কৃষি
নকল সন্দেহে বগুড়ায় ৭ ট্রাক টিএসপি সার জব্দ
গুদামজাত করার আগে নকল সন্দেহে বাংলাদেশ রসায়ন শিল্প সংস্থার (বিসিআইসি) সাত ট্রাক সার জব্দ করেছে বগুড়া বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের (বাফা) কর্তৃপক্ষ। ট্রাকগুলোতে ৯৮ হাজার কেজি সার রয়েছে বলে জানা গেছে।
বগুড়া বাফার গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল জানান, সোমবার কয়েক বস্তা সারের মান পরীক্ষার পর সন্দেহ হলে সার খালাস না করে সার ভর্তি ট্রাকগুলো জব্দ করা হয়।
বাফা জানায়, গত রবিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গার টিএসপি সার কারখানা থেকে সাতটি ট্রাক বগুড়ায় পৌঁছায়। প্রতিটি ট্রাকে ২৮০ বস্তা সার রয়েছে। পরে সোমবার সকালে ২৪ বস্তা সার পরীক্ষা করে নকল ও ভেজাল বলে মনে হয় কর্তৃপক্ষ ট্রাকগুলো জব্দ করে।
আরও পড়ুন: ৯৯৯-এ কল, বিপুল পরিমাণ নকল সারসহ কারখানার সন্ধান
মোস্তফা কামাল বলেন, বিষয়টি চট্টগ্রাম টিএসপি সার কারখানা কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। মঙ্গলবার সারগুলো ভালোভাবে পরীক্ষার জন্য একটি টিম আসবে। সারগুলোর পরিবহন করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স এমএইচআর করপোরেশন।
ট্রাকচালক আব্দুল আউয়াল বলেন, শনিবার পতেঙ্গার টিএসপি সার কারখানা থেকে সাতটি ট্রাকে সার লোড করে রবিবার রাত ৩টার দিকে বগুড়া বাফার গুদামে পৌঁছাই। সকালে কর্মকর্তারা নকল সন্দেহে ট্রাকগুলো জব্দ করে।
আরও পড়ুন: ইউরিয়া সারের দাম কেজিতে ৬ টাকা বাড়ল: কৃষি মন্ত্রণালয়
দেশে কৃষকদের জন্য সার উৎপাদনের পাশাপাশি ঘাটতি পূরণে সার আমদানি করে থাকে বিসিআইসি। দেশের ২৪টি বাফার গুদামের একটি বগুড়ার পুরান বগুড়া তিনমাথা এলাকায় অবস্থিত। বিদেশ থেকে আমদানি করা সার এখানে সংরক্ষণ করা হয়। বগুড়ার সার আসে সাধারণত সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি, খুলনা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন নৌ-বন্দর থেকে। বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সার পরিবহন করা হয়। নিয়ম অনুয়ায়ী, পরিবহন ঠিকাদারের মাধ্যমে গুদামে আসা সার সম্পূর্ণ বুঝিয়ে দিলে গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাদের (ঠিকাদার) ম্যাটেরিয়াল রিসিভ রিপোর্ট দেন। সেই রিপোর্ট দেখিয়ে পরিবহন ঠিকাদাররা তাদের প্রাপ্ত টাকা বুঝে নেন। এরপর বগুড়া গুদাম থেকে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সার সরবরাহ করা হয়।
পেঁয়াজ সংরক্ষণে আলোর মুখ দেখাচ্ছে ‘এয়ার ফ্লো মেশিন’
দেশে বছরে ৩৩ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হলেও সংরক্ষণের অভাবে এক-চতুর্থাংশই নষ্ট হয়ে যায়। এই কারণে স্থানীয় চাষিদের ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। পেঁয়াজ নিয়ে এই সংকট মোকাবিলায় আশার আলো দেখাচ্ছে ‘এয়ার ফ্লো মেশিন’।
ইতোমধ্যেই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষকদের কাছে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে পেঁয়াজের এসি খ্যাত এই মেশিন। আর সুফল মেলায় খুশি সংশ্লিষ্টরা।
পেঁয়াজের বাজারের অস্থিরতার জেরে নেয়া পদক্ষেপের সুফল পেয়েছে বাংলাদেশ। গত কয়েকবছর ধরে ক্রমাগত উৎপাদন বাড়ায় যুক্তরাষ্ট্রকেও ছাড়িয়ে এখন বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী বাংলাদেশ। এরপরও ঘাটতি মেটাতে আমদানি করতে হচ্ছে বছর পর বছর। আর আমদানি কারণে বাজারে এর প্রভাব পড়ে। আবার দাম পড়ে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত হন কৃষক। তবে ঘাটতির অন্যতম কারণে হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে পেঁয়াজের অপচয় বা নষ্ট হওয়াকে।
জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, সংরক্ষণ ব্যবস্থা না থাকায় উৎপাদনের এক-চতুর্থাংশই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমদানির কারণে দেশের অর্থ যেমন অপচয় হচ্ছে তেমনি ভালো দাম পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে চাষিরা।
