বন্যা
বন্যার পানিতে বিদ্যুতের তার, সিলেটে যুবলীগ নেতার মৃত্যু
সিলেটে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে যুবলীগ নেতা টিটু চৌধুরীর মৃত্যু হয়েছে। শনিবার দুপুরে নগরের শাপলাবাগে নিজ বাসার সামনে বন্যার পানির নিচে ছিঁড়ে যাওয়া বিদ্যুতের তারে স্পৃষ্ট হয়ে তিনি মারা যান।টিটুর পরিবারের বরাত দিয়ে সিলেট মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি বলেন, ‘শাপলাবাগে টিটুর বাসা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। শনিবার দুপুর ১২ টার দিকে তিনি বাসার সামনের সড়কে আসেন। এসময় পানিতে ছিঁড়ে পড়া একটি বিদ্যুতের তারে স্পৃষ্ট হন টিটু।’মুক্তি আরও জানান, ‘সঙ্গে সঙ্গেই ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে আসলে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেট-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শামস ই আরেফিন বলেন, ‘অনেক জায়গায়ই বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়েছে। খবর পাওয়ামাত্র আমরা তা মেরামত করছি। কিন্তু পানির কারণে অনেক জায়গায় তার ছেঁড়ার বিষয়টি বুঝা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় সবাইকে সতর্কভাবে চলাচল করতে হবে।’
আরও পড়ুন: সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ
বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ: সিলেট ও সুনামগঞ্জ বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন
স্কুল, কলেজগুলোকে বন্যার আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হবে: মাউশি
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) বন্যা কবলিত এলাকায় আশেপাশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে।
শনিবার মাউশির মহাপরিচালক নেহাল আহমেদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে স্কুল-কলেজ ভবনগুলোকে বন্যাকবলিত মানুষের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বন্যায় আটকে পড়া শাবিপ্রবি ছাত্রীদের উদ্ধারে বিজিবি
ভ্রমণে গিয়ে সুনামগঞ্জে বন্যায় আটকা পড়েছেন ঢাবির ২১ শিক্ষার্থী
বন্যা কবলিত এলাকাগুলোকে ‘বন্যাদুর্গত এলাকা’ ঘোষণার দাবি বিএনপির
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বন্যা কবলিত এলাকাগুলোকে অবিলম্বে ‘বন্যাদুর্গত এলাকা’ ঘোষণা এবং ক্ষতিগ্রস্ত সব মানুষকে পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী দেয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে বিএনপি।
শনিবার ঢাকা উত্তর সিটি ইউনিটের অধীন ভাটরায় বিএনপির তিন ওয়ার্ডের কাউন্সিলে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, হাজার হাজার বন্যার্ত মানুষ যখন অবর্ণনীয় দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, সরকার তখন পদ্মা সেতু উদ্বোধন নিয়ে এত ব্যস্ত।
তিনি বলেন, ‘দেশে বন্যা চলছে। সিলেট-সুনামগঞ্জ থেকে শুরু করে উত্তরের নীলফামারী, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।’
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের উল্লেখ করে এই বিএনপি নেতা বলেন, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ফারাক্কা ব্যারেজের সব গেট খুলে দেয়ায় পদ্মা, মেঘনা, যমুনাসহ বড় নদীগুলোর পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে অনেক এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ‘বন্যার পানি ফসল, ঘরবাড়ি, গবাদিপশু এবং মানুষের মূল্যবান সম্পদ ধ্বংস করছে।’
তিনি বলেন,‘আমরা এই এলাকাগুলোকে অবিলম্বে বন্যাদুর্গত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করার এবং কোনও বিলম্ব ছাড়াই এইসব এলাকার মানুষকে ত্রাণ সরবরাহ করার দাবি জানাই। এই দুঃসময়ে সরকার উৎসব নিয়ে ব্যস্ত। তারা পদ্মা সেতু উদ্বোধন নিয়ে এতই ব্যস্ত যে জনগণের কল্যাণ ও জনদুর্ভোগের দিকে তাকানোর সময় নেই।’
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব হিসেবে দেশ বন্যার মুখে পড়ছে। ‘কিন্তু সেই বন্যা রোধ করা এবং ক্ষয়ক্ষতি কমানো সরকারের দায়িত্ব।’
আরও পড়ুন: আমরা জানতাম কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে এমন হবে: ফখরুল
এক দশকেরও বেশি সময় ধরে অভিন্ন নদীগুলোর পানি বণ্টন নিয়ে সরকার ভারতের সঙ্গে চুক্তি করতে পারেনি বলে আক্ষেপ করেন বিএনপি নেতা।
তিনি আরও বলেন, সরকার অনেকদিন ধরেই তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি করার কথা বলে আসছে, কিন্তু এখনো তা হয়নি।
