সিলেট
সিলেটে বন্যা: গ্যাস, বিদ্যুৎ ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে নগরবাসী
প্রায় এক সপ্তাহের বন্যায় বিশুদ্ধ পানি, গ্যাস ও বিদ্যুতের অভাবে সিলেট নগরীর বাসিন্দাদের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।
শনিবার বিকালে সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন-২ এর অধীস্থ নগরের উপশহরের বিভিন্ন ব্লক, তেররতন, সুবহানীঘাট, যতরপুর, মেন্দিবাগ, চালিবন্দর, মাছিমপুর, ছড়ারপাড় এলাকা তলিয়ে আছে। উপশহরে অবস্থিত বিদ্যুতের সাব স্টেশনও গত পাঁচ দিন ধরে পানির নিচে রয়েছে। এজন্য এলাকাগুলো এখনও অন্ধকারে নিমজ্জিত।
নগরীতে পানি কমার সঙ্গে বন্যাদুর্গত এলাকায় দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। নেই স্যানিটেশন ব্যবস্থাও। কোথাও শুধু খাদ্য সংকট, কোথাও সুপেয় পানি ও খাবারের অভাব। হাজারো বাসা-বাড়িতে নেই গ্যাস। এ অবস্থায় অনেকেই মানবেতর দিন পার করছেন। অনেকেই পানিবাহিত রোগে ভুগছেন।
সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে রয়েছে নগরীর অভিজাত শাহজালাল উপশহর এলাকার বাসিন্দারা। আটদিন ধরে গোটা উপশহরেই পানি। পাশের যতরপুর থেকে মীরাবাজার পর্যন্ত পানি। সুবহানীঘাটের সব এলাকায় পানি ঢুকেছে। এসব এলাকার অনেকেই বাসা-বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন। এখনও কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি। একই অবস্থায় নদী তীরবর্তী এলাকাগুলো। রাত হলেই আতঙ্ক বাড়ে মানুষের। নগরীর মাছিমপুর, ছড়ারপাড় এলাকার লোকজনও পানিবন্দি। ওই এলাকায়ও তিনটি আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনো খাবার খেয়ে দিন যাপন করছেন বন্যাকবলিত মানুষ।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যায় মৎস্য সম্পদের ক্ষতি ২ হাজার ১৭৩ কোটি টাকা
উপশহরে গিয়ে দেখা যায়, গত সোমবার থেকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে এ, বি, সি, ডি, ব্লকের বাসিন্দারা। সঙ্গে বন্ধ রয়েছে গ্যাস সংযোগও। যেসব বাসা-বাড়ি এবং দোকানপাটে বন্যার পানি প্রবেশ করেছিল, তা ধোয়ামোছা করছেন ভুক্তভোগীরা। তবে বিদ্যুৎ না থাকায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে তাদেরকে বেগ পেতে হচ্ছে।
ওই এলাকার বাসিন্দারা জানান, অনেক ব্লকে এখনও কোমর সমান পানি, ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। পানির মটর তলিয়ে গেছে, তাই পানি তুলতে পারছেন না। কিছু কিছু জায়গায় মটর ঠিক থাকলেও বিদ্যুৎ না থাকায় পানি তোলা যাচ্ছে না। অন্তত দেড় ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করলে ট্যাংকি ভরে পানি মজুদ করা যেত। যারা কষ্ট করে ২-৩ লিটার পানি এনে দিচ্ছেন তাতে ৭-৮ জনের পরিবারের পানির অভাব মেটানো সম্ভব নয়।
ঘরে জমে থাকা পানি সেচে ধোয়ামোছা করছেন উপশহর ই-ব্লকের বাসিন্দা ইমা বেগম। তিনি জানান, শুক্রবার রাতেই তার ঘর থেকে পানি নেমে গেছে। তারপরও ঘরে প্রচুর পানি আটকে আছে। এসব পানি শনিবার সকাল থেকে সেচে বের করছেন। ঘর পরিষ্কার করে জীবাণুনাশক স্প্রে প্রয়োগ করবেন বলে জানান।
আরও পড়ুন: নদীর পানি কমায় সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি
সি ব্লকের বাসিন্দা ফাতেহা বেগম জানান, পাঁচদিন ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ নেই। বাসার রিজার্ভ ট্যাংকের পানি শেষ। বন্যার পানি নামতে শুরু করলেও কখন বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হবে জানি না। কখন বাসার পানির সমস্যা দূর হবে, তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে মহানগর পুলিশের সহযোগিতায় ‘মানবিক টিম’ নামক সংগঠনের সদস্যরা উপশহরসহ বিভিন্ন এলাকায় বাসা-বাড়িতে বোতলজাত খাবার পানি ভ্যানে করে সরবরাহ করছেন। এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সিলেট রেঞ্জ পুলিশের এসপি মো. জেদান আল মুছা, এসএমপি’র মিডিয়া শাখার শফি আহমদ পিপিএম। এছাড়া উপশহরে স্থানীয় কাউন্সিলর এডভোকেট ছালেহ আহমদ সেলিম বিভিন্ন বাসা বাড়িতে বোতলজাত পানি দিচ্ছেন। পাশাপশি রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সদস্যরাও নেমেছেন সেবা দিতে।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, ভোগান্তিতে বানভাসিরা
সিলেটে বন্যায় মৎস্য সম্পদের ক্ষতি ২ হাজার ১৭৩ কোটি টাকা
আকস্মিক বন্যায় সিলেটের ১১টি উপজেলায় মোট ১৮ হাজার ৭৪৯টি পুকুর, দিঘী, হ্যাচারি ও মাছের খামার তলিয়ে গেছে। এতে দুই কোটি ১৩ লাখ মাছের পোনা এবং দুই হাজার ৩০৫ টন মাছ বন্যার পানিতে ভেসে মাছ চাষিদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর। মাছ ভেসে যাওয়া ছাড়াও হয়েছে অবকাঠামোগত ক্ষতি।
