সিলেট
সিলেটে ১৪০ টিরও বেশি মেডিকেল টিম কাজ করছে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, বর্তমানে সিলেটে ১৪০টিরও বেশি মেডিকেল টিম কাজ করছে; প্রস্তুত রয়েছে আরও দু’হাজারের বেশি কর্মী।
সোমবার দুপুরে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের সম্মেলন কক্ষে সিলেট বিভাগের বন্যা পরিস্থিতি, ত্রাণ ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ কথা জানান তিনি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এবারের বন্যায় না খেয়ে কিংবা বিনা চিকিৎসায় একজন মানুষও মারা যায়নি, এটাই বড় প্রাপ্তি।
জাহিদ মালেক আরও বলেন, বন্যা পরবর্তী অসুখ মোকাবিলায় স্বাস্থ্য বিভাগ প্রস্তুত আছে।
আরও পড়ুন: সিলেটে পানি কমছে ধীরগতিতে, বাড়ছে দুর্ভোগ
বন্যা কবলিত এলাকায় কমিউনিটি ক্লিনিক, স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও হাসপাতালে সৃষ্ট সমস্যা নিরসনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
চলমান বন্যায় ১৮ জুন পানি ঢুকে পরে ওসমানী হাসপাতালে। এতে তলিয়ে যায় হাসপাতালের নিচতলা। পানি ঢুকে পড়া ও বিদ্যুতহীনতার কারণে ব্যাহত হয় চিকিৎসা সেবা। নতুন রোগী ভর্তিও বন্ধ হয়ে যায় সেদিন।
পানি ঢুকে নষ্ট হয়ে পড়েছে হাসপাতালটির রেডিওথেরাপি, সিটিস্ক্যান ও এম আর আই যন্ত্র। নষ্ট হয়ে গেছে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সও। হাসপাতালের জেনারেটর রুমে পানি ঢুকে পড়ায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা কিছুটা ব্যাহত হয়।
তিনি বলেন, আমরা তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকা থেকে বিকল্প জেনারেটরের ব্যবস্থা করে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করি। যার ফলে ওসমানী হাসপাতালে রোগীদেরকে স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়নি।
ওসমানী হাসপাতালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা না থাকা ও চিকিৎসা সেবা বিঘ্নিত হওয়া প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যতে এমন জলাবদ্ধতা ঠেকাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যা: এবার ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই শুরু
এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, স্থানীয় প্রশাসন ও বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ছিল এবং যে সময় যা দরকার, সে চাহিদা পূরণ করেছি। আমাদের সেনাবাহিনী, পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ সবাই অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে এবং বন্যার্তদের সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছে।
জাহিদ মালেক বলেন, আমরা যেভাবে বিগত সময়ে করোনা মোকাবিলা করেছি, যেভাবে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছি, ঠিক সেভাবে বন্যাপরবর্তী রোগবালাই ছড়ালে সেগুলোও মোকাবিলা করার সকল প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। বন্যাকবলিত প্রত্যেক জেলা-উপজেলায় মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে এবং টিমগুলো কাজ করছে। প্রয়োজনীয় ওষুধ স্থানীয় প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।
এসময় সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) হিমাংশু লাল রায়, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া, মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদসহ স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রী হেলিকপ্টারে করে সুনামগঞ্জের বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন।
এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সিলেট-সুনামগঞ্জের প্রায় সাত হাজার বন্যার্ত মানুষের মধ্যে ত্রাণসহায়তা দেয়া হয়।
আরও পড়ুন: সিলেটে পানি নামায় বন্যার ক্ষয়ক্ষতি দৃশ্যমান
সিলেটে পানি কমছে ধীরগতিতে, বাড়ছে দুর্ভোগ
সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে। জেলার নদ-নদীর পানি সকল পয়েন্টে ধীরগতিতে কমছে। তবে পানি কমলেও দুর্ভোগ বাড়ছে। বন্যায় সব হারিয়ে নিঃস্ব হওয়া পরিবারগুলোতে চলছে হাহাকার। রাস্তাঘাটের বিপুল ক্ষয়ক্ষতিতে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। বিভিন্ন সড়কে এখন বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
এদিকে সিলেটের বিভিন্ন উপজেলার পাশাপাশি নগরীতেও পানি কমা অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে নগরীর বন্যাকবলিত প্রধান সড়কগুলো থেকে বন্যার পানি সরেছে। তবে এখনো কিছু পাড়া মহল্লায় পানি রয়ে গেছে। পানিতে বিকট দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। বাড়াচ্ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।
রবিবার বিকালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সিলেট এই সব তথ্য জানিয়েছে।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যা: এবার ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই শুরু
সিলেট বিভাগীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিসের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এস এম শহিদুল ইসলাম বলেন, সিলেটের সবকটি পয়েন্টে নদ-নদীর পানি ধীরগতিতে কমছে। এর মধ্যে কিছু নদীর পানি কয়েকটি পয়েন্টে এখনো বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আশা করছি, অন্য নদীগুলোতেও বিপদসীমার নিচে নেমে আসবে।
জানা গেছে, নগরীর উপশহর, তেররতন, সোবহানীঘাট, যতরপুর, মিরাবাজার, জামতলা, তালতলা, শেখঘাট, বেতের বাজার, ঘাসিটুলা, কুয়ারপাড়, লালাদিঘীর পাড়, মির্জাজাঙ্গাল এলাকার পানি মূল সড়ক থেকে নেমে গেছে। তবে কিছু পাড়া-মহল্লার অভ্যন্তরের সড়ক ও বাসাবাড়ির সামনে পানি এখনো জমে রয়েছে। এসব পানিতে ময়লা–আবর্জনা ভাসতে দেখা গেছে। পানিগুলোও পচে কালো রং ধারণ করে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
নগরীর বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) রুহুল আলম বলেন, সিলেট সিটি করপোরেশনের আশ্রয়কেন্দ্রগুলো থেকে লোকজন বাসাবাড়িতে ফিরতে শুরু করেছে। সোমবার সকাল পর্যন্ত মহানগর এলাকায় সহস্রাধিক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে অবস্থান করেছিল। রবিবারও কিছু মানুষ আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে গেছে।
আরও পড়ুন: আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস, তবে রবিবার ১১টি জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি
এদিকে ভারী বৃষ্টিপাতের আভাসে ঘরে ফেরা মানুষের মধ্যে শঙ্কা সৃষ্টি করেছে। রবিবার বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেটরি টিম (বিডব্লিউআইটি) জানিয়েছে, জুনের শেষে বা জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে উত্তরাঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
সিলেটে পানি নামায় বন্যার ক্ষয়ক্ষতি দৃশ্যমান
সিলেটের উঁচু এলাকাগুলো থেকে ধীরে ধীরে পানি নেমে যাচ্ছে। তবে ৮০ ভাগেরও বেশি এলাকা এখনো পানিতে টইটুম্বুর। এদিকে উঁচু এলাকাগুলো থেকে পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে দৃশ্যমান হচ্ছে ধ্বংসস্তুপের চিত্র।
রবিবার সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়া সিলেটে ক্ষয়-ক্ষতির যেন কোনো শেষ নেই। ঘরবাড়ি, ফসল, প্রাণিসম্পদ সবক্ষেত্রেই হয়েছে ব্যাপক ক্ষতি। এবারের বন্যায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন সোয়া চার লাখ পরিবারের প্রায় ২২ লাখ মানুষ।
