কৃষি
রাশিয়া-ইউক্রেন দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ দেশের পরিবহন ও কৃষি উৎপাদন খরচকে প্রভাবিত করবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম আরও বাড়ায় দেশের পরিবহন ও কৃষি উৎপাদন খরচের ওপর প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
বুধবার ঢাকা-১০ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শফিউল ইসলামের করা এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটি বাংলাদেশের পরিবহন খরচ ও কৃষি উৎপাদনের ওপর প্রভাব ফেলবে।
জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এই প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বর্তমানে ব্যারেল প্রতি তেলের দাম গত নয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রয়েছে।
তিনি জানান, বাংলাদেশ বর্তমানে প্রতি বছর ৫০ লাখ টন ডিজেল, ১৩ লাখ টন অপরিশোধিত তেল, দুই লাখ টন ফার্নেস অয়েল এবং এক লাখ ২০ হাজার টন অকটেন আমদানি করে।
বর্মমানে বাংলাদেশ যে দামে জ্বালানি কিনে দেশের বাজারে বিক্রি করছে, তাতে প্রতিদিন ১৫০ কোটি ডলারের বেশি লোকসান গুণতে হচ্ছে বলে জানান মন্ত্রী।
আরও পড়ুন: মানবিক কারণে ইউক্রেনের পক্ষে ভোট দিয়েছে বাংলাদেশ: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
এছাড়া বাংলাদেশ রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে খুব বেশি গম আমদানি না করলেও বৈশ্বিক বাজার পরিস্থিতির কারণে গম সরবরাহেও এর প্রভাব পড়বে।
আব্দুল মোমনে বলেন, যদি যুদ্ধ চলতে থাকে, তাহলে পণ্যবাহী জাহাজের ভাড়া এবং বীমা ফি বৃদ্ধিরও ঝুঁকি রয়েছে।
এদিকে রাশিয়ার সঙ্গে লেনদেন সম্পর্কে তিনি বলেন, বাংলাদেশের যেসব প্রতিষ্ঠান রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করেছে, তাদের বকেয়া পরিশোধের ব্যাপারে সতর্ক হওয়া উচিত। কারণ বৈশ্বিক আন্তঃব্যাংক লেনদেন সম্পর্কিত সুইফট সিস্টেমে বেশ কয়েকটি রুশ ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আপনারা যদি নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন করেন টাকা আটকে যেতে পারে। আর এই টাকা পরবর্তীতে উদ্ধার করা সম্ভব নাও হতে পারে।
যুদ্ধের কারণে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলেও সতর্ক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বাংলাদেশ ২০১৮ সালে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণের জন্য রাশিয়ার সঙ্গে ১৩৮ কোটি ডলার ঋণের একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে।
মোমেন বলেন, রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা লেনদেনকে জটিল করে তুলতে পারে।
তিনি বলেন, চলমান প্রকল্পগুলোর জন্য অর্থায়ন এবং ঋণ পরিশোধের বিকল্প পদ্ধতি কী হতে পারে তা নিয়ে রাশিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে আলোচনা চলছে।
আরও পড়ুন: পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশে নবনিযুক্ত অনাবাসিক রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের সাক্ষাৎ
গণতন্ত্র কার্যকরে সব দলের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়া প্রয়োজন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
আপাতত পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের পরিকল্পনা নেই: কৃষিসচিব
কৃষিসচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেছেন,আপাতত পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের পরিকল্পনা নেই।
তিনি বলেন, পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়ার ক্ষেত্রে আমরা কৃষক ও ভোক্তা উভয়ের স্বার্থ রক্ষার বিষয়টি বিবেচনা করে থাকি। এখন পর্যন্ত কৃষক পেঁয়াজের ভালো দাম পাচ্ছে। এছাড়া সামনে পবিত্র রমজান শুরু হচ্ছে। এই সময়ে পেঁয়াজের দাম যাতে না বাড়ে, সেটিও আমাদের বিবেচনায় রয়েছে। তাই আপাতত পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের পরিকল্পনা কৃষি মন্ত্রণালয়ের নেই। তবে আমরা নিবিড়ভাবে বাজার মনিটর করছি, কৃষক ও ভোক্তা উভয়ের স্বার্থ রক্ষায় উদ্যোগ নেয়া হবে।
মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় সচিব এই সব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: কৃষিপণ্যের মান উন্নয়নে সহযোগিতা দিবে ডেনমার্ক
সভায় জানানো হয়, চলমান ২০২১-২২ অর্থবছরে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের সংখ্যা ৭৭টি। মোট বরাদ্দ তিন হাজার ১২৪ কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারি ২০২২ পর্যন্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি হয়েছে ৪০ শতাংশ, যা জাতীয় গড় অগ্রগতিরে চেয়ে পাঁচ শতাংশ বেশি। এছাড়া জাতীয় গড় অগ্রগতি হয়েছে ৩৫ শতাংশ।
সভায় মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সংস্থাপ্রধান ও প্রকল্প পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।
ক্যাপসিকাম চাষে খুশি যশোরের কৃষকরা
একসময় অপরিচিত বিদেশি সবজি হিসেবে বিবেচিত ক্যাপসিকাম বর্তমানে বাংলাদেশে দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। স্থানীয়ভাবে মিষ্টি মরিচ নামে পরিচিত ক্যাপসিকামের ক্রমবর্ধমান চাহিদা বাংলাদেশের চাষিরা এই সবজির চাষের দিকে ঝুঁকছেন। দামও ভালো পাচ্ছেন চাষিরা।
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার ৪২ বছর বয়সী কৃষক মঞ্জুরুল আলম। তিনি কৃষি জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ক্যাপসিকাম চাষ করে সফল হয়েছেন।
আবহাওয়ার অনুকূলে থাকায় তার খেতে ফলন ভালো হয়েছে। এছাড়া তার সাফল্য এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ায় তার মতো আরও কৃষকরা ক্যাপসিকাম চাষে এগিয়ে আসছেন।
আরও পড়ুন: করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ: ক্যাপসিকাম চাষে রাহুলের সফলতা
কৃষক মঞ্জুরুল আলম বলেন, তিনি মূলত একজন ফুল চাষি। দেশে করোনা আসার পর কয়েক বছর ফুলের বাজারে ধস নামায় অনেকটা চিন্তিত হয়ে পড়েন। এরপর থেকে তিনি সিদ্ধান্ত নেন ক্যাপসিকাম চাষের। তবে এক্ষেত্রে প্রথমে তাকে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন বিএডিসির (সেচ)পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হয়।
তিনি জানান, বিএডিসির পক্ষ থেকে তার এক বিঘা জমিতে আধুনিক পলি শেড করে দেয়া হয়। ওই শেডে বৃষ্টির পানি রিফ্রেশ করে খেতে প্রয়োগের পাশাপাশি তাপ নিয়ন্ত্রিত বৈদ্যুতিক ফ্যান, ফগার ইরিগেশন পদ্ধতিসহ নানা কলাকৌশল সংযোজন করা হয়। এরপর ওই শেডে ক্যাপসিকামের চাষ শুরু হয়। প্রথম বছরেই তিনি ক্যাপসিকাম চাষ করে সাফল্য অর্জন করেন।
মঞ্জুরুল আলম জানান, প্রথম দিকে খেত থেকে প্রতি কেজি ক্যাপসিকাম ২০০ টাকার বেশি দরে বিক্রি করতেন। এরপর বাজারে ক্যাপসিকামের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও বাড়তে থাকে। প্রতি কেজি ক্যাপসিকাম ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা বিক্রি করেন তিনি।
সরিষার ফলন ও দাম পেয়ে খুশি চাঁপাইনবাবগঞ্জের চাষিরা
চলতি মৌসুমে চাঁপাইনবাবগঞ্জে সরিষার ভালো ফলন হয়েছে। সেই সঙ্গে বেশ ভাল দামে সরিষা বিক্রিও হচ্ছে। তাই উৎপাদিত সরিষার ভালো ফলন ও দাম পেয়ে খুশি চাষিরা।
সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, খেত থেকে ফসল ঘরে তোলার কাজে ব্যস্ত চাষিরা। কোথাও চলছে সরিষার গাছকাটা আবার কোথাও চলছে মাড়াইয়ের কাজ।
চাষিরা জানান, এবার অনুকূল আবহাওয়া ও রোগ বালাইয়ের তেমন উপদ্রব না থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। বিঘা প্রতি গড়ে সাত মণ করে ফলন পাওয়া গেছে। আর এবার শুরু থেকেই সরিষার বাজার দর ভালো রয়েছে। ফলে সরিষা আবাদ করে কৃষকরা লাভবান হয়েছেন।
