হাইকোর্ট
বিচারপতিকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য: বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমানকে হাইকোর্টে তলব
হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামানকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় তার ব্যাখ্যা দিতে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিবকে তলব করেছেন হাইকোর্ট।
আগামী ৬ নভেম্বর তাকে হাজির হতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে আদালত অবমাননার দায়ে তার বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
রবিবার (১৫ অক্টোবর) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বপ্রণোদিতভাবে এ আদেশ দেন।
আরও পড়ুন: পিরোজপুর ১ ও ২ আসনে সীমানা পুনর্নির্ধারণের সিদ্ধান্ত বৈধ: হাইকোর্ট
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাইনুল হাসান।
আদেশের বিষয়টি ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাইনুল হাসান নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, হাবিবুর রহমান হাবিব ইউটিউবে বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামানকে নিয়ে বেশ কিছু অবমাননাকর বক্তব্য দিয়েছেন। ওই বক্তব্য শোভনীয় ছিল না। এটা আদালতের দৃষ্টিগোচর হওয়ায় স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেছেন। পাশাপাশি তাকে তলব করেছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ক্লিপে হাবিবুর রহমান হাবিব বলেছেন, তার (খালেদা জিয়া) একবার শাস্তি হলো ৫ বছরের জেল, সশ্রম কারাদণ্ড। আমি ওইদিন বলেছিলাম বিচারপতি ড. আখতারুজ্জামান সাহেব, আপনার মা বেঁচে থাকলে মাকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেন, মা, আমি একজন বয়স্ক মহিলাকে জেল দিয়ে আসছি, সশ্রম কারাদণ্ড দিয়ে আসছি তুমি কী বল? আপনার মা বলবেন, এই জায়গাতেই বলেছিলাম, আপনার মা বলবেন তুমি আমার সন্তান না, তুমি একটা কুলাঙ্গার। এতদিন তোমার জন্য গর্ববোধ করতাম, এখন আর গর্ব করি না, তুমি একটা কুলাঙ্গার সন্তান। তোমার মতো সন্তান জন্ম না দেওয়াই উচিত ছিল। এত বছর বয়স্ক একজন মানুষ নিজে চলতে পারে না।
অপর একটি ভিডিওতে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিবের একটি বক্তব্য রয়েছে। যেখানে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামান সম্পর্কে অবমাননাকর উক্তি করা হয়েছে।
এ বক্তব্যে হাবিবুর রহমান হাবিব বলেছেন, ‘শপথ করে বলে যেতে চাই, এই সরকার যেদিন ক্ষমতায় থাকবে না, ওই বিচারপতি আখতারুজ্জামান জীবিত থাকলেও তাকে মরতে হবে, মরে গেলেও কবর থেকে লাশ ওঠানো হবে।’
আরও পড়ুন: র্যাব হেফাজতে নওগাঁর জেসমিনের মৃত্যু: তদন্ত প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট নয় হাইকোর্ট
অধিকারের আদিলুর ও এলানকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট
র্যাব হেফাজতে নওগাঁর জেসমিনের মৃত্যু: তদন্ত প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট নয় হাইকোর্ট
নওগাঁয় র্যাব হেফাজতে ভূমি অফিসের সহকারী সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় উচ্চপর্যায়ের কমিটি যে প্রতিবেদন দাখিল করেছে ওই প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট নয় হাইকোর্ট।
আদালত বলেছেন, প্রতিবেদনটি অস্পষ্ট। প্রতিবেদনে সুলতানা জেসমিনকে গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। তাকে গ্রেপ্তারের পর আত্মীয় স্বজনকে জানানো হয়েছিল কি না— সে বিষয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। এ কারণে আদালত এ প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট নয়।
রবিবার (১৫ অক্টোবর) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন। পরে এ বিষয়ে জারি করা রুল শুনানির জন্য প্রস্তুতের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে রুল শুনানির জন্য আগামী ২৯ নভেম্বর দিন ধার্য করেন।
আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মনোজ কুমার ভৌমিক। রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল কালাম খান দাউদ, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল তৌফিক সাজওয়ার পার্থ উপস্থিত ছিলেন।
পরে অ্যাডভোকেট মনোজ কুমার ভৌমিক বলেন, আদালত নওগাঁর ঘটনা তদন্তে গঠিত উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির দেওয়া প্রতিবেদন দেখে সন্তুষ্ট হননি। জেসমিনকে গ্রেপ্তারের পর আত্মীয় স্বজনকে জানানো হয়েছিল কিনা? থানাকে অবহিত করা হয়েছিল কিনা? এসব বিষয় স্পষ্ট করা হয়নি প্রতিবেদনে। তবে আদালত আগামী ২৯ নভেম্বর এ বিষয়ে জারি করা রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানির জন্য ধার্য করেছেন।