জেলা প্রশাসনের সহকারি কমিশনার আহসানুল আলম জানান, বন্যায় সিলেট সিটি করপোরেশনের আংশিক এলাকা, জেলার ১৩টি উপজেলা ও পাঁচটি পৌরসভা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৯৯টি ইউনিয়নের চার লাখ ১৬ হাজার ৮১৯টি পরিবারের ২১ লাখ ৮৭ হাজার ২৩২ জন সদস্য বন্যায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন।তিনি জানান, ২২ হাজার ৪৫০টি ঘরবাড়ি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২৮ হাজার ৯৪৫ হেক্টর জমির ফসল পড়েছে ক্ষতির মুখে।বন্যাকবলিত এলাকার জন্য এখন অবধি দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে এক হাজার ৪১২ মেট্রিক টন চাল, ১৩ হাজার ২১৮ প্যাকেট শুকনো খাবার এবং নগদ এক কোটি ৪২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন থেকে জানা গেছে।তবে জেলা প্রশাসনের এ হিসেবের চেয়ে প্রকৃত ক্ষতি আরও কয়েক গুণ বেশী বলে জানাচ্ছে স্থানীয় সূত্রগুলো। এছাড়া সড়ক বিভাগ ও এলজিইডি সূত্র বলছে, সিলেট জেলার সড়ক বিভাগের প্রায় ১২৫ কিলোমিটার সড়ক তলিয়ে গেছে।এদিকে, বন্যার ভয়াবহতায় সিলেটের স্বাস্থ্যখাতেও নজিরবিহীন ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।
সিলেট শহীদ শামসুদ্দীন আহমেদ হাসপাতালের নিচতলা প্রায় তিনফুট পানিতে তলিয়ে যায়। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জেনারেটর জলমগ্ন হওয়ায় হাসপাতালের বিকল্প বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। নিচতলায় পানি উঠে যাওয়ায় রোগীরা পড়েন চরম দুর্ভোগে। পানি নামার পর দেখা যায়-হাসপাতালটির এম আর আই, সিটিস্ক্যান ও রেডিও থেরাপি মেশিনে পানি ঢুকে গেছে। ফলে বন্ধ রয়েছে এসব সেবা কার্যক্রম।
আরও পড়ুন: আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস, তবে রবিবার ১১টি জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি
এবারের বন্যায় শুধু ওসমানী হাসপাতালেই নয়, ক্ষতিগ্রস্ত করেছে বিভাগের অনেক সরকারি হাসপাতাল, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কমিউনিটি ক্লিনিক। ফলে বিভাগজুড়ে স্বাস্থ্যসেবা বিঘ্নিত হচ্ছে।বন্যায় আক্রান্ত স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের তথ্যাদি সংক্রান্ত প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর উল্লেখ করে- সিলেট বিভাগের মোট ৪০টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মধ্যে ২৪টি বন্যাকবলিত হয়েছে। ৮৫ টি ইউনিয়ন সাব-সেন্টারের মধ্যে ৩১টিতে পানি ঢুকেছে। সুনামগঞ্জে ২০ শয্যার দুটি হাসপাতালে পানি প্রবেশ করে। এছাড়াও ৯শ ২৭ টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে ৪১৪টি ক্লিনিক পানিতে নিমিজ্জিত হয়।সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগের প্রাথমিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সকল উপদ্রুত স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে অবকাঠামোগত ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। অনেক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি, ইপিআই আইএলআর ফ্রিজ, প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি, এক্সরে মেশিন, এমএসআর সামগ্রী নষ্ট হয়ে গেছে। জলমগ্ন এসব যন্ত্রপাতি কতটা সচল কিংবা অচল তা পানি নেমে না যাওয়ায় যাচাই করা যাচ্ছে না। সার্বিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানাতে আরও সময় লাগবে।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, রবিবার সকাল ৯টায় সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে দশমিক শূন্য ৯ সেন্টিমিটার কমে ১৩ দশমিক ৫৮ সেন্টিমিটারে অবস্থান করছে। একই সময়ে নদীর সিলেট পয়েন্টে পানি দশমিক শূন্য ৭ সেন্টিমিটার কমে ১০ দশমকি ৮২ সেন্টিমিটারে অবস্থান করছে। তবে এই সবই বিপদসীমার ওপরে।
ওদিকে, কুশিয়ারা নদীর শেওলা পয়েন্ট, শেরপুর পয়েন্ট ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি অপরিবর্তিত রয়েছে ।
সিলেট পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বলেন, সিলেটে গত পাঁচদিন বৃষ্টি না হওয়ায় পানি কমতে শুরু করেছে। তবে ধীরগতিতে পানি নামছে। আর বৃষ্টি না হলে আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে পানি আরও কমে যাবে বলে আশা করছেন তিনি।
