সহিংসতা
বাংলাদেশের সব পক্ষকে সহিংসতা পরিহারের আহ্বান জাতিসংঘের
যেকোনো ধরনের সহিংসতা পরিহার এবং প্রত্যেকের মানবাধিকার ও আইনের শাসনকে পূর্ণ সম্মান নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের সব পক্ষের প্রতি আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক গত ৯ জানুয়ারি নিউইয়র্কে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এই আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: সহিংসতা পরিহার করে বাংলাদেশে মানবাধিকার-আইনে শ্রদ্ধা নিশ্চিতে সব পক্ষের প্রতি জাতিসংঘ মহাসচিবের আহ্বান
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'আমি মনে করি, আমরা আপনাদেরকে আগেই বলেছি, মহাসচিব সব ধরনের সহিংসতা পরিহার করতে এবং সবার মানবাধিকার ও আইনের শাসনে সবার প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার জন্য সব পক্ষকে আহ্বান জানিয়েছেন।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র সুসংহতকরণ ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য এটি অপরিহার্য।
আরও পড়ুন: ট্রেনে অগ্নিসংযোগে মা-শিশুসহ ৪ জনের প্রাণহানির ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চায় জাতিসংঘ
মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা যে সহিংসতা দেখেছি তা নিয়ে তিনি অবশ্যই উদ্বিগ্ন।’
আরও পড়ুন: মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যা প্রতিরোধে রাষ্ট্রসমূহ বাধ্য: জাতিসংঘ কমিটি
জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক সহিংসতার মধ্যে দিয়ে ২০২৩ সালের সমাপ্তি
প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও সমমনা দলগুলোর আসন্ন জাতীয় নির্বাচন বর্জনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক সহিংসতার মধ্যে দিয়ে ২০২৩ সাল বিদায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ।
তবে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনে বিরোধীদের দাবি প্রত্যাখ্যান করে আগামী ৭ জানুয়ারি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ।
রাজনৈতিক স্থবিরতার কারণে পুলিশ, বিরোধী দলের কর্মী এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষ দেখা দিয়েছে।
অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে বেড়ে যাওয়া সহিংসতায় রাজধানী ঢাকা ও দেশের অন্য অংশে বেশ কয়েকজন নিহত এবং অনেক আহত হয়েছে।
২০২৩ সালে রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে মৃত্যুর সংখ্যার সরকারি তথ্য পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাওয়া যায়নি। তবে বেশ কিছু মানবাধিকার সংস্থা একাধিক উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) সংকলিত তথ্য অনুসারে, এই বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত রাজনৈতিক সহিংসতায় ১৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং ৩ হাজার ৮৭৩ জন আহত হয়েছেন।
অন্যদিকে, হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার মোট ৬৮৯টি ঘটনায় কমপক্ষে ৬০ জন নিহত এবং ৬ হাজার ৭৪৩ জন আহত হয়েছে।
২৮ অক্টোবরের পর থেকে যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে, বিশেষ করে বিরোধীদের ডাকা হরতাল ও অবরোধের সময় সরকারি যানবাহন এবং বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
২৮ অক্টোবর বিএনপির ভেস্তে যাওয়া মহাসমাবেশের পর অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে শুরু করে। প্রথমে রাজধানীতে এবং পরে দেশের বিভিন্ন স্থানে তীব্র সহিংসতা শুরু হয়।
বিএনপি কর্মী-পুলিশ সংঘর্ষে ঢাকা, বিশেষ করে নয়াপল্টন ও এর আশপাশের এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয় মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে। এর ফলে একজন পুলিশ সদস্য এবং একজন ওয়ার্ড পর্যায়ের বিএনপি নেতা নিহত হন।
পুলিশ সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে টিয়ারগ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে, কিন্তু তা শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই বিএনপি মহাসমাবেশ শেষ করতে বাধ্য হয়।
আরও পড়ুন: ক্ষমতা হারানোর ভয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চায় না সরকার: মঈন খান
এর প্রতিবাদে বিএনপি গত ২৯ অক্টোবর দেশব্যাপী ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হরতাল ডেকেছিল। এরপর থেকে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো দফায় দফায় দেশব্যাপী অবরোধ ও হরতাল শুরু করে।
এসময়ে সহিংসতার অভিযোগে প্রশাসন তাদের বহু নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে।
গ্রেপ্তারদের মধ্যে রয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, যার বিরুদ্ধে গত ২৮ অক্টোবর কাকরাইলে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার অভিযোগ রয়েছে।
ডিএমপি সদর দপ্তর সূত্র জানায়, ২৮ অক্টোবর বিএনপির নয়াপল্টনে মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন থানায় মোট ৩৬টি মামলা হয়েছে।