আরও পড়ুন: বৃষ্টি অভাবে খুলনায় ফসল আবাদে নদীর পানি ব্যবহার
সনাতন পদ্ধতিতে বাঁশের মাচায় পেঁয়াজ সংরক্ষণ হলেও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, অধিক তাপমাত্রায় ও অতিরিক্ত জলীয় বাষ্পে পচন ধরে যায়। এই প্রেক্ষাপটে উদ্ভাবন হলো ‘বায়ু প্রবাহ যন্ত্রের মাধ্যমে পেঁয়াজ সংরক্ষণ’প্রযুক্তি। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় সমন্বিত পানি সম্পদ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প-দ্বিতীয় পর্যায়ের পরামর্শক দলের উদ্ভাবিত ‘এয়ার ফ্লো মেশিন’ব্যবহৃত হচ্ছে ফরিদপুরের বিভিন্ন গ্রামে। এই মেশিন স্থাপনে মাত্র ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ পড়ে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ফরিদপুরের সদর ও সালথা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের বেশ কিছু পেঁয়াজ চাষিকে ‘এয়ার ফ্লো মেশিন’ পদ্ধতিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে দেখা গেছে। ছাদযুক্ত টিনের কিংবা ইটের ঘরের মেঝেতে ইট দিয়ে মাচা তৈরির পর ছিদ্রযুক্ত মাদুর বা বানা দিয়ে ঢেকে তার মধ্যে সাড়ে ছয় ফুট লম্বা ও ১৪ ইঞ্চি চওড়া একটি ভার্টিকাল সিলিন্ডার বসানো হয়েছে। এক হর্স পাওয়ারের একটি বৈদ্যুতিক মোটরযুক্ত করে পাখার সাহায্যে উপর থেকে বাতাস টেনে নিয়ে নামিয়ে নেয়ার পর আটকে থাকা বাতাস পেঁয়াজের মধ্যে দিয়ে বের হচ্ছে। ছোট্ট একটি কক্ষে এভাবে বাতাস প্রবাহ করে মজুদকৃত পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
বৃষ্টি অভাবে খুলনায় ফসল আবাদে নদীর পানি ব্যবহার
বর্ষার মৌসুমে এবার বৃষ্টির দেখা নেই। তাই খুলনায় বীজতলা কৃষি জমিতে নদীর পানি ব্যবহার করার কথা জানিয়েছেন খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
খুলনা আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, এই মাসের শেষ দিকে হতে থেমে থেমে মাঝারী বা ছিটে ফোটা বৃষ্টির সম্ভবনা রয়েছে। অর্থাৎ সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম বা মাঝামাঝি সময়ে নিম্নচাপ হতে পারে, সেই সময়ে ভারী বৃষ্টি হতে পারে এমনটি আশা করছেন আবহাওয়া অফিস।
তবে ভরা মৌসুমে কাঙ্খিত বৃষ্টির দেখা না পেয়ে হতাশায় কৃষকসহ মৎস চাষিরা। সেই সঙ্গে গরমে ভোগান্তি পড়েছে সাধারণ মানুষ। তবে সব থেকে বেশি বিপাকে রয়েছে পাট চাষি, তারা পাট জাক দিতে পারছে না।
মৎস ঘেরে পানির অভাবে মাছ বড় হচ্ছে না। নিয়মিত খাবার পেলেও বর্ষার পানির সঙ্গে মাছের বড় হওয়ার একটি যোগ আছে বলে জানান মৎস চাষিরা।
তাছাড়া নলকূপ থেকে পানি উঠিয়ে মৎস খামারে দিতে হচ্ছে। এতে করে তাদের মাছ চাষের খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: বৃষ্টিহীন, তীব্র তাপদাহে রোপা আমন ও সবজি নিয়ে বিপাকে নওগাঁর কৃষকরা
তাছাড়া জেলার আমন চাষসহ অন্যান্য ফসলি জমি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষকেরা। তবে একেবারে আশা না ছেড়ে বৃষ্টি অপেক্ষার প্রহর গুণছেন কৃষকেরা।
এদিকে, কৃষি কর্মকর্তারা আশাঙ্কা করছেন যে এমন উষ্ণ আবহাওয়া যদি চলমান থাকে আর ছিটে ফোঁটা বৃষ্টি হয়। তাহলে কৃষি উৎপাদন মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখিন হতে পারে।
খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান বলেন, এ বছর বৃষ্টির দেখা নেই এটা এখন বৈশ্বিক সমস্যা। জুলাই-আগস্ট মাসে মোট ৬শ’মিলিমিটারের মত বৃষ্টিপাত হয়েছে। যে কারণে আমরা ফসলের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে শঙ্কিত আছি। তবে এর বিকল্প হিসেবে আমরা নদীর পানি ব্যবহার করবো। ইতোমধ্যে আমরা পানি পরীক্ষা করেছি। খুলনা কয়রা ও দাকোপ উপজেলা ছাড়া অন্যান্য নদীর পানি ব্যবহার উপযোগী।
তিনি বলেন, এ অঞ্চলের নদীর পানি ২ ডিএস এর নিচে আছে তবে ৪ ডিএস ওপরে থাকলে অতিরিক্ত পানি লবণাক্ত থাকে। যে কারণে আমরা বিকল্প নদীর পানি ব্যবহার শুরু করেছি। লক্ষ্য হিসেবে পাঁচ হাজার হেক্টর বীজতলার ফসলী আবাদের জমিতে পানি দেয়া হবে। এর মধ্যে ১০৯ হেক্টর জমিতে নদীর পানি সুইচ গেটের মাধ্যমে খালে ও বিলে পাঠিয়ে দিচ্ছি। এভাবে পানির সঙ্কট মোকাবিলা করতে হবে। তবে কয়রা ও দাকোপে খাল ও বিলের পানি ব্যবহার ছাড়া কোন উপায় দেখছি না। এছাড়া মাটির তলোদেশের পানি বেশি লবণাক্তের কারণে এই বিকল্প উপায় ব্যবহার করছি। তবে আমরা আশাবাদী লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে পারবো।
আরও পড়ুন: বিজয়নগরে বছরে ৫০ কোটি টাকার ফল বিক্রি
এ ব্যাপারে খুলনা আবহাওয়া অধিদপ্তরের আঞ্চলিক আবহাওয়া কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, এ মাসে শেষের দিকে বৃষ্টির সম্ভবনা আছে। এছাড়া ছিটে ফোটা দুই এক পশলা বৃষ্টি হতে পারে। তবে আকাশ এখন মেঘমুক্ত। সেপ্টেম্বর মাসে নিম্নচাপ হলে মাঝারী বা ভারী বৃষ্টি হওয়ার আশাঙ্কা আছে। মূলত মৌসুমী বায়ু এখনও সক্রিয় নেই যে কারণে বৃষ্টি হচ্ছে না।
বিজয়নগরে বছরে ৫০ কোটি টাকার ফল বিক্রি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমান্তবর্তী উপজেলার বিজয়নগর ফলের স্বর্গ রাজ্য নামে পরিচিত। জেলা সদর থেকে দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। বর্তমানে এখানে দেশি ও বিদেশি অনেক ধরনের ফলেরই বাণিজ্যিক চাষ হচ্ছে। এছাড়া এই উপজেলায় প্রতি বছর প্রায় ৫০ কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের ফল বিক্রয় হয় বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, উৎপাদিত দেশি ফলের মধ্যে রয়েছে লিচু, কাঁঠাল, আম, জাম ও লটকন। বিদেশি ফলের মধ্যে রয়েছে মাল্টা কমলা, আপেল, আঙ্গুর, ড্রাগন।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর বিজয়নগরে ৪১৪ হেক্টর জমিতে লিচু, ৩১৫ হেক্টর জমিতে কাঁঠাল ও ৬৫ হেক্টর জমিতে মাল্টার চাষ করা হয়েছিল। বর্তমানে প্রায় ১৮ হেক্টর জমিতে লটকনের চাষ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এই লকটন বিক্রিও শুরু হয়েছে। প্রতি কেজি লটকন পাইকারিভাবে ৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
আরও পড়ুন: বৃষ্টিহীন, তীব্র তাপদাহে রোপা আমন ও সবজি নিয়ে বিপাকে নওগাঁর কৃষকরা
সংশ্লিষ্টরা জানায়, চলতি বছর বিজয়নগরে প্রায় কোটি টাকার লটকন বিক্রি করার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় লটকনের চাষ নিয়ে চাষিদের মধ্যেও আগ্রহ বাড়ছে।
কৃষি অফিস জানায়, লটকনের রয়েছে পুষ্টি ও ঔষধি গুণ। ভিটামিন ‘সি’সমৃদ্ধ এই ফল প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় রাখা যায়। ১০০ গ্রাম পাকা লটকনে আছে খাদ্যশক্তি ৯১ কিলোক্যালোরি। এছাড়া আমিষ আছে এক দশমিক ৪২ গ্রাম, চর্বি শূন্য দশমিক ৪৫ গ্রাম, ভিটামিন-সি ৫৫ মিলিগ্রাম। লটকনের বৈজ্ঞানিক নাম ব্যাকারিয়াস্যাপাডিয়া। ইংরেজিতে লটকনকে বলা হয় বার্মিজ গ্রেপ। বাংলাদেশে লটকন এলাকাভেদে বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন-হাড় ফাটা, ভুবি, কানাইজু, লটকা, লটকাউ, লোটকা ইত্যাদি।
জানা গেছে, এই বছর বিজয়নগরে প্রায় ১০ কোটি টাকার বেশি কাঁঠাল, প্রায় ১৫ কোটি টাকার লিচু ও প্রায় ১৩ কোটি টাকার মাল্টা বিক্রি করা হয়েছে। চলতি বছর এক কোটি টাকার লটকন বিক্রি করা হবে বলে আশাবাদ করা যাচ্ছে। বিজয়নগর উপজেলার ১৮ হেক্টর লটকন বাগানের মধ্যে প্রায় ১০ হেক্টর লটকনের বাগান রয়েছে উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নে।
এই ইউনিয়নের বামুটিয়া গ্রামের লকটন চাষি তোফাজ্জল হোসেন জানান, তার বাগানে মাল্টা, লটকন, কমলা, কয়েক জাতের আম, লিচু, পেঁপে, কাঁঠাল, ড্রাগন ও সৌদি আরবের খেজুর গাছ রয়েছে। পৃথিবীর সবচেয়ে দামি আম ‘মিয়াজাকি’ ধরে আছে তার বাগানে। মিয়াজাকি আমকে বাংলাদেশে সূর্যডিম আম হিসেবে পরিচিত।
বৃষ্টিহীন, তীব্র তাপদাহে রোপা আমন ও সবজি নিয়ে বিপাকে নওগাঁর কৃষকরা
সীমান্ত জেলা নওগাঁতে গত দেড় মাস ধরে বৃষ্টির দেখা মিলছে না। ফলে চরমভাবে রোপা আমন ধান চাষ ব্যাহত হচ্ছে। অতিরিক্ত তাপদাহে শুধু ধানই নয়, সবজির খেতও পুড়ছে। এতে করে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কদিন আগেই আমন ধান রোপন করা হয়েছিল। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে তা মরতে বসেছে। জমির মাটি ফেটে চৌচির এবং নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বীজতলা। নওগাঁর প্রতিটি মাঠের চিত্রই একইরকম। ধানের পাশাপাশি বিভিন্ন সবজির খেতও নষ্ট হতে বসেছে।
নওগাঁ সাপাহার সদর উপজেলার কৃষক কুদ্দুস আলী জানান, মাঠজুড়ে যখন ব্যস্ততা থাকার কথা ধান রোপনের। ঠিক এমন সময়ে বসে বসে দিন কাটছে কৃষকদের। সারাদিন অতিরিক্ত রোদে ঘরের বাহিরে বের হওয়ায় কষ্টর হয়ে পড়েছে। এরপর আবার বৃষ্টি নেই প্রায় মাস পার হতে চললো। এভাবে চলতে থাকলে এ মৌসুমের আবাদ অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
আরও পড়ুন: তলিয়ে যাওয়া ফসল নিয়ে হাওরের কৃষকের হাহাকার
তিনি জানান, এই মুহূর্তে কৃষক যদি গভীর নলকূপ থেকে পানি সেচে চাষাবাদ করে, তাহলে অনেক খরচ বেড়েছে যাবে। অতিরিক্ত খরচ করে চাষাবাদ করলে এই ফসল থেকে কৃষকের কিছুই থাকবে না।
নওগাঁ সদর উপজেলার বাইপাস মাঠ এলাকার কৃষক সিরাজুল ইসলাম জানান, অনেক কষ্টে মাঠের পাশে একটি ডোবা থেকে পানি সেচে আড়াই বিঘা জমিতে ধানের চারা রোপণ করেছি। কিন্তু ১৫ দিনের মাথায় রোপণ করা ধান গাছগুলো পুড়ে গেছে, জমির মাটি ফেটে গেছে। অল্প দিনের মধ্য যদি বৃষ্টি না হয় তাহলে এসব ধান আর হবে না। শুধু দুই এক জনের নয়, পুরো মাঠ জুড়ে একই অবস্থা। এই বছর পানির অভাবে অনেক কৃষক বীজতলা তৈরি করতে পারেনি। ফলে ধান রোপণ করা অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
নওগাঁ সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফারহানা নাজনিন জানান, এই সময়ে রোপা আমন চাষ মূলত বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভর করে চাষাবাদ হয়। সেহেতু এক মাসের বেশি সময় ধরে জেলায় বৃষ্টিপাত নেই, ফলে এমন দুর্যোগ মোকাবিলায় এরই মধ্যেই বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে গভীর নলকুপগুলো চালুর বিষয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে।
তবে কিছুটা আশাবাদী আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আরও পড়ুন: অসময়ের বন্যা থেকে ফসল রক্ষায় নতুন প্রকল্প আসছে: পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী
নওগাঁর বদলগাছী আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষক নজরুল ইসলাম জানান, আগামী ১৯ তারিখের পর থেকে বৃষ্টিপাতে সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এই জেলায় কেমন বৃষ্টিপাত হবে সেটা সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না৷ তবে সার্বিকভাবে বৃষ্টির একটা পূর্বাভাস আছে।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এ মৌসুমে নওগাঁ জেলার ১১ উপজেলায় এক লাখ ৯২ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
রপ্তানি বৃদ্ধির মাধ্যমে কৃষিকে আরও উন্নত করতে চাই: কৃষিমন্ত্রী
কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, দেশে খাদ্য নিরাপত্তা একসময় বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। বর্তমান সরকারের আমলে খাদ্য নিরাপত্তায় অভাবনীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে। দুর্যোগেও দেশে এখন খাদ্য সংকট হয় না।শনিবার সকালে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে বাংলাদেশ দূতাবাস বাংলাদেশ ভবনে প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় কৃষিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।তিনি বলেন, দেশের কৃষি অনেক উন্নত হয়েছে, এটিকে আমরা আরও উন্নত করতে চাই। কৃষিপণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধি করতে না পারলে এটি সম্ভব হবে না। কোন ফসলের উৎপাদন একটু বাড়লেই কৃষকেরা ন্যায্যমূল্য পায় না। সেজন্য আমরা কৃষিপণ্যের রপ্তানি বাড়াতে কাজ করছি। রপ্তানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা নিরসনে কাজ চলছে।