তবে আগামী মাসের শেষ দিকে আবার বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
সিলেটে ৭০ বৎসর বয়সের বৃদ্ধের আত্মহত্যা
সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নে শুক্রবার সত্তর বৎসর বয়সের এক বৃদ্ধ গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নিহত আব্দুল খালেক উপজেলার চকরাম প্রসাদ গ্রামের মৃত আব্দুর রশিদের ছেলে।
আরও পড়ুন: চাকরি না পেয়ে হতাশায় যুবকের ‘আত্মহত্যা’, গ্রেপ্তার ১
নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানান, কয়েকদিন ধরে খালেককে মানসিক ভারসাম্যহীন দেখাচ্ছিল। শুক্রবার রাতে বাড়ির কাছাকাছি তার ভাইপোর ঘরের তীরের সঙ্গে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয় তারা।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।
আরও পড়ুন: পাবনায় কীটনাশক পান করে ২ কিশোরীর ‘আত্মহত্যা’
ময়নাতদন্তের জন্য লাশ সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে বলে জানান বিশ্বনাথ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জয়ন্ত সরকার।
তিন প্লাবিত জেলায় ১,৭১৪টি মোবাইল নেটওয়ার্ক সাইট পুনরায় চালু
সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার দুই হাজার ৫২৮ টি মোবাইল নেটওয়ার্ক সাইটের মধ্যে এক হাজার ৭১৪ টি শনিবার পর্যন্ত পুনরায় চালু করা হয়েছে।
এই তিনটি জেলায় বিদ্যুতের অভাবে ১৯০টি সাইট এখনও নেটওয়ার্কের বাইরে রয়েছে। কর্তৃপক্ষ আশা করছে বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন হয়ে নেটওয়ার্কের আওতাবহির্ভূত থাকা সাইটগুলো দ্রুত সচল হবে।
নেশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) অপারেটর (বাহন লিমিটেড, ফাইবার অ্যাট হোম লিমিটেড এবং সামিট কমিউনিকেশনস লিমিটেড) তিনটি বন্যাপ্রবণ জেলায় মোবাইল নেটওয়ার্ক সরবরাহ করে। এই নেটওয়ার্ক প্রদানকারীদের বেশিরভাগ লিঙ্ক পেরিফেরাল প্রসেসর (এলপিপি)বর্তমানে সক্রিয়।
সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনাসহ সিলেট বিভাগের অন্যান্য এলাকায় বিভিন্ন ক্যাটাগরির মোট ১০৫টি আইএসপি প্রতিষ্ঠান ইন্টারনেট সেবা প্রদান করে আসছে। উক্ত এলাকায় বর্তমানে আইএসপি অপারেটরদের ৩৭৫টি পয়েন্ট অফ প্রেজেন্স আছে।যার মধ্যে বিদ্যুতের তীব্র ঘাটতির কারণে ৩৪ টি বন্ধ আছে।
আরও পড়ুন: স্কুল থেকে বন্যার পানি নেমে গেলেই এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা: শিক্ষামন্ত্রী
বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৮২ জনে পৌঁছেছে
বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৮২ জনে পৌঁছেছে
শনিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যায় আরও নয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এর ফলে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৮২ জনে পৌঁছেছে।
এর মধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগে পাঁচজন এবং সিলেট বিভাগে চারজন মারা গেছেন বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে।
নিহতদের মধ্যে বন্যার পানিতে ডুবে সাতজন এবং সাপের কামড়ে একজন এবং অন্য কারণে আরেকজন মারা গেছেন।
গত ১৭মে থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত এই মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বন্যার পানিতে ডুবে সিলেটে কিশোরের মৃত্যু
৭০টি উপজেলার মধ্যে সিলেট বিভাগে রয়েছে ৩৩টি, রংপুর বিভাগে ১৬টি, ময়মনসিংহ বিভাগে ২০টি এবং চট্টগ্রাম বিভাগের একটি উপজেলা বন্যা কবলিত।
তবে সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও কুড়িগ্রাম সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জেলা। এর মধ্যে সিলেটের ১৩টি,সুনামগঞ্জের ১১টি,নেত্রকোনার ১০টি এবং কুড়িগ্রামের ৯টি উপজেলা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অন্যদিকে বন্যা দুর্গতদের জন্য মোট এক হাজার ৯৪৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং দুই হাজার ৫১টি মেডিকেল টিম বন্যাকবলিত লোকদের বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার জন্য কাজ করছে।
আরও পড়ুন: বন্যায় ২৪ ঘণ্টায় ৫ জনের মৃত্যু, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৭৩
কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি, ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ
সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
গত ৪৮ ঘণ্টায় কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সিলেটের কিছু অংশে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, শুক্রবার সকালে কুশিয়ারা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
কুশিয়ারার পানি বাড়ায় জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, ওসমানীনগর, বিশ্বনাথ, দক্ষিণ সুরমা, মৌলভীবাজারের বড়লেখা, কুলাউড়া, রাজনগর, জুড়ি, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরসহ নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে সিলেট নগরীসহ জেলার অনেক এলাকায় বন্যার পানি নেমে গেছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
নগরীর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত সুরমা নদীর পানি কমলেও কুশিয়ারা সংলগ্ন এলাকাগুলোতে বাড়ছে পানি।
ভারত থেকে প্রবাহিত নদ-নদীর প্রবাহ ও মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জি ও সিলেটে অতি ভারী বৃষ্টির কারণে এ অঞ্চলে বন্যার ভয়াল রূপ। বন্যায় ৫০ লাখ মানুষ পানিবন্দী ছিলেন।
গত চারদিন ধরে ধীরে পানি কমতে শুরু করেছে। সুরমা নদীর পানি কমলেও এখনও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
অন্যদিকে, গত তিন দিন বৃষ্টি না হলেও কুশিয়ারা অববাহিকতায় পানি বাড়ছে।
সুরমা নদীর পানি কমতে থাকায় সিলেট-সুনামগঞ্জ ও সিলেট-ভোলাগঞ্জ মহাসড়ক থেকে পানি নেমেছে। শুরু হয়েছে যান চলাচল। কিন্তু, সড়ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল। কিছু উপজেলার সড়কেও পানি কমেছে।
পড়ুন: পদ্মায় প্রবল স্রোত: পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল ব্যাহত
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় বিশুদ্ধ খাবার পানি, শুকনো খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়া সরকারিভাবে বরাদ্দ পাওয়া ত্রাণসামগ্রী বিভিন্ন ওয়ার্ডে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।
এদিকে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে বন্যার পানির স্রোতে ভেসে গেছেন সানু মিয়া (৬৫) নামের এক বৃদ্ধ। শুক্রবার (২৪ জুন) সকাল ১০টা পর্যন্ত তার কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি।
জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান জানান, বিষয়টি শুনেছি। পুলিশ উদ্ধার অভিযানে কাজ করছে।
সিলেট জুড়ে বন্যার্তদের এক হাজারের বেশি আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত সিলেট বিভাগে ৪৮ জনের প্রাণহানির হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
পড়ুন: কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি, ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে ট্রাকচাপায় মা-ছেলে নিহত
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে ট্রাকচাপায় অটোরিকশা আরোহী মা ও ছেলে নিহত এবং চালকসহ আরও তিন জন আহত হয়েছেন। শুক্রবার সকাল ৬টার দিকে উপজেলার তেলিখাল এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- উপজেলার ইসলামপুরের হনুফা বেগম ও তার ছেলে এমরাজ মিয়া।
আরও পড়ুন: নওগাঁয় ট্রাক-সিএনজি মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ৫
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকান্ত চক্রবর্তী জানান, সকালে সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশা সিলেট থেকে কোম্পানীগঞ্জে যাচ্ছিল। পথে তেলিখাল এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাক অটোরিকশাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মা ও ছেলে নিহত হন। এই ঘটনায় চালকসহ তিন অটোরিকশা আরেহী আহত হন।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে ট্রাক-সিএনজি সংঘর্ষে নিহত ৩
ওসি জানান, আহতদেরকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া ঘাতক ট্রাক জব্দ করা হয়েছে। তবে ট্রাকের চালক ও তার সহকারী পালিয়ে গেছেন।
বন্যার্তদের সহায়তায় শাবি শিক্ষক সমিতির কার্যক্রম অব্যাহত
সিলেট ও সুনামগঞ্জে ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছে দেশের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ, সংগঠন ও ব্যক্তিরা। সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষকদের সংগঠন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিও এই কার্যক্রমে পিছিয়ে নেই।
সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, সিলেট অঞ্চলের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ১২০০টি পরিবারের মাঝে বিভিন্ন শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, দি য়াশলাই, মোমবাতি ইত্যাদি সামগ্রী সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়াও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শাবিপ্রবির শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বাসায় বিশুদ্ধ পানিসহ অন্যান্য দ্রব্যাদি পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ঈদের ছুটির পর শাবিপ্রবিতে সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত
শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক ড. জায়েদা শারমিন বলেন, সিলেট অঞ্চলের প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যায় আক্রান্ত সাধারণ মানুষের পাশে থাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে শাবি শিক্ষক সমিতি। এছাড়া শিক্ষকদের একদিনের বেতন এই বন্যার্তের মাঝে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বেতন ছাড়াও যে কেউ যেকোনো পরিমাণ অর্থ সাহায্য দিতে পারবে। সামনের যেকোনো সংকটময় মুহূর্তে দেশবাসীর সহায়তায় এই ধরনের কার্যক্রম শাবি শিক্ষক সমিতি কর্তৃক অব্যাহত থাকবে।
আরও পড়ুন: আকস্মিক বিপর্যয় সামলে উঠেছে শাবিপ্রবি
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমাদের ব্যাংক একাউন্টসহ বিকাশ ও নগদ নম্বর সাহায্যের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। শাবি শিক্ষক সমিতির মাধ্যমে দেশ ও দেশের বাইরে থেকেও আর্থিক সাহায্যের মাধ্যমে বন্যার্তদের পাশে থাকার সুযোগ থাকছে।
সিলেটে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠান বাতিল
সার্বিক বন্যা পরিস্থিতিতে পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে সিলেট অঞ্চলে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আতশবাজি বাদ দিয়ে শুধু আলোচনা অনুষ্ঠান হবে। এছাড়া মূল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বড় পর্দায় দেখানোর ব্যবস্থা থাকবে।
বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) বিকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়।
জেলা প্রশাসক মজিবর রহমানের সভাপতিত্বে প্রস্তুতি সভায় বক্তব্য দেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, জেলা প্রেস ক্লাব সভাপতি আল আজাদ প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, আগামীকাল ২৫ জুন দেশের ৬৪ জেলায় একযোগে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উদযাপিত হবে।
পড়ুন: পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগদানের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান বিএনপির
পদ্মা সেতু আমাদের জাতীয় গর্ব: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা