কৃষি
বঙ্গবন্ধু সেতুতে টানেল নির্মাণে সমীক্ষা চলছে: নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী
উত্তরাঞ্চলের মানুষের রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগে বঙ্গবন্ধু সেতুর বিকল্প হিসেবে যমুনা সেতুতে কর্ণফুলীর আদলে একটি টানেল নির্মাণের জন্য সমীক্ষার কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত বিএসআরএফ এর সংলাপে অংশ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা জানান।
নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সেতুর বিকল্প একটি সেতুর প্রয়োজন আছে। দ্বিতীয় একটি টানেলের সমীক্ষা কাজ চলছে। সেটার যদি সঠিক ফলাফল আসে তাহলে ভবিষ্যতে সেখানে একটি টানেল নির্মাণ করা হবে। এই ধরণের একটি চিন্তা-ভাবনার কথা আমরা জেনেছি। এটি বাস্তবায়িত হলে কর্ণফুলীর পর দেশে দ্বিতীয় টানেল হবে যমুনায়।’
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতুর স্প্যানে ধাক্কা: গভীর ষড়যন্ত্র দেখছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী
খালিদ মাহমুদ বলেন, ‘যমুনা নদীকে ঘিরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য আরেকটি পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। যমুনা নদী অর্থনৈতিক করিডোর। এই নদীতেও তিস্তার মতো প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ভাঙনের হাত থেকে জমি রক্ষা করা এবং নদীর পানি ব্যবহার করে কৃষি অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘তিস্তা নদীকে ঘিরে অনেকগুলো শাখা নদী। এ নদীগুলোকে ঘিরে আমাদের পরিকল্পনা আছে। প্রতিবছর বন্যার সময় তিস্তা নদী ভেঙে যাচ্ছে। ভাঙন রোধ করার জন্য সঠিক ব্যবস্থাপনার মধ্যে নিয়ে আসা হবে। নদীর পানি ধরে রেখে কাজে লাগানোর জন্য প্রকল্প নেয়া হয়েছে।’
এ ব্যাপারে প্রতিমন্ত্রী জানান, তিস্তা নদী ঘিরে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এটা নিয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবনায় আছে, চীন সরকার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এর বাইরেও অনেকগুলো দেশ বিশেষ করে ইউরোপীয় দেশ এবং ভারত আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সেগুলো পর্যালোচনা চলছে।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতুতে আঘাত লাগলে দেশের মানুষের হৃদয়ে আঘাত লাগে: নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী
যারা নদী দখল করে তারা ক্ষমতাশালী, নদীর দখল উচ্ছেদে কোন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছেন কিনা- এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যারা নদী দখল করেন তারা সবাই রাঘব বোয়াল না, সাধারণ মানুষও আছেন। সাধারণ মানুষ, যার জায়গা নেই, সে একটা ঘর করলো, সে তো জানে না যে নদী দখল হয়ে গেল। এক্ষেত্রে অসাবধানতা কাজ করছে।’
তিনি বলেন, ‘আগে ছিল জোর যার মুলুক তার। কাজেই সেই অবস্থা এখন নেই। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন আবেদন করলে আমরা পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করছি।’
‘শিল্প প্রতিষ্ঠানকে তো প্রণোদনা দেয়ার সুযোগ নেই। শিল্প গড়ে তোলার ক্ষেত্রে যে সব নিয়ম মানা দরকার সেগুলো তারা মানেনি। বরং তারা জরিমানার আওতায় আসার কথা। আমরা তাদের সুযোগ দিয়েছি। এই সুযোগের যদি সঠিক মূল্যায়ন না করা হয় সেজন্য তাদের অনেক কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হতে পারে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘নদীর তীরে গড়ে ওঠা শিল্প প্রতিষ্ঠানকে আমরা কিছুটা সময় দিতে চাই। কারণ এতে অনেক বিনিয়োগ করেছে। বাংলাদেশে কেউ কখনও ভাবেইনি- নদীর আবার নিজস্ব জায়গা আছে। এই ভবনাটা তৈরি করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের, দীর্ঘদিন রাষ্ট্র সেটা করেনি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সীমানা পিলার দিয়েছি। দখলকারী জেনে গেছে তার স্থাপনা নদীর সীমানায় পড়েছে। তাকে ম্যাসেজও দেয়া হয়েছে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর দখল উচ্ছেদের কাজ পুরোপুরি বা শতভাগ সম্পন্ন করতে পারিনি। কিছু মামলা-মোকদ্দমা আছে। সেগুলোর ব্যাপারে আমাদের আইনজীবী প্যানেল কাজ করছে। আমরা বলতে পারি এগুলোতে আমরা সফলতা দেখাতে পারব।’