এর আগে গত ১৪ আগস্ট নওগাঁয় র্যাব হেফাজতে ভূমি অফিসের সহকারী সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটির ৩০২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করা হয়।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার শাখার সচিবের নেতৃত্বে গঠিত ৮ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের কমিটি ৩০২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করেন। গত ২২ মে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
কমিটির প্রধান করা হয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মাহমুদুল হোসাইন খানকে।
কমিটির অন্যান্য সদস্যরা ছিলেন- জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব, নওগাঁর সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, সিভিল সার্জন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং নওগাঁর পুলিশ সুপারের মনোনীত একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।
জানা যায়, স্থানীয় সরকারের রাজশাহী বিভাগের পরিচালক মো. এনামুল হকের মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাব-৫–এর জয়পুরহাট ক্যাম্পের একটি দল গত ২২ মার্চ সকাল সাড়ে ১০টায় নওগাঁ শহরের নওযোয়ান মাঠের সামনে থেকে সুলতানা জেসমিনকে আটক করে। এনামুল হককে সঙ্গে নিয়েই র্যাব ওই অভিযান চালায়।
এনামুল হকের অভিযোগ, সুলতানা জেসমিন ও আল-আমিন নামের এক ব্যক্তি তার ফেসবুক আইডি হ্যাক করে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখাচ্ছিলেন বিভিন্ন ব্যক্তিকে। আটকের পর সুলতানা জেসমিন অসুস্থ হয়ে পড়ায় প্রথমে তাকে নওগাঁর হাসপাতালে ও পরে রাজশাহীতে নেওয়া হয়। ২৪ মার্চ সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে মারা যান তিনি।
আরও পড়ুন: র্যাব হেফাজতে জেসমিনের মৃত্যুর তদন্ত ২ মাসের মধ্যে শেষ করুন: হাইকোর্ট
পরিবারের অভিযোগ, র্যাব হেফাজতে নির্যাতনের কারণে জেসমিনের মৃত্যু হয়েছে। সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর পর জানা যায়, তার বিরুদ্ধে রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যুগ্ম সচিব এনামুল হক একটি মামলা করেছেন, যেটি রেকর্ডের সময় ২৩ মার্চ বিকেলে। এ মামলার আসামি জেসমিন ও তার কথিত সহযোগী মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট আল-আমিন।
এদিকে, র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যু সংক্রান্ত প্রকাশিত খবর গত ২৭ মার্চ হাইকোর্টের নজরে নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত আদেশ চেয়েছিলেন আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক। পরে আদালতের নির্দেশে ২৮ মার্চ তিনি হাইকোর্টে এ বিষয়ে রিট আবেদন দায়ের করেন।
রিটে র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর কারণ ও র্যাবের কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখতে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়। ওই দিনই রিট আবেদনের আরজি তুলে ধরে রিটকারী মনোজ কুমার আদালতে বলেন, ‘এ ঘটনায় কোনো বিষয়ও বিচ্ছিন্নভাবে দেখার সুযোগ নেই। র্যাব গঠন করা হয়েছিল দাগি চোর-ডাকাত, মাদক চোরাকারবারি ধরতে। এই নারীকে (সুলতানা জেসমিনকে) আটক করা হয় ২২ মার্চ। আর ২৪ মার্চ তার মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এই আইনে কাউকে গ্রেপ্তারের এখতিয়ার পুলিশের থাকলেও র্যাবের নেই।
তাছাড়া, ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৭ ধারা অনুসারে সুলতানা জেসমিনকে আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করা হয়নি।'
শুনানি গ্রহণ শেষে গত ৫ এপ্রিল হইকোর্ট কোন মামলা ছাড়াই নওগাঁর সুলতানা জেসমিনকে (৪৫) র্যাবের হেফাজতে নেওয়া থেকে শুরু করে হাসপাতালে নেওয়ার আগ পর্যন্ত যে প্রক্রিয়া তা আইনগতভাবে কতটুকু সঠিক ছিল এবং র্যাবের কোন এখতিয়ার ছিল কিনা তা তদন্তে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। কমিটিতে নওগাঁর জেলা জজ পদ মর্যাদার একজন এবং সেখানকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে রাখতে বলা হয়ে। তদন্ত সম্পন্ন করে কমিটিকে ৬০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দাখিল করতে বলা হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।