সদর উপজেলার সুন্দরপুর এলাকার চাষি মোশাররফ হোসেন জানান, এবার তিনি তিন বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করেছিলেন। আবহাওয়া ভালো থাকায় ফলন ভালো পেয়েছেন। প্রথম দিকেই দুই হাজার আটশ টাকা মণ দরে তিনি সরিষা বিক্রি করেছে। পরে দর আরও বেড়েছে।
আরও পড়ুন: সরিষা চাষে ভাগ্য ফিরছে যশোরের কৃষকের
নাচোল উপজেলার নেজামপুর এলাকার চাষি আলমগীর জানান, বৃষ্টিতে কিছু নষ্ট করেছিল যার কারণে ফলন একটু কম হয়েছে। বিঘা প্রতি ৬ মণ ফলেছে। দর তিন হাজার পাঁচশ টাকা মণ পেয়েছেন। খরচ বাদ দিয়ে তার ছয় হাজার টাকা লাভ হয়েছে বলে জানান তিনি।
একই উপজেলার ঘিয়ন এলাকার চাষি আবদুস সামাদ জানান, দুই বছর আগে সরিষার দর তেমন ছিল না। ১২শ থেকে ১৩শ টাকা মণ দর ছিল। কিন্তু গত বছর থেকে সরিষার দর বেড়েছে। গতবার তিনি আড়াই বিঘায় সরিষার আবাদ করেছিলেন। দর ভালো পাওয়ায় এবার তিনি চার বিঘা জমিতে সরিষা করেছেন।
বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে: প্রধানমন্ত্রী
বহুমুখী খাতে সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বিস্তৃত হয়েছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস এটি বহুমুখী সহযোগিতার মাধ্যমে বিশেষ করে কৃষি, বাণিজ্য, নৌপরিবহন, জনগণের মধ্যে সম্পর্ক তৈরির মাধ্যমে আরও বাড়বে।’
শনিবার বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে দেয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: গবেষণালব্ধ জ্ঞান মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
১৯৭২ সালের এই দিনে শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশকে একটি সার্বভৌম ও স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
তিনি বলেন, গত ৫০ বছর দুই প্রতিবেশি দক্ষিণ এশীয় দেশের অংশীদারিত্বের একটি শক্ত ভিত্তি তৈরি করেছে।
আমি নিশ্চিত যে আমরা আগামী ৫০ বছর এবং তারপরেও সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ অঞ্চল গড়ে তুলতে একসঙ্গে কাজ করব,’ বলেন প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বলেন, গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশের জনগণ গত ১৩ বছরে উল্লেখযোগ্য আর্থ-সামাজিক সাফল্য অর্জন করেছে।
তিনি বলেন, আর্থ-সামাজিক মুক্তির লক্ষ্যে আমাদের অবিশ্বাস্য যাত্রায় আমরা শ্রীলঙ্কার অংশীদারিত্বকে গভীরভাবে মূল্যায়ন করি।
এসময় তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং গত বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে যোগ দিতে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসের বাংলাদেশ সফরের কথাও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন।
আরও পড়ুন: বীমার সুবিধা সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানোর আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
সারের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের বিষয়ে অবগত নই: অর্থমন্ত্রী
সারের দাম বাড়ানোর বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের কোনো প্রস্তাবের বিষয়ে অবগত নয় বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, ‘সারের দাম বাড়ানোর বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের কোনো প্রস্তবের বিষয়ে আমি অবগত নই।’
বুধবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের ফলাফল সম্পর্কে ব্রিফিংকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
