হাইকোর্ট
শিশু থাকবে মায়ের কাছে, দেখা করতে পারবেন বাবা: হাইকোর্ট
১০ বছরের এক কন্যা সন্তানকে বাবার জিম্মায় দিতে নিম্ন আদালতের আদেশ স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। একইসাথে ওই শিশুকে মায়ের কাছে রাখার আদেশ দিয়েছেন আদালত। তবে বাবা চাইলে সন্তানের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন।
শিশুটির মায়ের করা এক আবেদনের শুনানি করে রবিবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আরও পড়ুন: হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি প্রকল্প এলাকায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ: হাইকোর্ট
আদালতে শিশুর মায়ের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস।
জানা যায়, স্বামী-স্ত্রী দুজনই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের শিক্ষার্থী। ২০০৭ সালে তারা বিয়ে করেন। ২০১১ সালে তাদের কন্যা সন্তান হয়। তার বয়স প্রায় ১০ বছর। পড়ে স্কুলে। ২০১৯ সালে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। মা থাকেন ধানমন্ডির হাজারীবাগে, বাবা থাকেন গাজীপুরে। শিশু সন্তান ছিল মায়ের কাছে। পরে বাবা মেয়েকে নিজের জিম্মায় নিতে পারিবারিক আদালতে মামলা করেন। এ মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ জুন পারিবারিক আদালত আদেশ দেন।
আদেশে বলা হয়, শিশুটি ২১ দিন বাবার (বাদী) হেফাজতে থাকবে। তার মধ্যে শুক্র ও শনিবার শিশুটি মায়ের (বিবাদী) হেফাজতে থাকবে। বাবা শিশুটির অনলাইন স্কুলে ক্লাসের ব্যবস্থা করবেন। বাদী ও বিবাদীর এবং তাদের বাবা-ময়ের বাসার পরিবেশ দেখার জন্য, কার বাসায় কে থাকেন এবং উক্ত বিষয়ে সার্বিক প্রতিবদনের জন্য ২১ দিনের মধ্যে হাজারীবাগ থানার ওসিকে নির্দেশ দেন আদালত।
আরও পড়ুন: পার্থ গোপাল বণিকের জামিন: বিচারকের ব্যাখ্যা চাইলেন হাইকোর্ট
নিম্ন আদালতের ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন শিশুটির মা। শুনানি শেষে হাইকোর্ট পারিবারিক আদালতের আদেশ ৩০ দিনের জন্য স্থগিত করে দেন। একইসাথে স্বাভাবিক কোর্ট খোলার পর বিষয়টি পরবর্তী আদেশের জন্য উপস্থাপন করতে আইনজীবীকে নির্দেশ দেন আদালত।
লকডাউন: সারাদেশে আদালতে স্বাভাবিক বিচার কাজ বন্ধ থাকবে
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার থেকে আগামী ৭ জুলাই পর্যন্ত সরকার সারাদেশে লকডাউন ঘোষণা করায় সুপ্রিম কোর্টসহ দেশের সকল আদালতে স্বাভাবিক বিচার কাজ বন্ধ থাকবে। তবে জরুরি মামলা নিষ্পত্তির জন্য পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি, হাইকোর্ট বিভাগের তিনটি একক বেঞ্চ এবং সারা দেশে সকল জেলায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট, মহানগর এলাকায় চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন।
এই সময়ে আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থল ত্যাগ না করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বুধবার এসব বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবরের স্বাক্ষরে পৃথক পৃথক বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বৃহস্পতিবার থেকে আবারও প্রথম ডোজের টিকা দেয়া শুরু
আপিল বিভাগ বসবেন ৬ ও ৭ জুলাই
লকডাউনের মধ্যেই আপিল বিভাগের বিচারপতিরা আগামী ৬ ও ৭ জুলাই নিজ নিজ বাসায় অবস্থান করে ভার্চুয়ালি আদালত চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ওই দুদিন ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামিদের জেল আপিল মামলা শুনানি করা হবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের মামলার নথি নিজ নিজ বাসায় নিয়ে রাখতে বলা হয়েছে। আইনজীবীদেরও বাসায় অবস্থান করে মামলায় শুনানি করতে বলা হয়েছে। আর এ জন্য আপিল বিভাগের দুজন কর্মকর্তাকেও বাসায় বসে আদালতে যুক্ত থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তবে চেম্বার আদালতে শুনানি সংক্রান্ত বিষয়ে আইনজীবীদের সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল, আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্টার এবং সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
হাইকোর্টের তিনটি বেঞ্চ বসবে
লকডাউনের কারণে স্বাভাবিক বিচার কাজ বন্ধ হলেও জরুরি বিষয় শুনানির জন্য ১ জুলাই থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের বেঞ্চ বসবেন। এই তিনটি বেঞ্চের এখতিয়ারও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের বেঞ্চে অতি জরুরি সকল রিট মোশন, দেওয়ানী মোশন ও তৎসংক্রান্ত আবেদনপত্র; বিচারপতি জে বি এম হাসানের বেঞ্চে অতি জরুরী সকল ফৌজদারি মোশন ও তৎসংক্রান্ত আবেদনপত্র এবং বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের বেঞ্চে অ্যাডমিরালটি, বিবাহবিচ্ছেদ, সাকসেশন, আদিম অধিক্ষেত্র, ব্যাংকিং আইন, কম্পানি আইনসহ অর্থসংক্রান্ত যাবতীয় আবেদনপত্র শুনানি হবে। তবে সব শুনানিই ভার্চুয়ালি হবে।
আরও পড়ুন: মার্চের মধ্যে ৮০ শতাংশ মানুষ টিকা পাবে: সংসদে স্বাস্থ্যমন্ত্রী
ম্যাজিস্ট্রেট আদালত খোলা
সব আদালতে স্বাভাবিক বিচার কাজ বন্ধ থাকলেও সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় সকল জেলায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট, মহানগর এলাকায় চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। তবে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগে এক বা একাধিক ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন।
চেক ডিজঅনার সংক্রান্ত মামলার ক্ষেত্রে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘দি নেগোশিয়েবল ইন্সট্রমেন্টস অ্যাক্টস,১৮৮১ সহ যে সকল আইনে মামলা/আপিল দায়েরের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারিত আছে, সে সকল আইনের অধীনে মামলা/আপীল শারীরিক উপস্থিতিতে আদালতের কার্যক্রম শুরু হওয়ার ৭ দিনের মধ্যে তামাদির মেয়াদ অক্ষুন্ন গণ্যে দায়ের করা যাবে।’
আরও পড়ুন: করোনায় রেকর্ড শনাক্তের দিনে ১১৫ জনের মৃত্যু
বিজ্ঞপ্তিতে এই সময়ে বিচারক ও আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের কর্মস্থল ত্যাগ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের এ সময়ে আদালত অঙ্গনে না আসার জন্য বলা হয়েছে।
শিশুকে সরাসরি আদালতে হাজির
সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে আইনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িত শিশুকে শারীরিক উপস্থিতিতে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে উপস্থাপন করা যাবে।
হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি প্রকল্প এলাকায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ: হাইকোর্ট
তুরাগ নদীর ব্যাপারে দেয়া রায়ের নীতি অনুসরণ করে রাজধানীর হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি প্রকল্পটি পাবলিক ট্রাস্ট প্রপার্টি ঘোষণা করে আগামী ৬০ দিনের মধ্যে সকল বাণিজ্যিক স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বুধবার বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক-আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
ওই প্রকল্পে থাকা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশনা চেয়ে ২০১৮ সালে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে করা এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি করে আজ এ রায় দেয়া হয়।
রায়ে আদালত বলেছেন, ‘আমাদের ফুসফুস হিসেবে খ্যাত প্রকল্পটি সুরক্ষা করা একান্ত অপরিহার্য।’
এ জন্য হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি প্রকল্পের সম্পূর্ণ এলাকায় সব ধরনের রেস্তোরাঁ, হোটেল, দোকানসহ সব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান অবৈধ ঘোষণাসহ মোট ১০ দফা দফা নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত।
আরও পড়ুন: হাতিরঝিল থেকে উত্তরা পর্যন্ত ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট চালুর প্রকল্প নেয়া হয়েছে: এলজিআরডি মন্ত্রী
হাইকোর্টের নির্দেশনাগুলো হচ্ছে:
১) তুরাগ নদীর রায়ের নীতি অনুসারে ঢাকার হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি প্রজেক্টকে জনগণের সম্পত্তি ঘোষণা করা হলো।
২) ঢাকার হাতিরঝিল প্রকল্পে হোটেল, রেস্টুরেন্ট, দোকানসহ সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপন অবৈধ ঘোষনা করা হলো। আগামী ৬০ দিনের মধ্যে সকল বাণিজ্যিক স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ প্রদান করা হলো।
৩) প্রকল্প এলাকায় বাণিজ্যিক স্থাপনা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো।
৪) প্রকল্পের সংরক্ষণ, উন্নয়ন, পরিচালনার জন্য পৃথক একটি কর্তৃপক্ষ গঠন করে প্রধানমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে পরিচালনা করা।
