সুন্দরবন
বাগেরহাটে ১৫ ফুট লম্বা অজগর উদ্ধার, সুন্দরবনে অবমুক্ত
বাগেরহাটের মোংলায় হাঁস-মুরগির খামার থেকে ১৫ ফুট লম্বা একটি অজগর সাপ উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে বন বিভাগের সদস্যরা মোংলা উপজেলার সুন্দরবন ইউনিয়নের খরমা-কাটাখালী গ্রামের রুহুল আমিন হাওলাদারের বাড়ির খামার থেকে ওই অজগর সাপটি উদ্ধার করেন।
জানা যায়, বুধবার রাতের কোন এক সময় অজগরটি খামারে ঢুকে পড়ে। উদ্ধার করা অজগরটিকে সুন্দরবনে অবমুক্ত করেছে বন বিভাগ।
বন কর্মকর্তা জানান, অজগরটির দৈর্ঘ্য ১৫ ফুট এবং ওজন ২৭ কেজি। পুরুষ প্রজাতির ওই অজগরটির বয়স ১০ থেকে ১২ বছর বলে মনে করা হচ্ছে।
খামারের মালিক রুহুল আমিন হাওলাদার জানান, ভোরে খামারে হাঁস-মুরগির ডাকাডাকির শব্দ শুনে তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। খামারে গিয়ে দেখে একটি বিশাল সাইজের অজগর খামারের মধ্যে ঢুকে মুরগি ধরে খাচ্ছে। তিনটি মুরগি ও একটি হাঁস অজগর খেয়ে ফেলেছে। তিনি তাৎক্ষণিক ভাবে সুন্দরবন বিভাগকে ঘটনাটি জানান।
আরও পড়ুন:বাগেরহাটে আগুনে ৭ দোকান পুড়ে ছাই
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের জিউধরা স্টেশন কর্মকর্তা মো. শাহজাহান আলী জানান, খবর পেয়ে তারা ওই খামার থেকে অজগরটি উদ্ধার করে নিয়ে আসে। পরে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের বড়ইতলা এলাকায় অগরটি অবমুক্ত করা হয়।
তিনি আরও জানান, সম্প্রতি সুন্দরবন সন্নিহিত গ্রাম থেকে প্রায় সময় বিভিন্ন ধরণের বণ্যপ্রাণী উদ্ধার করা হচ্ছে। সোমবার জিউধরা রাস্তার পাশ থেকে অসুস্থ অবস্থায় একটি ভুতুম প্যাঁচা উদ্ধার করে চিকিৎসা দেয়ার পর উড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এর কয়েকদিন আগে বন সংলগ্ন এলাকা থেকে বানর, সজারু, তক্ক, সাপ এবং অজগর উদ্ধার করে সুন্দরবনে অবমুক্ত করা হয়।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, ছয়মাসে সুন্দরবন সংলগ্ন গ্রাম থেকে অর্ধশতাধিক অজগর উদ্ধার করা হয়েছে। এসব অজগর সুন্দরবন ছেড়ে নদী-খাল পাড়ি দিয়ে বনসংলগ্ন লোকালয়ে যায়। তারা খবর পেয়ে অক্ষত অবস্থায় অজগরগুলোকে উদ্ধার করে সুন্দরবনে অবমুক্ত করে।
আরও পড়ুন:বাগেরহাটে পানিতে ডুবে ২ বোনের মৃত্যু
বাগেরহাটে হাঁসের ঘর থেকে ১২ ফুট লম্বা অজগর উদ্ধার, সুন্দরবনে অবমুক্ত
সুন্দরবনের সংরক্ষিত এলাকায় মাছ ধরার অপরাধে আটক ৩৮
সুন্দরবনের সংরক্ষিত এলাকায় অবৈধভাবে মাছ ধরার অপরাধে ৩৮ জেলেকে আটক করেছে বন বিভাগ। রবিবার ভোরে বাগেরহাট জেলার সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের কটকা অভয়ারণ্য এলাকা থেকে ১৮টি ট্রলারসহ তাদের আটক করা হয়।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের জলসীমা থেকে ৩১ ভারতীয় জেলে আটক
এসময় ওই সব ট্রলার থেকে ইলিশ ধরা জাল ছাড়াও কিছু নিষিদ্ধ জাল জব্দ করা হয়।
আটক জেলেদের বাড়ি বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলা এবং বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনের অভয়ারণ্য এলাকায় কাঁকড়া ধরায় ২৪ জেলে আটক
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, বন বিভাগের সদস্যরা সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত টহলে ছিল। এসময় তারা বনের সংরক্ষিত কটকা অভয়ারণ্য এলাকায় ট্রলারসহ জেলেদের দেখতে পায়। এসময় তারা ধাওয়া করে ১৮টি ট্রলারসহ ৩৮ জেলেকে আটক করে।
বনে সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশ করার অপরাধে ওই জেলেদের বিরুদ্ধে বন আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে ডিএফও জানান।