ফখরুল বলেন, তারা (ভারত) যখন হঠাৎ করে ফারাক্কা ব্যারেজের গেট খুলে দেয়, তখন পানির চাপ সামলানো সম্ভব হয় না। ‘সিলেট, সুনামগঞ্জসহ অন্যান্য অঞ্চল এখন এই সমস্যার সম্মুখীন। এটা এই সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতি এবং জনগণের প্রতি অবহেলার প্রমাণ’।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, বন্যা প্রতিরোধে বিভিন্ন হাওর ও অন্যান্য অঞ্চলে অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত অনেক বাঁধ, সেতু ও রাস্তা দুর্নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বন্যা প্রতিরোধে এবং বন্যাপ্রবণ এলাকায় জনদুর্ভোগ কমাতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান এই বিএনপি নেতা।
আরও পড়ুন: অর্থমন্ত্রীর কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংবিধান ও নৈতিকতার সংযোগ নেই: ফখরুল
কুসিক নির্বাচন প্রমাণ করেছে নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়: ফখরুল
সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ
বন্যার পানির কারণে সিলেট রেলস্টেশন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে সারা দেশের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সিলেটের রেল যোগাযোগ। শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে এ ঘোষণা দেয়া হয়।
স্টেশনের ব্যবস্থাপক নুরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, রেলস্টেশনে পানি উঠে যাওয়ায় সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া বা সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের মাইজগাঁও স্টেশন পর্যন্ত রেল যোগাযোগ সচল রাখা যায় কি না- এ বিষয়ে আলোচনা চলছে। এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
আরও পড়ুন: বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ: সিলেট ও সুনামগঞ্জ বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন
দেখুন:
বন্যায় দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে নেত্রকোনার রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
বন্যায় নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে একটি রেলসেতু ভেঙে পড়ায় শনিবার সকাল থেকে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে নেত্রকোনা জেলার রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
বারোহাট্টা রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার গোলাম রাব্বানী জানান, বন্যার পানিতে শুক্রবার রাতে মোহনগঞ্জ ও অতীতপুর রেলস্টেশনের মাঝামাঝি ২৩ নম্বর রেলব্রিজ ভেঙে পড়েছে। এতে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে নেত্রকোনার রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
তিনি আরও জানান, আন্তনগর ট্রেন ‘হাওর এক্সপ্রেস’ মোহনগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যেতে পারেনি। এদিকে ময়মনসিংহ থেকে ছেড়ে আসা ২৬২ নম্বর লোকাল ট্রেন আটকা পড়েছে বারহাট্টা স্টেশনে। এতে যাত্রীরা চরম বিপাকে পড়েছে।
এ ব্যাপারে মোহনগঞ্জ স্টেশনের জিআরপি ফাঁড়ির ইনচার্জ জানান, হাওড় এক্সপ্রেস ট্রেনটি মোহনগঞ্জে আটকা পড়েছে। রেলব্রিজটির নিচে পানির তীব্র স্রোত থাকায় ব্রিজটি মেরামত করতে সময় লাগবে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত মোহনগঞ্জের সঙ্গে ময়মনসিংহ ও ঢাকাসহ অন্যান্য অঞ্চলের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকবে বলে রেল কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
নেত্রকোনা জেলার ছয়টি উপজেলার ৩৯ টি ইউনিয়ন পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টিতে বন্যা কবলিত হয়েছে। সোমেশ্বরী নদীর পানি বিপদসীমার ৩৬ সেমি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি, এক লাখ মানুষ পানিবন্দি
বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ: সিলেট ও সুনামগঞ্জ বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন
পাহাড় ধসের আশঙ্কা: সরিয়ে নেয়া হচ্ছে রাঙ্গামাটিতে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাবাসীকে
রাঙ্গামাটি জেলায় গত কয়েকদিনের টানা ভারী বৃষ্টির ফলে পাহাড় ধসের আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে শহরের বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারীদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।
শুক্রবার রাত ১২টার দিকে জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করে সেখান থেকে সাধারণ মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যেতে নির্দেশনা দেন এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে বেশ কিছু লোকজন আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেন।