৫) প্রকল্পের স্থায়ী পরামর্শক হিসেবে বুয়েটের প্রকৌশল বিভাগ এবং সেনাবাহিনীর ২৪তম ব্রিগেডকে যৌথভাবে পরামর্শক নিয়োগ করা হলো।
৬) প্রকল্প এলাকায় জনসাধারণের জন্য আন্ডারগ্রাউন্ডে ওয়াশরুম তৈরি করা।
৭) প্রকল্প এলাকায় সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা।
আরও পড়ুন: হাতিরঝিলকে রক্ষা করার সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে
৮) পায়ে চলা, সাইকেল চালান এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা চলাচলের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৯) প্রকল্পের এলাকার লেকে মাছের অভয়ারণ্য তৈরি করা।
১০) প্রকল্প এলাকায় বাণিজ্যিক কোন স্থাপনা হবে না।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাজউকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ইমাম হাছান। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ওয়ায়েস আল হারুনী।
রায়ের পর মনজিল মোরসেদ ১০ দফা নির্দেশনার কথা জানিয়ে বলেন, আদালত রায়ে বাঙালি প্রথম বিজ্ঞানী স্যার জগদিশ চন্দ্র বসুর নামে প্রকল্পের নামকরণ করার জন্য পরামর্শ প্রদান করেন।
নামে মিল, বিনাদোষে ছয়মাস কারাভোগের পর জামিন
তাদের বাবার নামে মিল নেই, শুধু নিজেদের নামে মিল থাকায় বিনাদোষে ছয়মাস কারাভোগের পর জামিন পেলেন মানিক হাওলাদার। সোমবার হাইকোর্ট তাকে ছয়মাসের জামিন দিয়েছেন।
স্বামীকে নির্দোষ দাবি করে মানিক হাওলাদারের স্ত্রীর আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
মাদক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত প্রকৃত আসামি মানিক মিয়ার পরিবর্তে কারাবন্দি হন শরিয়তপুরের মাছ ব্যবসায়ী মানিক হাওলাদার।
আরও পড়ুন: সিনহা হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন, ওসি প্রদীপসহ ৬ জনের জামিন নামঞ্জুর
জামিনের পাশাপাশি এই মামলার নথি (সিডি) হাইকোর্টে দাখিল করতে সিরাজগঞ্জের জেলা জজকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে মামলার প্রকৃত আসামি মানিক মিয়ার বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা কেন জারি করা হবে না তা জানতে রুল জারি করা হয়েছে।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী পার্থ সারথী রায়। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
আরও পড়ুন: মেজর সিনহা হত্যা মামলায় ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট
প্রকৃত আসামি মানিক মিয়ার পরিবর্তে নিরপরাধ মানিককে গ্রেপ্তারের বিষয়ে গত ৭ মার্চ বিচার বিভাগীয় নির্দেশ দিলে বিষয়টি তদন্ত করে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করেন শরিয়তপুরের প্রধান বিচারিক হাকিম মো. শামসুল আলম।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মামলার আসামি মানিক মিয়া ও গ্রেপ্তার মানিক হাওলাদার এক ব্যক্তি নন। তারা সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যক্তি। প্রকৃত আসামি মানিক মিয়া শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর ইউনিয়নের মালতকান্দি গ্রামের ইব্রাহিম মৃধার ছেলে। আর কারাবন্দি মানিক হাওলাদার একই ইউনিয়নের আলমচান বেপারীকান্দির নজরুল ইসলাম হাওলাদারের ছেলে। সোমবার এ প্রতিবেদন হাইকোর্টে উপস্থাপিত হয়। এরপর এটা দেখে আদেশ দেন আদালত।
জানা যায়, ৬৬৮ বোতল ফেনসিডিল রাখার অভিযোগে ২০০৯ সালের ২ জুন সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানায় চারজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ওই মামলার আসামি মো. মানিক মিয়া, বাবা অজ্ঞাত-কে ২০০৯ সালের ৩ জুন গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই বছরই হাইকোর্ট থেকে জামিনে মুক্তি পান মানিক। ওই মামলায় বিচার শেষে মানিক মিয়াসহ চারজনকে ৪ বছর করে কারাদণ্ড দিয়ে ২০১৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সিরাজগঞ্জ আদালত রায় দেয়। এ রায়ের পর মাছ ব্যবসায়ী মানিক হাওলাদারকে গত বছর ২৮ নভেম্বর ভেদরগঞ্জ থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এর পরই প্রকৃত আসামি মানিক মিয়ার প্রতারনার বিষয়টি সামনে আসে।
আরও পড়ুন: ওসি প্রদীপের জামিন না মঞ্জুর: সম্পত্তি ক্রোকের আবেদন
এ পর্যায়ে দেখা যায়, হাইকোর্টে মানিক মিয়ার দাখিল করা জামিন আবেদনে মানিক হাওলাদারের পরিচয় ও ঠিকানা ব্যবহার করে। সিরাজগঞ্জ আদালতেও একই প্রতারনা করে মানিক মিয়া।