আরও পড়ুন: বঙ্গোপসাগরে ৮ ট্রলারসহ ১৩৫ ভারতীয় জেলে আটক
৩ মাস পর পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত হলো সুন্দরবন
দীর্ঘদিন পর পর্যটক, বনজীবী ও মৎস্যজীবীদের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে সুন্দরবন। বুধবার রাত ১২টা থেকে শুরু হয় পর্যটনের নতুন মৌসুম।
সুন্দরবনের নদ-নদীতে মাছের প্রজনন মৌসুমের কারণে গত ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ৩ মাস ইকো-ট্যুরিজমসহ (প্রতিবেশ পর্যটন) বনজীবীদের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ ছিল। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পরে বৃহস্পতিবার ১ সেপ্টেম্বর সকালে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত হলো বনের পর্যটন।
খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার বলেন, সুন্দরবন জল-স্থলভাগ শুধু জীববৈচিত্র্যেই নয়, মৎস্য সম্পদের আধার।
তাই সুন্দরবনের মৎস্য সম্পদ রক্ষায় ইন্টিগ্রেটেড রিসোর্সেস ম্যানেজমেন্ট প্ল্যানিংয়ের (আইআরএমপি) সুপারিশ অনুযায়ী ২০১৯ সাল থেকে প্রতি বছর ১ জুলাই থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত দুই মাস সুন্দরবনের সব নদী ও খালে মাছ আহরণ বন্ধ থাকে। চলতি বছর থেকে মৎস্য বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে এই প্রথম এক মাস বাড়িয়ে ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তিন মাস সময় বৃদ্ধি করে বন মন্ত্রণালয়। এই তিন মাস সুন্দরবনের সব নদী ও খালে মাছ ধরা বন্ধের পাশাপাশি পর্যটক প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। বন্ধ করা হয় সুন্দরবনে প্রবেশের সব ধরনের পাস-পারমিট ও নৌ-চলাচল। ফলে তিন মাস গোটা সুন্দরবন ছিল জেলে ও পর্যটক শূন্য। তিন মাস অতিক্রান্ত হওয়ায় ১ সেপ্টেম্বর থেকে সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারছেন পর্যটকরা। একইসঙ্গে সুন্দরবনের বনজ সম্পদ আহরণের জন্য পাস-পারমিট নিয়ে বনে প্রবেশ করতে পারছেন বনজীবীরা।
তিনি আরও জানান, তিন মাস সব ধরনের মাছ আহরণ বন্ধের পাশাপশি সুন্দরবনে পর্যটকসহ বনজীবীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকায় ২১০ প্রজাতির মাছের পাশাপাশি ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর প্রজনন ও বংশ বিস্তারে সুফল আনবে বলে ধারণা বন বিভাগ ও বিশেষজ্ঞদের।
সুন্দরবন ট্যুর অপারেটরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল হক কচি বলেন, সুন্দরবনের দ্বার খুলে যাওয়ায় বুধবার রাত ১২টায় খুলনা থেকে দ্য ওয়েব জাহাজ ৭৫ পর্যটক নিয়ে সুন্দরবনে যাত্রা শুরু করেছে। জাহাজটি ঢাকা থেকে এসেছে। বৃহস্পতিবার সকালে অবসর নামে একটি জাহাজ ৪০ জন অভিনয়শিল্পী নিয়ে সুন্দরবন যাত্রা করেছে। এছাড়া শুক্রবার খুলনা থেকে আরও ছয়টি জাহাজে ২৫০ জন দেশি-বিদেশি পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণে যাবেন। পদ্মা সেতু চালুর পর ঢাকা থেকে সড়কপথে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের দূরত্ব কমেছে। ফলে সময় বাঁচবে তিন ঘণ্টা। তাই এবার পর্যটকদের জন্য নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। এ পর্যটন মৌসুম চলবে আগামী বছরের ৩১ মে পর্যন্ত।
এদিকে, সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হওয়ায় জেলে, ট্যুর অপারেটর, লঞ্চ ও বোট চালকরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পর্যটকদের সুন্দরবনে প্রবেশের ট্যুর অপারেটররা তাদের লঞ্চসহ বোটগুলোকে রংতুলির আঁচর দিয়ে ও প্রয়োজনীয় মেরামত সেরে নতুন করে সাজিয়েছেন।