আরও পড়ুন: পরিবেশের সঙ্গে অভিযোজনের সক্ষমতা অর্জন করতে হবে: কৃষিমন্ত্রীতিনি বলেন, কৃষিপণ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণে নেদারল্যান্ডস শীর্ষস্থানীয় দেশ, বর্তমানে দ্বিতীয় অবস্থানে। নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে (গ্রিন হাউস, বিরূপ পরিবেশে) ফসল উৎপাদনে বিশ্বের উদাহরণ। নেদারল্যান্ডসের এ অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তিকে আমরা কাজে লাগাতে কাজ করছি।সভায় প্রবাসী ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ থেকে কৃষিপণ্য আনার ক্ষেত্রে নানা সমস্যা তুলে ধরেন।
এর আগে মন্ত্রী দূতাবাস ভবনে বঙ্গবন্ধু লাউঞ্জ পরিদর্শন করেন। এসময় মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ কখনও প্রকৃত অর্থে স্বশাসিত ও স্বাধীন ছিল না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। কিন্তু দেশের স্বাধীনতাবিরোধী, রাজাকার, আলবদর ও মীর জাফরের বংশধরেরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। পাকিস্তানিরা যাঁকে হত্যা করতে সাহস পায় নি, আমাদের সেই মহান নেতা বঙ্গবন্ধুকে এ দেশের বাঙালিরা হত্যা করেছে, যা চরম অকৃতজ্ঞতা ও নৃশংসতার উদাহরণ।তিনি বলেন, মাও সেতুং এবং লেনিনকে সে দেশের মানুষ পরম শ্রদ্ধাভরে ও কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করে। বঙ্গবন্ধু মাও সেতুং ও লেনিনের মতো মহান নেতা। কিন্তু স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি, রাজাকার, আলবদররা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে এবং এখনও এই অপশক্তি বঙ্গবন্ধুর অবদানকে অস্বীকার করে।
আরও পড়ুন: ফল উৎপাদনে বিশ্বে সফলতার উদাহরণ বাংলাদেশ: কৃষিমন্ত্রীমন্ত্রী বলেন, এই স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি এখনও চায় না বাংলাদেশ উন্নত দেশ হোক, পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে যাক।পরে বিকালে কৃষিমন্ত্রী ইস্ট ওয়েস্ট সিডসের প্রতিষ্ঠাতা ও ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ বিজয়ী সিমন গ্রুটসের সঙ্গে বৈঠক করেন।এসময় কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ওয়াহিদা আক্তার, অতিরিক্ত সচিব মো. রুহুল আমিন তালুকদার, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ মো. বখতিয়ার, বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ, মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব রেহানা ইয়াসমিন ও দূতাবাসের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পদ্মা সেতু: বাগেরহাট হবে নতুন অর্থনৈতিক হাব
স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর দক্ষিণের জেলা বাগেরহাটের অর্থনৈতিক দৃশ্যপটে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, জেলার সামগ্রিক অর্থনীতি কৃষি, মৎস্য, পর্যটন এবং মোলা বন্দরের ওপর নির্ভরশীল। পদ্মা সেতু চালু হলে বাগেরহাটে অর্থনীতির চাকা ঘুরবে, কৃষি ও মৎস্য, পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটবে। সাদা সোনা খ্যাত চিংড়ি উৎপাদনের পাশাপাশি রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে। আর সবজিসহ বাগেরহাটের চিংড়ি দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠাতে সহজ হবে।
এই অঞ্চলে এরই মধ্যে ক্ষুদ্র-মাঝারি এবং বড় ধরণের শিল্প কল-কারখানা নির্মাণের আভাস মিলেছে। হাজার হাজার মানুষ কর্মসংস্থান পাবেন এখানে। যা জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। সেই সাথে মানুষের ভাগ্যোর আমূল পরিবর্তন ঘটবে।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু: ফরিদপুরের অর্থনৈতিক দ্বার উন্মোচিত
ইতিহাস-ঐতিহ্য আর পুরাকৃত্তির জেলা বাগেরহাট। ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজ মসজিদ, দেশের দ্বিতীয় সমুন্দ্র বন্দর মোংলার অবস্থান এই জেলায়। পদ্মা সেতু নিয়ে উপকূলের এই জেলার মানুষ নতুন নতুন স্বপ্ন বুনছেন। কলা ও সবিজ বিক্রেতা থেকে শুরু করে সবপর্যায়ের ব্যসায়ীদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে এমন আশায় বুক বেঁধেছেন।
