বন্যা
সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
গত তিনদিন বৃষ্টি কম হওয়ায় সিলেটের সুরমা, ধলাই, পিয়াইন, সারি ও লোভা নদীর পানি অপরিবর্তিত রয়েছে। একই সঙ্গে তীরবর্তী উপজেলাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতির দিকে। তবে ভারতের আসামের পাহাড়ি এলাকায় বৃষ্টিপাত হওয়ায় কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মঙ্গলবার সিলেটের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে, এতে হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কুশিয়ারা নদীর ডাইকের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন ও ডাইক উপচে পানি ঢুকে জেলার জকিগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর ও গোলাপগঞ্জ মোট ছয়টি উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। তবে পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধারে এখনো সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশ ও বিজিবি কাজ করে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: যমুনায় পানি বাড়ায় সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, বাঁধ ভেঙে ৫ গ্রাম প্লাবিত
জানা গেছে, দুদিন ধরে কুশিয়ারা নদীর পানি ধীরগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছিল। কিন্তু রবিবার থেকে অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধি পাওয়া শুরু হয়েছে। ফলে রবিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত কুশিয়ারা তীরবর্তী উপজেলাগুলোর বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এক মাসের পূর্বের বন্যার সময় যেসব স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছিল, তার পাশাপাশি নতুন নতুন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে ডাইকের ওপর দিয়ে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করা শুরু করেছে। ফলে কুশিয়ারা তীরবর্তী উপজেলাগুলোতে লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
এসব উপজেলাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। কুশিয়ারা তীরবর্তী জকিগঞ্জ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জকিগঞ্জ উপজেলার ৩৯টি স্থান দিয়ে পানি প্রবেশ করছিল। এর মধ্যে সুলতানপুর ইউনিয়নের ভক্তিপুর, সদর ইউনিয়নের রারাই, বীরশ্রীর সুপ্রাকান্দি, কাজলসারের বড়বন্দ এলাকায় সবচেয়ে বেশি ভাঙন দেখা দিয়েছে। বর্তমানে উপজেলার লাখো মানুষ পানিবন্দি, পাশাপাশি পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নতুন করে আরও ভাঙনের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় কুশিয়ারা নদী ও তীরবর্তী এলাকা পানিতে একাকার হয়ে গেছে। বানের পানিতে উপজেলা সদরসহ ৬০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: পাহাড়ি ঢলে মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে ফুলগাজীর ৪ গ্রাম প্লাবিত
বালাগঞ্জ উপজেলার অবস্থাও একই। কুশিয়ারা নদীর ডাইক ভেঙে ও ওপর দিয়ে পানি প্রবেশ করে বাড়িঘর, হাটবাজার ও রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গিয়ে বালাগঞ্জ-খছরুপুর ও ফেঞ্চুগঞ্জ-বালাগঞ্জ সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তাছাড়া বন্যার কারণে জেলা সদরের সঙ্গে এখনো বিয়ানীবাজার উপজেলার সড়ক যোগাযোগ ঠিকে থাকলেও যে কোনো সময় তা বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
সোমবার সারাদিন বিয়ানীবাজার উপজেলার বন্যাকবলিত এলাকায় পানি বৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার চারখাই, আলীনগর, শেওলা, দুবাগ, কুড়ারবাজার ও থানাবাজারসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। উপজেলার লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
ওসমানীনগর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতিও ভয়াবহ হয়ে ওঠেছে। উপজেলার গোয়ালাবাজার, তাজপুর, দয়ামীর, বুরঙ্গা, সাদিপুর, পশ্চিম পৈলনপুর, উসমানপুর ও উমরপুর ইউনিয়নের পুরোটাই পানিতে তলিয়ে গেছে। কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সময় সময় বন্যা পরিস্থিতিরও অবনতি ঘটছে।