এর ফলে সিলেট জেলার ১৫ হাজার ১৬৩ জন খামার মালিকের দুই হাজার ১৭৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ।জকিগঞ্জ উপজেলার বীরশ্রী এলাকার মাছ চাষি আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, 'পুকুরে মাছ চাষের জন্য প্রায় দুই লাখ টাকা ঋণ নিয়েছি। বন্যার শুরুতে পুকুরের চারদিকে ঘের দিয়ে মাছ বাঁচানোর চেষ্টা করেও লাভ হয়নি। বন্যার তোড়ে সব মাছ ভেসে গেছে।'
আরও পড়ুন: নদীর পানি কমায় সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতিবন্যায় জকিগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, বিশ্বনাথ, জৈন্তাপুর ও বিয়ানীবাজার উপজেলায় ক্ষতি সবচেয়ে বেশি।জকিগঞ্জে ছয় হাজার ৩৫০টি মাছের খামার তলিয়ে ৬২২ কোটি টাকা, গোয়াইনঘাটে দুই হাজার ৫৯২টি খামার তলিয়ে ১৪০ কোটি টাকা, কানাইঘাটে দুই হাজার ৩৫০টি খামার তলিয়ে ৬৪ কোটি টাকা, বিশ্বনাথে দুই হাজার ১৫০টি খামার তলিয়ে ১৫৫ কোটি টাকা, জৈন্তাপুরে দুই হাজার ১০০টি খামার তলিয়ে ৬৭৪ কোটি টাকা ও বিয়ানীবাজারে এক হাজার ৪০২টি খামার তলিয়ে ২১৬ কোটি ৮১ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।এ ছাড়া, সিলেট সদর উপজেলায় ৫৩৫টি মাছের খামার, গোলাপগঞ্জে ৮৪৫টি, বালাগঞ্জে ৭০টি, কোম্পানীগঞ্জে ১৪৫টি ও দক্ষিণ সুরমায় ২১০টি খামার তলিয়ে গেছে।সিলেট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, 'জেলায় মাছ চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, যা অপূরণীয়। আর এ ক্ষতির পরিমাণ প্রতিনিয়ত বাড়ছে।'সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে সুরমা নদীর পানি সিলেটের সব পয়েন্টে এখনও বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্লাবিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন: বন্যায় দুর্ভোগ কমাতে ক্লাস-পরীক্ষায় সহনশীল শাবিপ্রবি প্রশাসনবন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, আজ রবিবার সকাল ৯টায় সুরমা নদীর পানি সিলেটের কানাইঘাট উপজেলা পয়েন্টে ৮৪ সেন্টিমিটার এবং সিলেট নগরী পয়েন্টে বিপদসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।একই সময়ে কুশিয়ারা নদীর পানি সিলেটের জকিগঞ্জের অমলশীদ পয়েন্টে বিপদসীমার ১৩২ সেন্টিমিটার ওপর এবং বিয়ানীবাজারের শেওলা পয়েন্টে ৪৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।এদিকে, বন্যায় মাছের খামার, পুকুর ও দিঘী তলিয়ে মাছ চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও অনেক এলাকায় বন্যার পানিতে মাছ ধরার উৎসব চলছে।বন্যা কবলিত প্রায় প্রতিটি রাস্তা বা যেকোনো উঁচু সড়কের পাশে অসংখ্য শিশু-কিশোর ও যুবককে ছোট ছোট জাল নিয়ে মাছ ধরতে দেখা গেছে।দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কামালবাজার এলাকায় মাছ ধরতে থাকা শিশু কবির আহমেদ জানায়, বন্যার পানিতে প্রচুর মাছ ধরা পড়ছে। সকাল থেকে জালে বেশ কিছু মাছ ধরা পড়েছে, যা দিয়ে কয়েক বেলার রান্না চালানো সম্ভব।
আরও পড়ুন: সিলেটের বন্যায় দুর্ভোগে শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা
ত্রাণ নিয়ে হাহাকার
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে শনিবার দুপুরে ত্রাণ বিতরণ করতে যান প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। তিনি স্থানীয় থানা বাজারে ত্রাণ বিতরণ শেষে ফিরে আসেন। এরপর ত্রাণ নিয়ে উপস্থিত বন্যার্ত লোকজনের মধ্যে কাড়াকাড়ির ঘটনা ঘটে।
এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনাতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। তবে এতে কেউ আহত হননি।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় ৫০ হাজার লোক পানিবন্দি থাকলেও মন্ত্রী যে ত্রাণ নিয়ে এসেছেন সেটি ছিল অপ্রতুল। মন্ত্রী চলে যাওয়ার পর ত্রাণ নিয়ে মানুষজনের মধ্যে কাড়াকাড়ি শুরু হয়।
আরও পড়ুন: করোনা: উপকূলীয় অঞ্চলে নৌবাহিনীর ত্রাণ বিতরণ
তারা জানান, মন্ত্রী দুপুরে থানা বাজার এলাকায় ৩০ জন মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন। তখন ওখানে ত্রাণের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন কয়েকশ’মানুষ। মন্ত্রীর পক্ষ থেকে কোম্পানীগঞ্জের ছয়টি ইউনিয়নে ১৩০টি ত্রাণের প্যাকেট বিতরণ করা হয়। বাকিরা ত্রাণ পেতে হাহাকার শুরু করে। এতে করে সেখানে ব্যাপক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।
এ ব্যাপারে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, আমরা যতই ত্রাণ দেই না কেন, তারপরও কিন্তু কম পড়বে। আমরা কোনো ইউনিয়নে ১০০ মণ চাল দিলে ১০০ জন পাবে, যদি ২০০ জন চলে আসে, তাহলে অর্ধেক করে সেটা দেয়া যায়, যদি খোলা চাল ও গম থাকে। কিন্তু প্যাকেট করা খাবার তো ভাগ করা যায় না। তাই যারা আগে থেকে তালিকাভুক্ত হয়েছে তাদেরকে দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, কেউ যদি নির্দিষ্টভাবে দেখাতে পারে যে তালিকায় অনিয়ম হয়েছে, আমি কঠিন ব্যবস্থা নেব। আগে এরকম হয়েছে, কিন্তু এখন এই অপবাদ আমি মাথায় নেবো না। যেহেতু ত্রাণ পায় নাই, তাই গণ্ডগোল করেছে, এটা ফেয়ার গণ্ডগোল না, আনফেয়ার গণ্ডগোল।
আরও পড়ুন: মানিকগঞ্জে ১ হাজার পরিবারের মাঝে যুবলীগের ত্রাণ বিতরণ
ইমরান আহমদ বলেন, সরকারও যতই দিক না কেন, এরকম হবে আর এর মধ্যেই কিন্তু মানুষকে বুঝিয়ে বলতে হবে যে এখন পাননি, কিন্তু অবশ্যই আপনি পরবর্তীতে পাবেন। আলটিমেটলি ঘুরে ঘুরে সবার কাছেই যাবে এবং কেউই বাদ পড়বে না।
সিলেটের জৈন্তাপুরে পিকআপ-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে নিহত ১
সিলেটের জৈন্তাপুরে পিকআপ ভ্যান ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে এক যুবক নিহত ও দু’জন আহত হয়েছেন। শনিবার বিকাল ৪টার দিকে সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের শ্রীখেল এলাকার পল্লী বিদ্যুৎ সমীতি-২ কার্যালয়ের সামনে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত মোটরসাইকেল চালক মেহদী হাসান (২৫) উপজেলার ৫নং ফতেপুর ইউনিয়নের উৎলারপার গ্রামের মৃত আবুল হাসনাতের ছেলে।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে ট্রাক-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে নিহত ২
আহতরা হলেন, মোটরসাইকেলের দুই আরোহী নাঈম আহমদ (২৫) ও আল নোমান (২৬) তাদের বাড়ি উপজেলার উৎলারপার গ্রামে।
জৈন্তাপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম দস্তগির আহমদ জানান, জৈন্তাপুর থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী একটি পিকআপ ভ্যান দরবস্ত পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর কার্যালয়ের সামনে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি মোটরসাইকেলের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে মোটরসাইকেলে থাকা তিন জনই রাস্তায় ছিটকে পড়েন এবং ঘটনাস্থলে মোটরসাইকেল চালক নিহত হন।
আরও পড়ুন: পাবনায় ট্রাক-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে নিহত ১
ওসি জানান, এঘটনায় থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে। নিহতের লাশ উদ্ধার করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া স্থানীয়রা গুরুতর আহত দুজনকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়।
নদীর পানি কমায় সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি
দীর্ঘ আটদিন পর সিলেটে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে বন্যার পানি নেমে সিলেট নগরীর চিত্র আগের অবস্থায় ফিরতে আরও পাঁচদিন লাগবে। সিলেটবাসী যেন আর এরকম বন্যা পরিস্থিতির শিকার না হন সেজন্য ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড।
শনিবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলীর (পুর) দপ্তরের সিলেটের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পুর) এস এম শহিদুল ইসলাম এ কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে বন্যার পানি কমছে। ফলে সিলেটে আর বন্যা পরিস্থিতি অবনতির সম্ভাবনা নেই। এ অবস্থায় আরও পাঁচদিন পানিবন্দি থাকতে হবে সিলেটবাসীকে। বন্যায় যেখানে যেখানে বাঁধ ভেঙেছে সেখানে আমাদের পক্ষ থেকে আবার নতুন করে বাঁধ দেয়া হচ্ছে।’
এস এম শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সিলেটে যে নদী ও খালগুলো আছে, সেগুলো ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ড্রেজিং করার লক্ষ্যে আমরা এখানকার নদীগুলো নিয়ে স্টাডি করছি। সিলেটের সুরমা নদীর গতিপথ ঠিক থাকলেও এর ড্রেজিং করতে হবে। এ লক্ষ্যে নতুন একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। এখনও প্রকল্পের ডিপিপি প্রণয়ন হয়নি, তবে ফিজিবিলিটি স্টাডির কাজ চলছে।’ সুরমা নদীর ড্রেজিং হয়ে গেলে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি কমে যাবে বলে জানান তিনি।
