আদালত
আইনমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক, আদালতে ফিরছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আইনজীবীরা
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে ফলপ্রসূ বৈঠকের পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আইনজীবীরা আদালতে ফিরে যেতে সম্মত হয়েছেন।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আশা প্রকাশ করেছেন, আইনজীবীরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে কাল সোমবার থেকেই আদালতে ফিরবেন এবং আগের মতোই সকল আদালতে মামলা পরিচালনায় অংশ নিয়ে বিচারপ্রার্থী জনগণের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সহায়তা করবেন।
আরও পড়ুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ১৫
রবিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলা সার্কিট হাউসে জেলা জজসহ একাধিক বিচারক, স্থানীয় প্রশাসন ও আইনজীবী সমিতির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ কথা বলেন তিনি।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের দেয়া আশ্বাসে আদালতের অচলাবস্থা দ্রুত নিরসন হবে বলে আইনজীবীরাও জানিয়েছেন।
সকাল সোয়া ১০টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সার্কিট হাউসে পৌঁছান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
সেখানে তাঁর সঙ্গে সভায় অংশ নেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, আইনসচিব গোলাম সারোয়ার, জেলা জজ শারমিন নিগার, জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩–এর বিচারক রবিউল হাসান, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ নজরুল ইসলাম, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আল আমিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি তানভীর ভূঞা, সদ্য বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, সাবেক সভাপতি শফিউল আলম ও নাজমুল হোসেন, আইনজীবী মাহবুব আলমসহ ৩০ থেকে ৩৫ জন আইনজীবী।
সেখানে সাড়ে ১০টা থেকে সোয়া ১১টা পর্যন্ত আলোচনা চলে। এরপর তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাব আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি তানভীর ভূঞা নিজেও সাংবাদিকদের বলেছেন, বিচারপ্রার্থীরা ভোগান্তিতে আছেন। তাই সমস্যার সমাধান হবে। আমরা আদালতে ফিরে যাব। আমাদের একটি ভবন নির্মাণ করে দেবেন বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী।
এছাড়া আদালত চত্বরে রেইনশেড নির্মাণ করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিচারকের সঙ্গে অসদাচরণ: ভিডিও অপসারণের নির্দেশ হাইকোর্টের
আইনমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতের সঙ্কট নিরসন
ঢাকা সিএমএম কোর্ট প্রাঙ্গণের আগুন নিয়ন্ত্রণে
ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালত প্রাঙ্গণের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের নিচতলায় মঙ্গলবার দুপুরে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স সদর দপ্তরের মিডিয়া সেলের গুদাম পরিদর্শক আনোয়ারুল ইসলাম জানান, দুপুর সোয়া ১টার দিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। আর দুপুর ২টা ১২ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
তিনি আরও বলেন, ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট ঘটনাস্থলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে। আরও একটি ইউনিট তাদের সঙ্গে যোগ দেয়ার কথা রয়েছে।
দুপুর আড়াইটার দিকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন: রাজধানীর শ্যামপুরে টেক্সটাইল মিলের আগুন নিয়ন্ত্রণে
আগুনে ঘুমন্ত ব্যবসায়ীর মৃত্যু
ঢামেক হাসপাতালে আগুন: পালানোর সময় রোগীর মৃত্যু
নীরব হত্যা: ৫ শিক্ষার্থীর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি
ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল সনি-তে প্রচারিত ‘ক্রাইম পেট্রোল’ সিরিয়াল দেখে অপহরণ ও পরে হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছে বলে পাঁচ কিশোর খুলনার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