মামলায় বিএনপি ও এর সমমনা দলের ১৫৪৪ জন নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
এছাড়া অজ্ঞাতনামা অনেক নেতা-কর্মীকে ওই মামলায় আসামি করা হয়েছে।
অন্যদিকে, রাজধানীর নয়াপল্টনে ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের পর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত ১৪ দিনে রাজধানী থেকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ বিভিন্ন বিরোধী দলের ১ হাজার ৮১৩ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র জানায়, রাজধানীর বিভিন্ন থানায় সহিংসতা, নাশকতা, মারধর ও পুলিশ সদস্যদের হত্যা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মোট ১৩১টি মামলা করা হয়েছে।
তবে বিএনপি দাবি করেছে, ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে মোট ২৩ হাজার ৪৬০ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এ সময় একজন সাংবাদিকসহ ২৬ জন নিহত এবং ৬ হাজার ৫৭৩ জন আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে বিএনপি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পরিসংখ্যান বলছে, ২৮ অক্টোবর থেকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত ৬৪টি বাস পোড়ানোর ঘটনায় নগরীর বিভিন্ন থানায় ৬৪টি মামলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে প্রতিবেশী দেশ হস্তক্ষেপ করছে: রিজভী
এ ছাড়া ওই সময় নাশকতার চেষ্টার অভিযোগে জনগণ ও পুলিশের হাতে ১২ জনকে আটক করা হয়। তাদের কেউ কেউ যাত্রীবাহী গাড়িতে উঠে বা নিচ থেকে আগুন ধরিয়ে দেয়।
গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে পেট্রোল, গান পাউডার, তুলা, পুরাতন কাপড় ইত্যাদি জব্দ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গত ২৯ অক্টোবর ভোরে রাজধানীর ডেমরার পশ্চিম দেল্লা পাকা রোডে দুর্বৃত্তরা অসীম পরিবহনের একটি বাসে আগুন দিলে নাঈম (২২) নামে এক বাসের হেলপারের মৃত্যু হয় এবং রবিউল ইসলাম নামে আরেক হেলপার দগ্ধ হন। তারা পার্ক করা বাসের ভেতরে ঘুমিয়ে ছিলেন।
শুধু রাজধানীতেই নয়, সারাদেশে গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
২৮ অক্টোবর থেকে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্স (এফএসসিডি) সদর দপ্তরের কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, ২৮৯টি অগ্নিসংযোগের (বেশ কয়েকটি স্থাপনা ও যানবাহনে) ঘটনা ঘটেছে।
এফএসসিডি সদর দপ্তরের মিডিয়া সেল সূত্র জানায়, এ সময় রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে মোট ২৮৫টি যানবাহন ও ১৫টি বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগুন দেওয়া গাড়িগুলোর মধ্যে রয়েছে ১৮০টি বাস, ৪৫টি ট্রাক, ২৩টি কাভার্ড ভ্যান, ৮টি মোটরসাইকেল এবং ২৯টি অন্যান্য যানবাহন, যার মধ্যে কয়েকটি ট্রেনের বগিও রয়েছে।
গত ১৯ ডিসেম্বর ভোরে রাজধানীর তেজগাঁও রেলস্টেশন এলাকায় ঢাকাগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে দুবৃত্তদের অগ্নিসংযোগে এক শিশুসহ কমপক্ষে চারজন নিহত হয়।
বিএনপি ও সমমনা বিরোধী দলের ডাকা দেশব্যাপী হরতালের মাত্র এক ঘণ্টা আগে এ ঘটনা ঘটে।
এ ছাড়া ২৩ নভেম্বর রাত সাড়ে ৯টার দিকে সিলেট রেলস্টেশনে পার্কিং করা আন্তঃনগর উপবন এক্সপ্রেসের একটি কোচে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা আগুন দেয়।
সিলেট রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার নুরুল ইসলাম জানান, ‘উপবন এক্সপ্রেস’ ট্রেনের এসি চেয়ার (বি) বগিতে আগুন লেগে কোচের অন্তত ২৩টি আসন পুড়ে গেছে।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আধা ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি।
আরও পড়ুন: শনিবার পর্যন্ত চলবে বিএনপির গণসংযোগ কর্মসূচি
জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতার শিকারদের অপরিহার্য সেবা নিশ্চিত করতে হবে: প্রতিবেদন
বাংলাদেশে জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতার শিকার ব্যক্তিদের অপরিহার্য সেবা নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছে ইউএনএফপিএ, ইউনিসেফ ও ইউএন উইমেন।
বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতার বিরুদ্ধে ১৬ দিনব্যাপী প্রচারের অংশ হিসেবে ইউএনএফপিএ, ইউনিসেফ ও ইউএন উইমেন যৌথভাবে মেটা-বিশ্লেষণের প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে।
স্বাস্থ্য, পুলিশ, বিচার বিভাগ ও সামাজিক পরিষেবাসহ ভুক্তভোগীদের সঠিক যোগসূত্র স্থাপনের জন্য প্রতিবেদনে জোর দেয়। নারী ও শিশুদের ক্ষমতায়নের জন্য ভুক্তভোগীভিত্তিক ও ট্রমা-অবহিত পরিষেবা প্রদানের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।
বিশ্লেষণটিতে, কোভিড-১৯ মহামারির ফলে জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতার (জিবিভি) ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি বাংলাদেশের নারী, মেয়ে, শিশু ও কিশোর-কিশোরীরা কীভাবে মোকাবিলা করছে তা তুলে ধরা হয়।
নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে সব ধরনের সহিংসতা বন্ধ করতে দ্রুত ও কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারকে সহযোগিতার লক্ষ্যে জাতিসংঘের তিনটি সংস্থার যৌথ প্রচেষ্টায় ‘ন্যায়বিচার, জবাবদিহি ও সহায়তা: জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতার শিকার ব্যক্তিদের জন্য অপরিহার্য সেবা’ শীর্ষক এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
আরও পড়ুন: ইউনিসেফের মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড পেলেন ১১ সাংবাদিক
বিশ্লেষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ হলো– ভুক্তভোগীকেন্দ্রিক ও ট্রমা-অবহিত সেবা নিশ্চিত করা। এই পদ্ধতির মাধ্যমে নারী ও শিশু, বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীরা সহজে ও বিনা সঙ্কোচে সহায়তা চাইতে পারবে। আর এভাবে বাল্যবিয়ে, পাচারসহ বিভিন্ন ধরনের জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতার (জিবিভি) ক্ষতিকর প্রথাগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
ইউনিসেফ বাংলাদেশের ডেপুটি রিপ্রেজেন্টেটিভ এমা ব্রিগহাম বলেন, ‘এখনই সময় জিবিভির শিকার ব্যক্তিরা, যেসব বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়, সেগুলো মোকাবিলায় একটি সমন্বিত প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থা গ্রহণ করার।’
নারী ও শিশুরা ভালোভাবে বেঁচে থাকার ও পূর্ণ বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় সেবাগুলো নিশ্চিত করতে এবং প্রতিরোধ ও সুরক্ষা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করার আহ্বান জানান তিনি।
ইউএন উইমেনের ২০২১ সালের এক প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশের ৯৩ শতাংশ নারী জানিয়েছেন, তারা নিজেরা নারী ও মেয়েদের বিরুদ্ধে সহিংসতার (ভিএডব্লিউজি) শিকার হয়েছেন অথবা অন্য এমন নারীকে তারা চেনেন যিনি এর শিকার হয়েছেন।
এছাড়াও, বিশ্বে যেসব দেশে বাল্যবিয়ের হার সর্বোচ্চ, বাংলাদেশ এখনও সেই দেশগুলোর কাতারে রয়েছে। এখানে ২২ থেকে ২৪ বছর বয়সী নারীদের অর্ধেকের বেশির ১২ বছর বয়সী শিশু অবস্থায় বিয়ে হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী শিশুদের অর্ধেকেরও বেশি স্কুলে যায় না, উদ্বেগ ইউনিসেফের
ইউএনএফপিএ বাংলাদেশের ডেপুটি রিপ্রেজেন্টেটিভ মাসাকি ওয়াতাবে বলেন, ‘সহিংসতার শিকার নারী ও মেয়েদের জন্য অপরিহার্য সেবা প্যাকেজ (ইএসপি) হলো জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা মোকাবিলায় স্বাস্থ্য, সামাজিক সেবা, বিচার ও পুলিশ– এই চার গুরুত্বপূর্ণ খাত নিয়ে জাতীয় ব্যবস্থাকে সমর্থন করা জাতিসংঘের একটি বৈশ্বিক নির্দেশিকা।
ইউএনএফপিএর পক্ষ থেকে এবং ইউনিসেফ ও ইউএন উইমেনের সঙ্গে মিলে একত্রে, আমি বাংলাদেশে ইএসপি পুরোপুরি বাস্তবায়নের জন্য চিহ্নিত ঘাটতিগুলো পূরণ করতে সরকারের প্রচেষ্টায় সহায়তা প্রদানে আমাদের যৌথ প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছি। এই সবকিছু অর্জনের জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি ও সুশীল সমাজের সংগঠন এবং উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অংশীদারিত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ইউএন উইমেন প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর শ্রাবনা দত্ত বলেন, ‘নারী ও মেয়েদের প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ জোরদার করতে সামগ্রিক ও সমন্বিত উপায়ে কাজ করা এবং সকল স্টেকহোল্ডারদের সম্পৃক্ত করা অপরিহার্য। সহিংসতা প্রতিরোধ প্রচেষ্টায় আমাদের বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। ইউএন উইমেন সরকার, সুশীল সমাজের অংশীদার ও উন্নয়ন অংশীদারদের সঙ্গে জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ কার্যক্রম এগিয়ে নিতে প্রস্তুত।’
আরও পড়ুন: ইউএন উইমেন’র নির্বাহী বোর্ডের সভাপতি রাবাব ফাতিমা
প্রতিবেদনে উঠে আসা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো হলো:
আইনগত কাঠামোতে অসামঞ্জস্যতা: বিচার সেবা মূল্যায়ন করতে গিয়ে লিগ্যাল ফ্রেইমওয়ার্ক বা আইনগত কাঠামোতে অসামাঞ্জস্য দেখা গেছে যেমন ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারার অধীনে ধর্ষণের সংজ্ঞা থেকে শিশুবিয়ে ও বৈবাহিক ধর্ষণকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
· পুলিশি ও বিচার সেবার চ্যালেঞ্জসমূহ: মূল্যায়নটি পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়ার পাশাপাশি ভুক্তভোগী-কেন্দ্রিক এবং ট্রমার উপর বিশেষ জ্ঞান সম্বলিত পদ্ধতি অবলম্বনের আহ্বান জানায়।
· স্বাস্থ্য সেবাসমূহের সমন্বয়: চিকিৎসা ও বিচার সেবা প্রদানকারীদের মধ্যে সমন্বয়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়ার মাধ্যমে জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা মোকাবিলায় যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
· সামাজিক সেবায় বিনিয়োগ: প্রতিবেদনে সামাজিক সেবায় বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে এবং এমন একটি দল গঠনের কথা তুলে ধরা হয়েছে- যারা কমিউনিটির সবার কাছে পৌঁছানো, সচেতনতামূলক অভিযান পরিচালনা এবং জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতার শিকার ব্যক্তিদের মনো-সামাজিক সমর্থন প্রদানে সক্ষম।
প্রতিবেদনে সরকার, সুশীল সমাজ, নারী অধিকার সংগঠন, গণমাধ্যম ও জাতিসংঘ সংস্থাগুলোর জন্য করা সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে সক্ষমতা বাড়ানো, জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতাসংক্রান্ত অপরিহার্য সেবা সম্পর্কিত তথ্য সহজলভ্য করা, ভুক্তভোগীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং তথ্য সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনা উন্নত করা।
প্রস্তাবিত সুপারিশমালার মাধ্যমে দেশে জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতার শিকার মানুষ যে বহুমুখী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয় তা মোকাবিলা করার জন্য একটি বিস্তৃত ও কার্যকরী পদ্ধতি সম্বলিত এক নীতি ও কর্মসূচি বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে শিশুদের মধ্যে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়ায় ইউনিসেফের জরুরি চিকিৎসা সহায়তা
২৮ অক্টোবর থেকে রাজনৈতিক সহিংসতা- নাশকতার অভিযোগে র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার ৮২০
বিএনপি ও অন্যান্য সমমনা দলের পালিত দেশব্যাপী অবরোধ ও হরতাল চলাকালে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও নাশকতার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে রবিবার (৩ ডিসেম্বর) দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিএনপি নেতা-কর্মীসহ আরও ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে দুইজন হলেন- মানিকগঞ্জের রূপগঞ্জ ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক পাবেল হোসেন এবং ঢাকার কদমতলী ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. তরিকুল ইসলাম সোহাগ।
র্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের এএসপি ইমরান খান জানান, মানিকগঞ্জের ঘিওর ও ঢাকার কদমতলী এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
আরও পড়ুন: ৩ দিনে ১১টি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে: ফায়ার সার্ভিস
২৮ অক্টোবর হামলা ও নাশকতাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ও নাশকতার ঘটনায় এ পর্যন্ত মোট ৮২০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
এদিকে, সহিংসতা ও নাশকতা প্রতিরোধ এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে রাজধানীতে ১৪১টিসহ র্যাবের ৪৩৫টি টহল দল সারাদেশে মোতায়েন করা হয়েছে।
এলিট ফোর্স দেশের বিভিন্ন স্থানে টহল দিয়ে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন, দূরপাল্লার গণপরিবহন এবং পণ্যবাহী পরিবহনের নিরাপত্তা দিচ্ছে।
এ ছাড়া যেকোনো ধরনের নাশকতা ও সহিংসতা ঠেকাতে বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান র্যাব কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন: নবম দফার অবরোধ: ১৬২ প্লাটুন বিজিবি, ৪৩৫ র্যাবের টহল দল মোতায়েন
রাজনৈতিক সহিংসতা-নাশকতার অভিযোগে র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার ২১
সাম্প্রতিক সহিংসতার বিরূদ্ধে যুক্তরাজ্যের সহযোগিতা চায় স্টাডি সার্কেল বাংলাদেশ
যুক্তরাজ্যভিত্তিক ব্রিটিশ-বাংলাদেশি থিঙ্কট্যাঙ্ক স্টাডি সার্কেলের একটি প্রতিনিধি দল গত সোমবার (২০ নভেম্বর) ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের কাছে বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সহিংসতার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে একটি স্মারকলিপি হস্তান্তর করেছে।
স্টাডি সার্কেলের সমন্বয়ক জামাল আহমেদ খানের নেতৃত্বে মানবাধিকারকর্মী আনসার আহমেদ উল্লাহ ও সাংবাদিক রুমানা আফরোজ রাখীসহ প্রতিনিধি দল স্টাডি সার্কেলের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোজাম্মেল আলীর সই করা স্মারকলিপি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে হস্তান্তর করেন।
আরও পড়ুন: জাতিসংঘে বাংলাদেশের ‘প্রাকৃতিক তন্তু’ সম্পর্কিত রেজুলেশন সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত
স্মারকলিপিটি গত ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশে সহিংসতার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে।
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও একজন পুলিশ অফিসারের হত্যার ঘটনা বর্ণনা করে নির্বাচন ঘিরে স্বাধীনতা বিরোধী সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী অপশক্তি সহিংসতার একটি প্রবণতার সর্বশেষতম।
এই উদ্বেগজনক ঘটনার আলোকে স্টাডি সার্কেল স্মারকলিপি এই চরমপন্থী সহিংসতা মোকাবিলা এবং ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার জন্য যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে বহুপাক্ষিক ও দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছে।
ব্রিটেন ও বাংলাদেশের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের কথা তুলে ধরে স্টাডি সার্কেল প্রতিনিধিদল আশা করে, প্রধানমন্ত্রী সুনাক উগ্রবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে ব্রিটিশ ও বাংলাদেশি সরকার এবং সুশীল সমাজের মধ্যে যৌথ প্রচেষ্টার অনুরোধে ইতিবাচক সাড়া দেবেন।