গোলাপগঞ্জ উপজেলার সুরমা তীরবর্তী বাঘাসহ কয়েকটি ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে কুশিয়ারা তীরবর্তী এলাকায় অবনতি হয়েছে। উপজেলার শরীফগঞ্জ, বাদেপাশা, ঢাকাদক্ষিণ, আমুড়া ও ভাদেশ্বর ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতির বেশ অবনতি হয়েছে। পানি বৃদ্ধি পেয়ে কুশিয়ারা তীরবর্তী ইউনিয়নগুলোর নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন: গাইবান্ধায় নদ-নদীর পানি বেড়েছে, নিচু এলাকা প্লাবিত
সুরমা নদীর তীরবর্তী সিলেট নগরী, সদর, বিশ্বনাথ ও কানাইঘাট উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। সিলেট নগরীর উঁচু এলাকা থেকে পানি নেমে গেছে। নদী তীরবর্তী এলাকায় এখনো লাখো মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। বাকি উপজেলাগুলোতেও লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন। ধলাই, পিয়াইন, সারি ও লোভা নদীর পানি কমায় জেলার কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলার বন্যা কবলিত এলাকার পানি কিছুটা কমেছে। তবে পানি কমার গতি খুবই ধীর বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এই তিন উপজেলার এখনও ৯০ ভাগ এলাকা প্লাবিত রয়েছে।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে প্রধানমন্ত্রী
হেলিকপ্টার থেকে ‘লো-ফ্লাই মুডে’ মঙ্গলবার সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা ও তৎসংলগ্ন এলাকার বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি লো-ফ্লাই মুড বা নিচু হয়ে উড়েছিল। এতে তিনি দুর্গত এলাকা প্রত্যক্ষ করেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে সিলেট সার্কিট হাউসে যান। যেখানে বিভাগীয়, জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে।
এর আগে, বন্যার পানিতে বিস্তীর্ণ এলাকা সমুদ্রে পরিণত হওয়ায় বিশেষ করে সিলেটের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যার্তদের সরিয়ে নিতে এবং অসহায় মানুষকে সহায়তার জন্য বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করতে কর্তৃপক্ষ সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানায়, একইসাথে নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর ইউনিটগুলোকে ডাকা হয়েছে।
শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকার ১৫ থেকে ১৮ জুন বন্যাকবলিত জেলাগুলোর জেলা প্রশাসকদের তাৎক্ষণিক মানবিক সহায়তা হিসেবে নগদ ২২.৫ মিলিয়ন টাকা, ৪০০ মেট্রিক টন চাল এবং ৪১ হাজার প্যাকেট শুকনো ও অন্যান্য খাবার বরাদ্দ দিয়েছে।
পড়ুন: সরকারের নিষ্ক্রিয়তায় বন্যার্তরা ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে: বিএনপি
সিলেটে কমছে বন্যার পানি, বাড়ছে দুর্ভোগ
বন্যায় দুর্ভোগ কমাতে সব ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার: প্রধানমন্ত্রী
চলমান বন্যার প্রকোপ মোকাবিলা ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের দুর্ভোগ কমাতে সরকার যথেষ্ট ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘এবার (বন্যার) প্রকোপ কিছুটা তীব্র। এটি কিছু সময়ের জন্য থাকতে পারে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত থাকতে পারে।’
সোমবার প্রধানমন্ত্রীর সংসদ ভবনের কার্যালয়ে জাপানের রাষ্ট্রদূত নাওকি ইতো দেখা করতে গেলে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের দুর্ভোগ কমাতে সরকার সব কিছু করছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের এই প্রকৃতির সঙ্গেই বাঁচতে হবে। বন্যা দুর্গতদের সব ধরনের সহায়তা দেয়ার জন্য আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
আরও পড়ুন: সিলেটে কমছে বন্যার পানি, বাড়ছে দুর্ভোগ
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সময় থেকে জাপান উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহায়তা দিয়ে আসছে।
দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিয়ে তিনি বলেন, এটা দীর্ঘদিন ধরে সেনানিবাসে সীমাবদ্ধ ছিল। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তারা (সামরিক শাসকরা) শাসন করেছে। সেখান থেকে আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছি।
তিনি বলেন, দেশে গণমাধ্যম স্বাধীন। বাংলাদেশে ৩৩টি টিভি চ্যানেল চালু আছে।
তিনি বলেন, ‘এর আগে শুধু রাষ্ট্র পরিচালিত বাংলাদেশ টেলিভিশনই কাজ করত।’
পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালের ৪ জুলাই তিনি প্রথম সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় না আসা পর্যন্ত কাজটি এগোয়নি।
কক্সবাজারে বিশ্বের দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত থাকায় তার সরকার কক্সবাজারকে পর্যটনের জন্য উন্নত করতে চায় বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
রাষ্ট্রদূত নাওকি ইতো প্রধানমন্ত্রীকে তার দেশে আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী যদি এই বছরের নভেম্বরের কোনো সময় জাপানে সফর করেন তাহলে তারা খুশি হবেন।
তিনি বলেন, জাপান বাংলাদেশের উন্নয়ন কাজে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।
এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত বলেন, মেট্রোরেল উদ্বোধনের জন্য তিনি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি, আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দি
আগামী বছর থেকে জাপানি কোম্পানি আড়াইহাজার বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাজ শুরু করবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আজ বিশ্ব শরণার্থী দিবস পালিত হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাপান রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দ্রুত প্রত্যাবাসন চায়।
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য সরকার উন্নত সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে।
এ সময় মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস উপস্থিত ছিলেন।
সিলেটে কমছে বন্যার পানি, বাড়ছে দুর্ভোগ
সিলেটে সুরমা নদীর পানি ধীর গতিতে কমতে শুরু করলেও বাড়ছে কুশিয়ারা নদীর পানি। তবে সুরমা নদীর পানি সামান্য কমলেও জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।
প্লাবিত এলাকার বেশিরভাগ এখনও পানির নিচে। নগরীর উচু এলাকায় পানি কমলেও নিম্নাঞ্চলের বাসাবাড়ি ও রাস্তাঘাট এখনো পানিতে তলিয়ে রয়েছে। উপশহরের প্রধান সড়কে এখনও কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও কোমর পর্যন্ত ডুবে আছে। ফলে বন্যা কবলিত এলাকায় মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে।পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুযায়ী, রবিবার সন্ধ্যা থেকে সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে ১৮ সেন্টিমিটার ও সিলেট (নগরী) পয়েন্টে ১ সেন্টিমিটার কমেছে। একই সময়ে কুশিয়ারা নদীর পানি শেরপুর পয়েন্টে কমলেও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার বেড়েছে। অবশ্য সারি ও লোভাছড়া নদীর পানি কমেছে।আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যার পানি কমছে, খাবার ও পানির সংকট
আকস্মিক বিপর্যয় সামলে উঠেছে শাবিপ্রবি
উজানের পাহাড়ি ঢল নামায় সিলেট অঞ্চলে দেখা দিয়েছে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা। তলিয়ে গিয়েছিল সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) ক্যাম্পাস। এতে বিপাকে পড়তে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারী সকলের। চারদিকে পানিবন্দি হয়ে আবাসিক হলে আটকে পড়ে শিক্ষার্থীরা। এই আকস্মিক বিপর্যয়ে প্রথম থেকেই দায়িত্বশীল ভূমিকায় সামলে উঠেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যায়(শাবিপ্রবি) প্রশাসন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বন্যায় মেয়েদের দুই আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। বৈদ্যুতিক ট্রান্সমিটার পানির সংস্পর্শে থাকায় হলগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছিল। এই অবস্থায় গত ১৬ জুন থেকে খাবার পানি সরবরাহ বন্ধসহ অন্যান্য দিকে সমস্যা তৈরি হয়। প্রথম দিন থেকে হল প্রাধ্যক্ষদের তৎপরতায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়েছে।
১৭ জুন সরেজমিনে আবাসিক দুই হলের মেয়ে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যেতে সার্বক্ষণিক তদারকি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ইশরাত ইবনে ইসমাইল এবং ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা অধ্যাপক আমিনা পারভীন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে এই সময় মাঠপর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এছাড়াও ছাত্রীদের উদ্ধারে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এগিয়ে এসে সহায়তা করে।
আরও পড়ুন: যমুনায় পানি বাড়ায় সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, বাঁধ ভেঙে ৫ গ্রাম প্লাবিত
একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-কর্মকর্তা কোয়ার্টারে আটকে পড়া শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়াসহ খাবার, ওষুধ ও নিরাপদ পানির ব্যবস্থাও করে প্রক্টরিয়াল টিম। বন্যায় আটকে পড়া মেয়ে শিক্ষার্থীদের যারা হল ছাড়তে পারিনি তাদেরকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়ার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাড়াকৃত হোস্টেল আমির ও ফজল কমপ্লেক্সে রাখা হয়।
যমুনায় পানি বাড়ায় সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, বাঁধ ভেঙে ৫ গ্রাম প্লাবিত
উজানের ঢল ও প্রবল বর্ষণে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানির চাপে পৃথক দুটি স্থানে রিং বাঁধ ও কাঁচাসড়ক ভেঙে যাওয়ায় ভাটি এলাকার পাঁচটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
সোমবার সকালের রেকর্ড অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ২১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং কাজিপুর পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন: পাহাড়ি ঢলে মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে ফুলগাজীর ৪ গ্রাম প্লাবিত
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (হেডকোয়ার্টার) নাসির উদ্দিন জানান, শনিবার রাতে পানির চাপে শাহজাদপুর উপজেলার বড়াল নদীর রাউতারা রিং বাঁধ (ডুবন্ত) ভেঙে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভাটি এলাকার বহু পরিবার। রবিবার সকালে সিরাজগঞ্জ সদরের বিয়ারাঘাট এলাকায় নির্মিত একটি কাঁচা সড়ক পানির চাপে ভেঙে ভাটি এলাকার পাঁচটি গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে।
আরও পড়ুন: গাইবান্ধায় নদ-নদীর পানি বেড়েছে, নিচু এলাকা প্লাবিত
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কালিয়া হরিপুর ইউপির চেয়ারম্যান আব্দুস সবুর বলেন, প্রায় ২ মাস আগে বিয়ারাঘাট থেকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের গ্রাম পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই সড়কটি নির্মাণ করা হয়। রবিবার সকালে পানির চাপে এ সড়কটি ভেঙ ভাটি এলাকার বিয়ারাঘাট, পাইকপাড়া, ঘোনাপাড়া ও রামগাঁতী গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের বহু পরিবার এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে। তবে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এছাড়া কয়েকদিন ধরে উজানের ঢল ও প্রবল বর্ষণে যমুনা নদীতে পানি বেড়েই চলেছে। এতে যমুনার তীরবর্তী সিরাজগঞ্জের কাজিপুর, বেলকুচি, শাহজাদপুর, চৌহালী ও সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নিম্নাঞ্চল বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। চরাঞ্চলের বাদাম ও পাটসহ বিভিন্ন ফসল ডুবে গেছে এবং অনেক এলাকার কাঁচা সড়ক যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
যমুনায় পানি অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকায় বিশেষ করে নদী তীরবর্তী পাঁচটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল বন্যা কবলিত হয়ে পড়ায় অনেক পরিবার এখন মানবেতর জীবন যাপন করছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলছেন, যমুনা নদীতে ২২ জুন পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও এরপর হয়তো কমতে পারে। তবে বন্যার আশঙ্কা করা হলেও এখনো তেমন আশঙ্কাজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। নদী তীরবর্তী বিভিন্ন স্থানে ভাঙন শুরু হওয়ায় ঘরবাড়ি, ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
আরও পড়ুন: পাহাড়ি ঢলে মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে ফুলগাজীর ৪ গ্রাম প্লাবিত
তিনি জানান, চৌহালী, এনায়েতপুর ও শাহজাদপুরসহ ভাঙনকবলিত স্থানে ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ নিক্ষেপ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এছাড়া বাঁধসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে নজর রাখা হচ্ছে।
চট্টগ্রামে বৃষ্টির পানিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ২ জনের মৃত্যু
চট্টগ্রাম মহানগরীর একটি আবাসিক এলাকার ভবনের নিচে তলায় বৃষ্টির পানি জমে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে পাঁচলাইশ থানাধীন কাতালগঞ্জ আবাসিকের ১ নম্বর সড়কের একটি পেট্রোল পাম্পের সামনে খান বাড়ির নিচতলায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