এর আগে, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, সারে ২৮ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়। কিন্তু বাজেটে বরাদ্দ আছে মাত্র ৯ হাজার কোটি টাকা। তাই কৃষি মন্ত্রণালয়ের কাছে অতিরিক্ত তহবিল না থাকায় এখন সারের দাম তুলতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের চাপ রয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে সারের দাম বাড়ানোর বিষয়ে কোনো প্রস্তাবনা এসেছে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, সারের দাম বাড়ানোর কথা কে বলেছে? উনি (কৃষিমন্ত্রী) যদি ইঙ্গিত দিয়ে থাকেন, সেটি আমার জানা নেই। আপনারা কৃষিমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করুন।
আরও পড়ুন: জ্বালানির দাম বৃদ্ধির কিছু বোঝা ভোক্তাদের বহন করতে হবে: অর্থমন্ত্রী
চাঁপাইনবাবগঞ্জে বোরো আবাদে ব্যস্ত চাষিরা
গেল আমন মৌসুমে ধানের দাম ভালো পেয়েছেন কৃষকরা। বর্তমানেও ধানের বাজার দর ভালো। তাই উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে বোরো আবাদে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষকরা।
বর্তমানে বীজ, সার ও সেচের সমস্যা না থাকলেও কৃষি উপকরণের দাম কমানোর দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা। এদিকে বোরা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছে জেলা কৃষি কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, তীব্র শীত উপেক্ষা করে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে মাঠে চলছে বোরো আবাদ। কেউ পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষ করেছে, কেউ সেচ নালা সংস্কার, কেউ সার প্রায়োগ, কেউ বা বীজ তলায় আবার কেউ ধানের চারা রোপন কাজে ব্যস্ত। এবার চাষিরা উপসি ও হাইব্রিড জাতের ধান আবাদ করছেন।
সদর উপজেলার বোরো চাষি আকবর আলী বলেন, ধানের বাজার দর ভালো চলছে। এর আগে আমন ধানের দর ভালো ছিল। এ কারণে আমরা বোরো আবাদ করছি। এ পর্যন্ত আমার ৭ বিঘা জমিতে ধান লাগানো হয়েছে। আরও ৩ বিঘা জমিতে লাগাব।
একই উপজেলার নওয়াবজায়গির এলাকার কৃষক জহুরুল ইসলাম জানান, তার আড়াই বিঘা জমিতে সরিষা লাগিয়েছেন। সরিষা উত্তোলন করে এবার সেই জমিতে বোরো ধান লাগানের জন্য জমির প্রস্তুতি চলছে। দু’এক দিনের মধ্যে ধানের চারা লাগানো শুরু হবে।
আরও পড়ুন: সাড়ে ১১ লাখ টন চাল ও সাড়ে ৬ লাখ টন ধান কিনবে সরকার
ইসলামপুর এলাকার চাষি শামিম আলী বলেন, গত বছর ১০ কাঠা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছিলাম। বাজার দর ভালো থাকায় এবার ২৫ কাঠা জমিতে বোরো ধান রোপণ করছি।
নাচোল উপজেলার নেজামপুর এলাকার বোরো চাষি জানান, তিনি এবার ৩ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। বোরা উৎপাদনে খরচ বেশি। জমিতে সার ও সেচ লাগে। সেই সঙ্গে কীটনাশকও প্রয়োগ করতে হয়।
তিনি জানান, কীটনাশকের দাম খুব বেশি। এতে কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। কীটনাশকের দাম কমানোর পাশাপাশি গুনগত মান ঠিক রাখতে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের তদারকি জোরদার করা দরকার।
জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৪৯ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১২ হাজার ১০০ হেক্টর, শিবগঞ্জ উপজেলায় ৭ হাজার ৫০ হেক্টর, গোমস্তাপুর উপজেলায় ১৬ হাজার ২০০ হেক্টর, নাচোল উপজেলায় ৮ হাজার ২০০ হেক্টর ও ভোলাহাট উপজেলায় ৫ হাজার ৮৫০ হেক্টর।
আরও পড়ুন: রাঙামাটিতে বোরো ধানের বাম্পার ফলন, কৃষকের মুখে হাসি
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাঁপাইনবাবগঞ্জের উপ-পরিচালক নজরুল ইসলাম জানান, ৩ হাজার ৩৫৭ হেক্টর জমিতে বীজতলা আছে যা দিয়ে আবাদের চাহিদা পূরণ হবে। সার ও সেচের কোন সমস্যা নেই।
তিনি জানান, ধানের দর ভালো থাকায় কৃষকরা বোরো আবাদে আগহী হয়েছে। শেষ পর্যন্ত জেলায় বোরা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
যে কোনো মূল্যে আমাদেরকে চালের উৎপাদন বাড়াতে হবে: কৃষিমন্ত্রী
দেশে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক কৃষি কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানীদের যে কোনো মূল্যে চালের উৎপাদন বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