আরও পড়ুন: নিবারণযোগ্য অন্ধত্ব প্রতিরোধে একসঙ্গে কাজ করবে চক্ষু চিকিৎসক সমিতি ও অরবিস ইন্টারন্যাশনাল
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ন্যাশনাল ডিফেন্স ও আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কোর্সের প্রশিক্ষণার্থীদের সাক্ষাৎ
নির্বাচন কেন্দ্রিক সহিংসতা বন্ধে সব দলকে আন্তরিক হতে হবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা কমছে, সহিংসতা বন্ধে সব দলকে ইচ্ছা ও আন্তরিকতা প্রদর্শন করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
শুক্রবার (১৬ নভেম্বর) রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পর সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, 'আমরা কাউকে নির্বাচনে বাধা দিতে দেব না। আমরা আশা করি, সহিংসতা বন্ধে সব দলের ইচ্ছা ও আন্তরিকতা থাকতে হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, আওয়ামী লীগ কখনো সংলাপে পিছপা হয়নি। আওয়ামী লীগ মনে করে সংলাপ ভাল। আওয়ামী লীগ নির্বাচনমুখী দল।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী গত ১৫ বছরে দেশে কয়েক হাজার নির্বাচন করেছেন। মোটামুটিভাবে অধিকাংশ নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, এক-দুইটিতে হয়তো অনিয়ম হয়েছে। তবে সেই নির্বাচনগুলো বানচালও হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা নির্বাচন চাই। আর এই নির্বাচনে যদি কোনো বন্ধু রাষ্ট্র সহায়কের ভূমিকা পালন করে, তাহলে তাদেরকে আমরা স্বাগত জানাব।
ড. মোমেন বলেন,আমাদের বিরোধী দল বিএনপি ২৮ অক্টোবর শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার ঘোষণা করেছিল। কিন্তু , সেখানে তাদের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে জ্বালাও-পোড়াও করা। যারা কোনো দলের না বিচারকদের বাসভবনে জ্বালাও-পোড়াও করল। হাসপাতালেও জ্বালাও পোড়াও করল। সাধারণ জনগণের প্রায় ১৫৪টি বাস পোড়াল। বাসের মালিক তো সরকার না।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট পার্লামেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী বাংলাদেশিদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অভিনন্দন
তিনি বলেন, আমরা আশা করব, যে বিপদগামী দলগুলো আছে তারা পরিপক্কতা অর্জন করে নির্বাচনমুখী হবে। যাতে আমরা শান্তিপূর্ণ মডেল নির্বাচন করতে পারি।
এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায় এবং বাংলাদেশেরও একই প্রতিশ্রুতি রয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে প্রতিদিনই যুক্তরাষ্ট্রের মন্তব্য আসছে, কারণ কিছু বাংলাদেশি সাংবাদিক জোর করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মার্কিন কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করছেন।
আরও পড়ুন: কার সঙ্গে সংলাপ হবে, জানতে চান পররাষ্ট্রমন্ত্রী
মোমেন বলেন, 'এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে তারা নিজেদের দেশকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে।
ড. মোমেন বলেন, আওয়ামী লীগ সবসময় নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে, পেছনের দরজা দিয়ে আসেনি।
এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ফরেন সার্ভিস স্পাউজ অ্যাসোসিয়েশন (এফওএসএ) আয়োজিত 'ইন্টারন্যাশনাল চ্যারিটি বাজার'-এ প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন।
এ সময় ঢাকায় অবস্থানরত কূটনীতিক এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: নির্বাচনে কেউ বাধা দিতে পারবে না: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
অর্থনীতির স্বার্থে সহিংসতা পরিহার করতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি এফবিসিসিআই'র আহ্বান
অর্থনীতির স্বার্থে সহিংসতা পরিহার করতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন এফবিসিসিআই
মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) গুলশান কার্যালয়ে বিরাজমান বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী নেতা, অর্থনীতিবিদ এবং এফবিসিসিআই এর সাবেক নেতাদের নিয়ে একটি মতবিনিময় এই আহ্বান জানানো হয়।
এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় চলমান রাজনৈতিক সহিংসতা, ডলার সংকট, মূল্যস্ফীতি, বিলাসী পণ্যের আমদানি নিয়ন্ত্রণ, ব্যাংক ঋণ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতকরণ, এলসিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
সভায় এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, বিগত কয়েক বছর যাবৎ দেশে অত্যন্ত স্থিতিশীল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশ বিরাজ করছে যা ব্যবসা, বাণিজ্য ও অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু সম্প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর সহিংস কর্মকাণ্ডের ফলে দেশের ব্যবসা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ঝুঁকিতে পড়ছে। একই সঙ্গে, তৈরি পোশাক খাতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে।
দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা জাতীয় অর্থনীতিকে শঙ্কার দিকে ঠেলে দিচ্ছে উল্লেখ করে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতি দেশের সাপ্লাই চেইনকে ভীষণভাবে বিঘ্নিত করছে। যার প্রভাব পণ্যের উৎপাদন, বাজার মূল্য এবং রপ্তানি ও সেবা খাতের উপরও পড়ছে। এসময় রাজনৈতিক দলগুলোকে জাতীয় অর্থনীতির স্বার্থে সব ধরণের সহিংস কর্মকাণ্ড পরিহারের আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি।
তৈরি পোশাক খাতে শ্রমিক ও কর্মচারীদের চাহিদা অনুযায়ী মজুরি কমিশন গঠন এবং শ্রমিক-মালিক উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে মজুরি পুন:নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি একটি অত্যন্ত ইতিবাচক পদক্ষেপ। তা সত্ত্বেও তৈরি পোশাক খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। প্রকৃত শ্রমিকরা কোনভাবেই ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত হতে পারে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আরও পড়ুন: আসিয়ান, দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাণিজ্যিক কেন্দ্র বাংলাদেশ হতে পারে: এফবিসিসিআই
ডলার সংকট সমাধান এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও কার্যকরী ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি। তিনি শিল্প কারখানায় উৎপাদন ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে নিরবিচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ বর্তমান সহিংস রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সারাদেশের সকল চেম্বার, অ্যাসোসিয়েশনকে সঙ্গে নিয়ে ব্যবসায়ী সংহতি সমাবেশ আয়োজনের জন্য এফবিসিসিআইকে পরামর্শ দেন।
এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম অর্থনীতির এই সংকটের মুহূর্তে রাজনৈতিক সহিংস কর্মসূচি থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। পাশাপাশি সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তাব্যক্তিদের বির্তকিত মন্তব্য থেকে বিরত থাকার আহ্বানও জানান তিনি।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংক, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, এনবিআর, কৃষি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মধ্যে সমন্বয় আরও জোরদার করতে এফবিসিসিআইকে কমিটি গঠনের পরামর্শ দেন তিনি। এছাড়াও বিদ্যমান সহিংস কর্মসূচির বিরুদ্ধে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য এফবিসিসিআইকে আহ্বান জানান তিনি।
সভায় এফবিসিসিআই এর সাবেক সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ডলারের উপর চাপ কমাতে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের আরও সচেতন ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রয়োজনে আগামী ৬ মাস থেকে এক বছর সময়ে অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসী পণ্য আমদানির হার আরও কমিয়ে আনতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কাট-ছাটের কোনো বিকল্প নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আরও পড়ুন: এফবিসিসিআই ইনোভেশন অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের উদ্বোধন করলেন সালমান এফ রহমান
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, প্রকৃত শ্রমিকরা কখনো নিজ কারখানায় আগুন দিতে পারে না। উদ্দেশ্যমূলকভাবে তৈরি পোশাক খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে সাবেক মূখ্য সচিব ও এফবিসিসিআই এর প্যানেল উপদেষ্টা মো. আব্দুল করিম, সিপিডির গবেষণা পরিচালক ও প্যানেল উপদেষ্টা খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও এফবিসিসিআই এর প্যানেল উপদেষ্টা ড. মাসরুর রিয়াজ, আব্দুল মুক্তাদির, এফবিসিসিআই এর সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী, সহ-সভাপতি খায়রুল হুদা চপল, শমী কায়সার, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার সামির সাত্তার, মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম, বিকেএমইএ’র এক্সিকিউটিভ প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম, বিটিএমএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফজলুল হক, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ,বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন, নাসিব সভাপতি মির্জা নুরুল গণি শোভন, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সভাপতি আসিফ ইব্রাহীম, এফবিসিসিআই’র পরিচালকসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: পাটের সোনালি অতীত ফিরিয়ে আনতে কাজ করবে এফবিসিসিআই: মাহবুবুল আলম
রাজনৈতিক সহিংসতা-নাশকতার অভিযোগে গ্রেপ্তার ২৬: র্যাব
দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা, নাশকতা ও সহিংসতার ঘটনায় বিএনপি নেতা-কর্মীসহ ২৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
গ্রেপ্তাররা হলেন- বগুড়া সদর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মিজানুর রহমান, চট্টগ্রাম পাহাড়তলী ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি আইয়ুব আলী খান, বগুড়া সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের দপ্তর সম্পাদক আব্দুর রহমান সজল ও নওগাঁ জেলা যুবদলের সদস্য সচিব রুহুল আমিন মুক্তার।
আরও পড়ুন: চমেক হাসপাতাল থেকে ৫ ‘দালাল’ গ্রেপ্তার
র্যাব সদর দপ্তরের মিডিয়া উইংয়ের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) ইমরান খান জানান, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
২৮ অক্টোবরের হামলা ও নাশকতাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ও নাশকতার অভিযোগে এ পর্যন্ত মোট ৩৫০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
আরও পড়ুন: শরীয়তপুরে খাদ্যগুদাম কর্মকর্তার বাসভবন থেকে ১৩ বস্তা সরকারি চাল জব্দ, ভবন সিলগালা
রাজনৈতিক সহিংসতা-নাশকতার অভিযোগে গ্রেপ্তার ৩৩ : র্যাব
বিএনপি ও সমমনা বিরোধী দলের ডাকা দেশব্যাপী অবরোধচলাকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা, নাশকতা ও সহিংসতার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বুধবার ৩৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি রাসেল ভূঁইয়াকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বুধবার(৮ নভেম্বর) র্যাবের সদর দপ্তরের মিডিয়া উইংয়ের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) ইমরান খান জানান, তিন পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে আহত করা, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: পুলিশ কনস্টেবল হত্যা মামলায় ছাত্রদল নেতা আমান গ্রেপ্তার
গত ২৮ অক্টোবর হামলা ও নাশকতাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ও নাশকতার অভিযোগে এ পর্যন্ত মোট ২৫১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
বর্তমানে রাজধানীতে দেড় শতাধিক টহল দল এবং সারাদেশে ৪৫০টি র্যাবের টহল দল নিয়োজিত রয়েছে।
র্যাবের দলগুলোও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ব্যাপক টহল দিচ্ছে।
অবরোধচলাকালে গণপরিবহনের নিরাপত্তা দিতে দূরপাল্লার বাসগুলোকে র্যাবের টিমের পাহারায় গন্তব্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ঢাকায় ১১২ মামলায় ১০ দিনে গ্রেপ্তার ১৬৩৬ জন: ডিএমপি
সহিংসতা ও ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের লড়াইয়ে বৈশ্বিক সমর্থনের আহ্বান বিশেষজ্ঞদের
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের চলমান আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সহিংসতা ও ভুল তথ্যকে দু’টি প্রধান বাধা হিসেবে উল্লেখ করেছেন আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারে বিশেষজ্ঞরা।
তারা সহিংসতা ও ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের লড়াইয়ে বিশ্ব বন্ধুদের আন্তরিক সমর্থন কামনা করেন।
৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ওয়েবিনারে তারা অভিমত দেন, টেকসই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পাশাপাশি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন তখনই সম্ভব, যখন সহিংসতা ও ভুল তথ্যের অপরাধীদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে দূর করা হবে।
পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেল ও ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে অবকাঠামো খাতে বাংলাদেশের দ্রুত অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে ওয়েবিনারের প্যানেলিস্টরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের ১৫ বছরের ধারাবাহিকতার পূর্ণ কৃতিত্ব দেন।
'ভায়োলেন্স অ্যান্ড মিসইনফরমেশন: ব্যারিয়ারস টু ইকোনমিক প্রসপারিটি ইন বাংলাদেশ' শীর্ষক ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিলম্যান, মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট লেখক ড. নুরুন নবী।
আরও পড়ুন: জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দৃঢ় পদক্ষেপ নিন, এসডিজি অর্জন করুন: বক্তারা
আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত প্যানেলিস্টরা হলেন- অধ্যাপক আবদুর চৌধুরী, অধ্যাপক এবিএম নাসির, নিরাপত্তা বিশ্লেষক ক্রিস ব্ল্যাকবার্ন, রাজনৈতিক বিশ্লেষক সেথ ওল্ডমিক্সন এবং জ্যেষ্ঠ গবেষক ড. মাজহারুল ইসলাম রানা।
বক্তারা লাখ লাখ বাংলাদেশিকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনতে মুক্তিযোদ্ধা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী, বিধবা ও স্বামী ছেড়ে চলে যাওয়া নারীদের জন্য ভাতা প্রবর্তনের মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী সম্প্রসারণে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি তুলে ধরেন।
বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল যদি এই সময়ের মধ্যে 'নৈরাজ্য ও সহিংসতা' না করে, তাহলে বাংলাদেশ আরও অগ্রগতি অর্জন করতে পারে।
এ প্রসঙ্গে প্যানেলিস্টরা ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপি-জামায়াতের সরকারবিরোধী সমাবেশের কথা উল্লেখ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু টানেল যেদিন উদ্বোধন করেন, সেদিন তারা রাজধানীতে এক পুলিশ সদস্যকে হত্যা, বেশ কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি যানবাহন ও হাসপাতালে থাকা অ্যাম্বুলেন্সে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর, প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলা এবং বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে আহত করেন।
বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির বিষয়ে বক্তারা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, দলগুলো কেন অসাংবিধানিক কিছু দাবি করছে।
আরও পড়ুন: আগামী নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভেদ নিরসন করা উচিত: নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও রাজনীতিবিদগণ
তারা সংবিধানের কথা উল্লেখ করে মনে করিয়ে দেন, নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে হতে হবে।
অধ্যাপক আবদুর চৌধুরী উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ বিশ্বের পরবর্তী শীর্ষ ১০টি উদীয়মান অর্থনীতির একটি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে এবং যা ১৯৭১ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত অবস্থা থেকে দেশটির অসাধারণ অগ্রগতি।
তবে ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধের মতো বর্তমান বৈশ্বিক আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশের সামনে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বাংলাদেশে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পক্ষে মত দেন।
ক্রিস ব্ল্যাকবার্ন তার বক্তব্যে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) সাম্প্রতিক একটি জরিপের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, বর্তমান সব অর্থনৈতিক সমস্যা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭০ শতাংশ অনুমোদনের রেটিং রয়েছে।
ব্ল্যাকবার্ন বলেন, বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন 'অনলাইনে একচেটিয়া ভুল তথ্য' বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রকৃত প্রভাব ফেলে। তাই ইউরোপীয় ও আমেরিকান উভয় অংশীদারদেরই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এগিয়ে আসা উচিৎ।
তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুল তথ্য বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষতি করছে এবং বিএনপি অগ্নিসংযোগ ও গুজব ছড়ানো চালিয়ে যাচ্ছে।
ড. মাজহারুল ইসলাম বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ক্রমাগত ভুল তথ্য, গুজব ছড়িয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার চক্রান্ত সৃষ্টি করেছিল এবং একই শক্তি এখনো সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা তারেক রহমান, বঙ্গবন্ধুর খুনি ও জামায়াতের নির্দেশনায় সক্রিয় রয়েছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-দক্ষিণ কোরিয়া সম্পর্ক নিয়ে কসমস ফাউন্ডেশনের ওয়েবিনার বৃহস্পতিবার
অধ্যাপক এবিএম নাসির ইসলামি জঙ্গিবাদের উত্থান প্রতিহত করতে এবং প্রগতিশীল গণতন্ত্রের উদাহরণ ও একটি মডেল মধ্যপন্থী মুসলিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে সমর্থন করার জন্য আমেরিকান নীতিনির্ধারকদের প্রতি আহ্বান জানান।
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পরপরই ধারাবাহিক সহিংসতার উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তাদের ৫ বছরের দুঃশাসন ছিল দেশের ইতিহাসের অন্ধকারতম অধ্যায়।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত নেতা-কর্মীরা ২০১৩-২০১৫ সালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নেতা-কর্মী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু এবং প্রগতিশীল ব্লগারদের ওপর হামলা চালিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। অন্যদিকে ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপি-জামায়াতের দেশব্যাপী আন্দোলন কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর থেকে একই ধরনের সহিংসতা পুনরায় দেখা দিয়েছে।
অধ্যাপক নাসির যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের প্রতি আহ্বান জানান, একটি টেকসই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং একটি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কেবল তখনই কার্যকর হবে যখন সহিংসতা ও ভুল তথ্যের অপরাধীদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে দূর করা হবে। অন্যথায় এটি আফগানিস্তানের মতো বিপর্যয়ে পরিণত হবে।
সেথ ওল্ডমিক্সন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে সতর্ক করে বলেন, সহিংস চরমপন্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানুষকে নিযুক্ত করতে এবং বাংলাদেশে সহিংসতা উস্কে দেওয়ার জন্য বেশ সক্রিয়। এই ভুল তথ্য প্রচারণার বিরুদ্ধে লড়াই করতে তিনি ইতিবাচক তথ্য দিয়ে প্রচারণা শুরু করার পরামর্শ দেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে গণহত্যা প্রত্যাখ্যান ন্যায়বিচার ও প্রতিকারের দাবিকে দুর্বল করে: ওয়েবিনারে বক্তা