বন্যা
ফিলিপাইনে বন্যা ও ভূমিধসে ৩১ জনের মৃত্যু
ক্রান্তীয় ঝড় নালগা দক্ষিণ ফিলিপাইনে আঘাত হানার ফলে প্রবল বর্ষণের কারণে হওয়া আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসে অন্তত ৩১ জন মারা গেছেন এবং অন্তত ৯জন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।
শুক্রবার দেশটির কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন।
মুষলধারে বৃষ্টি ও ঝড়ের ফলে রাতারাতি আকস্মিক বন্যা শুরু হয়। যার ফলে মিন্দানাও দ্বীপের তিন লাখ মানুষ বাসকারী শহর কোটাবাটো ও এর আশেপাশের এলাকার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মুসলিম স্বায়ত্তশাসিত মিন্দানাও এর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নাগুইব সিনারিম্বো বলেছেন, ক্ষতিগ্রস্তদের বেশিরভাগই বন্যার পানিতে ভেসে গেছে।
তিনি বলেন, মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মিন্দানাও প্রদেশের তিনটি শহর।
আরও পড়ুন: ব্রাজিলে প্রবল বৃষ্টিতে বন্যা ও ভূমিধস, নিহত কমপক্ষে ১৯
সিনারিম্বো টেলিফোনে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) বলেছেন, ‘রাতারাতি বৃষ্টির পানির পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায় এবং নদীগুলো পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি আশা করি হতাহতের সংখ্যা আর বাড়বে না। তবে এখনও কিছু এলাকা রয়েছে যেখানে আমরা পৌঁছাতে পারিনি।’
সিনারিম্বো বলেছেন, শুক্রবার সকাল থেকে বৃষ্টি কমেছে। যার ফলে বেশ কয়েকটি শহরে বন্যা কমতে শুরু করেছে।
সিনারিম্বো আরও বলেছেন মেয়র, গভর্নর ও দুর্যোগ-প্রতিক্রিয়া কর্মকর্তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে, মিন্দানাওয়ের পার্শ্ববর্তী উপকূলীয় শহর দাতু ওডিন সিনসুয়াত ও দাতু ব্লা সিনসুয়াতে ২৬জন ডুবে মারা যায় এবং বাকি পাঁচজন মাগুইন্দানাওতের উপি শহরে মারা যায়।
সিনারিম্বো বলেন, নিচু গ্রামগুলোতে বন্যার পানি দ্রুত বেড়েছে, কিছু গ্রামবাসী বাড়ির ছাদে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। সেনা সৈন্য, পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকরা যেখান থেকে তাদের উদ্ধার করেছে।
আরও পড়ুন: শ্রীলঙ্কায় বন্যা ও ভূমিধসে ২১ হাজারের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত
সিনারিম্বো আরও বলেছেন, কোটাবাটো শহরের মতো অনেক এলাকা, যেগুলোতে অনেক বছর ধরে বন্যা হয়নি, সেগুলোও রাতারাতি জলাবদ্ধ হয়ে গেছে।
মিন্দানাওয়ের একটি বন্যা কবলিত শহরের কথা উল্লেখ করে দেশটির দুর্যোগ-প্রতিক্রিয়া কর্মকর্তা নাসরুল্লাহ ইমাম বলেন, ‘উপির একটি এলাকায় বন্যার পানির ওপরে শুধুমাত্র একটি স্কুলের ছাদ দেখা যায়।’
চলতি বছর ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জে আঘাত হানা ১৬ তম ঝড় নালগাই।
ম্যানিলার প্রাদেশিক আবহাওয়া অফিস বলেছে যে এই ঝড়- বৃষ্টির কারণ গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঝড় ন্যালগে। যা উত্তর ফিলিপাইনের দিকে অগ্রসর হয়েছে।
সিভিল ডিফেন্স অফিসের আবহাওয়ার পূর্বাভাসকারী স্যাম ডুরান বলেছেন, ঘূর্ণিঝড় ন্যালগের কারণে প্রায় ৫ হাজার মানুষকে সুরক্ষিতভাবে ঝড়ের কবল থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
ফিলিপাইন অ্যাটমোস্ফিয়ারিক, জিওফিজিক্যাল এবং অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সার্ভিস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বলেছে, ন্যালগে (স্থানীয়ভাবে পায়েং নামে পরিচিত) আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে তীব্র হতে পারে এবং সম্ভবত বন্যা ও বৃষ্টির কারণে ভূমিধস হতে পারে। এবং সেই সঙ্গে প্রচণ্ড ঘূর্ণি বাতাস বইতে পারে।
ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জে প্রতি বছর প্রায় ২০টি টাইফুন ও ঝড় আঘাত হানে। এটি প্রশান্ত মহাসাগরের ‘রিং অফ ফায়ার’-এ অবস্থিত। অর্থাৎ এটি প্রশান্ত মহাসাগরের বেশিরভাগ অংশ বরাবর এমন একটি অঞ্চল, যেখানে অনেক আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত এবং ভূমিকম্প ঘটে। যার ফলে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় এই দেশটি বিশ্বের অন্যতম দুর্যোগ-প্রবণ দেশ হয়ে উঠেছে।
আরও পড়ুন: ভারতে আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসে ৩১ জনের মৃত্যু
বন্যা দুর্গত এলাকায় কি ধরনের খাদ্য ও ত্রাণ সামগ্রী পাঠাবেন