তদন্তকালীন জেসমিনকে আটকের সঙ্গে র্যাবের যেসব সদস্য জড়িত ছিলেন তাদেরকে দায়িত্ব পালন থেকে সরিয়ে রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
একইসঙ্গে, মামলা ছাড়াই সুলতানা জেসমিনকে তুলে নেওয়া ও পরবর্তী পদক্ষেগুলো কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। ওই আদেশ অনুযায়ী ২২ মে ৮ সদস্যের একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
আরও পড়ুন: র্যাব হেফাজতে জেসমিনের মৃত্যু: উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের নির্দেশ
অধিকারের আদিলুর ও এলানকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট
মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে তাদের ১০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ স্থগিত করেছেন আদালত।
মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) বিচারপতি এমদাদুল হক আজাদের একক বেঞ্চ এই জামিন আদেশ দেন। আদালতে আদিলুর-এলানের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র এ জে মোহাম্মদ আলী ও আইনজীবী মো. রুহুল আমিন ভূঁইয়া।
তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের ‘৫৭ ধারার’ এই মামলায় গত ১৪ সেপ্টেম্বর মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিনকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াতের আদালত। সেই সঙ্গে আসামীদের ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। রায় ঘোষণার পর আদিলুর রহমান খান ও এ এস এম নাসির উদ্দিনকে কারাগারে পাঠানো হয়।
আরও পড়ুন: সাজার রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল আদিলুর-নাসিরের
এর আগে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের দেওয়া দুই বছরের কারাদণ্ড চ্যালেঞ্জ করে সাজা বাড়াতে হাইকোর্টের আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
অন্যদিকে, এই মামলায় দুই বছরের কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করে জামিন চান আদিলুর রহমান খান ও এ এস এম নাসির উদ্দিন এলান।
মঙ্গলবার আদিলুর ও এলানের জামিন আবেদনের ওপর শুনানি হয়।
মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান নিয়ে ২০১৩ সালের ১০ জুন মানবাধিকার সংস্থা অধিকার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে শাপলা চত্বরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে ৬১ জন নিহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান নিয়ে অসত্য ও বিকৃত তথ্য প্রচারের অভিযোগে আদিলুর রহমান খান ও নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা হয়।
এই মামলায় পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়, আদিলুর ও নাসির উদ্দিন ৬১ জনের মৃত্যুর ‘বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যা’ তথ্যসংবলিত প্রতিবেদন তৈরি ও প্রচার করে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি করেন, আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নের অপচেষ্টা চালান এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সরকার ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি দেশে-বিদেশে চরমভাবে ক্ষুণ্ন করেন। পাশাপাশি তারা মুসলমানদের মনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে বিরূপ মনোভাবের সৃষ্টি করেন, যা তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের ৫৭(১) ও (২) ধারায় অপরাধ।
আরও পড়ুন: পিরোজপুর ১ ও ২ আসনে সীমানা পুনর্নির্ধারণের সিদ্ধান্ত বৈধ: হাইকোর্ট
সাজার রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল আদিলুর-নাসিরের
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের (আইসিটি) মামলায় দুই বছরের কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল আবেদন করে জামিন চেয়েছেন মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’র সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলান।
সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপিলটি দায়ের করা হয়।
পাশাপাশি আদিলুর ও নাসিরের জামিন চেয়ে আবেদন দায়ের প্রস্তুতি চলছে। তাদের আইনজীবী মো. রুহুল আমিন ভুঁইয়া এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এক দশক আগের ঘটনায় আইসিটি আইনের ৫৭ ধারার মামলায় ১৪ সেপ্টেম্বর আদিলুর ও নাসিরকে দুই বছর করে কারাদণ্ড দেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে তাদের ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়।
রায়ের পর আদিলুর ও নাসিরকে কারাগারে পাঠানো হয়।
২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান নিয়ে অসত্য ও বিকৃত তথ্য প্রচারের অভিযোগে আদিলুর ও নাসিরের বিরুদ্ধে মামলা হয়।
এই মামলায় আদিলুর ২০১৩ সালের ১০ আগস্ট গ্রেপ্তার হন। পরে তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।
১১ আগস্ট আদালতের অনুমতি নিয়ে অধিকারের কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়ে দুটি কম্পিউটার ও দুটি ল্যাপটপ জব্দ করা হয়। সে বছরের ৪ সেপ্টেম্বর আদিলুর ও নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
আরও পড়ুন: আদিলুর ও নাসিরউদ্দিনের বিষয়ে বাংলাদেশের আদালতের সিদ্ধান্তে দুঃখ প্রকাশ করে ফ্রান্স-জার্মানির যৌথ বিবৃতি
পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়, আদিলুর ও নাসির ৬১ জনের মৃত্যুর ‘বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যা’ তথ্যসম্বলিত প্রতিবেদন তৈরি ও প্রচার করে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি করেন। আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নের অপচেষ্টা চালান এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সরকার ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি দেশে-বিদেশে চরমভাবে ক্ষুণ্ন করেন।
পাশাপাশি তারা মুসলমানদের মনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে বিরূপ মনোভাবের সৃষ্টি করেন, যা তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ (১) ও (২) ধারায় অপরাধ।
একপর্যায়ে ২০১৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর আদিলুর রহমান খান ও এ এস এম নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে এই মামলায় অভিযোগ আমলে নেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল।
এরপর ২০১৪ সালের ৮ই জানুয়ারি এই মামলার বিচার কাজ শুরু হয়। কিন্তু উচ্চ আদালতে আসামিদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তিন বছরের জন্য স্থগিত থাকে বিচারকাজ। পরে ২০১৭ সাল থেকে শুরু হয় এই মামলার শুনানি। গত ২৪ আগস্ট এ মামলায় যুক্তিতর্কের শুনানি শেষ হয়। ১৪ সেপ্টেম্বর এ মামলায় রায় ঘোষণা করেন আদালত।
আরও পড়ুন: অধিকারের আদিলুর ও নাসিরউদ্দিনের মুক্তি দাবি ফখরুলের
আইসিটি মামলায় ‘অধিকারের’ আদিলুর ও নাসিরের ২ বছরের কারাদণ্ড
পিরোজপুর ১ ও ২ আসনে সীমানা পুনর্নির্ধারণের সিদ্ধান্ত বৈধ: হাইকোর্ট
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের নির্বাচনী আসন পিরোজপুর-১ এবং সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু’র নির্বাচনী আসন পিরোজপুর-২ এর সীমানা পুনর্নির্ধারণের বৈধতা নিয়ে জারি করা রুল খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।
রবিবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে আদালত বলেন, নির্বাচন কমিশন আইন অনুযায়ী সীমানা পুনর্নির্ধারণ করেছেন। এতে আইনের কোনো ব্যত্যয় হয়নি।
সীমানা পুনর্নির্ধারণের আগে পিরোজপুর-১ আসনটি পিরোজপুর সদর, নাজিরপুর ও নেছারাবাদ উপজেলা নিয়ে গঠিত ছিল। আর পিরোজপুর-২ আসনটি কাউখালি, ভান্ডারিয়া ও ইন্দুরকানি উপজেলা নিয়ে গঠিত ছিল।
তবে নির্বাচন কমিশন গত ৩ জুন সংসদীয় আসন দু’টির সীমানা পুনর্র্নিধারণ প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী পিরোজপুর-১ আসনের সঙ্গে যুক্ত করা হয় পিরোজপুর-২ আসনে থাকা ইন্দুরকানি উপজেলাকে। আর পিরোজপুর-২ সঙ্গে যুক্ত করা হয় পিরোজপুর-১ আসনে থাকা নেছারাবাদ উপজেলাকে ।
আরও পড়ুন: 'আওয়ামী নিপীড়নের শেষ ঘাঁটি আদালত': তারেকের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের আদেশের তীব্র নিন্দা বিএনপির
নির্বাচন কমিশনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ প্রজ্ঞাপনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে পরবর্তীতে হাইকোর্টে রিট করেন পিরোজপুরের কাউখালীর বাসিন্দা আবু সাঈদ মিয়া, ভান্ডারিয়া পৌরসভার বাসিন্দা মো. কায়কোবাদ ও মো. আহসানুল কিবরিয়া, ইন্দুরকানী উপজেলার বাসিন্দা আক্তারুজ্জামান এবং নেছারাবাদ উপজেলার বাসিন্দা নাজমুল ইসলাম শরীফ।
রিটের শুনানি নিয়ে সীমানা পুনর্নির্ধারণের প্রজ্ঞাপনের বৈধতা প্রশ্নে গত ৩০ জুলাই রুল জারি করেন হাইকোর্ট। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টদের দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি করে হাইকোর্ট রবিবার (৩ সেপ্টেম্বর ) রুল খারিজ করে রায় দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম কে রহমান, অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট কামাল হোসেন মিয়াজী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল কামাল খান দাউদ।
আরও পড়ুন: মশা নিয়ন্ত্রণে রিসার্চ সেন্টার করতে বললেন হাইকোর্ট
ফুলপরীকে নির্যাতন: ইবির পাঁচ ছাত্রীকে নতুন করে শাস্তি আরোপের নির্দেশ হাইকোর্টের
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে তারেকের বক্তব্য মুছে ফেলতে বিটিআরসিকে হাইকোর্টের নির্দেশ
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সব বক্তব্য ও ভিডিও কনটেন্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে মুছে ফেলার জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
সোমবার (২৮ আগস্ট) বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এসময় বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা উচ্চস্বরে আদেশের প্রতিবাদ করায় আদালত কক্ষে বিশৃঙ্খল দেখা যায়। একপর্যায়ে বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলম হট্টগোলের মধ্যে আদালত কক্ষ ত্যাগ করেন।
বিচারপতিরা যখন আদালত কক্ষ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন তখন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা ‘লজ্জা, লজ্জা’ বলে চিৎকার করছিলেন। দুপুর ২টা পর্যন্ত বিচারপতিরা আদালতে ফিরে আসেননি।
বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, বেঞ্চের বিরুদ্ধে প্রধান বিচারপতির কাছে অনাস্থা আপিল জমা দেওয়া হয়েছে।
তারেক রহমানের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষিদ্ধ করার জন্য ২০১৫ সালে একটি রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নাসরীন সিদ্দিকী লিনা।
২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি রিট আবেদনের শুনানি চলাকালে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আবু তাহের সাইফুর রহমানের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন। আদেশে তারেক রহমানের বক্তব্য প্রকাশে নিষেধাজ্ঞার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়।
তথ্য সচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, আইন সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, বিটিভির মহাপরিচালক, বিটিআরসির চেয়ারম্যান, একুশে টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক, কালের কণ্ঠের সম্পাদক এবং তারেক রহমান নিজেসহ একাধিক সরকারি কর্মকর্তা ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
সাড়ে আট বছর পর চলতি বছরের ২ আগস্ট রিট আবেদনের পক্ষে আইনজীবী কামরুল ইসলাম শুনানির আবেদন করেন।
৮ আগস্ট মামলার শুনানি চলাকালে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়।
নওগাঁ আইনজীবী সমিতির সভাপতি-সম্পাদককে হাইকোর্টে তলব
নওগাঁ বারের এক আইনজীবীর বাসায় চুরির মামলায় আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী না দাঁড়ানোর ঘটনায় ব্যাখ্যা দিতে নওগাঁ আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সম্পাদককে তলব করেছেন হাইকোর্ট। আগামী ৩০ আগস্ট সকাল ১০ টায় আদালতে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
নওগাঁ আদালত থেকে আসামির মামলার বদলির আবেদনের শুনানিকালে হাইকোর্ট এ আদেশ দেন। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আরও পড়ুন: বংশী নদী দখল : সাভারের ইউএনওকে হাইকোর্টে তলব
তিনি বলেন, নওগাঁ বারের এক আইনজীবীর বাসায় চুরির মামলায় আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী না দাঁড়ানোয় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টেট পি ডাব্লিউ দিয়ে আসামিকে কোর্টে হাজির করে তার মুখ থেকে শুনে জামিন দেন। আসামিকে জামিন দেওয়ায় নওগাঁ বার রেজ্যুলেশন করে সেই ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা জজকে বারের সিদ্ধান্ত পাঠান। আসামি এ কারণে মামলা বদলির আবেদন করেন।
সেই আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট নওগাঁ বারের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে তলব করেছেন।
তিনি আরও জানান, আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকের উপস্থিতির বিষয়টি নিশ্চিত করতে জেলা জজ ও জেলা প্রশাসককে নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত। ৩০ আগস্ট শুনানির সময় অ্যাটর্নি জেনারেলকে থাকতে বলেছেন আদালত।
আরও পড়ুন: শরীয়তপুরের মুখ্য বিচারিক হাকিম ও ২ পুলিশ কর্মকর্তাকে হাইকোর্টে তলব
প্লট বরাদ্দ বাতিলের নথি না দেওয়ায় রাজউক চেয়ারম্যানকে হাইকোর্টে তলব
আইডিয়াল কলেজ কেলেঙ্কারি: আগাম জামিন পেলেন মুশতাক আহমেদ
ঢাকার আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালনা পর্ষদের দাতা সদস্য খন্দকার মোশতাক আহমেদের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের এক ছাত্রীকে প্রলুব্ধ করে তার পরিবারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে বিয়ে করার অভিযোগে করা মামলায় বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন মঞ্জুর করেছেন হাইকোর্ট।
তবে বিশেষজ্ঞদের দিয়ে বোর্ড গঠনের মাধ্যমে ওই ছাত্রীর বয়স নির্ধারণ করতে বলেছেন আদালত। বয়স নির্ধারণ না হওয়া পর্যন্ত ছাত্রীকে সমাজ সেবা অধিদপ্তরের সেফ কাস্টডিতে (নিরাপদ হেফাজত) রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
ওই মামলায় আগাম জামিন চেয়ে মুশতাকের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে এই আদেশ দেওয়া হয়।
এর আগে ওই মামলায় আগাম জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন মুশতাক, গতকাল হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ আবেদনটি ফেরত দেন। এই অবস্থায় মুশতাকের জামিন আবেদন ওই বেঞ্চে জমা দেন তার আইনজীবী। আজ বিকালে আবেদনের উপর শুনানি হয়।
জামিন আবেদনের শুনানি থাকায় আদালতে হাজির হন তিনি।
আদালত ছাত্রীরও বক্তব্য শোনেন। তিনি প্রাপ্তবয়স্ক ও স্বেচ্ছায় বিয়ে করেছেন বলে আদালতে বলেন।
আরও পড়ুন: দুর্নীতির অভিযোগে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষকে দুদকের তলব
আদালত বলেছেন, আইডিয়ালের ছাত্রীর বয়স নিয়ে আসামিপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষ পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। তাই তার বয়স নির্ধারণ করা জরুরি। বয়স নির্ধারণ না হওয়া পর্যন্ত ওই ছাত্রী নারী ও সমাজ সেবা অধিদপ্তরের অধীনে সেইফ হোমে (নিরাপদ হেফাজতে) থাকবে।
এসময় বিচারক আইডিয়ালের সেই ছাত্রীকে জিজ্ঞেস করেন, আপনাকে কোনো ধরনের ভয়ভীতি কেউ দেখিয়েছে কি না, কোনো ভয় পেলে আমরা আপনাকে খাস কামরায় নিয়ে জিজ্ঞেস করি।
এসময় আইডিয়ালের সেই ছাত্রী বলেন, আমি সজ্ঞানে স্বেচ্ছায় তাকে (খন্দকার মুশতাক আহমেদকে) বিয়ে করেছি। আমাকে কেউ কোনোপ্রকার ভয়-ভীতি দেখায়নি।
এর আগে ১ আগস্ট কলেজছাত্রীকে প্রলোভন ও জোরপূর্বক ধর্ষণের অভিযোগে খন্দকার মুশতাক আহমেদকে প্রধান আসামি করে মামলা করা হয়।
ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ এর বিচারক বেগম মাফরোজা পারভীনের আদালতে এ মামলা করেন কলেজছাত্রীর বাবা।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, তার মেয়ে (ভুক্তভোগী) মতিঝিল আইডিয়ালের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। আসামি মুশতাক বিভিন্ন অজুহাতে কলেজে আসতেন এবং ভুক্তভোগীকে ক্লাস থেকে অধ্যক্ষের কক্ষে ডেকে আনতেন। খোঁজ-খবর নেওয়ার নামে আসামি ভুক্তভোগীকে বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখিয়ে প্রলুব্ধ করতেন। কিছুদিন পর আসামি মুশতাক ভুক্তভোগীকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কুপ্রস্তাব দেন। এতে রাজি না হওয়ায় ভুক্তভোগীকে তুলে নিয়ে জোরপূর্বক বিয়ে এবং তাকে ও তার পরিবারকে ঢাকা ছাড়া করবে বলে হুমকি দেন।
আরও পড়ুন: মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ওড়না পরা নিষিদ্ধ নয়: প্রধানমন্ত্রী
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইকবালের বহিষ্কারাদেশ স্থগিত হাইকোর্টের
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইকবালের বহিষ্কারাদেশ স্থগিত হাইকোর্টের
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থী ও দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার প্রতিনিধি ইকবাল মনোয়ারকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি থেকে সাময়িক বহিষ্কারের আদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট।
ইকবালের করা এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে সোমবার (১৪ আগস্ট) বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী ও বিচারপতি মো. আলী রেজার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এই আদেশ দেন।
রুলে তার বহিষ্কারাদেশ কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
রিট আবেদনকারীর আইনজীবী শিহাব উদ্দিন খান বলেন, হাইকোর্টের এই আদেশের ফলে ইকবাল তার বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। তিনি তার স্বাভাবিক শিক্ষাজীবন চালিয়ে যেতে পারবেন।
আরও পড়ুন: মশা নিয়ন্ত্রণে রিসার্চ সেন্টার করতে বললেন হাইকোর্ট
গত ৩১ জুলাই কুবি’র উপাচার্য এ এফ এম আবদুল মঈনের বক্তব্য নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় ২ আগস্ট ইকবালকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করে প্রশাসন।
ইকবাল দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির সাংবাদিক সমিতির অর্থসম্পাদক।
ইকবালকে সাময়িক বহিষ্কারের আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে ৯ আগস্ট আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্যসহ ৮ জনকে ইকবালের পক্ষে এই আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছিল।
আইনি নোটিশে বলা হয়েছিল, তিন দিনের মধ্যে এই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা না হলে উচ্চ আদালতে যাবেন ইকবাল।
নোটিশে আরও বলা হয়, যে অফিস আদেশের মাধ্যমে ইকবালকে বহিষ্কার করা হয়েছে, সে আদেশে কোনো আইন বা বিধির উল্লেখ করা হয়নি।
এছাড়া তার সংবাদে উল্লিখিত উপাচার্যের বক্তব্য বিকৃতের আপাত কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এর থেকে প্রতীয়মান হয়, উপাচার্য তার ব্যক্তিগত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতেই ইকবালকে বহিষ্কার করেছেন।
এছাড়া গত ৬ আগস্ট সংশ্লিষ্ট সংবাদের ব্যাখ্যা দিয়ে ও বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে উপাচার্যের নিকট চিঠি দিয়েছেন ইকবাল। এখন পর্যন্ত সে চিঠির কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
আইনি নোটিশে আরও বলা হয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৬ এর ৩২ নং ধারা অনুযায়ী শৃঙ্খলা বোর্ড থাকার কথা থাকলেও সে সংক্রান্ত কোন বোর্ড এবং বিধি তৈরি হয়নি। এ অবস্থায় কুবি প্রশাসনের এই বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত বেআইনি ও এখতিয়ার বহির্ভূত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইকবাল তার পেশাগত দায়িত্ব পালন করেছেন, যার সঙ্গে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর কার্যক্রমের কোনো সম্পৃক্ততা নেই উল্লেখ করে নোটিশে বলা হয়, কোনো সংবাদের বিষয়ে যদি উপাচার্য সংক্ষুব্ধ হয়ে থাকেন, তাহলে তার প্রেস কাউন্সিলে অভিযোগ করার অধিকার রয়েছে।
তা না করে ইকবালকে বহিষ্কার করে উপাচার্য ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ইকবাল সংবাদকর্মী হিসেবে শুধু উপাচার্যের হুবুহু বক্তব্য তুলে ধরেছেন যার অডিও রেকর্ড তার কাছে রয়েছে।
সংবাদ প্রকাশের জেরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের মাধ্যমে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯ (২) (খ) অনুচ্ছেদে উল্লিখিত গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন করেছেন মর্মে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ ছাড়া ইকবালকে তার অবস্থান ব্যাখ্যার জন্য কোনো ধরনের পূর্ব নোটিশ না দিয়ে বহিষ্কারাদেশ দেওয়ার মাধ্যমে প্রাকৃতিক ন্যায়বিচারের নীতির চূড়ান্ত লঙ্ঘন করা হয়েছে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
কিন্তু তিন দিনের মধ্যে নোটিশের জবাব না পেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন ইকবাল।
আরও পড়ুন: তারেক রহমানের লন্ডনের ঠিকানায় নোটিশ পাঠাতে হাইকোর্টের নির্দেশ
আপনি ভুল করেননি, ক্রাইম করেছেন: জেলা জজকে হাইকোর্ট
মশা নিয়ন্ত্রণে রিসার্চ সেন্টার করতে বললেন হাইকোর্ট
রোগের বাহক মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত কীটনাশক, যন্ত্রপাতি এবং এর রোগতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করতে ভেক্টর কন্ট্রোল রিসার্চ সেন্টারের (ভিসিআরসি) মতো একটি সেন্টার প্রতিষ্ঠায় ব্যবস্থা নিতে বলেছেন হাইকোর্ট।
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মশার উপদ্রব থেকে সুরক্ষায় জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে রবিবার (১৩ আগস্ট) এ রায় দেন বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আবেদনকারী আইনজীবী তানভীর আহমেদ।
তিনি সাংবাদিকদের জানান, আদালতের আহ্বানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক কবিরুল বাশার সুপারিশসহ বিশেষজ্ঞ মতামত দিয়েছেন। আজ মামলাটি নিষ্পত্তি করে সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের জন্য সিভিল এভিয়েশন এবং সিটি করপোরশনকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। দীর্ঘমেয়াদে ভেক্টর কন্ট্রোল রিসার্চ সেন্টারের (ভিসিআরসি) মতো একটি সেন্টার করতে আদালত সরকারকে বলেছেন।
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মশার উপদ্রব থেকে সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে ২০১৯ সালের ৩ মার্চ হাইকোর্টে রিট করেন আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ।
রিটের প্রাথমিক শুনানির পর ১২ মার্চ হাইকোর্ট রুল দেন। এর মধ্যে বিমানবন্দরে মশার উপদ্রব নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর-প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে সেসব খবর-প্রতিবেদন যুক্ত করে গত বছর ফেব্রুয়ারিতে সম্পূরক আবেদন করেন আইজীবী তানভীর।
আরও পড়ুন: তারেক রহমানের লন্ডনের ঠিকানায় নোটিশ পাঠাতে হাইকোর্টের নির্দেশ
এ আবেদনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের নির্দেশনা চাওয়া হয়। পরে গত বছর ২০ ফেব্রুয়ারি আদালত হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও বেবিচককে নির্দেশ দেন। বেবিচকের চেয়ারম্যানকে ১০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।
এ নির্দেশনার পর সিটি করপোরেশন ও বেবিচক একাধিকবার আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে।
গত ৬ মার্চ সেসব প্রতিবেদন আদালতে তুলে ধরেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা। এর ধারাবাহিকতায় গত ১৩ মার্চ আদালত বিমানবন্দর এলাকার মশা নিধনে কবিরুল বাশারসহ তিনজনের মতামত জানতে তাদের ডেকেছিলেন।
সে অনুযায়ী কবিরুল বাশার আদালতে বিমানবন্দর এলাকার চারপাশে চার কিলোমিটার এলাকা মশামুক্ত রাখা নিয়ে ‘আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য প্রবিধান’র বিভিন্ন বিধি ও আটটি সুপারিশ প্রতিবেদনে তুলে ধরেন। কবিরুল বাশারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও মশা ও মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান তৈরি করা অত্যন্ত প্রয়োজন।
প্রতিবেশী দেশ ভারতে ১৯৭৫ সালে ভেক্টর কন্ট্রোল রিসার্চ সেন্টার (ভিসিআরসি) প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠানটি অত্যন্ত আধুনিক ও যুগোপযোগী।
আরও পড়ুন: ‘এস আলমের আলাদিনের চেরাগ’ নিয়ে ডেইলি স্টারের প্রতিবেদন: অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের
বাংলাদেশে এমন একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি হলে বাহক বাহিত রোগ ও বাহক মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত কীটনাশক, যন্ত্রপাতি এবং এর রোগতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করা যাবে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দেশে এখন পর্যন্ত ১২৬ প্রজাতির মশা শনাক্ত হয়েছে। তার মধ্যে ঢাকায় শনাক্ত হয়েছে ১৬ প্রজাতির মশা। আর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পাওয়া গেছে ৯ প্রজাতির মশা।
এগুলো হচ্ছে- কিউলাস কুইনকিউফেসিয়েটাস, কিউলেক্স ট্রিটাইনায়োরিঙ্কাস, কিউলাস গেলিডাস, এডিস ইজিপটি, এডিস অ্যালবোপিকটাস, ম্যানসোনিয়া অ্যানুলিফেরা, ম্যানসোনিয়া ইউনিফর্মিস, আর্মিজেস সাবলবাটাস ও টক্সোরিঙ্কাইটস স্প্লেডেনস।
এ কীটতত্ত্ববিদ তার প্রতিবেদনে বলেছেন, প্রজাতিভেদে মশার প্রজনন স্থল, প্রজনন ঋতু ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ভিন্ন। তাই মশা নিয়ন্ত্রণে সফলতার জন্য এর জীবনাচরণ সম্পর্কে জানা দরকার। মশার বায়োলজি, ইকোলজি, স্বভাব পর্যালোচনা করে নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত মশক ব্যবস্থাপনার বিজ্ঞানভিত্তিক প্রয়োগ প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ কেন বাতিল নয়: হাইকোর্ট
বিমানবন্দর এলাকায় মশার প্রজননস্থল হিসেবে দুটি বড় খাল, ছোট-বড় পাঁচটি জলাশয়, খোলা ড্রেন, পরিত্যক্ত টায়ার, ছোট-বড় বিভিন্ন ধরনের পাত্র, গাছের কোটর এবং বিমানবন্দর ঘিরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) পাঁচটি ওয়ার্ড (১, ১৭, ৪৯, ৫০ ও৫২), এয়ারফোর্স এরিয়া, প্রিয়াঙ্কা হাউজিং ছাড়াও রাজউকের কিছু জায়গার কথা উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে এ শিক্ষক বলেন, যেহেতু মশা চার কিলোমিটার পর্যন্ত উড়ে যেতে পারে, তাই বিমান বন্দরকে মশামুক্ত করতে হলে এর চারপাশে চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মশার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। তার জন্য সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। কাজটি করা কঠিন নয়।
আদালত আজ শুনানি গ্রহণ শেষে এসব সুপারিশ বাস্তবায়নের পাশাপাশি মশা নিয়ন্ত্রণে একটি রিসার্চ সেন্টার করতে বলেছেন।