বাগেরহাট জেলা প্রশাসন, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ, পর্যটন বিভাগ, কৃষি,মৎস্য বিভাগ ও ব্যবসায়ীরা মনে করছেন পদ্মা সেতু চালু হলে এই অঞ্চল অর্থনীতির টানিং পয়েন্ট হবে। মোংলা বন্দরের কয়েক গুণ রাজস্ব আয় বাড়বে। একই সঙ্গে বাগেরহাটে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আগমন বাড়বে। সেই সঙ্গে রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে। বাগেরহাটসহ এই অঞ্চলে মিল-কল-কারখানা তৈরি হলে এই অঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
বাগেরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন জানান, পদ্ম সেতু চালু হলে কৃষকরা মধ্যসত্ত্বভোগী ছাড়াই তাদের উৎপাদন করা কৃষিপণ্য সরাসরি ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করতে পারবেন। সেই সঙ্গে বিদেশে চিংড়ি রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে। অর্থনৈতিক প্রবিদ্ধির হার এক দশমকি ২৫ ভাগ বৃদ্ধি পাবে।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান জানান, পদ্মা সেতু বাগেরহাটসহ দক্ষিণাঞ্চলে অর্থনৈতির দার উন্মোচন করবে। এই অঞ্চলে বড় ধরনের কর্মযোগ্য হবে। মোংলা বন্দর, ইপিজেড, বিশ্বঐতিহ্যর অংশ সুন্দরবন এবং ষাটগম্বুজ মসজিদকে কেন্দ্র করে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটবে। এরই মধ্যে পর্যাটন ভিত্তিক ৫০ জন গাইডকে প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের সড়ক ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ মুসা জানান, ঢাকা থেকে যে কোনো বন্দরের চেয়ে এখন মোংলা বন্দর কাছে। পদ্মা সেতু চালু হলে মোংলা বন্দরের অগ্রগতি কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড মোংলা বন্দর থেকে শুরু হবে। সহজ যোগযোগ ব্যবস্থার কারণে বন্দর ব্যবহারকারীরা মোংলা বন্দরের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছেন।
আরও পড়ুন: ভুক্তভোগী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে কাজ করছে পুলিশের সাইবার টিম
বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আজিজুর রহমান জানান, পদ্মা সেতু চালু হলে বাগেরহাটে কৃষিক্ষেত্রে বিল্পব ঘটবে এবং কৃষিভিত্তিক প্রসেসিং জোন গড়ে উঠবে। কৃষি উদ্যাক্তা তৈরি হবে এবং কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে উঠবে। বিভিন্ন সময়ে পদ্মা পাড়ি দিতে ফেরিঘাটে সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। এখন কৃষক নিজেই তার কৃষিপণ্য ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করে দিনে দিনে বাড়ি ফিরতে পারবেন।
উপপরিচালক মো. আজিজুর রহমানের তথ্য মতে, জেলায় বর্তমানে বছরে দুই লাখ ৮৭ হাজার মেট্রিক টন বিভিন্ন সবজি উৎপাদন হয়। যার ৭২ হাজার মেট্রিক টন জেলার বাইরে বিক্রি হয়। পদ্মা সেতু চালু হলে এক লাখ মেট্রিক টন জেলার বাইরে বিক্রি হবে। কৃষি পণ্য উৎপাদনে আরও বেশি আগ্রহী হবেন।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এএসএম রাসেল জানান, পদ্মা সেতু চালু হলে এই অঞ্চলে মাছ প্রসেসিং কারখানা তৈরি হবে। চিংড়িসহ বিভিন্ন মাছ নষ্ট এবং অপচয় কম হবে। সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হলে বাগেরহাটের চিংড়ি টেকনাফ থেকে তেতুলিয় সর্বত্রই হাট-বাজারে বিক্রি হবে। চিংড়ি রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে। সেই সঙ্গে মুনাফা বাড়বে। আর চিংড়ি চাষিরা লাভবান হবেন। মুনাফা পেলে চিংড়ি চাষিরা চিংড়ি চাষের আয়াতন বাড়াবে।
তিনি জানান, গত বছর বাগেরহাটে চিংড়ি, সাদা মাছ, কাঁকড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদন হয়েছে। এই বছরে উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ৯৭ হাজার মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে আগামীতে উৎপাদন এক লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে। গত অর্থ বছরে চিংড়ি রপ্তানি করে প্রায় ২০০ কোটি টাকা আয় হয়েছে। পদ্মা সেতু চালু হলে আগামীতে ১০০ কোটি টাকা আয় বাড়বে বলে তিনি আশাবাদী।
