কুড়িগ্রাম
কুড়িগ্রামে বিলুপ্তপ্রায় ৩টি তক্ষক উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৫
কুড়িগ্রাম নাগেশ্বরী উপজেলার কচাকাটা থানা এলাকা থেকে বিলুপ্ত প্রজাতির তিনটি তক্ষক উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় তক্ষক বেচা-কেনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বুধবার (১৭ জানুয়ারি) ভোরে কচাকাটা থানাধীন বলদিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ বলদিয়া পালপাড়া গ্রামের মো. মনির উদ্দিনের বাড়ি থেকে তক্ষক তিনটি উদ্ধার করে পুলিশ।
আরও পড়ুন: পলাশবাড়িতে বিরল প্রজাতির তক্ষকসহ আটক ৪
বুধবার (১৭ জানুয়ারি) বিকালে কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম।
তিনি জানান, বুধবার ভোরে কচাকাটা থানা পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে তিনটি তক্ষক উদ্ধার করে।
আরও পড়ুন: পঞ্চগড়ে তক্ষক উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৫
কুড়িগ্রামে ওঠানামা করছে তাপমাত্রা, কমেনি শীতের দাপট
টানা শীত ও কনকনে ঠান্ডায় বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে কুড়িগ্রামের জনজীবন। এর প্রভাব পড়েছে জেলার কৃষি ক্ষেত্রেও।
তাপমাত্রা ওঠানামা করলেও কমেনি শীতের দাপট। কনকনে ঠান্ডায় যবুথবু হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সুর্যের দেখা মিলছে না। দিনের অধিকাংশ সময় থাকছে মেঘাচ্ছন্ন।
বুধবার (১৭ জানুয়ারি) সকালে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল ছিল ১২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তীব্র ঠান্ডায় গরম কাপড়ের অভাবে খড়কুটো জ্বালিয়ে উষ্ণতা নিচ্ছে শীত কাতর মানুষগুলো। ঠান্ডায় কাহিল হয়ে পড়েছে গৃহপালিত পশু-পাখিরাও।
শীত ও কনকনে ঠান্ডায় হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, সর্দি কাশিসহ ঠান্ডাজনিত রোগ।
সরেজমিনে এসব চিত্র দেখতে পান ইউএনবির কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি।
গত ১ সপ্তাহে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ৪৪৫ জন। আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশ শিশু। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ৭০ জন।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে তীব্র ঠান্ডায় বীজতলা ও ফসল নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষকরা
কুড়িগ্রামে বিপন্ন প্রজাতির মদনটাক পাখি উদ্ধার
কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার সিন্ধুরমতি গ্রাম থেকে বিপন্ন প্রজাতির মদনটাক (হাড়গিলা) উদ্ধার করেছে বন বিভাগ। এসময় পাখিটির একটি ডানা ভাঙা ছিল।
মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) বিকালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে পাখিটিকে চট্টগ্রামের শেখ রাসেল এভিয়ারি অ্যান্ড ইকোপার্ক রাঙুনিয়ার উদ্দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করে বন বিভাগ।
আরও পড়ুন: নড়াইলের অরুণিমায় অতিথি পাখি দেখতে পর্যটকদের ভিড়
এর আগে সোমবার (১৫ জানুয়ারি) দুপুরে বন বিভাগের আওতায় কুড়িগ্রামের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের স্বেচ্ছাসেবক সদস্য মো. আব্দুর রশিদ, সাইদ ও জুয়েল রানা স্থানীয় রতনের বাড়ি থেকে মদনটাকটিকে উদ্ধার করেন।
পরে কুড়িগ্রাম সামাজিক বনায়ন ও নার্সারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পাখিটিকে ভেটেরিনারি চিকিৎসা দেওয়া হয়। চিকিৎসা শেষে পাখিটিকে অবমুক্তের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রামে পাঠায় বন বিভাগ।
আরও পড়ুন: বিষ দিয়ে ২ শতাধিক পাখি নিধনের অভিযোগ সাবেক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে
গ্রিন ভিলেজ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুর রশিদ বলেন, আমরা সামাজিক কাজ করে থাকি। পাশাপাশি বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের স্বেচ্ছাসেবক সদস্য। আমরা আহত মদনটাকটি সিন্ধুরমতি গ্রামে গিয়ে রতনের বাড়ি থেকে উদ্ধার করি।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে পাখিটি বন বিভাগের আওতায় চট্টগ্রামে পাঠানো হচ্ছে।