এদিকে সিলেটে সুরমা, ধোলাই, পিয়াইন নদ-নদীর পানি আগের থেকে কিছুটা কমেছে। তবে বাড়ছে কুশিয়ারার পানি। ফলে নগরসহ আশপাশের এলাকার পানি কিছুটা কমলেও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা নতুন করে প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এসব এলাকায় পানি কমলেও জনসাধারণের দুর্ভোগ বেড়ে চলছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), সিলেট-এর তথ্য অনুযায়ী, শনিবার (২১ মে) সকাল ৯টায় কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার ও সিলেট পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। শুক্রবারের চেয়ে শনিবার এ দুটি পয়েন্টে পানি প্রবাহ যথাক্রমে ১১ সেন্টিমিটার ও সাত সেন্টিমিটার কমেছে। এছাড়া, শনিবার একই সময়ে কুশিয়ারা নদীর আমলসীদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৫৬ সেন্টিমিটার, শেওলায় ৫৫ সেন্টিমিটার ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৩৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। শুক্রবারের চেয়ে শনিবার আমলসীদে ১১ সেন্টিমিটার ও শেওলায় তিন সেন্টিমিটার পানির প্রবাহ কম ছিল। তবে, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি শুক্রবারের চেয়ে শনিবার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। শুক্রবার এ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ২৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যার্তদের জন্য ১৯৯ আশ্রয়কেন্দ্র
এদিকে নগরে পানি কিছুটা কমলেও কমেনি বন্যাকবলিতদের দুর্ভোগ। বিদ্যুৎ ও গ্যাসহীনতা, খাবার পানির সংকটের পাশাপাশি উপদ্রুত এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে পানিবাহিত রোগ। সিলেটে বেড়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ।
এমন পরিস্থিতিতে দুর্ভোগ এড়াতে নগর ছাড়তে শুরু করেছেন অনেকে। শুক্র ও শনিবার নগরের প্লাবিত এলাকার অনেক বাসিন্দাকে নগর ছেড়ে গ্রামে চলে যেতে দেখা যায়।
গত ১০ মে থেকে সিলেটে ভারী বর্ষণ শুরু হয়। সেই সঙ্গে উজান থেকে নেমে আসে পাহাড়ি ঢল। ফলে ১১ মে থেকেই সিলেটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে থাকে। আর গত ১৩ মে থেকে সিলেট নগর প্লাবিত হতে থাকে। সেখানে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
শনিবার সরেজমিনে সিলেটের বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায়, যেসব এলাকা, বাসাবাড়ি বা দোকানপাটে পানি প্রবেশ করেছিল, তা ধোয়ামোছা করছেন ভুক্তভোগী জনসাধারণ। তবে পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় আগের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে সবাইকে বেগ পেতে হচ্ছে।
ঘরে জমে থাকা পানি সেচে ধোয়ামোছা করতে দেখা যায় নগরীর লালাদিঘিরপাড় এলাকার বাসিন্দা পলি বেগমকে। তিনি জানান, শুক্রবার রাতেই তার ঘর থেকে পানি নেমে গেছে। তারপরও ঘরে প্রচুর পানি আটকে আছে। এসব পানি আজ সকাল থেকে সেচে বের করছেন। তারপর ঘর পরিষ্কার করে জীবাণুনাশক স্প্রে প্রয়োগ করবেন বলে জানান।
নগরীর উপশহর এলাকার বাসিন্দা আবুল খায়ের জানান, চার দিন ধরে উপশহর এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ নেই। এদিকে বাসার রিজার্ভ ট্যাংকের পানি প্রায় শেষ পর্যায়ে। বন্যার পানি নামতে শুরু করলেও এসব এলাকায় কবে পুনরায় বিদ্যুৎ-সংযোগ চালু হবে, তা তিনি জানেন না। ফলে কখন বাসার পানির সমস্যা দূর হবে, তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন তিনি।
আরও পড়ুন: পানিতে ভাসছে সিলেট, বন্যার্ত মানুষের চরম দুর্ভোগ
সিলেট নগরীর ১০ নং ওয়ার্ডের কলাপাড়ার বাসিন্দা আব্দুস সালাম বলেন, আমার ঘরে যখন পানি প্রবেশ করেছিল, তখন গ্যাসের লাইনে পানি ঢুকে যাওয়ায় গ্যাস-সংযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। পুরোপুরি পানি না কমলে এই গ্যাসের সমস্যা সমাধান হবে না বলেও জানান তিনি।
এদিকে সিলেট আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সাঈদ আহমদ চৌধুরী জানান, দিন দিন আবহাওয়া উন্নতি করছে। তিন-চার দিন আগেও যেখানে কয়েক শ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, সেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় এর পরিমাণ ছিল মাত্র ১২ মিলিলিটার।
তিনি আরও বলেন, আগামী ২৩, ২৪ ও ২৫ মের মধ্যে বৃষ্টির পরিমাণ একেবারেই কমে আসবে। বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, শুক্রবারের মতো শনিবারও সুরমার পানি কমা অব্যাহত আছে। শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত আগের দিনের চেয়ে কয়েক সেন্টিমিটার পানি কমেছে। তবে কুশিয়ারা নদীর পানি দুই সেন্টিমিটার বেড়েছে ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে।
সিলেট জেলার ১৩টি উপজেলার ৮৫টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। ৩২৬টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, ‘সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে প্লাবিত এলাকাগুলো থেকে পানি এখনও নামেনি। সরকার বন্যার্তদের সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছে।’
বন্যায় সড়কের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সিলেট জেলায়। জেলায় সওজ ও এলজিইডির আওতাধীন মোট ১২১টি সড়কের ৩৩২ কিলোমিটার সড়ক পানিতে ডুবে গেছে। এ ছাড়াও ভেঙে গেছে দুটি কালভার্ট।
এলজিইডি সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইনামুল কবীর জানান, 'বন্যায় ১১১টি রাস্তার ২৬৭ কিলোমিটার অংশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সদর উপজেলা ও কোম্পানীগঞ্জে দুটি কালভার্ট ভেঙেছে। যেহেতু রাস্তার ওপরে এখনও পানি, তাই ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ নির্ধারণ করা যাচ্ছে না।'
সড়ক বিভাগ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'সিলেটের আন্তঃজেলা ১০টি প্রধান সড়কের ৬৫ কিলোমিটার অংশ প্লাবিত হয়েছে, এর মধ্যে পাঁচটি সড়কে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ আছে। জকিগঞ্জে বাঁধ ভেঙে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় দুটি সড়কে পানি দ্রুত বাড়ছে।'
সিলেট জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জেলার ১৩ উপজেলার মধ্যে ১০টি উপজেলার ৮৬টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। পানিতে দুই হাজার ৪২১ হেক্টর আউশ ধানের বীজতলা, এক হাজার ৭০৪ হেক্টর বোরো ধান ও এক হাজার ৩৩৪ হেক্টর গ্রীষ্মকালীন সবজি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া ৬৪০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যাকবলিত হয়ে পড়ায় অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
এদিকে, শনিবার নগরীতে পানি কমলেও বিশুদ্ধ পানির ও রান্না করা খাবারের সংকট তীব্র হয়েছে। বন্যার পানিতে নগরীর মেন্দিবাগ এলাকায় অবস্থিত সিলেট সিটি করপোরেশনের ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট প্লাবিত হয়েছে। পাশাপাশি চারটি পাম্প তলিয়ে যাওয়ায় পানি সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় কয়েকটি এলাকার পানিবন্দি মানুষ বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়েছেন। নগরীর শাহজালাল উপশহর এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জন্য মানুষের দুর্ভোগ কয়েকগুণ বৃদ্ধি হয়েছে।
সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানান, পানিবন্দি নগরবাসীর জন্য পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, খাবার স্যালাইন ও শুকনো খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়া ১৩টি আশ্রয় কেন্দ্রে রান্না করা খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে রান্না করা খাবার খুবই অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া মানুষ।
এদিকে জেলার ১৩টি উপজেলার গ্রামগুলোর চারপাশে থইথই পানি। অধিকাংশ ঘরবাড়ি ডুবে আছে। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, পানির মধ্যে ভাসছে গ্রামগুলো। কয়েক দিন আগেও যেখানে ধান মাড়াই ও শুকানোর জায়গা করা হয়েছিল, সেখানে এখন পাঁচ থেকে ১০ ফুট পানি।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যার ৮ দিন
গ্রামগুলোর বাসিন্দারা জানান, ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টিতে সিলেটজুড়ে যে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তাঁরাও এর ভুক্তভোগী। গ্রামগুলোর বেশির ভাগ ঘরেই হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি। রান্নাবান্নার একমাত্র উপায় মাটির চুলা, সেসবও এখন পানির নিচে। ফলে অনেকে কেবল শুকনা চিড়া বা মুড়ি খেয়েই দিন কাটাচ্ছেন। খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট তীব্র হয়ে দেখা দিয়েছে। বাড়িঘরে পানি ওঠায় শুকনা স্থানের অভাবে গবাদিপশু রাখা নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে। রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করা যাচ্ছে না।