সুন্দরবনের ট্যুর অপারেটর এইচ এম দুলাল বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর এতদিন সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় সড়কপথে পদ্মা সেতু পার হয়ে সহজেই অসংখ্য পর্যটক প্রতিদিন ভিড় করবেন বাগেরহাটের পূর্ব বিভাগের সুন্দরবনে। পদ্মা সেতু চালুর পর এবার সুন্দরবনে পর্যটন মৌসুমে পর্যটকদের ভিড় কয়েকগুণ বাড়বে আশা করা যায়।
বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, তিন মাস সুন্দরবনে পর্যটক আসা বন্ধ থাকায় এখন বন্যপ্রাণীগুলো বিকাল হলেই পর্যটক কেন্দ্রের সামনে চলে আসছে। কারণ মানুষের আনাগোনা কম, তাই নদীর পাশে বা সামনে আসতে ভয় পেতো না। তবে পর্যটক আসা বন্ধ থাকায় সরকারের কিছুটা রাজস্ব কম হয়েছে, তার চেয়ে বেশি উপকার হয়েছে বনজ সম্পদ, বন্যপ্রাণী ও মৎস্য সম্পদের।
মোংলা সমুদ্র বন্দরের ট্যুর অপারেটর মো. এমাদুল হক, বাবুল মিয়া জানান, নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় সড়কপথে পদ্মা সেতু পার হয়ে প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক ভিড় করবেন সুন্দরবনে। এজন্য তারা প্রস্তুতি শুরু করেছেন।
শরণখালার ট্যুর অপারেটর মো. রাসেল বয়াতি, আলমগীর হোসেন, আ. হালিম ও আলী আকবর জানান, সুন্দরবনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান হচ্ছে শরণখালার সুপতি, কচিখালী, ডিমের চর, কটকা, বাদামতলা, টিয়ার চর, শেলার চর, দুবলার চর ও আলীবাদাসহ বিভিন্ন এলাকা। পদ্মা সেতুর খুলে দেয়ায় এখান থেকে কম সময়ে এবং কম খরচে সুন্দরবন ভ্রমণের সুযাগ সষ্টি হয়েছে।
সুন্দরবনের মৎস্য ব্যবসায়ী জালাল মোল্লা, রিপন বয়াতি ও মো. জাকির হোসেন জানান, বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল জেলে ও মৎস্যজীবীরা তিন মাস মানবেতর জীবন-যাপন করেছেন। তাই নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় বন বিভাগ থেকে পারমিট নিয়ে তারা জীবিকার অন্বেষণে ছুটে যাবেন সুন্দরবনে।
আরও পড়ুন:পর্যটকদের জন্য সুন্দরবন খুলছে ১ সেপ্টেম্বর
শরণখালা রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ১ সেপ্টেম্বর থেকে সুন্দরবনে জেলে ও পর্যটকদের জন্য পারমিট দেয়া শুরু হবে। এজন্য নির্ধারিত স্টেশনগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার ফলে সুন্দরবনের প্রতি দর্শনার্থীদের আগ্রহ অনেক বেড়ে গেছে। কিন্তু সেতু উদ্বোধনের সময় থেকেই বনে প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকায় দর্শনার্থীরা আসতে পারেননি। তবে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় দর্শনার্থীর সংখ্যা পূর্বের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পাবে।
আরও পড়ুন:বাগেরহাটে হাঁসের ঘর থেকে ১২ ফুট লম্বা অজগর উদ্ধার, সুন্দরবনে অবমুক্ত
সুন্দরবনে বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে কুমিরের ৩৮টি ছানা ফুটেছে
পর্যটকদের জন্য সুন্দরবন খুলছে ১ সেপ্টেম্বর
বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবন পর্যটকদের জন্য খুলে দেয়া হচ্ছে। প্রজনন মৌসুমে বন্যপ্রাণী ও মৎস্য সম্পদের প্রজনন বাড়াতে ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট সুন্দরবনে সব ধরণের মানুষের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বন বিভাগ। একটানা তিন মাস বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) থেকে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা সুন্দরবন ভ্রমণ করতে পারবেন।