প্রতি বছর ঝড়ের সম্মুখীন হওয়ায় বাংলাদেশিদের জন্য বন্যা মোকাবিলা করা বেশ স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরপরেও ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ কমছে না; বরং বেড়েই চলেছে। প্রতি বছর ঝড়-প্লাবনে প্রাণহানি যেন অগত্যা সাধারণ সংবাদে রূপ নিয়েছে। এ অবস্থার উন্নতির জন্য সমাজের প্রতিটি স্তর থেকে প্রয়োজন তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া। তাই চলুন জেনে নেয়া যাক বন্যা দুর্গত এলাকায় কি ধরনের খাদ্য ও ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছানো যায়।
বন্যা দুর্গত এলাকায় বিতরণের জন্য খাদ্য সামগ্রী
বিশুদ্ধ খাবার পানি
ঝড় ও বন্যার সময় নদী, পুকুর এবং ঘরের ভেতরের পানি দূষিত হতে পারে। তাই আশ্রয়কেন্দ্রে সরবরাহকৃত পানি সঞ্চয় করা উত্তম। সাধারণত একজন ব্যক্তির পানীয় এবং খাদ্যের চাহিদা পূরণের জন্য প্রতিদিন গড়ে ন্যূনতম ১ গ্যালন এবং গোসল, দাঁত ব্রাশ ও থালা-বাসন ধোয়ার জন্য দেড় থেকে আড়াই গ্যালন পানি প্রয়োজন হয়৷ অবশ্য টিনজাত ফলের রস, কোমল পানীয় এবং শাকসবজির রস খাবার পানীয়’র কিছু অংশ পূরণ করতে পারে।
এই পানি সরবরাহের সময় টাইট-ফিটিং বা স্ক্রু টপ ঢাকনা সহ পরিষ্কার পাত্র ব্যবহার করা উচিত। হালকা ওজনের প্লাস্টিকের পাত্র এক্ষেত্রে ভালো কাজ দিতে পারে। যদি কাচের জগ বা বোতল ব্যবহার করা হয়, তাদের মধ্যে খবরের কাগজ বা অন্যান্য প্যাকিং সামগ্রী রেখে সেগুলোকে ভেঙ্গে যাওয়া থেকে রক্ষা করা যেতে পারে। ধাতব পাত্রগুলোতে পানি রাখলে পানির স্বাদ বদলে যায়; আর মরিচা ধরতে পারে।
খুব জরুরি অবস্থায় বাড়ির গরম পানির ট্যাঙ্ক থেকে নিষ্কাশন করা পানি সংগ্রহ করা যেতে পারে। তবে এগুলোতে দূষণের সম্ভাবনা থাকে। তাই এই পানি সরবরাহের আগে বিশুদ্ধ করা উচিত।
প্রায় সময় অনেক বেশি পানি বহন করা কঠিন হয়ে পড়ে। সেক্ষেত্রে ক্লোরিন ডাই অক্সাইড বা পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, ফিটকিরি ইত্যাদি নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। এতে করে প্লাবিত লোকজন নিজেরাই পানি বিশুদ্ধ করে নিতে পারবেন।
আরো পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং: ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প
যথাসম্ভব সংরক্ষণ করে রাখার মত বিশুদ্ধ খাবার
যে কোন দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় দুর্যোগ পরবর্তী খাবারের চাহিদা পূরণের জন্য মুড়ি, চিড়া, সবজি খিচুড়ি ইত্যাদি খাদ্য ত্রাণ হিসেবে দেয়া যেতে পারে। জরুরি অবস্থায় ত্রাণ হিসেবে সরবরাহের জন্য আগে প্রয়োজনীয় খাদ্যগুলো সংরক্ষণ করা যেতে পারে। এখানে খাবারের পরিমাণ এবং ধরণ বিভিন্ন কারণের ওপর নির্ভর করে। যেমন- দুর্গত এলাকার পরিবারের সদস্যদের বয়স এবং বিশেষ খাদ্য চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তি যেমন- শিশু, গর্ভবতী মহিলা, বয়স্ক। এছাড়াও তাদের স্বাস্থ্যের অবস্থা এবং খাদ্য প্রস্তুত করার ক্ষমতার দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে।
স্বল্পমেয়াদী খাদ্য সরবরাহের জন্য সাধারণত পানীয় এবং বিশেষ খাদ্যের চাহিদা মেটাতে হয়। কাচের পাত্র ভেঙ্গে যেতে পারে। তাই জরুরি খাদ্য সরবরাহের জন্য টিনজাত পণ্যই সেরা। টিনজাত খাবারের মধ্যে রয়েছে-
শাকসবজি, মটরশুটি, ফল ও ফলের রস, স্যুপ, দুধ এবং বোতলজাত পানি। এছাড়াও তালিকাভুক্ত করা যেতে পারে চিনি, লবণের মতো প্রধান খাবার, বিস্কুট, চকলেট, উচ্চ শক্তির খাবার যেমন পিনাট বাটার, জেলি, বাদাম, শুকনো ফল, চাল এবং আলু। বাচ্চাদের জন্য সুজি, সেরেলাক নেয়া যেতে পারে।
টিনজাত খাবার প্রায় অনির্দিষ্টকালের জন্য রাখা যেতে পারে, যতক্ষণ না টিন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে এগুলো সরবরাহের পাশাপাশি আশ্রয়কেন্দ্রে তা সংরক্ষণেরও ব্যবস্থা করতে হবে। নতুবা যে কোনও সময় সেগুলো পোকামাকড় এবং ইঁদুরের মতো কীটপতঙ্গের পাশাপাশি বন্যার পানি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আরো পড়ুন ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং: ভোলায় ২০ হাজারের বেশি মানুষ বিপর্যস্ত
বন্যা দুর্গত এলাকায় বিতরণের জন্য অন্যান্য ত্রাণ সামগ্রী
খাবার ছাড়াও বন্যার্তদের টিকে থাকার জন্য আরও কিছু জিনিসের প্রয়োজন হয়। অতিবৃষ্টি অথবা বন্যার কারণে অনেক সময় অসহায় লোকদের এক কাপড়েই কাটিয়ে দিতে হয় দীর্ঘ দিন। তাই নারী-পুরুষ ও ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের জন্য আলাদাভাবে কাপড় নেয়া যেতে পারে। বন্যার পানি থেকে পা বাঁচানোর জন্য দেয়া যেতে পারে গামবুট। এ ব্যাপারে শিশু ও বয়স্কদের ওপর বিশেষ নজর দেয়া যেতে পারে।