মৃতরা হলেন- মীরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ থানার সত্তরোয়া এলাকার ছালেহ আহমেদের ছেলে গাড়ি চালক মো. হোসেন (৩৮) ও খাগড়াছড়ির রামগড় থানার গজলতলা এলাকার মৃত আবদুর রউফের ছেলে বাড়ির কেয়ারটেকার আবু তাহের (৬৫)।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎস্পৃষ্টে নারায়ণগঞ্জে ৩ জায়ের মৃত্যু
পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজিম উদ্দিন মজুমদার জানান, রাতে খান বাড়ির নিচতলায় বৃষ্টির কারণে হাঁটু পরিমাণ পানি উঠে যায়। এতে পরিবারের সদস্যরা দ্বিতীয় তলায় উঠে যান। নিচতলায় আইপিএসের সংযোগ ছিল, পানি ওঠায় কেয়ারটেকার আবু তাহের আইপিএস বন্ধ করতে গেলে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে আহত হন। তাকে বাঁচাতে গিয়ে গাড়ি চালক হোসেনও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন।
আরও পড়ুন: লাইনে সংস্কারের সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে লাইনম্যানের মৃত্যু
পরে তাদেকে উদ্ধার করে নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় পাঁচলাইশ থানায় অপমৃত্যু মামমলা হয়েছে বলে ওসি জানিয়েছেন।
কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি, আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দি
নদ-নদীর পানি বাড়তে থাকায় কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। সোমবার সকালে সেতু পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার ও চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ৫১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এতে ৪৯টি ইউনিয়নের প্রায় দুই শতাধিক চরের প্রায় আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রৌমারী উপজেলা। সেখানে প্রায় এক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে বেশ কয়েকটি পাকা সড়ক। প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা থাকায় জেলা প্রশাসন থেকে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানিয়েছেন, বন্যার প্রস্তুতি হিসেবে জেলা প্রশাসক দপ্তরে ও প্রতিটি উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ ও আইনশৃঙ্খলা সঙ্গে জড়িত কর্মকতা কর্মচারীদের কর্মস্থলে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ ৩৬১টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এদিকে নাগেশ্বরী উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের মুড়িয়ারহাট এলাকায় দুধকুমার নদের একটি বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করে আরও ৫টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। শুক্রবার সকালে এই বাঁধটি ভেঙে যায়। ঝুঁকিতে রয়েছে সারডোব, বাংটুরঘাট ও গুরুত্বপূর্ণ যাত্রাপুর বাজার সংলগ্ন ক্রস বাঁধটি।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান জানিয়েছেন, ব্রহ্মপুত্র ও ধরলায় আরও পানি বাড়বে এবং পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। সে কারণে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলো মেরামতের কাজ চলছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রবিবার পর্যন্ত জেলায় ১০ হাজার ৮৯৪ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এরমধ্যে ৬ হাজার ৮০৬ হেক্টর জমির পাট ক্ষেত রয়েছে।
এদিকে বন্যাকবলিত এলাকায় দেখা দিয়েছে শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, গো-খাদ্য ও জ্বালানির তীব্র সংকট। কাজ বন্ধ হওয়ায় দিনমজুর পরিবারগুলোর ঘরে খাদ্য সংকট প্রকট হয়েছে। চারণভূমি ডুবে যাওয়ায় গবাদী পশুর খাদ্য মিলছে না। চরাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে হাট বাজার যাতায়াতসহ যোগাযোগের চরম ভোগান্তিতে পড়েছে বানভাসি মানুষ।
পড়ুন: পানিবন্দি ২ লাখ মানুষ, কুড়িগ্রামে বাড়ছে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি
মা-বাবার খোঁজে রনির রাবারের নৌকায় যাত্রা!
চারিদিকে বন্যা। সেই সঙ্গে নেই বিদ্যুৎ। মা-বাবার সঙ্গে কোনোভাবে যোগাযোগ করতে না পেরে ঢাকায় জরুরি কাজ ফেলে রাবারের নৌকা কিনে সিলেটে আসেন তিনি। শনিবার বিকালে এ ঘটনা ঘটে।
রনি তালুকদার (৩০) নামের ওই যুবক ছাতক পৌরসভার মণ্ডলীভোগ গ্রামের বাসিন্দা।