বাগেরহাট ষাটগম্বুজ যাদুঘরের কাস্টোডিয়ান মো. যায়েদ জানান, পদ্মা সেতু চালু হলে বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবন এবং ষাটগম্বুজ মসজিদ দর্শনে দেশ-বিদেশি পর্যটকদের আসা-যাওয়া বেড়ে যাবে। পর্যটকরা বাগেরহাটে এসে বিভিন্ন পর্যটন স্পর্ট দেখে দিনে দিনে আবার ফিরে যেতে পারবেন। গত বছর পাঁচ লাখ পর্যটক ষাটগম্বুজ মসজিদ দেখতে আসেন। ওই বছর পর্যটকদের কাছ থেকে ৫৭ লাখ টাকা আয় হয়েছে। পদ্মা সেতু চালু হলে পর্যটক আসা-যাওয়া বাড়বে এবং সেই সঙ্গে রাজস্ব বাড়বে।
আরও পড়ুন: নিজেদের প্রচেষ্টায় স্বাবলম্বী হচ্ছে শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা
বাগেরহাট চেম্বর অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির সভাপতি শেখ লিয়াকত হোসেন লিটন জানান, পদ্মা সেতুর কারণে বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা এই অঞ্চলে শিল্প কল-কারখানা তৈরি করতে কৃষি জমি ক্রয় করছে। ব্যবসায়ীরা এই অঞ্চলের বিনিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছে। ঢাকা থেকে মোংলা বন্দরের দুরত্ব অন্য বন্দরের চেয়ে কম হওয়ার কারণে বন্দর ব্যবসায়ীরা মোংলা বন্দরে ভিড়বে।
বাগেরহাট আন্তজেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি শেখ নজরুল ইসলাম মন্টু জানান, তারা ইতোমধ্যে বাগেরহাট-ঢাকা রুটে বিলাসবহুল বাস চালানোর উদ্যোগ নিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার (২৫ জুন) সেতুটি উদ্বোধন করবেন। ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হতে কয়েক লাখ মানুষ পদ্মার তীরে যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
বাজেট ২০২২-২৩: কৃষি, খাদ্য ও মৎস খাতে ৩৩,৬৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ
২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে কৃষি, খাদ্য ও মৎস্য খাতে ৩৩ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে যা বিদায়ী অর্থবছর ২০২১-২২ এ ছিল ২৪ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা।
বরাদ্দের ঘোষণা দিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, সরকার মৎস ও মৎস্যজাত পণ্যের গুণগত ও সুরক্ষা মান নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, “আমরা ‘ইলিশ মাছ ব্যবস্থাপনা কর্মপরিকল্পনা’ প্রণয়ন করেছি এবং এর বাস্তবায়ন শুরু করেছি। এই কর্মপরিকল্পনার অধীনে প্রজনন মৌসুমে সমুদ্রে বছরের ৬৫ দিন সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটাবে: কামাল
এছাড়া প্রতি বছর নভেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত জাটকা ধরা নিষিদ্ধ করা হয়। এ জন্য জেলে পরিবারগুলোকে ভালনারাবেল গ্রুপ ফিডিংয়ের (ভিজিএফ) মাধ্যমে সহায়তা প্রদান করা হয়। এভাবে সরকার ইলিশের উৎপাদন দ্বিগুণেরও বেশি বাড়াতে সক্ষম হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে যেখানে ইলিশ উৎপাদন ছিল ২ দশমিক ৯৯ মিলিয়ন মেট্রিক টন ২০২০-২১ অর্থবছরে সেটি বেড়ে ৫ দশমিক ৬৫ লাখ মেট্রিক টন হয়েছে।
প্রায় দুই দশমিক সাত লাখ চিংড়ির খামার এবং ৯ হাজার ৬৫১টি বাণিজ্যিক মাছের খামার মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানির সুবিধার্থে অপারেটিং ট্রেসেবিলিটি সিস্টেমের অংশ হিসাবে নিবন্ধিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাজেট ২০২২-২৩: রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা
আলমেরিয়ার কৃষির মডেল বাংলাদেশে প্রয়োগ করে টেকসই কৃষিভিত্তিক উন্নয়ন সম্ভব: বাণিজ্যমন্ত্রী
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, স্পেনের আলমেরিয়ার কৃষির মডেল বাংলাদেশে প্রয়োগ করে টেকসই কৃষিভিত্তিক উন্নয়ন সফল করা সম্ভব। স্পেনের একসময়ের দরিদ্র প্রদেশ আলমেরিয়ার কৃষির উন্নয়ন বাংলাদেশের জন্য অনুরণীয় হতে পারে।
বাণিজ্যমন্ত্রী মঙ্গলবার স্পেনের বাংলাদেশ দূতাবাসের কমার্সিয়াল উইং এবং স্পেনের আলমেরিয়া চেম্বার অফ কমার্স এর উদ্যোগে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্যগণ এ আলোচনা সভায় অংশ নেন।
তিনি বলেন, স্পেনের আলমেরিয়া প্রদেশ কৃষি খাতকে উন্নত করার জন্য একটি মডেল নির্বাচন করে তা বাস্তবায়ন করে সফল হয়েছে এবং বিশ্বের মধ্যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আলমেরিয়া কৃষির সফলতার বিশ্বের কাছে একটি মডেল।
মন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশের মাটি খুবই উর্বর এবং কৃষির জন্য উপযোগি। কৃষিতে আমাদের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা আলমেরিয়ার কৃষির এ মডেল বাংলাদেশে বাস্তবায়নের মাধ্যমে সফল হতে পারি। কৃষির এ মডেল কিভাবে আলমেরিয়ায় সফলতা পেয়েছে, তা আমরা দেখেছি। এ মডেল বাংলাদেশে বাস্তবায়ন সম্ভব।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ, এ দেশে প্রায় ১৬ কোটি মানুষ রয়েছে। কৃষিতে মানুষের দক্ষতা রয়েছে। উপযুক্ত প্রযুক্তি এবং সঠিক কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশে টেকসই কৃষি ভিত্তিক উন্নয়ন করা সম্বব।
আরও পড়ুন: ভারতের গম রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য নয়: বাণিজ্যমন্ত্রী
খাদ্য শিল্পের টেকসই উন্নয়নে ডাচ কৃষি প্রযুক্তি চায় বাংলাদেশ
বাংলাদেশি কৃষি উদ্যোক্তাদের সঙ্গে নেদারল্যান্ডের কৃষি ও প্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের মাঝে হর্টিকালচার, পশুসম্পত্তি, পোল্ট্রি ও মৎস খাতে সুস্পষ্ট অংশিদারিত্ব তৈরিতে এগ্রি-বিজনেস কনক্লেভ আয়োজন করছে বাংলাদেশ দূতাবাস। আগামী ৩০ মে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই কনক্লেভে বাংলাদেশ থেকে কৃষি ও খাদ্যশিল্পে নিয়োজিত ৪০ জন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী/উদ্যোক্তা যোগ দেবেন। এ পর্যন্ত প্রায় ৩০টি ডাচ প্রতিষ্ঠান এই সভায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে।
বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কৃষি গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয় ওয়াগেনিঙ্গেন ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড রির্চাসের সহযোগিতায় এই সভা ওয়ার্ল্ড ক্যাফে ফরমেটে অনুষ্ঠিত হবে। ডাচ উদ্যোক্তারা বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বাংলাদেশে সম্ভাব্য ডাচ প্রযুক্তি-সমাধান-উদ্ভাবন ব্যবহারের মাধ্যমে নতুন বিনিয়োগ চূড়ান্তে আলোচনা করবেন।
আরও পড়ুন: কৃষি পদ্ধতির যান্ত্রিকীকরণে কাজ করছে সরকার: কৃষিমন্ত্রী
সভার দ্বিতীয় দিন (৩১ মে) চারটি উপখাত সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা ওয়াগেনিঙ্গেন, ফ্রিজল্যান্ড, বক্সমির, ওয়ার্ল্ড হর্টি সেন্টার এ ডাচ প্রযুক্তির প্রায়োগিক দিকগুলো দেখতে যাবেন।
কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবনে নেদারল্যান্ড শীর্ষে। অন্যদিকে বাংলাদেশ গত পাঁচ দশকে কৃষি উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করলেও অভ্যন্তরীণ ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করে কৃষি প্রবৃদ্ধি অর্জন ও কৃষিখাতকে একটি রপ্তানিমুখী খাতে উন্নীত করতে উন্নত ডাচ কৃষি প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। তাই উন্নত ডাচ কৃষি প্রযুক্তি বাংলাদেশে সূচনা করার জন্য দুই দেশের ব্যবসায়িক সংযোগ সুদৃঢ় করতে দূতাবাস নতুন উদ্যোগ হিসেবে এই কনক্লেভ আয়োজন করছে।
আরও পড়ুন: দেশে উত্তম কৃষি চর্চা নীতিমালা প্রণীত হয়েছে: কৃষিমন্ত্রী
কনক্লেভটি আয়োজনে প্রথমবারের মত দূতাবাসের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে নেদারল্যান্ডসের কৃষি মন্ত্রণালয়, নেদারল্যান্ড এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি, নেদারল্যান্ড ফুড পার্টনারশিপ, ডাচ-গ্রিন-হাইজ ডেল্টা, লারিভ ইন্টারন্যাশনাল, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ এবং লাইট-ক্যাসেল পার্টনার্স।