রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পাইলট প্রকল্প শিগগিরই বাস্তবায়নের আশাবাদ শাহরিয়ারের
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ‘পাইলট প্রকল্প’ দ্রুততম সময়ের মধ্যেই বাস্তবায়িত হবে।
তিনি মিয়ানমারে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবর্তনের জন্য আলোচনার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম প্রদানের জন্য বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীনের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগে ‘সক্রিয় ভূমিকার’ জন্য চীনকে ধন্যবাদ জানান।
বাংলাদেশে চীনের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন রবিবার বিকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন এবং পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত ওয়েন বলেন, রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের অভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে।
আরও পড়ুন: রাষ্ট্রদূতদের প্রকাশ্য বিবৃতি দেয়ার আগে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস বুঝতে হবে: মার্কিন ডেপুটি সেক্রেটারিকে শাহরিয়ার আলম
তিনি বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ‘ত্যাগ’ স্বীকার করেছেন এবং তাদের প্রত্যাবাসনে ভূমিকা রাখার আশ্বাস দিয়েছেন।
রাষ্ট্রদূত ওয়েন বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। আপনারা অনেক অর্থ ব্যয় করেছেন এবং অনেক কষ্ট স্বীকার করেছেন। আপনারা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। আমাদের লক্ষ্য (প্রত্যাবাসন) অভিন্ন।’
বাংলাদেশ কক্সবাজার ও ভাসানচরে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আতিথ্য করছে এবং গত ছয় বছরে একটিও রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসন করা হয়নি।
প্রতিমন্ত্রী সরাসরি বিমান যোগাযোগ স্থাপনের গুরুত্বও তুলে ধরেন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতে, চীন থেকে শিল্প স্থানান্তরের জন্য বাংলাদেশকে একটি উপযুক্ত স্থান হিসেবে বিবেচনা করার জন্য চীনা রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ জানান।
চীনা রাষ্ট্রদূত দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা ও বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য পিপিপি-তে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) শেষ করতে আগ্রহ দেখিয়েছেন।
নতুন রাষ্ট্রদূতের মেয়াদে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
উভয় পক্ষই বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, অবকাঠামো উন্নয়ন, সংযোগ ও কোভিড পরিস্থিতিসহ পারস্পরিক স্বার্থের দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় সহযোগিতার বিষয়ে আন্তরিকভাবে মতামত বিনিময় করেছে।
চীনা নববর্ষ দিবসে নতুন রাষ্ট্রদূতকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশের বৃহত্তম দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য অংশীদার হওয়ার জন্য চীনকে ধন্যবাদ জানান।
বৈঠকে তিনি কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় এবং চীন থেকে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের প্রত্যাবাসন এবং পরবর্তীতে উচ্চশিক্ষা চালিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের চীনে প্রত্যাবর্তনে সহায়তার জন্য চীন সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বাংলাদেশে রাষ্ট্রদূত ইয়াওর সফল মেয়াদ কামনা করেন এবং তার দায়িত্ব পালনে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
আরও পড়ুন: কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা খর্ব করা যাবে না: শাহরিয়ার
সম্পর্ককে আরও গভীর করতে অপশক্তিকে পরাজিত করবে ঢাকা-নয়াদিল্লি: শাহরিয়ার
রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে কাজ চালিয়ে যাবে জাপান
বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তার প্রথম সরকারি সফরে এসে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে জাপানের কাজ চালিয়ে যাওয়ার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
এ সংক্রান্ত তৎপরতা চলমান দেখে রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এটাই তার প্রথম সফর এবং বর্তমান পরিস্থিতি তিনি নিজের চোখে দেখতে পাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শিক্ষাকেন্দ্রের উদ্বোধন করলেন তুর্কি রাষ্ট্রদূত
আন্তরিকতার অভাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিলম্বিত: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হওয়ার পেছনে মূল কারণ হলো মিয়ানমারের আন্তরিকতার অভাব।
তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশকে বলেছি কিছু লোক নিয়ে যান। সে কাজ স্বল্প পরিসরে শুরু হয়েছে। তবে আমরা আশাবাদী রোহিঙ্গারা তাদের নিজের দেশে ফেরত যাবে।
আরও পড়ুন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনকে ব্লিনকেনের চিঠি
রবিবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে সিলেটে আল খায়ের ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সুবিধাবঞ্চিতদের মাঝে হুইল চেয়ার ও সেলাই মেশিন বিতরণ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বাংলাদেশের একার কাজ না। বিশ্ব মোড়লদেরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে। তবে সেক্ষেত্রে তাদের আন্তরিকতার ঘাটতি রয়েছে। আর এতে করেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হচ্ছে।
এর আগে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দারিদ্র একটা অভিশাপ। সেজন্য প্রধানমন্ত্রী উদ্যোগে নিয়েছেন দেশে কেউ দরিদ্র থাকবে না। ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে অতি দারিদ্রসীমার হার তিন শতাংশের নিচে নিয়ে আসার কাজ চলছে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন আল খায়ের ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি ম্যানেজার তারেক মাহমুদ সজীবসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা।
আরও পড়ুন: নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে সহযোগিতা জোরদারে সম্মত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্কটিশমন্ত্রী
মোমেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে থাকার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট
দুর্ভাগ্যবশত শিগগিরই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনা নেই: মার্কিন রাষ্ট্রদূত
বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছেন, মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি, বিশেষ করে সাম্প্রতিক ঘটনার পর, দুর্ভাগ্যবশত রোহিঙ্গাদের জন্মস্থান রাখাইন রাজ্যে তাদের নিরাপদ, স্বেচ্ছায়, মর্যাদাপূর্ণ বা টেকসই প্রত্যাবর্তনের অনুমতি দেয় না।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ফ্রেডরিখ-এবার্ট-স্টিফটাং (এফইএস) বাংলাদেশের সহযোগিতায় সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘মিট দ্য অ্যাম্বাসেডর’ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘দুঃখজনকভাবে, খুব শিগগিরই তারা হবে বলে মনে হচ্ছে না।’
অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ, সাবেক কূটনীতিক ও ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: আমরা শুধু চাই জনগণের অবাধ অংশগ্রহণে নির্বাচন হোক: মার্কিন রাষ্ট্রদূত
সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জাতীয় নদী সুরক্ষা কমিশন এবং সিজিএস -এর চেয়ারম্যান মঞ্জুর এ চৌধুরী ও এফইএস বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি ফেলিক্স কোবিজ।
রাষ্ট্রদূত বলেন, জরুরি প্রতিক্রিয়া থেকে আরও টেকসই অবস্থায় উত্তরণে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।
তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ সরকার এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক দাতা সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করতে চাই। যাতে শরণার্থীদের শিক্ষা ও জীবিকা অর্জনের আরও ভালো সুযোগ এবং ক্যাম্পগুলোতে আরও বেশি নিরাপত্তা প্রদান করা যায়।’
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণ করে এবং মিয়ানমারে নিরাপদ, স্বেচ্ছায় এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তন সম্ভব না হওয়া পর্যন্ত তাদের আতিথেয়তা অব্যাহত রাখবে।
রাষ্ট্রদূত হাস উল্লেখ করেন, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের পাঁচ বছর পূর্তি এবং মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে তাদের অভিবাসনের সুযোগ দিয়ে তারা সম্প্রতি একটি গভীর মাইলফলক অর্জন করেছে।
আরও পড়ুন: আমরা আগামী ৫০ বছরের সম্পর্কের মঞ্চ তৈরি করেছি: মার্কিন রাষ্ট্রদূত
এ সময় তিনি বলেন, বাংলাদেশ তাদের দেশে স্বাগত জানিয়ে আশ্রয় দেয়ার ক্ষেত্রে অবিশ্বাস্য উদারতা ও সহানুভূতি দেখিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের ওপর যে আর্থিক বোঝা চাপিয়েছে আমরা সে বিষয়ে সচেতন’।
এই অবিশ্বাস্য আতিথেয়তার সমর্থনে রাষ্ট্রদূত হাস বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত সপ্তাহে ঘোষণা দিয়েছে যে তারা রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং বাংলাদেশি আপ্যায়নকারী সম্প্রদায়কে সহায়তার জন্য অতিরিক্ত ১৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দেবে।
এই নতুন অর্থায়নে, রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোট সহায়তা প্রায় এক দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