মন্ত্রী বলেন, রেকর্ড উৎপাদন ও সর্বকালের সর্বোচ্চ সরকারি মজুদ থাকার পরও দেশে চালের দাম নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। চাল আমাদের প্রধান খাদ্য, তাই যে কোনো মূল্যে চালের উৎপাদন আমাদেরকে বাড়াতে হবে।
রবিবার সকালে সচিবালয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, হাওর- উপকূলসহ প্রতিকূল এলাকায় ধানের চাষ সম্প্রসারণ এবং নতুন উদ্ভাবিত উচ্চ উৎপাদনশীল জাতগুলোকে দ্রুত মাঠে নিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে বিজ্ঞানী, সম্প্রসারণকর্মীসহ সকল কর্মকর্তাদের সমন্বিত ও নিবিড়ভাবে কাজ করতে হবে।
আরও পড়ুন: মাটির টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করতে বৈশ্বিক উদ্যোগ জরুরি: কৃষিমন্ত্রী
প্রকল্প পরিচালকদের প্রতি (পিডি) অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা নেয়ার আশা না করে সততা, নিষ্ঠা ও সতর্কতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, পেশাগত দক্ষতা, যোগ্যতা, নেতৃত্ব ও ব্যবস্থাপনার সামর্থ্যসহ নানা দিক বিবেচনা করে পিডি নিয়োগ দেয়া হয়। পিডি হয়ে অনিয়ম দুর্নীতি করে অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা নিবেন ও পাবেন এই আশায় তদবির করে পিডি হবেন না। আর যারা পিডি হয়েছেন, তাদেরকে অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রকল্পের অর্থ ব্যয় করতে হবে। সততা, নিষ্ঠা ও সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে হবে।
এসময় সরেজমিনে কঠোরভাবে প্রকল্পের কাজ তদারকি করতে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন কৃষিমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: বিএনপির প্রভু হলো পাকিস্তান: কৃষিমন্ত্রী
সভায় জানানো হয়, চলমান ২০২১-২২ অর্থবছরে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের সংখ্যা ৭১টি। মোট বরাদ্দ দুই হাজার ৯২৮ কোটি টাকা। ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি হয়েছে প্রায় ৩২ শতাংশ, যা জাতীয় গড় অগ্রগতিরে চেয়ে ৮ শতাংশ বেশি। এ সময়ে জাতীয় গড় অগ্রগতি হয়েছে ২৪ শতাংশ।
সভায় মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মো. আবদুর রৌফ, কমলারঞ্জন দাশ, মো. রুহুল আমিন তালুকদার, বলাই কৃষ্ণ হাজরা, আব্দুল্লাহ সাজ্জাদ, অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সংস্থাপ্রধান ও প্রকল্প পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।
কুড়িগ্রামে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ, কৃষিতে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা
কুড়িগ্রামে গত দু’দিন ধরে চলছে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। এর ফলে জনজীবনে দেখা দিয়েছে ভোগান্তি। শনিবারও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। জেলা জুড়ে তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রির নীচে অবস্থান করায় কৃষিতে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কাকরছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ। এদিকে তীব্র শীতের কারণে কুড়িগ্রাম হাসপাতালে বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা।
কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. পুলক কুমার সরকার জানান, শনিবার হাসপাতালে ২৯৬জন রোগী ভর্তি আছে। এর মধ্যে শিশু ওয়ার্ডে ৪৮ জন এবং ডায়রিয়া আইসোলেশনে ৩৯ জন। শীতজনিত কারণে শিশুরা যাতে সমস্যায় না পরে এজন্য গরম কাপড়ে ঢেকে রাখতে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও তাদের পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। সুষম খাবার দিতে হবে। ডায়রিয়া হলে খাবার স্যালাইন অব্যাহত রাখতে হবে। রোগ নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে নিকটস্থ হাসপাতালে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
এদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মো. আব্দুর রশীদ জানান, তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রির নীচে অবস্থান করলে কৃষিতে কিছুটা ক্ষয়ক্ষতি হবে। আলুতে লেট ব্লাইডের আক্রমণ হতে পারে। এছাড়াও বোরা বীজতলা লালচে হয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। কৃষকরা ইতোমধ্যে ১০ হাজার হেক্টর জমির উপরে প্লান্টেশন শুরু করেছে।
তিনি বলেন, আমরা ক্ষয়ক্ষতি কমাতে আলুর ক্ষেত্রে ছত্রাক নাশক স্প্রে করার কম্পোজিশন কৃষকদের মাঠ পর্যায়ে জানিয়ে দিচ্ছি। এছাড়াও আমাদের কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে তদারকি করছে। আগামী ৩১ জানুয়ারি জেলার বিভিন্ন জায়গায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন থাকায় আমাদের লোকবল সেখানে সম্পৃক্ত থাকায় এখন পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির তথ্য হাতে আসেনি। চলতি বছর জেলায় ৬ হাজার ৮৮৫ হেক্টর বোরো বীজতলা ও ৭ হাজার ২৪০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে পারে: আবহাওয়া অধিদপ্তর
স্বাস্থ্য খাতে গবেষণা বৃদ্ধির তাগিদ প্রধানমন্ত্রীর
দেশের স্বাস্থ্য খাতকে কৃষি ও অন্যান্য খাতের মতো সমৃদ্ধ করতে স্বাস্থ্য খাতে গবেষণা বৃদ্ধির তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন,‘স্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষণাটা আমাদের দেশে আসলে খুব কম হচ্ছে। আমাদের দেশে অনেক চিকিৎসক আছেন, যারা রোগী সেবা দিতে যতটা আগ্রহী, কিন্তু গবেষণার ক্ষেত্রে হাতেগোনা কয়েকজনই গবেষণা করেন। এক্ষেত্রে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। আমাদের স্বাস্থ্য বিষয়ে গবেষণাটা একান্তভাবে দরকার।’
বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নবনির্মিত ‘জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কমপ্লেক্স’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি’র ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।
এসময় শেখ হাসিনা বলেন, দেশে স্বাস্থ্য গবেষণা করা খুবই জরুরি। তবে আমরা অন্যান্য খাতে গবেষণার ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতি করেছি। আমাদের আরও এগিয়ে যেতে হবে।
তার সরকার কৃষি গবেষণাকে গুরুত্ব দিয়েছে এবং এ খাতে যথেষ্ট সাফল্যও পেয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘এ বিষয়ে গবেষণা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।’
এসময় বিজ্ঞান ও উন্নত প্রযুক্তির এই যুগে দ্রুত অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক গবেষণার প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘গবেষণার সাথে সাথে এই গবেষণা লব্ধ জ্ঞান আমাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কীভাবে ব্যবহার করা যায় তার ওপর আমরা জোর দিচ্ছি। মৌলিক গবেষণার পাশাপাশি প্রায়োগিক গবেষণার ওপরও জোর দিতে হবে। এ বিষয়ে যারা গবেষক তারা নিশ্চয়ই এ বিষয়ে কাজ করবেন।’
তার আগের কোনো সরকার গবেষণায় কোনো বরাদ্দ রাখেনি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আমি দেখি প্রকৃতপক্ষে গবেষণায় কোনো বাজেট বরাদ্দ নেই। তখনই প্রথম আমি একটা থোক বরাদ্দ দিই। এরপর থেকে আমরা প্রতি বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখি শুধু গবেষণার জন্য।
তিনি স্বাস্থ্য, খাদ্য উৎপাদন, অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রকৌশল খাতসহ প্রতিটি খাতে গবেষণায় মনোযোগ দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: ঝুঁকিমুক্ত থাকতে দ্রুত টিকা নেয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর