বিদ্যুৎ
সরকারকে কিছু ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী হতে হলেও মানুষ বিদ্যুৎ পাবে: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকারকে কিছু ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী হতে হচ্ছে, কিন্তু তার মানে এই নয় যে বাংলাদেশের মানুষ বিদ্যুৎ পাবে না।
তিনি বলেন, ‘মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকবে। কিন্তু আমাদের সবাইকে মিতব্যয়ী হতে হবে... আমরা কিছু ক্ষেত্রে মিতব্যয়ী হয়েছি। পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা তা করতে বাধ্য।’
দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের (আরএনপিপি) দ্বিতীয় ইউনিটে চুল্লি স্থাপনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
পাবনার উত্তরাঞ্চলের ঈশ্বরদীতে অনুষ্ঠিত এ কর্মসূচিতে তিনি তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবার জন্য বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়াই সরকারের লক্ষ্য।
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছি। আমরা বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছি। আর আমরা বাংলাদেশকে আলোকিত করতে সফল হয়েছি।’
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সমস্যা দেখা দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘…পরিবহনসহ সব ক্ষেত্রেই দাম বাড়ানো হয়েছে। ফলে উন্নত দেশগুলো নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। তারা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সঞ্চয়ের দিকে মনোনিবেশ করেছে। আমরাও পিছিয়ে নেই… বিশ্ব এখন একটি গ্লোবাল ভিলেজ এবং একটি দেশ অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীল। সমগ্র বিশ্ব যখন অর্থনৈতিক মন্দায় ভুগছে, তখন আমাদেরও সেই আঘাত সহ্য করতে হয়।’
তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও এর কারণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার কারণে আরও সমস্যা তৈরির বিষয় উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, রাশিয়ার রোসাটম স্টেট কর্পোরেশনের মহাপরিচালক অ্যালেক্সি লিখাচেভ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জ্যৈষ্ঠ সচিব জিয়াউল হাসান।
অনুষ্ঠানে দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াটসম্পন্ন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের চুল্লি বসছে বুধবার, উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের (আরএনপিপি) দ্বিতীয় ইউনিটে চুল্লি স্থাপন (রিঅ্যাকটর প্রেসার ভেসেল) হবে বুধবার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এর উদ্বোধন করবেন।
মঙ্গলবার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এই কর্মসূচির কথা জানান।
তারা বলছেন, ইতোমধ্যে প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের ভৌত কাজের ৭০ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে এবং দ্বিতীয় ইউনিটে চুল্লি স্থাপন করার মধ্য দিয়ে প্রকল্পের মোট ভৌত কাজের ৫৩ শতাংশ সম্পন্ন হবে।
পাবনা জেলার ঈশ্বরদীতে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে নির্মিত দেশের একমাত্র পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে দু’টি ইউনিট থাকবে। যার প্রতিটিতে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা থাকবে।
রাশিয়ার রোসাটম স্টেট করপোরেশনের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ এই অনুষ্ঠানে শারীরিকভাবে উপস্থিত থাকতে ঢাকা আসছেন এবং প্রধানমন্ত্রী ঢাকার তার সরকারি বাসভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন।
গত বছরের অক্টোবরে প্রথম ইউনিটের চুল্লি স্থাপন উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে দেশের বৃহত্তম প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ডা. মো. শওকত আকবর ইউএনবিকে বলেছেন, ‘চুল্লি স্থাপনের সঙ্গে প্রকল্পের দ্বিতীয় ইউনিটের ভৌত কাজের লক্ষ্যমাত্রার ৪৫ শতাংশেরও বেশি সম্পন্ন হবে।’
সরকার ২০০৯ সালে প্রকল্পটি হাতে নেয় এবং দীর্ঘ আলোচনার পর ২০১৬ সালের ২৬ জুলাই রাশিয়ান ফেডারেশনের সঙ্গে ১১ দশমিক ৩৮৫ বিলিয়ন ডলারের একটি ক্রেডিট চুক্তি সই করে যাতে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি সংস্থা- রোসাটমকে এর ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়।