এই সময় তার সঙ্গে রাঙ্গামাটি ফায়ার সার্ভিসের টিম, রেড ক্রিসেন্ট, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতারা ছিলেন।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি, মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা
জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান বলেন, গত কয়েকদিন ধরে ভারী বর্ষণের ফলে সম্ভাব্য পাহাড় ধসের প্রাণহানী ঠেকাতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে জরুরি সভা করেছি এবং রাঙ্গামাটি শহরসহ বিভিন্ন উপজেলায় পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের নিরাপদে আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যেতে সচেতনতা মূলক প্রচারণা ও মাইকিং করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকলের সঙ্গে সমন্বয় করে টিম গঠন করে দেয়া হয়েছে এবং বৃষ্টি হলেই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ম্যাজিস্ট্রেটসহ সংশ্লিষ্ট আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এলাকায় গিয়ে তাদের আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন: বন্যায় শেরপুরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
জেলা প্রশাসক বলেন, ভারী বর্ষণের কারণে শুক্রবার রাত ১২টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত রাঙ্গামাটি শহরের লোকনাথ মন্দির, শিমুলতলি, রূপনগর, মোনঘর এলাকাসহ বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে শহরে ২৮টি ঝুকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে এবং ১৯টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি জেলার অন্যান্য উপজেলাগুলোতেও উপজেলা প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে।
বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ: সিলেট ও সুনামগঞ্জ বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন
সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার আরও অনেক এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্ধ রাখা হয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। এতে এ দুই জেলার বন্যা কবলিত মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে।
ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে প্রধান প্রধান নদীর পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
সিলেটের কুমারগাঁও গ্রিড পাওয়ার সাব-স্টেশনে বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় শনিবার দুপুর ১২টায় কর্তৃপক্ষ দুই জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী (বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ) আব্দুল কাদির।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, নজিরবিহীন এ বন্যায় সিলেট বিভাগের ৮০ শতাংশ ও সুনামগঞ্জের ৯০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি, মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা
কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি, এক লাখ মানুষ পানিবন্দি
উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টির কারণে প্রধান প্রধান নদীর পানির বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় কুড়িগ্রাম জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। এতে জেলার এক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার সকাল ৬টায় সেতু পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপরে এবং চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এছাড়া টানা বর্ষণে তিস্তা নদীর পানিও অনেক জায়গায় বেড়েছে।
আরও পড়ুন: বন্যার্তদের জন্য ২৬ হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেটসহ নগদ অর্থ বরাদ্দ
কুড়িগ্রাম সদর, উলিপুর, ফুলবাড়ী, নাগেরশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী ও চিলমারী উপজেলার নিচু এলাকা ও চরাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে এবং বন্যায় প্রায় শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে।
জেলার ৩০টি পয়েন্টে নদীভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করেছে এবং ২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বহু ঘরবাড়ি ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় ছয় হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে এবং ১৫০টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি, মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা
এছাড়া জেলার ৯টি উপজেলার অনেক সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