খুলনার ডুমুরিয়ার এসিজিবি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র নীরব মন্ডল হত্যা এবং মুক্তিপণ হিসেবে ৩০ লাখ টাকা দাবি করার কথাও প্রকাশ করে তারা।
কিশোর অপরাধীদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-২ এর বিচারক রনক জাহান।
আদালতের সূত্র জানায়, শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বিকাল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত পাঁচ কিশোর পর্যায়ক্রমে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জাবানবন্দি প্রদান করে। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় তাদের শনিবার সংশোধানাগারে পাঠানো হবে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের শিশু: ভাইরাসের নীরব শিকার
এদিকে গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরা দেড় মাস আগে ভারতের জনপ্রিয় টিভি সিরিয়াল ক্রাইম পেট্রোল দেখে অপহরণের বিষয়ে তামিল নেয়। এ সময় থেকে তারা নীরব মন্ডলকে টার্গেট করে। সুযোগ খুঁজতে থাকে কীভাবে নীরবকে অপহরণ করা যায়।
আদালত সূত্রে আরও জানা যায়, তারা পাঁচ জনের একটি টিম গঠন করে। কিশোর আসামি হীরক সরস্বতী পূজার আগে ও পরে নীরবকে অপহরণের টার্গেট নেয়। কিন্তু প্রথম ধাপে সে সফল হতে পারেনি। এরপর দায়িত্ব নেয় পিয়াল, কিন্তু সেও ব্যর্থ হয়। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে নীরব মন্ডলকে ডেকে নেয় তারা।
এর আগে হত্যাকাণ্ডের স্থানে অভিযুক্ত স্কুলছাত্র পিতু বাড়ি থেকে নাইলনের রশি, তালা ও চাবি নিয়ে অবস্থান করতে থাকে। অপেক্ষার পর স্কুলের পাশে ওই পরিত্যক্ত ভবনে নীরবকে নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে পিতু বা দ্বীপ গলায় রশি পরিয়ে দেয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই গলায় ফাঁস লাগিয়ে নীরবকে হত্যা করা হয়। মারা যাওয়ার আগে নীরবের সমস্ত শরীর নাড়া দিলে ভয় পেয়ে যায় আসামিরা। পিতু গলার রশি খুলে দেয় আর পিয়াল নীরবকে ধরে রাখে।
নীরবের মৃত্যুর পর তার বাবা শেখর মন্ডলকে ফোন দেয় পিতু। এ সময় পাশে দাঁড়িয়ে ছিল সোহেল। তারা নীরবের বাবার কাছে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এরপর নীরবের বাবা ও তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে সোহেল ফোনের কল বন্ধ করে রাখে। তারা ওই ভবনের পেছনের দরজা তালা দিয়ে রেখে চলে যায়।
তাদের ধারণা ছিল- শুক্র, শনি ও রবিবার (মাঘী পূর্ণিমা) স্কুল ছুটি। এই তিন দিনের মধ্যে তারা সকল আলামত নষ্ট করে ফেলবে যাতে স্কুলে এমন ঘটনা ঘটেছে, কেউ টের না পায়। কিন্তু তা হয়ে উঠেনি। ঘটনার পর রাত ১১ টার দিকে তারা আবারও নীরবের বাবার ব্যবহৃত ফোনে কল করে মুক্তিপণ দাবি করে। আর ওই ফোন কলের সূত্র ধরেই পুলিশের জালে আটকা পড়ে অভিযুক্তরা।
পুলিশ তথ্য-প্রযুক্তির সাহায্যে প্রথমে সোহেলকে আটক করে। পরবর্তীতে অপর অভিযুক্তদের একে একে গ্রেপ্তার করে। সর্বশেষ শুক্রবার রাতে আদালতেও ঘটনার আদ্যপান্ত বর্ণনা দেয় তারা।
ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেখ কনি মিয়া বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে তারা। পরবর্তীতে আদালতে স্বীকারোক্তি দেয়ার কথা তাদের জানালে তারা দিতে রাজি হয়। বিকাল ৪টার দিকে তাদের আদালতে নেয়া হয়। পরে ক্রমান্বয়ে তারা আদালতে জবানবন্দি দিতে থাকে।
উল্লেখ্য, অপহরণ করার পর গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করা সপ্তম শ্রেণির ছাত্র নীরব মন্ডল খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়া পূর্বপাড়া এলাকার পান-সুপারি ব্যবসায়ী শেখর মন্ডলের ছেলে। বৃহস্পতিবার তাকে দেড়টার দিকে অপহরণ ও বেলা ৩টার দিকে গুটুদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একটি পরিত্যক্ত কক্ষে হত্যা করা হয়।
হত্যায় জড়িতরা হচ্ছে-গুটুদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্র সোহেল মোল্লা (১৫), হীরক রায়(১৫) ও পিতু মণ্ডল(১৪), দশম শ্রেণির ছাত্র পিয়াল রায় (১৫) ও ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র দ্বীপ মণ্ডল (১৩)।
এর মধ্যে পিয়ালের বাড়ি ডুমুরিয়ার ভান্ডারপাড়া তেলিগাতি এলাকায় এবং অন্য চারজনের বাড়ি গুটুদিয়া এলাকায়।
আরও পড়ুন: মুক্তিপণের জন্য ক্রাইম পেট্রোলের কায়দায় নীরবকে অপহরণের পর হত্যা
