নির্বাচন
ক্ষমতা হারানোর ভয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চায় না সরকার: মঈন খান
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা হারানোর ভয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চায় না বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ পরাজিত হবে, তাই তারা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে ভয় পাচ্ছে। এ কারণেই তারা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করছে না। এটাই প্রধান কারণ, যে যাই বলুক না কেন।’
শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করলে সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনকে কেন এত ভয় পায়- এ প্রশ্ন তোলেন এই বিএনপি নেতা।
তিনি বলেন, ‘এবার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন করুন, তাহলে দেখবেন আগামী সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ আবারও আনন্দের সঙ্গে আপনাদের ভোট দেবে।’
তিনি বাংলাদেশের জনগণের চরিত্র ও মনস্তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য বুঝে রাজনীতি করার জন্য ক্ষমতাসীনদের প্রতি আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে প্রতিবেশী দেশ হস্তক্ষেপ করছে: রিজভী
যদিও নির্বাচনের আট দিন বাকি তবে ডক্টর মঈন মনে করেন, রাজনৈতিক সংকট নিরসনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাজনৈতিক সংলাপ করার এবং দেশে একটি বিশ্বাসযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ খুঁজে বের করার জন্য সরকারের এখনও সময় আছে।
তিনি বলেন, ‘৭ জানুয়ারি এখনও অনেক দূরে... এই সহিংস সংঘর্ষের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আলোচনা করুন। আপনারা সরকারে আছেন বলে আমি আপনাদের অনুরোধ করছি। সুতরাং, এই বিষয়ে মূল সিদ্ধান্ত নেওয়া আপনার দায়িত্ব।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, দেশের স্বার্থে ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে সংঘাত এড়িয়ে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতিতে ফিরতে হবে।
সাবেক তথ্যমন্ত্রী ড. মঈন বলেন, দেশের জনগণের কাছে সরকারকে জবাবদিহি করতে গণমাধ্যম অত্যন্ত শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে পারে।
তিনি বলেন, ‘সংবাদপত্রকে বলা হয় রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ...আধুনিক বিশ্বে সংবাদপত্র খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যারা দেশ চালাচ্ছেন তাদের জনগণের কাছে জবাবদিহি করাই গণমাধ্যমের প্রধান দায়িত্ব। এই কারণে, বিশ্বের সব সরকার মিডিয়াকে ভয় পায়।’
এই বিএনপি নেতা আরও বলেন, গণমাধ্যমগুলো সরকারের চেয়ে বেশি শক্তিশালী, কারণ তারা তাদের কলম দিয়ে যেকোনো সরকারের পতন নিশ্চিত করতে পারে।
সরকারের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমকে ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ তুলে তিনি সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সাংবাদিকদের নিজেদের মধ্যে বিভেদ ও সংঘাত দূর করে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: নির্বাচনের নামে প্রহসনমূলক খেলা বানচাল করতে জনগণের প্রতি আহ্বান বিএনপির
শনিবার পর্যন্ত চলবে বিএনপির গণসংযোগ কর্মসূচি
বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে প্রতিবেশী দেশ হস্তক্ষেপ করছে: রিজভী
সুস্পষ্টভাবে ভারতকে খোঁচা দিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেন, ৭ জানুয়ারির ‘ডামি’ নির্বাচন করতে একটি দেশ বাংলাদেশে সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে।
এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী গতকাল (বৃহস্পতিবার) বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে দেশে- বিদেশে ষড়যন্ত্র চলছে। আপনারাই নির্বাচনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। একটি প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে একটি ডামি নির্বাচন করতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে।’
তিনি অবশ্য ভারতের নাম উল্লেখ করেননি।
শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় প্রচারপত্র বিতরণকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি দেশবাসীকে সাজানো নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানান।
সরকার শুধু ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে বিসর্জন দিয়ে বাংলাদেশকে একটি দালাল রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করেন রিজভী।
তিনি বলেন, ‘মানুষ তাদের নীলনকশা সফল হতে দেবে না।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না। ‘এটি আসন ভাগাভাগি ও বণ্টনের নির্বাচন। এটা একটা প্রহসনমূলক নির্বাচন।’
জনগণই দেশের মালিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার জনমত উপেক্ষা করে ডামি নির্বাচন করে বিদেশিদের ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করছে। যতই ষড়যন্ত্র করুক না কেন সরকার সফল হবে না।
আরও পড়ুন: ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিতে সরকারের 'মরিয়া' চেষ্টায় সাড়া মিলছে না: রিজভী
তিনি বলেন, ‘আমরা ভোটারদের এই ডামি নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানাচ্ছি... ভোটের দিন ঘরে থাকুন, ভোটকেন্দ্রে যাবেন না। ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে এই অবৈধ নির্বাচনকে না বলুন।’
দলের দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে রিজভী বিএনপির কয়েকজন নেতা-কর্মীকে নিয়ে সকালে রাজধানীর ধানমন্ডি-১৫-এর কাঁচা বাজারে লিফলেট বিতরণ করেন।
৭ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন ও আওয়ামী লীগ সরকারকে সহযোগিতা না করার আহ্বানের পক্ষে জনসমর্থন জোগাড় করতে বিএনপি ও সমমনা বিরোধী দলগুলো লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ কর্মসূচি পালন করছে।
বৃহস্পতিবার দলটি গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ কর্মসূচির মেয়াদ শনিবার পর্যন্ত আরও দুই দিন বাড়িয়েছে।
বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করতে এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ প্রশাসনের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে বাধ্য করতে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর থেকে প্রায় তিন ডজন বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বিএনপি যুগপৎ আন্দোলন চালিয়ে আসছে।
গত ২৮ অক্টোবর দলের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের পর বিএনপির আন্দোলন গতি হারিয়ে ফেলে, কারণ এরপর দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অনেক সিনিয়র নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং অনেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তারের ভয়ে আত্মগোপনে চলে যায়।
তবে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো ২৯ অক্টোবর থেকে ১২ দফায় ২৩ দিন দেশব্যাপী অবরোধ এবং চার দফায় পাঁচ দিন হরতাল দেয়।
অবশেষে ২০ ডিসেম্বর বিরোধী দল অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়।
আরও পড়ুন: ইসির আন্দোলন বন্ধ করতে চাওয়া নজিরবিহীন ও গণবিরোধী: রিজভী
ক্ষমতাসীন দলের এমপি-মন্ত্রীদের হাতে আলাদিনের বাতি আছে: রিজভী
জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক সহিংসতার মধ্যে দিয়ে ২০২৩ সালের সমাপ্তি
প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও সমমনা দলগুলোর আসন্ন জাতীয় নির্বাচন বর্জনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক সহিংসতার মধ্যে দিয়ে ২০২৩ সাল বিদায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ।
তবে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনে বিরোধীদের দাবি প্রত্যাখ্যান করে আগামী ৭ জানুয়ারি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ।
রাজনৈতিক স্থবিরতার কারণে পুলিশ, বিরোধী দলের কর্মী এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষ দেখা দিয়েছে।
অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে বেড়ে যাওয়া সহিংসতায় রাজধানী ঢাকা ও দেশের অন্য অংশে বেশ কয়েকজন নিহত এবং অনেক আহত হয়েছে।
২০২৩ সালে রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে মৃত্যুর সংখ্যার সরকারি তথ্য পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাওয়া যায়নি। তবে বেশ কিছু মানবাধিকার সংস্থা একাধিক উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) সংকলিত তথ্য অনুসারে, এই বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত রাজনৈতিক সহিংসতায় ১৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং ৩ হাজার ৮৭৩ জন আহত হয়েছেন।
অন্যদিকে, হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার মোট ৬৮৯টি ঘটনায় কমপক্ষে ৬০ জন নিহত এবং ৬ হাজার ৭৪৩ জন আহত হয়েছে।
২৮ অক্টোবরের পর থেকে যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে, বিশেষ করে বিরোধীদের ডাকা হরতাল ও অবরোধের সময় সরকারি যানবাহন এবং বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
২৮ অক্টোবর বিএনপির ভেস্তে যাওয়া মহাসমাবেশের পর অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে শুরু করে। প্রথমে রাজধানীতে এবং পরে দেশের বিভিন্ন স্থানে তীব্র সহিংসতা শুরু হয়।
বিএনপি কর্মী-পুলিশ সংঘর্ষে ঢাকা, বিশেষ করে নয়াপল্টন ও এর আশপাশের এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয় মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে। এর ফলে একজন পুলিশ সদস্য এবং একজন ওয়ার্ড পর্যায়ের বিএনপি নেতা নিহত হন।
পুলিশ সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে টিয়ারগ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে, কিন্তু তা শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই বিএনপি মহাসমাবেশ শেষ করতে বাধ্য হয়।
আরও পড়ুন: ক্ষমতা হারানোর ভয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চায় না সরকার: মঈন খান
এর প্রতিবাদে বিএনপি গত ২৯ অক্টোবর দেশব্যাপী ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হরতাল ডেকেছিল। এরপর থেকে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো দফায় দফায় দেশব্যাপী অবরোধ ও হরতাল শুরু করে।
এসময়ে সহিংসতার অভিযোগে প্রশাসন তাদের বহু নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে।
গ্রেপ্তারদের মধ্যে রয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, যার বিরুদ্ধে গত ২৮ অক্টোবর কাকরাইলে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার অভিযোগ রয়েছে।
ডিএমপি সদর দপ্তর সূত্র জানায়, ২৮ অক্টোবর বিএনপির নয়াপল্টনে মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন থানায় মোট ৩৬টি মামলা হয়েছে।
মামলায় বিএনপি ও এর সমমনা দলের ১৫৪৪ জন নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
এছাড়া অজ্ঞাতনামা অনেক নেতা-কর্মীকে ওই মামলায় আসামি করা হয়েছে।
অন্যদিকে, রাজধানীর নয়াপল্টনে ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের পর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত ১৪ দিনে রাজধানী থেকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ বিভিন্ন বিরোধী দলের ১ হাজার ৮১৩ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র জানায়, রাজধানীর বিভিন্ন থানায় সহিংসতা, নাশকতা, মারধর ও পুলিশ সদস্যদের হত্যা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মোট ১৩১টি মামলা করা হয়েছে।
তবে বিএনপি দাবি করেছে, ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে মোট ২৩ হাজার ৪৬০ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এ সময় একজন সাংবাদিকসহ ২৬ জন নিহত এবং ৬ হাজার ৫৭৩ জন আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে বিএনপি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পরিসংখ্যান বলছে, ২৮ অক্টোবর থেকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত ৬৪টি বাস পোড়ানোর ঘটনায় নগরীর বিভিন্ন থানায় ৬৪টি মামলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে প্রতিবেশী দেশ হস্তক্ষেপ করছে: রিজভী
এ ছাড়া ওই সময় নাশকতার চেষ্টার অভিযোগে জনগণ ও পুলিশের হাতে ১২ জনকে আটক করা হয়। তাদের কেউ কেউ যাত্রীবাহী গাড়িতে উঠে বা নিচ থেকে আগুন ধরিয়ে দেয়।
গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে পেট্রোল, গান পাউডার, তুলা, পুরাতন কাপড় ইত্যাদি জব্দ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গত ২৯ অক্টোবর ভোরে রাজধানীর ডেমরার পশ্চিম দেল্লা পাকা রোডে দুর্বৃত্তরা অসীম পরিবহনের একটি বাসে আগুন দিলে নাঈম (২২) নামে এক বাসের হেলপারের মৃত্যু হয় এবং রবিউল ইসলাম নামে আরেক হেলপার দগ্ধ হন। তারা পার্ক করা বাসের ভেতরে ঘুমিয়ে ছিলেন।
শুধু রাজধানীতেই নয়, সারাদেশে গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
২৮ অক্টোবর থেকে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্স (এফএসসিডি) সদর দপ্তরের কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, ২৮৯টি অগ্নিসংযোগের (বেশ কয়েকটি স্থাপনা ও যানবাহনে) ঘটনা ঘটেছে।
এফএসসিডি সদর দপ্তরের মিডিয়া সেল সূত্র জানায়, এ সময় রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে মোট ২৮৫টি যানবাহন ও ১৫টি বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগুন দেওয়া গাড়িগুলোর মধ্যে রয়েছে ১৮০টি বাস, ৪৫টি ট্রাক, ২৩টি কাভার্ড ভ্যান, ৮টি মোটরসাইকেল এবং ২৯টি অন্যান্য যানবাহন, যার মধ্যে কয়েকটি ট্রেনের বগিও রয়েছে।
গত ১৯ ডিসেম্বর ভোরে রাজধানীর তেজগাঁও রেলস্টেশন এলাকায় ঢাকাগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে দুবৃত্তদের অগ্নিসংযোগে এক শিশুসহ কমপক্ষে চারজন নিহত হয়।
বিএনপি ও সমমনা বিরোধী দলের ডাকা দেশব্যাপী হরতালের মাত্র এক ঘণ্টা আগে এ ঘটনা ঘটে।
এ ছাড়া ২৩ নভেম্বর রাত সাড়ে ৯টার দিকে সিলেট রেলস্টেশনে পার্কিং করা আন্তঃনগর উপবন এক্সপ্রেসের একটি কোচে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা আগুন দেয়।
সিলেট রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার নুরুল ইসলাম জানান, ‘উপবন এক্সপ্রেস’ ট্রেনের এসি চেয়ার (বি) বগিতে আগুন লেগে কোচের অন্তত ২৩টি আসন পুড়ে গেছে।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আধা ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি।
আরও পড়ুন: শনিবার পর্যন্ত চলবে বিএনপির গণসংযোগ কর্মসূচি
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে ৭ জানুয়ারি সাধারণ ছুটি ঘোষণা সরকারের
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আগামী ৭ জানুয়ারি সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার।
বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সোনিয়া হাসানের সই করা একটি গ্যাজেট প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মচারী এবং সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুবিধার্থে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত ২৪ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন (ইসি) ৭ জানুয়ারি সাধারণ ছুটি ঘোষণা করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করে।
গত ১৫ নভেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল ঘোষণা করেন, আগামী ৭ জানুয়ারি দেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
সংবিধান অনুযায়ী, বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারি।
আরও পড়ুন: ৪ জানুয়ারি নির্বাচন নিয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের ব্রিফ করবে ইসি
৭ জানুয়ারি সাধারণ ছুটি ঘোষণা করতে চিঠি দিয়েছে ইসি
নির্বাচনের নামে প্রহসনমূলক খেলা বানচাল করতে জনগণের প্রতি আহ্বান বিএনপির
নির্বাচনের নামে আওয়ামী লীগ সরকারের ‘খেলা’র চেষ্টা নস্যাৎ করতে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খান।
বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লিফলেট বিতরণকালে তিনি বলেন, ‘আমরা দেশের জনগণের কাছে আগামী নির্বাচন বর্জন করার জন্য আবেদন করছি, কারণ এই নির্বাচনে আপনাদের পছন্দের প্রার্থী বাছাই করার সুযোগ নেই।’
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচন একটি অবৈধ, দুর্নীতিবাজ ও লুটেরা সরকারের মেয়াদ বাড়ানোর অপচেষ্টা মাত্র। “আপনারা (জনগণ) তাদের (সরকার) 'না' বলুন। আপনারা তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ান এবং নির্বাচনের নামে এই খেলা বানচাল করুন।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল বলেন, ‘জনগণের সব অধিকার কেড়ে নেওয়া সরকার ডামি নির্বাচন এবং গণতন্ত্রের নামে প্রহসনমূলক খেলা চালিয়ে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বিরোধী দলগুলো এই নির্বাচন বর্জন করায় দেশের জনগণের মতামত প্রকাশের কোনো সুযোগ নেই। যে নির্বাচনে সরকারবিরোধী কোনো প্রার্থী নেই সেখানে ভোট দেওয়ার কোনো গুরুত্ব ও সুযোগ নেই। সেজন্য দেশের জনগণ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় এই নির্বাচন বর্জন করবে।’
আরও পড়ুন: শনিবার পর্যন্ত চলবে বিএনপির গণসংযোগ কর্মসূচি
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের চলমান আন্দোলনে যোগ দিতে এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লড়াইয়ে জয়ী হওয়ার জন্য দেশবাসীকে আবারও আহ্বান জানান এই বিএনপি নেতা।
তিনি বলেন, আসুন গণতন্ত্রের সংগ্রামে জয়ী হই এবং এমন একটি বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করি যে বাংলাদেশ হবে আমাদের বাংলাদেশ, জনগণের বাংলাদেশ।
দলের তিন দিনব্যাপী গণসংযোগ কর্মসূচির শেষ দিনে নজরুল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে পথচারীদের মধ্যে নির্বাচন বর্জনের আহ্বান সম্বলিত লিফলেট বিতরণ করেন।
একতরফা জাতীয় নির্বাচন বয়কটের পক্ষে জনসমর্থন আদায়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় লিফলেট বিতরণ করেছেন বিএনপি ও সমমনা বিরোধী দলের নেতারা।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার সম্পর্কে তার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে নজরুল বলেন, নির্বাচনের নামে একটি খেলার অংশ হিসেবে ক্ষমতাসীন দল বুধবার তাদের ইশতেহার ঘোষণা করেছে। ‘এতে অনেক লম্বা লম্বা কথা আছে। অথচ গতকালও (বুধবার) সারা বিশ্বের শহরের তালিকায় সবচেয়ে খারাপ বায়ুর মানের তালিকায় শীর্ষে ছিল ঢাকা শহর। এভাবেই তারা হয়ে উঠেছেন উন্নয়নের রোল মডেল।’
আরও পড়ুন: ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিতে সরকারের 'মরিয়া' চেষ্টায় সাড়া মিলছে না: রিজভী
আওয়ামী লীগের অবৈধ ক্ষমতা বাড়াতে ডামি নির্বাচনে অংশ নেবেন না: বিএনপি
এখন ব্যবস্থা না নেওয়া গেলেও নির্বাচনের পর কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে: কাদের
যাদের সম্পদ অস্বাভাবিক বেড়েছে তাদের বিরুদ্ধে নির্বাচনের পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থীদের হলফনামায় অসঙ্গতির অভিযোগের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, ‘সরকার শুধু রুটিন ওয়ার্ক পরিচালনা করায় এই মুহূর্তে ব্যবস্থা নেওয়া না গেলেও নির্বাচনের পর কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) বিকালে ধানমন্ডিতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ মন্তব্য করেন।
টিআইবি তাদের প্রতিবেদনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে প্রকাশ করা প্রার্থীদের আয়, সম্পদ, ঋণ ও ঋণের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
টিআইবি একজন মন্ত্রীকে অভিযুক্ত করেছে, যার নাম প্রকাশ করা হয়নি।
আরও পড়ুন: ভয়ভীতি সত্ত্বেও আসন্ন নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি সন্তোষজনক হবে: কাদের
টিআইবি জানিয়েছে, সরকারের মন্ত্রিসভার অন্তত একজন সদস্যের নিজ নামে বিদেশে একাধিক কোম্পানি থাকার প্রমাণ রয়েছে, যার প্রতিফলন হলফনামায় নেই। মন্ত্রী ও তার স্ত্রীর মালিকানাধীন ছয়টি কোম্পানি এখনও বিদেশে সক্রিয়ভাবে রিয়েল এস্টেট ব্যবসা পরিচালনা করছেন। সেসব কোম্পানির মোট সম্পদ মূল্য প্রায় ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকা।
বিএনপির আন্দোলন প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, দলটি জনসমর্থন হারিয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘যদি (বিএনপির আন্দোলনের প্রতি) জনসমর্থন থাকত, তাহলে কোনো দলকেই সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য লুকিয়ে হামলা চালাতে হতো না।’
বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় সহিংসতার ঘটনাকে ‘বিচ্ছিন্ন’ উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, এটা স্বাভাবিক। কোনো প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করবে না।
তিনি বলেন, প্রার্থীরা ভোটারদের বুঝিয়ে ভোট কেন্দ্রে নিয়ে আসতে চান।
আরও পড়ুন: নির্বাচনে বাধা দানকারীদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান কাদেরের
স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার লড়াই এটি: ওবায়দুল কাদের
এমন নির্বাচন হবে যা দেখে দুনিয়ার সবাই শিখবে: মোমেন
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, তারা ‘অবাধ, সুষ্ঠু, অহিংস ও স্বচ্ছ’ নির্বাচন দেখতে চান এবং শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে 'স্মার্ট বাংলাদেশ' গড়ার লক্ষ্য অর্জন করতে চান।
বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) রাতে নিজ বাসভবনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বিশেষজ্ঞদের দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই সারা বিশ্ব থেকে সবাই এসে দেখুক। এমন নির্বাচন হবে যা দেখে দুনিয়ার সবাই শিখবে।’
মোমেন বলেন, ‘সফররত ইইউ দল শুধু আমার কথা শুনেছে। কারণ তারা কয়েকটি বিষয় জানতে চেয়েছিলেন, তবে নির্বাচন সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেননি।’
আরও পড়ুন: গণতন্ত্রে নির্বাচনের বিকল্প নেই: ড. মোমেন
তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ এবং অত্যন্ত শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন রয়েছে। যা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত পদক্ষেপ নিচ্ছে।
ইইউ দলের কাছে বিএনপির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সরকার রাজনৈতিক কারণে কাউকে গ্রেপ্তার করেনি, বরং 'সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে' জড়িতদের গ্রেপ্তার করেছে।
তিনি সিসিটিভি ফুটেজ এবং বিএনপির কিছু সমর্থকদের দেওয়া বিবৃতি টেনে উল্লেখ করেন, কারা তাদের অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালানোর নির্দেশ দিয়েছে।
আরও পড়ুন: শুধু দেশ নয়, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্যেও শেখ হাসিনাকে প্রয়োজন: ড. মোমেন
মোমেন বলেন, ‘রাজনৈতিক কারণে একজনকেও গ্রেপ্তার করা হয়নি। শুধু অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা সন্ত্রাস সহ্য করতে পারি না।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কিছু বড় দেশ চায় বাংলাদেশ তাদের কাছ থেকে জিনিসপত্র কিনুক, কিন্তু বাংলাদেশ জনস্বার্থ দেখে।
তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমরা শুধু দেখি আমাদের দেশের মানুষের মঙ্গল যেটাতে হবে সেটা করি। তারা জোর করে, আমাদের কাছে বিক্রি করতে চায়, আমরা কিনি না। সেজন্য তারা আমাদের ওপর কিছুটা অসন্তুষ্ট। কিন্তু আমরা নীতির ওপর আছি। নীতিতে থাকলে অন্যরা শ্রদ্ধা করে।’
তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার 'সোনার বাংলা' ও 'স্মার্ট বাংলাদেশ' গড়ার আকাঙ্ক্ষার কথাও তুলে ধরেন।
মোমেন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের কথা উল্লেখ করে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা শান্তি চাই। আমরা স্থিতিশীলতা চাই। আমরা সন্ত্রাস চাই না। আমরা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বাকস্বাধীনতা চাই। আমরা গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা চাই। আমরা আরও চাকরির সুযোগ চাই।’
আরও পড়ুন: এই বড়দিনে ফিলিস্তিনি খ্রিস্টানদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছি: মোমেন
গণতন্ত্রী পার্টির ৮ প্রার্থীকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার নির্দেশ
গণতন্ত্রী পার্টির ৮ প্রার্থীকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালত।
এ বিষয়ে করা আবেদনের শুনানি করে মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এ আদেশ দেন।
আদালতে গণতন্ত্রী পার্টির প্রার্থীদের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির। ইসির পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আশফাকুর রহমান।
এর আগে, গত ১২ ডিসেম্বর গণতন্ত্রী পার্টির সব প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করে ইসি। ইসির উপসচিব মো. মাহবুব আলম শাহ সই করা চিঠিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানো হয়।
আরও পড়ুন: নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে আদালতে নিক্সন চৌধুরীর হাজিরা
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল গণতন্ত্রী পার্টির ১২ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
১২ ডিসেম্বর ইসির চিঠিতে বলা হয়, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পৃথকভাবে কমিটির নাম দাখিল করেছে। এগুলো নামঞ্জুর করে নির্বাচন কমিশন। সুতরাং গণতন্ত্রী পার্টির নামে রাজনৈতিক দলের অনুমোদিত কোনও কমিটি বিদ্যমান নেই। এর পরিপ্রেক্ষিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ দলের প্রার্থীদের জমা দেওয়া মনোনয়নপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়।
এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেন গণতন্ত্রী পার্টির প্রার্থীরা। এর শুনানি নিয়ে প্রার্থীদের নির্বাচনে সুযোগ দেওয়ার নিদেশ দেন হাইকোর্ট। পরে ওই আদেশের বিরুদ্ধে চেম্বার আদালতে আবেদন করে ইসি। সেখানেও প্রার্থীদের পক্ষে রায় গেল।
চেম্বার জজ আদালতের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে অবিলম্বে ৭ই জানুয়ারির নির্বাচনকে ভোট উৎসবে পরিণত করে কবুতর প্রতীকের পক্ষে নির্বাচনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়েছেন গণতন্ত্রী পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা শহীদুল্লাহ্ সিকদার ও সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন।
নেতৃবৃন্দ আদালতের রায়ের সন্তোষ প্রকাশ করে গণতন্ত্রী পার্টির মনোনীত প্রার্থীদেরকে ও বাকী আসনে কেন্দ্রীয় ১৪ দল মনোনীত প্রার্থীদের বিজয়ী করার আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: আদালত অবমাননা: ব্যাখ্যা জানাতে সুরক্ষা সচিবসহ কারা মহাপরিদর্শককে আপিল বিভাগে তলব
জামায়াতে ইসলামীর কর্মসূচিতে নিষেধাজ্ঞা ও আদালত অবমাননার অভিযোগের শুনানি ৬ নভেম্বর
ভয়ভীতি সত্ত্বেও আসন্ন নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি সন্তোষজনক হবে: কাদের
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি সন্তোষজনক হবে।
তিনি বলেন, ‘ভয় আছে, তবুও আমি বলছি ভোটারদের ভোটদান সন্তোষজনক হবে।’
মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ অফিসে নির্বাচনের বিষয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ)নির্বাচন বিশেষজ্ঞ দলের বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফিং করার সময় কাদের এসব কথা বলেন।
মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ অফিসে দুই সদস্যের ইইউ দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন ডেভিড ওয়ার্ন। আর আওয়ামী লীগের পক্ষে নেতৃত্ব দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইইউ দল নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল। আমরা বিএনপির নির্বাচনের পরাজয়ের সহিংসতার কথা বলেছি। বিএনপি সহিংসতা অবলম্বন করে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জবাব দিচ্ছে।’
স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে প্রচারের জন্য সদস্যপদ বহিষ্কার ও স্থগিতাদেশ সম্পর্কে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘দলের যে কেউ একজন স্বাধীন প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালাতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখানে কিছু ভুল নেই। তাকে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। জেলা-উপজেলা কমিটির কাউকে বহিষ্কার বা সদস্যপদ স্থগিত করার অধিকার নেই। তারা কেবল কেন্দ্রে সুপারিশ পাঠাতে পারে।’
আরও পড়ুন: নির্বাচনে বাধা দানকারীদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান কাদেরের
স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার লড়াই এটি: ওবায়দুল কাদের
কোনো ‘অর্থহীন’ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার আগ্রহ মানুষের নেই: বিএনপি
বিএনপির জে্যষ্ঠ নেতা নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ‘অর্থহীন’ নির্বাচনে দেশের জনগণের ভোট দেওয়ার কোনো আগ্রহ নেই।
তিনি প্রশ্ন করেছেন, 'একতরফা' নির্বাচনে নাকি জনসাধারণের সমর্থন রয়েছে, তাহলে কেন কাউন্সিলরদের ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) মতিঝিল থেকে দিলকুশা রোডের পথচারীদের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করার সময় নজরুল সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
এসময় তিনি বলেন, ‘মানুষ ভোট দিতে আগ্রহী নয়, কারণ তারা জানে এটি একটি অর্থহীন নির্বাচন ... এটি কোনো প্রকৃত ভোট বা নির্বাচন নয়।’
তিনি ভোটারদের ৭ জানুয়ারি কোনোভাবেই ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘জনগণের জীবন ও জীবিকা নিয়ে খেলা করছে এমন সরকারকে সহযোগিতা করবেন না।’
আরও পড়ুন: মঙ্গলবার থেকে ৩ দিন গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল বলেছেন, কেন মানুষকে ভোটকেন্দ্রে আনার জন্য ডামি প্রার্থীর প্রয়োজন। ‘সরকারের বিভিন্ন প্রোগ্রাম এবং সুবিধাগুলোর সুবিধাভোগীদের কেন ভোট না দিলে তাদের কার্ড বাতিল করার হুমকি দেওয়া হচ্ছে?
তিনি বলেন, অধিকাংশ মানুষ ইতোমধ্যে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে এবং তারা ভোটদানও বর্জন করবে।
দেশের অর্থনীতি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যখন মারাত্মক সংকটে পড়েছে, তখন কয়েক হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে এ জাতীয় অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের ন্যায্যতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন এই বিএনপি নেতা।
তিনি বলেন, ‘আমরা এই অবৈধ নির্বাচনের ব্যয় বন্ধ করার জন্য সরকারকে অনুরোধ করছি ... জনগণ এমন নির্বাচন চায় না যার সব প্রার্থীই আওয়ামী লীগের। আমরা এ ধরনের নির্বাচন চাই না।’
এই বিএনপি নেতা বলেন, তাদের দল এমন একটি নির্বাচন চায় যেখানে মানুষ নির্দ্বিধায় ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে এবং নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে।
তাদের তিন দিনের দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে নজরুলসহ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের কিছু নেতা-কর্মী গণসংযোগ করেন এবং মতিঝিল অঞ্চলের সোনালি ব্যাংকের নিকটবর্তী পথচারীদের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করেন।
আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার কেবিনে অজ্ঞাত যুবক ঢোকার চেষ্টা করেছে: রিজভী
বিএনপি-সমমনা বিরোধী দলের ডাকা দ্বাদশ অবরোধ চলছে