আশ্রয়কেন্দ্র
ঘূর্ণিঝড় হামুন: ঝুঁকিপূর্ণ ১০ জেলার ১৫ লাখ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার নির্দেশ
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেছেন,ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ বুধবার সকাল থেকে দুপুর নাগাদ বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে। তবে শেষ মুহূর্তে এটি গতি বাড়ালে আগেই অতিক্রম শুরু করতে পারে। সে কারণে আজ (মঙ্গলবার) রাত ৮টার মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ১০ জেলার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ মোকাবিলায় ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) বাস্তবায়ন বোর্ডের জরুরি সভা শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, এ ১০ জেলার ১৫ লাখ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হবে।
‘ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর-পূর্ব দিকে বরিশাল ও চট্টগ্রামের দিকে এগিয়ে আসছে। এর বাতাসের গতিবেগ ৮৯ কিলোমিটার থেকে ১১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত রেকর্ড করা হয়েছে। এ অবস্থায় আবহাওয়া দপ্তর ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দিয়েছে বলে জানান এনামুর রহমান ।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় হামুন: চট্টগ্রামে প্রস্তুত রয়েছে ২৯০টি মেডিকেল টিম
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ ও চরিত্রটা বিশ্লেষণ করে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এটি আজকে আজ রাত ১০টা থেকে কাল সকাল ১০টার মধ্যে উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এজন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে রাত ৮টার মধ্যে যেন সব ঝুঁকিপূর্ণ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হয়। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো আমরা প্রস্তুত করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এসওডি (দুর্যোগ বিষয়ক স্থায়ী আদেশাবলী) অনুযায়ী ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দিলে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার সিদ্ধান্ত দেওয়া আছে। সেই অনুযায়ী আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, মাঠ প্রশাসন ও আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা দুর্গত লোকদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া শুরু করবে।’
আশ্রয় কেন্দ্রেগুলোতে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যেক জেলায় ২০ লাখ টাকা, ৫০ টন চাল বরাদ্দ দিয়েছি। গো ও শিশু খাদ্যের জন্য এক কোটি টাকা করে মোট দুই কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছি।’
আজকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সরকারি ছুটি বাতিল করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও মাঠ পর্যায়ে উপকূলীয় জেলাগুলোতে আমাদের কর্মকর্তারা কাজ করছেন।’
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় হামুন: খুলনায় ৬০৪টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত
হামুনের গতিপথ গত বছরের ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের মতো জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এজন্য আমরা অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করছি। গবাদী পশুকেও আমরা সরিয়ে আনার নির্দেশনা দিয়েছি। মেডিকেল টিমও প্রস্তুত রয়েছে। বরিশাল থেকে চট্টগ্রামের মধ্য দিয়ে এটি অতিক্রম করবে। এর কেন্দ্র বা চোখ বরগুনা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রামের মধ্য দিয়ে যাবে।’
‘হামুন’ মোকাবিলাকে চ্যালেঞ্জ মনে করছেন না জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, অন্যান্য ঘূর্ণিঝড়ের মতো এটিও আমরা মোকাবিলা করতে পারব।
এ সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসানসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় হামুন: বাগেরহাটে ৪৪৬টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত
ঝুঁকিপূর্ণ ১০ জেলার মানুষকে রাত ৮টার মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বলা হয়েছে: প্রতিমন্ত্রী
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান জানান, প্রবল ঘূর্ণিঝড় হামুনের কারণে ১০টি জেলাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন তারা।