‘নীরব ঘাতক স্লিপ এপনিয়া’
৪১ জমজ সহোদরাকে ভিকারুননিসা স্কুলে ভর্তি নিতে নির্দেশ
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রথম শ্রেণিতে ৪১ সহোদরা/জমজকে ভর্তির নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট।
অভিভাবকের করা রিটের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের এবং বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ ওই ৪১ শিক্ষার্থীর পক্ষে এ আদেশ দেন।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এবিএম আলতাফ হোসেন ও আইনজীবী শফিকুর রহমান।
আরও পড়ুন: ভিকারুননিসায় নতুন অধ্যক্ষের যোগদানে ‘বাধা নেই’
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
পরে আইনজীবী এবিএম আলতাফ হোসেন জানান, বেসরকারি স্কুল, স্কুল অ্যান্ড কলেজ (মাধ্যমিক, নিম্ন মাধ্যমিক ও সংযুক্ত প্রাথমিক স্তর) শিক্ষার্থী ভর্তির নীতিমালা, ২০২২ অনুসারে কোনো প্রতিষ্ঠানে আবেদনকারী শিক্ষার্থীর সহোদর/সহোদরা বা জমজ ভাই/বোনকে যদি আগে থেকে অধ্যয়নরত থাকে সে সকল সহোদর/জমজকে সংশ্লিষ্ট ভর্তি কমিটি আবেদন যাচাই-বাছাই করে ভর্তির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
এই বিধান মতে ৪১ জন সহোদর/জমজ প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন করে। কিন্তু ১৬ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি পরিপত্র দেয়।
যেখানে বলা হয়, শুধু ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের জন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে এন্ট্রি শ্রেণিসহ অন্যান্য শ্রেণিতে মোট আসনের অতিরিক্ত পাঁচ শতাংশ শিক্ষার্থী সহোদর/জমজ ভর্তির জন্য আবেদনকারীদের মধ্যে থেকে ভর্তি করাতে পারবে।
এ বিধানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ রিটটি করা হয়। কারণ তারা যখন আবেদন করে তখন পাঁচ শতাংশের বিধান ছিল না। এ কারণে আদালত এই ৪১ জনের ক্ষেত্রে ওই বিধান স্থগিত করে রুল জারি করেছেন।
পাশাপাশি তাদের ভর্তি করাতে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান আইনজীবী এবিএম আলতাফ হোসেন।
আরও পড়ুন: স্থায়ী ক্যাম্পাসের দাবি: অধ্যক্ষের আশ্বাসে সড়ক ছাড়লো ভিকারুননিসার শিক্ষার্থীরা
ভিকারুননিসায় অধ্যক্ষ নিয়োগ স্থগিতের আবেদনে সাড়া দেয়নি চেম্বার বিচারপতি
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ফারাবীর ৭ বছরের কারাদণ্ড
ইমামকে হত্যার হুমকি দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার অভিযোগে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনে করা মামলায় শফিউর রহমান ফারাবীকে সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
কারাদণ্ডের পাশাপাশি তাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে তাকে আরও ৬ মাসের কারাভোগ করতে হবে বলে জানান ওই আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর নজরুল ইসলাম শামীম।
সোমবার ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াত এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার আগে আসামিকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। রায় ঘোষণার পর সাজা পরোয়ানা দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানিমূলক ধর্মীয় কটূক্তিসহ বিভিন্ন অভিযোগে রাজধানীর শেরে বাংলা নগর থানায় ২০১৪ সালের ২৩ জুলাই শফিউর রহমান ফারাবীর বিরুদ্ধে মামলা হয়। মামলাটি তদন্ত করে ২০১৫ সালের ২০ আগস্ট তার বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের ৫৭(২) ধারায় আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ।
আরও পড়ুন: রাজাকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ায় থাই যুবকের ২৮ বছরের কারাদণ্ড
অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে ২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি শফিউর রহমান ফারাবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। মামলা প্রমাণের জন্য রাষ্ট্রপক্ষ ৬ জন সাক্ষীকে উপস্থাপন করেন।
২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে শাহবাগ আন্দোলনের কর্মী ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারের জানাজা পড়ানো ইমামকে হত্যার হুমকি দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন শফিউর রহমান ফারাবী। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করতেন। তবে পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ২০১০ সালে তিনি হিযবুত তাহরীরে সক্রিয় হয়ে পড়েন। বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় সন্দেহজনক আসামি হিসেবে ২০১৫ সালের ২ মার্চ রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
লেখক-ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় ২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি শফিউর রহমান ফারাবীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ঢাকার সন্ত্রাস বিরোধী ট্রাইবুনাল।
আরও পড়ুন: দোষ স্বীকার করায় কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহিমকে কারাদণ্ড
ঢাবি শিক্ষার্থী খুনের মামলায় ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
ডাণ্ডাবেড়ি-হাতকড়া পরানোর নীতিমালা করতে কমিটি গঠনে রুল
হাজতিদের ডাণ্ডাবেড়ি ও হাতকড়া পরানোর বিষয়ে যথাযথ নীতিমালা প্রণয়নে কমিটি গঠনের কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
এছাড়া ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে জানাজায় নিয়ে গাজীপুরের আলী আজম ও শরীয়তপুরের সেলিম রেজাকে কেন ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে না, সেটাও জানতে চেয়েছেন আদালত।
সোমবার (৩০ জানুয়ারি)জনস্বার্থে করা এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রুল জারি করেন।
চার সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, পুলিশের আইজি, কারা মহাপরিদর্শক, ঢাকার জেলা প্রশাসক, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক, গাজীপুরের পুলিশ সুপার, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার, কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবং শরিয়তপুরের পালং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: স্বাস্থ্যের ডিজিকে সেবা নিশ্চিত করতে বললেন হাইকোর্ট
গণমাধ্যমে প্রকাশিত এসংক্রান্ত কয়েকটি প্রতিবেদন যুক্ত করে এর আগে রিটটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট মাহমুদ হাসান এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
গত ২৪ জানুয়ারি কারাগারে থাকা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ব্যক্তিদের প্যারোলে মুক্তি দিয়ে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে জানাজা বা কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে নিয়ে আসার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টের ভিত্তিতে তিনি এ রিট করেন।
গত ২০ ডিসেম্বর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, হাতকড়া আর ডাণ্ডাবেড়ি নিয়ে মায়ের জানাজা পড়লেন গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আলী আজম। মায়ের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে জেলা কারাগার থেকে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে নিজ বাড়ি কালিয়াকৈরের পাবরিয়াচালা এলাকায় জানাজায় উপস্থিত হন তিনি।
১৭ জানুয়ারি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শরীয়তপুরে হাতে হাতকড়া আর পায়ে ডাণ্ডাবেড়ি পরা অবস্থায় মায়ের জানাজায় অংশ নিলেন সেলিম রেজা নামে ছাত্রদলের এক কেন্দ্রীয় নেতা। মায়ের মৃত্যুতে কারাগার থেকে প্যারোলে মুক্তি পেলেও জানাজার সময় তার হাতকড়া ও ডাণ্ডাবেড়ি খোলা হয়নি।
শরীয়তপুর সদর উপজেলার আনোয়ার হোসেন মুন্সির ছেলে সেলিম রেজা ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক।
গত ৭ ডিসেম্বর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে পুলিশ তাকে আটক করে। এরপর ১০ ডিসেম্বর পল্টন থানার নাশকতার একটি মামলায় সেলিম রেজাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
তিনি গাজীপুরের কাশিমপুরে কেন্দ্রীয় কারাগারের ছিলেন।
আইনজীবী কায়সার কামাল বলেন, এই দুটি ঘটনা উদ্দেশ্যে প্রণোদিত এবং সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আর প্রিজন অ্যাক্ট ১৮৯৪ সালের। এটার পরিবর্তন দরকার। এ কারণে জনস্বার্থে রিট করি। প্রাথমিক শুনানি শেষে আদালত রুল জারি করেছেন।