জানা যায়, লাইফ জ্যাকেটসহ জীবন রক্ষাকারী সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে গুগল ম্যাপ দেখে ছাতক শহরের উদ্দেশে তিনি সিলেট সদর উপজেলার জালালাবাদ থানা এলাকা থেকে রওনা দেন। রাবারের নৌকা নিয়ে বন্যার পানিতে নেমে গন্তব্যে ছুটে চলেন রনি। একসময় পানির স্রোতে রাবারের নৌকাটি এদিক-ওদিক ছোটাছুটি শুরু করলে তখন ভীত হয়ে পড়েন তিনি। দু হাতে বৈঠা নিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকা চালিয়ে বিপদের দিকে এগিয়ে যান তিনি। মারাত্মক ঝুঁকিতে থাকা রনি তালুকদারের আকুতির কথা শুনে মধ্যপথে ইঞ্জিন নৌকা থামিয়ে তাকে উদ্ধার করলেন জালালাবাদে ত্রাণ বিতরণে যাওয়া একদল লোক।
আরও জানা যায়, রনি তালুকদার প্রবাসে যাওয়ার জন্য জরুরি কাজে ঢাকায় যান গত সপ্তাহে। বন্যার পানি বাড়ার পর প্রতিনিয়ত মোবাইল ফোনে খোঁজ রাখছিলেন পরিবারের সঙ্গে। বৃহস্পতিবার রাতে পরিবারের সঙ্গে শেষবার তার মোবাইল ফোনে কথা হয়। এরপর থেকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন তিনি।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যার পানি কমছে, খাবার ও পানির সংকট
বিপদ থেকে বেঁচে যাওয়ার পর রবিবার রনি তালুকদার বলেন, ‘আমার পরিবারের কোনও খোঁজ পাইনি এখনও। তবে যতটুকু ধারণা করছি,তারা নিরাপদে আছে। এখন তাদের খোঁজে ট্রাকে করে ছাতকে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন,‘শেষ যখন কথা হয় তখন মা জানান,বাড়ির দোতলা পর্যন্ত পানি উঠেছে। পানি আরও বাড়ছে। কোনও উপায় না পেয়ে ঢাকা থেকে সাত হাজার টাকা দিয়ে নৌকা কিনে সিলেটে চলে আসি এবং ইঞ্জিন নৌকার খোঁজ করি। কিন্তু কেউ যেতে চায়নি। আবার কেউ যেতে চাইলে ৪০-৬০ হাজার টাকা ভাড়া চায়। তাই জীবনের ঝুঁকি থাকার পরেও পরিবারের জন্য পানিতে নেমে পড়ি।’
তিনি আরও জানান,গুগল ম্যাপ দেখে জানতে পারেন সদর উপজেলা থেকে পানিপথে ছাতকের দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার। এরপর যাত্রা শুরু করেন।
রনি তালুকদারকে উদ্ধারকারীদের একজন সিলেটের মদন মোহন কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আবুল কাশেম বলেন,‘প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম,যুবকটি এমনিতেই বন্যার পানিতে নেমেছেন। পরে তার আকুতির পর তাকে উদ্ধার করি। সারাদিন তাকে নিয়ে ত্রাণ বিতরণ করে শনিবার রাতে তাকে সিলেটে নামিয়ে দিই।’
তিনি জানান,রনি তালুকদার আমাদের নৌকায় উঠে কিছুক্ষণ পর অঝোরে কাঁদতে থাকেন। পরিবারের প্রতি ভালোবাসার কারণে আবেগের বশে তিনি রওনা দিয়েছিলেন। আমাদের নৌকায় ওঠার পর তার বোধোদয় হয়েছে,এটা ছিল অবশ্যম্ভাবী মৃত্যুযাত্রা।
আরও পড়ুন: বন্যার্তদের সাহায্যের আহ্বান তারকাদের
ভয়াবহ বন্যায় বন্দি সিলেটবাসী
আসামে বন্যায় আরও ৮ জনের মৃত্যু, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬২
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় আসাম প্রদেশে ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসে আরও আটজনের মৃত্যু হয়েছে বলে রবিবার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এ নিয়ে প্রদেশটিতে বন্যায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬২ জনে পৌঁছেছে।
আসামের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, স্ফীত ব্রহ্মপুত্র নদের তীর ভেঙে প্রদেশের ৩৫টি জেলার মধ্যে ৩২টি জেলা প্লাবিত হয়েছে। এতে ৩০ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। উদ্ধার অভিযানে ভারতীয় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে এবং বিমানবাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
ব্রহ্মপুত্র চীনের তিব্বত থেকে ভারত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়েছে।
রবিবার পূর্ব আসামের ডিব্রুগড় জেলায় ৯ জন যাত্রী নিয়ে একটি নৌকা ডুবে চারজন নিখোঁজ হয়েছেন। ডিব্রুগড় প্রদেশটির রাজধানী গুয়াহাটি থেকে ৫০০ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। উদ্ধার অভিযান চলমান থাকলেও প্রবল স্রোতের কারণে তা বাধাগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এদিকে টানা বর্ষণের পর বৃষ্টি থেকে মুক্তির আশা করছেন আবহাওয়াবিদরা।
শনিবার আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন এবং পরিস্থিতিকে ভয়াবহ বলে বর্ণনা করেন।
সেনাবাহিনী ও অন্যান্য উদ্ধার সংস্থা ২০ হাজারের বেশি লোককে উদ্ধার করেছে উল্লেখ করে শর্মা বলেন, ‘আমরা এখন ত্রাণ ও উদ্ধার অভিযানে মনোনিবেশ করছি।’