এছাড়াও ২০১৯ সালের ৬ আগস্ট বাংলাদেশ প্রকল্পের জন্য রাশিয়ার সঙ্গে একটি পারমাণবিক জ্বালানি সরবরাহ চুক্তি সই করে।
চুক্তি অনুযায়ী, রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পারমাণবিক জ্বালানি সংস্থা টিভেল জয়েন্ট স্টক কোম্পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পুরো জীবনকালের জন্য পারমাণবিক জ্বালানি সরবরাহ করবে।
বিদ্যুতকেন্দ্রের প্রতিটি ইউনিটকে প্রতি ১৮ মাস পর পর মোট প্রয়োজনীয় পারমাণবিক জ্বালানির এক তৃতীয়াংশ পুনরায় লোড করতে হবে এবং প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পুনরায় লোড বিনামূল্যে রাশিয়ান ফার্ম প্রদান করবে।
প্রতিটি পারমাণবিক জ্বালানি পুনরায় লোড করতে খরচ হবে ৬২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ৫৫০ কোটি টাকার সমান।
ড. শওকত আকবর বলেন, দ্বিতীয় ইউনিটে চুল্লি স্থাপনের পর যে বড় কাজগুলো অসমাপ্ত থাকবে তার মধ্যে রয়েছে প্রি-অপারেশনাল টেস্টিং এবং ফুয়েল লোডিং।
তিনি আরও বলেন, প্রকল্পটি চালু করার আগে আরও কিছু কাজ শেষ করতে হবে। ‘আমরা আশা করছি আগামী বছরের জুনের মধ্যে এই কাজগুলো শেষ করব।’
তিনি বলেন, ‘পাওয়ার গ্রিড লাইন নির্মাণ এবং যোগাযোগ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার নির্মাণ গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর মধ্যে যা রয়েছে তা আগামী ২০২৪ সালের মাঝামাঝি আগে সম্পন্ন করতে হবে।’
পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সঙ্গে চুক্তির জন্য একটি নিবেদিত কোম্পানি নিউক্লিয়ার পাওয়ার কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড। এর (এনপিসিবিএল)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. শওকত আকবর বলেছেন, ২০২৪ সালের দ্বিতীয়ার্ধে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন প্রথম ইউনিটের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে এবং ২০২৫ সালে দ্বিতীয় ইউনিট।
প্রাথমিকভাবে প্রথম ইউনিটের বাণিজ্যিক কার্যক্রম ২০২২ এবং দ্বিতীয় ইউনিট ২০২৩ থেকে শুরু করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল এবং তারপর লক্ষ্য পিছিয়ে দেয়া হয়েছিল।
এনবিসিবিএল-এর কর্মকর্তারা বলেছেন, রাশিয়া এবং বেলারুশসহ বিভিন্ন পশ্চিমা দেশ থেকে প্রায় ১৪ হাজার বিদেশি কর্মী এখন বিভিন্ন কাজ সম্পাদনের জন্য ঠিকাদার এবং এর সাব-কন্ট্রাক্টরদের অধীনে এই প্রকল্পে নিযুক্ত রয়েছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর সময়মতো প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল।
কিন্তু এই প্রকল্পের রাশিয়ান ঠিকাদার রোসাটম এ বছরের ১ মার্চ একটি বিবৃতিতে এই ধরনের অনিশ্চয়তা উড়িয়ে দিয়ে বলেছে যে সময়মত প্রকল্পের কাজ শেষ করতে কোন ব্যাঘাত হবে না।
রোসাটম বলেছে, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রতিশ্রুতি এবং কাজের সময়সূচিগুলোর মধ্যে কোন বাধার পূর্বাভাস দেয়া হয়নি।’
যদিও রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে বর্তমান যুদ্ধ সম্পর্কে বিবৃতিতে কিছুই উল্লেখ করা হয়নি, তবে ধারণা করা হয় যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কিছু পশ্চিমা দেশ কর্তৃক রাশিয়ার ওপর আরোপিত আর্থিক নিষেধাজ্ঞা নিয়ে উদ্বেগের প্রেক্ষিতে রোসাটম এটি স্পষ্ট করেছে।
রোসাটমের কর্মকর্তারা দ্বিতীয় ইউনিটে চুল্লি স্থাপনকে একটি বিশেষ ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তারা বলেন, নকশা অবস্থানে দ্বিতীয় পাওয়ার ইউনিটের ভিভিইআর-১২০০ রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপন করার কার্যক্রমটি বেশ কয়েকটি ধাপে পরিচালিত হয়েছিল।
একটি লিয়েবয়ার-১১৩৫০ ভারী ক্রলার ক্রেন চুল্লি সিলিন্ডারটিকে পাওয়ার ইউনিটের পরিবহন পোর্টালে তুলেছে।
এরপর একটি বিশেষ পরিবহন ট্রলিতে এটিকে চুল্লির বগির কেন্দ্রীয় হলে সরানো হয়েছিল। আরও একটি পোলার ক্রেনের সাহায্যে চুল্লি সিলিন্ডারটিকে একটি খাড়াভাবে তোলা হয়েছিল এবং চুল্লির যন্ত্রে একটি সাহায্যকারী ফ্রেমে স্থাপন করা হয়েছিল।
রোসাটম জানিয়েছে, এইএম প্রযুক্তিতে নির্মিত ভিভিইআর-১২০০ চুল্লি সিলিন্ডারটির ওজন ৩৩৩ দশমিক ৬ টন।