বন্যার পানি বসতবাড়িতে ঢুকে পড়ায় অনেকেই রাস্তা ও বাঁধসহ উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।
গত কয়েকদিন ধরে বন্যা কবলিত এলাকার হাজারো মানুষ খাদ্য ও সুপেয় পানির সংকটে ভুগছেন।
বন্যার্তদের জন্য ২৬ হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেটসহ নগদ অর্থ বরাদ্দ
বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যার্থে মানবিক সহায়তা হিসেবে বিতরণের লক্ষ্যে ২৬ হাজার শুকনো ও অন্যান্য খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) এ বরাদ্দ দেয়া হয় বলে শুক্রবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
এতে বলা হয়, প্রতিটি প্যাকেটে চাল-ডাল-তেল-লবণ চিনিসহ যে খাদ্য সামগ্রী রয়েছে তা পাঁচ সদস্যের একটি পরিবারের এক সপ্তাহ চলবে বলে আশা করা যায়। একই সাথে নগদ টাকা এবং চালও বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সিলেট জেলায় ২০০ মেট্রিক টন চাল, ৩০ লাখ নগদ টাকা এবং ৮ হাজার শুকনো ও অন্যান্য খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: ধরলার পানি বিপদসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপরে
সুনামগঞ্জ জেলার জন্য নগদ ৩০ লাখ টাকা এবং ৮ হাজার শুকনো ও অন্যান্য খাবারের প্যাকেট, নেত্রকোণা জেলার জন্য ১০০ মেট্রিক টন চাল, ১০ লাখ নগদ টাকা এবং ৩ হাজার শুকনো ও অন্যান্য খাবার প্যাকের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
এছাড়া কুড়িগ্রাম জেলার জন্য নগদ ১০ লাখ টাকা এবং ১ হাজার শুকনো ও অন্যান্য খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। রংপুর জেলার জন্য ৩ হাজার এবং নীলফামারী জেলার জন্য ৩ হাজার শুকনো ও অন্যান্য খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
বরাদ্দকৃত ত্রাণকার্য (নগদ) অর্থ শুধুমাত্র আপদকালীন সময়ে বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে মানবিক সহায়তা হিসেবে বিতরণ করতে হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: বন্যা পরিস্থিতির অবনতিতে ওসমানী বিমানবন্দরে ফ্লাইট ওঠা-নামা বন্ধ
তিস্তায় পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি, মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা
গত কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এক মাসের মাথায় আবারও পানিতে ভাসছে সিলেট। জেলার নদীগুলোর পানি হু হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। নদীর তীর উপচে নতুন করে হাজার হাজার বাড়িঘরে পানি ঢুকছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন অন্তত পাঁচ লাখের বেশি মানুষ। দুর্গত এলাকায় প্রয়োজনীয় খাদ্য ও উদ্ধার তৎপরতা না থাকায় মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এদিকে বন্যার পানিতে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে সুনামগঞ্জ ও ছাতকের সঙ্গে সিলেটের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
সিলেটের দক্ষিণ সুরমার ঝালোপাড়া এলাকার বাসিন্দা তবারক হোসেন বলেন, প্রতিদিনই পানি বাড়ছে, এভাবে বাড়তে থাকলে সিলেটের কোনো জায়গাই শুকনা থাকবে না।
তিনি বলেন, ‘এত দ্রুত পানি বাড়তে আগে কখনো দেখিনি। এক দিনেই পুরো এলাকা তলিয়ে গেল।’
শুধু ঝালোপাড়াই নয়, পুরো সিলেটেই দ্রুত বাড়ছে পানি। জেলার বেশির ভাগ এলাকাই ইতোমধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যাদুর্গতদের উদ্ধারে শুক্রবার থেকে মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী।
গত বুধবার থেকে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। অথচ বৃহস্পতিবারই তা ভয়াবহ রূপ নেয়। এদিন বিকাল থেকে দ্রুত বাড়তে শুরু করে পানি। সিলেট নগরের বেশির ভাগ এলাকাই পানিতে তলিয়ে গেছে।
গত মে মাসের মাঝামাঝিতে আরেক দফা বন্যা হয় সিলেটে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসেবে, মে মাসের বন্যায় গত ১৮ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পানি হয় সিলেটে। তবে চলমান বন্যা গত মাসের রেকর্ডও ছাড়িয়ে গেছে বলে দাবি প্লাবিত এলাকার মানুষদের।
নগরের শাহজালাল উপশহর এলাকার কয়সর আহমদ বলেন, ‘গত মাসের বন্যায় এতো পানি হয়নি। মে মাসের বন্যায় উপ-শহরের মোড়ে পানি উঠেনি। এবার উপশহরের মোড়ও তলিয়ে গেছে। আর এবার পানি বাড়ছে দ্রুত। একদিনেই পুরো এলাকা তলিয়ে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার বাসার ভেতরে এখন কোমর সমান পানি। বাসার চৌকিও পানিতে তলিয়ে গেছে।’
আরও পড়ুন: বন্যায় সারাদেশের সঙ্গে সুনামগঞ্জের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন