাল ১০ টায় কোস্টগার্ডের বিশেষ অভিযানে চার হাজার কেজি জাটকা ইলিশ ও বিভিন্ন প্রকার মাছ জব্দ করা হয়েছে। এসময় ৯জনকে আটকের পর জরিমানা করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
জানা যায়, অভয়াশ্রম রক্ষা অভিযান-২০২৩ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের অধীনস্ত বিসিজি স্টেশন, রামগতির নেতৃত্বে লক্ষীপুরের রামগতি থানার চৌধুরীর হাট এলাকায় একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
অভিযানে ওই এলাকা থেকে অবৈধভাবে বহনকালে একটি ট্রাকসহ ৭৫ মণ ইলিশ,২৫ মণ পোয়া এবং চিংড়ি মাছ জব্দ করা হয়। এসময় ট্রাক ড্রাইভারসহ মোট ৯ জন মাছ ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়।
পরবর্তীতে,রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম শান্তনু চৌধুরীর উপস্থিতিতে জব্দকৃত মাছ স্থানীয় এতিমখানা,গরীব ও দুস্থদের মাঝে বিতরণ করা হয় ।
এছাড়া, আটকদের প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা করে মোট ৪৫ হাজার টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দেয়া হয়।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে ১৪৮ মণ সরকারি চাল জব্দ, আটক ১
চাঁপাইনবাবগঞ্জে হেরোইন জব্দ, আটক ১
বরিশালে ৬শ' কেজি জাটকা ইলিশসহ ৩৩ জেলে আটক
বরিশালের কীর্তনখোলা নদীতে অভিযান চালিয়ে দুটি ইঞ্জিন চালিত ফিশিং বোট ও একটি স্টীল বডির ট্রলার থেকে ছয়শ' কেজি (১৫ মন) জাটকা ইলিশ জব্দ করেছে কোস্টগার্ড। এ ঘটনায় জড়িত ৩৩ জন জেলেকে আটক করে।
রবিবার (৬ নভেম্বর) বিকালে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি গনমাধ্যমকে জানান কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লে. বিএন কে এম শফিউল কিঞ্জল।
তিনি জানান, শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় সদর উপজেলার চরমোনাই ব্রীজ সংলগ্ন কীর্তনখোলা নদীতে অভিযান চালায় কোস্ট গার্ড দক্ষিণ জোনের অধিনস্ত বিসিজি স্টেশন। পরে দুটি ইঞ্জিন চালিত ফিশিং বোট ও একটি স্টীল বডির ট্রলারে তল্লাশি করে ছয়শ' কেজি (১৫ মন) জাটকা ইলিশ জব্দ করেছে কোস্টগার্ড। এসময় মাছ ধরার কাজে জড়িত থাকায় ৩৩ জন জেলেকে আটক করে কোষ্টগার্ড।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশি ৪০ জেলেকে ফেরত পাঠাল ভারত
পরে ফিশিং ট্রলার ও স্টিল বডিতে জাটকা ছাড়াও অন্যান্য মাছ থাকায় বরিশাল সদর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তার নির্দেশক্রমে আটক জেলেদেরকে মুসলেকা নিয়ে বোট ও ট্রলারসহ ছেড়ে দেয়া হয়।
এছাড়া মৎস্য বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে জব্দকৃত জাটকা স্থানীয় এতিমখানা, গরীব ও দুস্থ পরিবারের মাঝে বিতরণ করা হয়।
কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লে. বিএন কে এম শফিউল কিঞ্জল জানান, আইন শৃঙ্খলা, জননিরাপত্তা, জলদস্যুতা, বন-দস্যুতা ও ডাকাতি দমনের পাশাপাশি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে কোস্ট গার্ডের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
আরও পড়ুন: সিত্রাং: ২০ বাংলাদেশি জেলেকে উদ্ধার করল ভারতীয় কোস্টগার্ড
শরীয়তপুরে ইলিশ রক্ষা অভিযানে ৭২ জেলে আটক
বরগুনায় ইলিশ শিকারে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন যুবক
বঙ্গোপসাগরে ইলিশ শিকারে গিয়ে গভীর রাতে ট্রলার থেকে পড়ে নিখোঁজ হন সুজন মল্লিক নামে এক জেলে। ঘটনার তিন দিন পর ওই জেলের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
সোমবার রাতে বরগুনা সদর উপজেলার নলটোনা ইউনিয়নের গোড়া পদ্মা এলাকায় লাশটি ভাসতে দেখে স্থানীয়রা। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে।
আরও পড়ুন: ফুলবাড়িতে অটোচালকের লাশ উদ্ধার
নিহত সুজন বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের পোটকাখালী গ্রামের আক্কাস মিয়ার ছেলে।
বরগুনা সদর থানার স্থানীয় বাবুগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) মোয়াজ্জেম এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, মাছ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে শনিবার রাতে ‘এমভি মা’ নামের ট্রলারে ১৫ জন জেলে বঙ্গোপসাগরে ইলিশ শিকারে রওনা দেন। কিন্তু পথে ওই ট্রলার থেকে পড়ে সুজন নামের এক জেলে ওই রাত থেকে নিখোঁজ ছিলেন। এঘটনার তিন দিন পর সোমবার রাতে নলটোনা ইউনিয়নের গোড়া পদ্মা এলাকায় তাকে ভাসতে দেখা যায়।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আহম্মেদ বলেন, স্থানীয়রা লাশ ভাসতে দেখে ৯৯৯-এ ফোন করে দিয়ে জানালে পুলিশ গিয়ে ওই জেলের লাশ উদ্ধার করে।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে নিখোঁজের ৩দিন পর যুবকের গলিত লাশ উদ্ধার, আটক ১
মাগুরায় নিজ ঘর থেকে শিক্ষকের লাশ উদ্ধার
২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে আজ থেকে ইলিশ ধরা শুরু
টানা ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার পর উপকূলীয় অঞ্চলের নদীগুলোতে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। ইতোমধ্য সেই ইলিশ বাজারে বিক্রিও শুরু হয়েছে। মৎস্য কর্মকর্তা ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, জাটকা সংরক্ষণে সরকারি নিষেধাজ্ঞার সুফল মিলেছে।
শনিবার দুপুরে বরগুনার বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা মাছ বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) মধ্যরাতে প্রজনন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইলিশসহ সব প্রজাতির মাছ ধরার ওপর সরকারের ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা শেষে নদী ও সাগর মোহনায় জাল ফেলে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে। এতে হাসি ফুটেছে জেলেদের মুখে।
এবারে ইলিশ বিক্রির টাকায় বিগত দিনের ক্ষতি পুষিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন বলে আশা করছেন তারা।
আরও পড়ুন: চাঁদপুরে ইলিশ ধরার ওপর ২২ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে আজ
মাছের আড়ৎ সূত্রে জানা যায়, ২২ দিন নিষেধাজ্ঞা শেষে শনিবার প্রথম দিনের মতো জেলেরা নদীতে জাল ফেলে প্রত্যাশারও বেশি মাছ পেয়েছেন। বড় ইলিশ ছাড়াও সম্প্রতি বড় বিষখালী নদীতে ৫ থেকে ২০ কেজি ওজনের কোরাল, বোয়াল, পাঙাশ, বাঘাইড়সহ বিভিন্ন ধরনের মাছ পাওয়া যাচ্ছে। জেলেরা নদী থেকে বাজারে মাছ আনতে শুরু করছেন দুপুর ১২ টা থেকে। বাজারে চাহিদার তুলনায় যোগান কম থাকার কারণে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। এছাড়া বাজারে পর্যাপ্ত মাছ সরবরাহ হলে দামও কমে যাবে।
আড়ৎদার কামাল বলেন, নদীতে ইলিশ ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে এ অবস্থায় মাছ ধরা পরলে জেলেরা বিগত দিনের সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, নিষেধাজ্ঞার ২২ দিন পর বাজারে শনিবার প্রথম বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। তাই চাহিদাও প্রচুর। চাহিদার তুলনায় মাছের যোগান কম থাকার কারণে দাম একটু চড়া।
মাছের সরবরাহ বাড়লে দামও কমে যাবে বলেও জানান তিনি।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে বরগুনা পৌর মাছ বাজারে দেড় কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৫০০-১৬০০ টাকা এক কেজি, এক কেজি থেকে এক কেজি ২০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ টাকা দরে।
আরও পড়ুন: শরীয়তপুরে ইলিশ রক্ষা অভিযানে ৭২ জেলে আটক
৬০০-৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৯৪০ টাকা কেজি, আর তারও ছোট ২২০ গ্রাম থেকে ৩০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৪৬০-৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেন, প্রজনন মৌসুমসহ সরকারি বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা মেনে চলায় স্থানীয় জেলেরা উপকৃত হচ্ছেন। এ কারণে নদীতে ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের বংশবিস্তার বেড়েছে। ফলে নদীতে টানা ও বসানো জালে বড় ইলিশ মাছ প্রচুর ধরা পড়ছে।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, গভীর সমুদ্রে ও সুন্দরবনে এখন দস্যুতার ভয় বিগত বছরগুলো তুলনায় কমেছে। তাই অনেকটা স্বস্তি নিয়েই সাগরে যাচ্ছে জেলেরা। আবহাওয়া ভালো থাকলে লাভের পাল্লা ভারী করেই মৌসুম শেষে বাড়িতে ফিরতে পারবেন উপকূলীয় জেলা বরগুনার জেলেরা।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেন, জেলেরা ২২ দিনের সরকারি নির্দেশনা পালন করেছে। নিষেধাজ্ঞার সময় কোনো ট্রলার সাগরে যেতে দেয়া হয়নি। তাই নিষেধাজ্ঞার পরপরই জেলেরা গভীর সাগরে মাছ শিকারে যেতে প্রস্তুত।
আরও পড়ুন: গোয়ালন্দে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ শিকার করায় ৬ জেলের কারাদণ্ড
চাঁদপুরে ইলিশ ধরার ওপর ২২ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে আজ
ইলিশের প্রজনন রক্ষায় চাঁদপুরের মতলবের ষাটনল থেকে হাইমচরের শেষ সীমানা পর্যন্ত ৯০ কিলোমিটার মেঘনা-পদ্মায় অভয়াশ্রমে ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত মা ইলিশসহ অন্যান্য মাছ ধরা,পরিবহন,বেচা-কেনা ও মওজুত করার ওপর ২২ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে শুক্রবার।
শুক্রবার দিবাগত ১২টার পর চাঁদপুরসহ বিভিন্ন জেলার জেলেরা তাদের মাছ ধরার জাল ও ট্রলার নদীতে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বিগত বছরগুলোর মতো এবারও চাঁদপুরের মতলব শাটনোল থেকে হাইমচর পর্যন্ত ৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকায় এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ ধরার অপরাধে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিপুল পরিমাণ মা ইলিশ ও মাছ ধরার জাল, ট্রলার জব্দ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
আরও পড়ুন: শরীয়তপুরে ইলিশ রক্ষা অভিযানে ৭২ জেলে আটক
নিষেধাজ্ঞা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে মৎস্য বিভাগ, উপজেলা ও জেলা প্রশাসন,পুলিশ ও কোস্টগার্ড সদস্যরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করেন।
স্থানীয় জেলেরা বলেন, মা ইলিশসহ মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন,প্রায় ৫০ হাজার জেলে বেকার ছিলেন এবং তাদের প্রত্যেককে ২৫ কেজি করে চাল বরাদ্দ করা হয়েছিল,যা তাদের জন্য যথেষ্ট ছিল না।
জেলা মৎস্য অফিসের কন্ট্রোল রুমের কর্মকর্তা তৌকির আহমেদ জানান,১৭৮টি মামলায় নিষেধাজ্ঞার সময়কালে প্রায় ২১২ জন জেলেকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এছাড়াও, ৪১ হাজার ৮৫৫ মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করে ধ্বংস করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন চাঁদপুর নৌ পুলিশের প্রধান মোহাম্মদ কামরুজ্জামান।
তিনি আরও জানান, ইলিশ ধরা,বিক্রি,হোর্ডিং ও পরিবহনের ওপর ২২ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা গত ৭ অক্টোবর থেকে কার্যকর হয়েছে,যাতে এর উৎপাদন বাড়ানো যায়।
এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে বরিশাল,চাঁদপুর,লক্ষ্মীপুর, ভোলা,শরীয়তপুর ও পটুয়াখালী- এই ছয় জেলার ইলিশ অভয়ারণ্য।
ইলিশ,বাংলাদেশের জাতীয় মাছ,সামুদ্রিক মাছ বাংলাদেশের নদীগুলোতে যায় ডিম পাড়ার জন্য।
চাঁদপুরকে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়,কারণ পদ্মা নদীর মাছ অন্যান্য নদী থেকে আসা মাছগুলোর চেয়ে অনেক বেশি জনপ্রিয়।মাছটি বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ উভয় দেশেই বেশ জনপ্রিয়। বিশ্বের প্রায় ৭৫ শতাংশ ইলিশ বাংলাদেশে জাল করা হয়।
আরও পড়ুন: গোয়ালন্দে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ শিকার করায় ৬ জেলের কারাদণ্ড
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ শিকার, ৪ জেলের জেল-জরিমানা
ইলিশ উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে প্রথম: শিক্ষামন্ত্রী
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, ইলিশ উৎপাদনে আমরা বিশ্বের মধ্যে এক নম্বর স্থানে। সরকারের পক্ষ থেকে বাস্তবমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ ও সচেতনতা বৃদ্ধি হওয়ায় আমরা এই স্থানে আসতে পেরেছি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে চাঁদপুর শহরের বড় স্টেশন মোলহেডে নৌ পুলিশ আয়োজিত ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান’- উপলক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, মাছের উৎপাদন বাড়লে জেলেদের আয় রোজগার বৃদ্ধি পাবে এবং জীবন মান উন্নয়ন হবে। তাই সরকারের পক্ষ থেকে অভয়াশ্রম এলাকায় যে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে, তা জেলেদের মানতে হবে এবং সাগর থেকে মিঠা পানিতে আসা ইলিশকে ডিম ছাড়ার সুযোগ করে দিতে হবে।
আরও পড়ুন: ধর্ষণের শিকার হলে নারীর মর্যাদা কমে না: দীপু মনি
মন্ত্রী আরও বলেন, আমি জানতে পেরেছি নৌ পুলিশের ওপর হামলা হয়েছে, এটি খুবই দু:খজনক। এধরণের কাজ দণ্ডনীয় অপরাধ। এটি থেকে জেলেদের বিরত থাকতে হবে।মন্ত্রী বলেন, একজন কৃষক উৎপাদনের জন্য যেমন ৩ থেকে ৪ মাস সময় নেয়। জেলেদেরকেও ইলিশকে বড় হওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। বছরে দুই বার নিষেধাজ্ঞা মানলে বাকী সময়টা জুড়েতো আপনারা ইলিশ ধরতে পারবেন।দীপু মনি বলেন, যেসব জেলে নিষেধাজ্ঞা না মেনে ইলিশ ধরে, তাদের পিছনে যারা কাজ করে তাদের চিহ্নিত করতে হবে। আর এসব ব্যাক্তি দাদনদার, অর্থশালী কিংবা যে কোন ব্যক্তি জড়িত থাকুকনা কেন তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে।সভায় সভাপতিত্ব করেন নৌ পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. কামরুজ্জামান। অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন নৌ পুলিশ প্রধান অতিরিক্ত আইজি শফিকুল ইসলাম।অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) কামরুল হাসান, পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিলন মাহমুদ, চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনিস্টিটিউটের ইলিশ গবেষক ড. মোহাম্মদ আশরাফুল আলম, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাসান, পৌরসভার মেয়র মো. জিল্লুর রহমান, প্রেসক্লাব সভাপতি গিয়াস উদ্দিন মিলন, জেলা কান্ট্রি ফিশিং বোট সমিতির সভাপতি ও সাংবাদিক শাহ আলম মল্লিক, জেলা আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগ সভাপতি মালেক দেওয়ান ও সাধারণ সম্পাদক মানিক দেওয়ান।
আরও পড়ুন: সব দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের আহ্বান দীপু মনির
মোমেন ভারতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যাচ্ছেন না: গণমাধ্যমে ‘বাদ’ শব্দটি ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন দীপু মনির
যমুনায় মা ইলিশ ধরার দায়ে ১৯ জেলের কারাদণ্ড
সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে মঙ্গলবার সকালে যমুনা নদীতে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মা ইলিশ ধরার অপরাধে ১৯ জেলেকে ১৫ দিন করে বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
বেলকুচি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শামীম রেজা এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, মা ইলিশ সংরক্ষণে সোমবার গভীর রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত বেলকুচি উপজেলার যমুনা নদীর মেহেরনগর ও চরবেল পয়েন্টে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ অভিযান চলাকালে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মা ইলিশ ধরার অপরাধে ১৯ জেলেকে গ্রেপ্তারসহ ৮৫ হাজার মিটার কারেন্ট জাল ও ৭ কেজি মা ইলিশ জব্দ করা হয়।
তিনি জানান, মঙ্গলবার সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনিসুর রহমান তাদের ১৫ দিন করে বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, সেইসঙ্গে অভিযানে জব্দ হওয়া কারেন্ট জাল পুড়িয়ে ধ্বংস করাসহ মা ইলিশগুলো স্থানীয় এতিমখানায় বিতরণ করা হয়েছে।
আজ মধ্যরাত থেকে ২২ দিন ইলিশ ধরা নিষেধ
চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীর অভয়াশ্রম এলাকায় ৭ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন নিরবচ্ছিন্ন প্রজননের লক্ষ্যে মা ইলিশসহ অন্যান্য মাছ আহরণ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার।
জেলার মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে চাঁদপুর সদর হয়ে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত পদ্মা ও মেঘনা নদীর প্রায় ৯০ কিলোমিটার এবং লক্ষ্মীপুর জেলার চর আলেকজেন্ডার পর্যন্ত একশ’ কিলোমিটার অভয়াশ্রম ঘোষণা করেছে।
নিষেধাজ্ঞার আরোপের পূর্ব মুহূর্তে আজ বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) সারাদিনই জেলার সবচেয়ে বড় মাছ বাজার - বড় স্টেশন মাছ ঘাট ও শহরের বিপনীবাগ, নতুনবাজার, পুরানবাজার, ওয়ারল্যাস বাজার, ও বাবুরহাট বাজারের মাছ বাজারে মানুষের ইলিশ কেনা-বেচার ধুম লেগে গেছে।
৫০০ গ্রামের মাছ ৫০০ টাকায় কেজি দরে বিক্রি হয়। ১ কেজির ইলিশ এক হাজার টাকায়, দেড় কেজি ইলিশ বিক্রি হয় ১৫০০ টাকায়, ২ কেজির ইলিশ ২২০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে বড় স্টেশন মাছ ঘাটে। এ ঘাটে এবার নারীদের উপস্থিতিও ছিলো চোখে পড়ার মতো।
আরও পড়ুন: শুক্রবার থেকে ইলিশ শিকারে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা
সেই লাকসাম উপজেলার গুপ্চি গ্রাম থেকে এসে টাটকা ইলিশ কিনে নিলেন মমতাজ বেগম ও তার বৃদ্ধ ফুপি নুরজাহান(৬৫)।
ওদিকে শহরের কুরিয়ার সার্ভিসে গিয়ে দেখা যায় কয়েশ’ মাছের প্যাক ঢাকাসহ দূর-দুরান্তে চাঁদপুর থেকে যাবার জন্য প্রস্তুত। গড়ে দেড়শ’ প্যাক প্রতিটি কুরিয়ার অফিসে চত্বরে দেখা গেছে।
প্রবীণ মৎস্য ব্যবসায়ী জাহাংগীর পাটোয়ারি, নুরুল ইসলাম বকাউল ও মোস্তফা দীদারসহ আরও অনেকে জানান, আজ ৩/৪ দিন ইলিশ মাছের ৫০টি আড়তে মাছ কম আমদানি হচ্ছে, তাই দামও বেশি।