এ অবস্থায় মানিক হাওলাদারের মুক্তি ও তাকে ক্ষতিপুরণ দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন নির্দোষ মানিক হাওলাদারের স্ত্রী। এই আবেদনের সঙ্গে দুই মানিকের পরিচয় তুলে ধরে সখিপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান মানিক সরদারের দেওয়া একটি সনদ দাখিল করা হয়। তাতে প্রকৃত আসামির বাবার নাম ইব্রাহিম মৃধা ও নির্দোষ মানিকের বাবার নাম নজরুল ইসলাম উল্লেখ করা হয়েছে।
এ অবস্থায় প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করেন ও শরিয়তপুরের প্রধান বিচারিক হাকিমকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় নিরাপরাধ মানিককে জামিনের আদেশ দেন হাইকোর্ট।
সিনহা হত্যা: ৩ আসামির জামিন আবেদন খারিজ
কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশের গুলিতে নিহত সেনাবাহিনীর মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় তিন আসামির জামিন আবেদন উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।
সোমবার বিচারপতি ফরিদ আহমদ ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরসেদ ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী। আসামিদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মাহবুবুর রহমান।
আরও পড়ুন: সিনহা হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন, ওসি প্রদীপসহ ৬ জনের জামিন নামঞ্জুর
আসামিরা হলেন পুলিশ সদস্য শাহজাহান আলী, রাজিব হোসেন ও আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ।
গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশের গুলিতে সেনাবাহিনীর মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) আদালতে দাখিল করা হয়। কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহর আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করা হয়।
আরও পড়ুন: মেজর সিনহা হত্যা মামলায় ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট
উল্লেখ্য, গত বছরের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মারিশবুনিয়া পাহাড়ে ভিডিওচিত্র ধারণ করে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকার নীলিমা রিসোর্টে ফেরার পথে টেকনাফ শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা। এ ঘটনায় গত ৫ আগস্ট নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে প্রধান আসামি করে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হয়। মামলাটি আমলে নিয়ে র্যাবকে তদন্তের আদেশ দেন আদালত। এরপর গত বছরের ৬ আগস্ট প্রধান আসামি লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ৭ পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।
পার্থ গোপাল বণিকের জামিন: বিচারকের ব্যাখ্যা চাইলেন হাইকোর্ট
রাজধানীর নর্থ রোডের বাসা থেকে ৮০ লাখ টাকাসহ হাতেনাতে গ্রেপ্তার বরখাস্ত হওয়া ডিআইজি প্রিজন্স পার্থ গোপাল বণিককে জামিন দেয়ায় বিচারকের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছেন হাইকোর্ট।
সোমবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে ওই কারা কর্মকর্তারা জামিন প্রদানকারী বিচারক ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ইকবাল হোসেন কোন যুক্তিতে তাকে জামিন দিয়েছেন সে ব্যাপারে তাকে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে পার্থ গোপাল বণিকের অস্বাভাবিক ভাবে জামিন দেয়ার বিষয় নিয়ে চ্যানেল ২৪ এ প্রচারিত প্রতিবেদনের ভিডিও ক্লিপ আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: মামলা থেকে অব্যাহতি চান বরখাস্তকৃত ডিআইজি প্রিজনস পার্থ গোপাল
পাশাপাশি বরখাস্ত হওয়া ডিআইজি প্রিজন্স পার্থ গোপাল বণিকের জামিনের বিরুদ্ধে দুদকের করা আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন হাইকোর্ট । আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান ও অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান লিংকন। এর আগে ৮০ লাখ টাকাসহ হাতেনাতে গ্রেপ্তার বরখাস্ত হওয়া ডিআইজি প্রিজন্স পার্থ গোপাল বণিককে অস্বাভাবিক ভাবে জামিন দেয়ার বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনেন আইনজীবী মনিরুজ্জামান লিংকন। এছাড়া রবিবার তার জামিন স্থগিত চেয়ে আপিল আবেদন করে দুদক।
আরও পড়ুন: বরখাস্তকৃত ডিআইজি প্রিজনস পার্থ গোপালের বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ
গত ১৯ জুন জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় সাময়িক বরখাস্ত হওয়া কারা উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজনস) পার্থ গোপাল বণিক জামিন পান। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ইকবাল হোসেন ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় তার জামিন মঞ্জুর করেন। পরে জামিন আদেশ নিয়ে তার পরদিনই তিনি জেল থেকে বের হন। অনেকটা গোপনে এবং তড়িঘড়ি করে এই জামিন ও তিনি কারামুক্ত হন।
২০১৯ সালের ২৮ জুলাই সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত দুদকের সেগুনবাগিচার প্রধান কার্যালয়ে কমিশনের পরিচালক মুহাম্মদ ইউছুফের নেতৃত্বে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় পার্থ গোপাল বণিককে। ঘুষ ও দুর্নীতির কয়েক লাখ নগদ টাকা তার বাসায় রয়েছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে এদিন বিকাল সাড়ে ৪ টার দিকে পার্থ গোপাল বণিকের বাসায় অভিযান চালানো হয়। অভিযানে ৮০ লাখ টাকা জব্দ করা হয় এবং তাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসা হয়।
আরও পড়ুন: ঘুষ গ্রহণের মামলায় ডিআইজি প্রিজন পার্থ গোপাল কারাগারে
পরে দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ দুদকের সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধান দলের নেতা মো. সালাউদ্দিন বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
এ মামলায় গত বছরের ৪ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। এ মামলায় হাইকোর্টে একাধিকার জামিন আবেদন করে জামিন না পেলেও অনেকটা গোপনে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন।
২০১৯ সালের ৩০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ পার্থ গোপালকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেন।
২৫০০ রিটকারী নিবন্ধনধারীকে নিয়োগের সুপারিশের আদেশ বাতিল
বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) কর্তৃক ১ থেকে ১২তম নিবন্ধনধারীদের মধ্যে রিটকারী প্রায় ২ হাজার ৫০০ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করতে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ বাতিল করেছেন আপিল বিভাগ।
সোমবার এনটিআরসিএর বিরুদ্ধে জারি করা আদালত অবমাননার রুল খারিজ করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ৬ বিচারপতির বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতে এনটিআরসিএ’র পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার ফিদা এম কামাল। সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. কামরুজ্জামান। রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান, মমতাজ উদ্দিন ফকির, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া ও ব্যারিস্টার মহিউদ্দিন হানিফ।
আরও পড়ুন: তালাকনামায় আপত্তিকর শব্দ ব্যবহার কেন অবৈধ নয়: হাইকোর্ট
গত ৩১ মে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ১ থেকে ১২তম নিবন্ধনধারীদের মধ্যে রিটকারী ২৫০০ জনকে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চার সপ্তাহের মধ্যে নিয়োগের সুপারিশ করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ২০১৭ সালের একটি রায় অবমাননার অভিযোগ তুলে করা আদালত অবমাননার আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
পরে গত ১৩ জুন হাইকোর্টের এই আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষ। গত ২২ জুন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালতে আবেদনটি শুনানির জন্য উত্থাপন করা হলে তা আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। সে অনুযায়ী সোমবার এনটিআরসিএ’র আবেদনের শুনানি নিয়ে আদেশ দেন আপিল বিভাগ।
আরও পড়ুন: ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তির বৈধতা প্রশ্নে হাইকোর্টের রুল
জানা যায়, এনটিআরসিএ’র এক থেকে ১২তম নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্য থেকে করা পৃথক ১৬৬টি রিট আবেদনের শুনানি করে২০১৭ সালে হাইকোর্ট সাত দফা নির্দেশনা দিয়ে একটি রায় দেন। ওই রায়ে এক থেকে ১২তম নিবন্ধনধারীদের একটি জাতীয় মেধাতালিকা তৈরি করে সেই মেধা তালিকা অনুযায়ী নিয়োগের সুপারিশ করতে আদেশ দেয়া হয়। কিন্তু ওই রায় বাস্তবায়ন না হওয়ায় পরবর্তীতে ২০১৯ সালে হাইকোর্টে আদালত অবমাননার মামলা করেন রিটকারীরা। সে প্রেক্ষিতে এনটিআরসিএ’র বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করে হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন: ডিএজি ও এএজি নিয়োগের বৈধতা প্রশ্নের রুল শুনানিতে বিব্রত হাইকোর্ট
সর্বশেষ গত ৩০ মার্চ এনটিআরসিএ বেসরকারি স্কুল কলেজ ও মাদরাসায় প্রায় ৫৪ হাজার শিক্ষক নিয়োগের জন্য তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে। এ অবস্থায় হাইকোর্টে আদালত অবমাননার আবেদন শুনানির জন্য উঠলে গত ৬ মে ১ থেকে ১২তম নিবন্ধনধারীদের মধ্যে রিটকারীদের এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৭ দিনের মধ্যে নিয়োগের সুপারিশ করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ৫৪ হাজার নিবন্ধনধারীকে নিয়োগের জন্য জারি করা গণবিজ্ঞপ্তি এক সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেন। পরে ৩১ মে হাইকোর্ট রিটকারী প্রায় আড়াই হাজার জনকে চার সপ্তাহের মধ্যে নিয়োগের সুপারিশ করতে আদেশ দিয়ে গণবিজ্ঞপ্তির ওপর স্থগিতাদেশ তুলে নেন। হাইকোর্টের এই আদেশের বিরুদ্ধে এনটিআরসিএ গত ১৩ জুন আপিল বিভাগে আবেদন করেন, যার ওপর সোমবার আদেশ দেন আপিল বিভাগ।
তালাকনামায় আপত্তিকর শব্দ ব্যবহার কেন অবৈধ নয়: হাইকোর্ট
স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে পাঠানো তালাক নোটিশ দেওয়ার সময় স্ত্রী সম্পর্কে অবমাননাকর কথাবার্তা লেখা কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে তালাক নোটিশের নির্ধারিত ফরম কেন তৈরি করা হবে না তাও জানতে চেয়েছেন আদালত।
সম্প্রতি এক নারীর করা রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে রবিবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।
আরও পড়ুন: বিয়ে-তালাক ডিজিটালাইজেশন করতে হাইকোর্টের রুল
আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে আইন মন্ত্রণালয়, নিবন্ধন অধিদপ্তরসহ তিন জনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
রিটকারীর আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল নোমান জানান, স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত কোনো ফরম নেই। কাজীরা একটি ফরম তৈরি করে তালাক দেওয়া কাজ চালাচ্ছেন। যেই ফরমে নারী সম্পর্কে অবমাননাকর কথাবার্তা লেখা হচ্ছে, যা আপত্তিকর। সে কারণেই বাদী এ রিটটি দায়ের করেছেন।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
আদালতে রিট আবেদনটি দায়ের করেন রাজধানীর বড় মগবাজার এলাকার প্রবাসী রাখী কে জামান। তিনি বর্তমানে কানাডার উইন্ডসর বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন।
আরও পড়ুন: ভারতে তিন তালাক এখন অপরাধ
আবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালের ২৬ ডিসেম্বর পারিবারিকভাবে রাকিব মুক্তাদির জোয়ারদারের সাথে বিয়ে হয় রাখী কে জামানের। পরে ২০১৭ সালের অক্টোবরে রাখীকে তালাক নোটিশ পাঠান রাকিব মুক্তাদির জোয়ারদার।
ওই নোটিশের একাংশে বলা হয়, ‘স্ত্রী, স্বামীর অবাধ্য– যাহা শরিয়তের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। তাহার উক্ত চাল-চলন পরিবর্তন করার জন্য আমি নিজেই বহুবার চেষ্টা করিয়াছি। কিন্তু অদ্যবধি তাহার কোনও পরিবর্তন সাধিত হয় নাই। ’
এ ধরনের শব্দ নারীর প্রতি অবমাননাকর, অমানবিক, অযৌক্তিক ও অবৈধ উল্লেখ করে গত ২ জুন হাইকোর্টে রিট করেন রাখী।
আরও পড়ুন: স্ত্রীকে তালাকের পর শ্যালিকাকে জোরপূবর্ক ‘ধর্ষণ’
পরে আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল নোমান জানান, নোটিশে এ ধরনের শব্দের ব্যবহার একজন নারীর প্রতি চরম অবমাননাকর। পরবর্তীতে বিয়ে করার ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলো নানা ধরনের জটিলতার মুখে পড়তে হয়।
রিটে বলা হয়, মুসলিম পারিবারিক আইন ১৯৬১ এবং মুসলিম বিয়ে এবং তালাক (নিবন্ধন) আইন, ১৯৭৪ অনুযায়ী এ ধরনের শব্দের ব্যবহার স্পষ্টভাবে নারীর মানবাধিকার ও তার মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করে। একই সঙ্গে সংবিধানের ২৭, ২৮ এবং ৩২ অনুচ্ছেদেরও সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
২০ বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তির বৈধতা প্রশ্নে হাইকোর্টের রুল
দেশের ২০টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তিতে ২০১৬ সালের পাস করা এসএসসি শিক্ষার্থীদের বাদ দেয়া কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
২০১৬ সালে এসএসসি উত্তীর্ণ আবির হাসানসহ ১২ জন শিক্ষার্থীর করা এক রিট আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচাপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার এ আদেশ দেন।
আরও পড়ুন: ডিএজি ও এএজি নিয়োগের বৈধতা প্রশ্নের রুল শুনানিতে বিব্রত হাইকোর্ট
শিক্ষা সচিব, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারসহ ২৪ জনকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
রিট আবেদনকারীপক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার অনীক আর হক ও অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম সোহেল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার জন্মসনদসহ নথিপত্র হাইকোর্টে তলব
২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির জন্য ২০টি বিশ্ববিদ্যালয় চলতি বছর গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার জন্য দুটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।
প্রথমে ৩ মার্চ একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলা হয়, ২০১৬ হতে ২০১৮ সালের এসএসসি/সমমান এবং ২০১৯ ও ২০২০ সালের এইচএসসি/সমমান ডিপ্লোমা-ইন কমার্স, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি ভোকেশনাল, এ লেভেল এবং অন্যান্য সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরাই কেবল ভর্তি পরীক্ষার জন্য আবেদন করতে পারবে। পরবর্তীতে গত ৩১ মার্চ পৃথক একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। এবারের বিজ্ঞপ্তিতে ২০১৬ সাল বাদ দিয়ে ২০১৭ সাল উল্লেখ করা হয়। ওই বিজ্ঞপ্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৬ সালে এসএসসি পাস করা আবির হাসানসহ ১২ জন শিক্ষার্থী হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন।
আরও পড়ুন: ঢাবির অধ্যাপক মোর্শেদ হাসানকে অপসারণের আদেশ কেন অবৈধ নয়: হাইকোর্ট
যে ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা হচ্ছে তা হলো- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকা), ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (কুষ্টিয়া), শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (সিলেট), খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুলনা), হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (দিনাজপুর), মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (টাঙ্গাইল), পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পটুয়াখালী), নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোয়াখালী), কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুমিল্লা), জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় (ত্রিশাল ময়মনসিংহ), যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যশোর), বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (রংপুর), পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পাবনা), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (গোপালগঞ্জ), বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (বরিশাল), রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রাঙামাটি), রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় (সিরাজগঞ্জ), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি (গাজীপুর), শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় (নেত্রকোনা), বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (জামালপুর)।
৪ শিশুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা: ওসিসহ ৭ পুলিশ বরখাস্তের রায় স্থগিত
বরিশালের বাকেরগঞ্জ থানায় চার শিশুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা দায়ের এবং অভিযুক্তদের শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর ঘটনায় বাকেরগঞ্জ থানার ওসি মো. আবুল কালামসহ ৭ পুলিশ সদস্য ও সমাজসেবা অফিসারকে বরখাস্তের আদেশসহ গত ১৩ জুন দেয়া হাইকোর্টের পুরো রায় চার সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।
একই সাথে এ বিষয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য আগামী ১ আগস্ট দিন ধার্য করেছেন আদালত।
রবিবার (২০ জুন) আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের আদালত এই আদেশ দেন।
আদালতে পুলিশের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মমতাজ উদ্দিন ফকির। অপরপক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মো. আব্দুল হালিম। তাকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট জামিউল হক ও ব্যারিস্টার শারমিন আক্তার শিউলী।
আরও পড়ুন: ডিএজি ও এএজি নিয়োগের বৈধতা প্রশ্নের রুল শুনানিতে বিব্রত হাইকোর্ট
গত ১৩ জুন বরিশালের বাকেরগঞ্জ থানায় চার শিশুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা ও শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে প্রেরণের ঘটনায় মামলা বাতিল এবং বাকেরগঞ্জ থানার ওসি মো. আবুল কালামসহ ৭ পুলিশ সদস্য ও সমাজসেবা অফিসারকে বরখাস্তের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একই সাথে শিশুদের যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ প্রদানকারী বরিশালের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. এনায়েত উল্লাহর ফৌজদারি বিচারিক ক্ষমতা প্রত্যাহার করে তাকে দেওয়ানি মামলার দায়িত্ব দিতে বলা হয়। বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কামরুল হোসেন মোল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রায় দিয়েছিলেন।
পরে ওই রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালতে আবেদন করা হয়। সেই আবেদনের ওপর আজ (২০ জুন) শুনানি নিয়ে আগের পুরো রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ দিলেন চেম্বার আদালত।
১৩ জুনের হাইকোর্টের রায় নিয়ে ব্যারিস্টার হালিম জানিয়েছিলেন, চার শিশুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা ও জেলে প্রেরণের ঘটনায় হাইকোর্ট ৭ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন। নির্দেশনাগুলো হলো-
১. চার শিশুকে গ্রেপ্তার ও থানা হেফাজতে আটক রাখাকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
২. চার শিশুর বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা বাতিল ঘোষণা করেছেন আদালত।
আরও পড়ুন: ঢাবির অধ্যাপক মোর্শেদ হাসানকে অপসারণের আদেশ কেন অবৈধ নয়: হাইকোর্ট
৩. বাকেরগঞ্জ থানার ওই সময়ের ওসিসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা।
৪. সংশ্লিষ্ট সমাজসেবা অফিসারকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা।
৫. চার শিশুকে আটক করে প্রিজনভ্যানে করে আনা চার পুলিশ সদস্যকে শনাক্ত করে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করতে বলা হয়েছে।
৬. বরিশালের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. এনায়েত উল্লাহর ফৌজদারি বিচারিক ক্ষমতা প্রত্যাহার করে তাকে দেওয়ানি মামলার দায়িত্ব দিতে বলা হয়েছে।
৭. শিশু আইন অনুযায়ী পুলিশের দায়িত্ব কর্তব্য গাইডলাইন আকারে প্রকাশ করে প্রত্যেক থানায় সার্কুলেট করতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার জন্মসনদসহ নথিপত্র হাইকোর্টে তলব
জানা যায়, ৬ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে চার শিশুকে আসামি করে গত বছরের ৬ অক্টোবর মামলা করা হয়। ওইদিনই চার শিশুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ৭ অক্টোবর তাদের যশোর পুলেরহাট শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ দেন বরিশালের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এনায়েত উল্লাহ। এ নিয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সংবাদ প্রচারিত হয়।
এই সংবাদ বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে এলে তারা ৮ অক্টোবর রাতে ভার্চুয়ালি আদালত বসান। সেই আদালতে ওই ৪ শিশুর জামিনের বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে বরিশাল আদালতকে নির্দেশ দিয়ে রাতেই শিশুদের এসি মাইক্রোবাসে করে নিজ নিজ বাড়িতে পৌঁছে দিতে বলেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের এই আদেশ অবহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বরিশালের বিচারক চার শিশুকে জামিন দেন। এরপর ১১ অক্টোবর চার শিশুর বিরুদ্ধে দায়ের করা ধর্ষণের মামলা স্থগিত করেন হাইকোর্টের একই বেঞ্চ। পাশাপাশি এ বিষয়ে রুল জারি করেন আদালত। পরে গত ১৩ জুন ওই মামলা বাতিল করে সাত দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেন হাইকোর্ট।