রাষ্ট্রদূত হাস বলেন, ‘আমরা এই প্রয়াসে সহযোগিতা করেছি এই আশায় যে রোহিঙ্গারা শিগগিরই নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণভাবে তাদের জন্মভূমিতে ফিরে যেতে পারবে।’
কক্সবাজার ও ভাসানচর দ্বীপে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন চায় যুক্তরাষ্ট্র: মার্কিন রাষ্ট্রদূত
প্রত্যাবাসন ছাড়া রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে না
শুক্রবার এক সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।
জেনেভায় বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন লিগ্যাল অ্যাকশন ওয়ার্ল্ডওয়াইড (ল) এর সহযোগিতায় ২০১৭ সালে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের সবচেয়ে বড় প্রস্থানের পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে ‘রোহিঙ্গা সমস্যা: প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনা’ শীর্ষক একটি ভার্চুয়াল সেমিসার আয়োজিত হয়েছিল।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ডেঙ্গুর প্রকোপ ভয়াবহ: আট মাসে মৃত্যু ২২
সুইজারল্যান্ডে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মো. মুস্তাফিজুর রহমান তার সূচনা বক্তব্যে বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক উন্ননকে ত্বরান্বিত করবে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, জাতিসংঘ ও অন্যান্য দেশ রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের সঙ্গে অর্থপূর্ণ সংলাপে নিয়োজিত হতে পারে। বাংলাদেশ এই বিষয়ে একটি সমাধান খুঁজতে মিয়ানমার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: ‘আঁরা রোহিঙ্গা’ বিষয়ক আলোকচিত্র প্রদর্শনী শুরু
সেমিনারে বক্তারা নাগরিক হিসেবে তাদের অধিকার পুনরুদ্ধার এবং সকল বৈষম্যমূলক আইন বাতিলের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারে উপযোগী পরিবেশ তৈরির ওপর জোর দেন।
তারা বলেন, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এবং আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে চলমান সব মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনে সাহায্য করবে।
আরও পড়ুন: মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন একমাত্র সমাধান: দ. কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত
আইনের প্রধান আন্তোনিয়া মালভেই সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন এশিয়া জাস্টিস কোয়ালিসন সচিবালয়ের প্রধান প্রিয়া পিল্লাই, জাতিসংঘে মিয়ানমার সংক্রান্ত স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রধান নিকোলাস কৌমজিয়ান, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিসিআর বঙ্গবন্ধু চেয়ার শহীদুল হক এবং রোহিঙ্গা এক্টিভিস্ট ইয়াসমিন উল্লাহ প্রমুখ।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ইইউর সহযোগিতা চায় বাংলাদেশ
রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, জাপান, কোরিয়া, ফ্রান্সের মতো দেশগুলোর মিয়ানমারের সাথে অধিকতর বিনিয়োগ ও বাণিজ্য থাকায় তাদের দিক থেকেও রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারের ওপর চাপ বজায় রাখা প্রয়োজন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতি বিষয়ক শীর্ষ প্রতিনিধি এবং ইউরোপিয়ান কমিশনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট জোসেপ বোরেল ফন্টেলেস এর সাথে বৈঠক করেন।
ড. মোমেন রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়টি অত্যন্ত জোরালোভাবে বৈঠকে উত্থাপন করে বলেন, অনেক প্রচেষ্টার পরেও গত পাঁচ বছরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আলোর মুখ দেখেনি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমারকে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে চাপ দেয়ার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের কার্যকর সমর্থন প্রত্যাশা করেন; অন্যথায় মিয়ানমার ও বাংলাদেশ এমনকি সমগ্র অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বিপন্ন হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
বৈঠকে ড. মোমেন বাংলাদেশে দারিদ্রের হার কমিয়ে আনার অসাধারণ সাফল্যের কথা জানান। একইসাথে তিনি ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের সংকটের কথাও জোসেপ বোরেল ফন্টেলেসকে অবহিত করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোসেপ বোরেল ফন্টেলেসকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানালে তিনি তা সানন্দে গ্রহণ করেন।
পড়ুন: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ভিয়েতনামের সহযোগিতার আহ্বান ঢাকার
চট্টগ্রাম-মোংলা বন্দরের সুবিধা নিতে পারে নেপাল: প্রধানমন্ত্রী
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কমনওয়েলথ দেশগুলোর সহায়তা চায় ঢাকা
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট ষষ্ঠতম বছরে পদার্পণ করেছে, যা এই অঞ্চলের মানব নিরাপত্তা, শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন পুনর্ব্যক্ত করেছেন যে, সকল জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও মর্যাদায় রাখাইনে তাদের পূর্বপুরুষদের মাতৃভূমিতে দ্রুততম প্রত্যাবাসন বাংলাদেশের বাধ্যতামূলক অগ্রাধিকার।
বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) রুয়ান্ডার রাজধানী কিগালিতে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে মোমেন এসব কথা বলেন।
তিনি কমনওয়েলথ সরকার প্রধানদের ইশতেহারে রোহিঙ্গা সংকটের ওপর একটি বিশেষ পাঠ অন্তর্ভুক্ত করার জন্য দেশগুলোর প্রশংসা করেন।
মোমেন কমনওয়েলথ দেশগুলোকে আইসিজে দ্বারা 'অস্থায়ী ব্যবস্থা' মেনে চলার জন্য এবং রাখাইন রাজ্যে তাদের নাগরিকদের নিরাপদ, সুরক্ষিত এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করার জন্য মিয়ানমার সরকারকে চাপ দেয়ার আহ্বান জানান।
বৈঠকে গণতন্ত্র, শান্তি ও শাসন, টেকসই অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন এবং কোভিড-পরবর্তী পুনরুদ্ধারের পদক্ষেপের মতো অনেক বৈশ্বিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং কমনওয়েলথ দেশগুলোর উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল উপস্থিত ছিলেন বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
পড়ুন: কক্সবাজারে রোহিঙ্গা নাগরিককে গুলি করে হত্যা
মিয়ানমারে ফেরার দাবিতে কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের সমাবেশ
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করতে ইউএনএইচসিআরের প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান
মিয়ানমারে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসনের অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে রাখাইনে কার্যক্রম বাড়ানোর জন্য ইউএনএইচসিআরের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
বুধবার জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ও আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি ঢাকায় তার সঙ্গে দেখা করার সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিষয়টি উত্থাপন করেন।
মোমেন বলেন, টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য রোহিঙ্গা জনগণের মধ্যে আস্থা তৈরিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক কার্যক্রমে অব্যাহত নিয়োজিত থাকার জন্য ইউএনএইচসিআরকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে জাতিসংঘের পদক্ষেপ চায় ঢাকা
পররাষ্ট্রমন্ত্রী কক্সবাজার ও ভাসানচরে মিয়ানমারের পাঠ্যক্রমের আওতায় রোহিঙ্গা শিশুদের মিয়ানমারের ভাষায় অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রম, জীবিকার সুযোগ, স্বাস্থ্য সুবিধা ইত্যাদির কথা তুলে ধরেন।
এই উদ্যোগ ফিরে যাওয়ার পরে মিয়ানমারের সমাজে তাদের পুনঃএকত্রীকরণকে সহজতর করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
মোমেন রাখাইন রাজ্যে দ্রুত প্রত্যাবাসনের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য হাইকমিশনারকে আহ্বান জানান।
হাইকমিশনার জানান, তার সংস্থা এ বিষয়ে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং আশ্বস্ত করেছেন তিনি এটি আরও অনুসরণ করবেন।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় ও টেকসই প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে একই দিকে রয়েছে ইউএনএইচসিআর।
আরও পড়ুন: অনিশ্চিত প্রত্যাবাসন রোহিঙ্গাদের অপরাধের দিকে ঠেলে দিতে পারে: প্রধানমন্ত্রী
কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও ভাসানচর পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা বলার সময় তিনি দ্রুততম সময়ে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার জন্য রোহিঙ্গাদের প্রবল আগ্রহের কথা উল্লেখ করেন।
রাখাইনে রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন তিনি।
তিনি জানান, ইউএনএইচসিআর ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা কক্সবাজারে স্থানীয় জনগণের সুবিধার্থে বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নিচ্ছে।
ভাসানচরের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দ্বীপটিতে স্থানান্তরিত সকল রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য ভাসানচরে জাতিসংঘের ব্যবস্থার পূর্ণ নিয়োগের ওপর জোর দেন।