রংপুর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোল্লা মো. মিজানুর রহমান বলেন, মদনটাক পাখিটিকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে কুড়িগ্রাম সামাজিক বনায়ন ও নার্সারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাগেরহাটে ফাঁদ পেতে অবাধে চলছে পাখি নিধন
কুড়িগ্রামে তীব্র ঠান্ডায় বীজতলা ও ফসল নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষকরা
কুড়িগ্রামে ঘন কুয়াশা আর শীতের প্রকোপ দিন দিন বেড়েই চলছে। রাতভর বৃষ্টির মতো ঝরে পড়া কুয়াশা আর দিনের বেলা হিম বাতাসে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তীব্র ঠান্ডায় কাজ করতে পারছেন না শ্রমজীবীরা। কাজের ফাঁকে শুকনো খড় জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন শ্রমিকরা।
এদিকে তীব্র শীতে বোরো আবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। কনকনে ঠান্ডার হাত থেকে রক্ষা পেতে অনেকে স্বচ্ছ সাদা রঙের প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে রাখছেন বীজতলা। এমন বৈরি আবহাওয়ায় জমিতে চারা রোপণের সাহস পাচ্ছেন না কৃষকরা।
কথা হয় কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙা গ্রামের কৃষক আনিছুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, বোরো আবাদের জন্য বীজতলার চারার পরিণত বয়স হয়েছে। কিন্তু প্রচণ্ড ঠান্ডা ও কুয়াশার কারণে জমিতে রোপণ করতে পারছি না। এদিকে বীজতলাও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে প্লাস্টিক দিয়ে বীজতলা ঢেকে রেখেছি।
আরেক কৃষক মো. মন্তাজ আলী বলেন, যে শীত পড়ছে তাতে কৃষি আবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। বিশেষ করে আলু খেত, বীজতলায় হিম ধরা শুরু করেছে। স্প্রে করতেছি কোনো কাজ হচ্ছে না। কী হবে আল্লাহ জানে।
আরও পড়ুন: তীব্র শীতে বোরো ধানের বীজতলা ও সবজির ক্ষতির আশঙ্কায় যশোরের কৃষকরা
শ্রমিক মো. রহমত আলী বলেন, ‘বাহে প্রচণ্ড ঠান্ডা পড়ছে। হাত পা টট্টরিয়া নাগছে (বরফ মত)। মাঠে এক-দেড় ঘণ্টা কাজ করলে আর কাজ করা যায় না। কাজের ফাঁকে আগুন তাপা নাগে। কী করমো কাজ না করলে পেটে কি ভাত জুটবে?’
কুড়িগ্রাম কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার অফিসের কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র বলেন, রবিবার জেলায় সকাল ৬টায় ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী দুই-তিন দিন এমন তাপমাত্রা অব্যাহত থাকবে। তবে মাসের শেষে একটি শৈত্য প্রবাহের আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান তিনি।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, জেলায় সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর জমিতে বীজতলা রয়েছে। ঘন কুয়াশা ও তীব্র ঠান্ডায় কৃষকদের বোরো আবাদে বিলম্বিত হচ্ছে। বীজতলা এখনও নষ্ট হওয়া শুরু করেনি। তবে তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকলে চারা খাদ্য গ্রহণ করতে না পারায় পাতা হলুদ হয়ে যায়। বীজতলা নষ্টের হাত থেকে বাঁচাতে কৃষকদের বাড়তি যত্ন ও ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন: শৈত্য প্রবাহ থেকে ফসল রক্ষায় যে পরামর্শ দিল কৃষি মন্ত্রণালয়
কুড়িগ্রামে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল চালক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় গুরুতর আহত হয়েছে আরও একজন।
সোমবার (১৫ জানুয়ারি) রাত ১০টার দিকে উপজেলার কুড়িগ্রাম-নাগেশ্বরী সড়কের পায়রাডাঙা পল্লী বিদ্যুৎ অফিস সংলগ্ন এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত তাইবুল ইসলাম (২৫) উপজেলার নুনখাওয়া ইউনিয়নের মাঝের চর এলাকার মো. উকিল আলীর ছেলে।
আরও পড়ুন: কাহালুতে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেলের চালক নিহত
স্থানীয়রা জানান, নিহত তাইবুল দক্ষিণ ব্যাপারীর হাটের নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে নাগেশ্বরীর দিকে যাওয়ার পথে পায়রাডাঙা পার হওয়ার পরেই অজ্ঞাত এক গাড়ির ধাক্কায় মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পরে ঘটনাস্থলেই মারা যান। তার সঙ্গে থাকা আরও এক আরোহী গুরুতর আহত হয়েছেন।
নাগেশ্বরী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মকবুল হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলা হবে।
তিনি আরও বলেন, পরবর্তীতে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আহত যুবককে নাগেশ্বরী হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২
কুড়িগ্রামে ৬ দিন ধরে দেখা নেই সূর্যের
কুড়িগ্রামে কনকনে ঠান্ডা ও ঘন কুয়াশায় ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। তীব্র ঠান্ডায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী ও খেটে খাওয়া মানুষ।
এদিকে কুড়িগ্রামে সোমবার (১৫ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আরও পড়ুন: ঠান্ডা-শীতে কাবু চাঁদপুর, বিপাকে খেটে খাওয়া মানুষ
কনকনে ঠান্ডায় কাজে বের হতে পারছে না মানুষ। বৃষ্টির ফোঁটার মতো পড়ছে কুয়াশা। এই ঠান্ডায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সকালে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা।
জেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত ১৬টি নদ-নদী তীরবর্তী চার শতাধিক চর ও দ্বীপ চরের মানুষের দুর্ভোগের সীমা নেই। কনকনে ঠান্ডায় শীত নিবারণের জন্য তারা খড়কুটো জ্বালাচ্ছেন।
এছাড়া কনকনে ঠান্ডা উপেক্ষা করে মাঠে কাজ করছেন অনেক কৃষকেরা।
আরও পড়ুন: সিরাজগঞ্জে ঠান্ডা বাতাস ও ঘন কুয়াশায় জনজীবন বিপর্যস্ত
সারাদিন আকাশ কুয়াশায় ঢাকা। সূর্যের আলো ছড়াতে না পারায় শীতের তীব্রতা বেড়েছে। গত ছয় দিন ধরে দেখা মিলছে না সূর্যের। এ অবস্থায় দিন ও রাতের তাপমাত্রা কাছাকাছি চলে আসায় দিনভর ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম পৌর শহরের রিকশাচালক তাজুল ইসলাম বলেন, কয়েক দিন থেকে খুব ঠান্ডা। মানুষ বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না। শহরে লোকজনও অনেক কম, রিকশার যাত্রীও হচ্ছে না। শীতের কারণে আমরাও বিপদে পড়েছি।
আরও পড়ুন: চাঁদপুরে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা, চলতি মাসে ২ শিশুর মৃত্যু
আদর্শ পৌর বাজারের ব্যবসায়ী কাশেম আলী বলেন, আজ সাত, আট দিন থেকে ঠান্ডার মাত্রা বাড়ায় বাজারে লোকসমাগম অনেক কমে গেছে। আমাদের বিক্রিও অনেক কম। খুব একটা প্রয়োজন ছাড়া তো মানুষ বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না।
এদিকে শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগ- শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও সর্দি-কাশি।
হালখাতা করেও ধারের অর্ধেকের বেশি টাকা ওঠেনি শিক্ষকের
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার আন্ধারীঝাড় এম এ এম উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুল আউয়াল বন্ধুদের দেওয়া ধারের টাকা সময়মতো তুলতে না পেরে হালখাতার আয়োজন করেন। এই হালখাতার দিন ঠিক করে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে পাওনাদারদের চিঠি দেন। সেই চিঠিতে দেওয়া নির্ধারিত দিন গতকাল শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) বিকালে হালখাতা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
হালখাতার আয়োজনে কোনো প্রকার কমতি ছিল না। আন্ধারীঝাড় বাজারের সিঙ্গাড়া হটস্পট নামের একটি দোকানে আয়োজন করা হয় এই হালখাতা। এ উপলক্ষে রঙিন কাগজ দিয়ে সাজানো হয় দোকানটি। ছিল চেয়ার-টেবিল, টাকার বাক্সের সামনে সাঁটানো হয় শুভ হালখাতার ব্যানার।
ধারের টাকা পরিশোধে আসা ব্যক্তিদের আপ্যায়ণ করা হয় মাংস বিরিয়ানি দিয়ে। প্যাকেটে করে সবাইকে তা দেওয়া হয়। কেউ খেয়ে গেছেন, আবার কেউ নিয়ে গেছেন।
যারা টাকা পরিশোধ করেছেন তাদের নাম খাতা থেকে কাটা হয়েছে। এদিকে, টাকা যারা ধার নিয়েছিলেন তারা বাদেও পুরো বিষয় দেখতে ভিড় করেন স্থানীয়রা। খোঁজখবর নেন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা
হালখাতায় টাকা পরিশোধ করতে আসা সোলাইমান ইসলাম বলেন, ‘বেশ কিছুদিন আগে শিক্ষক আউয়ালের কাছে ৩ হাজার টাকা হাওলাত নিয়েছিলাম। হালখাতার চিঠি পেয়ে প্রথমে হতভম্ব হলেও আজ হালখাতা করলাম। বিরিয়ানি খেয়ে ধারের টাকা পরিশোধ করেছি।’
জব্বার মিয়া নামে আরেকজন বলেন, ‘সাড়ে ৬ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলাম কয়েক মাস আগে। আজ হালখাতায় পরিশোধ করলাম। বিষয়টা ভালো লেগেছে। এতে ঋণমুক্ত হলাম।’
একই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক আনোয়ারুল হক বলেন, ‘আউয়ালের মন অনেক বড়। তিনি বন্ধু-বান্ধবদের টাকা ধার দিয়ে আনন্দ পান। সেই টাকা তোলার জন্য আজ হালখাতার আয়োজন করেছেন। বিষয়টি নেগেটিভলি না নিয়ে পজেটিভলি নেওয়া দরকার। কারণ, ধার নিয়ে মানুষ এখন দিতে চায় না। সেটা তোলার জন্য এই ব্যতিক্রমী আয়োজন করায় তাকে ধন্যবাদ।’
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা
কুড়িগ্রামে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা
উত্তরের হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশার কনকনে ঠান্ডায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে কুড়িগ্রামের জন-জীবন।
গত মঙ্গলবার থেকে জেলায় দেখা মিলছে না সূর্যের। দিন ও রাতে বৃষ্টির মতো ঝড়ছে কুয়াশা।
শুক্রবার (১২জানুয়ারি) সকাল ৯টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এদিকে, ঠান্ডার প্রকোপে কুড়িগ্রামে বেড়েছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। সর্দি, জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ শীতজনিত নানান রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন বয়স্ক ও শিশুরা।
শীতের রোগীর কারণে বাড়তি চাপ সামলাতে দেখা যায় হাসপাতালের কর্তব্যরত নার্স ও চিকিৎসকদের। শয্যা সংকটে হাসপাতালের মেঝেতেও চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেকেই।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে সূর্যের দেখা মেলেনি ২ দিন, বিপাকে খেটে খাওয়া মানুষ
কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ৭ জনসহ শিশু বিভাগে শীতজনিত রোগে মোট ৬২ জন ও ডায়রিয়া বিভাগে নতুন ৩১ জনসহ মোট ৫৯ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন।
শিশু বিভাগে চিকিৎসা নেওয়া অভিভাবক মো. ফরিদ শেখ বলেন, ‘আমার দেড় বছরের বাচ্চাটা গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে সর্দি বের হচ্ছে ও বমি করছে। সকালে হাসপাতালে নিয়ে আসলাম, চিকিৎসা চলছে।’
আরেক অভিভাবক লিপি বেগম বলেন, ‘গতকাল বিকালে হাসপাতালে আসছি। ঠান্ডার কারণে বাচ্চাটার জ্বর-সর্দি । কয়েকদিন থেকে ঠাণ্ডার প্রকোপ একটু বেশি।’
হাসপাতালের কর্তব্যরত নার্স মোছা. জুলেখা বেগম বলেন, ‘গত ৩ দিনে হাসপাতালের শিশু বিভাগে আর ডায়রিয়া ওর্য়াডে নতুন অনেক রোগী ভর্তি রয়েছেন। ঠান্ডার কারণে রোগ বাড়ায় আমাদের প্রতিদিন রোগীর চাপ সামলাতে হচ্ছে।’
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে তীব্র শীতে বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ
কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শাহীনুর রহমান সরদার বলেন, ‘এ জেলাটি হিমালয়ের কাছে হওয়ায় এখানে ঠান্ডার প্রকোপ একটু বেশি। হাসপাতালে যারা চিকিৎসা নিতে আসছেন অধিকাংশই চরাঞ্চলের মানুষ।’
সরকারিভাবে ১ মাস আগে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হলেও সেটি প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম বলে জানান সাধারণ মানুষ। তারা গরম পোশাকের অভাবে সড়কের পাশে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।
জেলার কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, ঘন কুয়াশার এ দাপট আরও ২-৩ দিন অব্যাহত থাকবে। যার ফলে সূর্যের দেখা পাওয়া কষ্টকর হবে। আগামী সপ্তাহে একটি মৃদু শৈত্যপ্রবাহ দেখা দিতে পারে।
