এশিয়া
শ্রীলঙ্কায় কারফিউ জারি, বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের টিয়ারশেল
অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের তীব্র ঘাটতি এবং মানুষের জীবিকা ব্যাহত হওয়ার কারণে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে করা বিক্ষোভে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। এর আগে শুক্রবার থেকে শ্রীলঙ্কার রাজধানী ও আশেপাশের এলাকায় পুলিশ কারফিউ জারি করে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যায়, কালো পোশাক পরা, কালো পতাকাধারী, সরকারবিরোধী স্লোগান ও ব্যানার বহনকারী হাজার হাজার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ছুঁড়ছে।
বিক্ষোভকারী এবং অন্যান্য সমালোচকরা বলেছেন, ১৯৪৮ সালে দেশটির স্বাধীনতার পর থেকে সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটের জন্য প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে দায়ী। তারা ঘাটতি দূর করার প্রতিশ্রুতি পূরণ না করতে পারায় দুই মাস আগে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়া রনিল বিক্রমাসিংহেকেও দায়ী করে।
সাধারণ নাগরিক ও বিরোধী দলীয় কর্মীরা শনিবার আরও কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী নিয়ে কলম্বোতে জড়ো হওয়ার ঘোষণা দেয়। কিন্তু তার আগেই পুলিশ শুক্রবার রাত ৯টা থেকে কলম্বো ও এর শহরগুলোতে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত কারফিউ ঘোষণা করেছে।
কারফিউ ঘোষণা করায় দেশটির বিরোধী দলসমূহ ও শ্রীলঙ্কার বার অ্যাসোসিয়েশন সরকারের সমালোচনা করেছে। তারা বলছে ‘কারফিউ স্পষ্টতই বেআইনি ও মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন।’
বিরোধী নেতা সজিথ প্রেমাদাসা কারফিউকে ‘এক ধরনের প্রতারণা’ বলে অভিহিত করেছেন।
তিনি এক টুইটে বলেছেন, ‘আগামীকাল রাস্তায় নামুন। স্বৈরাচারকে পরাজিত করে গণতন্ত্রকে বিজয়ী করতে জনগণের সঙ্গে যোগ দিন। হ্যাঁ আমরাও পারি।’
আরও পড়ুন: গোতাবায়ার বাসভবনে বিক্ষোভকারীদের হামলা
শ্রীলঙ্কায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জুলি চুং, দেশটির জনগণকে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এছাড়া ‘শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের বিক্ষোভ করার জন্য স্থান ও নিরাপত্তা দিতে সেনাবাহিনী ও পুলিশের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
তিনি এক টুইটে বলেন, ‘বিশৃঙ্খলা ও বলপ্রয়োগ অর্থনীতিকে ঠিক করবে না কিংবা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে পারবে না। শ্রীলঙ্কানদের এই মুহূর্তে যা (সবচেয়ে বেশি) প্রয়োজন।’
গত এপ্রিলে শ্রীলঙ্কা বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতির কারণে তারা বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে অপারগতার কথা জানায়। দেশটির বিদেশি ঋণের পরিমাণ প্রায় পাঁচ হাজার ১০০ কোটি ডলার। এর মধ্যে ২০২৭ সালের শেষ নাগাদ দুই হাজার ৮০০ কোটি ডলারে ঋণ পরিশোদের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। দেশটির বৈদেশিক রিজার্ভ প্রায় শূন্যের কোটায় এবং দেশটি নাগরিকদের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য, জ্বালানি, রান্নার গ্যাস ও ওষুধ আমদানি করতে অক্ষম।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চালানোর জ্বালানির অভাবে প্রতিদিন মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকছে। জ্বালানি ও গ্যাস কিনতে মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
জ্বালানি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার জন্য প্রতিবেশি ভারতের সাহায্যের ওপর দেশটি টিকে আছে।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আকাশচুম্বি হয়ে পড়েছে। যার ফলে দরিদ্র ও দুর্বল গোষ্ঠী মারাত্মক চাপে পড়েছে।
জ্বালানি ও বিদ্যুতের ঘাটতির কারণে দেশটির স্কুলগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং সরকার প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুললোতে থাকা অন্যান্য রাজ্যের কর্মচারীদের বাড়ি থেকে কাজ করতে বলেছে।
আরও পড়ুন: জ্বালানি সংকটে শ্রীলঙ্কায় আরও এক সপ্তাহ স্কুল বন্ধ
শ্রীলঙ্কায় তীব্র সংকটের মুখে সরকারের পদত্যাগ দাবি শিক্ষার্থীদের
গোতাবায়ার বাসভবনে বিক্ষোভকারীদের হামলা
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগের দাবিতে তার সরকারি বাসভবনে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী হামলা করেছে। শনিবার দেশটির স্থানীয় গণমাধ্যমে এ খবর জানা গেছে।
বিক্ষোভের সময় গোতাবায়া রাজধানী কলম্বোয় অবস্থিত তার সরকারি বাসভবনে অবস্থান করছিলেন নাকি বাইরে ছিলেন তা নিশ্চিত জানা যায়নি। মুঠোফোনে ধারণ করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েক হাজার মানুষ সুরক্ষিত বাসভবনটির বাইরে অবস্থান করছেন।
সরকারের মুখপাত্র মোহনা সেনানায়েকে বলেন, রাজাপাকসে বাসভবনের ভেতরে না বাইরে সে বিষয়ে স্পষ্ট তথ্য জানা নেই।
টেলিভিশনের ফুটেজে দেখা যায়, গোতবায়ার বাসভবনের পাশে অবস্থিত তার দপ্তরে কয়েক’শ বিক্ষোভকারী জাতীয় পতাকা হাতে প্রবেশ করে।
আরও পড়ুন: শ্রীলঙ্কায় তীব্র সংকটের মুখে সরকারের পদত্যাগ দাবি শিক্ষার্থীদের
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, শত শত বিক্ষোভকারী ‘গোতা গো হোম’ স্লোগান দিয়ে প্রেসিডেন্টের বাসভবনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এসময় ভবনের বাইরের রাস্তার ব্যারিকেড উল্টে দেয়া হয়।
নিরাপত্তারক্ষীরা বিক্ষোভকারীদের থামানোর চেষ্টা করে। এসময় পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে কমপক্ষে ৩৪ জন আহত হন।
পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক কলম্বোর হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা জানান, আহত দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
আগের রাতের কারফিউ তুলে নেয়ার পর আশেপাশের শহরতলী থেকে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী শনিবার সকালে রাজধানী কলম্বোয় প্রবেশ করে।
গত কয়েক মাস ধরে চলা এই বিক্ষোভে অংশ নেয়া মানুষের অভিযোগ, স্বাধীনতার পর দেশের চলমান সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সংকটের পেছনে প্রভাবশালী রাজাপাকসে পরিবারের দায় রয়েছে। বিক্ষোভকারীরা তার পদত্যাগের দাবিতে তিন মাস ধরে প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করছে।
আরও পড়ুন: শ্রীলঙ্কায় অনির্দিষ্টকালের জন্য স্কুল বন্ধ ঘোষণা
গত মাসে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে বলেন, ‘তার দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে গেছে। সংকট থেকে উত্তরণে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে আলোচনা জটিল স্তরে গিয়ে ঠেকেছে। কারণ দেশটি দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে।’
গত এপ্রিলে শ্রীলঙ্কা বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতির কারণে তারা বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে অপারগতার কথা জানায়। দেশটির বিদেশি ঋণের পরিমাণ প্রায় পাঁচ হাজার ১০০ কোটি ডলার। এর মধ্যে ২০২৭ সালের শেষ নাগাদ দুই হাজার ৮০০ কোটি ডলারে ঋণ পরিশোদের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
পুলিশ শুক্রবার রাতে রাজধানী কলম্বো এবং প্রধান প্রধান শহরে কারফিউ জারি করে এবং শনিবার সকালে সেটি তুলে নেয়া হয়। যদিও দেশটির আইনপ্রণেতা ও বিরোধদলীয় রাজনীতিবিদরা কারফিউকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে আসছে।
শুক্রবার শ্রীলঙ্কায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জুলি চুং জনগণকে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করতে বলেছেন এবং সেনাবাহিনী ও পুলিশকে ‘শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের বিক্ষোভের জন্য স্থান ও নিরাপত্তা দেয়ার’ আহ্বান জানিয়েছেন।
চুং এক টুইটে বলেন, ‘বিশৃঙ্খলা ও বলপ্রয়োগ অর্থনীতিকে ঠিক করবে না কিংবা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে পারবে না। শ্রীলঙ্কানদের এই মুহূর্তে যা (সবচেয়ে বেশি) প্রয়োজন।’
আরও পড়ুন: শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন রনিল বিক্রমাসিংহে
ভারতে প্রবল বর্ষণে নিহত ১৬
ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরে প্রবল বর্ষণে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় অন্তত ১৬ তীর্থযাত্রীর মৃত্যু হয়েছে বলে শনিবার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
কর্মকর্তারা বলছেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় বৃষ্টি হয়। এর ফলে কেন্দ্রীয় সরকার নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলটির একটি পবিত্র হিন্দু মন্দিরের বেস ক্যাম্পের বেশ কয়েকটি অস্থায়ী তাঁবু ভেসে যায়।
ন্যাশনাল ডিজাস্টার রিলিফ ফোর্সের (এনডিআরএফ) প্রধান অতুল কারওয়াল স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘১৬ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রায় ৪০ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। ভূমিধস নেই। বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। তবে উদ্ধার কাজে কোনো সমস্যা হয়নি।’
আরও পড়ুন: ভারতের মণিপুরে ভূমিধসে নিহত বেড়ে ৪৭
তিনি বলেন, ১০০ জনের চারটি এনডিআরএফ টিম উদ্ধার কাজে নিয়োজিত। ‘ভারতীয় সেনাবাহিনীও দুর্ঘটনাস্থলে কাজ করছে।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রবল বর্ষণে প্রাণহানির ঘটনায় টুইটারে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
‘শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা।’
আরও পড়ুন: ভারতে বাস খাদে পড়ে নিহত ১৬
মোদি লেখেন, উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা চলছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
প্রতি বছর হাজারো হিন্দু বার্ষিক তীর্থযাত্রার অংশ হিসেবে পবিত্র মন্দিরটি পরিদর্শন করেন।
শিনজো আবের মৃত্যুতে জাতীয় শোক ঘোষণা ভারতে
জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের (৬৭) স্মরণে আগামীকাল শনিবার (৯ জুলাই) একদিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছে ভারত। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি 'ভারতের প্রিয়তম বন্ধুদের একজনের হত্যাকাণ্ডে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।’
মোদি এক টুইটে লিখেছেন, 'আমার একজন প্রিয় বন্ধু শিনজো আবের মর্মান্তিক মৃত্যুতে আমি স্তব্ধ ও শোকাহত। তিনি ছিলেন বিশ্বের একজন ক্ষমতাধর রাজনীতিবিদ, একজন অসামান্য নেতা এবং একজন অসাধারণ শাসক। তিনি জাপান ও বিশ্বকে আরও উন্নত করার জন্য তার জীবন উৎসর্গ করেছেন।’
প্রধানমন্ত্রী মোদি ‘ভারত-জাপান সম্পর্ককে একটি বিশেষ কৌশলগত এবং বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের পযায়ে উন্নীত করার জন্য অপরিসীম অবদানের জন্য’ আবের প্রশংসা করেছেন।
আরও পড়ুন: শিনজো আবের মৃত্যুতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর শোক
তিনি আরও লিখেছেন, ‘আজ, সমগ্র ভারত জাপানের সঙ্গে শোক করছে এবং আমরা এই কঠিন মুহূর্তে আমরা আমাদের জাপানি ভাই ও বোনদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধার স্মারক হিসেবে ৯ জুলাই ২০২২ তারিখে একদিনের জাতীয় শোক পালন করা হবে।’
আবের সঙ্গে তার সম্পর্কের কথা স্মরণ করে মোদি বলেন, ‘গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতা নেয়ার পর তার সঙ্গে আমার পরিচয় হয় এবং আমি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর পর্যন্তও আমাদের বন্ধুত্ব অটুট আছে। অর্থনীতি ও বৈশ্বিক বিষয়ে তার তীক্ষ্ণ অন্তর্দৃষ্টি, সবসময় আমার মনে গভীর ছাপ ফেলেছে।’
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, ‘আমার সাম্প্রতিক জাপান সফরের সময়, আমি মি. আবের সঙ্গে আবার দেখা করার এবং অনেক বিষয়ে আলোচনা করার সুযোগ পেয়েছি। তিনি বরাবরের মতোই বুদ্ধিদীপ্ত ও অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ ছিলেন। আমি জানতাম না যে এটিই হবে আমাদের শেষ সাক্ষাৎ। তার পরিবার ও জাপানের নাগরিকদের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা।’
জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর নারাতে একটি প্রচারাভিযানের বক্তৃতা দেয়ার সময় নৌবাহিনীর এক সাবেক কর্মীর হাতে গুলিবিদ্ধ হন। এর পাঁচ ঘণ্টা পর দেশটির একটি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আরও পড়ুন: গুলিবিদ্ধ শিনজো আবে মারা গেছেন
জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে গুলিবিদ্ধ
ভারতের মণিপুরে ভূমিধসে নিহত বেড়ে ৪২
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে ব্যাপক ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪২ জনে দাঁড়িয়েছে। গত দুই দিনে প্রায় ১৮টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
উত্তর-পূর্ব ভারতের ননি জেলার একটি নির্মাণাধীন মেট্রো রেলওয়ে সাইটের কাছে টেরিটোরিয়াল আর্মি ক্যাম্পে বুধবার গভীর রাতে ভূমিধসের ঘটনা ঘটে।
ডিফেন্সের একজন মুখপাত্র সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘এখন পর্যন্ত ঘটনাস্থল থেকে ৪২টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ২৭ জন সেনা জওয়ান এবং স্থানীয় ও নির্মাণ শ্রমিকসহ ১৫ জন বেসামরিক নাগরিক রয়েছেন।
আরও পড়ুন: ভারতের মণিপুরে ভূমিধসে নিহত ২৪
টেরিটোরিয়াল আর্মি হলো ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি স্বেচ্ছাসেবী সংরক্ষিত বাহিনী।
এখনও পর্যন্ত প্রায় ২০ জনের মতো নিখোঁজ রয়েছেন যাদের মধ্যে বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। মুখপাত্র বলেছেন, ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং জাতীয় দুর্যোগ ত্রাণ বাহিনী ঘটনাস্থলে এখনও উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।
মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর নিহতদের পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার ঘোষণা করেছেন।
আরও পড়ুন: ভারতে মুসলিম সাংবাদিক গ্রেপ্তার
জুন থেকে সেপ্টেম্বরের বর্ষাকালে ভূমিধস এবং বন্যা উত্তর ও উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে একটি সাধারণ বিষয়। ভারী মৌসুমী বৃষ্টি ভারতের কৃষিকাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তবে এটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের সূত্রপাত হয়।
জ্বালানি সংকটে শ্রীলঙ্কায় আরও এক সপ্তাহ স্কুল বন্ধ
তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে থাকা শ্রীলঙ্কায় রবিবার আরও এক সপ্তাহের জন্য স্কুল বন্ধের মেয়াদ বাড়িয়েছে, কারণ দেশটিতে শিক্ষক এবং অভিভাবকদের জন্য শিশুদের ক্লাসরুমে নিয়ে যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত জ্বালানি নেই।
এদিকে, জ্বালানিমন্ত্রী কাঞ্চনা উইজেসেকেরা নতুন তেল কেনার জন্য অর্থায়নের জন্য দেশের প্রবাসীদের ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: শ্রীলঙ্কায় অনির্দিষ্টকালের জন্য স্কুল বন্ধ ঘোষণা
তিনি বলেন, ‘অর্থের যোগান দেশটির জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ।’
দেশটির কর্মকর্তারা জরুরি অবস্থার জন্য জ্বালানি এবং ডিজেল সংরক্ষণের জন্য জরুরি পরিষেবা ছাড়া সব জ্বালানি বিক্রয় বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে।
জ্বালানিমন্ত্রী বলেন, সরকার নতুন জ্বালানি মজুদের নির্দেশ দিয়েছে এবং ৪০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেলসহ প্রথম জাহাজ ২২ জুলাই আসবে। আরও বেশ কিছু জ্বালানি চালান পাইপলাইনে রয়েছে।
আরও পড়ুন: শ্রীলঙ্কায় তীব্র সংকটের মুখে সরকারের পদত্যাগ দাবি শিক্ষার্থীদের
তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কা সাতটি জ্বালানি সরবরাহকারীর কাছে প্রায় ৮০০ মিলিয়ন ডলার পাওনা রয়েছে।
পাকিস্তানে বাস খাদে পড়ে নিহত ১৯
পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে প্রবল বৃষ্টির মধ্যে একটি যাত্রীবাহী বাস পাহাড়ী রাস্তা থেকে পিছলে গভীর খাদে পড়ে ১৯ জন নিহত ও ১২ জন আহত হয়েছে। দেশটির একজন সরকারি কর্মকর্তা এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রবিবার বেলুচিস্তান প্রদেশের শিরানি জেলার সহকারী প্রশাসক মাহতাব শাহ জানিয়েছেন,বাসটিতে প্রায় ৩৫ জন যাত্রী ছিলেন।
তিনি বলেন, উদ্ধারকর্মীরা দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ির ধ্বংসাবশেষ ও আশপাশে বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের সন্ধান করছেন।
শাহ বলেন, মূলত ভারী বৃষ্টির কারণে বাসটি ভেজা রাস্তা থেকে পিছলে যায় এবং চালক গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। এর ফলে বাসটি প্রায় ২০০ ফুট (৬১ মিটার) গভীর খাদে পড়ে যায়।
পাকিস্তানে দুর্বল সড়ক অবকাঠামো, ট্রাফিক আইনের প্রতি উদাসীনতা ও ত্রুটিপূর্ণ যানবাহনের কারণে প্রায়ই প্রাণঘাতী সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। গত মাসে দেশটির কিলা সাইফুল্লাহ জেলায় একটি বাস খাদে পড়ে ২২ জন নিহত হয়।
আরও পড়ুন: মালদায় স্কুলবাস খাদে, ৩০ শিক্ষার্থী আহত
ভারতের মণিপুরে ভূমিধসে নিহত ২৪
ইরানে শক্তিশালী ভূমিকম্পে ৫ জনের মৃত্যু
ইরানের দক্ষিণাঞ্চলে শনিবার ছয় দশমিক তিন মাত্রার ভূমিকম্পে পাঁচজন নিহত ও ৪৪ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের নিকটে হরমোজগান প্রদেশের সায়েহ খোশ গ্রামে উদ্ধারকারী দল মোতায়েন করা হয়েছে। গ্রামটিতে প্রায় ৩০০ জন মানুষ বসবাস করেন।
প্রতিবেশী অনেক দেশেও এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: সান আন্তোনিতে ৪৬ অভিবাসীর লাশ উদ্ধার
সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহে এই অঞ্চলে বেশ কয়েকটি মাঝারি ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। নভেম্বরে ছয় দশমিক চার ও ছয় দশমিক তিন মাত্রার দুটি ভূমিকম্পে একজন মারা যান।
ইরান বড় ধরনের সিসমিক ফল্টে অবস্থিত এবং দেশটিতে প্রতিদিন গড়ে একটি ভূমিকম্প হয়। ২০০৩ সালে ঐতিহাসিক শহর বামে ছয় দশমিক ছয় মাত্রার ভূমিকম্পে ২৬ হাজার মানুষ নিহত হয়। এছাড়া ২০১৭ সালে ইরানের পশ্চিমাঞ্চলে সাত মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্পে ৬০০ জনের বেশি নিহত এবং ৯ হাজারের অধিক মানুষ আহত হয়।
নূপুর শর্মার দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত: ভারতের সুপ্রিম কোর্ট
মহানবী মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সাবেক মুখপাত্র নূপুর শর্মাকে পুরো দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ভারতের সর্বোচ্চ আদালত।
শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের দুজন বিচারপতির বেঞ্চের এক বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেছেন, ‘এটি লজ্জাজনক। তার (শর্মার) পুরো দেশের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘সারা দেশে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা সমস্ত এফআইআর দিল্লিতে স্থানান্তর করার আবেদনের শুনানি করার সময় হয়েছে।’
বিচারপতি কান্ত বলেন, ‘দেশে যা ঘটছে তার জন্য এই নারী একাই দায়ী।’
আরও পড়ুন: নূপুর শর্মার ছবি দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট: অভিযুক্ত ছাত্রের বিরুদ্ধে মামলা
নূপুর শর্মা সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের মন্তব্যের পরপরই ভারতের প্রধান বিরোধী কংগ্রেস দলের নেতা রাহুল গান্ধী সারা দেশে মুসলিম বিরোধী মনোভাব জাগানোর জন্য বিজেপি নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন সরকারকে দোষারোপ করেছেন।
প্রসঙ্গত, নূপুর শর্মার মন্তব্যের জেরে গত মাসে সারা ভারতজুড়ে মুসলমানরা ব্যাপক প্রতিবাদ শুরু করে। এর ফলে ভারত ও বেশ কয়েকটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ - সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, ইরাক, ইরান, ইন্দোনেশিয়া, কুয়েত এবং কাতারের মধ্যে কূটনৈতিক দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়।
গত মাসে বিজেপি তার মুখপাত্র নূপুর শর্মা এবং দলটির দিল্লি মিডিয়া সেলের প্রধান নবীন কুমার জিন্দালকে পদ থেকে বরখাস্ত করে।
বিজেপি জানায়, শাসক দল ‘সকল ধর্মকে সম্মান করে’।
দলটি এক বিবৃতিতে জানায়, ‘বিজেপি এই ধরনের ব্যক্তি বা দর্শনকে প্রচার করে না... এই দল (বিজেপি) কোনো ধর্মের কোনো ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের অপমানকে দৃঢ়ভাবে নিন্দা করে।’
আরও পড়ুন: মহানবীকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য: ভারতে মুসলমানদের ব্যাপক বিক্ষোভ
ভারতে নবীজিকে নিয়ে মন্তব্য: বাগেরহাটে বিরোধের জেরে হিন্দু বাড়িতে হামলা
ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র
ফিলিপাইনের ম্যানিলায় এক অনুষ্ঠানে দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র। তিনি দেশটির বিদায়ী নেতা রদ্রিগো দুতের্তের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার শপথ নেয়ার মাধ্যমে ১৯৮৬ সালে এক গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত মার্কোস পরিবারের অত্যাশ্চর্য প্রত্যাবর্তন হলো বলে বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।
মার্কোস জুনিয়রের ডাক নাম বংবং। গত মাসে তিনি এক নির্বাচনে বড় জয় পান।
বিদায়ী প্রেসিডেন্টের মেয়ে সারা দুতের্তে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিচ্ছেন।
ন্যাশনাল মিউজিয়ামে স্থানীয় সময় দুপুরে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে দায়িত্ব গ্রহণের শপথ নেন মার্কোস জুনিয়র।
স্ত্রী ও তিন ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে কুচকাওয়াজ পরিদর্শনের সময় তিনি হাত নাড়েন ও মৃদু হাসেন।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম ভাষণে তিনি ‘ফিলিপাইনের গণতন্ত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় নির্বাচনী ম্যান্ডেট দেয়ায়’ জনগণকে ধন্যবাদ জানান।
৬৪ বছর বয়সী এই নেতা এমন একটি দেশ পাচ্ছেন যা দীর্ঘ মহামারি থেকে পুনরুদ্ধারের পথে রয়েছে। এছাড়া দেশটির অর্থনীতি আকাশচুম্বী মুদ্রাস্ফীতি ও ক্রমবর্ধমান ঋণে ঢাকা।
মার্কোস জুনিয়র প্রয়াত স্বৈরশাসক ফার্দিনান্দ মার্কোসের ছেলে যিনি দুই দশকের মতো ফিলিপাইন শাসন করেছেন। তিনি তার উদ্বোধনী ভাষণে তার বাবার প্রতি শ্রদ্ধা জানান।