এসব গ্রামের বাসিন্দারা জানান, আগে গ্রামের চারদিকে প্রচুর খাল ও নালা ছিল। অতিবৃষ্টিতে সেসব জলাধার পানি ধারণ করত। এখন সেসব ভরাট করে আবাসনসহ বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে ওঠায় পানিপ্রবাহের স্বাভাবিক পথ রুদ্ধ হয়ে পড়েছে। ফলে যেসব বাড়িঘরে বন্যায় তুলনামূলকভাবে কম পানি থাকার কথা, সেখানেও বেশি পানি উঠেছে।
গ্রামের বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, ত্রাণ পাওয়ার তালিকায় যাঁদের নাম আছে, সেখানে জনপ্রতিনিধিরা স্বজনপ্রীতি করে তালিকা প্রস্তুত করেছেন। প্রয়োজন সত্ত্বেও অনেক দরিদ্র মানুষ কোনো ধরনের ত্রাণ পাননি। খাবারসহ নানা সংকটে পানিবন্দি জীবনে তাঁদের দুর্ভোগের শেষ নেই বলে অনেকে আক্ষেপ করেন।
চলতি বন্যায় ভেসে গেছে সিলেট জেলায় সাত হাজার ২৫১টি পুকুরের মাছ। ক্ষতি হয়েছে আনুমানিক ছয় কোটি ৭৪ লাখ টাকা। এতে অন্তহীন ক্ষতির মুখে পড়েছেন খামারীরা। এসব তথ্য জানিয়েছেন সিলেট জেলা মৎস্য বিভাগ।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সিলেটের ১৩টি উপজেলার মধ্যে ১১টি উপজেলায় আট হাজার ৩২২টি পুকুরে খামারিরা মাছ চাষ করেছেন। এগুলোর মধ্যে সাত হাজার ২৫১টি পুকুর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পুকুরের মোট আয়তন ৮৫৪ দশমিক ৭০ হেক্টর। জেলার ওসমানীনগর ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় মাছ চাষি নেই বলে জানা গেছে।
মৎস্য কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সিলেট জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে জকিগঞ্জ উপজেলায়। এখানে তিন হাজার ১০০টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এরপর বেশি ক্ষতি হয়েছে গোয়াইনঘাট উপজেলায়। এখানে ভেসে গেছে দুই হাজার পুকুরের মাছ। অন্যান্য উপজেলার মধ্যে বিশ্বনাথে এক হাজার ১৪০, সিলেট সদরে ৪৮০, কানাইঘাটে ১৮০, জৈন্তাপুরে ১১০ ও কোম্পানীগঞ্জে ৮০টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। বাকি উপজেলার মধ্যে গোলাপগঞ্জে ৫৯, বিয়ানীবাজারে ৪৮, বালাগঞ্জে ৪০ ও দক্ষিণ সুরমায় ১৪টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। সব মিলিয়ে এক হাজার ৩৩৭ মেট্রিক টন মাছ ও ১২১ মেট্রিক টন পোনা ভেসে গেছে।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, ভোগান্তিতে বানভাসিরা
সিলেটে ২ হাজার ৮৮০ পিস ইয়াবা জব্দ, গ্রেপ্তার ১
সিলেট মহানগরীর কাজিটুলা এলাকা থেকে দুই হাজার ৮৮০ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়েছে। এসময় এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন র্যাব-৯।
গ্রেপ্তার মো. রুমন (৪০) পাবনা সদর থানার শিবরামপুর এলাকার মৃত মোতাহারের ছেলে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে নগরীর কাজিটুলা এলাকার লোহারপাড়ার ওয়াজেদ ভিলায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এসময় তার হেফাজত থেকে দুই হাজার ৮৮০ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের রুমন ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, গ্রেপ্তার ব্যক্তির বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করে রুমনকে জব্দকৃত আলামতসহ কোতোয়ালী থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: চাঁপাইনবাবগঞ্জে ইয়াবা জব্দ, আটক ১
বান্দরবানে ২ কোটি ৭০ লাখ টাকার ইয়াবা জব্দ, আটক ২
সিলেটে প্রথম স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্ট সম্পন্ন
ঢাকার পর সিলেটে প্রথমবারের মতো লিভার সিরোসিস রোগীর শরীরে 'অটোলগাস হেমোলাইটিক স্টেম সেল' সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সিলেটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে সার্জনদের একটি দল এই সফল অস্ত্রপচার করেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলজি ডিভিশনের ডিভিশন প্রধান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলের নেতৃত্বে একদল লিভার বিশেষজ্ঞ এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করেন।
স্টেম সেল থেরাপি আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের একটি উন্নত দিক যা অনেক চিকিৎসায় বিপ্লব ঘটাতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এটি ব্যবহৃত হচ্ছে।
যদিও স্টেম সেল থেরাপি এখনও লিভার সিরোসিসের বিকল্প নয়, তবে যারা লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে অক্ষম তাদের জন্য এটি অবশ্যই একটি প্রতিশ্রুতিশীল চিকিৎসা।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যার ৮ দিন
সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, ভোগান্তিতে বানভাসিরা
সিলেটে বন্যার ৮ দিন
সিলেটে বন্যার আট দিন পেরিয়ে গেলেও সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয়নি। বরং ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।
টানা ৮ দিন ধরে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেট নগরসহ জেলার ১৩টি উপজেলায় প্লাবিত হওয়া হাজার হাজার গ্রাম পানিতে থৈ থৈ করছে। এতে হাজার হাজার মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন, অন্যদিকে ঘরে মজুত করা খাবারও শেষ হয়ে গেছে। এমন হাহাকারের মাঝে বন্যাদুর্গত মানুষ পর্যাপ্ত ত্রাণ পাচ্ছেন না বলেও অনেকে অভিযোগ করেছেন।
বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, বুধবার ও বৃহস্পতিবার রাতে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় শুক্রবার ভোর থেকে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সিলেটে কমপক্ষে ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দি আছেন।
দেখা গেছে জেলার অনেকে নিজের বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ কেউ ঘরের ভেতরে মাচা বানিয়ে থাকছেন।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, ভোগান্তিতে বানভাসিরা
সিলেট নগরের বন্যাক্রান্তরাও খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সংকটে পড়েছেন বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন। নগরের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া অনেকে বলছেন, তারা প্রয়োজনীয় খাবার সহায়তা পাচ্ছেননা। খাবার সংকটে তাদের অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। প্রয়োজনের তুলনায় ত্রাণ বরাদ্দ একেবারেই কম। এ অবস্থায় মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন তারা। একইসাথে বিশুদ্ধ পানিও পাচ্ছেননা তারা। বৃষ্টির পানি জমিয়ে খাবার চাহিদা মেটাচ্ছেন। তাদের প্রশ্ন এভাবে আর কতদিন চলবে?
সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী জানান, রবিবার পর্যন্ত সিলেটে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস আছে। রবিবার দিবাগত রাত থেকে বৃষ্টিপাত কমে পরের দিন সোম ও মঙ্গলবার আকাশ পরিষ্কার হবে। এরপর ফের বৃষ্টিপাত হতে পারে।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত বুধবার কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ওই দিন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিপদসীমার এক দশমিক ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা তিনটায় ওই পয়েন্টে পানি ছিল ১৩ দশমিক ৮৫ সেন্টিমিটার। ওই পয়েন্টে বিপদসীমা ছিল ১২ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, সারাদেশের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
কুশিয়ারা নদীর পানি বুধবার বেলা তিনটা পর্যন্ত বিপদসীমার এক দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ওই পয়েন্টে বেলা তিনটা পর্যন্ত পানি ছিল ১৭ দশমিক ১৭ সেন্টিমিটার। শেওলা পয়েন্টে ছিল ১৩ দশমিক ৬২ সেন্টিমিটার। সেখানে বিপদসীমা ১৩ দশমিক শূন্য ৫ সেন্টিমিটার।
সারি নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম না করলেও বিপদসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে। বৃহস্পতিবার বেল তিনটা পর্যন্ত নদীতে পানি ছিল ১১ দশমিক ৪৮ সেন্টিমিটার। ওই নদীর বিপদসীমা ১২ দশমিক ৩৫ সেন্টিমিটার।
জানা গেছে, ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে গত ৮ দিনে ২ হাজার ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সেখান থেকে নেমে আসা ঢলেই বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার বিকালে সরেজমিনে নগরের কালীঘাট, মহাজনপট্টি এলাকায় দেখা গেছে, সুরমা নদীসংলগ্ন কালীঘাটের খেয়াঘাট এলাকার অন্তত তিন শতাধিক দোকানপাটে পানি ঢুকেছে।
আরও পড়ুন: বন্যায় দুর্ভোগ কমাতে ক্লাস-পরীক্ষায় সহনশীল শাবিপ্রবি প্রশাসন
ব্যবসায়ী মো. শাহজাহান বলেন, ‘পানি ঠেকাতে দিনরাত কষ্ট করছি। কিন্তু এরপরও ঠেকাতে পারছি না। বেচা-কেনার কথা বাদ দিলাম। এখন দোকানে থাকা মালগুলো রক্ষা করাই বড় দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি হলে পথে বসা ছাড়া উপায় নেই।’
সিলেটে ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে বোরো ধান। বোরোর পর এবার আউশেও আঘাত হানলো বন্যা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের হিসেবে, চলমান বন্যায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আউশ ধানের বীজতলা এক হাজার ৩০১ হেক্টর, বোরো ধান এক হাজার ৭০৪ হেক্টর এবং গ্রীষ্মকালীন সবজির এক হাজার ৪ হেক্টর পানিতে তলিয়ে গেছে।
শুক্রবার সকাল ১১টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সিলেট নগরীতে বৃস্টিপাত অব্যাহত ছিল। এরআগে বৃহস্পতিবার রাতেও ভারি বৃস্টিপাত হয়েছে।
সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, ভোগান্তিতে বানভাসিরা
কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সিলেট নগরী এবং জেলার ১৩ উপজেলার গ্রাম থেকে গ্রামান্তর নদীর পানিতে একাকার। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত সিলেট নগরীতে আরও দুই ইঞ্চি পানি বেড়েছে।
এছাড়াও উপজেলাগুলোতেও বন্যার পানি বেড়েছে। এ অবস্থায় সিলেট জেলা ও মহানগরের অন্তত ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। এসব মানুষ বিশুদ্ধ পানি, খাবার, বিদ্যুৎ ও নানামুখী সংকটে দুর্বিষহ সময় কাটাচ্ছেন। এছাড়া গবাদিপশু নিয়েও বিপাকে পড়েছেন মানুষ।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সিলেটের প্রধান নদী সুরমা কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ১২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর সিলেট পয়েন্টে ১৩ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৪২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, সারাদেশের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
এছাড়া কুশিয়ারা নদীর পানি অমলসিদ (সিলেট) পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার বেড়ে এখন বিপদসীমার ১৫৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে শেওলা (সিলেট) পয়েন্টে নদীটির পানি বেড়েছে ৮ সেন্টিমিটার, এখন তা বিপদসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে যাচ্ছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট ও সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চলের কতিপয় স্থানে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে।
সিলেটে হত্যা মামলায় ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড
সিলেটে হাফিজ সাদিকুর রহমান সাদিক হত্যা মামলায় তিনজনের মৃত্যুদণ্ড এবং একজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়াও রায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত চারজনকে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ডেরও নির্দেশ দেন আদালত।
মঙ্গলবার সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারপতি আব্দুর রহিম এই রায় ঘোষণা করেন।
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট পিপি নওশাদ আহমদ চৌধুরী।
এডিশনাল পিপি অ্যাডভোকেট জোবায়ের বখত জুবের রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- সৈয়দা রাখা বেগম, আলী হোসেন ও রেজওয়ান ওরফে রেদওয়ান।
আর যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি হলেন- খালিকুজ্জামান লায়েক। আসামিদের মধ্যে সৈয়দা রাখা বেগম ও খালিকুজ্জামান লায়েক বর্তমানে পলাতক রয়েছেন।
আরও পড়ুন: কিশোরী পাচার মামলায় খুলনায় স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যুদণ্ড
মামলার বিবরণের বরাত দিয়ে তিনি জানান, ২০১৫ সালের অক্টোবরে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। সিলেট সদর উপজেলার নোয়াগাঁও এলাকার সাদিকুর রহমান সাদিক ও সৈয়দা রাখা বেগম নগরীর কালীবাড়িস্থ পীর মঞ্জিলে বিয়ে না করেও স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাস করছিলেন। সে সময় দুই পরিবারের অমতে তাদের অবস্থান থাকায় দেখা দেয় পারিবারিক কলহ। এক পর্যায়ে সাদিকের পরিবার থেকে তাদের সম্পর্ক মেনে নিতে অসম্মতি জানালে সৈয়দা রাখা বেগম তার সহযোগী সাজাপ্রাপ্ত অন্য আসামিদের নিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটান।
মামলার বাদি পক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী ও অ্যাডভোকেট কবির আহমদ বাবর।
মামলার বাদীপক্ষের কাওছার আলী তিনজন আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ ও একজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ ও চার আসামিকে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ডের নির্দেশ দেয়ায় মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করেন এবং আদালতের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
আরও পড়ুন: সিরাজগঞ্জে স্বামী হত্যার দায়ে স্ত্রী ও প্রেমিকের মৃত্যুদণ্ড
পিরোজপুরে স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামীর মৃত্যুদণ্ড