বন বিভাগের পক্ষ থেকে সুন্দরবনের দর্শনীয় স্থানগুলোকে ভ্রমণ উপযোগী করে তোলা হয়েছে। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য ট্যুর অপারেটরগুলো তাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় সুন্দরবনে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ঢল নামবে বলে বন বিভাগ ও ট্যুর অপারেটরদের প্রত্যাশা।
বন বিভাগ বলছে, প্রজনন মৌসুমে ৩ মাস সুন্দরবনে সব ধরণের মানুষের প্রবেশ বন্ধ থাকায় বন্যপ্রাণীরা নির্বিঘ্নে প্রজনন করতে পেরেছে। বনে বিভিন্ন ধরণের বন্যপ্রাণীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সাথে বনের নদী, খালে মাছও বৃদ্ধি পেয়েছে। লোকালয়ের কাছাকাছি এবং বন বিভাগের বিভিন্ন দপ্তরের পাশে হরিণ, বানর, বন্য শুকুর, সাপ, অজগর, ঘুঘুসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণীর প্রায়ই দেখা মিলছে। এমনকি বনের বিভিন্ন এলাকায় বাঘের ডাকও শোনা গেছে।
সুন্দরবন বিশ্বের একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন। ১৮৭৮ সালে সুন্দরবনকে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সুন্দরবনের মোট আয়াতন ছয় হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে স্থলভাগের পরিমাণ চার হাজার ১৪৩ বর্গকিলোমিটার এবং জলভাগের পরিমাণ এক হাজার ৮৭৩ বর্গকিলোমিটার। সুন্দরবন জীববৈচিত্র সমৃদ্ধ বিশ্বের মধ্যে সমৃদ্ধশালী একটি ইকোসিস্টেম। অসংখ্য উদ্ভিদ ও প্রাণীর আবাসস্থল সুন্দরবন। রয়েল বেঙ্গল টাইগারেরও আবাসস্থল সুন্দরবন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুন্দরবন।
আরও পড়ুন: জেলে-পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা: নিজস্ব রূপে ফিরেছে সুন্দরবন
করমজল পর্যটন কেন্দ্র: প্রজনন হচ্ছে লবণ পানির কুমির ও ‘বাটাগুর বাসকা’ কচ্ছপ
সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে লবণ পানির কুমির আর বিরল প্রজাতির কচ্ছপ ‘বাটাগুর বাসকা’ জন্ম নিচ্ছে বলে জানিয়েছে বন বিভাগ। তাছাড়া করমজলে ভ্রমণে গিয়ে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা এসব বন্যপ্রাণী দেখে অনেক খুশি। বিশেষ করে শিশুরা কুমির ও কচ্ছপ ছানা দেখে বেশি উচ্ছ্বসিত।
সোমবার দুপুরেও প্রজনন কেন্দ্রের ডিজিটাল ইনকিউবেটর থেকে কুমিরের ছানা ফুটেছে। ছানা ফুটাতে কুমিরের ৩৮টি ডিম ৮২ দিন ইনকিউবেটরে রেখে নিবিড় পরিচর্যা করে বন বিভাগ। প্রজনন কেন্দ্রের চৌবাচ্চায় রেখে কুমিরের বাচ্চাগুলোকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হয়। এবার বন বিভাগ কুমিরের ডিম থেকে শতভাগ বাচ্চা ফুটাতে সফল হয়েছে এবং পুকুরে বিরল প্রজাতির কচ্ছপ বাটাগুর বাসকা প্রজনন হচ্ছে।
জানা গেছে, সরকার ২০০০ সালে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের করমজল পর্যটন কেন্দ্রে বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র গড়ে তোলে। লবণ পানির কুমির এবং বিরল প্রজাতির বাটাগুর বাসকা কচ্ছপ এই কেন্দ্রে প্রজনন হয়। ২০০৫ সাল থেকে রোমিও-জুলিয়েট কুমির জুটি দিয়ে প্রজনন শুরু হয়। এরপর ওই প্রজনন কেন্দ্রে পিলপিল-আলেকজান্ডার যুক্ত হয়। বর্তমানে রোমিও এবং জুলিয়েট প্রজনন ক্ষমতা হারিয়েছে বলে বন বিভাগ জানায়। আর ২০১৪ সালে বিরল প্রজাতির আটটি বাটাগুর কচ্ছপ নিয়ে কচ্ছপ প্রজনন শুরু করে বন বিভাগ।
পড়ুন: পাটের দাম নিয়ে হতাশ চাষিরা
বন বিভাগের তথ্য মতে, ২০০৫ থেকে ২০২২ সালের ১ জুন পর্যন্ত প্রজনন কেন্দ্রে কুমির এক হাজার ১৫০টি ডিম দিয়েছে। এর মধ্যে ৫০৭টি ডিম থেকে ছানা ফুটে বের হয়। বর্তমানে প্রজনন কেন্দ্রে এক থেকে ৪০ বছর বয়সের ১২৯টি কুমির রয়েছে। এই পর্যন্ত জন্ম নেয়া ২০৬টি কুমির সুন্দরবনের নদী-খালে অবমুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া ২০১৭ সাল থেকে এই পর্যন্ত কচ্ছপে ৩২৭টি ডিম পাড়ে এবং ২৭৪টি কচ্ছপের ছানা ফোটে। বর্তমানে কেন্দ্রে ৪৩২টি কচ্ছপ রয়েছে।
সূত্র মতে, ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিন বছরে জুলিয়েট এবং পিলপিল দুটি কুমির প্রজনন কেন্দ্রে ১৬৪টি ডিম পাড়ে। কিন্তু বন বিভাগ ডিমগুলো থেকে একটি ছানাও ফোটাতে পারেনি। আর ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কুমিরের চারটি ডিম থেকে বাচ্চা ফোটে। ২০২১ সালে প্রজনন কেন্দ্রে কুমিরে একটি ডিমও পাড়েনি।
পড়ুন: চা শ্রমিকদের মজুরি ২০১৯ সালেই বৃদ্ধি করা উচিৎ ছিল: গবেষক আশ্রাফুল
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির জানান, চলতি বছর ২২ জুন প্রজনন কেন্দ্রের কুমির পিলপিল ৩৮টি ডিম পাড়ে এবং ডিজিটাল ইনকিউবেটরে রাখা হয়। ৮২ দিন পর সবগুলো থেকেই বাচ্চা ফুটেছে। প্রজনন কেন্দ্রে চৌবাচ্চায় কুমিরের ছানাগুলো লালন পালন করে বড় করে তোলা হবে। সেখানে বিভিন্ন সাইজের ১৬টি চৌবাচ্চা রয়েছে। ৬ থেকে ৭ বছর চৌবাচ্চায় কুমির থাকবে। পরবর্তীতে সুন্দরবনের নদী-খালে এই কুমির অবমুক্ত করা হবে।
এই পর্যন্ত করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে জন্ম নেয়া ২০৬টি কুমির সুন্দরবনের নদী ও খালে অবমুক্ত করা হয় বলে তিনি জানান।
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার তথ্য মতে, বিলুপ্তপ্রায় বাটাগুর বাসকা প্রজাতির কচ্ছপের জীবনচারণ, প্রজনন ও সংখ্যা নির্ধারণসহ নানা বিষয়ে জানতে করমজল থেকে গত ২০১৭ সালে জিপিএস ট্রান্সমিটার স্যাটেলাইটযুক্ত দুটি, ২০১৮ সালে পাঁচটি এবং ২০১৯ সালে পাঁচটি কচ্ছপ সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী-খালে ছাড়া হয়। স্যাটেলাইটযুক্ত ১২টি কচ্ছপের মধ্যে ২০১৮ সালে একটি বরিশালে গিয়ে মারা যায়, দুটি ভারতে বিচরণ করছিল, দুটি বিভিন্ন নদী-খালে কয়েশত কিলোমিটার বিচরণ করার পর জেলেদের জালে ধরা পড়ে। পরবর্তীতে জেলেদের কাছ থেকে উদ্ধার করে কচ্ছপ দুটি করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের পুকুরে রাখা হয়।
বাকি কচ্ছপগুলোর বর্তমান অবস্থান তারা জানে না। তবে জিপিএস ট্রান্সমিটার স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ওই কচ্ছপের বিচরণের সময় বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। অস্ট্রিয়া ভিয়েনাজু, টিএসএ, প্রকৃতি জীবন ফাউন্ডেশন এবং বন বিভাগ সুন্দরবনের করমজলে বাটাগুর বাসকা নামে ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বলে তিনি জানান।
আরও পড়ুন: বাগেরহাটে ধরা পড়ছে না ইলিশ, হতাশ জেলেরা
বন বিভাগের তথ্য মতে, দক্ষিণ এশিয়ায় বর্তমানে ২১ প্রজাতির কচ্ছপ পাওয়া যায়। সমুদ্রে পাঁচ প্রজাতির কচ্ছপের বাস। সারা বিশ্বে ৩০০ প্রজাতির কচ্ছপ আছে। প্রকার ভেদে একটি কচ্ছপের গড় আয়ু ২০০ থেকে প্রায় ৩০০ বছর।
বিভিন্ন সময় সুন্দরবনের করমজলে ভ্রমণে যাওয়া নানা বয়সের নারী-পুরুষ পর্যটকরা জানান, প্রাকৃতিভাবে গড়ে উঠা সুন্দরবনের নয়নাভিরাম দৃশ্য তাদেরকে মুগ্ধ করে। বিশেষ করে করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে গিয়ে কুমির এবং কচ্ছপ দেখে তারা বেশি আনন্দ পায়। আর সে কারণের ছেলে মেয়েদের নিয়ে তারা প্রায় প্রতিবছর সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে ঘুরতে আসেন।
বাগেরহাটে হাঁসের ঘর থেকে ১২ ফুট লম্বা অজগর উদ্ধার, সুন্দরবনে অবমুক্ত
সুন্দরবন সংলগ্ন বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার একটি বাড়ির হাঁসের ঘর থেকে ১২ ফুট লম্বা একটি অজগর উদ্ধার করা হয়েছে।
বুধবার সকালে বন সুরক্ষা বিষয়ক ভিটিআরটি ও সিপিজি কমিটির সদস্যরা উপজেলার সোনাতলা গ্রামের কৃষক বিল্লাল খানের বাড়ির হাঁসের ঘর থেকে অজগরটি উদ্ধার করে।
আরও পড়ুন:বাগেরহাটে সবজি খেত থেকে অজগর উদ্ধার, সুন্দরবনে অবমুক্ত
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, সুন্দরবন ছেড়ে ভোলা নদী পাড়ি দিয়ে অজগরটি সোনাতলা গ্রামের ওই কৃষকের বাড়ির হাঁসের খোপে ঢুকে পড়ে। খবর পেয়ে ভিটিআরটি ও সিপিজি কমিটির সদস্যরা অজগরটিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে।
তিনি জানান, গত ৬ মাসে সুন্দরবন সংলগ্ন গ্রাম থেকে অর্ধশতাধিক অজগর উদ্ধার করা হয়েছে। এসব অজগর সুন্দরবন ছেড়ে নদী-খাল পাড়ি দিয়ে বনসংলগ্ন লোকালয়ে যায়।
তিনি আরও জানান, পরে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জ এলাকায় বন বিভাগ অজগরটি অবমুক্ত করে। অজগরটি ভোলা নদী পার হয়ে ওই বাড়িতে গিয়ে হাঁসের খোপে ঢুকে তিনটি হাঁস খেয়েছে। এছাড়া উদ্ধার করা অজগরটির ওজন ২০ কেজি এবং দৈর্ঘ্য ১২ ফুট। বয়স প্রায় ৬ বছর।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রামে ১১ ফুট লম্বা অজগর উদ্ধার
রাঙ্গামাটিতে বিলুপ্তপ্রায় অজগর উদ্ধার বিজিবি’র
সুন্দরবনে বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে কুমিরের ৩৮টি ছানা ফুটেছে
সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে পিলপিল নামের কুমিরের ডিম থেকে ৩৮টি ছানা ফুটেছে। সোমবার দুপুরে প্রজনন কেন্দ্রের ডিজিটাল ইনকিউবেটর থেকে একে একে কুমিরের ছানা ফুটে বের হয়।
জানা যায়, ছানা ফুটাতে কুমিরের ৩৮টি ডিম ৮২ দিন ইনকিউবেটরে রেখে নিবিড় পরিচর্যা করে বন বিভাগ। প্রজনন কেন্দ্রের প্যানে রেখে কুমিরের বাচ্চাগুলোকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছে বন বিভাগ। এবার বন বিভাগ কুমিরের ডিম থেকে শতভাগ বাচ্চা ফুটাতে সফল হয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিন বছরে জুলিয়েট এবং পিপল নামে এই দুটি কুমিরে প্রজনন কেন্দ্রে ১৬৪টি ডিম পাড়ে। কিন্তু বন বিভাগ ওই ১৬৪টি ডিম থেকে কুমিরের একটি ছানাও ফোটাতে পারেনি। এরপর ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কুমিরের চারটি ডিম থেকে বাচ্চা ফোটে। ২০২১ সালে প্রজনন কেন্দ্রে একটি ডিমও পাড়েনি কুমিরে।
আরও পড়ুন:বাগেরহাটে জেলের বাড়ি থেকে কুমির উদ্ধার
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির জানান, প্রজনন কেন্দ্রের কুমির পিলপিল ২২ জুন ৩৮টি ডিম পাড়ে। ওই ডিমগুলো ডিজিটাল ইনকিউবেটরে রাখা হয়। ৮২ দিন পর ৩৮টি ডিমের সবগুলো থেকেই বাচ্চা ফুটেছে। প্রজনন কেন্দ্রের প্যানে কুমিরের ছানাগুলো লালন পালন করে বড় করে তোলা হবে।
তিনি আরও জানান, ৬ থেকে ৭ বছর প্যানে থাকবে কুমির। পরবর্তীতে সুন্দরবনের নদী-খালে এই কুমিরগুলো অবমুক্ত করা হবে।
এপর্যন্ত করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে জন্ম নেয়া ২০৬টি কুমির সুন্দরবনের নদী-খালে অবমুক্ত করা হয় বলে তিনি জানান। বন বিভাগের তথ্য মতে, বিলুপ্তপ্রায় লবণপানি প্রজাতির কুমিরের প্রজনন বৃদ্ধি ও লালন-পালনের জন্য সরকার ২০০০ সালে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের করমজল পর্যটনকেন্দ্রে ওই ‘কুমির প্রজনন’ কেন্দ্র গড়ে তোলে। সুন্দরবনের নদী-খালে পাওয়া লবণ পানির পাঁচটি কুমির নিয়ে কেন্দ্রের প্রজনন কার্যক্রম শুরু হয়। ২০০৫ সাল থেকে রোমিও-জুলিয়েট নামের ওই কুমির জুটি দিয়ে প্রজনন শুরু হয়। এর পর ওই প্রজনন কেন্দ্রে যুক্ত হয় পিলপিল এবং আলেকজেন্ডার। বর্তমানে রোমিও এবং জুলিয়েট প্রজনন ক্ষমতা হারিয়েছে বলে বন বিভাগ জানায়।
আরও পড়ুন:কুমিরের সঙ্গে লড়াই করে প্রাণে বেঁচে গেলেন যুবক
বাগেরহাটে চিংড়িঘের থেকে কুমির উদ্ধার
সুন্দরবনে লাইসেন্সবিহীন করাতকল উচ্ছেদের নির্দেশ
খুলনার সুন্দরবন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে লাইসেন্সবিহীন সব করাতকল উচ্ছেদে বন বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার।
এ সময় তিনি বর্ষায় নদী ভাঙনের শুরুতেই ভাঙন প্রতিরোধে চেয়ারম্যানদের সুপারিশে সরকারি অর্থের অপচয়রোধে জিও ব্যাগ ও রিজার্ভ ফান্ডের প্রস্তুতি রাখার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতি অনুরোধ জানান। খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে লবণচরা রাস্তাটি চলাচল উপযোগী করা ও চলমান কাজ দ্রুত সময়ে শেষ করতে বলেন।
রবিবার দুপুরে নিজ সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত খুলনা জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির আগস্ট মাসের সভা তিনি এসব অনুরোধ জানান।
বক্তব্যে জেলা প্রশাসক ওএমএসের চাল প্রদানে উপকারভোগী নির্বাচনে শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনে বেড়েছে হরিণ শিকার
সভায় খুলনার সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ বলেন, বর্তমানে করোনার প্রকোপ বাড়ছে। যারা এখনও বুস্টার ডোজ নেননি তাদের দ্রুত বুস্টার ডোজ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, এখন আমন মৌসুম। সেচ সুবিধা নিশ্চিত এবং অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের মাধ্যমে ফসল উৎপাদনে কৃষকের সুবিধার কথা চিন্তা করে কয়রা ও পাইকগাছার স্লুইচগেট সচল রাখা প্রয়োজন। এজন্য তিনি সভাপতির দৃষ্টি আর্কষণ করেন।
আরও পড়ুন: বাগেরহাটে চিত্রা হরিণ উদ্ধার, সুন্দরবনে অবমুক্ত
সভায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শিকদার শাহীনুর রহমান, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. সাদিকুর রহমান খান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) তানভীর আহমদ, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ কমিটির অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সুন্দরবনে বেড়েছে হরিণ শিকার
সুন্দরবনের পশ্চিম বন বিভাগের আওতাধীন খুলনা রেঞ্জে প্রতিনিয়ত হরিণ শিকারির অপতৎপরতা বেড়েই চলেছে। সুন্দরবন রক্ষা করতে বন বিভাগের টহল টিমের সঙ্গে বিশেষ টহল টিম স্মার্ট প্যাট্রল প্রতিনিয়ত দায়িত্ব পালন করলেও অদৃশ্য কারণে হরিণ শিকার কমছে না।
সম্প্রতি কয়রা উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৪ নম্বর কয়রা গ্রামে পৃথক অভিযান চালিয়ে দুদিনের ব্যবধানে সাত কেজি হরিণের গোশতসহ এক শিকারিকে আটক করেছে কয়রা থানা পুলিশ।
আরও পড়ুন: বাগেরহাটে চিত্রা হরিণ উদ্ধার, সুন্দরবনে অবমুক্ত
জানা গেছে, গত ১৮ আগস্ট রাত সাড়ে ৯টায় দিকে পাচারকালে কয়রা উপজেলা সদর ইউনিয়নের ৪নং কয়রা গ্রামের বাসিন্দা ৩৮ বছর বয়সী রুহুল আমিন সানাকে চার কেজি হরিণের গোশতসহ আটক করা হয়। এর আগে ১৭ আগস্ট গভীর রাতে তিন কেজি হরিণের গোশত উদ্ধার করেন কয়রা থানা পুলিশ।