তিনি বলেন, এসব অঞ্চলের লোকজনকে মঙ্গলবার রাত ৮টার মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয় সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে ব্রিফকালে তিনি এসব তথ্য জানান।
কোন ১০টি জেলা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও চাঁদপুর।
তিনি বলেন, এসব জেলায় আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে মেডিকেল টিমও গঠন করা হয়েছে। পর্যাপ্ত জরুরি ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রি নিয়েও তারাও প্রস্তুত রয়েছে। আর গবাদিপশু সরিয়ে আনতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: দুর্যোগ উত্তর পুনর্গঠনে প্যারাডাইম শিফটে কাজ করছে সরকার: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী
মন্ত্রী বলেন, গতকাল সোমবার নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় হামুনে পরিণত হয়েছে। এটি চট্টগ্রাম এবং বরিশালের দিকে উত্তরপূর্ব অভিমুখে বাংলাদেশের উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে। বর্তমানে এটি পায়রা বন্দর থেকে ৩১০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থান করছে। এর বাতাসের গতিবেগ ৮৯ কিলোমিটার থেকে ১১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত রেকর্ড করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মঙ্গলবার রাত ১০টা থেকে আগামীকাল সকাল ১০টার মধ্যে উপকূলে আঘাত হানতে পারে। গতিপথটি অর্থাৎ ঘূর্ণিঝড়ের আওতা একদিকে চট্টগ্রাম, অন্যদিকে বরিশালকে স্পর্শ করবে। ঘূর্ণিঝড়ের চোখটি বরগুনা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রামের মধ্য দিয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, এ অবস্থায় আবহাওয়া অধিদপ্তর ৭ নম্বর বিপৎসংকেত দিয়েছে। দুটি পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে উপকূলীয় এলাকাগুলোতে। ৭ নম্বর বিপৎসংকেত দিলে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া আছে। সে অনুযায়ী, এই মুহূর্ত থেকে আমাদের মাঠপ্রশাসনের ও স্বেচ্ছাসেবকরা দুর্গত লোকদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া শুরু করবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করেছি। আমাদের মাঠপ্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবীরা সেখানে কাজ করছেন। সেখানে রান্না করা খাবার ও সুপেয় পানি, শিশুদের খাবার ও গোখাদ্য দেওয়ার জন্য আমরা এরইমধ্যে অর্থ বরাদ্দ করেছি। প্রতি জেলায় ২০ লাখ টাকা, ৫০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এক কোটি টাকা গোখাদ্য ও সমপরিমাণ টাকা শিশুখাদ্যের জন্য দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আজকের সরকারি ছুটি বাতিল করা হয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলের মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও মাঠপর্যায়ের কর্মাকর্তারা কাজ করছেন। গতবছরের সিত্রাং ঘূর্ণিঝড় থেকে হামুনের গতিপথ একই ধরনের, যদিও একটু উত্তরপশ্চিমের দিকে আছে। কিন্তু গতিপথ ও গতি অনেক একই রকম। যে কারণে একটু অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।’
আরও পড়ুন: শৈশবেই শেখ রাসেল ছিলেন মানবিক: পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী
বান্দরবানে বন্যা: আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়ি ফিরছে মানুষ, ১৫,৬০০ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত
জেলা প্রশাসক শাহ মুজাহিদ উদ্দিন জানিয়েছেন, বান্দরবানে ভারী বর্ষণে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসের কারণে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া মানুষগুলো তাদের বাড়িতে ফিরে গেছেন।
শুক্রবার (১১ আগস্ট) বিকালে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি সাম্প্রতিক বৃষ্টি ও বন্যায় সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের বিস্তারিত বিবরণ ও জেলার সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন।
বিপর্যয়টি ধ্বংসের একটি ক্ষত রেখে গেছে। পরিবারগুলোকে বাস্তুচ্যুত করেছে এবং অবকাঠামোর যথেষ্ট ক্ষতি করেছে।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম ও বান্দরবানে বন্যা-ভূমিধস মোকাবিলায় সেনা মোতায়েন
তিনি বলেন, বর্তমানে দুর্যোগকবলিত প্রায় ৩৪০ জন মানুষ জেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। এছাড়া দুর্যোগের প্রভাবটি মারাত্মক হয়েছে। বন্যায় ১৫ হাজার ৮০০ পরিবার আক্রান্ত হয়েছে এবং ১৫ হাজার ৬০০টি বাড়ি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কৃষি বিভাগের উদ্ধৃতি দিয়ে জেলা প্রশাসক বলেছেন, কৃষি খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ৮ হাজার ২৫৩ হেক্টর ফসলি জমি বন্যায় তলিয়ে গেছে।