বিদ্যুৎ খাতে ভালো সমন্বয় দরকার: নসরুল হামিদ
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিদ্যুৎ খাতের অবকাঠামো উন্নয়নে প্রকল্প বাস্তবায়নে আরও সমন্বয় নিশ্চিত করতে নিজ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনে ‘টুগেদার ফর এ স্মার্ট অ্যান্ড গ্রিন বাংলাদেশ’ শীর্ষক কর্মশালায় কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সমন্বয়ের অভাবে অনেক অর্জনই ব্যর্থতায় পরিণত হচ্ছে।
সাম্প্রতিক গ্রিড ব্যর্থতার পটভূমিতে এই আহ্বান জানাল প্রতিমন্ত্রী। ৪ অক্টোবর দেশের বেশিরভাগ অঞ্চল সাত ঘন্টার ব্ল্যাকআউটে নিমজ্জিত হয়েছিল।
চীনের প্রযুক্তি কোম্পানি হুয়াওয়ে এবং বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের কারিগরি শাখা পাওয়ার সেল যৌথভাবে স্মার্ট গ্রিডের উন্নয়ন এবং বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার বিষয়ে এই কর্মশালার আয়োজন করে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, পাওয়ার গ্রিড স্বয়ংক্রিয়করণ এখন সময়ের অপরিহার্য দাবি।
একটি স্মার্ট গ্রিড স্বয়ংক্রিয়ভাবে চাহিদা এবং সরবরাহের মধ্যে ভারসাম্য নিশ্চিত করতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তথ্য প্রযুক্তি এবং স্মার্ট ডিভাইসের প্রবর্তন পাওয়ার ট্রান্সমিশন সিস্টেমকে সুরক্ষিত রাখবে।
তিনি প্রযুক্তিগত উন্নয়নের পাশাপাশি বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে প্রচলিত গ্রিড থেকে স্মার্ট গ্রিডে রূপান্তর করতে বিদ্যুৎ খাতে দক্ষ জনশক্তির বিকাশের প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেন।
তিনি রাজধানীতে ও বাইরে দৈনিক পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের তীব্র বিদ্যুতের সংকটে জনগণকে ধৈর্য ধরার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।
কর্মশালার পাশাপাশি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি ভালো পেতে জনগণকে নভেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
কর্মশালায় স্মার্ট গ্রিড, ইলেকট্রিক যান এবং গ্লোবাল কনটেক্সট বিষয়ক দু’টি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়। স্মার্ট গ্রিড, সাইবার-আক্রমণ প্রতিরোধ, ডিজিটাইজেশন, অটোমেশনের পাশাপাশি প্রযুক্তি-ভিত্তিক ক্লিন এনার্জি এবং বৈদ্যুতিক যানবাহন নিয়েও আলোচনা হয়।
সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব বৈদ্যুতিক গাড়ির বিষয়টিও কর্মশালায় উঠে আসে। ওয়ার্কশপে বলা হয়, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে চার্জিং গাইডলাইন সংক্রান্ত একটি নীতিমালা তৈরি করেছে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিদ্যুৎ সচিব মো. হাবিবুর রহমান এবং হুয়াওয়ে টেকনোলজির (বাংলাদেশ) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্যান জুনফেং।
পাইকারিতে বিদ্যুতের শুল্ক ‘সমন্বয়’ বিষয়ে সিদ্ধান্ত বৃহস্পতিবার
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন(বিইআরসি)বৃহস্পতিবার(১৩ অক্টোবর) পাইকারিতে বিদ্যুতের শুল্ক সমন্বয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবে। মঙ্গলবার কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন।
বিইআরসি চেয়ারম্যান আবদুল জলিল ইউএনবিকে বলেন, শিগগিরই এ বিষয়ে নোটিশ জারি করা হবে।
এর আগে বিইআরসি প্রধান বলেছিলেন যে জনশুনানি শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে যে কোনও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার নিয়ম অনুসারে ১৪ অক্টোবরের মধ্যে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
পাইকারিতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর সর্বশেষ ১৮ মে গণশুনানি করেছিল রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড(বিপিডিবি)।
শুনানির প্রক্রিয়া শেষ করতে বিইআরসি স্টেকহোল্ডারদের প্রাসঙ্গিক নথি জমা দেয়ার সময় বাড়িয়েছে।
বিইআরসি’র সদস্য বলেছেন, সেই অতিরিক্ত সময় থেকে বিইআরসি ৯০ দিন গণনা করছে এবং ১৪ অক্টোবর নির্ধারিত সময় শেষ হবে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে পাইকারিতে বিদ্যুতের শুল্কের কোনও সমন্বয় বিদ্যুতের বর্তমান খুচরা শুল্কের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে না।
কিন্তু বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোর ওপর -এর প্রভাব পড়বে।এর মধ্যে যারা বিপিডিবি থেকে বিপুল পরিমাণে বিদ্যুৎ কিনে তাদের খুচরা গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করে তারাও প্রভাবিত হবে। এর অর্থ হলো- যদি নিয়ন্ত্রকের কাছ থেকে কোনো ঊর্ধ্বমুখী সমন্বয় আসে, বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো পরবর্তীতে খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়াবে।
জ্বালানি নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি এমন সময়ে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে যাচ্ছে যখন দেশে তীব্র বিদ্যুত সংকট চলছে এবং গ্রাহকরা প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় ঘন্টা লোডশেডিংয়ের শিকার হচ্ছেন।
অন্যদিকে, আর্থিক সহায়তা হিসেবে ভর্তুকি পেতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রচণ্ড চাপের মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে অনেক বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনে গ্রাহকদের কাছে কম দামে বিক্রি করায় বিপিডিবি ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
এই পটভূমিতে, বিপিডিবি গণশুনানিতে পাইকারিতে বিদ্যুতের শুল্ক ৬৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ বাড়ানোর একটি প্রস্তাব পেশ করে যখন বিইআরসি-এর একটি প্রযুক্তিগত মূল্যায়ন কমিটি (টিইসি) ৫৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ বৃদ্ধির সুপারিশ করেছিল।
পাঁচ সদস্যের কমিশন যেকোনও প্রস্তাবের বিষয়ে গণশুনানির পর স্টেকহোল্ডারদের যুক্তি ও পাল্টা যুক্তি শুনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়।
১৮ মে গণশুনানিতে বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংস্থার প্রতিনিধিসহ ভোক্তা অধিকার গোষ্ঠীগুলো এই মুহূর্তে বিদ্যুতের শুল্কের যে কোনও বড় বৃদ্ধির তীব্র বিরোধিতা করেছে। কারণ মানুষ ইতোমধ্যেই উচ্চ দ্রব্যমূল্যের কারণে উচ্চ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে লড়াই করছে৷
তারা প্রস্তাবটিকে অযৌক্তিক আখ্যায়িত করে বলেন, অদক্ষ বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উচ্চ হারে বিদ্যুৎ কেনার ক্ষেত্রে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অনৈতিক প্রথা মোকাবিলার মাধ্যমে বিপিডিবি তার রাজস্ব ঘাটতি পূরণ করতে পারে।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ খাতে উন্নয়নের নামে সরকারের ব্যাপক লুণ্ঠন প্রকাশ পেয়েছে: বিএনপি
বিপিডিবি কর্মকর্তারা প্রস্তাবটি উপস্থাপন করে বলেছিলেন যে সংস্থাটি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোতে ৮৮ হাজার ৯৯৩ মিলিয়ন কিলোওয়াট ঘন্টা (ইউনিট) সরবরাহ করতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৭৪ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা রাজস্বের প্রয়োজন হবে।
‘কিন্তু বিপিডিবি যদি তার বর্তমান বিদ্যুত পাঁচ টাকা ১৭ পয়সা প্রতি ইউনিট দরে বিক্রি করে, তাহলে ২০২২ সালের ক্যালেন্ডার বছরে ৩০ হাজার ২৫১ কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতির সম্মুখীন হবে। সরকারের ভর্তুকি ছাড়াই গণনা করার কথা উল্লেখ করে শুনানিতে
বিপিডিবির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, বিপিডিবিকে বিদ্যুতের দাম ৬৫ দশমিক সাত শতাংশ বৃদ্ধি করে প্রতি ইউনিটের মূল্য ৫ দশমিক ১৭ টাকা থেকে ৮ দশমিক ৫৬ টাকা করতে হবে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম বৃদ্ধির পর বিদ্যুৎ বিভাগ তার ডিজেল-চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কার্যক্রম এবং তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি স্থগিত করেছে।
ফলে, যদিও দেশের স্থাপিত বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় দুই হাজার ৫৫০ মেগাওয়াট, এটি এখন প্রায় ১৪ হাজার মেগাওয়াটের চাহিদার বিপরীতে প্রায় ১২ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন করে এবং প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াটের লোডশেডিং দিচ্ছে।
আরও পড়ুন: লোডশেডিং: ঘোড়াশাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতির উন্নতি হবে না
কর্ম সপ্তাহের শুরুতে ঢাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি আরও খারাপ
ছুটির দিনে চাহিদা কম থাকা সত্ত্বেও লোডশেডিংয়ে নাগরিক ভোগান্তি
শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির থাকায় গ্রাহকরা আশা করেন এ দুই দিন অন্তত তারা নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ পাবেন। তবে শুক্রবার বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকলেও সপ্তাহের অন্যান্য দিনের মতোই বারবার লোডশেডিংয়ে রাজধানীর জনজীবন বিপর্যস্ত হয়েছে।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা যায়, ৪ অক্টোবর টানা ৭ ঘন্টা জাতীয় গ্রিড বিপর্যয়ের পর সারা দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরুদ্ধার হলেও, এখনও বিদ্যুৎ উৎপাদন আগের স্তরে পৌঁছাতে পারেনি।
কর্মকর্তাদের মতে, ঢাকা শহর এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় শুক্র ও শনিবার ২৫০০ মেগাওয়াটের চাহিদার বিপরীতে দৈনিক ৫০০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে।
ঢাকা শহর ও আশপাশের এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণকারী ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) এবং ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো) কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন যে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে এবং এখন তাদের দিনে তিন ঘন্টারও বেশি সময় ধরে লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
তবে ডেসকো ও ডিপিডিসি উভয় এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, তারা দিনে তিন থেকে ছয় ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের শিকার হচ্ছেন।
রামপুরা এলাকার বাসিন্দা আবদুর রহমান জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমরা অনেক সময়েই ৫ ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং অনুভব করছি’।
ডিপিডিসি ও ডেসকোর আওতাধীন অন্যান্য এলাকার বাসিন্দাদের কাছ থেকেও একই ধরনের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেছেন, ডিপিডিসি দিনে ৩০০ মেগাওয়াট কম উৎপাদন নিয়েই বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিচালনা করছে এবং রাতে লোডশেডিংয়ের মাত্রা আরও বাড়তে পারে।
আরও পড়ুন: জাতীয় গ্রিড ব্যর্থতা: বিদ্যুৎ বিভাগের ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন
ডিপিডিসি ঢাকা শহরের মধ্য ও পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিম অংশ এবং নারায়ণগঞ্জের কিছু অংশে বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে আছে।
বিকাশ দেওয়ান ইউএনবিকে বলেন, ‘আমাদের ডিপিডিসি এলাকায় যেখানে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন, সেনানিবাস এবং অধিকাংশ সরকারি হাসপাতাল রয়েছে, সেখানেও বিপিডিবি থেকে তুলনামূলকভাবে কম বিদ্যুৎ সরবরাহের সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে।’
শনিবার সকাল ৭টায় ডিপিডিসি ১৪০০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে এক হাজার ১০০ মেগাওয়াট পেয়েছে এবং কর্মদিবসে চাহিদা এক হাজার ৬৫০ থেকে এক হাজার ৭০০ মেগাওয়াটের মধ্যে রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ঢাকা শহরের উত্তর ও পূর্ব অংশ এবং টঙ্গী শিল্প কেন্দ্রে বিদ্যুৎ বিতরণকারী ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কাউসার আমীর আলী বলেন, বিতরণ সংস্থাটি ১৮২ টি লোডশেডিং সহ ৯৩২ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাচ্ছে।
তিনি ইউএনবিকে বলেন, ‘সন্ধ্যা হলে ডেসকো এলাকায় লোডশেডিংয়ের মাত্রা বাড়তে পারে’।
বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) একজন শীর্ষ কর্মকর্তা সরকারি পরিসংখ্যানের উল্লেখ করে বলেন, শুক্রবার দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ১২ হাজার ৮৮৯ মেগাওয়াট, যেখানে অপেক্ষাকৃত কম চাহিদা ১৩ হাজার ৯০০ মেগাওয়াট ছিল। যেখানে লোডশেডিং রেকর্ড করা হয়েছিল এক হাজার ১১ মেগাওয়াট।
আরও পড়ুন: ঢাকা মহানগরীতে আংশিক বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তার মতে, শনিবার সর্বোচ্চ চাহিদার পূর্বাভাস ১৩ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট এবং জেনারেশন পূর্বাভাস ১২ হাজার ৪৩৫ মেগাওয়াট এবং সারা দেশে এক হাজার ১৬৫ মেগাওয়াট লোডশেডিং হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ২৫ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। কিন্তু কঠোরতামূলক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে সরকার সমস্ত ডিজেল-চালিত প্ল্যান্ট বন্ধ রেখেছিল এবং গ্যাস সরবরাহের ঘাটতির জন্য প্রচুর সংখ্যক প্ল্যান্ট বন্ধ ছিল।
ওই কর্মকর্তা আরও স্বীকার করেছেন যে সরকারি পরিসংখ্যানে কখনও কখনও বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রকৃত ঘাটতির সঠিক চিত্র পাওয়া যায়না। এতে কেবল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর শেষে রেকর্ড করা উৎপাদনের পরিমাণের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়।
তিনি বলেন, ‘কিন্তু যখন বিদ্যুৎ গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে যায়, তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ১০-১৩ শতাংশ বিদ্যুৎ সিস্টেমেই হারিয়ে যায়। কারণ পাওয়ার স্টেশন, সাবস্টেশন ও ট্রান্সমিশন সিস্টেমের নিজস্ব খরচ রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, তাই মানুষ সাধারণত পরিসংখ্যানের তুলনায় ১০-১৩ শতাংশ কম বিদ্যুৎ পায়।
এদিকে বিপিডিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখনও ঘোড়াশাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পুরোদমে চালু করতে পারেনি।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ৭০০ মেগাওয়াটের বিপরীতে মোট ২১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে, কারণ মোট ৭টির মধ্যে এখনও ৬টি উৎপাদন ইউনিট উৎপাদনে ফিরে আসতে পারেনি।
তিনি আরও বলেন, বাকি ৬টি ইউনিট থাকলে ঢাকায় পরিস্থিতির উন্নতি হবে। প্রায় ৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা, উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারে।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ বিপর্যয়: রাজধানীর পেট্রোল পাম্পগুলোতে বিশৃঙ্খলা
গ্রিড ব্যর্থতার পেছনে বিদ্যুৎ খাতে চুরি: ফখরুল
জাতীয় গ্রিড ব্যর্থতার কারণে মঙ্গলবার দেশের বেশিরভাগ এলাকায় দীর্ঘ বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের জন্য সরকারের সামগ্রিক ‘ব্যর্থতা’ এবং বিদ্যুৎ খাতে চুরিকে দায়ী করেছে বিএনপি।
দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা মনে করি যে এটি (জাতীয় গ্রিড ব্যর্থতা) সরকারের সম্পূর্ণ ব্যর্থতার কারণে ঘটেছে এবং পরিকল্পনা, কাঠামোগত এবং প্রযুক্তিগত বিষয়গুলির সঙ্গে সম্পর্কিত সমস্যা এবং বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক চুরি।’
বুধবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর আসাদ গেটের বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
অসুস্থ হয়ে পড়ায় বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে নিয়ে ফখরুল টুকুর বাড়িতে যান।
আরও পড়ুন: তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া অন্য কোনোভাবে নির্বাচন হতে দেবো না: ফখরুল
এই বিএনপি নেতা আরও বলেন, বিদ্যুৎ খাত একা এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন নয়। এসব সব জায়গায় ঘটছে। আমি মনে করি এর পেছনের মূল কারণ হলো সরকারের বিভিন্ন অপরিকল্পিত উন্নয়ন প্রকল্প শুধুমাত্র দুর্নীতিতে লিপ্ত হওয়ার জন্য।
এর আগে মঙ্গলবার, সারাদেশে প্রায় সাত ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হয়েছিল, জাতীয় পাওয়ার গ্রিডের ব্যর্থতার কারণে বেশিরভাগ এলাকা ব্ল্যাকআউটে নিমজ্জিত হয়েছিল।
ফখরুল বলেন, সরকার বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন এবং দেশের চাহিদার চেয়ে বেশি বিদ্যুত উৎপাদনের সক্ষমতা নিয়ে বড়াই করলেও মানুষ প্রতিনিয়ত বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সম্মুখীন হচ্ছে।
‘গতকালের (মঙ্গলবার) ঘটনাটি ছিল অস্বাভাবিক। দেশের অধিকাংশ এলাকায় প্রায় আট ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না। এটি সম্পূর্ণ ব্ল্যাকআউটের মতো,’ ফখরুল যোগ করেন।
তিনি বলেন, ব্ল্যাকআউট প্রকাশ করেছে যে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বিদ্যুৎ খাতে বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে বিপুল অর্থ উপার্জন করেছেন, কিন্তু বাস্তব ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এটি (ব্ল্যাকআউট) দেশকে একটি মহা বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। ফলে মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট, সব কারখানা ও ফিলিং স্টেশন বন্ধ হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, কোথাও কোনো জবাবদিহিতা না থাকায় বর্তমান সরকার অপরিকল্পিত প্রকল্প গ্রহণ করে জনগণের টাকা লুটপাট করছে।
আরও পড়ুন: ইসি’র ইভিএম কেনার প্রকল্প জাতির সঙ্গে উপহাস: ফখরুল
‘নির্বাচিত সংসদ নেই। যেহেতু এই সরকারের জনগণের কাছে কোনো জবাবদিহিতা নেই, তাই আমরা প্রতিটি সেক্টরে অনেক সমস্যা ও বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছি। এই ঘটনা (জাতীয় গ্রিড ব্যর্থতা) তার প্রমাণ। এ কারণেই আমরা বারবার বলছি, এই সরকার দেশের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে,’ বলেন ফখরুল।
তিনি বলেন, অবিলম্বে এই সরকারকে অপসারণ করা না হলে জাতির টিকে থাকা কঠিন হবে।
বিএনপি নেতা বলেন, বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে আমাদের আর কোনো বিকল্প নেই।
আরও পড়ুন: অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের আকাঙ্খা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি: ফখরুল
ঢাকা মহানগরীতে আংশিক বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক
রাজধানীর মানিকনগর ও হাসনাবাদ গ্রিড সাবস্টেশনের অধীনে ঢাকা মহানগরীর কিছু এলাকায় এবং সিলেট, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহের বেশ কয়েকটি জেলায় সন্ধ্যা ৭টায় বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরায় শুরু হয়েছে। কিন্তু উলন গ্রিড সাবস্টেশনের আওতাধীন এলাকায় সরবরাহ চালু করা যায়নি।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) কর্মকর্তাদের মতে, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ শহরের সব এলাকায় এবং অন্যান্য জেলার বিদ্যুৎ সরবরাহে আরও দুই ঘণ্টা সময় লাগতে পারে।
মঙ্গলবার পিজিসিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা বদরুদ্দোজা সুমন ইউএনবিকে বলেন, ‘আমরা আশা করছি রাত ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহের স্বাভাবিক অবস্থা পুরোপুরি ফিরে আসবে।
আরও পড়ুন: সন্ধ্যা ৭টায় পুরোপুরি বিদ্যুৎ চালু হতে পারে: নসরুল হামিদ
তিনি বলেন, সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, জামালপুর, মানিকগঞ্জ এবং চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের সব জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি চালু হয়েছে।
এর আগে জাতীয় পাওয়ার গ্রিড বিকল হওয়ার পর আজ বিকাল ৫টার দিকে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনসহ ঢাকার কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি স্বাভাবিক হবে বলে আশা প্রকাশ করেছিলেন।
দুপুর ২টা ৫ মিনিটে জাতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন গ্রিড ব্যর্থ হলে দেশের উত্তরাঞ্চলের কিছু অংশ ছাড়া সারা বাংলাদেশে ব্ল্যাকআউট সৃষ্টি করে।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ বিপর্যয়: রাজধানীর পেট্রোল পাম্পগুলোতে বিশৃঙ্খলা
জাতীয় পাওয়ার গ্রিডে বিপর্যয়: দেশের অধিকাংশ এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন
বিদ্যুৎ বিপর্যয়: রাজধানীর পেট্রোল পাম্পগুলোতে বিশৃঙ্খলা
বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় মঙ্গলবার ঢাকার পেট্রোল পাম্পগুলোতে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
পেট্রোল পাম্প অপারেটরদের মতে, দুপুর ২টা ৫ মিনিটে জাতীয় গ্রিড ব্যর্থ হওয়ার পরপরই, অনেক বাসিন্দা তাদের জেনারেটর চালানোর জন্য ডিজেল সংগ্রহ করতে পেট্রোল পাম্পে ছুটে আসেন।
বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প মালিক সমিতির সভাপতি নাজমুল হক ইউএনবিকে বলেন, ‘ডিজেলের উচ্চ চাহিদার কারণে, কয়েক ঘন্টার মধ্যে পেট্রোলিয়াম শেষ হয়ে যায় এবং অনেক ক্রেতা পেট্রোলিয়াম কিনতে এসে ফিরে যায়।’
তিনি বলেন, ঢাকা শহরের প্রায় ৪০টি পাম্পের মধ্যে মাত্র ২৫ শতাংশ ডিজেল বিক্রি করে, বাকি ৭৫ শতাংশ পাম্পে ডিজেল বিক্রি হয় না; শুধু অকটেন ও পেট্রোল বিক্রি হয়।
আরও পড়ুন: সন্ধ্যা ৭টায় পুরোপুরি বিদ্যুৎ চালু হতে পারে: নসরুল হামিদ
নাজমুল হক আরও বলেন, অনেক পাম্প ডিপো থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ডিজেল সংগ্রহ করতে পারেনি, কারণ তাদের কয়েকজন কর্মচারী দুর্গাপূজার ছুটিতে রয়েছেন।
ফলে ডিজেল বিক্রি করা পাম্পগুলোও অতিরিক্ত চাপ সামলাতে ব্যর্থ হয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে, গুলশান, বনানী ও নিকেতন এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, তারা ডিজেল সংগ্রহ করতে অনেক রি-ফুয়েলিং স্টেশনে গিয়েছিলেন, কিন্তু পাম্প মালিকেরা তাদের মজুদে ডিজেল নেই বলে তাদের খালি হাতে ফিরে আসতে হয়েছে।
আরও পড়ুন: জাতীয় পাওয়ার গ্রিডে বিপর্যয়: দেশের অধিকাংশ এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন
সময়মতো বিদ্যুৎ বিল শোধ না করলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন
সন্ধ্যা ৭টায় পুরোপুরি বিদ্যুৎ চালু হতে পারে: নসরুল হামিদ
জাতীয় পাওয়ার গ্রিড বিকল হওয়ার পর আজ বিকেল ৫টার দিকে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনসহ ঢাকার কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হয়।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি চালু হতে পারে বলে আশা করছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ইউএনবিকে বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে বঙ্গভবন ও গণভবন এবং মিরপুর ও ঢাকার অন্যান্য এলাকার কিছু অংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুণরায় চালু করেছি।
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তারা সারা বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করতে কঠোর পরিশ্রম করছেন।
ইতোমধ্যে ঢাকার বাইরে বেশ কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘তবে ঢাকা শহরের জন্য আমি স্থিরভাবে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছি যাতে আর কোনো বিঘ্ন না ঘটে।’
নসরুল হামিদ আরও বলেন, ‘তারা তাড়াহুড়ো করলে তা আরও বিঘ্ন ঘটাতে পারে।’
দুপুর ২টা ৫ মিনিটে জাতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন গ্রিড ব্যর্থ হলে দেশের উত্তরাঞ্চলের কিছু অংশ ছাড়া সারা বাংলাদেশে ব্ল্যাকআউট সৃষ্টি করে।
জাতীয় পাওয়ার গ্রিডে বিপর্যয়: দেশের অধিকাংশ এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন
জাতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন গ্রিডে বিপর্যয় হওয়ায় মঙ্গলবার দুপুর ২টা ৫ মিনিট থেকে দেশের উত্তরাঞ্চলের কিছু অংশ বাদে সারা দেশ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি)ও পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) কর্মকর্তাদের মতে, দেশের পূর্বাঞ্চলে, বিশেষ করে যমুনা নদীর পূর্ব দিকের জেলাগুলোর কোথাও কোথাও ট্রান্সমিশন লাইন ট্রিপ হয়েছে।
পিজিসিবির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, রংপুর বিভাগের মাত্র কয়েকটি জেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল।
আরও পড়ুন: সময়মতো বিদ্যুৎ বিল শোধ না করলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন
গ্রিড বিকল হয়ে যাওয়ায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগে একের পর এক কেন্দ্র বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
বিপিডিবির পরিচালক (জনসংযোগ) শামীম হাসান জানান, বিপিডিবি এবং পিজিসিবি উভয়ের প্রকৌশলীরা বিদ্যুৎ সঞ্চালন পুনরুদ্ধারের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন।
দুপুর ২টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত ওই বিভাগের বেশ কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে।
পিজিসিবি কর্মকর্তারা অবশ্য বলেছেন যে তারা গ্রিড ব্যর্থতার সঠিক কারণ ও অবস্থান এখনও শনাক্ত করতে পারেনি।
২০১৭ সালের ২ মে দেশের ৩২টি জেলায় গ্রিড বিপর্যয়ের সর্বশেষ ঘটনা ঘটেছিল।
আরও পড়ুন: বিশ্বব্যাংককে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রকল্পে অর্থায়ন ত্বরান্বিত করার আহ্বান নসরুল হামিদের
বিশেষ ব্যবস্থাপনায় নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ চায় বিজিএমইএ