এশিয়া
ভালোবাসা দিবসে গরুকে আলিঙ্গনের আহ্বান
ভারতের সরকারচালিত প্রাণী কল্যাণ বিভাগ দেশটির নাগরিকদের এই বছর ভ্যালেন্টাইনস ডে’কে রোম্যান্স দিবস হিসেবে উদযাপনের পরিবর্তে ‘গরু আলিঙ্গন দিবস’ হিসেবে উদযাপনের আহ্বান করেছে।
বুধবার ভারতের পশু কল্যাণ বোর্ড বলেছে, ‘গরুকে আলিঙ্গন করা মানুষের মানসিকতাকে সমৃদ্ধ করবে এবং ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক সুখ বৃদ্ধি করবে।’
গরুকে পবিত্র বলে পূজাকারী হিন্দুদের মতে, পশ্চিমা এই দিবসটি ভারতের ঐতিহ্যবাহী মূল্যবোধের বিপরীত।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হিন্দু কট্টরপন্থীরা ভারতের বিভিন্ন শহরের দোকানে অভিযান চালিয়ে কার্ড ও উপহার পুড়িয়ে দিয়েছে এবং রেস্তোরাঁ ও পার্ক থেকে হাত ধরা বিভিন্ন জুটিকে তাড়িয়ে দেয়। তাদের দাবি ভ্যালেন্টাইনস ডে অশ্লীলতার প্রচার করে।
শিবসেনা ও বজরং দলের মতো কট্টরপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো জানায়, এই ধরনের কর্মকাণ্ড (‘গরু আলিঙ্গন দিবস’) হিন্দু পরিচয় পুনরুদ্ধারের পথ প্রশস্ত করবে।
আরও পড়ুন: হিন্ডেনবার্গের বিরুদ্ধে ভারতের ওপর আক্রমণের অভিযোগ আদানির
তবে, দেশের তরুণ শিক্ষিত মানুষেরা ধর্ম নির্বিশেষে সাধারণত ছুটির এই দিনটিতে পার্ক ও রেস্তোরাঁয় বেড়াতে বা খেতে যায়, উপহার বিনিময় করে এবং অন্যান্য ভারতীয় উৎসবের মতোই আনন্দ করার জন্য পার্টি আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপি সরকার, বহুমাত্রিক বৈচিত্র্যের জন্য পরিচিত ধর্মনিরপেক্ষ ভারতকে হিন্দু আধিপত্যবাদী দেশে পরিণত করার এজেন্ডাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
দেশটির প্রায় এক দশমিক ৪ বিলিয়ন জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশই হিন্দু। মুসলমান ১৪ শতাংশ এবং বাকি ৬ শতাংশ খ্রিস্টান, শিখ, বৌদ্ধ ও জৈন।
গরু দীর্ঘদিন ধরে হিন্দু মানসিকতায় গভীরভাবে মিশে আছে এবং অনেকেই এটিকে নিজেদের মায়ের মতোই গভীরভাবে শ্রদ্ধা করে। ভারতের বেশিরভাগ রাজ্যই গরু জবাই নিষিদ্ধ করেছে।
পশু কল্যাণ বোর্ডের আবেদন হলো, ১৪ ফেব্রুয়ারি মানুষকে বাইরে যেতে এবং গরুকে আলিঙ্গন করতে বলা।
নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায় নামক একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেছেন, এটা ‘একদম পাগলামি। এতে কোনও যুক্তি নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হল এটি এখন সরকারি অনুমোদন পেয়েছে। এটি রাষ্ট্র ও ধর্মের মধ্যে আরও একটি রেখা মুছে দিল। এখন রাষ্ট্র তাই করছে, যা করার জন্য রাজনৈতিক ও ধর্মীয় দলগুলো প্রচারণা চালাচ্ছে।’
আরও পড়ুন: বয়সকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে মুম্বাই ম্যারাথনে শাড়ি পরে দৌড়ালেন ৮০ বছরের ভারতী
প্লাস্টিকের ভয়াবহতা বোঝাতে বাংলাদেশে ভারতীয় যুবক
ভূমিকম্প: তুরস্ক, সিরিয়ায় নিহত ১৫ হাজার ছাড়িয়েছে
তুরস্ক ও সিরিয়ায় শক্তিশালী ভূমিকম্পে ভেঙে পড়া হাজার হাজার ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে জীবিতদের খুঁজে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছে উদ্ধারকারী দল। তবে উদ্ধার কার্যক্রম চলবে বলে জানিয়েছে তারা।
এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে মারাত্মক ভূমিকম্পে বুধবার মৃতের সংখ্যা ১৫ হাজার ছাড়িয়েছে।
দুর্যোগ কবলিত অঞ্চলে আরও সাহায্য পাঠানোর জন্য তুর্কি সরকারের প্রতি আহ্বানের মধ্যে, প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান কাহরামানমারাসে একটি ‘তাঁবুর শহর’ পরিদর্শন করেছেন। মানুষ বাধ্য হয়ে সেখানে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে তাবুতে বসবাস করছে।
তিনি প্রতিক্রিয়ার প্রথম দিকে ঘাটতি স্বীকার করেছিলেন। কিন্তু প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে কাউকে ‘রাস্তায় পড়ে থাকতে দেয়া হবে না।’
দুই ডজনেরও বেশি দেশের উদ্ধারকারী দল হাজার হাজার স্থানীয় জরুরী কর্মীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি এসেছে। কিন্তু সাত দশমিক আট মাত্রার ভূমিকম্প এবং এর শক্তিশালী আফটারশকগুলো থেকে ধ্বংসের মাত্রা এতটাই বেশি ছিল যে সিরিয়ার চলমান গৃহযুদ্ধে বিচ্ছিন্ন এলাকাগুলো পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। যেখানে অনেকেই এখনও সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করছেন৷
আরও পড়ুন: তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্প: ৯০০০ জনের বেশি নিহত
প্রাক্তন সাংবাদিক ওজেল পিকাল জানায়, তুরস্কের শহর মালতয়াতে উদ্ধার করা লাশগুলোকে মাটিতে পাশাপাশি রাখা হয়েছিল। কম্বলে আবৃত ছিল, যখন উদ্ধারকারীরা ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী দাফন কিংবা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য যানবাহনের আসার অপেক্ষা করছিলেন। এসময় তিনি ভবনের ধ্বংসাবশেষ থেকে আটটি লাশ উদ্ধার করার দৃশ্যও দেখেছিলেন।
পিকাল নিজেও উদ্ধার প্রচেষ্টায় অংশ নিয়েছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, তাপমাত্রা মাইনাস ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস (২১ ফারেনহাইট) এ নেমে যাওয়ায় ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত কিছু মানুষ ঠান্ডায়ও মারা যেতে পারে।
পিকাল টেলিফোনে এপিকে বলেন, ‘আজকের দিনটি সুখকর নয়, কারণ আজ পর্যন্ত মালত্যায় কোনো আশা নেই।’ ধ্বংসস্তূপ থেকে কেউ জীবিত বের হচ্ছে না।
পিকাল বলেন, শহরে একটি হোটেল ভবন ধসে পড়েছে, যেখানে শতাধিক লোক আটকে থাকতে পারে।
তিনি জানান, যে এলাকায় তিনি ছিলেন সেখানে উদ্ধারকারীদের ঘাটতি ছিল এবং ঠান্ডা স্বেচ্ছাসেবক ও সরকারি দলের উদ্ধার প্রচেষ্টা কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করেছে। এই অঞ্চলে
রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চলাফেরা ও প্রবেশাধিকারও ব্যাহত হয়েছে।
পিকাল বলেন, ‘ঠান্ডার কারণে আমাদের হাত কিছুই তুলতে পারে না। কাজের জন্য যন্ত্রপাতি প্রয়োজন।’
সিরিয়ায় এক দশকেরও বেশি গৃহযুদ্ধের কারণে একটি অঞ্চলে দুর্ভোগের মাত্রা খুবই বেশি ছিল। যুদ্ধের কারণে দেশের অভ্যন্তরে লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। অনেক মানুষ তুরস্কে আশ্রয় নিয়েছে। হাজার হাজার ভবন ধসে পড়ায় ধ্বংসস্তূপের নিচে কত মানুষ আটকা পড়ে থাকতে পারে তা স্পষ্ট নয়।
তুরস্কের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, দেশটিতে মৃতের সংখ্যা সাড়ে আট হাজার পেরিয়েছে।
হোয়াইট হেলমেট নামে পরিচিত একটি স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন জানায়, সিরিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে যে সরকার-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় মৃতের সংখ্যা এক হাজার ২০০ ছাড়িয়েছে এবং বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে কমপক্ষে এক হাজার ৪০০ জন মারা গেছে।
সোমবারের ভূমিকম্প এবং একাধিক শক্তিশালী আফটারশকের পর নিহতের মোট সংখ্যা ১১ হাজারে পৌঁছেছে। আহত হওয়ার সংখ্যা আরও কয়েক হাজার।
জাপানের কাছে ২০১১ সালে উৎপত্তি হওয়া একটি ভূমিকম্পে সৃষ্ট সুনামিতে প্রায় ২০ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল। তুরস্ক বা সিরিয়া এখনও নিখোঁজদের সংখ্যার পরিসংখ্যান প্রকাশ না করলেও ‘বিধ্বংসী’ ভূমিকম্পের পরে পোপ ফ্রান্সিস তার সাপ্তাহিক সাধারণ শ্রোতাদের প্রার্থনা এবং সংহতি প্রদর্শনের জন্য বলেছেন।
আরও পড়ুন: তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে মৃত্যু বেড়ে ৬৪০
সিরিয়ার কর্মকর্তারা বলেছেন, তুরস্কে ভূমিকম্পের সময় মারা যাওয়া ১০০ জনেরও বেশি সিরীয়দের লাশ বাব আল-হাওয়া সীমান্ত দিয়ে দাফনের জন্য দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
সীমান্তের সিরীয় অঞ্চলের একজন কর্মকর্তা মাজেন আলুশ বলেছেন, আরও ২০টি লাশ সীমান্তে তাদের পথে রয়েছে। তিনি আরও বলেছেন, তারা সবাই সিরিয়ান শরণার্থী যারা যুদ্ধকালীন দেশ থেকে পালিয়ে গেছে।
এখনও আটকে পড়াদের জন্য উদ্বেগ বাড়ছে, তুরস্কে উদ্ধারকারী টিম পোলিশ জানায়, তারা ধ্বংসস্তূপ থেকে এখন পর্যন্ত ৯ জনকে জীবিত উদ্ধার করেছে, যার মধ্যে দুই সন্তানের বাবা-মা এবং ১৩ বছর বয়সী একটি মেয়ে রয়েছে।
ভূমিকম্পের প্রায় দুই দিন পর উদ্ধারকারীরা ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের কেন্দ্র কাহরামানমারাসের একটি ধসে পড়া অ্যাপার্টমেন্টের ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে তিন বছর বয়সী ছেলে আরিফ কানকে উদ্ধার করে।
ছেলেটির শরীরের নীচের অংশ কংক্রিটের স্ল্যাব এবং পেঁচানো রডে আটকে থাকার কারণে ঠান্ডা থেকে রক্ষায় জরুরি কর্মীরা তার ওপর একটি কম্বল দিয়ে দেয়। কারণ আরেকটি ধসের আশঙ্কা মাথায় রেখে তারা সাবধানে তার কাছ থেকে ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে ফেলে।
ছেলেটির বাবা এরতুগ্রুল কিসিকে আগেই উদ্ধার করা হয়েছিল। যখন তার ছেলেকে উদ্ধার করে একটি অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হচ্ছিল তখন তিনি কাঁদছিলেন।
তুর্কি টেলিভিশনে দেশে নাটকীয় উদ্ধারের ঘটনাটি সম্প্রচারের সময় একজন সাংবাদিক ঘোষণা করেছিলেন যে ‘আপাতত কাহরামানমারাসে আশার নাম আরিফ কান।’
কয়েক ঘন্টা পরে আদিয়ামান শহরে তার বাড়ির ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধারকারীরা ১০ বছর বয়সী বেতুল এদিসকে উদ্ধার করে। এসময় উপস্থিতরা করতালির দেয় এবং তার দাদা তাকে চুম্বন করেছিলেন। তাকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে নেয়ার সময় তার সঙ্গে আদর করে কথা বলেছিলেন।
সোমবার বিকালে উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার একটি শহরে, বাসিন্দারা একটি কান্নারত নবজাতককে তার মৃত মায়ের সঙ্গে নাভির কর্ড দ্বারা সংযুক্ত দেখতে পান।
শিশুটির স্বজনরা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)কে জানিয়েছেন, ছোট্ট শহর জিন্ডারিসে একটি ভবন ধসে বেঁচে যাওয়া শিশুটির পরিবারের বাকি সবাই মারা গেছে।
কিন্তু এই ধরনের গল্পগুলো ভূমিকম্পের দুই পরও ছিল। সোমবার ভোরের এই ভয়াবহ ভূমিকম্প একটি বিশাল এলাকাকে ধ্বংস করে দেয়। হাজার হাজার বিল্ডিং ধসে পড়ে। হিমশীতল তাপমাত্রা এবং চলমান আফটারশকগুলো উদ্ধার প্রচেষ্টাকে জটিল করে তোলে।
তুরস্কে বেঁচে যাওয়া অনেককে গাড়িতে, বাইরে বা সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে ঘুমাতে হয়েছে।
২৭ বছর বয়সী আয়সান কার্ট এপিকে বলেছেন, ‘আমাদের তাঁবু নেই, গরম করার চুলা নেই, আমাদের কিছু নেই। আমাদের বাচ্চাদের অবস্থা খারাপ। আমরা সবাই বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছি এবং আমাদের বাচ্চারা ঠান্ডায় বাইরে আছে। আমরা ক্ষুধা বা ভূমিকম্পে মারা যাইনি, তবে আমরা ঠান্ডায় জমে মরব।’
আরও পড়ুন: তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে মৃত্যু বেড়ে ৬৪০
সিরিয়ায় চলমান যুদ্ধ এবং রাশিয়া-সমর্থিত সরকারি বাহিনী বেষ্টিত সীমান্তে বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলকে বিচ্ছিন্ন করার কারণে সহায়তা প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। সিরিয়া নিজেই যুদ্ধের সঙ্গে যুক্ত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার অধীনে আন্তর্জাতিকভাবে একটি পরিত্যক্ত এলাকা।
অঞ্চলটি প্রধান ফল্ট লাইনের ওপরে থাকায় প্রায়শই ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে। ১৯৯৯ সালে উত্তর-পশ্চিম তুরস্কে অনুরূপ শক্তিশালী ভূমিকম্পে প্রায় ১৮ হাজার মানুষ নিহত হয়েছিল।
তুরস্কে ফের শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাত
তুরস্কের এলবিস্তানে ফের ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। স্থানীয় সময় আনুমানিক দুপুর দেড়টায় (১০:৩০ জিএমটি) নতুন এই ভূমিকম্পটি আঘাত হানে।
সোমবার ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির কর্মকর্তারা দ্বিতীয়বার ভূমিকম্প হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ‘এটি আফটারশক নয়।’
তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্প: ৯০০০ জনের বেশি নিহত
তুরস্ক ও সিরিয়ায় আঘাত হানা ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে ৯০০০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছেন। সোমবার ভোরে দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্ক ও উত্তর সিরিয়ায় হওয়া এই ভূমিকম্পের জেরে এখনও শতাধিক লোক ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসাবশেষের মধ্যে অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে, মৃতের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সীমান্তের উভয় পাড়ের বাসিন্দারা ভূমিকম্পের পর খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নেয়, কারণ ভূমিকম্পের পর ভবনগুলো ধসে পড়তে থাকে এবং শক্তিশালী আফটারশক চলতে থাকে।
জানা যায়, তুরস্কের একটি হাসপাতাল ধসে পড়েছে এবং সিরিয়ার কয়েকটি হাসপাতাল থেকে নবজাতকসহ অন্যান্য রোগীদের সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
তুরস্কের আদানা শহরে বাসিন্দা মুহাম্মেত ফাতিহ ইয়াভুস বলেছেন যে তার বাড়ির কাছে তিনটি ভবন ধসে পড়েছে।
তিনি আরও বলেন, একজন জীবিত ব্যক্তিকে আমি ধ্বংসস্তূপের নীচ থেকে ডাকতে শুনি, তবে আমার গায়ে আর শক্তি ছিল না। পরে উদ্ধারকর্মীরা তার কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করে।
মিশরের কায়রো পর্যন্ত কম্পন অনুভূত হয়েছিল, তুরস্কের প্রাদেশিক রাজধানী গাজিয়ানটেপের উত্তরে ভূমিকম্পটির কেন্দ্র ছিল।
এটি এমন একটি অঞ্চলে আঘাত হানে যেটি সিরিয়ায় এক দশকেরও বেশি গৃহযুদ্ধের কারণে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সিরিয়ার বিরোধী-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলো যুদ্ধের কারণে দেশের অন্যান্য অংশ থেকে বাস্তুচ্যুত প্রায় চার মিলিয়ন লোকে পরিপূর্ণ। তাদের মধ্যে অনেকেই এমন বিল্ডিংগুলোতে বাস করে যেগুলো অতীতের বোমা হামলায় ইতোমধ্যে ধ্বংস হয়ে গেছে।
হোয়াইট হেলমেট নামে বিরোধী জরুরি সংস্থা এক বিবৃতিতে বলেছে, শত শত পরিবার ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়েছে।
উদ্ধারকর্মীরা জানিয়েছেন, হাসপাতালগুলো আহতদের রোগীতে কানায় কানায় পূর্ণ।
এসএএমএস মেডিকেল সংস্থা জানায়, একটি প্রসূতি হাসপাতালসহ অন্যান্য হাসপাতাল খালি করে আহতদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
আতমেহ শহরের চিকিৎসক মুহিব কাদ্দুর বলেন, ‘আমরা আশঙ্কা করছি যে মৃতের সংখ্যা শতাধিক।’
তুরস্ক প্রায়ই ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে। ১৯৯৯ সালে উত্তর-পশ্চিম তুরস্কে আঘাত হানা শক্তিশালী ভূমিকম্পে প্রায় ১৮ হাজার মানুষ নিহত হয়েছিলেন।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সোমবারের ভূমিকম্পের মাত্রা ৭.৮ পরিমাপ করেছে।
তুর্কিয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভূমিকম্পের পর অন্তত ২০টি আফটারশক হয়েছে।
সিরিয়ার আলেপ্পো ও হামা শহর থেকে তুরস্কের দিয়ারবাকির পর্যন্ত উত্তর-পূর্বে ৩৩০ কিলোমিটার (২০০ মাইল) এরও বেশি বিস্তৃত এলাকায় ভবনগুলো ধসে পড়ার খবর পাওয়া গেছে।
দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত ওকতায় বলেছেন, তুরস্কের গাজিয়ানটেপ ও কাহরামানমারাস প্রদেশে প্রায় ৯০০টি ভবন ধ্বংস হয়েছে।
তিনি বলেন, ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলীয় শহর ইস্কান্দারউনে একটি হাসপাতাল ধসে পড়েছে, তবে হতাহতের সংখ্যা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
ওকতে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত, একই সময়ে আমরা অত্যন্ত কঠিন আবহাওয়ার সঙ্গেও লড়াই করছি।’
তিনি বলেন, দুর্যোগ কবলিত এলাকায় প্রায় ২৮০০টি অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দল মোতায়েন করা হয়েছে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান এক টুইটে লিখেছেন, ‘আমরা আশা করি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা এই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে পারব।’
তাইওয়ান, রাশিয়া ও জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশ চিকিৎসা সরবরাহ, অনুসন্ধান দল বা অর্থ সাহায্য পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে।
আরও পড়ুন: তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে মৃত্যু বেড়ে ৬৪০
পারভেজ মোশাররফ: জানা অজানা নানা দিক
পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল পারভেজ মোশাররফ (৭৯) দীর্ঘ রোগভোগের পর রবিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। পাকিস্তানি টিভি চ্যানেল জিও নিউজ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
পারভেজ মোশাররফ ১৯৯৯ সালে রক্তপাতহীন এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নওয়াজ শরিফকে ক্ষমতাচ্যুত করেন এবং ২০০৮ সাল পর্যন্ত দেশটির প্রেসিডেন্ট পদে ছিলেন।
ফের ক্ষমতায় আসার পর নওয়াজ শরিফের সরকার মোশাররফকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে অভিযুক্ত করে এবং তাকে পাকিস্তানের একটি বিশেষ আদালত মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেন।
এখানে তার জীবন এবং শাসনামলের একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হলো-
শুরুর জীবন
মোশাররফ ১৯৪৩ সালের ১১ আগস্ট দিল্লিতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সৈয়দ মোশাররফউদ্দিন (সরকারি চাকুরিজীবী ও কূটনীতিক) এবং মা বেগম জারিন মোশাররফ। তার আরও দুই ভাই রয়েছেন। তার ভাই ড. জাভেদ মোশাররফ একজন অর্থনীতিবিদ এবং ড. নাভেদ মোশাররফ একজন অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনাবসানের পর ভারত বিভক্তির পর, তার পরিবার পাকিস্তানে চলে যায়। সরকারি কর্মচারী বাবার চাকরির সুবাদে তিনি সাত বছর তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় কাটিয়েছেন।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ মারা গেছেন
পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ মারা গেছেন
পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট জেনারেল (অব.) পারভেজ মোশাররফ দীর্ঘ অসুস্থতার পর ৭৯ বছর বয়সে দুবাইয়ের একটি হাসপাতালে মারা গেছেন। রবিবার তার পরিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
পাকিস্তানের নিউজ চ্যানেল জিও জানিয়েছে, দুবাইয়ের আমেরিকান হাসপাতালে অ্যামাইলয়েডোসিস ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন সাবেক এই সামরিক শাসক।
অ্যামাইলয়েডোসিস এমন একটি অবস্থা যা অঙ্গ এবং টিস্যুতে একটি অস্বাভাবিক প্রোটিন তৈরির কারণে ঘটে যা তাদের সঠিকভাবে কাজ করতে বাধা দেয়।
আরও পড়ুন: ইমরান খানের ওপর হামলার নিন্দা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের
বেলুন ইস্যুতে ব্লিঙ্কেনের চীন সফর বাতিল
বড় একটি চীনা বেলুন মার্কিন সামরিক স্থাপনায় নজরদারি চালানোর সন্দেহে কূটনৈতিক সম্পর্কে অনেকটা টানাপোড়েন শুরু হয়। ফলে চীনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন-এর সফর বাতিল করে দিয়েছে। তবে বলা হচ্ছে যে কোনও পক্ষই আনুষ্ঠানিকভাবে এই জাতীয় কোনও পরিকল্পনা ঘোষণা করেনি।
শনিবার সকালে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘বাস্তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন কখনোই কোনও সফর ঘোষণা করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের এই ধরনের কোন ঘোষণা তাদের নিজস্ব ব্যবসা এবং আমরা এটিকে সম্মান করি।’
মার্কিন-চীন উত্তেজনা হ্রাস করার লক্ষ্যে আলোচনার জন্য ব্লিঙ্কেন রবিবার বেইজিং সফর করার কথা ছিল। গত নভেম্বরে ইন্দোনেশিয়ায় দেশগুলোর নেতাদের বৈঠকের পর এই ধরনের প্রথম উচ্চ পর্যায়ের সফর। কিন্তু চীনের দাবি যে এটি নিছক একটি আবহাওয়া গবেষণা ‘এয়ারশিপ’ ছিল। চীনের এমন দাবি সত্ত্বেও বিশাল বেলুন আবিষ্কারের পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হঠাৎ করে ট্রিপটি বাতিল করে।
পেন্টাগন বেলুনটি নজরদারির জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে না চীনের এমন দাবিকে প্রত্যাখ্যান করে বলেছে এটির পর্যবেক্ষণের সীমিত ন্যাভিগেশন ক্ষমতা ছিল।
চীনা ইন্টারনেটে সেন্সরবিহীন প্রতিক্রিয়াগুলো সরকারি অবস্থানকে তুলে ধরেছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পরিস্থিতিকে খারাপের দিকে নিচ্ছে।
অনেক ব্যবহারকারী বেলুন নিয়ে রসিকতা করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন যে যেহেতু মার্কিন প্রযুক্তি চীনা প্রযুক্তি শিল্পকে দুর্বল করার জন্য চীন যে প্রযুক্তি কিনতে সক্ষম তার উপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। তাই তারা বেলুনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি।
আরও পড়ুন: লাতিন আমেরিকার উপর দিয়ে উড়ছে আরেকটি চীনা গুপ্তচর বেলুন: পেন্টাগন
অন্যরা এটিকে একটি ‘ওয়ান্ডারিং বেলুন’ বলে অভিহিত করেছে যা ‘দ্য ওয়ান্ডারিং আর্থ -২’ নামক সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত চীনা সাই-ফাই ফিল্মকে নির্দেশ করে।
এখনও অন্যরা এটিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে নিয়ে মজা করার সুযোগ হিসাবে ব্যবহার করছে। তারা বলছে যে তারা একটি বেলুনকেও থামাতে পারে না। জাতীয়তাবাদী প্রভাবশালীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে উপহাস করতে সংবাদটি ব্যবহার করতে উঠেপড়ে লেগেছিল। একজন রূঢ়ভাবে লিখেছেন: ‘বেলুনের ঘটনায় ব্লিঙ্কেনের চীন সফর পিছিয়ে দেয় যুক্তরাষ্ট্র।’
সেন্সরশিপ বিষয়টিতে দৃশ্যমান ছিল। ওয়েইবোতে ‘ওয়ান্ডারিং বেলুন’ হ্যাশট্যাগটি শনিবার সন্ধ্যায় আর খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়নি।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলে চীনা গুপ্তচর বেলুনের সন্ধান মিলেছে: পেন্টাগন
তাইহে ইনস্টিটিউটের চীনা সামরিক বিশেষজ্ঞ চেন হাওয়াং প্রধান জাতীয় টিভি চ্যানেল ফিনিক্স টিভিতে বলেছেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এটিকে চীনের জাতীয় নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে তুলে ধরেছে। বাস্তবে আমরা এই ধরনের সামরিক হুমকির মতো কিছু করিনি। সাধারণত আমাদের লক্ষ্য করে মার্কিন সামরিক হুমকির তুলনায় আপনি কি বলতে পারেন এটি সামান্য? তাদের নজরদারি বিমান, তাদের সাবমেরিন, তাদের নৌ জাহাজ সবই আমাদের সীমান্তের কাছাকাছি আসছে।’
প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মন্টানার উপরে বেলুনটি আগে দেখা গিয়েছিল, যা ম্যালমস্ট্রম এয়ার ফোর্স ঘাঁটিতে আমেরিকার তিনটি পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র সাইলো ফিল্ড এলাকা।
প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের পরামর্শে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বেলুনটিকে গুলি করতে অনুমতি দেয়নি। কারণ আশঙ্কা করেছিলেন যে ধ্বংসাবশেষ নীচের লোকেদের আহত করতে পারে। এদিকে, বাইনোকুলার এবং টেলিফটো লেন্স সহ লোকেরা আকাশে ‘গুপ্তচর বেলুন’ খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছিল যখন এটি ৬০ হাজার ফুট (১৮ হাজার ৩০০ মিটার) কানসাস এবং মিসৌরির উপর দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে চলেছিল।
পেন্টাগনও লাতিন আমেরিকার ওপর দিয়ে দ্বিতীয় বেলুন উড়ে যাওয়ার খবর স্বীকার করেছে। ‘আমরা এখন পরীক্ষা করছি এটি আরেকটি চীনা নজরদারি বেলুন।’ পেন্টাগন প্রেস সেক্রেটারি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল প্যাট রাইডার এক বিবৃতিতে একথা জানিয়েছেন।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিকভাবে দ্বিতীয় বেলুন নিয়ে কোনও প্রশ্নের জবাব দেয়নি।
ব্লিঙ্কেনের গত শুক্রবার বেইজিংয়ের উদ্দেশে ওয়াশিংটন ত্যাগ করার কথা ছিল উল্লেখ করে বলেছিলেন যে তিনি সিনিয়র চীনা কূটনীতিক ওয়াং ইকে একটি ফোন কলে বলেছিলেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর বেলুন পাঠানো ‘একটি দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ এবং (চীন) আমার সফরের প্রাক্কালে আমরা যে সারগর্ভ আলোচনার জন্য প্রস্তুত ছিলাম। এই পদক্ষেপ তার জন্য ক্ষতিকর।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক সম্প্রসারণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যুক্তরাষ্ট্র: ব্লিঙ্কেন
চীন গুপ্তচরবৃত্তির দাবি অস্বীকার করে বলেছে এটি একটি বেসামরিক-ব্যবহারের বেলুন। যা আবহাওয়া গবেষণার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে তাদের প্রতিক্রিয়া কার্যকর ছিল।
কিন্তু বিশ্লেষকরা বলেছেন যে অপ্রত্যাশিত ঘটনাটি দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ককে উৎসাহিত করবে না। বিশেষ করে চীনের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় তারা বলেছিল যে তারা বেলুনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি এবং এটি অনিচ্ছাকৃতভাবে মার্কিন মহাকাশে প্রবেশ করায় দুঃখ প্রকাশ করেছে।
শনিবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আবারও জোর দিয়ে বলেছেন যে বেলুন ওড়ানো তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বেলুনের উপর ভিত্তি করে এটিকে ‘দোষারোপ’ না করার আহ্বান জানিয়েছেন।
ওয়াং বলেন, চীন সর্বদা আন্তর্জাতিক আইন কঠোরভাবে অনুসরণ করেছে। আমরা কোনো ভিত্তিহীন জল্পনা-কল্পনা ও প্রচার গ্রহণ করি না। অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে উভয় পক্ষকে শান্ত থাকতে হবে। সময়মত যোগাযোগ করতে হবে। ভুল ধারণা এড়াতে হবে এবং পার্থক্য নির্ণয় করতে হবে।’
সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক আলফ্রেড উ বলেছেন, চীনের ক্ষমাপ্রার্থনা আন্তরিকভাবে দেখা যায়নি।
‘এরই মধ্যে, অদূর ভবিষ্যতে সম্পর্কের উন্নতি হবে না ... দুরত্বটি বিশাল।’
আরও পড়ুন: ওয়াশিংটনে পৌঁছেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সোমবার ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে বৈঠক
অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় স্বাধীনতা দিবস উদযাপন
দেউলিয়া অবস্থার মধ্যেই শ্রীলঙ্কায় শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হয়েছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে অধিকাংশ নাগরিক ক্রুদ্ধ ও উদ্বিগ্ন এবং তারা স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করার মতো অবস্থায় নেই।
দেশটির অনেক বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মযাজক রাজধানীতে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন বয়কটের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
অনেক মানবাধিকার কর্মী এবং সাধারণ নাগরিকও তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের সময়ে স্বাধীনতা বার্ষিকী উদযাপনকে অর্থের অপচয় হিসেবে অভিহিত করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
অন্যদিকে, সমালোচনা সত্ত্বেও সশস্ত্র সৈন্যরা কলম্বোর প্রধান এসপ্ল্যানেড বরাবর প্যারেড করে, নৌবাহিনীর জাহাজ সমুদ্রে যাত্রা করার সময় ব্যবহৃত সামরিক সরঞ্জাম প্রদর্শন করে এবং হেলিকপ্টার ও বিমানগুলো শহর প্রদক্ষিণ করে।
ক্যাথলিক ধর্মযাজক রেভ. সিরিল গামিনি ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতার স্মরণে এই বছরের অনুষ্ঠানকে একটি ‘অপরাধ ও অপচয়’- বলে অভিহিত করেছেন, দেশ যখন এমন অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যদিয়ে হচ্ছে।
গামিনি বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছে জানতে চাই যে তারা ২০০ মিলিয়ন রুপি (৫৪৮ হাজার ডলার) খরচ করে গর্বের সঙ্গে কোন স্বাধীনতা উদযাপন করতে যাচ্ছে?’
তিনি আরও বলেন, ক্যাথলিক চার্চ উৎসব উদযাপনে জনসাধারণের অর্থ ব্যয় করাকে ক্ষমা করে না এবং কোনও যাজক সেই অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন না।
বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ শ্রীলঙ্কার ২২ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে প্রায় ৭ শতাংশ খ্রিস্টান, যাদের বেশিরভাগই ক্যাথলিক। সংখ্যালঘু হওয়া সত্ত্বেও দেশটিতে চার্চের মতামতকে সম্মান করা হয়।
বিশিষ্ট বৌদ্ধ সন্ন্যাসী রেভ. ওমালপে সোবিথা বলেন, স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের কোনো কারণ নেই এবং অনুষ্ঠানটি অন্য দেশে তৈরি অস্ত্রের প্রদর্শনী মাত্র।
শ্রীলঙ্কা কার্যকরভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে আলোচনায় কোনো সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত, এই বছর প্রায় ৭ ডলার বিলিয়ন বিদেশি ঋণ পরিশোধ স্থগিত করেছে।
দেশটির মোট বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ৫১ ডলার বিলিয়ন ছাড়িয়েছে, যার মধ্যে ২৮ বিলিয়ন ডলার ২০২৭ সালের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। কোভিড-১৯ মহামারি থেকে উদ্ভূত দীর্ঘস্থায়ী সংকটগুলোর শীর্ষে স্বল্পমেয়াদি ঋণ এবং পরিশোধে গুরুতর ভারসাম্য সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় জিনিসের তীব্র ঘাটতি দেখা দিয়েছে। যেমন- জ্বালানি, ওষুধ ও খাদ্য।
ঘাটতির কারণে গত বছর দেশব্যাপী বিক্ষোভ দেখা দেয়; যা তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসেকে দেশ ছেড়ে পালাতে এবং পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছিল।
তবে বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহের অধীনে অর্থনৈতিক অবস্থার কিছুটা উন্নতির লক্ষণ দেখা গেছে। কিন্তু জ্বালানির ঘাটতির কারণে বিদ্যুতের ঘাটতি অব্যাহত রয়েছে, হাসপাতালগুলোতে ওষুধের ঘাটতি রয়েছে এবং কোষাগার সরকারি কর্মচারীদের বেতন পরিশোধের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে লড়াই করছে।
অর্থনৈতিক সংকট জনগণকে রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত করে তুলেছে।
দেশের ব্যয় পরিচালনার জন্য সরকার আয়কর দ্রুত বৃদ্ধি করেছে এবং এই বছর প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দকৃত তহবিল ৬ শতাংশ কমানোর ঘোষণা করেছে।
এছাড়াও, দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের কারণে গড়ে ওঠা দুই লাখেরও বেশি সদস্যের সামরিক বাহিনীর আকার, ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় অর্ধেক হ্রাস পাবে।
সরকারের স্বাধীনতা উদযাপন এবং অর্থনৈতিক বোঝা কমাতে ব্যর্থতার নিন্দা জানিয়ে শুক্রবার রাজধানীতে একদল নেতাকর্মী নীরব বিক্ষোভ শুরু করেন।
পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বাস-ট্রাক মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১৭
পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে একটি সুড়ঙ্গের কাছে একটি যাত্রীবাহী বাস ও দ্রুতগতির ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে নারী ও শিশুসহ অন্তত ১৭ জন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার ভোরে এক উদ্ধার কর্মকর্তা এ তথ্য জানান।
খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের কোহাট জেলায় এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে স্থানীয় জরুরি কর্মকর্তা ও রাষ্ট্রপরিচালিত গণমাধ্যম জানিয়েছে।
উদ্ধার কর্মকর্তা রহমত উল্লাহ বলেন, ‘আমরা মৃত ও আহতদের কোহাটের একটি হাসপাতালে নিয়ে এসেছি।’
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে পুলিশের ইউনিফর্ম পড়ে মসজিদে ঢুকে আত্মঘাতী হামলা চালায় জঙ্গি
টিভি ফুটেজে ধ্বংস হওয়া বাসের ছবি দেখা গেছে। প্রদেশের তত্ত্বাবধায়ক মুখ্যমন্ত্রী আজম খান এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
গত রবিবার বেলুচিস্তান প্রদেশে একটি যাত্রীবাহী বাস পিলারের সঙ্গে ধাক্কা লেগে একটি সেতু থেকে পড়ে গিয়ে আগুন ধরে যায় এবং ৪০ জন নিহত হয়।
দুর্বল সড়ক অবকাঠামো ও ট্র্যাফিক আইন অমান্য করার কারণে পাকিস্তানে মারাত্মক দুর্ঘটনা সচরাচর ঘটে।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৮৮
পাকিস্তানে মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত ২০, আহত ৯৬
পাকিস্তানে পুলিশের ইউনিফর্ম পড়ে মসজিদে ঢুকে আত্মঘাতী হামলা চালায় জঙ্গি
পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলের একটি মসজিদে চলতি সপ্তাহে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ১০১ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিরাপত্তারক্ষীদের চোখ এড়িয়ে হামলাকারী পুলিশের পোশাক পড়ে ছদ্মবেশে মসজিদের ঢুকে আত্মঘাতী হামলা চালায়।
বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির পুলিশ প্রধান মোয়াজ্জাম জাহ আনসারি এই তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন যে বোমা হামলাকারীকে শনাক্ত করা হয়েছে এবং সোমবারের হামলার পিছনে থাকা নেটওয়ার্কের সদস্যদের গ্রেপ্তারের কাছাকাছি রয়েছে পুলিশ। এটিকে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের রাজধানী পেশোয়ারে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা হিসেবেও উল্লেখ করেন আনসারি।
তিনি বলেছেন, ‘আমরা প্রতিটি পুলিশ সদস্যের শাহাদতের প্রতিশোধ নেব।’
বিস্ফোরণে ৫০ বছরের পুরনো মসজিদের ছাদ ধসে পড়ে ১০১ জন নিহত হয়। যাদের বেশিরভাগই পুলিশ সদস্য। আহত হয়েছেন আরও আড়াইশ’ জন।
পেশোয়ারে নাগরিক সমাজ আয়োজিত শান্তি মিছিলে কয়েক ডজন পুলিশ কর্মকর্তা নিজেদের সুরক্ষার দাবিতে যোগ দেয়ার এক বিরল পদক্ষেপের একদিন পর আনসারি একথা বললেন।
বোমা হামলার কয়েক ঘণ্টা পর পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মোহাম্মদ আসিফ টিটিপি নামে পরিচিত পাকিস্তানি তালেবান গোষ্ঠিকে অভিযুক্ত করে বলেন, তারা এই হামলা চালিয়েছে এবং তারা প্রতিবেশী আফগান ভূখণ্ড থেকে কাজ করছে। পাকিস্তান চায়, আফগান তালেবানরা টিটিপি গ্রুপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করুক।
বোমা হামলার কিছুক্ষণ পর একজন টিটিপি কমান্ডার দায় স্বীকার করে। কিন্তু হামলার ১০ ঘণ্টারও বেশি সময় পরে গোষ্ঠীর প্রধান মুখপাত্র টিটিপির বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ড চালানোর অভিযোগ প্রত্যাখান করে বলেন, মসজিদে হামলা করা তাদের নীতি নয়।
বুধবার তালেবান-নিযুক্ত আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি অবশ্য পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষকে আফগানিস্তানকে দোষারোপ না করে তাদের দেশে জঙ্গি সহিংসতার কারণ খুঁজতে বলেছিলেন।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত ২০, আহত ৯৬
সোমবারের আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী বেসামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্যবস্তু করার জন্য আফগান মাটি ব্যবহার করছে বলে পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমির খান মুত্তাকি এই মন্তব্য করেছেন।
আত্মঘাতী হামলার সময় মসজিদে ৩০০ জনের বেশি সুন্নি মুসল্লি প্রার্থনা করছিলেন এবং আরও অনেকে মসজিদের কাছে আসছিলেন।
আনসারি বলেন, হামলাকারীকে তল্লাশি করা হয়নি কারণ রক্ষীরা ধরে নিয়েছিল যে সে তাদের একজন সহকর্মী।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি স্বীকার করি যে এটি একটি নিরাপত্তা ত্রুটি ছিল এবং আমরা এর দায় নিচ্ছি।’
বোমা হামলার পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ পেশোয়ারের একটি হাসপাতালে গিয়েছিলেন এবং হামলার পিছনে যারা রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ‘কঠোর ব্যবস্থা’ নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
পাকিস্তানে বেশিরভাগই সুন্নি মুসলিম। নভেম্বর থেকে পাকিস্তানি তালেবান সরকারি বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধবিরতি শেষ করার পর থেকে জঙ্গি হামলা বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০২১ সালের আগস্টে প্রতিবেশী দেশ আফগানিস্তানে তালেবানরা ক্ষমতা দখলের পর থেকে পাকিস্তানে সহিংসতা বেড়েছে। ২০ বছরের যুদ্ধের পর আফগানিস্তান থেকে মার্কিন ও ন্যাটো সৈন্য প্রত্যাহার করা হয়েছে।
টিটিপি আফগান তালেবানদের থেকে আলাদা কিন্তু একটি ঘনিষ্ঠ মিত্র।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৮৮