স্বাস্থ্যবিধি সামগ্রীর মধ্যে সাবান, টুথব্রাশ ও টুথপেস্ট, মশা ও পোকা-মাকড় নিরোধক, মশা স্প্রেয়ার ত্রাণ হিসেবে সঙ্গে নেয়া যেতে পারে।
ওষুধপত্রের মধ্যে খাবার স্যালাইন, জ্বর ও মাথা ব্যথার ওষুধ, কাশির সিরাপ নেয়া যেতে পারে।
বিভিন্ন মাত্রার বর্ষণ থেকে বাঁচার জন্য ছাতা ও রেইন কোট উত্তম। কাপড়ের বিকল্প হিসেবে নয়; বরং আলাদা কাপড়ের তালিকায় এই সামগ্রী রাখা উচিত।
ঝড়ের মধ্যে বিদ্যুৎ বিভ্রাট খুব সাধারণ বিষয়। এই লোডশেডিং-এর কথা মাথায় রেখে মোমবাতি, টর্চ লাইট, ম্যাচ দেয়া যেতে পারে।
দুর্যোগ যখন বন্যা তখন এ থেকে বাঁচার জন্য নৌকাই একমাত্র ভরসা। তাই ত্রাণ হিসেবে নৌকার কথাও ভাবা যেতে পারে। স্থানীয় নৌকার দাম সাধারণত সাধ্যের বাইরে থাকে। তাই ত্রাণ হিসেবে কয়েকটি ইনফ্ল্যাটেবল বোট পেলে অসহায় মানুষ হাফ ছেড়ে বাঁচতে পারে। গ্যাসে ভরা এসব নৌকা ওজনে বেশ হালকা হয়; আর দামেও সাশ্রয়ী। ৩ জন মানুষের জায়গা সংকুলান হয় এই নৌকায়। ফলে সহজেই তারা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করতে পারেন।
আরো পড়ুন পাকিস্তানে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার কারণ
শেষাংশ
বন্যা দুর্গত এলাকায় খাদ্য ও ত্রাণ সরবরাহ বির্পযস্ত জনজীবনকে কেবল টিকিয়েই রাখে না, এটি ভবিষ্যতের জন্য আর্থিক দিক থেকে পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা বজায় রাখে। প্রতিবারের মত এবারো সিত্রাং ঘূর্ণিঝড়ে হাজার হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ সময় অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের কারণে বিভিন্ন রোগ-জীবাণুর সংক্রমণ ঘটে। এ সবকিছুর সঙ্গে লড়াই করে অসহায় মানুষ তীর্থের কাকের মত ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করে। তাই পর্যাপ্ত খাবার ও ওষুধসহ প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী তাদের এই ক্ষতিগুলো অনেকাংশে পুষিয়ে দিতে পারে। প্রত্যেকের সামর্থ্য অনুযায়ী এগিয়ে আসা উচিত এই দুর্গত মানুষদের সাহায্যার্থে।
বন্যায় চীনে লোহার খনিতে ১৪ জনের মৃত্যু, নিখোঁজ ১
চীনা কর্তৃপক্ষ শনিবার জানিয়েছে যে এই মাসের শুরুতে বন্যার পরে একটি লোহার খনিতে ১৪ জন মারা গেছেন এবং একজন নিখোঁজ রয়েছে।
আরও পড়ুন: আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান সীমান্তে সংঘর্ষে ৯৯ সেনা নিহত
অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান শেষ হয়েছে এবং এই সম্পর্কে সেপ্টেম্বরে একটি তদন্ত হবে। এই মৌসুমে দেশটিতে দ্বিতীয়বারে মতো বন্যা চলছে।
আরও পড়ুন: ৭০ বছর পর ভারতে ফিরে এসেছে চিতাবাঘ
তাংশান সিটি সরকার একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
খনিটি বেইজিং থেকে প্রায় ১৬০ কিলোমিটার (১০০ মাইল) পূর্বে হেবেই প্রদেশে অবস্থিত। হেবেই লোহা এবং ইস্পাত প্রধান উৎপাদকের স্থল।
বন্যা: পাকিস্তানকে সাহায্য করতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি গুতেরেসের আহ্বান
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কয়েক মাসের মারাত্মক রেকর্ড বন্যার ধ্বংসযজ্ঞ দেখতে শুক্রবার পাকিস্তান সফরে গিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসে। এসময় খোলা তাবুতে আশ্রয় নেয়া পাঁচ লাখ মানুষের মানবেতর জীবনযাপন দেখেন তিনি। এরপর দেশটিকে সাহায্য করার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি এই আহ্বান জানান গুতেরেসে।
বর্ষা মৌসুমের বৃষ্টি ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করার জন্য গুতেরেস জরুরি তহবিলের জন্য ১৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আবেদন করার দুই সপ্তাহেরও কম সময় পরে তিনি সফরটি করলেন। এই বন্যার ফলে কমপক্ষে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে মারা গেছেন কমপক্ষে এক হাজার ৩৯১ জন মানুষ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ত্রাণবাহী বিমানসহ আন্তর্জাতিক সাহায্য আসতে শুরু করেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৩০ মিলিয়ন ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
তিনি ভোরে এক টুইটে বলেন, ‘ভয়াবহ বন্যার পর পাকিস্তানি জনগণের প্রতি গভীর সংহতি প্রকাশ করতে আমি পাকিস্তানে এসেছি। আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ব্যাপক সহযোগিতার আহ্বান করছি, কারণ পাকিস্তান এই জলবায়ু বিপর্যয়ের শিকার।
জাতিসংঘের প্রধান গত সপ্তাহে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে কঠোর সতর্কতা জারি করেছেন।