এদিকে গত ২২ জানুয়ারি গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের বেআইনিভাবে ডান্ডাবেড়ি ও হাতকড়া পরানো বন্ধ এবং এ সম্পর্কে একটি নীতিমালা করার জন্য সরকারকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়।
২২ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের ১০ জন আইনজীবীর পক্ষে অ্যাডভোকেট আসাদ উদ্দিন এ নোটিশ পাঠান।
আরও পড়ুন: বিচারকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার: নীলফামারীর বার সভাপতিহ ৩ আইনজীবীকে হাইকোর্টে তলব
সন্তানের অভিভাবক হিসেবে মায়ের স্বীকৃতি দিলেন হাইকোর্ট
ধর্ষণ মামলা: ৬২ বছরে আসামি, ৮৫ বছরে খালাস
‘আমি যখন মামলার আসামি হই, তখন আমার বয়স ছিল ৬২ বছর। মনে মনে ভাবতাম আসামি হয়েই হয়তো মরতে হবে। আল্লাহর কাছে অশেষ শুকরিয়া যে মৃত্যুর আগেই আমাকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত।’
মঙ্গলবার দুপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল হবিগঞ্জ-১ এর রায়ে খালাস পেয়ে আইনজীবীর কক্ষে বসে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে কথাগুলো বলছিলেন প্রায় ৮৪ বছরের বৃদ্ধ দরছ মিয়া।
বিচারক সুদীপ্ত দাশ ধর্ষণ মামলার দায় থেকে তাকে বেকসুর খালাস দেন।
আরও পড়ুন: কলাবাগানে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ-হত্যা: দিহানের জামিন আবেদন খারিজ
তিনি বলেন, ‘কবরে যাওযার বয়সে এসে ধর্ষণের মতো একটা খারাপ মামলায় জড়িয়ে পড়ায় ছেলে মেয়ে নাতি নাতনীদের কাছে নিজেকে খুব ছোট মনে হতো।’
দরছ মিয়ার বাড়ি বাহুবলের পুটিজুরী ইউনিয়নের হরিশচন্দ্রপুর গ্রামে। পেশায় কৃষক।
তাঁর পাঁচ ছেলে চার মেয়ে। আছে ১২ জন নাতি নাতনী।
১৯৯৯ সালে ১৮ জুলাই আদালতে একটি ধর্ষণ মামলা হয় তিনিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে। মামলাটি করেন একই গ্রামের রাজা মিয়ার স্ত্রী লতিফা বিবি।
ওই মামলায় অপর দুই আসামি হলেন-দরছ মিয়ার খালাতো ভাই মঙ্গলকাপন গ্রামের বুলু মিয়া এবং একই গ্রামের জনৈক ইমান উল্লা (৩৫)।
মামলার ঘটনার সময় ১৯৩৭ সালে জন্ম নেয়া দরছ মিয়ার বয়স ছিল ৬২ বছর।
দরছ মিয়া বলেন, লতিফার স্বামী রাজা মিয়া তার এক কন্যাকে পালিয়ে নিয়ে বিয়ে করে। বিয়ে মেনে না নেযায় রাজা মিয়া আমার বিরুদ্ধে এর আগে মিথ্যা মামলা দিয়ে হেনস্থা করে। পরবর্তীতে তার কন্যা স্বামীর সংসার থেকে চলে আসে। রাজা মিয়া পেশায় একজন গাছচোর ও জুয়ারী ছিল।
তিনি বলেন, গ্রামের কতিপয় অসৎ লোকের সহযোগিতায় রাজা মিয়ার বর্তমান স্ত্রী লতিফা বিবি বাদী হয়ে ১৯৯৯ সালের ২১ জুলাই আদালতে ১৯৯৫ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন (বিশেষ বিধান) আইনে একটি ধর্ষণ মামলা করেন।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, ওই বছরের ১৮ জুলাই রাতে প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে ঘর থেকে বের হলে দরছ মিয়া, বুলু মিয়া ও ইমান আলী তাকে ধরে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করেন।
২০০১ সালের ২৪ জানুয়ারি পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়। মামলায় ১২ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়। মামলা চলাবস্থায় গত দুই বছর আগে আসামি বুলু মিয়া মারা যান।
দরছ মিয়া জানান, প্রায় ২৪ বছর আইনী লড়াইয়ে ১০/১২ একর জমি বিক্রি করতে হয়েছে। আমাকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে বাদী লতিফা বিবি ভাল নেই। এখন স্বামী হত্যা মামলায় ছেলে জুয়েলকে নিয়ে নিজেই পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
আরও পড়ুন: বাসাইলের সাবেক ইউএনও মঞ্জুরের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
নাটোরে ধর্ষণচেষ্টা মামলায় বৃদ্ধের ১০ বছরের কারাদণ্ড
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ১১ মামলা: হাজিরার জন্য ১৫ মে দিন ধার্য আদালতের
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা হত্যা ও রাষ্ট্রদ্রোহ ১১টি মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির তারিখ পিছিয়ে আগামি ১৫ মে ধার্য করেছেন আদালত।
সোমবার কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের ২ নম্বর ভবনে স্থাপিত অস্থায়ী ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো.আছাদুজ্জামানের আদালতে মামলাগুলো শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু খালেদা জিয়ার পক্ষে অধিকাংশ মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট।
এজন্য খালেদা জিয়ার আইনজীবী শুনানি পেছানোর আবেদন করেন। আদালত সময়ের আবেদন মঞ্জুর করেন এবং আগামী ১৫ মে নতুন তারিখ ধার্য করেন।
সংশ্লিষ্ট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল এতথ্য জানান।
মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে- রাজধানীর দারুস সালাম থানায় করা নাশকতার আটটি, যাত্রাবাড়ী থানার দুটি ও রাষ্ট্রদ্রোহের একটি মামলা। সব মামলার কার্যক্রম খালেদা জিয়ার পক্ষে স্থগিত করেন হাইকোর্ট।
১১ মামলার মধ্যে যাত্রাবাড়ী থানার একটি হত্যা মামলায় অভিযোগপত্র গ্রহণের বিষয়ে শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল। অপর ১০ মামলা ছিল অভিযোগ শুনানির জন্য।
আরও পড়ুন: দুটি মামলায় খালেদা জিয়ার জামিনের মেয়াদ বাড়াল হাইকোর্ট
মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যে করার অভিযোগে ২০১৬ সালের ২৫ জানুয়ারি আদালতে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলাটি দায়ের করা হয়।
এদিকে যাত্রাবাড়ী থানার মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৩ জানুয়ারি রাতে যাত্রাবাড়ীর কাঠেরপুল এলাকায় গ্লোরি পরিবহনের যাত্রীবাহী একটি বাসে পেট্রোল বোমা হামলা হয়। এতে বাসের ২৯ যাত্রী দগ্ধ হন। পরে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ১ ফেব্রুয়ারি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নূর আলম (৬০) নামের এক যাত্রী।
ওই ঘটনায় ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করে যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করেন থানার উপ-পরিদর্শক এসআই কে এম নুরুজ্জামান।
ওই বছরের ৬ মে খালেদা জিয়াসহ ৩৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন ডিবি পুলিশের পরিদর্শক বশির আহমেদ।
অন্যদিকে, ২০১৫ সালে দারুস সালাম থানা এলাকায় নাশকতার অভিযোগে আটটি মামলা দায়ের করা হয়। এই আট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আসামি করা হয়।
২০১৭ সালের বিভিন্ন সময়ে মামলাগুলোয় অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। সবগুলো মামলায় খালেদা জিয়াকে পলাতক দেখিয়ে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়। পরে খালেদা জিয়া মামলাগুলোয় আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন।
আরও পড়ুন: নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়াকে আর কারাগারে পাঠাবে না সরকার: আইনমন্ত্রী
গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা: খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চার্জ গঠন শুনানি ২৯ জানুয়ারি
চট্টগ্রাম আদালত থেকে পালিয়ে যাওয়া আসামি গ্রেপ্তার
চট্টগ্রাম আদালত থেকে হাতকড়াসহ পালিয়ে যাওয়া আসামি শামসুল হক ওরফে বাচ্চুকে (৭১) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রবিবার (২২ জানুয়ারি) সকাল সোয়া ১০টার দিকে সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী বাস-স্ট্যান্ড থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে ৩৭ পিস ইয়াবা জব্দ করার দাবি করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম।
এর আগে একটি মাদক মামলায় গ্রেপ্তারের পর ৫ জানুয়ারি বিকালে তাকে চট্টগ্রাম জেলা জজ আদালতে হাজির করলে সেখান থেকে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যায়।
আরও পড়ুন: প্রবাসীকে কুপিয়ে হত্যা, ১১ আসামি গ্রেপ্তার
গ্রেপ্তার শামছুল হক কুমিল্লার কালীবাজার ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর এলাকার মৃত রহমত আলীর ছেলে। থাকতেন রাজধানীর কেরানীগঞ্জ পৌরসভা এলাকায়। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় সাতটি মামলা রয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন।
পুলিশ জানায়, ৪ জানুয়ারি চন্দনাইশ পৌরসভা উত্তর গাছবাড়িয়া এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিশেষ চেকপোস্ট বসায় পুলিশ। ওইদিন দুপুরে একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যাত্রীবাহী বাস থেকে এক হাজার পিস ইয়াবাসহ শামসুল হককে গ্রেপ্তার করে।
এরপর তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করে পরদিন ৫ জানুয়ারি তাকে আদালতে পাঠানো হয়।
আদালতে তাকে মাদক মামলার জিআরও শাখায় বুঝিয়ে দেয় চন্দনাইশ থানা পুলিশ।
এরপর তাকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আদালতের আদেশের পর শামসুলকে কোর্ট হাজতে রাখা হয়।
আসামিকে হাজতে রাখার পর ওইদিন সন্ধ্যায় তাকে কারাগারে পাঠানোর জন্য হ্যান্ডকাফ লাগানো হয়।
এরপর তাকে হাজতখানার সামনে সেরেস্তা টেবিলের পেছনে একটি বেঞ্চে বসিয়ে রাখার পর এক ফাঁকে শামসুল পালিয়ে যায়।
৫ জানুয়ারি বিকালে এ ঘটনা ঘটলে পরদিন ৬ জানুয়ারি নগরের কোতোয়ালি থানায় সদর কোর্ট পরিদর্শক জাকের হোসাইন মাহমুদ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।
এ ঘটনায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের দায়িত্বে অবহেলা ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখতে চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শিল্পাঞ্চল ও ডিবি) আসাদুজ্জামানকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করে জেলা পুলিশ।
আরও পড়ুন: ১০ বছর আত্মগোপনের পর মিরপুরে ২২ মামলার আসামি গ্রেপ্তার
রাজধানীতে সাজাপ্রাপ্ত ২ পলাতক আসামি গ্রেপ্তার
দুদকের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া ৪৭৩ নথি আদালতে দাখিলের নির্দেশ
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের নেতৃত্বাধীন কমিশনের শেষ পাঁচ মাসে ৪০৮টি দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধানে কোনো তথ্য-প্রমাণ না থাকায় অনুসন্ধানের পরিসমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
এছাড়া ৬৩টি মামলার তদন্ত শেষে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করে।
এদিকে অনুসন্ধানের পরিসমাপ্তি ঘোষিত ও চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয়া মোট ৪৭৩টি নথি দুদককে আদালতে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এক সুয়োমটো রুলের শুনানিকালে রবিবার বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই নির্দেশ দেন।
আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন খুরশীদ আলম খান এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।
আদেশের পর দুদক আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, ২০২০ সালের ১০ অক্টোবর থেকে ২০২১ সালের ১০ মার্চ পর্যন্ত যে ৪০৮টি অনুসন্ধানের পরিসমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে প্রতিটির ব্যাপারে ব্যাখ্যা দিয়েছি।
তিনি বলেন, কেন অনুসন্ধান পরিসমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে তা তুলে ধরেছি। তখন আদালত এই ৪০৮টিসহ মোট ৪৭৩টি নথি দেখতে চেয়েছেন।
আমরা বলেছি, আমাদের কোন আপত্তি নেই। ১২ই ফেব্রুয়ারি এই নথিগুলো দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
এছাড়া আমরা ওইদিন অনুসন্ধান করে পরিসমাপ্তি ঘোষণা করাও চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া মোট ৪৭৩টি নথি দাখিল করবো।
আরও পড়ুন: ধানমন্ডিতে অননুমোদিত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান: চারজনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, তথ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় দুদক ২০২০ থেকে ২০২১ সালে অনুসন্ধান পর্যায়ে ৪১০টি অভিযোগের পরিসমাপ্তি ঘটিয়েছেন এবং ৬৩টি মামলায় তদন্ত করে চূড়ান্ত রিপোর্ট দিয়েছেন।
তিনি বলেন, হাইকোর্ট সেই নথিগুলো দাখিল করতে বলেছেন। পত্রিকায় যে অভিযোগ এসেছে ‘দুদক অনুসন্ধান বাণিজ্য করেছেন’, সেটা জনসম্মুখে এসেছে। এই অভিযোগের একটা সুরাহা হওয়া দরকার।
এজন্য হাইকোর্ট অনুসন্ধানের পরিসমাপ্তি ঘটানো এবং চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয়া মোট ৪৭৩টি নথি দুদককে দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
এছাড়া আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে ফের শুনানি হবে।
২০২১ সালের ১৪ মার্চ দৈনিক ইনকিলাবে ‘দুদকে অনুসন্ধান বাণিজ্য’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি প্রকাশ হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদায়ের আগে দুর্নীতির বহু রাঘব-বোয়ালকে ছেড়ে দেন দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।
তাদের দায়মুক্তি আড়াল করতে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করেন কিছু নিরীহ ও দুর্বল ব্যক্তিকে। সব মিলিয়ে শেষ পাঁচ মাসে তিনি দুই শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে অব্যাহতি (দায়মুক্তি) দেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড’ এবং ‘সফার্স’র মালিক দিলীপ কুমার আগরওয়ালাসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সোনা এবং হীরা চোরাচালানের মাধ্যমে রাজস্য ফাঁকিসহ শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ছিল। এটি ‘নথিভুক্ত’ করা হয় ২৩ নভেম্বর। এটি স্বাক্ষর করেন মহাপরিচালক সাঈদ মাহবুব খান। কয়েকবার কর্মকর্তা পরিবর্তনের পর উপপরিচালক মোশাররফ হোসাইন মৃধার নেতৃত্বে একটি টিম অভিযোগটি অনুসন্ধান করে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের গুরুত্বপূর্ণ ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (এফএফডি) ও সেলস ডাটা কন্ট্রোলারসহ (এসডিসি) ফিসক্যাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ইএফডিএমএস) কেনার দরপত্রে অভিজ্ঞতাহীন চীনা কোম্পানি এসজেডজেডটিকে ২৪৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকার কার্যাদেশ পাইয়ে দেয়ার অভিযোগ ছিল প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।
এর সঙ্গে ভ্যাট অনলাইন প্রজেক্টের ডেপুটি প্রজেক্ট ডিরেক্টর শামীম আরা বেগম, ডেপুটি কমিশনার মো. খায়রুল আলম ও ডেপুটি কমিশনার রাবেয়া খাতুন, এনবিআরের সদস্য ও সিস্টেম ম্যানেজার মো. শফিকুর রহমান, ভ্যাট অনলাইনের প্রকল্প পরিচালক সৈয়দ মুশফিকুর রহমান, আইসিটি ডিভিশনের সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট মো. নবীর উদ্দীন, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের অ্যাডমিনিস্ট্রেটর সুমন কুমার পাটওয়ারী, বৃহৎ করদাতা ইউনিটের কমিশনার মোহাম্মদ মুবিনুল কবীর, এনবিআর-এর মূসক ও ভ্যাট নীতি মেম্বার ড. আব্দুল মান্নান শিকদার ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন।
২০১৬ সালের ১০ মার্চ ইকবাল মাহমুদ দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন।
এছাড়া ২০২১ সালের ১০ মার্চ তিনি অবসরে যান।
প্রকাশিত এই প্রতিবেদন আমলে নিয়ে হাইকোর্টের উপরোক্ত বেঞ্চ ২০২১ সালের ১৬ মার্চ দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ শেষ পাঁচ মাসে কতজনকে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে অব্যাহতি (দায়মুক্তি) দিয়েছেন তার তালিকা চান হাইকোর্ট।
একইসঙ্গে প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রতিবেদককে এ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য আদালতে দাখিল করতে বলা হয়।
ওই আদেশ অনুযায়ী রবিবার দুদক একটি প্রতিবেদন দাখিল করে হাইকোর্টে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শেষ পাঁচ মাসে চার হাজার ৪৮১টি অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন ছিল। এই সময়ে কমিশন নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ১৫৪টি অভিযোগের বিপরীতে মামলা দায়েরের এবং সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের অভাবে ৪০৮টি অভিযোগ পরিসমাপ্তির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
দুটি অভিযোগ কমিশন অন্যভাবে নিষ্পত্তি করে।
এছাড়া একই সময়ে এক হাজার ৫৭৮টি মামলা তদন্তাধীন ছিল, তার মধ্যে ৫৭টি মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
১৬৫টি মামলায় চার্জশীট দাখিল করা হয় এবং ছয়টি মামলা অন্যভাবে নিস্পত্তি করা হয়।
এসবের বিস্তারিত বিবরণী তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে।
আদালত প্রতিবেদন দেখে পরিসমাপ্তি ঘোষণা, অন্যভাবে নিস্পত্তি করা এবং চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া মোট ৪৭৩টি নথি দাখিলের নির্দেশ দেন।
আরও পড়ুন: ডিবি প্রধান ও আরও ৯জনের বিরুদ্ধে বিএনপির অভিযোগ আদালতে খারিজ
তারেক-জোবায়দাকে আদালতে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির নির্দেশ