জেলা প্রশাসনের ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার বলেন, ‘ইতোমধ্যে জেলার ৯ উপজেলায় ৪২ হাজারের বেশি কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। আপাতত আমাদের কাছে কোনো মজুত নেই। আমরা ৩০ হাজার কম্বলের চাহিদা পাঠিয়েছি।’
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে ঘন কুয়াশার দাপট কিছুটা কমলেও অনুভূত হাড় কাঁপানো শীত
কুড়িগ্রামে তীব্র শীতে বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ
কুড়িগ্রামে ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতে বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষ। রাতে বৃষ্টির ফোঁটার মতো পড়ছে কুয়াশা।
মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) সকাল ৭টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল ১০টা পর্যন্ত দেখা মেলেনি সূর্যের।
এদিকে রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় কাছাকাছি হওয়ায় দুপুর পর্যন্ত ঠাণ্ডা বেশি অনুভূত হচ্ছে। এ অবস্থায় শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষজন প্রয়োজনীয় গরম কাপড়ের অভাবে সময়মতো কাজে বের হতে পাড়ছেন না।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের কিছুটা উত্তাপ ছড়ালেও বিকাল হতেই তাপমাত্রা আবারও নিম্নগামী হতে থাকে।
সদরের পাঁচগাছী ইউনিয়নের বানিয়া পাড়া এলাকার হাফিজুদ্দি বলেন, ‘ঠাণ্ডায় আমার অবস্থা শেষ। হাতে টাকা-পয়সা নাই, শীতের কাপড় কিনতে পারি নাই। মানুষ একটা জ্যাকেট দিছে সেটা দিয়ে একটু ঠাণ্ডা কমেছে।’
একই এলাকার মান্নান মিয়া বলেন, ‘আজ কুয়াশা কম কিন্তু সেই ঠাণ্ডা। হাত-পা বরফ হয়ে যাচ্ছে। মাঠে কাজ করা যাচ্ছে না। বাতাস কাবু করে ফেলছে।’
সদরের পাঁচগাছী ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আব্দুল বাতেন সরকার বলেন, ‘কিছুদিন আগে মাদরাসার ছাত্রদের জন্য ২০০ কম্বল পেয়েছি, তা বিতরণ করা হয়েছে। আর কোনো শীতবস্ত্র পাইনি। তবে পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।’
কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘এইরকম তাপমাত্রা আরও কয়েকদিন থাকবে। তবে এ মাসের মধ্যে আরও একটি শৈত্য প্রবাহ এ জেলার উপর দিয়ে বয়ে যেতে পারে।’
কুড়িগ্রামে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একজনের মৃত্যু
কুড়িগ্রামের উলিপুরে গাছের ডাল কাটতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে বাবলু মিয়া (৪৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) দুপুরে উপজেলার পৌর শহরের রামদাস ধনীরাম বলদিপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
আরও পড়ুন: শরীয়তপুরে সাইনবোর্ড লাগাতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে যুবকের মৃত্যু, আহত-২
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকাল ১০টায় গাছের ডাল কাটার জন্য গাছে উঠেন বাবলু মিয়া। ডাল কাটার সময় অসাবধানবশত ডালটি বিদ্যুতের তারে গিয়ে পড়ে। এতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মা বলে চিৎকার দেন বাবলু মিয়া।
চিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন এসে দেখতে পায় বাবলু মিয়া বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে গাছের ডালে ঝুলছিলেন। পরে স্থানীয়রা ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করে।
আরও পড়ুন: বিজয় দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নিহত ২
উলিপুর পল্লীবিদ্যুৎ অফিসের এজিএম চিরেন্দ্রনাথ রায় জানান, বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত। ডাল কাটার আগে যদি আমাদের জানাতেন তাহলে কিছুক্ষণের জন্য সঞ্চালন লাইনটি আমরা বন্ধ করে রাখতে পারতাম।
উলিপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মর্তূজা বলেন, এ বিষয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে এবং স্বজনদের কোনো অভিযোগ না থাকায় লাশ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: যশোরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে স্কুলছাত্রের মৃত্যু