তিনি সে সময় ইসলামাবাদে একটি অনুষ্ঠানে একটি ভিডিও বার্তায় বলেছিলেন, ‘আসুন জলবায়ু পরিবর্তনের ঘুমন্তগতির মাধ্যমে আমাদের গ্রহকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া বন্ধ করি। আজ পাকিস্তান, আগামীকাল আপনার দেশ এর শিকার হতে পারে।’
পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী মরিয়ম আওরঙ্গজেব এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের প্রধানকে এমন সময়ে পাকিস্তান সফরের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন যখন তিনি বলেন, পাকিস্তানের এক-তৃতীয়াংশ পানির নিচে। তিনি বলেন, বন্যা দুর্গতদের সংকটকে বৈশ্বিক পর্যায়ে পৌঁছাতে তিনি এই সফর চান।
‘জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক প্রভাবের পরিণতি উপলব্ধি করতেও এই সফর সাহায্য করবে।’ বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র দেশগুলোকে সাহায্য করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রচেষ্টা জোরদার করার আহ্বান জানান তিনি৷
আওরঙ্গজেব বলেন, গুতেরেসে শুক্রবার ইসলামাবাদে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে একটি সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেয়ার আগে বন্যার কারণে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে পাকিস্তানি কর্মকর্তারা একটি ব্রিফিং করবেন।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে বন্যায় মৃতের সংখ্যা ১২শ’ ছাড়িয়েছে
এখন পর্যন্ত, জাতিসংঘের সংস্থা এবং বেশ কয়েকটি দেশ প্রায় ৬০টি ত্রাণবাহী বিমান করে সাহায্য পাঠিয়েছে এবং কর্তৃপক্ষ বলছে সহায়তাদানকারীদের মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছেন। কারণ তারা এখন পর্যন্ত ২৬টি ফ্লাইট পাঠিয়েছে যেগুলি সাহায্য বা বন্যার্তদের বহন করে।
বন্যা সমগ্র পাকিস্তানকে ছুঁয়েছে এবং ৩৩ লাখেরও বেশি মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। হেরিটেজ সাইটগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে মহেঞ্জো দারো, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সেরা-সংরক্ষিত প্রাচীন শহুরে জনবসতি হিসেবে বিবেচিত।
সিন্ধু নদীর কাছে ১৯২২ সালে একটি ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছিল এবং আজ পর্যন্ত, প্রাচীন মিশর এবং মেসোপটেমিয়ার সঙ্গে মিলে যাওয়া সাড়ে চার হাজার বছর আগের সভ্যতার অন্তর্ধানকে তুলে ধরছে।
মহেঞ্জো দারো একটি ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান এবং জাতিসংঘের ঐতিহ্য সংস্থা বৃহস্পতিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যবাহী স্থান পুনরুদ্ধারের জন্য তিন লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার জরুরি সহায়তা ঘোষণা করেছে।
পাকিস্তান সফরকালে গুতেরেসকে অভ্যর্থনা জানান উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রব্বানি খার। এই সফরকালে তিনি প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ এবং অন্যান্য সরকারি ও সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার কারণ
জাতিসংঘ মহাসচিব পাকিস্তানে আগমনের আগে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ সফররত এক আমেরিকান কূটনীতিককে বলেছিলেন যে ভবিষ্যতে আরও মারাত্মক বন্যা এড়াতে বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করা উচিত। স্টেট ডিপার্টমেন্টের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ডেরেক চোলেট ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ এবং সাহায্যের ব্যবস্থা করতে ইসলামাবাদ সফর করছেন।
সরকারের বিবৃতিতে চোলেট নিশ্চিত করেছেন যে বন্যার প্রেক্ষিতে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়াবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জনগণের পুনর্গঠনে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে।
পাকিস্তানের কর্মকর্তারা বলছেন, শুক্রবার প্রথম আমেরিকান বিমানভর্তি ত্রাণ পাকিস্তানে পৌঁছাবে, ওয়াশিংটন বন্যা দুর্গতদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করা ও আকাশ পথে দুর্গতদের সঙ্গে একটি মানবিক সহায়তা সংযোগ স্থাপন করবে।
জুন মাস থেকে ভারী বর্ষণ এবং বন্যা নগদ অর্থ সংকটে পড়া পাকিস্তানে নতুন বোঝা চাপিয়েছে এবং দরিদ্র জনসংখ্যার ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রভাব তুলে ধরেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বিশ্বের কার্বন নিঃসরণের মাত্রা শূন্য দশমিক ৪ শতাংশের জন্য পাকিস্তান দায়ী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাড়ে ২১ শতাংশ, চীন ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ইইউ ১৫ শতাংশের জন্য দায়ী।