এছাড়া গত ৫ জুন সুন্দরবনে অভিযান চালিয়ে জবাই করা দুটি হরিণ, একটি নৌকা ও হরিণ ধরার ফাঁদ উদ্ধার করেন কয়রার হড্ডা বন টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান।
অভিযোগ আছে, বনবিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা চোরা শিকারিদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। তাদের যোগসাজশে এই শিকারি চক্র হরিণের গোশত নিয়ে উপজেলার ৪ ও ৬ নম্বর কয়রা এলাকা দিয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করে।
আরও পড়ুন: শরণখোলায় ২ হরিণের চামড়া উদ্ধার
পশ্চিম বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. হাসানুর রহমান বলেন, আমাদের টহল টিম নিয়মিত পাহারা দেয়। সুযোগ বুঝে তাদেরকে ফাঁকি দিয়ে এই চক্র হরিণ শিকার চালিয়ে যাচ্ছে। বন বিভাগের সদস্য কম থাকায় তারা সুযোগটা বেশি পাচ্ছে।
এ ব্যাপারে কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবি এম এস দোহা বলেন, কিছু অসাধু কারবারি হরিণ শিকার করে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করছে। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে প্রতিনিয়ত কয়রা থানা পুলিশ বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে। সম্প্রতি হরিণের গোশতসহ একজনকে আটক করে বন্য প্রাণী নিধন আইনে মামলা করা হয়েছে।
বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ: জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবন প্লাবিত
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ ও পূর্ণিমার প্রভাবে জোয়ারের পানি বাগেরহাটের সুন্দরবনের মধ্যে দিয়ে তিন ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। শুক্রবার সকালে জোয়ারের সময় সুন্দরবনের বিভিন্ন অংশে পানি প্রবেশ করতে থাকে। করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রসহ বনের বিভিন্ন এলাকায় জোয়ারের পানি উঠে যায়। ভাটার সময় কিছু অংশের পানি নেমে গেলেও বনের নিচু এলাকায় পানি জমে রয়েছে।
বন বিভাগ বলছে, গত তিনদিনে জোয়ারের তূলনায় শুক্রবার সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে বেশি পরিমাণ পানি প্রবাহিত হতে দেখা গেছে। তবে বন্যপ্রাণীর কোন ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
এছাড়া বাগেরহাটের পশুর, পানগুছি, বলেশ্বর, ভৈরব ও দড়াটানাসহ বিভিন্ন নদ-নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। জোয়ারে বাগেরহাটের নিম্নাঞ্চলে প্লাবিত হয়েছে। তবে ভাটার সময় আবার অনেক অংশের পানি নেমে গেছে।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে চারদিন ধরে বাগেরহাটের নদ-নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। শুক্রবার সেই সঙ্গে পূর্ণিমার প্রভাবে পানি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির জানান, সুন্দরবনের মধ্যে নদ-নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। আড়াই থেকে তিন ফুট উচ্চতায় বনের মধ্যে দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে বনের মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় হাটা পথ পানিতে ডুবে গেছে। তবে এখনও পর্যন্ত বন্যপ্রাণীর কোন ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন: বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ: সুন্দরবনে আড়াই ফুট উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হচ্ছে
বাগেরহাটে ধরা পড়ছে না ইলিশ, হতাশ জেলেরা