নদীর সীমানা পিলার স্থাপন ও অবৈধ দখল উচ্ছেদ করার ক্ষেত্রে কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি হয়েছে জানিয়ে নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সেগুলোর বিষয়ে আমরা হেয়ারিং নিচ্ছি। অনেকগুলো বিষয় আমরা সমাধান করেছি।’
তিনি বলেন, ‘১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ তৈরি করতে চাই, এটা আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের অংশ ছিল। সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি, প্রায় তিন হাজার কিলোমিটারের মতো নতুন ও পুরনো নৌপথ তৈরি করতে পেরেছি। আমরা এর সুফল পেতে শুরু করেছি। এবার অতিবৃষ্টি এবং উজান থেকে পানি আসলেও তা বন্যায় রূপ নেয়নি এর অন্যতম কারণ নদীগুলো ধারাবাহিক ড্রেজিং করা।’
আরও পড়ুন: জাতি হিসেবে মর্যাদার জায়গায় গিয়েছি: নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী
যমুনা নদীকে সঠিক ব্যবস্থাপনায় আনতে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে একটি পরামর্শ চলছে জানিয়ে খালিদ মাহমুদ বলেন, ‘যেটির নাম দেয়া হয়েছে যমুনা অর্থনৈতিক করিডোর। এটার সমীক্ষার কাজ শুরু হবে। সমীক্ষায় সফলতা আসে, কাজটি যদি বাস্তবায়ন করতে পারি তাহলে এখানে লাখ লাখ হেক্টর জমি শুধু সংগ্রহণ করতেই পারব না, যমুনার ভাঙনের একটি সমাধান দিতে পারব। যে জমি সংগ্রহণ করা হবে সেখানে স্যাটলাইট সিটি গড়ে তোলা হবে। অর্থনৈতিক করিডোর-১ ও অর্থনৈতিক করিডোর-২ এই দুটি ফেজে কাজটি হবে। এটি দীর্ঘমেয়াদী কাজ। বন্যা ও নদী ভাঙন থেকে মানুষ যে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা থেকে রক্ষা হবে। তিস্তা নদী নিয়েও একটি কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। সেগুলো নিয়েও কার্যক্রম চলছে।
নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন তিনটি ক্রুজ ভ্যাসেল সংগ্রহ করতে যাচ্ছি। এর মধ্যে হ্যালিপ্যাডসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকবে। আমরা হয়তো ২০২৩ সালের শেষের দিকে এগুলো সংগ্রহ করতে পারবো। বিআইডব্লিউটিসি এই ক্রুজ ভ্যাসেল সংগ্রহ করা হবে।
মাওয়া ঘাটে কবে থেকে ফেরি চালু হবে এবং পদ্মা সেতুতে ফেরির ধাক্কা বিষয়ে তদন্ত কমিটি কি পেল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতুতে সর্বশেষ (ধাক্কা দেয়ার) যে ঘটনাটা ঘটে গেল। সেটা সেতু কর্তৃপক্ষ বলেছে ধাক্কা লাগে নাই। সিগন্যাল লাইট যখন নামিয়ে দেয়া হয় তখন ভিডিওটা ধারণ করা হয়েছে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘রিপোর্টারকে (একটি টেলিভিশন চ্যানেলের) আরও সতর্ক হওয়া দরকার ছিলো। দ্রুত নিউজটা ছেড়ে দিয়ে সমগ্র দেশবাসীকে একটা আতঙ্কের মধ্যে রাখা ঠিক হয়নি। আর একটু বিশ্লেষণ করলে বুঝতে পারতো ধাক্কা লাগেনি আসলে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। কয়েক ঘন্টা পর যখন সেতু কর্তৃপক্ষ ও মন্ত্রী যখন গেলেন তখন দেখলেন সেখানে কোন ধাক্কা লাগেনি। আমি সাংবাদিকদের বলেছিলাম ধাক্কা লাগলে ভেঙে যাবে বা দাগ লাগবে। কিন্তু লাইটেও ক্ষতি হয়নি, সেতুতে কোন দাগ লাগেনি। এই বিষয়টি নিয়ে দেশবাসী আতঙ্কিত, আমরা বিব্রত।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএসআরএফ এর সভাপতি তপন বিশ্বাস এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক।
সৌদি খেজুর চাষে সফল চাঁপাইনবাবগঞ্জের রুবেল
ফেসবুকে দেখে বাণিজ্যিকভাবে বরেন্দ্রের মাটিতে মরুর দেশের খেজুর চাষ করে সফল হয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভেরেন্ডি গ্রামের বেকার যুবক ওবাইদুল ইসলাম রুবেল। তার এই সাফল্য এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠেছেন এই ফল চাষে।
আরও পড়ুন: যশোরে লক্ষ্যমাত্রার ৩ গুণ বেশি মাছ উৎপাদন