পাকিস্তানের ন্যাশনাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট এজেন্সির দেয়া তথ্যানুসারে দেশটিতে বন্যায় ১২ হাজার ৭২২ জন আহত হয়েছে, ধ্বংস হয়েছে হাজার হাজার কিলোমিটার রাস্তা, ভেঙে পড়েছে সেতু এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অসংখ্য স্কুল ও হাসপাতাল।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে বন্যা: ৩ কোটি ৩০ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত
পাকিস্তানে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার কারণ
২০২২ সালের জুনের মাঝামাঝি সময় থেকে পাকিস্তান স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার সম্মুখীন হয়েছে। প্রায় ২২ কোটি জনসংখ্যার এই দক্ষিণ এশিয়ার দেশটির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ পানিতে অর্ধনিমজ্জিত অবস্থায় আছে। বিধ্বংসী এই বন্যায় এখন পর্যন্ত ১২ শতাধিক মানুষ মারা গেছে, ১০ লক্ষাধিক বাড়িঘর নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে এবং প্রায় ২,২০০ মাইল রাস্তা ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রায় ৫ লক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত শিবিরে রয়েছে এবং আরও অনেকের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মতে পাকিস্তানের এই বন্যা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে এখনি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সারা বিশ্বের কাছে সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বড় সতর্ক সংকেত। পাকিস্তানের এই ভয়াবহ বন্যার নেপথ্যের কারণ নিয়ে আজকের নিবন্ধ।
পাকিস্তানে এই ভয়াবহ বন্যার কারণ
বৈশ্বিক জলবায়ুর সংকট সামগ্রিকভাবে প্রভাব ফেলেছে পাকিস্তানের বন্যায়। আশঙ্কাজনক প্রাণঘাতী অবস্থাকে ক্রমাগত ভয়াবহতার দিকে ঠেলে দেয়ার পেছনে প্রাকৃতিক ও মনুষ্য সৃষ্ট বিপর্যয়গুলো যুগপৎ ভূমিকা রেখেছে।
অতিবৃষ্টি
বন্যার প্রধান কারণ হিসেবে সুস্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হয়েছে পুরো শতাব্দিতে পাকিস্তানের রেকর্ড ভাঙা বৃষ্টিপাত। আট সপ্তাহের বিরতিহীন অতিবৃষ্টি দেশের বিশাল অংশকে পানির নিচে ফেলে দিয়েছে। জুন মাসের শুরু থেকেই সিন্ধু প্রদেশে বৃষ্টিপাত ছিলো সাধারণ গড়পড়তার চেয়ে নয় গুণ বেশি এবং সমগ্র পাকিস্তানে পাঁচ গুণ বেশি। এ যেন সারা দেশ জুড়ে দানবীয় মৌসুমী বৃষ্টির প্রলয় লীলা।
পড়ুন: পাকিস্তানে বন্যায় মৃতের সংখ্যা ১২শ’ ছাড়িয়েছে
অত্যধিক তাপের দাবদাহ
বৃষ্টিপাতের তীব্রতা বৃদ্ধির মৌলিক কারণ হলো উষ্ণ বাতাসের আর্দ্রতা বেশি থাকা। যে অতিবৃষ্টি বন্যার সৃষ্টি করছে তার পেছনে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন দায়ী। এর আগে পাকিস্তানে প্রাণঘাতী বন্যা হয়েছিলো ২০১০ সালে। সেই সুপারফ্লাড-এর জন্য মুল কারণ ছিলো উত্তাপ বৃদ্ধি, যার ফলে সে বছর প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত ঘটিয়েছিল।
আর্কটিকের উষ্ণ মহাসাগরীয় বাতাসও এর সাথে জড়িত ছিল, কারণ এটি জলীয়বাষ্পকে প্রভাবিত করতে পারে। ফলে আকাশে ভাসমান বাতাস অত্যধিক গরম ও ভারী হয়ে যায়। এই জলীয়বাষ্পের বৃহত্তর গতিপথ পাকিস্তানে দীর্ঘায়িত বৃষ্টিপাতের প্রেক্ষাপট তৈরি করে। আর এখন বৈশ্বিক উত্তাপ দক্ষিণ এশিয়ার বৃষ্টিকে আরও তীব্র এবং আরও অনিয়মিত করে তুলছে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা প্রতি ১ ডিগ্রী সেলসিয়াস বৃদ্ধির ফলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়ে ৫ শতাংশেরও বেশি।
বন উজাড়
সিন্ধু নদীতে মিশে যাওয়া কাবুল নদীতে বাঁধ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার সময় বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্টি হয় পাহাড়ী ঢল। আর বন উজাড়ের কারণে এই ঢলের গতি আরো বেড়ে যায়। এতে অসহায় মানুষ নিরাপদ অবস্থানে যাওয়ারও সময় পায় না। তাই উচ্চ মৃত্যুর সংখ্যার জন্য আকস্মিক বন্যা ও নদীর বাঁধ ধ্বংসের পাশাপাশি বন উজাড়ও দায়ী। কিছু জায়গা এতটাই খাড়া ছিলো যে, ঢল কোন বাধা ছাড়াই দ্রুত প্রবাহিত হয়ে সমতল ভূমিতে আঘাত করেছে।
পড়ুন: পাকিস্তানে বন্যা: ১৬ কোটি ডলারের জরুরি সহায়তার আবেদন জাতিসংঘের
প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তাপমাত্রা ও বাতাসের তারতম্য
এল নিনো–সাউদার্ন অসিলেশন (ইএনএসও) জলবায়ুর এমন একটি সংকটপূর্ণ অবস্থা যেখানে ক্রান্তীয় পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে বায়ু এবং সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রার অনিয়মিত পরিবর্তন ঘটে। এটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপক্রান্তীয় অঞ্চলের জলবায়ুকে প্রভাবিত করে। সমুদ্রের তাপমাত্রার উষ্ণ পর্যায়কে এল নিনো এবং শীতল পর্যায়কে লা নিনা বলা হয়। ইএনএসও এখন লা নিনা পর্যায়ে রয়েছে ঠিক যেমনটি ছিলো ২০১০ সালে। লা নিনার অত্যন্ত দৃঢ় প্রভাব পাকিস্তানের সাধারণ মৌসুমী বৃষ্টিকে দানবীয় অতিবৃষ্টির রূপ দিয়েছে।
শেষাংশ
পাকিস্তানে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা শুধু দক্ষিণ এশিয়াই নয়; গোটা পৃথিবীবাসীর জন্য সাবধানবাণী। আকস্মিক বন্যার পাশাপাশি প্রচন্ড তাপের দাবদাহ, দাবানল, মেরু অঞ্চলে ক্রমাগত বরফ গলতে থাকা এখন গোটা বিশ্বকে জলবায়ুর ব্যাপারে গ্রাউন্ড জিরোর দিকে ঠেলে দিয়েছে। আবহাওয়াবিদরা বর্ষা মৌসুমের শেষ ঘনিয়ে আসায় আগামী দিনে আর কোনো উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাতের আশা করছেন না। কিন্তু এটি সৌভাগ্যজনক কোন খবর নয়। আপাত দৃষ্টে এ বছর বেঁচে গেলেও পরের বছরে কি হবে, যেখানে দুর্যোগগুলো প্রতি বছর দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে আঘাত হানছে! তাই জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার এখনি সময়।
পড়ুন: পাকিস্তানে বন্যা: ৩ কোটি ৩০ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত
পাকিস্তানে বন্যায় মৃতের সংখ্যা ১২শ’ ছাড়িয়েছে
পাকিস্তানের বন্যা কবলিত এলাকাগুলোর মানুষদের মাঝে জরুরি ভিত্তিতে বিমানে করে মানবিক সহায়তা বিশুদ্ধ খাবার সরবরাহ করার পরও মৃত্যু বেড়ে ১২শ’ ছাড়িয়েছে।
শুক্রবার দেশটির কর্মকর্তারা বলেন, বাস্তুচ্যুত পরিবার ও তাদের শিশুরা পানিবাহিত বিভিন্ন রোগের ঝুঁকিতে আছে।
বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত বন্যায় প্রায় ৩০ লাখ ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে উদ্ধার অভিযানে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীকে সহায়তা করতে আরব আমিরাতের ৯টি বিমান ও উজবেকিস্তানের একটি বিমান এসেছে।
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতারের আরও দুটি ত্রাণবাহী বিমান শুক্রবারের পর পাকিস্তানে পৌঁছাবে এবং বন্যা আক্রান্তদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণে তুরস্কের একটি ট্রেন পণ্যসামগ্রী নিয়ে পাকিস্তানের পথে রয়েছে।
ইতোমধ্যে তুরস্কের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বন্যায় নিহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিয়ো গুতরেসেসহ অনেক কর্মকর্তা বর্ষা পরবর্তী এই অস্বাভাবিক বন্যার জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করেছেন। তিনি এই সপ্তাহের শুরুতে বিশ্বকে এই ভয়ানক সংকটের মুহূর্তে ‘সজাগ ভূমিকা’ রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
শুক্রবার জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা এক বিবৃতিতে বলেন, জাতিসংঘের বুধবারের তহবিলের আবেদনের ফলাফল ‘খুবই উৎসাহব্যঞ্জক’ হলেও আরও সহযোগিতা প্রয়োজন।
পড়ুন: পাকিস্তানে বন্যা: ১৬ কোটি ডলারের জরুরি সহায়তার আবেদন জাতিসংঘের
ইউএনএইচসিআর এর মুখপাত্র ম্যাথিও সল্টমার্শ বলেন, বন্যার্তদের জন্য তারা খুব দ্রুতই তাবু, কম্বল, প্লাস্টিক শিট, বাকেট ও অন্যান্য গৃহস্থালি পণ্যসামগ্রী পাঠাবে।
তিনি বলেন, ‘দেশটিতে থাকা আমাদের কর্মকর্তারা জানিয়েছে, মানুষ অকল্পনীয় ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে।’
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেছে, বিমানে করে খাদ্যসামগ্রী, ওষুধ ও তাবু পাঠানো হয়েছে। দেশের বন্যা পরিস্থিতির কারণে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের সংযুক্ত আরব আমিরাতের সফর স্থগিত করা হয়েছে।
এর আগে চীন, সৌদি আরব, কাতার, তুরস্ক, উজবেকিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং অন্যান্য দেশ ত্রানসামগ্রী পাঠিয়েছে পাকিস্তানে। চলতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের বন্যা কবলিতদের জন্য তিন কোটি মার্কিন ডলার ত্রাণ সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
পড়ুন: পাকিস্তানে বন্যা: ৩ কোটি ৩০ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত
পাকিস্তান দাবি করছে, সাম্প্রতিক সময়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ভারী বর্ষণ ও বন্যা হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অসিম ইফতেখার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বিজ্ঞানীরা বলেছিল এই সংকট জলবায়ু পরিবর্তনের সতর্কতাকে বিশ্বাসযোগ্যতা দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এটি কোন ষড়যন্ত্র নয়, এটি বাস্তবতা এবং আমাদের সচেতন হওয়া দরকার।’
সরকারের প্রাথমিক হিসাবে বন্যার এই ধ্বংসযজ্ঞে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে।
আরও পড়ুন: বন্যা: পাকিস্তানে মৃত্যু হাজার ছাড়াল
পাকিস্তানে বন্যা: ৩ কোটি ৩০ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত
পাকিস্তানে চলমান বন্যার কারণে তিন কোটি ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ এবং ৭২টি জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জুনের মাঝামাঝি থেকে শুরু হওয়া মৌসুমী বৃষ্টির কারণে এই দুর্যোগের সৃষ্টি। দেশটির জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এনডিএমএ) বিষয়টি জানিয়েছে।
রবিবার গভীর রাতে এনডিএমএ প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় সিন্ধু প্রদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানকার ২৩টি জেলা এবং এক কোটি ৪৫ লাখেরও বেশি মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, দক্ষিণ-পশ্চিমের বেলুচিস্তান দ্বিতীয় সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত প্রদেশ। সেখানকার ৯০ লাখেরও বেশি মানুষ এবং ৩১টি জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন: বন্যা: পাকিস্তানে মৃত্যু হাজার ছাড়াল
গত তিন দশকের তুলনায় দেশটিতে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি পায় ১৮৮ শতাংশ। তিন দশকে বৃষ্টিপাতের পরিমাপ ছিল ১৩৫ মিলিমিটার। কিন্তু এ মৌসুমে তা দাঁড়িয়ে হয়েছে ৩৯০ মিলিমিটার।
এনডিএমএ জানিয়েছে, সিন্ধু প্রদেশে এবার বৃষ্টিপাত ৪৭০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৬৯৭ মিলিমিটার। যা গত তিন দশকে গড়ে ছিল ১২২ মিলিমিটার। অন্যদিকে বেলুচিস্তানে বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি পেয়েছে ৪১১ শতাংশ।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১ হাজার
বন্যা: পাকিস্তানে মৃত্যু হাজার ছাড়াল
পাকিস্তানে আকস্মিক বন্যায় মৃত্যুর সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়েছে। রবিবার দেশটির জলবায়ুমন্ত্রী এই বর্ষা মৌসুমকে ‘একটি মারাত্মক জলবায়ু বিপর্যয়’ বলে অভিহিত করেছেন।
ভারী বর্ষণের ফলে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় গত মধ্য জুন থেকে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। পানির তোড়ে শস্য ও অনেক গ্রাম ভেসে গেছে। সেনাবাহিনী ও উদ্ধারকর্মীরা হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত পাকিস্তানিদের নিরাপদে সরিয়ে আশ্রয় শিবিরে নিচ্ছে এবং খাদ্য সরবরাহ করছে।
পাকিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানায়, চলতি বছরের মধ্য জুনে বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকে মানুষের প্রাণহানির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে
এক হাজার ৩৩ জনে। এছাড়া খাইবার পাখতুন ও সিন্ধু প্রদেশে নতুন করে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
পাকিস্তানি সিনেটর ও দেশের জলবায়ু বিষয়ক শীর্ষ কর্মকতা শেরি রেহমান টুইটারে একটি ভিডিও পোস্ট করে তার অভিজ্ঞতা বর্নণা করে বলেন, ‘এই দশকে সবচেয়ে কঠিনতর একটি মারাত্মক জলবায়ু বিপর্যয়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এই মুহূর্তে চরম আবহাওয়া বিপর্যয়ের সামনে অবস্থান করছি, অবিরাম তীব্র দাবদাহ, দাবানল, আকস্মিক বন্যা, বহু হিমবাহ গলে যাওয়া, বন্যা পরিস্থিতি ও সারাদেশে দশকের দানব বন্যা অবিরাম ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে।’ ইউরোপীয় ইউনিয়নে দেশটির রাষ্ট্রদূত একটি ভিডিও বিবৃতি পুনরায় টুইট করেছেন।
প্রাদেশিক সরকারের মুখপাত্র কামরান বঙ্গশ বলেন, রাতভর সোয়াত নদীর প্লাবনে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের খাইবার পাখতুন প্রদেশের হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে- বিশেষ করে চরসদ্দা ও নওশেরা জেলা। তাদেরকে বাড়ি থেকে সরিয়ে সরকারি ভবনের আশ্রয় শিবিরে নেয়া হয়েছে। তাদের অনেকে রাস্তার পাশে আশ্রয় নিয়েছেন।
এই অভূতপূর্ব বর্ষা মৌসুম দেশের চারটি প্রদেশকেই ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এতে প্রায় তিন লাখ বাড়িঘর, অসংখ্য রাস্তাঘাট ধ্বংস এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় লাখ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তুর্কি সংবাদ সংস্থা টিআরটি ওয়ার্ল্ডকে রেহমান বলেন, অল্প বৃষ্টিতেই আমাদের পাকিস্তানের চারভাগের একভাগ বা তিন ভাগের একভাগ পানিতে তলিয়ে যায়।
পড়ুন: ‘ভুল’ করে পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ: ভারতীয় বিমানবাহিনীর ৩ কর্মকর্তা বরখাস্ত
তিনি বলেন, ‘এটি কিছুটা বৈশ্বিক সংকট এবং ভূমির টেকসই উন্নয়নে অবশ্যই ভালো পরিকল্পনা দরকার।পাশাপাশি জলবায়ু সহনশীল ফসলের পাশাপাশি ভালো কাঠামো থাকতে হবে।’
সরকার সারাদেশে বেসামরিক কর্তৃপক্ষের উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়তার জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে।
ইতোমধ্যে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী একটি বিবৃতিতে বলেছেন, তারা দেশের উত্তরাঞ্চলের একটি দ্বীপে আটকে পড়া ২২ পর্যটককে আকাশপথে সরিয়ে নিয়েছেন।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১ হাজার
পাকিস্তানে মৌসুমী বৃষ্টিতে নিহত ৩৫৭, আহত ৪ শতাধিক
পাকিস্তানে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১ হাজার
পাকিস্তানে ভারী বর্ষণে আকস্মিক বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে এক হাজার জনে দাঁড়িয়েছে।
শনিবার দেশটির কর্মকর্তারা বন্যায় এই মৃতের সংখ্যার পাশাপাশি হাজার হাজার মানুষ আহত ও বাস্তুচ্যুত হওয়ার কথা জানায়।
দরিদ্র ইসলামিক জাতিটি মারাত্মক বন্যার ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চাওয়ার একদিন পরই নতুন করে মৃত্যুহার বাড়ল।
এই সংকট সরকারকে জরুরি অবস্থা জারি করতে বাধ্য করেছে।
চরসদ্দার একজন উচ্চ কর্মকর্তা সানিয়া সাফি বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রদেশ খায়বার পাখতুনে বন্যায় সোয়াত নদীর পানি নিয়ন্ত্রণের প্রধান
গেটটি ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় চরসদ্দা ও নওশেরা জেলা প্লাবিত হয়েছে।
দেশটির তথ্যমন্ত্রী মারিয়াম আওরঙ্গজেব বলেন, সিন্ধু, খায়বার পাখতুন ও পূর্বাঞ্চলীয় পাঞ্জাব এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বেলুচিস্তান প্রদেশের অনেক জেলায় সেনাবাহিনী ও উদ্ধারকারী সংস্থাগুলো আক্রান্ত মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নিচ্ছে। সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য পর্যাপ্ত তহবিল ঘোষণা করেছে।
শুক্রবার সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অসীম ইফতেখার বলেন, শাহবাজ শরীফের সহযোগিতার আহ্বানের পর জাতিসংঘ বন্যার্তদের জন্য ১৬০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
দেশটির জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানায়, শুক্রবার ও শনিবার পর্যন্ত বন্যায় মৃতের সংখ্যা ছিল ৪৫ জন। যা এখন দাঁড়িয়েছে ৯৮২ জনে, আহত হয়েছেন আরও ১৪৫৬ জন।
প্রবল বর্ষণ পরবর্তী আকস্মিক বন্যায় সেতু, সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় গোটা পাকিস্তানে ফল ও সবজি বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়ায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘ভুল’ করে পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ: ভারতীয় বিমানবাহিনীর ৩ কর্মকর্তা বরখাস্ত
পাকিস্তানে মৌসুমী বৃষ্টিতে নিহত ৩৫৭, আহত ৪ শতাধিক
পাকিস্তানে নৌকাডুবিতে ১৯ নারীর মৃত্যু
দেশের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি
সারাদেশের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। ফলে বুধবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় কোনও মৃত্যু হয়নি। এখন পর্যন্ত বন্যায় নিহতের সংখ্যা ১৪১ জনে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
১৭ মে থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত মৃত্যুর এ সংখ্যা রেকর্ড করা হয়েছে।
নিহতদের মধ্যে সিলেটে ৮০ জন, ময়মনসিংহে ৪৩ জন,রংপুরে ১৭ জন ও ঢাকা বিভাগে একজন।
তাদের মধ্যে বন্যার পানিতে ডুবে ১০৯ জন,বজ্রপাতে ১৯ জন, সাপের কামড়ে তিনজন,ডায়রিয়ায় একজন এবং অন্যান্য কারণে ৯ জন মারা গেছেন।
এছাড়া এ সময়ে প্রায় ৩৫ হাজার ৫৯৫ জন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
বন্যায় সিলেটের ৩৩টি, রংপুরের তিনটি ও চট্টগ্রাম বিভাগের একটিসহ ৩৭টি উপজেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জেলা, যেখানে যথাক্রমে ১৩, ১১ ও ৫টি উপজেলা বন্যা কবলিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: বন্যায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৪১: স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৩১: স্বাস্থ্য অধিদপ্তর