হাইকমিশনার গ্র্যান্ডি ভাসানচরের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে প্রয়োজনীয় সহায়তা অব্যাহত রাখার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি তার পঞ্চম সফরে ২১ মে বাংলাদেশে আসেন। তিনি ২১ থেকে ২৩ মে কক্সবাজার এবং ২৪ মে ভাসানচর পরিদর্শন করেন।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই: প্রতিমন্ত্রী
জোরপুর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের দেশটিতে ফেরত পাঠাতে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি নেই বলে জানিয়েছেন দূর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে ইনডিপেনডেন্ট ইনভেস্টিগেটিভ ম্যাকানিজম অন মিয়ানমার (আইআইএমএম) এর প্রধান নিকোলাস কুমজিয়ানের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল এবং ইউএসএইড এর ডেপুটি এ্যাডমিনিস্ট্রেটর ইজোবেল কোলম্যান এক নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে পৃথক আলাচনা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান প্রতিমন্ত্রী।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সবশেষ অগ্রগতি জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এটা নিয়ে গত মাসেই একটি মিটিং হয়েছে। সেখানে নাগরিকদের একটি তালিকা দেয়া হয়েছে, মিয়ানমার সেটা গ্রহণ করেছে। এটা প্রক্রিয়াধীন। এ পর্যন্ত আমরা ৩৫ হাজার তালিকা দিয়েছি, কত জন তারা গ্রহণ করছে এমন কিছু এখনও পাঠায় নি। সবশেষ যদি বলি এখনও উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি আমাদের নেই।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংস অপরাধের জন্য জবাবদিহি করতে হবে: জাতিসংঘ
আইআইএমএম প্রধানের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী এনামুর বলেন, তিনি এসেছেন মিয়ানমার যে নির্যাতন করেছে তার একটি ইনভেস্টিগেশন করতে। সেজন্য তিনি আমাদের অনুমতি চেয়েছেন। আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।
ইউএসএইড এর প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মিটিং বিষয়ে দূর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, তারা বলেছেন ভাসানচরে এখনও বেশি মানুষ নেয়ার পরিবেশ তৈরি হয়নি। পরিবেশের উন্নয়ন করতে হবে। খাবার পানি,উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতেও সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছে সংস্থাটি।
ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ভাসানচরে এখনও জাতিসংঘের এজেন্সিগুলো কার্যক্রম শুরু করেনি। এ ব্যাপারে আমি ইউএসএইডের সহযোগিতা চেয়েছি যাতে দ্রুত সেখানে ইউএনএইচসিআর, ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম কার্যক্রম শুরু করে। তারা জানিয়েছেন, দ্রুত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে তারা চাপ তৈরি করবে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনে চেষ্টা করছে চীন: রাষ্ট্রদূত লি জিমিং
জলবায়ু সহনশীলতা বাড়াতে সহায়তা দিতে আগ্রহী অস্ট্রেলিয়া
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও জলবায়ু সহনশীলতা নির্মাণে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে অস্ট্রেলিয়া।
মঙ্গলবার কপ-২৬ এর সাইডলাইনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে এক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন এ বার্তা দেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, ‘অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে এ দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।’
তিনি বলেন, উভয় প্রধানমন্ত্রীই দু’দেশের মাঝে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেন এবং তারা প্রধানত জলবায়ু সহযোগিতা ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ওপর জোর দেন।
এ সময় অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর দেশ বাংলাদেশকে সহযোগিতা করবে বিশেষ করে জলবায়ু সহনশীলতা গড়া ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু ভালনারেবল দেশ এবং অস্ট্রেলিয়াও বিভিন্ন চরম জলবায়ু দুর্যোগের মুখোমুখি হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের বিরুদ্ধে সহনশীলতা গড়তে উভয় দেশ নিবিড়ভাবে কাজ করতে পারে।’
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশকে একটানা সহযোগিতা করে যাওয়ার জন্য অস্ট্রেলিয়াকে ধন্যবাদ দেন তিনি।
২০১৭ সাল থেকে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমারের ওপর আরও আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ করতে অস্ট্রেলিয়ার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
আরও পড়ুন: সৌদির বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে সহযোগিতা করতে আগ্রহী বাংলাদেশ
গ্লাসগো থেকে লন্ডন পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী
মালয়েশিয়া বাংলাদেশে পাম অয়েলের মূল্য সংযোজন শিল্পে বিনিয়োগে আগ্রহী