এইচএসসি পাস করা বেকার যুবক রুবেল ফেসবুকে দেশের কয়েকটি স্থানে খেজুর চাষের খবর দেখে খেজুর আবাদে উদ্বুদ্ধ হন। বাবার সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেন খেজুর চাষের। সৌদি প্রবাসী স্বজনদের সাথে যোগায়োগ করে সেখান থেকে বীজ সংগ্রহ করেন। কেউ কেউ পাগলামি বলে ঠাট্টা করেছেন। কিন্তু হাল ছাড়েননি রুবেল। নিয়মিত বাগানের পরিচর্যা করেছেন।
বর্তমানে তার ৩ বিঘা জমির উপর গড়ে উঠা খেজুর বাগানে গাছের সংখ্যা দেড় হাজার। বাগানে মরিয়ম, সুককারি, বারহি, আম্বার, হাইয়ানিসহ আরও কয়েক প্রজাতির খেজুর গাছ রয়েছে।
যশোরে লক্ষ্যমাত্রার ৩ গুণ বেশি মাছ উৎপাদন
যশোরে মাছ চাষে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার, অভয়াশ্রম তৈরি, নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টিসহ নানান পদক্ষেপে চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার তিন গুণ বেশি উৎপাদন হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। যা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের অভ্যন্তরসহ বিদেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ইতোমধ্যে প্রায় ২৯৪ কোটি টাকার রাজস্বও আয় করেছে বাংলাদেশ। এছাড়া গত ছয় বছরে জেলাতে প্রায় ৪৫ হাজার মেট্রিক টন মাছের উৎপাদন বেড়েছে।
যশোর মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে যশোরে মাছের চাহিদা ছিল ৬৫ হাজার ৫৮৯ মেট্রিক টন। সেখানে উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ২৪ হাজার ৮৫৮ দশমিক ১৪ মেট্রিক টন। যা চাহিদার তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেশি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাছ উৎপাদন হয়েছে যশোর সদর উপজেলায়। এখানে ২৯ হাজার ৭২ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়েছে। এছাড়া মনিরামপুরে ৩৮ হাজার ৩৪০, কেশবপুরে ৩৩ হাজার ৯৯৯, ঝিকরগাছায় ৩১ হাজার ১০৫, অভয়নগরে ২৯ হাজার ৭৯১, শার্শায় ২৫ হাজার ৮৩৮, চৌগাছায় ১৭ হাজার ৯৩১ ও বাঘারপাড়ায় ৮ হাজার ৭৮৩ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়েছে।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে সাড়ে ১০ লাখ বেল পাট উৎপাদন, দাম নিয়ে হতাশ চাষিরা
সূত্র জানায়, জেলায় মাছ উৎপাদনের রেণু পোনার চাহিদা ছিল ১৮ দশমিক ৯০ মেট্রিক টন। চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ৬৯ দশমিক ২৮ মেট্রিক টন। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রেণু পোণা উদ্বৃত্ত থেকেছে ৫০ দশমিক ৩৮ মেট্রিক টন। এছাড়া মনোসেক্স তেলাপিয়ার চাহিদা ছিল ২৮৭ লাখ পিস। সেখানে উৎপাদন হয়েছে ১৪ হাজার ১১৮ লাখ পিস। যা চাহিদার প্রায় পাঁচ গুণ বেশি।
জেলা মৎস্য অফিস জানায়, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে মাছ উৎপাদিত হয়েছিলো এক লাখ ৭৯ হাজার ৯৯৮ মেট্রিক টন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দুই লাখ পাঁচ হাজার ৮১১ মেট্রিক টন, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে দুই লাখ ২০ হাজার ৬৪৩ মেট্রিক টন, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে দুই লাখ ২১ হাজার ৩৫৮ মেট্রিক টন, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে দুই লাখ ২২ হাজার ১৬৮ মেট্রিক টন, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে দুই লাখ ২৩ হাজার ৭৯২ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদিত হয়েছিলো। চলতি অর্থবছরে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ২৪ হাজার ৮৫৮ দশমিক ১৪ মেট্রিক টন।
আরও পড়ুন: তিন বছর ঘুরেও কৃষি সহায়তা পাচ্ছেন না কব্জি হারানো মুক্তার
দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত এলাকায় কৃষিবিপ্লব ঘটবে: কৃষিমন্ত্রী
কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, দেশের উপকূলীয় ও দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত জমিতে কৃষি উৎপাদনের সম্ভাবনা অনেক। ইতোমধ্যে কৃষি বিজ্ঞানীরা ধান, ডাল, তরমুজ, আলু, ভুট্টা, বার্লি, সূর্যমুখী, শাকসবজিসহ অনেক ফসলের লবণাক্ততাসহিষ্ণু উন্নত জাত উদ্ভাবনে করতে সক্ষম হয়েছে।
এসব জাত ও উৎপাদন প্রযুক্তি উপকূলবর্তী বিপুল এলাকার সকল চাষিদের মধ্যে দ্রুত সম্প্রসারণের জন্য কাজ চলছে। এ লক্ষ্যে রোডম্যাপ প্রণয়নের কার্যক্রম চলমান আছে। চাষিরা এসব ফসলের চাষ করলে দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত এলাকায় নতুন করে কৃষিবিপ্লব ঘটবে।
রবিবার সকালে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় ঘেরের আইলে আগাম সীম চাষ, অফসিজন তরমুজ ও মরিচ চাষ সরেজমিনে পরিদর্শন শেষে আয়োজিত কৃষক সমাবেশে কৃষিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: কৃষির উন্নয়নে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহযোগিতা বৃদ্ধির আহবান কৃষিমন্ত্রীর
ড. রাজ্জাক আরও বলেন, ‘দেশের প্রায় ২৫% এলাকা হচ্ছে উপকূলীয় এলাকা। লবণাক্ততার কারণে এ এলাকায় সারা বছরে একটি ফসল হতো। আমন ধান তোলার পর বছরের বাকি সময়টা মাঠের পর মাঠ জমি অলস পড়ে থাকতো। এই প্রতিকূল ও বিরূপ পরিবেশে বছরে কীভাবে দুইবার বা তিনবার ফসল চাষ করা যায়- সেলক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করে আসছি। ইতোমধ্যে অনেক সাফল্য এসেছে। এটিকে আরো সম্প্রসারিত করা হবে, যাতে এ এলাকায় সারা বছর ধরে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করা যায়।’
সেচের পানি সমস্যা দূর করতে খুলনা, বাগেরহাটে ছয় শতাধিকের বেশি খাল খনন এবং পুন:খনন করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানান মন্ত্রী।
পরিদর্শনকালে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী নায়ায়ণ চন্দ্র চন্দ, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব ওয়াহিদা আক্তার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহ, বিএডিসির চেয়ারম্যান ড. অমিতাভ সরকার, বিএআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মো: বখতিয়ার, ব্রির ডিজি ড. শাহজাহান কবীর, বারির ডিজি নাজিরুল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার উপপরিচালক মো: হাফিজুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণে বিনিয়োগের আহবান কৃষিমন্ত্রীর
উল্লেখ্য, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে, উপকূলীয় এলাকায় মোট জমির পরিমাণ ২৮ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর, এর মধ্যে চাষযোগ্য ২১ লাখ ৬২ হাজার হেক্টর। আর লবণাক্ত এলাকার পরিমাণ ১০ লাখ ৫৬ হাজার হেক্টর। এছাড়া লবণ পানির ভয়াবহতার কারণে প্রতিবছর শুষ্ক মওসুমে উপকূলীয় এলাকায় ৫ লক্ষাধিক হেক্টর জমি অনাবাদি থেকে যায়।
ফরিদপুরে সাড়ে ১০ লাখ বেল পাট উৎপাদন, দাম নিয়ে হতাশ চাষিরা
পাটের রাজধানীখ্যাত ফরিদপুরে এবার পাটের ফলন ভালো হয়েছে। তবে দাম নিয়ে কিছুটা হতাশ পাট চাষিরা। চলতি মৌসুমে জেলায় পাটের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ছিলো সাড়ে ১০ লাখ বেল ( ১৮০ কেজিতে এক বেল)।
আর চলতি ২০২১-২২ মৌসুমে ফরিদপুরে পাটের আবাদ হয়েছে ৮৫ হাজার ৭৭ হেক্টর জমিতে। এর বিপরীতে কৃষি বিভাগ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নিধারণ করেছে ১০ লাখ ৫২ হাজার বেল। গত দশ মৌসুমে পাটের আবাদ বেড়েছে ৯ হাজার ১০৯ হেক্টর জমিতে।
আরও পড়ুন: দক্ষিণাঞ্চলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে পাট চাষ
জেলার পাট উৎপাদনে প্রসিদ্ধ নগরকান্দা, সালথা, বোয়ালমারী উপজেলার পাট চাষিরা জানান, চলতি পাট উৎপাদন মৌসুমে বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে মৌসুমের শুরুতে পাট আবাদে একাধিক সেচ দিয়ে পাট বপণ করায় শুরুতেই চাষিদের বাড়তি খরচ হয়েছে।
আবার পাট কাটায় ও পাট নেয়া-ধোয়ায় ও শুকাতে অন্যান্য বছরের চেয়ে শ্রমিকের মূল্য বেশি হওয়ায় পাটের উৎপাদন খরচ বেড়েছে আগের চেয়ে অনেক বেশি।
বর্তমানে জেলার পাটের বাজার কানাইপুর, সাতৈর, কৃষ্টপুর, নগরকান্দা, সালথা গিয়ে দেখা গেছে, চলতি সপ্তাহে মণ প্রতি পাটের দর কৃষক পাচ্ছে প্রকার ভেদে ২৬০০ থেকে ৩১০০ টাকা।
ফরিদপুর সদর উপজেলার কানাইপুর বাজারের পাট ব্যবসায়ী রথিন্দ্র নাথ সিকদার নিপু জানান, উৎপাদন মৌসুম শুরুতে পাটের দর মণ প্রতি ৪ হাজার পর্যন্ত গিয়ে ছিল। বর্তমানে (চলতি সপ্তাহে) এই বাজারের সব থেকে ভালো পাটের দর মণ প্রতি ৩১০০ টাকা পর্যন্ত রয়েছে। আর একটু নিম্নমানে পাটের দর ২৫০০ থেকে ২৬০০ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে।
আরও পড়ুন: মৌসুম শেষ হলেও প্রণোদনা পায়নি ফরিদপুরে পাট চাষিরা
ভরা মৌসুমে বাজারে পাটের আমদানি কম হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্বচ্ছল চাষিরা বাড়তি লাভের আশায় পাট বাজারে কম তুলছেন।
বোয়ালমারীর ঘোষপুর এলাকার পাট চাষি আশুতোষ মালো জানান, খেতে পাটের উৎপাদন ভালো হয়েছে। তবে চাষিদের খরচ ও যে কোনও বছরের চেয়ে বেশি হয়েছে।
সালথার চাষি নাছির উদ্দিন জানান, সরকার যেভাবে প্রতিবছর ধান, গমের দাম নির্ধারণ করে দেয় সেভাবে পাটেরও দর নির্ধারণ করা থাকলে চাষিরা ন্যায্য মূল্য পেতো।
এদিকে পাটের দর প্রসঙ্গে ফরিদপুর গোল্ডেন জুট মিলের পরিচালক মহাসিনুল ইসলাম গুড্ডু বলেন, ‘আমরা যারা পাট কলের সাথে যুক্ত তাদের দাবি হলো মিলের উৎপাদিত পাট পণ্য বিক্রয় মূল্যের সাথে যদি পাট ক্রয় মূল্যের পার্থক্য বেশি থাকে তাহলে মিল মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সে কারণে পণ্য উৎপাদন মূল্যের সাথে হিসাব মিলিয়ে কাঁচা পাটের দর নির্ধারণ করা দরকার। এতে সকলের লাভ হবে।’
আরও পড়ুন: শ্রমিক সংকট ও পোকার বিড়ম্বনায় ফরিদপুরের পাট চাষিরা
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ ড. হযরত আলী জানান, সোনালী আঁশ খ্যাত ফরিদপুরের উৎপাদিক পাটের চাহিদা বিশ্ব জুড়ে। চলতি মৌসুমে পাটের আবাদ হয়েছে ৮৫ হাজার ৭৭ হেক্টর জমিতে। এর বিপরীতে কৃষি বিভাগ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ১০ লাখ ৫২ হাজার বেল। তবে এবার বেশি উৎপাদন হয়েছে।
পাটের দরের বিষয়ে তিনি বলেন, বর্তমান বাজারের যে দরে পাট বিক্রয় হচ্ছে তাতে কৃষকের লাভের পরিমাণ একটু কম হচ্ছে। কারণ মৌসুমের শুরুতে তাদের আবাদ করতে খরচ হয়েছে বেশি।
তিনি বলেন, মণ প্রতি ৩ হাজার থেকে ৩৫০০ টাকা দর কৃষক পেলে তাদের ভালো লাভ পেতো।
তিন বছর ঘুরেও কৃষি সহায়তা পাচ্ছেন না কব্জি হারানো মুক্তার
জীবিকার তাগিদে ২০০৮ সালে আরব আমিরাতে গিয়েছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার মোহাম্মদ মুক্তার হোসেন (৩৯)। প্রবাস জীবন ভালই কাটছিলো তার। কিন্তু ২০১৪ সালে হঠাৎ করে কর্মস্থলে বড় ধরনের দুর্ঘটনায় পড়েন তিনি। এতে ডান হাতের কব্জি হারাতে হয় তাকে।
বিজয়নগর উপজেলার ১০নং পাহাড়পুর ইউনিয়নের ভিটিদাউদপুর গ্রামে স্ত্রী, মা ও এক ভাইকে নিয়ে মুক্তার হোসেনের সংসার।
আরও পড়ুন: কৃষকদের লাভবান করতে ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে: মন্ত্রী
আরব আমিরাতে কর্মরত কোম্পানি কোনও ধরনের সাহায্য না করায় দেশ থেকে জমি বিক্রি করে প্রবাসে চিকিৎসা করাতে হয়েছিল তাকে। অবশেষে ২০১৫ সালে কব্জি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে দেশে ফিরে আসেন তিনি।
দেশে এসে হাতের জন্য কোনও কাজকর্ম না করতে পেরে আরও অসহায় হয়ে পড়েন মুক্তার হোসেন। পরে এক হাত নিয়েই বাড়ির পাশের জমিতে কৃষি কাজে মনোযোগ দেন মুক্তার। আস্তে আস্তে এক হাতে শিখে ফেলেন কাজকর্ম করা এবং সফলও হন।
একসময় বাড়ির পাশে ছোট্ট একটি দোকানও দেন। তবে কৃষি কাজে নেমে আরেক তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখী হতে হয় তাকে। তিন বছর ধরে কৃষি কর্মকর্তার পিছনে ঘুরেও সরকারি বীজ, গাছ ও কৃষি সহায়তা পাচ্ছেন না তিনি।
আরও পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ে আমন আবাদে ব্যস্ত কৃষকরা
কথা হলে আক্ষেপ করে তিনি ইউএনবিকে বলেন, ‘ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা কৃষি কর্মকর্তা আশরাফুল আলমের কাছে তিন বছর ধরে বলে আসছি আমাকে যেন সরকারি বীজ, গাছ বা কিছু সহায়তার ব্যবস্থা করে দেন। কিন্তু কৃষি কর্মকর্তা আমাকে কিছুই দিচ্ছেন না।’
উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা এই ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা আশরাফুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘মুক্তার হোসেন আমার কাছে এসেছিলেন কিন্তু কোনও বরাদ্দ না থাকায় দিতে পারিনি। সামনে কোনও বরাদ্দ আসলে তাকে সহায়তা করা হবে।’
আরও পড়ুন: শেরপুরের গারো কৃষকদের জুমের ফসল কাটায় বিক্ষোভ সমাবেশ
বিজয়নগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাব্বির আহম্মেদ বলেন, ‘নিয়মের বাইরে কেউ সহায়তা পায় না। আমি খবর নিয়ে মুক্তার হোসেনের জন্য কিছু করা যায় কিনা দেখবো।’
বিষয়টি জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ রবিউল হক মজুমদারের নজরে আনা হলে তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, ‘যে এক হাতেও কৃষি কাজ করতে চায় তাকে অবশ্যই সাহায্য করা উচিত। আমি উপজেলা ও ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা কৃষি কর্মকর্তাদের বলে দিবো যেন মুক্তার হোসেনকে সরকারি সহায়তা করা হয়।’
করোনা: মারা গেলেন সিকৃবির ড. আজমুল হুদা
করোনা আক্রান্ত হয়ে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আজমুল হুদা মারা গেছেন।
বুধবার সিলেট নগরীর পার্ক ভিউ মেডিকেল সেন্টারের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও প্রকাশনা দপ্তর এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
আরও পড়ুনঃ করোনায় মারা গেলেন সাবেক এমপি খুররাম খান
ড. আজমুল হুদা সিলেট কৃষি বিশ্বব্যিালয় প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকেই কৃষি অনুষদে শিক্ষকতা শুরু করেন। তার দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি বিভাগীয় প্রধান, সহকারী হল প্রভোস্টসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। কৃষি জমি ও ফসলি মাটি নিয়ে তার বেশকিছু গবেষণাও রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ করোনায় মারা গেলেন আ’ লীগের সংসদ সদস্য সামাদ
এদিকে অধ্যাপক আজমুল হুদার মৃত্যুতে সিকৃবি ক্যাম্পাসে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এ ঘটনায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মতিয়ার রহমান হাওলাদার গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন। পাশাপাশি শোক প্রকাশ করেছে শিক্ষক সমিতি, অফিসার পরিষদ, কর্মচারী পরিষদ।
মরহুমের মরদেহ তার নিজ বাড়ি জামালপুরে সমাহিত হবার কথা রয়েছে।
করোনাতেও কৃষি মন্ত্রণালয়ের এডিপি বাস্তবায়নের হার ৯৮ শতাংশ
করোনা মহামারির প্রকোপের মধ্যেও কৃষি মন্ত্রণালয়ের ২০২০-২১ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়ন হয়েছে ৯৮ শতাংশ। এ অগ্রগতি জাতীয় গড় অগ্রগতির চেয়ে ১৮ শতাংশ বেশি। জাতীয় গড় অগ্রগতি হয়েছে ৮০ শতাংশ।
বৃহস্পতিবার সকালে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এডিপি বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপি।
২০২০-২১ অর্থবছরে কৃষি মন্ত্রণালয়ের মোট প্রকল্প ছিল ৮৫টি। প্রকল্পের অনুকূলে মোট বরাদ্দ ছিল ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকা। যার মধ্যে ২ হাজার ২৫৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে, যা বরাদ্দের ৯৮ শতাংশ।
আরও পড়ুন: কৃষির উন্নয়নে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহযোগিতা বৃদ্ধির আহবান কৃষিমন্ত্রীর
কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘চলমান করোনা মহামারি ও ঘূর্ণিঝড়, বন্যাসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করেও এ সাফল্য অর্জন খুবই সন্তোষজনক। আমাদের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মীদের নিরলস পরিশ্রমের ফলেই এটি সম্ভব হয়েছে।’
প্রকল্প পরিচালক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, সংস্থা প্রধানসহ প্রকল্প বাস্তবায়নে জড়িত সবাইকে মন্ত্রী ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আগামীতে এ সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখতে সবাইকে আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করতে হবে।
ড. রাজ্জাক আরও বলেন, দেশে কৃষি উৎপাদন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব কৃষিতে পড়ছে। অন্যদিকে মানুষ বাড়ছে, নগরায়ন-শিল্পায়নসহ নানা কারণে চাষের জমি কমছে, পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এর সাথে যোগ হয়েছে চলমান কোভিডের প্রভাব। এ পরিস্থিতিতে সবাইকে অত্যন্ত সচেতন ও সাবধানী হতে হবে যাতে করে স্বল্প প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যেও কৃষির উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা ধরে রাখা যায়। চলতি অর্থবছরে যে প্রকল্পগুলো নেয়া হয়েছে তার সফল বাস্তবায়ন করতে হবে। যাতে করে দেশের ১৭ কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।
আরও পড়ুন: চালের উৎপাদন বেড়েছে চার গুণেরও বেশি: কৃষিমন্ত্রী
সভায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো: মেসবাহুল ইসলাম বলেন, করোনাকালে মন্ত্রণালয়ের মোট ৮৫টি প্রকল্পের ৯৮% বাস্তবায়ন হয়েছে যা খুবই প্রশংসনীয়। চলমান বছরেও এ সাফল্য ধরে রাখা ও তা আরও এগিয়ে নিতে প্রকল্প পরিচালকদের তিনি তাগাদা প্রদান করেন।
সভা সঞ্চালনা করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো: মেসবাহুল ইসলাম। এসময় মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পিপিসি) মো: রুহুল আমিন তালুকদার, অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) হাসানুজ্জামান কল্লোলসহ ঊর্ধ্বধন কর্মকর্তা ও সংস্থাপ্রধানসহ প্রকল্প পরিচালকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
কৃষির উন্নয়নে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহযোগিতা বৃদ্ধির আহবান কৃষিমন্ত্রীর
কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও খাদ্য ব্যবস্থার রূপান্তরের জন্য গবেষণা, উদ্ভাবন ও জ্ঞানবিনিময়ের ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির আহবান জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক ।মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে অফিস কক্ষ থেকে ভার্চুয়ালি ইটালির রোমে অনুষ্ঠিত তিন দিনব্যাপী জাতিসংঘের ফুড সিস্টেম প্রিসামিটের ‘খাদ্য ব্যবস্থার রূপান্তরে বিজ্ঞানের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো’ শীর্ষক সেশনে যোগ দিয়ে এ আহবান জানান মন্ত্রী।
আরও পড়ুনঃ ফুড সিস্টেম শক্তিশালী করতে সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন: কৃষিমন্ত্রী
আন্তর্জাতিক কৃষিবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্মিলিত সংগঠন সিজিআইএআর ও আন্তর্জাতিক কৃষক সংগঠন যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।আব্দুর রাজ্জাক বলেন, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। বিজ্ঞানের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে গবেষণা ও উদ্ভাবনে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দসহ সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে। ইতিমধ্যে দেশের গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো ধান, গম, ভুট্টা, ফল ও শাকসবজির অনেকগুলো উন্নত জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে।
আরও পড়ুনঃ শেখ হাসিনার মানবিক সহায়তা সারা বিশ্বে এক অনন্য নজির: কৃষিমন্ত্রী
ধানের জাত উদ্ভাবনের উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট-ব্রি ১০০টিরও বেশি ধানের উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছে। যার মধ্যে ২৬টি জাত বন্যা, খরা, লবণাক্ততাসহ জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতসহিষ্ণু। বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট-বিনা ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট-বারিও জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতসহিষ্ণু ধান ও অন্যান্য ফসলের বেশ কিছুজাত উদ্ভাবন করেছে। এছাড়া, দেশের বিজ্ঞানীরা বিশ্বে প্রথম জিংকসমৃদ্ধ ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে।ইরি, সিমিট, ওয়ার্ল্ডফিশ, ইফরি, সিআইপিসহ সিজিআইএআরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাংলাদেশ গত ৫০ বছর ধরে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে উল্লেখ করে ড. রাজ্জাক আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদা, চলমান কোভিডসহ নানান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সম্মিলিত সহযোগিতা ও প্রচেষ্টা প্রয়োজন। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি ও ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ চালের উৎপাদন বেড়েছে চার গুণেরও বেশি: কৃষিমন্ত্রীজাতিসংঘের ফুড সিস্টেম সামিটে সিজিআইএআরের বিশেষ প্রতিনিধি কানায়ো এনওয়ানজের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ইথিওপিয়ার কৃষি প্রতিমন্ত্রী ফিকরু রিগাসা, মেক্সিকোর কৃষিমন্ত্রী ভিক্টর ভিল্লালোবোস, সিজিআইএআরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্লদিয়া সাদোফ, আন্তর্জাতিক কৃষক সংগঠনের মহাসচিব অ্যারিয়ানা জিওলিওদোরি, ২০২১ সালের ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ বিজয়ী শকুন্তলা থিলস্টেড প্রমুখ বক্তব্য দেন।উল্লেখ্য আগামী সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘের ‘ফুড সামিট ২০২১’ কে সামনে রেখে এ প্রাক-সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ১৪৫ টির বেশি দেশ এতে অংশগ্রহণ করছে। সম্মেলনটি শেষ হবে ২৮ জুলাই।
ঠাকুরগাঁওয়ে আমন আবাদে ব্যস্ত কৃষকরা
দেশের উত্তরের কৃষি নির্ভর জেলা ঠাকুরগাঁও। করোনার দুর্যোগের মাঝেও আমন আবাদে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলার কৃষকেরা। কেউ চারা তুলছেন আবার কেউ সে চারা রোপন করছেন।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নারগুন, বেগুনবাড়ি, খোঁচাবাড়ি, দানারহাট, বরুনাগাঁও ও রানিশংকৈল, পীরগঞ্জ, হরিপুররে সরেজমিনে দেখা গেছে, দল বেধে শ্রমিকেরা কোথাও আমনের চারা তুলছেন, আবার কোথাও চারা রোপন করছেন। এদের মধ্যে নারী শ্রমিকদের চারা তুলে রোপনের দৃশ্য চোখে পড়ে বেশ কয়েক জায়গায়।
আরও পড়ুন: ঝিকরগাছায় আমন ধানের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি
বেশ কয়েকটি জাতের ধান আবাদ করা হবে বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা।
সদর উপজেলার দানারহাট এলাকার কৃষক মইনুল ইসলাম জানান, প্রত্যেক বছরের মতো এ বছরও তিনি চার একর জমিতে আমন রোপনের প্রস্তুতি নিয়েছেন। ইতোমধ্যে চারা রোপনের জন্য প্রস্তুত হয়েছে। শ্রমিক নিয়োগ করে যে কোন দিন চারা রোপন করবেন তিনি ।
সদর উপজেলার মাদারগঞ্জ এলাকার কৃষক জলিল জানান, তিনি এ বছর আড়াই একর জমিতে আমন ধান লাগানোর প্রস্তুতি নিয়েছেন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে চারা সংগ্রহ করেছেন এবং তা রোপনও শুরু করেছেন। গত বছর শুরুর দিকে দাম কম পাওয়া গেলেও এ বছর ভালো দাম পাওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এ বছর জেলায় ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন। ইতোমধ্যে কৃষকেরা জেলায় মোট ২৬০ হেক্টর জমিতে চারা রোপন করেছেন। জেলার অধিকাংশ জমি উঁচু। তাই আরও বৃষ্টি প্রয়োজন। এই জমিতে একটু বিলম্বেই রোপন করা হয় আমন চারা।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ আবু হোসেন জানান, ঠাকুরগাঁও জেলা অন্যান্য ফসলের ন্যায় ধানের জন্যও বিখ্যাত। প্রচুর পরিমাণে ধান এ জেলায় উৎপাদন হয়। প্রত্যেক বছর আমন মৌসুমে কৃষকদের যাবতীয় পরামর্শ ও সেবা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রদান করা হয়। এ বছরও দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: কুষ্টিয়ায় আমন ধান সংগ্রহ নিয়ে শঙ্কা
তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে বাজারের কিছুটা সমস্যা থাকলেও পরিস্থিতি একটু ভালো হলেই লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত ধান উৎপাদন হবে। কৃষকেরা এ বছরও ধানের ন্যায্য মূল্য পাবেন বলে তিনি আশা করেন।