এশিয়া
উ.কোরিয়া ফের সমুদ্রের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে: দ. কোরিয়া
দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ংইয়ং থেকে শনিবার ফের সমুদ্রের দিকে একটি সন্দেহভাজন দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। দ.কোরিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ সামরিক মহড়ার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দেয়ার একদিন পরেই উ.কোরিয়া এই ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।
সিউলের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ জানিয়েছেন, এদিন বিকাল ৫টা ২২ মিনিটে পিয়ংইয়ং এর সুনান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকা থেকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রটি নিক্ষেপ করা হয়েছিল। তবে অস্ত্রটি কোথায় পড়েছে তা তাৎক্ষণিকভাবে বলা হয়নি।
উ.কোরিয়ার ক্রমবর্ধমান হুমকির বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া হিসেবে দ.কোরিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলে একাধিক পরিকল্পিত সামরিক মহড়া ঘোষণা করে।
এরপর উ.কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুক্রবার তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে ‘অভূতপূর্ব’ শক্তিশালী পদক্ষেপের হুমকি দিয়েছে।
উ.কোরিয়া চলতি বছরের ১ জানুয়ারি পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম একটি স্বল্প-পাল্লার অস্ত্রের পরীক্ষা চালায়। এবছর উত্তর কোরিয়া ৭০টিরও বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে অস্ত্র প্রদর্শনে রেকর্ড করেছে। যার মধ্যে মার্কিন মূল ভূখণ্ডে পৌঁছানোর সম্ভাব্য সক্ষমতাসহ আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও রয়েছে।
উ.কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাগুলো মূলত দ.কোরিয়া বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পারমাণবিক হামলার হুমকি।
আরও পড়ুন: আবারও ব্যালিস্টিক মিসাইল নিক্ষেপ করল উত্তর কোরিয়া
উ.কোরিয়ার নেতা কিম জং উন ২০২৩ সালে তার পরমাণু কর্মকাণ্ড দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন।
তিনি দেশটির পারমাণবিক ওয়ারহেডগুলো ‘উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি’ ও ‘শত্রু’ দ.কোরিয়াকে লক্ষ্য করে যুদ্ধক্ষেত্রের কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যাপক উৎপাদন এবং আরও উন্নত আইসিবিএমগুলো বিকাশের আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি গত সপ্তাহে রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ে একটি বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজের সময় এক ডজনেরও বেশি আইসিবিএম প্রদর্শন করেন।
সীমিত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও বিপুল সংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে কিম তার দেশের সামরিক সক্ষমতা সম্প্রসারণের ধারাবাহিকতার ওপর জোর দিয়ে আসছেন।
অন্যদিকে, ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনায় অচলাবস্থা বজায় রয়েছে।
শুক্রবার উ.কোরিয়া এক বিবৃতিতে এই বছর ওয়াশিংটন ও সিউলকে ২০ রাউন্ডের বেশি সামরিক মহড়ার পরিকল্পনা করার জন্য অভিযুক্ত করেছে। যার মধ্যে বড় আকারের মহড়াও রয়েছে এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বীরা আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যাহত করছে’ বলে বর্ণনা করেছে।
দ.কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আইনপ্রণেতা কর্মকর্তারা বলেছিলেন যে সিউল ও ওয়াশিংটন মার্চের মাঝামাঝি সময়ে একটি বার্ষিক কম্পিউটার-সিমুলেটেড সম্মিলিত প্রশিক্ষণের আয়োজন করবে।
দ.কোরিয়ার জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতির উপমন্ত্রী হিও তাই-কেউনের মতে, ১১ দিনের প্রশিক্ষণ উ. কোরিয়ার পারমাণবিক হুমকির পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ বিভিন্ন অনির্দিষ্ট লক্ষ্য প্রতিফলিত করবে।
হিও বলেন, দুই দেশ মার্চের মাঝামাঝি সময়ে যৌথ মহড়াও পরিচালনা করবে, যা বিগত কয়েক বছরে অনুষ্ঠিত হওয়া মহড়ার তুলনায় বড় হবে।
আরও পড়ুন: উত্তর কোরিয়ার দূরপাল্লার মিসাইল পরীক্ষা
শিগগিরই নতুন ‘কৌশলগত অস্ত্র’ প্রদর্শন করবে উত্তর কোরিয়া: কিম
ফিলিপাইনে ভূমিকম্পের কারণে খালি করা হলো হাসপাতাল
ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় প্রদেশ একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প কেঁপে ওঠেছে। বৃহস্পতিবার রাতের ভূমিকম্পে লোকজন তাদের বাড়িঘর থেকে বের হয়ে আসে।
একইভাবে বেশ কিছু রোগীকে কলিজিয়াম সরকারি হাসপাতাল থেকে সরিয়ে নেয়া হয়।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কলিজিয়াম সরকারি হাসপাতাল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামান্য ক্ষতি হয়েছে।
উপকূলীয় শহর বাতুয়ান থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার (ছয় দশমিক আট মাইল) পশ্চিমে ১০ কিলোমিটার (ছয় মাইল) গভীরতায় একটি স্থানীয় ফল্ট লাইনে ছয় মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে।
মাসবাত প্রদেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এতে হতাহতের বা বড় ক্ষয়ক্ষতির কোনো তাৎক্ষণিক খবর পাওয়া যায়নি।
মাসবেত প্রাদেশিক দুর্যোগ-প্রশমন কর্মকর্তা অ্যাডোনিস ডিলাও বলেন, মধ্যরাতের প্রায় দুই ঘণ্টা পর ভূমিকম্পটি আঘাত হানে, যার ফলে অনেক মানুষ ঘুম থেকে জেগে ওঠে।
প্রাদেশিক রাজধানী মাসবেট শহরের রেড ক্রস কর্মকর্তা এমজে অক্সেমার টেলিফোনে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেছেন, ‘প্রথম ঝাঁকুনিটি সত্যিই শক্তিশালী ছিল এবং তারপর কেঁপে উঠেছিল যা আমাকে এবং আমার শিশুকে জাগিয়েছিল।’ ‘আমরা মাটির গর্জন শুনতে পাচ্ছিলাম।’
ডিলাও জানিয়েছ, মাসবেটের একটি প্রাদেশিক হাসপাতাল থেকে কয়েক ডজন রোগীকে সরিয়ে নেয়া হয়েছিল। কিন্তু পরে ভূমিকম্পের কারণে তিনতলা ভবনে কিছু ফাটল দেখা দেয়ার পরও ফিরিয়ে আনা হয়। মাসবেট শহরের একটি ছোট সরকারি কলিজিয়ামের ছাদের একটি অংশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
দিলাও টেলিফোনে এপিকে জানান, মাসবেট শহরের কেন্দ্রস্থলে মুদি এবং ওষুধের দোকানসহ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কংক্রিটের স্তম্ভে এবং কিছু বাড়িতে ফাটল দেখা গেছে।
আরও পড়ুন: তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্প: ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিতদের উদ্ধারে উল্লাস
ডিলাও বলেছিলেন যে দোকান বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কখন খুলতে হবে সে সম্পর্কে যদিও মালিকদের বিচক্ষণতা আছে। তবুও তাদের সরকারি সুরক্ষা পরিদর্শকদের পরামর্শ মেনে চলা উচিত। কারণ ভূমিকম্পের পরে কমপক্ষে দুটি শক্তিশালী আফটারশক অনুভূত হয়েছিল।
তিনি বলেন, টাইফুনের বিপরীতে, যা মানুষকে সময় দেয়ার জন্য ভবিষ্যদ্বাণী করা যেতে পারে, ভূমিকম্প হঠাৎ করে আঘাত হানতে পারে।
সিভিল ডিফেন্স কার্যালয় বলছে, ভূমিকম্পটি মাসবেট এবং নিকটবর্তী টিকাও দ্বীপের অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেয় এবং কিছু স্কুলের ক্লাস স্থগিত করা হয়। স্থানীয় কর্মকর্তারা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ খতিয়ে দেখছে।
ফিলিপাইন প্রশান্ত মহাসাগরের ‘রিং অব ফায়ার’ বরাবর অবস্থিত। প্রশান্ত মহাসাগরের চারপাশে ত্রুটির একটি চাপ থাকায় বিশ্বের বেশিরভাগ ভূমিকম্প এই অঞ্চলে হয়। এটির কারণে প্রতি বছর প্রায় ২০টি টাইফুন এবং গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঝড় আঘাত হানে। এটি বিশ্বের সবচেয়ে দুর্যোগ-প্রবণ দেশগুলোর মধ্যে একটি।
উত্তর ফিলিপাইনে ১৯৯০ সালে সাত দশমিক সাত মাত্রার একটি ভূমিকম্পে প্রায় দুই হাজার মানুষ মারা গেছে।
আরও পড়ুন: তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ২৮ হাজার ছাড়াল
ভারতে বিবিসি’র কার্যালয়ে তৃতীয় দিনের মতো অভিযান, কর ফাঁকির অভিযোগ
কর ফাঁকির অভিযোগে নয়াদিল্লি ও মুম্বাইয়ে বিবিসি কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার তৃতীয় দিনের মতো তল্লাশি চালাচ্ছে দেশটির কর কর্মকর্তারা। সংস্থাটির ব্যবসায়িক কার্যক্রম সম্পর্কে তথ্য জানতেই তারা এই তল্লাশি চালাচ্ছে।
বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং অন্যান্য গণমাধ্যম সংস্থাগুলো ভয় দেখানোর প্রচেষ্টা হিসাবে এই অভিযানের সমালোচনা করছে।
গণমাধ্যমে কথা বলার অনুমতি না থাকায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু গণমাধ্যমকর্মী বলেছেন, কর কর্মকর্তারা বৃহস্পতিবার কয়েকজন সাংবাদিককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। তবে কোম্পানির ব্যবসায়িক নির্বাহী এবং তাদের কার্যালয়ে অভিযান চালাতে পারেনি।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমালোচকরা অনুসন্ধানের সময় নিয়ে প্রশ্ন তু্লেছেন। বিবিসি মোদির সমালোচনামূলক একটি ডকুমেন্টারি যুক্তরাজ্যে প্রচারের কয়েক সপ্তাহ পরে এই অভিযান চালানো হলো।
ভারতের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা কাঞ্চন গুপ্তা বলেছেন, ডকুমেন্টারির সঙ্গে অভিযানের কোন সম্পর্ক নেই।
মিরর নাউ টেলিভিশন সংবাদ চ্যানেলকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে গুপ্তা বলেন, ‘আপনি একটি গণমাধ্যম সংস্থা হোন বা আপনি একজন নির্মাতা হোন, ট্যাক্স আইনের উদ্দেশ্য প্রত্যেকের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। যদি আপনি সেই ট্যাক্স আইন লঙ্ঘন করেন, তবে আইনের যথাযথ প্রক্রিয়া হিসাবে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
মঙ্গলবার সকালে কর্মকর্তারা সেখানে আসার পর থেকে বিবিসি অফিসে তল্লাশি চালানোর জন্য ভারতীয় কর বিভাগ এখন পর্যন্ত কোনো বিবৃতি দেয়নি।
ব্রিটেনের সরকারি অর্থায়নে চালিত জাতীয় সম্প্রচারকারী সংস্থাটি মঙ্গলবার বলেছে, তারা ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করছে এবং ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই পরিস্থিতির সমাধান হবে’ বলে আশাবাদী।
আরও পড়ুন: ঝাড়খন্ডে অ্যাপার্টমেন্টে অগ্নিকাণ্ডে শিশুসহ নিহত ১৪, আহত ১২
বিবিসি বলেছে, ‘অনেক কর্মী এখন ভবন ছেড়ে চলে গেছে। কিন্তু কয়েকজনকে থাকতে বলা হয়েছে এবং চলমান অনুসন্ধানে সহযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছে।’
এতে আরও বলা হয়েছে, আমাদের আউটপুট এবং সাংবাদিকতা স্বাভাবিকভাবে চলতে ‘থাকে।’ বিবিসি ব্যবস্থাপনা সম্পাদকীয় এবং অন্যান্য কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজ করতে বলেছে।
সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া (পিটিআই) বৃহস্পতিবার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তাদের বরাতে বলেছে যে তদন্তকারীরা বিবিসি কর্মীদের কাছ থেকে আর্থিক তথ্য সংগ্রহ করেছেন এবং সংবাদ সংস্থার ইলেকট্রনিক এবং কাগজের ডেটার কপি তৈরি করেছেন। কিছু সংবাদ কর্মীকে রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
সংস্থাটি বলেছে, বিবিসির সহযোগী সংস্থাগুলোর আন্তর্জাতিক কর এবং স্থানান্তর মূল্য সংক্রান্ত সমস্যাগুলো তদন্তে জরিপটি চালানো হচ্ছে।
ভারতের নিউজ ব্রডকাস্টার ও ডিজিটাল অ্যাসোসিয়েশন বিবিসি অফিসে আয়কর ‘অভিযান’ এর সমালোচনা করেছে।
বুধবার এক বিবৃতিতে বলেছে, যদিও অ্যাসোসিয়েশনটি ‘কোন প্রতিষ্ঠানই আইনের ঊর্ধ্বে নয় বলে মনে করে, এটি গণমাধ্যমকে ভয় দেখানো এবং সাংবাদিক ও সংবাদ সংস্থার অবাধ কার্যকারিতায় হস্তক্ষেপ করার যে কোনও প্রচেষ্টার নিন্দা করে।’
প্রধান বিরোধী কংগ্রেস দলের নেতা, মল্লিকার্জুন খড়গে মোদী সরকারের অধীনে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর সরকারি হস্তক্ষেপ হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
ডকুমেন্টারি ‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদি কোয়েশ্চেন,’ গত মাসে যুক্তরাজ্যে সম্প্রচারিত হয়েছিল। পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটে ২০০২ সালে মুসলিম বিরোধী দাঙ্গায় প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা মূল্যায়ন করে। সেসময় তিনি ওই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। সহিংসতায় এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।
মোদি দাবি করেছেন যে তার তত্ত্বাবধানে থাকা গুজরাট সরকার রক্তপাতের অনুমতি বা উৎসাহ কোনটাই দেয়নি। সুপ্রিম কোর্টও বলেছে, তার বিরুদ্ধে মামলা করার কোনও প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। গত বছর, আদালত মোদির অব্যাহতি নিয়ে প্রশ্ন করে একজন মুসলিম ভুক্তভোগীর দায়ের করা একটি আবেদন খারিজ করে দেয়।
বিবিসি ওয়েবসাইট অনুসারে, দুই-অংশের ডকুমেন্টারির দ্বিতীয় অংশে ‘২০১৯ সালে নরেন্দ্র মোদির পুনঃনির্বাচনের পরে তার সরকারের ট্র্যাক রেকর্ড’ পরীক্ষা করা হয়েছে।
এই প্রোগ্রামটি ভারত সরকারের কাছ থেকে একটি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া টেনেছে। এটি দেশে দেখানো বন্ধ করতে তথ্য প্রযুক্তি আইনের অধীনে জরুরি ক্ষমতার আহ্বান জানানো হয়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্ক্রিনে দেখানো বন্ধ করার ওপর জোর দিচ্ছে। টুইটার ও ইউটিউবসহ সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো ডকুমেন্টারিটির লিঙ্কগুলো সরানোর জন্য সরকারি অনুরোধ মেনে চলছে।
বিবিসি সেই সময়ে বলেছিল যে ‘ব্যাপক গবেষণা’ করে ডকুমেন্টারিটি করা হয়েছে এবং এতে বিভিন্ন কণ্ঠ ও মতামত দেয়া হয়েছে।
তার বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা ভারত সরকারকে সিরিজে উত্থাপিত বিষয়গুলোর উত্তর দেয়ার অধিকারের প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু, এই বিষেয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে অস্বীকার করে।’
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ডকুমেন্টারিটিতে বস্তুনিষ্ঠতার অভাব থাকার কথা উল্লেখ করে ‘অসম্মানিত আখ্যানকে বিশেষভাবে তুলে ধরতে বানোয়াট একটি প্রচারণা অংশ’ বলে অভিহিত করেছে।
আরও পড়ুন: ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে গরুকে আলিঙ্গন করার আবেদন প্রত্যাহার করল ভারত
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ক্রমাগত হ্রাস পেয়েছে। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার দ্বারা প্রকাশিত ২০২২ সালের প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে ১৮০টি দেশের মধ্যে আট ধাপ নেমে ১৫০-এ এসেছে দেশটি। মিডিয়া ওয়াচডগ গোষ্ঠীগুলো মোদী সরকারকে একটি ব্যাপক ইন্টারনেট আইনের অধীনে সামাজিক মাধ্যমের সমালোচনাকে থামানোর অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে যা টুইটার এবং ফেসবুকসহ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোকে সরাসরি সরকারের তত্ত্বাবধানে রাখে।
সরকারের সমালোচনা করা কিছু মিডিয়া আউটলেট ট্যাক্স অনুসন্ধানের নামে তল্লাশির শিকার হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ ২০২১ সালে একই দিনে বাম ঘরানার ওয়েবসাইট নিউজক্লিক এবং স্বাধীন মিডিয়া পোর্টাল নিউজ লন্ড্রির অফিসে তল্লাশি চালায়। কর কর্মকর্তারা দৈনিক ভাস্কর পত্রিকার বিরুদ্ধে ২০২১ সালে কর ফাঁকির অভিযোগও এনেছিলেন। যখন এটি কোভিড-১৯ মহামারিকালে গণ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া এবং ভাসমান লাশের প্রতিবেদন এবং সরকারের অব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল।
এর আগে ২০১৭ সালে সরকারের তদন্ত ব্যুরো বলেছিল যে এটি নিরপেক্ষ অবস্থানের জন্য পরিচিত নয়াদিল্লি টেলিভিশনের অফিসে অভিযান চালানোর সময় ঋণ খেলাপির মামলাগুলো তদন্ত করছে।
আরও পড়ুন: মোদির তথ্যচিত্র প্রকাশের পর বিবিসির দিল্লি অফিসে তল্লাশি
মোদির তথ্যচিত্র প্রকাশের পর বিবিসির দিল্লি অফিসে তল্লাশি
নয়া দিল্লিতে বিবিসি’র কার্যালয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে ভারতের আয়কর বিভাগের কর্মকর্তারা।
মঙ্গলবার এই তল্লাশি অভিযান চালানো হয় বলে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে(এপি) জানিয়েছে বিবিসি’র তিনজন সম্প্রচারকর্মী।
২০০২ সালে মুসলিম বিরোধী দাঙ্গার সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভূমিকা মূল্যায়ন করে এমন একটি বিতর্কিত তথ্যচিত্র প্রকাশ করার কয়েক সপ্তাহ পরে তল্লাশি অভিযানটি চালানো হলো।
নাম পরিচয় গোপন রেখে কর্মকর্তাদের বরাতে বার্তা সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া (পিটিআই) জানিয়েছে, ট্যাক্স বিভাগের আভিযানিক দলগুলো বিবিসির দিল্লি এবং মুম্বাই অফিসে অনুসন্ধান চালিয়েছে।
আরও পড়ুন: গুজরাট দাঙ্গা: ১১ দণ্ডপ্রাপ্ত ধর্ষকের মুক্তির বিরুদ্ধে ভারতে বিক্ষোভ
ভারত গত মাসে ‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদি কোয়েশ্চেন’ দুই-অংশের ডকুমেন্টারি নিষিদ্ধ করেছে এবং কর্তৃপক্ষ অনুষ্ঠান প্রদর্শন বন্ধ করতে এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে এর ক্লিপগুলোকে সীমাবদ্ধ করতে একটি পদক্ষেপ নেয়। সমালোচক এবং রাজনৈতিক বিরোধীরা এই পদক্ষেপকে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ আখ্যা দিয়ে এর নিন্দা জানিয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ডকুমেন্টারিটিতে বস্তুনিষ্ঠতার অভাব থাকার কথা উল্লেখ করে ‘অসম্মানিত আখ্যানকে বিশেষভাবে তুলে ধরার জন্য ডিজাইন করা একটি প্রোপাগান্ডার অংশ’ বলে অভিহিত করেছে।
বিবিসি এক বিবৃতিতে বলেছে যে ডকুমেন্টারিটি নিয়ে ‘কঠোরভাবে গবেষণা করা হয়েছে’ এবং এতে বিভিন্ন কণ্ঠ ও মতামত জড়িত।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা ভারত সরকারকে সিরিজে উত্থাপিত বিষয়গুলোর উত্তর দেয়ার অধিকারের প্রস্তাব দিয়েছিলাম- এতে তারা প্রতিক্রিয়া জানাতে অস্বীকার করেছে।’
আরও পড়ুন: দিল্লির দাঙ্গায় পুড়িয়ে দেয়া মসজিদে জুমার নামাজ আদায়
আরও পড়ুন: বাংলাসহ ১০ ভাষায় রেডিও সম্প্রচার বন্ধ করছে বিবিসি
তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ২৮ হাজার ছাড়াল
তুরস্ক ও সিরিয়ায় পাঁচ দিনেরও বেশি সময় আগে আঘাত হানা ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ২৮ হাজার ছাড়িয়েছে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট শনিবার তার দেশে নিহতের সংখ্যা ২৪ হাজার ৬১৭ জন জানিয়েছেন। এদিকে সিরিয়ায় সরকারি ও বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় নিহতের সংখ্যা তিন হাজার ৫৫৩ জন ।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান সানলিউরফা শহরে বলেছেন, শুধু তুরস্কেই ৮০ হাজার ১০৪ জন আহত হয়েছেন। তবে ভূমিকম্পের ১৩০ ঘণ্টারও বেশি সময় পরেও ধ্বংসস্তূপ থেকে কয়েকজনকে জীবিত উদ্ধার করা হচ্ছে।
তুরস্ক ও সিরিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকায় ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর পাঁচ দিন ধরে ধসে পড়া বাড়ির ভেতর বেঁচে থাকা পাঁচ সদস্যের একটি পরিবারকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়েছে উদ্ধারকারী দল।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন যে সড়ক ও অন্যান্য অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ব্যাহত হয়। তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাটি ৫০০ কিলোমিটার ব্যাসের, যেখানে তুরস্কের এক কোটি ৩৫ লাখ মানুষের বাসস্থান।
আরও পড়ুন: একটু উষ্ণতার জন্য লড়ছে তুরস্ক-সিরিয়ার ভূমিকম্পে বেঁচে যাওয়া মানুষেরা
তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্প: ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিতদের উদ্ধারে উল্লাস
ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে গরুকে আলিঙ্গন করার আবেদন প্রত্যাহার করল ভারত
আগামী সপ্তাহের ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’কে ভালোবাসার (রোমান্স) উৎসব হিসেবে নয়, 'গরু আলিঙ্গন দিবস' হিসেবে পালনের জন্য নাগরিকদের কাছে যে আহ্বান জানানো হয়েছিল তা প্রত্যাহার করেছে ভারত সরকার।
আহ্বানটি নিয়ে রাজনৈতিক মহল ও সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা করা হয়।
সরকারের অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার বোর্ড অব ইন্ডিয়ার জারি করা এক বিবৃতিতে বলা হয় যে বুধবার ওই আবেদনটি প্রত্যাহার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: মেঘনায় গরুবাহী ট্রলারে ডাকাতি, ৩০ লাখ টাকা লুট!
রাজনৈতিক বিশ্লেষক নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায় বলেন, যুক্তি উপেক্ষা করে গরুকে আলিঙ্গন করার আহ্বান একেবারেই পাগলামি।
তিনি আরও বলেন, ‘সব মহলের তীব্র সমালোচনার মুখে হিন্দুত্ববাদের রাজনীতিকে (হিন্দু জাতীয়তাবাদ) উপহাস করা থেকে বিরত রাখতেই আবেদন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।’
তরুণ, শিক্ষিত ভারতীয়রা সাধারণত ভ্যালেন্টাইনস ডে পার্ক ও রেস্তোঁরাগুলোতে ভিড় করে, উপহার বিনিময় করে ও পার্টি করে উদযাপন করে থাকে।
অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার বোর্ড বুধবার বলেছিল যে গরুকে আলিঙ্গন করলে মানসিকভাবে সমৃদ্ধি আনবে এবং ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত সুখ বৃদ্ধি করবে।
কট্টরপন্থী হিন্দুরা যারা গরুকে পবিত্র হিসেবে মনে করে পূজা করেন তারা বলছেন যে পশ্চিমা ছুটির দিনটি ঐতিহ্যগত ভারতীয় মূল্যবোধের বিরুদ্ধে যায়।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপি সরকার, বহুমাত্রিক বৈচিত্র্যের জন্য পরিচিত ধর্মনিরপেক্ষ ভারতকে হিন্দু আধিপত্যবাদী দেশে পরিণত করার পরিকল্পনাকে এগিয়ে নিচ্ছে।
দেশটির প্রায় এক দশমিক চার বিলিয়ন জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশই হিন্দু। মুসলমান ১৪ শতাংশ এবং বাকি ছয় শতাংশ খ্রিস্টান, শিখ, বৌদ্ধ ও জৈন।
গরু দীর্ঘদিন ধরে হিন্দুদের মনে গভীরভাবে মিশে আছে এবং অনেকেই এটিকে নিজেদের মায়ের মতোই গভীরভাবে শ্রদ্ধা করে। ভারতের বেশিরভাগ রাজ্যেই গরু জবাই নিষিদ্ধ করেছে।
আরও পড়ুন: ভালোবাসা দিবসে গরুকে আলিঙ্গনের আহ্বান
চট্টগ্রামে এবার গরু ফ্যাশন শো!
সিরিয়া ও তুরস্ককে ১০ লাখ ডলার অনুদান দেবে অলিম্পিক মুভমেন্ট
তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত অলিম্পিক সম্প্রদায়কে ১০ লাখ মার্কিন ডলার অনুদান দেবে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি), অলিম্পিক কাউন্সিল অব এশিয়া (ওসিএ), ইউরোপিয়ান অলিম্পিক কমিটিস (ইওসি) এবং অলিম্পিক রিফিউজ ফাউন্ডেশন (ওআরএফ)।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে আইওসি সভাপতি থমাস বাখ বলেন, 'আমি তুরস্কের ন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটি (এনওসি) সভাপতি এবং সিরিয়ার ন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটি (এনওসি) প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলেছি এবং তাদের কাছ থেকে জেনেছি যে এই ভূমিকম্প স্থানীয় অলিম্পিক সম্প্রদায়ের অনেক সদস্যের ওপর কেমন প্রভাব ফেলেছে।’
আরও পড়ুন: তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা সাড়ে ২০ হাজার ছাড়িয়েছে
তিনি আরও বলেন, ‘তুরস্কে আমাদের প্রথম ধাপের জরুরি সহায়তা অলিম্পিক রিফিউজ ফাউন্ডেশন এবং তাদের অংশীদারদের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। সিরিয়ায় আমরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় প্রবেশ করতে সক্ষম এমন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এনজিও এবং জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করবো।’
আইওসি আরও ঘোষণা করেছে যে ওআরএফ খাদ্য, বস্ত্র ও কম্বলসহ মানবিক সহায়তার জন্য মূলত ‘স্পোর্টস ফর সলিডারিটি’- প্রোগ্রামকে সমর্থন করার জন্য পরিকল্পনা করা তহবিল থেকে এই সহায়তা করছে।
আরও পড়ুন: একটু উষ্ণতার জন্য লড়ছে তুরস্ক-সিরিয়ার ভূমিকম্পে বেঁচে যাওয়া মানুষেরা
তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্প: ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিতদের উদ্ধারে উল্লাস
তুরস্ক ও সিরিয়ায় আঘাত হানা বিপর্যয়কারী ভূমিকম্পের চার দিন পরও শুক্রবার ধ্বংসস্তূপ থেকে এক ডজনেরও বেশি জীবিত মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। তীব্র ঠাণ্ডা, ক্ষুধা-তৃষ্ণা ও গুরুতর আহত হওয়ার পরও এই মানুষদের জীবিত উদ্ধার করতে পেরে উদ্ধারকারীরাও আনন্দ উল্লাস করেছেন এবং আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া আদায় করেছেন।
গত সোমবারের ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় কয়েক হাজার বিল্ডিং ধসে পড়েছে। এতে কমপক্ষে ২৪ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, কমপক্ষে ৮০ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন এবং কয়েক লাখ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে।
একজন উদ্ধারকর্মী বলেছেন, কিলিঙ্ক ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে থাকা মানুষদের সঙ্গে ক্রু সদস্যরা মজা করছিল, এর মাধ্যমে তারা আহতদের মনোবল বাড়ানোর চেষ্টা করছিল।
উদ্ধারকারীরা ভূমিকম্পের উৎপত্তির কেন্দ্রের সবচেয়ে কাছের শহর কাহরামানমারাসে উদ্ধারের পর প্রতিটি মানুষকে আলিঙ্গন করছিলেন এবং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছিলেন।
হ্যাবারতুর্ক টেলিভিশন এক প্রতিবেদনে জানায়, আদিয়ামানে মিলিয়নেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
৪ বছর বয়সী ইয়াগিজ কমসুকে ধ্বংসস্তূপ থেকে বের করার পর উদ্ধারকারী ও আশেপাশের মানুষ উল্লাস করে।
আরও পড়ুন: তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা সাড়ে ২০ হাজার ছাড়িয়েছে
উদ্ধারকারীরা ইয়াগিজকে একটি জেলি বিন দেয় এবং এরপর তারা তার ২৭ বছর বয়সী মা আইফার কমসুকে উদ্ধার করে।
১৩ দশমিক ৫ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের আবাসস্থল এই ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং ইতোমধ্যেই জাপানের ফুকুশিমা ভূমিকম্প ও সুনামির চেয়ে বেশি লোক মারা গেছে। আরও অনেক লাশ উদ্ধার করা এবং গণনা করা বাকি রয়েছে।
ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের কাছে তুরস্কের শহর গাজিয়ানটেপের একটি বেসমেন্ট থেকে উদ্ধারকারীরা ১৭ বছর বয়সী আদনান মুহাম্মাদ কোরকুটকে উদ্ধারের পর আত্মীয়রা কান্নাকাটি করে।
আদনান ৯৪ ঘন্টা ধরে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে ছিলেন এবং বেঁচে থাকার জন্য নিজের প্রস্রাব পান করতে বাধ্য হয়।
সে উদ্ধারকারীদের বলে, ‘আল্লাহকে ধন্যবাদ আপনারা এসেছেন।’
হ্যাবারতুর্ক টেলিভিশন বলেছে, উদ্ধারকারীরা ইস্কেন্দারুনের একটি উঁচু অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকের ধ্বংসাবশেষের ভিতরে আটকে পড়া ৯ জনকে শনাক্ত করেছে এবং তাদের মধ্যে ছয়জনকে টেনে বের করেছে, যার মধ্যে একজন নারীও রয়েছে। বের করে আনার পর যখন তাকে স্ট্রেচারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল আশেপাশের মানুষেরা চিৎকার করে বলেন ‘আলালাহু আকবর!’
এই ভবনটি ভূমধ্যসাগর থেকে মাত্র ৬০০ ফুট (২০০ মিটার) দূরে ছিল।
কাহরামানমারাসের আরেকটি উদ্ধার প্রচেষ্টার ভিডিওতে দেখা গেছে, একজন জরুরি কর্মী তার স্মার্টফোনে একটি পপ গান বাজিয়ে দুই কিশোরী বোনকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছিলেন, যখন তারা মুক্তি পাওয়ার অপেক্ষায় ছিল।
একটি জার্মান দল বলেছে যে তারা কিরিখানের একটি ধসে পড়া বাড়ি থেকে একজন মহিলাকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। তারা ৫০ ঘন্টারও বেশি সময় ধরে উদ্ধার কাজ করেছেন।
আরও পড়ুন: একটু উষ্ণতার জন্য লড়ছে তুরস্ক-সিরিয়ার ভূমিকম্পে বেঁচে যাওয়া মানুষেরা
হ্যাবারটার্ক টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভিডিওতে একজন আটকে পড়া নারীকে একটি দলের সঙ্গে কথা বলতে শোনা যায়।
তিনি উদ্ধারকারীদের বলেছিলেন যে তিনি বেঁচে থাকার আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন।
যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে আটকে পড়া ব্যক্তিরা এক সপ্তাহ বা তারও বেশি সময় বাঁচতে পারে, তবে তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা দ্রুত কমে আসছে।
মর্গ ও কবরস্থানগুলো লাশে ভরে উঠেছে এবং কিছু শহরটির রাস্তায় কম্বল, পাটি ও কাপড়ে মোড়ানো লাশ পড়েছিল।
তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে নেমে গেছে এবং অনেক লোকের কোন আশ্রয় নেই।
তুর্কি সরকার লাখ লাখ গরম খাবার এবং তাঁবু ও কম্বল বিতরণ করেছে। তবে এখনও অনেক অভাবী মানুষ সাহায্যের জন্য লড়াই করছে।
দুর্যোগ সিরিয়ার ১২ বছরের গৃহযুদ্ধের দ্বারা বেষ্টিত অঞ্চলটিতে দুর্ভোগ বাড়িয়েছে। গৃহযুদ্ধ দেশের কয়েক লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং তাদেরকে মানবিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল করে রেখেছে। যুদ্ধের ফলে আরও লক্ষাধিক মানুষ তুরস্কে আশ্রয়ের খোঁজে পাড়ি জমায়।
জাতিসংঘ বলেছে যে প্রথম ভূমিকম্প-সম্পর্কিত ত্রাণবাহী জাহাজটি শুক্রবার তুরস্ক থেকে উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় প্রবেশ করেছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা অনুমান করেছে যে সিরিয়ায় প্রায় ৫ দশমিক ৩ মিলিয়ন মানুষ গৃহহীন হয়েছে।
ইউএনএইচসিআর-এর সিরিয়ার কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ শিভাঙ্কা ধানপালা শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, তারা তাঁবু, প্লাস্টিকের চাদর, কম্বল, ঘুমানোর ম্যাট এবং শীতের পোশাক সরবরাহের দিকে মনোনিবেশ করছে।
সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আসাদ ও তার স্ত্রী আসমা আলেপ্পো ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে জীবিতদের দেখতে যান। দুর্যোগের পর এটি ছিল দেশের কোনো ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় নেতার প্রথম প্রকাশ্য উপস্থিতি।
আরও পড়ুন: ভূমিকম্প: তুরস্ক, সিরিয়ায় নিহত ১৫ হাজার ছাড়িয়েছে
এরপর তিনি শহরের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় উদ্ধারকারীদের পরিদর্শন করেন।
আলেপ্পো বছরের পর বছর ভারী বোমাবর্ষণ ও গোলাবর্ষণে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে এবং এবারের ভূমিকম্পে সবচেয়ে বিধ্বস্ত শহরগুলোর মধ্যে এটি একটি।
সিরিয়া সরকারও ঘোষণা করেছে যে তারা উত্তর-পশ্চিমে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর দখলে থাকা এলাকাগুলো সহ দেশের সমস্ত অংশে সাহায্য পৌঁছানোর অনুমতি দেবে।
এছাড়াও শুক্রবার, নিষিদ্ধ কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত কিছু এলাকায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে।
তুরস্কের দুর্যোগ-ব্যবস্থাপনা সংস্থা বলেছে যে তুরস্কে এই দুর্যোগে এ পর্যন্ত ২০ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে এবং ৮০ হাজার মানুষেরও বেশি আহত হয়েছে।
সিরিয়ায় ৩ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে, যার ফলে মোট মৃতের সংখ্যা প্রায় ২৪ হাজারে পৌঁছেছে।
তুরস্কের পরিবেশ ও নগর পরিকল্পনা মন্ত্রী মুরাত কুরুমের মতে, তুরস্কের প্রায় ১২ হাজারটি ভবন ধসে পড়েছে বা গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত ওকতায় বলেছেন, ১০ লাখেরও বেশি মানুষকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হয়েছে।
তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা সাড়ে ২০ হাজার ছাড়িয়েছে
তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্প ও ধারাবাহিক পরাঘাতে তিন দিনেরও বেশি সময় পরে আরও অনেক লোককে জীবিত খুঁজে পাওয়ার আশা ম্লান হতে শুরু করেছে, কারণ এখন পর্যন্ত ২০ হাজার ৭০০ এরও বেশি মানুষ মারা গেছে।
ডিএইচএ নিউজ এজেন্সির খবরে বলা হয়, আন্তাকিয়ার পূর্বে দিয়ারবাকিরে উদ্ধারকর্মীরা ভোরে একটি ধসে পড়া ভবন থেকে আহত এক নারীকে উদ্ধার করলেও ধ্বংসস্তূপের মধ্যে তার পাশে থাকা তিনজনকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান।
তুরস্কে ১২ হাজার ৮৭৩ জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, ৬০ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। সিরিয়ার সীমান্তে তিন হাজার ১৬২ জন নিহত এবং পাঁচ হাজারেরও বেশি আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন: তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্প: বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় শোক পালন করছে আজ
ধারণা করা হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ তাদের ঘরবাড়ি হারিয়েছে। আন্তাকিয়ার একটি ধসে পড়া ভবনের বাসিন্দারা বৃহস্পতিবার রাতভর বাইরের আগুনের আশেপাশে জড়ো হয়ে ছিলেন, নিজেদের চারপাশে কম্বল শক্ত করে মুড়ে উষ্ণ থাকার চেষ্টা করছিলেন।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান বৃহস্পতিবার ভূমিকম্পকবলিত গাজিয়ানটেপ, ওসমানিয়া ও কিলিস প্রদেশে যাওয়ার কথা ছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়া এবং মৌলিক প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পেতে অক্ষমদের বেঁচে থাকার জানালা দ্রুত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে তারা বলছেন যে আশা হয়তো খুব তাড়াতাড়ি ছেড়ে দিতে হবে।
আরও পড়ুন: একটু উষ্ণতার জন্য লড়ছে তুরস্ক-সিরিয়ার ভূমিকম্পে বেঁচে যাওয়া মানুষেরা
ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিকম্পে রেস্তোরাঁ ধসে ৪ জনের মৃত্যু
ইন্দোনেশিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ পাপুয়ায় একটি অগভীর ভূমিকম্পে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার পাপুয়ার উত্তর উপকূলের কাছে জয়পুরায় আবাসিক এলাকায় পাঁচ দশমিক এক মাত্রার এই ভূমিকম্পে একটি ভাসমান রেস্তোঁরা সমুদ্রে ধসে পড়ে তাদের মৃত্যু হয়।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল ২২ কিলোমিটার (১৩ মাইল) গভীরে। প্রায়ই অগভীর ভূমিকম্প পৃথিবীর পৃষ্ঠে আরও ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
পাপুয়ার রাজধানী জয়পুরার বাসিন্দা ত্রি আসিহ বলেছেন, ‘বাসিন্দারা সত্যিই আতঙ্কিত ছিল। আমি একটি গাড়িতে ছিলাম এবং আমার মনে হয়েছিল যেন গাড়ির চাকাগুলো ওপরে উঠে গেছে।’
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভূমিকম্পের কারণে একটি ভাসমান রেস্তোরাঁর ভেতরে থাকা চারজন লোক সাগরে পড়ে মারা যায়।
ন্যাশনাল ডিজাস্টার মিটিগেশন এজেন্সির মুখপাত্র আবদুল মুহারি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘নিহত চারজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। হতাহতরা ক্যাফের ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েছিল এবং রেস্তোরাঁর ছাদ তাদের ওপর পড়েছিল।’
আরও পড়ুন: ইন্দোনেশিয়ায় ফুটবল খেলা নিয়ে সংঘর্ষ: পদদলিত হয়ে নিহত বেড়ে ১৭৪
উদ্ধারকারী ডুবুরিরা সম্ভাব্য জীবিতদের সন্ধানে ক্যাফেটেরিয়ার আশেপাশের এলাকায় অনুসন্ধান চালায়।
মুহারি বলেন, বাড়িঘর, ভবন ও চিকিৎসা সুবিধাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শহরের হাসপাতালের কিছু রোগীকে এর উঠানে সরিয়ে নেয়া হয়।
পাপুয়াতে জানুয়ারি মাস থেকে একটি শক্তিশালী সিরিজ ভূমিকম্প আঘাত হানে। আবহাওয়া, জলবায়ুবিদ্যা এবং জিওফিজিক্স এজেন্সি জানিয়েছে যে তারা ২ জানুয়ারি থেকে জয়পুরা শহর এবং আশেপাশের এলাকায় এক হাজার ৭৯টি ভূমিকম্প রেকর্ড করেছে। এর মধ্যে ১৩২টি বাসিন্দাদের অনুভূত হওয়ার মতো শক্তিশালী ছিল।
ইন্দোনেশিয়া একটি বিস্তীর্ণ দ্বীপপুঞ্জ এবং ২৭০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের আবাসভূমি। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অববাহিকার চারপাশে সিসমিক ফল্টের একটি আর্ক ‘রিং অব ফায়ার’ এর অবস্থানের কারণে প্রায়শই ভূমিকম্প এবং আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের শিকার হয় দেশটি।
পশ্চিম জাভায় ২০২১ সালের নভেম্বরে পাঁচ দশমিক ছয় মাত্রার ভূমিকম্পে কমপক্ষে ৩৩১ জন নিহত হয়। সুলাওয়েসিতে ২০১৮ সালের ভূমিকম্প এবং সুনামিতে প্রায় চার হাজার ৩৪০ জন নিহত হওয়ার পর এটি ইন্দোনেশিয়ায় সবচেয়ে মারাত্মক ছিল।
এছাড়া ২০০৪ সালে ভারত মহাসাগরের একটি অত্যন্ত শক্তিশালী ভূমিকম্প সুনামির সৃষ্টি করেছিল যার কারণে প্রায় এক ডজন দেশে দুই লাখ ৩০ হাজারের বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল, যার বেশিরভাগই ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশের।
আরও পড়ুন: ইন্দোনেশিয়ার সৈকতে আরও ১৮৩ রোহিঙ্গার অবতরণ