বন্যা ও ভূমিধসের ফলে ১০ জনের মৃত্যুর কথাও জানান তিনি।
এছাড়া অবিরাম বর্ষণে থানচি ও রুমা উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
তিনি বলেন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর দু’টি ভ্রাম্যমাণ পানি পরিশোধন ইউনিট স্থাপন করে পুনর্বাসনের পদক্ষেপ নিয়েছে।
ইতোমধ্যেই এই উদ্যোগের মাধ্যমে ২ লাখ লিটার পানি বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনীও ত্রাণ তৎপরতায় যোগ দিয়েছেন এবং অতিরিক্ত ৫৩ হাজার ৮০০ লিটার সুপেয় পানি বিতরণ করেছেন।
উপরন্তু, ৯৬২ জনকে গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা সেবা এবং ওষুধ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ৮৫০টি পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সরকার দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ১৬৮ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য এবং ৬ লাখ টাকা বরাদ্দ করেছে।
বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ ৭টি উপজেলার প্রতিটির জন্য ২৪ লাখ টাকা বরাদ্দ করেছে এবং পুনর্বাসন কাজে সহায়তার জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল সরবরাহ করেছে।
বান্দরবান শহরে চারদিন বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকার পর শুক্রবার থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়েছে।
এছাড়া, পানি শোধনাগার থেকে ধ্বংসাবশেষ এবং পলি অপসারণের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকায় পানি সরবরাহ ব্যাহত রয়েছে। জেলায় ইন্টারনেট ও মোবাইল সংযোগ পুনঃস্থাপন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বান্দরবানে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি
বান্দরবানে ভূমিধসে মা-মেয়েসহ নিহত ৩
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং: ভোলায় ২০ হাজারের বেশি মানুষ বিপর্যস্ত
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাস ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে ভোলা জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ জলাবদ্ধ অবস্থায় আছে।
ভোলা জেলার ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসীকে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষের জন্য পর্যাপ্ত শুকনো খাবার প্রস্তুত করা হয়েছে। এছাড়া ২৫ মেট্রিক টন চাল ও পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।’
এদিকে ভোলার জেলা প্রশাসক তৌফিক এলাহী চৌধুরী বলেন, ‘দুর্যোগ মোকাবিলায় মোট ৭৪৬টি ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সাত উপজেলায় আটটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।’
এছাড়া ১৩ হাজার ৬৬০ জন স্বেচ্ছাসেবক ও ৭৬টি মেডিকেল টিম মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে।
সোমবার বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড (বিসিজি) ভোলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ চর পাতিলা থেকে ১১০ জনকে সরিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়েছে।
বিসিজি পূর্বাঞ্চলের মিডিয়া অফিসার কাজী আল আমিন বলেন, ‘দুর্যোগ পরবর্তী যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় কোস্ট গার্ডের উদ্ধারকারী দলও প্রস্তুত রয়েছে।’
১ হাজার বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করবে সরকার: এনামুর
সারাদেশে এক হাজার মুজিব কিল্লা (যেকোনো দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের আশ্রয় কেন্দ্র) এবং বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র (বন্যা দুর্গতদের আশ্রয়কেন্দ্র) নির্মাণ করবে সরকার।
বৃহস্পতিবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান এই তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, এছাড়া জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি কমানোর লক্ষ্যে নদীগুলোর পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সরকার নদীর তলদেশ খননের মাধ্যমে গভীরতা বৃদ্ধিতে ড্রেজিংয়ের পরিকল্পনা নিয়েছে।
রাজধানী ঢাকায় দৈনিক কালের কণ্ঠের কার্যালয়ে “উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আকস্মিক বন্যা: শিক্ষণীয়, করণীয় ও পুনর্বাসন” শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: বজ্রপাতে মৃত্যু কমাতে ৩ বিষয়ে অগ্রাধিকার দিচ্ছে সরকার: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক ও কালের কণ্ঠের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবি তাজুল ইসলাম।
গোলটেবিল বৈঠকে ব্র্যাকের দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির পরিচালক সাজেদুল হাসান, বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কতা কেন্দ্রের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান, উত্তর-দক্ষিণ জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সরকারের কর্মকর্তারা এবং বন্যাকবলিত এলাকার প্রতিনিধিরাও অংশ নেন।
প্রতিমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, সাম্প্রতিক বন্যায় সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার প্রায় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ জমি পানিতে তলিয়ে গেছে, গত ১২২ বছর জেলায় এমন বন্যা দেখা যায়নি।
এনামুর বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ বাস্তবায়ন হলে বন্যাপ্রবণ ৪০ জেলায় বন্যার ভয়াবহতা দেখা যাবে না।
তাজুল ইসলাম বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে।
আরও পড়ুন: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ
গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় গর্ভবতী এবং দুগ্ধদানকারী মায়েদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
ভয়াবহ বন্যায় বন্দি সিলেটবাসী
সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় নগরীর বাড়িঘর, দোকানপাট, হাসপাতালসহ প্রধান এলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন সিলেট নগরীর বাসিন্দারা।
মানুষকে হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত গভীর পানির মধ্যে দিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। এছাড়াও শনিবার শহরের লোকজনকে বাড়ির প্রবেশপথে অস্থায়ী বাঁধ হিসাবে ইট ও সিমেন্ট দিয়ে কংক্রিটের দেয়াল তৈরি করতে দেখা গেছে।
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও পানি প্রবেশ করায় রোগীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন: বন্যার ক্ষতি এড়াতে ভারতের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী পররাষ্ট্রমন্ত্রী
স্থানীয় প্রশাসন বেশ কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করলেও সেখানে এখন খাদ্য, বিশুদ্ধ পানীয় জল এবং পশুখাদ্যের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।
প্রায় সব উপজেলা ও পৌর এলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় শনিবার জেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল, যদিও পরে শহরের আংশিক এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়।
আরও পড়ুন: ১১ জেলায় বন্যার্তদের জন্য অর্থ ও খাদ্য বরাদ্দ
বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ: সিলেট ও সুনামগঞ্জ বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন
স্কুল, কলেজগুলোকে বন্যার আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হবে: মাউশি
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) বন্যা কবলিত এলাকায় আশেপাশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে।
শনিবার মাউশির মহাপরিচালক নেহাল আহমেদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে স্কুল-কলেজ ভবনগুলোকে বন্যাকবলিত মানুষের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বন্যায় আটকে পড়া শাবিপ্রবি ছাত্রীদের উদ্ধারে বিজিবি
ভ্রমণে গিয়ে সুনামগঞ্জে বন্যায় আটকা পড়েছেন ঢাবির ২১ শিক্ষার্থী
‘অশনি' মোকাবিলায় বরিশালে প্রস্তুত প্রায় ৫ হাজার আশ্রয়কেন্দ্র
ঘূর্ণিঝড় অশনি মোকাবিলায় বরিশাল বিভাগে চার হাজার ৯১৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ২০ লাখ মানুষের পাশাপাশি তাদের গবাদি পশুও রাখা যাবে। এর পাশাপাশি প্রতিটি এলাকায় বিপুল পরিমাণ স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
সোমবার বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
গতিপথ অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড় অশনি উপকূলের দিকে এগিয়ে আসলে বাংলাদেশের দক্ষিণের উপকূলে ব্যাপক আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এই আশিঙ্কা মাথায় রেখেই ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়।এর মধ্যে বরিশাল জেলায় এক হাজার ৭১টি আশ্রয়কেন্দ্র, পটুয়াখালীতে ৯২৫টি, ভোলায় এক হাজার ১০৪টি, পিরোজপুরে ৭১২টি, বরগুনায় ৬২৯টি এবং ঝালকাঠিতে ৪৭৪টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘অশনি’: তিন বিভাগে ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস
এছাড়া আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে বিশুদ্ধ পানি,শুকনা খাবার ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় থেকে।বরিশাল জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ত্রাণ-দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থাদের ইতোমধ্যে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সিপিপি ভলান্টিয়ারদেরও প্রস্তুত করা হয়েছে। তাছাড়া উপকূলীয় এলাকাকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বলে জানান জেলা প্রশাসন সূত্র।বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার আমিন উল আহসান বলেন, ঘূ‘র্ণিঝড় অশনি মোকাবেলায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় অশনি নিয়ে জেলায় জেলায় আলোচনা শেষে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ মাসে ঝড়ের সম্ভাবনা রয়েছে জেনে আমরা আগেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। তাই বিভাগের ছয় জেলার প্রায় ৫ হাজার আশ্রয় কেন্দ্র আগে থেকেই ব্যবহার উপযোগী করে রাখা হয়েছে।’
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’: আরও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে
ইয়াস মোকাবিলায় তিনগুণ আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছিল: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী
করোনা সংক্রমণের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ মোকাবিলায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে তিনগুণ আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান ।
সোমবার মন্ত্রণালয়ের অফিস কক্ষে বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী'র নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের সময়ে পাঁচ হাজার আশ্রয় কেন্দ্র ব্যবহার করা হয়েছিল। আম্পানের সময়ে করোনার কারণে ১৪ হাজার ৬৭টি আশ্রয় কেন্দ্রে ২৪ লাখ ৭৮ হাজারের বেশি মানুষকে রাখা হয়েছিল। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) ৭৪ হাজারেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবক ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। কমিউনিটি রেডিওর মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হয়েছে। স্কাউটের ছয় লাখ স্বেচ্ছাসেবক কাজ করেছেন।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় ইয়াস: খুলনা উপকূলে ৬০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি
এসময় ভারতীয় হাইকমিশনার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ সরকারের সাফল্যের প্রশংসা করেন।
বাংলাদেশের উন্নয়নে তার সরকারের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে প্রতিমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেন তিনি। বিশেষ করে কোভিড-১৯, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান এবং যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় দু'দেশ একযোগে কাজ করবে বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন হাইকমিশনার।
এছাড়া বাংলাদেশ এবং ভারতে সম্ভাব্য দুর্যোগের ঘটনার ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি, দু'দেশের জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রশমন ও সহনশীলতা সৃষ্টি, দুর্যোগ সহনশীলতা নিশ্চিতকরণে দুর্যোগ সাড়াদান, পুনরুদ্ধার, প্রশমন ও সক্ষমতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত প্রাসঙ্গিক তথ্য, রিমোট সেন্সিং ডাটা ও অন্যান্য বৈজ্ঞানিক তথ্য উপাত্ত এবং অভিজ্ঞতা ও সর্বোত্তম চর্চাসমূহ বিনিময়, দুর্যোগ প্রস্তুতি, সাড়াদান এবং প্রশমনে দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে উন্নত তথ্যপ্রযুক্তি, আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থা, রিমোট সেন্সিং, নেভিগেশন পরিসেবা এবং রিয়েল টাইম ডাটা শেয়ারিংয়ে সহযোগিতা বৃদ্ধি করার বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়।
ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিকম্পে হতাহতের ঘটনায় বাংলাদেশের শোক
ইন্দোনেশিয়ায় ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্পে বহু লোকের প্রাণহানি ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনায় গভীর শোক জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন।