এশিয়া
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরও লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি ইমরান খানের
সংসদীয় অনাস্থা ভোটে পদচ্যুত হওয়ার পরেও লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তিনি তার সমর্থকদের রাস্তায় নামার আহ্বান জানিয়েছেন।
শনিবার সারাদিন জাতীয় পরিষদের অধিবেশন কয়েক দফা মুলতুবি হওয়ার পর মধ্যরাতের পর অনাস্থা ভোট অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় পরিষদের ৩৪২জন সদস্যের মধ্যে ১৭৪ জন সদস্য তার প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে ভোট দেন। পাকিস্তানের ইতিহাসে এই প্রথম একজন প্রধানমন্ত্রীকে অনাস্থা ভোটে পরাজিত হয়ে ক্ষমতা ছাড়তে হল।
রবিবার ইমরান খানের উত্তরসূরি নির্বাচিত হবেন এবং সোমবার সংসদে শপথ নেবেন। ইমরান খানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ভাই শাহবাজ শরিফ।
শাহবাজ শরীফ বিরোধী দলগুলোর মিলিত জোটের সবচেয়ে বড় দলের প্রধান। আর প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য ইমরান খানের মনোনীত প্রার্থী হবেন তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি।
শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর সঙ্গে তার শীতল সম্পর্কের মধ্যে ইমরান খান ক্ষমতাচ্যুত হয়। উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি এবং পাকিস্তানি রুপির মানের পতনের কারণে বিরোধীরা ইমরান খানের সরকারকে অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার জন্য অভিযুক্ত করেছে।
আরও পড়ুন: অনাস্থা ভোটে প্রধানমন্ত্রিত্ব হারালেন ইমরান খান
ইমরান খান দাবি করেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের জন্য পর্দার আড়ালে থেকে কাজ করেছে। তার স্বাধীন পররাষ্ট্র নীতি ওয়াশিংটনের অসন্তুষ্টির কারণ।
তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র চায় তিনি তার বৈদেশিকনীতি তাদের পছন্দ মতো নির্ধারণ করেন।কারণ তার নীতি প্রায়ই চীন ও রাশিয়ার পক্ষে চলে যায়। ইমরান খান যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধ এবং ওয়াশিংটনের সঙ্গে সেই যুদ্ধে পাকিস্তানের অংশীদারিত্বেরও কঠোর বিরোধী।
খান বলেন, রাশিয়া ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে অভিযান শুরুর পর ক্রেমলিনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তার বৈঠকের বিরোধিতা করেছিল ওয়াশিংটন।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর তার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক দ্য স্টিমসন সেন্টারের পাকিস্তান বিশেষজ্ঞ এলিজাবেথ থ্রেলকেল্ড বলেন, এমনকি প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও খান প্রায়ই বিরোধী নেতার ভূমিকা পালন করতেন।
তবে, ২০২৩ সালের আগস্টের আগে দেশটির সাধারণ নির্বাচন আয়োজনের সম্ভাবনা নেই। এমনকি যদি নতুন প্রধানমন্ত্রী আগাম নির্বাচনের পক্ষে থাকেন, তাহলেও অক্টোবরের আগে নির্বাচন হবে না।
পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন যারা নির্বাচনের তত্ত্বাবধান করে,তারা গত সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্টকে বলেছিল যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে ২০১৭ সালের আদমশুমারির ফলাফলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নির্বাচনী এলাকাগুলিকে পুনরায় সারিবদ্ধ করার কাজ শেষ করতে হবে।
রবিবারের ভোটের পরে ইমরান খান তার সমর্থকদের গভীর রাতে জড়ো হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এসময় তার সমর্থকেরা বিশালাকার ইস্পাতের কন্টেইনার দিয়ে পার্লামেন্ট এবং রাজধানী ইসলামাবাদের কূটনৈতিক এলাকার প্রধান রাস্তাগুলো অবরুদ্ধ করে।
ওয়াশিংটন-ভিত্তিক উইলসন সেন্টারের এশিয়া প্রোগ্রামের ডেপুটি ডিরেক্টর মাইকেল কুগেলম্যান পাকিস্তানের জন্য একটি উত্তাল সময়ের ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন।
আরও পড়ুন: ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের অধিবেশন শুরু
কুগেলম্যান বলেছেন, আগামী মাসগুলো রাজনৈতিকভাবে উত্তাল সময় পার করবে পাকিস্তান।
ইমরান খানের সরকার ১৮ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বজায় রাখায় এবং প্রবাসী পাকিস্তানিদের কাছ থেকে গত বছর রেকর্ড ২৯ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স আনার কৃতিত্বও রয়েছে। এছাড়া ইমরান খানের দুর্নীতিবিরোধী খ্যাতি প্রবাসী পাকিস্তানিদের বাড়িতে টাকা পাঠাতে উৎসাহিত করেছে। তার সরকার করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলা এবং দেশব্যাপী শাটডাউনের পরিবর্তে ‘স্মার্ট লকডাউন’ বাস্তবায়নের জন্য আন্তর্জাতিক প্রশংসাও পেয়েছে।
কিন্তু তিনি সেনাবাহিনীর সঙ্গে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক কাটিয়ে উঠতে পারেননি। সেনাবাহিনী দেশটির ৭৫ বছর স্বাধীনতার ইতিহাসের অর্ধেকেরও বেশি সময় ধরে সরাসরি শাসন করেছে এবং বেসামরিক সরকারগুলোকেও পরোক্ষভাবে চালিত করেছে।
খানের বিরোধীরা বলছেন, পানামা পেপারসে নাম আসার পর দুর্নীতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়া নওয়াজ শরিফ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সেনাবাহিনীর সহায়তায় ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয় ইমরান খান।
পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট নওয়াজ শরীফকে পদে থাকার অযোগ্য ঘোষণা করেছেন। পাকিস্তানের একটি আদালতে দুর্নীতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর তিনি স্ব-আরোপিত নির্বাসনে লন্ডনে বসবাস করছেন। তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ডও দেয়া হয়েছিল।
গত নভেম্বরে সেনাবাহিনীর সঙ্গে ইমরান খানের সম্পর্কের ফাটল শুরু হয়েছিল। যখন তিনি নতুন গোয়েন্দা প্রধান নিয়োগ নিয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার সঙ্গে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হন।
গত সপ্তাহে জাভেদ বাজওয়া ইমরান খানের মার্কিন বিরোধী অবস্থান থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিয়েছিলেন।
বাজওয়া বলেছে, পাকিস্তান তার বৃহত্তম রপ্তানি বাণিজ্য অংশীদার চীন ও ওয়াশিংটনের সঙ্গে সুসম্পর্ক চায়। এবং তিনি রাশিয়ার ইউক্রেন হামলার নিন্দা করেন।
আরও পড়ুন: ফের অনাস্থা প্রস্তাবের মুখোমুখি ইমরান খান
ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের অধিবেশন শুরু
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা বিরোধী রাজনৈতিকদের অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে অধিবেশন শুরু হয়েছে।
শনিবার সকাল ১০টায় শুরু হওয়া এই অধিবেশনে বিরোধীরা সম্মিলিতভাবে তার বিরুদ্ধে ভোট দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দেশটির বাম থেকে ডানপন্থী দলগুলো ইমরানের অপসারণের বিষয়ে এক হয়েছে। বিরোধীদের দাবি পাকিস্তানের ৩৪২ আসনের সংসদে ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য তাদের ১৭২টি ভোট রয়েছে।
এর আগে ইমরান খান দেশের জাতীয় টেলিভিশনে দেয়া এক বক্তব্যে রবিবার তার সমর্থকদের প্রতিবাদ করার জন্য সড়কে নেমে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। এর ফলে বোঝা যায় তিনিও মনে করছেন যে অনাস্থা ভোটে তিনি হেরে যাবেন।
কারণ সম্ভবত তার ক্ষমতাসীন দলের বেশ কয়েকজন সদস্য এবং একটি ছোট কিন্তু প্রধান জোট অংশীদারও খানের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারে।
এর আগে বৃহস্পতিবার দেশটির সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ, তার ক্ষমতাসীন সংসদ ভেঙে দেয়া এবং আগাম নির্বাচন আয়োজনকে অবৈধ ঘোষণা করে। আদালতের এই সিদ্ধান্তের পর ফের অনাস্থা ভোট আয়োজনের পথ পরিষ্কার হয়।
আরও পড়ুন: ফের অনাস্থা প্রস্তাবের মুখোমুখি ইমরান খান
ইমরান খান তাকে অপসারণ করার জন্য বিরোধীদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতা করার অভিযোগ করেছেন।
তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র চায় তিনি তার বৈদেশিক নীতি তাদের পছন্দ মতো নির্ধারণ করেন। কারণ তার নীতি প্রায়ই চীন ও রাশিয়ার পক্ষে চলে যায়। ইমরান খান যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধ এবং ওয়াশিংটনের সঙ্গে সেই যুদ্ধে পাকিস্তানের অংশীদারিত্বেরও কঠোর বিরোধী।
খান বলেন, রাশিয়া ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে অভিযান শুরুর পর ক্রেমলিনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তার বৈঠকের বিরোধিতা করেছিল ওয়াশিংটন।
অবশ্য মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জালিনা পোর্টার শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই।’
জালিনা পোর্টার আরও বলেন, অবশ্যই আমরা এই বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ-খবর রাখি এবং পাকিস্তানের সাংবিধানিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করি। কিন্তু এই অভিযোগগুলো একেবারেই সত্য নয়।
তারপরও খান তার সমর্থকদের; বিশেষ করে তরুণদের রাস্তায় নামতে আহ্বান জানিয়েছেন। কারণ ২০১৮ সালে সাবেক ক্রিকেট তারকা থেকে রাজনীতিবিদ হয়ে ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই তরুণ সমর্থকেরাই তার সমর্থনের মেরুদণ্ড হয়ে উঠেছে।
আরও পড়ুন: অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ: পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালতে শুনানি শেষ
ইমরান খান বলেন, পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য তরুণদের প্রতিবাদ করতে হবে। এই প্রতিবাদ আমেরিকার বিরুদ্ধে, কারণ দেশটি পাকিস্তানকে শাসন করতে চায়।
তিনি বলেন, ‘আপনাদের নিজের ভবিষ্যৎ রক্ষার জন্য আপনাদের বেরিয়ে আসতে হবে। আপনাদেরই আপনাদের গণতন্ত্র, আপনাদের সার্বভৌমত্ব এবং আপনাদের স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে হবে ... এটি আপনাদের কর্তব্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি চাপিয়ে দেয়া সরকার মেনে নেব না।’
শনিবার যদি অনাস্থা প্রস্তাবের বিপক্ষে বেশি ভোট পড়ে তাহলে ইমরান খান সংসদ ভেঙে দেয়ার এবং আগাম নির্বাচনে যাওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করার উপায় হিসেবে দেশে বিক্ষোভ বজায় রাখার চেষ্টা করতে পারেন।
আর অনাস্থা ভোটে ইমরান খানের পরাজয় তার বিরোধী অংশীদারদের পাকিস্তানের ক্ষমতায় আনবে।
তাদের মধ্যে জামিয়াত-ই-উলেমা-ইসলাম (জেইউআই) নামে একটি উগ্র ধর্মীয় দল রয়েছে, যারা বেশ কয়েকটি ধর্মীয় স্কুল বা মাদ্রাসা চালায়। জেইউআই তাদের পরিচলিত এসব স্কুলে ইসলামের রক্ষণশীলতার চর্চা শেখায়। আফগানিস্তানের তালেবান ও পাকিস্তানের নিজস্ব স্বদেশী সহিংস তালেবান সদস্যদের অনেকেই জেইউআই স্কুল থেকে স্নাতক হয়েছেন।
বিরোধী দলগুলোর মধ্যে বৃহত্তম হলো নিহত বেনজির ভুট্টোর ছেলের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান পিপলস পার্টি এবং পাকিস্তান মুসলিম লীগ। দল দুটো পূর্বে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।
পাকিস্তান মুসলিম লীগ নেতা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ তথাকথিত পানামা পেপারসে নাম আসার পরে দুর্নীতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন। এরপর পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট তাকে পদে থাকার অযোগ্য ঘোষণা করেছিল।
যদি বিরোধী দল অনাস্থা ভোটে জয়ী হয় তাহলে নতুন সরকারপ্রধান বেছে নেয়ার বিষয়টি সংসদের ওপর নির্ভর করবে। এক্ষেত্রে সামনের সারিতে আছেন নওয়াজ শরীফের ভাই শাহবাজ শরিফ। আর সংসদ সদস্যরা নতুন সরকারপ্রধান মনোনয়নে ব্যর্থ হলে আগাম নির্বাচন আয়োজন করা হবে।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানের শীর্ষ আদালতে আগাম নির্বাচন নিয়ে শুনানি
এ বছর হজ করতে পারবেন ১০ লাখ মানুষ
এ বছর ১০ লাখ হজযাত্রীকে হজ পালনের অনুমতি দেয়া হবে বলে জানিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ।
আরব নিউজের খবরে বলা হয়, করোনভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় গত দুই বছর বার্ষিক এই অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া মানুষের সংখ্যা অনেকটা হ্রাস পায়।
হজ পালনের জন্য হজযাত্রীদের ৬৫ বছরের কম বয়সী হতে হবে এবং তাদের বাধ্যতামূলক সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত করোনার টিকা নেয়া থাকা লাগবে।
আরও পড়ুন: এবার হজ ব্যবস্থাপনা আরও উন্নত হবে: ধর্ম প্রতিমন্ত্রী
এছাড়া সব হজযাত্রীর বিমান ছাড়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে করোনার পিসিআর পরীক্ষার নেগেটিভ সনদ থাকতে হবে।
মন্ত্রণালয় বলছে, করোনা মোকাবিলায় সৌদি আরব যে সফলতা অর্জন করেছে তা বজায় রেখে সর্বোচ্চ সংখ্যক হজযাত্রীকে হজে অংশ নেয়ার অনুমতি দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বর্ধিত হজযাত্রীর এই সংখ্যা কোটা অনুযায়ী দেশগুলোর মধ্যে ভাগ করে দেয়া হবে।
আরও পড়ুন: ২০২২ সালে হজের জন্য নিবন্ধন করবেন যেভাবে
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ৫৮ হাজার ৭৪৫ জন হজ পালন করেছিলেন।
করোনা মহামারির আগে হজযাত্রীর সংখ্যা প্রায় সময়ই ২০ লাখ ছাড়িয়ে যেত।
তেল আবিবে বন্দুকধারীর গুলিতে দুজন নিহত
ইসরায়েলের মধ্য তেল আবিবে বন্দুকধারীর গুলিতে দুজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে তেল আবিবের ডিজেনগফ স্ট্রিটের একটি জনাকীর্ণ বারে এ ঘটনা ঘটে।
ইসরায়েলের ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম জরুরি পরিষেবা জানিয়েছে, প্রায় ৩০ বছর বয়সী দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও সাতজন। আহতদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর।
ইসরায়েলি পুলিশ বলছে, হামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হামলা হওয়ার ‘ইঙ্গিত’ রয়েছে। এদিকে জঙ্গি গোষ্ঠী হামাস এই হামলার প্রশংসা করলেও এর দায় স্বীকার করেনি।
আরও পড়ুন: ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর ফের হামলা
গুলির ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পরও সন্দেহভাজন বন্দুকধারী পলাতক রয়েছে। শত শত ইসরায়েলি পুলিশ কর্মকর্তা, ক্যানাইন ইউনিট ও সেনাবাহিনীর বিশেষ বাহিনী মধ্য তেল আবিবের জনাকীর্ণ আবাসিক এলাকায় ভবন থেকে ভবনে তল্লাশি চালিয়েছে।
তেল আবিবের পুলিশ কমান্ডার আমিচাই এশেদ বলেন, রাত ৯টার দিকে গুলি চালিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান ওই বন্দুকধারী।
তবে তিনি বলছেন, ওই বন্দুকধারী এখনও আশপাশেই আছেন।
আরও পড়ুন: হামাসের ‘আগুনে বেলুন’ ছোড়ার জবাবে গাজায় দ্বিতীয় দফা বিমান হামলা ইসরায়েলের
এদিকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এবং নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ দিয়েছেন।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসী যেখানেই থাকুক না কেন আমরা তার কাছে যাব এবং যারা তাকে পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য করেছে; তাদের মূল্য দিতে হবে।’
অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ: পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালতে শুনানি শেষ
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের অনাস্থা প্রস্তাব প্রত্যাখান করা নিয়ে ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরির রায় প্রসঙ্গে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট টানা চারদিনের শুনানি শেষ করেছে।
বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ মুলতবি করার আগে ইমরান খানের আইনজীবী, তার বিরোধী দল এবং দেশটির রাষ্ট্রপতির যুক্তি শুনেছেন। এদিন স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় আদালতের রায় ঘোষণা করা হবে।
পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধিত্বকারী সাংবিধানিক আইনজীবী আলি জাফর বলেন, সুপ্রিম কোর্ট সিদ্ধান্ত নেবে যে ডেপুটি স্পিকার, কাসিম সুরি অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ করার অধিকার রাখেন কিনা।
সোমবার পাকিস্তানের শীর্ষ আদালত ডেপুটি স্পিকার সুরির অনাস্থা ভোট বাতিল করার সাংবিধানিক ক্ষমতা ছিল কিনা এনিয়ে শুনানি শুরু করেন।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানের শীর্ষ আদালতে আগাম নির্বাচন নিয়ে শুনানি
এর অর্থ প্রকারান্তরে তারা প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এবং তার মিত্রদের সংসদ ভেঙে দেয়ার এবং আগাম নির্বাচন আয়োজনের আইনি অধিকার আছে কিনা তা নিয়ে শুনানি করছেন। কারণ ইমরান খানের বিরোধীরা দাবি করেছেন যে ক্ষমতায় থাকার জন্য এটি ইমরান খানের একটি চক্রান্ত। এর আগে রবিবার ইমরান খানের মিত্র এবং পাকিস্তানের পার্লামেন্টের ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি ইমরানের বিরুদ্ধে বিরোধীদের আনা অনাস্থা ভোটের দাবি খারিজ করে আইনসভা ভেঙে দিয়েছেন।
বিরোধীদের দাবি, অনাস্থা ভোট বাতিলের সাংবিধানিক ক্ষমতা ডেপুটি স্পিকারের নেই।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি আদালতের রায়ে জানা যায় ডেপুটি স্পিকার তার ক্ষমতার ঊর্ধ্বে উঠে রায় দিয়েছেন, তাহলে পুনরায় সংসদ আহ্বান করা হবে এবং ইমরান খানের ওপর অনাস্থা ভোট অনুষ্ঠিত হবে। আর যদি আদালত ডেপুটি স্পিকারের সর্বশেষ রায় বহাল রাখে,তাহলে পাকিস্তানে আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
বিরোধী দল দাবি করে যে তাদের কাছে সংসদে ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য পর্যাপ্ত ভোট ছিল। তারা জানায়, ৩৪২ আসনের বিধানসভায় তাদের ১৭২ ভোট রয়েছে। কারণ ইমরান খানের নিজের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ বা জাস্টিস পার্টির কিছু সদস্য এবং তার সরকারের জোটের অংশীদার মুত্তাহিদা কওমী মুভমেন্ট ইতোমধ্যে বিরোধী দলে যোগ দিয়েছে।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানের পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে আগাম নির্বাচন ঘোষণা
পাকিস্তানের স্বাধীনতার ৭৫ বছরের ইতিহাসের অর্ধেকেরও বেশি সময় ধরে সরাসরি সামরিক বাহিনী পাকিস্তানকে শাসন করেছে এবং ধারাবাহিকভাবে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করেছে। বাকি সময়েও পরোক্ষভাবে নির্বাচিত সরকারগুলোকে চালিত করেছে সেনাবাহিনী।
বর্তমানের সংকটের বিষয়ে সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়া রবিবার মার্কিন সমর্থিত ষড়যন্ত্রের অভিযোগ থেকে সেনাবাহিনীকে দূরে সরিয়ে দিয়ে বলেছেন, পাকিস্তান- চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের সঙ্গেই সুসম্পর্ক চায়। কারণ তারা পাকিস্তানের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার।
রবিবার সুরি অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ করার পরে অধিবেশনে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী বলেন, সংবিধানের ৫ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দেশের প্রতি আনুগত্য প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক কর্তব্য। তিনি বিরোধীদের বিরুদ্ধে ‘শাসক পরিবর্তন করার জন্য ‘বিদেশি শক্তির’ সঙ্গে যোগসাজশ করার অভিযোগ করেন।
ইমরান খানও তাকে অপসারণ করার জন্য বিরোধীদের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতা করার অভিযোগ করেছেন।
তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র চায় তিনি তার বৈদেশিক নীতি তাদের পছন্দ মতো নির্ধারণ করেন। কারণ তার নীতি প্রায়ই চীন ও রাশিয়ার পক্ষে চলে যায়। ইমরান খান যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধ এবং ওয়াশিংটনের সঙ্গে সেই যুদ্ধে পাকিস্তানের অংশীদারিত্বেরও কঠোর বিরোধী।
ইমরান খান জোর দিয়ে বলেছেন, পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতা থেকে তাকে অপসারণের জন্য করা ষড়যন্ত্রে ওয়াশিংটন তার বিরোধী পক্ষকে সাহায্য করছে।
এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস পাকিস্তান এবং ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার মার্কিন প্রচেষ্টার অভিযোগ সম্পর্কে বলেছেন, আমরা সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক নীতির শান্তিপূর্ণ হস্তান্তরকে সমর্থন করি। পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও তাই।
তিনি আরও বলেন, আমরা নির্দিষ্ট একটি রাজনৈতিক দলকে অন্য রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে সমর্থন করি না; আমরা বৃহত্তর নীতি, আইনের শাসনের নীতি, ন্যায়বিচারকে সমর্থন করি।
আরও পড়ুন: ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব নাকচ
ভারতে করোনার নতুন ধরন এক্সই শনাক্ত
ভারতে প্রথমবারের মতো করোনার নতুন ধরন এক্সই শনাক্ত হয়েছে। বুধবার দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর মুম্বাইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আসা এক নারীর শরীরে করোনার এই ধরন শনাক্ত হয়।
এক বিবৃতিতে মুম্বাই মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন (বিএমসি) জানায়, ওই নারী করোনার সম্পূর্ণ ডোজ টিকা নিয়েছেন। তার শরীরে এখন পর্যন্ত করোনার মারাত্মক উপসর্গ দেখা যায়নি।
এছাড়া করোনার কাপ্পা ধরনও একজনের শরীরে শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে মুম্বাই মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন।
আরও পড়ুন: দেশে করোনায় শনাক্ত ৩৬
মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন জানায়, শহর থেকে ২৩০ জনের বেশি করোনা রোগীর নমুনা জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের জন্য পাঠানোর পরে এই দুটি ধরন শনাক্ত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, এক্সই ধরন করোনাভাইরাসের অন্য যে কোনো ধরনের চেয়ে বেশি সংক্রমক। এই ধরনটি জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যে প্রথম শনাক্ত হয়।
গণবিক্ষোভের মুখে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের
শ্রীলঙ্কায় একদিন আগে জারি করা জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করেছে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। এর আগে দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে গণবিক্ষোভের জেরে জরুরি অবস্থা জারি করে প্রেসিডেন্ট।
মঙ্গলবার রাতে জারি করা এক ডিক্রিতে গোতাবায়া রাজাপাকসে বলেছেন, তিনি জরুরি আদেশ প্রত্যাহার করছেন।
এদিকে মঙ্গলবার শাসক জোটের প্রায় ৪০ জন আইনপ্রণেতা বলেছেন, তারা জোটের নির্দেশনা অনুযায়ী আর ভোট দেবেন না। তাদের বারবার আহ্বানের পরও প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে পদত্যাগ করা ও অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখান করছেন। আইনপ্রণেতাদের দাবি গোতাবায়া অন্তর্বর্তী সরকার গঠন না করলে সহিংসতার জন্য তাদেরকে দায়ী করা হবে।
গত সপ্তাহে রাজধানী কলম্বোতে প্রেসিডেন্টের বাড়ির কাছে বিক্ষোভকারীদের তুমুল বিক্ষোভের পর গোতাবায়া রাজাপাকসে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিলেন।
রান্নার গ্যাস, পেট্রোল, বিদ্যুৎ ও গুঁড়ো দুধের মতো প্রয়োজনীয় জিনিসের ঘাটতি নিয়ে প্রথমদিকে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে এই বিক্ষোভ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে এবং এখন বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে ও তার সরকারের পদত্যাগ দাবি করছে।
আরও পড়ুন: শ্রীলঙ্কায় অন্তর্বর্তী সরকার নিয়োগের আহ্বান আইনপ্রণেতাদের
সোমবার থেকে টিভি এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন ছবিতে দেখা যায় বিক্ষোভকারীরা ক্ষমতাসীন দলের আইন প্রণেতাদের অফিস ও বাড়িতে ঢুকে পড়েছে এবং কিছু জায়গা ভাংচুর করেছে।
মঙ্গলবার, বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার পর প্রথম নতুন সংসদ অধিবেশনে আইনপ্রণেতারা স্পিকারকে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলেছেন।
জনগণের ক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দু হওয়া সত্ত্বেও রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী রাজাপাকসে পরিবার থেকে প্রেসিডেন্ট এবং তার বড় ভাই প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে ক্ষমতায় ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ক্রীড়ামন্ত্রী নামাল রাজাপাকসের সঙ্গে যারা পদত্যাগ করেছেন তাদের মধ্যে আরও দুই ভাই, অর্থমন্ত্রী বাসিল রাজাপাকসে এবং সেচ মন্ত্রী চামাল রাজাপাকসে ছিলেন।
রবিবার রাতে ৪০ জন মন্ত্রী পদত্যাগ করে এবং গোতাবায়া রাজাপাকসে সকল দলকে ঐক্য সরকারে যোগদানের আমন্ত্রণ জানায়। কিন্তু প্রধান বিরোধী দল এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে।
শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক সংকট, লোডশেডিং, জ্বালানি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ঘাটতির সমাধানের দাবিতে বেশ কিছু দিন ধরে বিক্ষোভ করছেন জনগণ।
দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও তীব্র জ্বালানি সংকট নিয়ে ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভের মুখে পড়েছে দেশটির ক্ষমতাসীন সরকার।
আরও পড়ুন: শ্রীলঙ্কার সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারালো ক্ষমতাসীন জোট
ঐক্য সরকারের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান শ্রীলঙ্কার প্রধান বিরোধী দলের
শ্রীলঙ্কার সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারালো ক্ষমতাসীন জোট
শ্রীলঙ্কার ক্ষমতাসীন জোট পোদুজানা পেরামুনা (এসএলপিপি) পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে। কারণ মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের ক্ষমতাসীন জোটের ৪২ জন সংসদ সদস্য জোট থেকে বেরিয়ে গেছেন।
৪২ জন সাংসদের মধ্যে ১৪ জন শ্রীলঙ্কা ফ্রিডম পার্টির, ১০ জন সরকারের সাংবিধানিক দলগুলোর এবং ১২ জন এসএলপিপি পার্টির, বাকি ৬ জন জোটের অন্যান্য দলের।
ক্ষমতাসীন এসএলপিপি নেতৃত্বাধীন জোট ২০২০ সালের সাধারণ নির্বাচনে ২২৫ সদস্যের সংসদে ১৪৬টি আসন জিতে ক্ষমতায় বসে। বর্তমানে ওই আইনপ্রণেতারা জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ফলে রাজাপাকসে সরকার সংসদে সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে।
আরও পড়ুন: ঐক্য সরকারের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান শ্রীলঙ্কার প্রধান বিরোধী দলের
শ্রীলঙ্কায় নতুন ৪ মন্ত্রীর শপথ গ্রহণ
পাকিস্তানের শীর্ষ আদালতে আগাম নির্বাচন নিয়ে শুনানি
পাকিস্তানের শীর্ষ আদালত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এবং তার মিত্রদের সংসদ ভেঙে দেয়ার এবং আগাম নির্বাচন আয়োজনের আইনি অধিকার আছে কিনা তা নিয়ে শুনানি শুরু করেছে। কারণ ইমরান খানের বিরোধীরা দাবি করেছেন যে ক্ষমতায় থাকার জন্য এটি ইমরান খানের একটি চক্রান্ত।
সোমবার সুপ্রিম কোর্ট ইমরান খানের আইনজীবী ও তার মিত্র এবং বিরোধী- উভয় পক্ষের যুক্তি শুনানি শুরু করে। এরপর মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত অধিবেশন স্থগিত করে। অকস্মাৎ অধিবেশন মুলতবি করার কোনো তাৎক্ষণিক ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি এবং কখন রায় আসবে তাও অস্পষ্ট।
রবিবার ইমরান খানের মিত্র এবং পাকিস্তানের পার্লামেন্টের ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি ইমরানের বিরুদ্ধে বিরোধীদের আনা অনাস্থা ভোট এড়িয়ে যাওয়ার জন্য আইনসভা ভেঙে দিয়েছেন।
বিরোধীদের দাবি, অনাস্থা ভোট বাতিলের সাংবিধানিক ক্ষমতা ডেপুটি স্পিকারের নেই।
সংবিধান বিশেষজ্ঞ আলি জাফরের মতে, সুপ্রিম কোর্টের সামনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হল, ডেপুটি স্পিকার সুরির অনাস্থা ভোট বাতিল করার সাংবিধানিক ক্ষমতা ছিল কিনা।
জাফর দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেছেন, আদালতকেও সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে এই বিষয়ে রায় দেয়ার ক্ষমতা ডেপুটি স্পিকারের আছে কিনা।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানের পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে আগাম নির্বাচন ঘোষণা
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি আদালতের রায়ে জানা যায় ডেপুটি স্পিকার তার ক্ষমতার ঊর্ধ্বে উঠে রায় দিয়েছেন, তাহলে পুনরায় সংসদ আহ্বান করা হবে এবং ইমরান খানের ওপর অনাস্থা ভোট অনুষ্ঠিত হবে। আর যদি আদালত ডেপুটি স্পিকারের সর্বশেষ রায় বহাল রাখে,তাহলে পাকিস্তানে আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
বিরোধী দল দাবি করে যে তাদের কাছে সংসদে ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য পর্যাপ্ত ভোট ছিল। তারা জানায়, ৩৪২ আসনের বিধানসভায় তাদের ১৭২ ভোট রয়েছে। কারণ ইমরান খানের নিজের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ বা জাস্টিস পার্টির কিছু সদস্য এবং তার সরকারের জোটের অংশীদার মুত্তাহিদা কওমী মুভমেন্ট ইতোমধ্যে বিরোধী দলে যোগ দিয়েছে।
পাকিস্তানের স্বাধীনতার ৭৫ বছরের ইতিহাসের অর্ধেকেরও বেশি সময় ধরে সরাসরি সামরিক বাহিনী পাকিস্তানকে শাসন করেছে এবং ধারাবাহিকভাবে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করেছে। বাকি সময়েও পরোক্ষভাবে নির্বাচিত সরকারগুলোকে চালিত করেছে সেনাবাহিনী।
বর্তমানের সংকটের বিষয়ে সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়া রবিবার মার্কিন সমর্থিত ষড়যন্ত্রের অভিযোগ থেকে সেনাবাহিনীকে দূরে সরিয়ে দিয়ে বলেছেন, পাকিস্তান- চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের সঙ্গেই সুসম্পর্ক চায়। কারণ তারা পাকিস্তানের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার।
রবিবার সুরি অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ করার পরে অধিবেশনে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী বলেন, সংবিধানের ৫ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দেশের প্রতি আনুগত্য প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক কর্তব্য। তিনি বিরোধীদের বিরুদ্ধে ‘শাসক পরিবর্তন করার জন্য ‘বিদেশি শক্তির’ সঙ্গে যোগসাজশ করার অভিযোগ করেন।
আরও পড়ুন: ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব নাকচ
ইমরান খানও তাকে অপসারণ করার জন্য বিরোধীদের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতা করার অভিযোগ করেছেন।
তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র চায় তিনি তার বৈদেশিক নীতি তাদের পছন্দ মতো নির্ধারণ করেন। কারণ তার নীতি প্রায়ই চীন ও রাশিয়ার পক্ষে চলে যায়। ইমরান খান যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধ এবং ওয়াশিংটনের সঙ্গে সেই যুদ্ধে পাকিস্তানের অংশীদারিত্বেরও কঠোর বিরোধী।
ইমরান খান জোর দিয়ে বলেছেন, পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতা থেকে তাকে অপসারণের জন্য করা ষড়যন্ত্রে ওয়াশিংটন তার বিরোধী পক্ষকে সাহায্য করছে।
এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস পাকিস্তান এবং ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার মার্কিন প্রচেষ্টার অভিযোগ সম্পর্কে বলেছেন, আমরা সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক নীতির শান্তিপূর্ণ হস্তান্তরকে সমর্থন করি। পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও তাই।
তিনি আরও বলেন, আমরা নির্দিষ্ট একটি রাজনৈতিক দলকে অন্য রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে সমর্থন করি না; আমরা বৃহত্তর নীতি, আইনের শাসনের নীতি, ন্যায়বিচারকে সমর্থন করি।
আরও পড়ুন: ইমরান খানকে নিয়ে বিতর্ক স্থগিত করল পাকিস্তানের সংসদ
ঐক্য সরকারের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান শ্রীলঙ্কার প্রধান বিরোধী দলের
শ্রীলঙ্কার প্রধান বিরোধী দল ইউনাইটেড পিপলস ফোর্স বা এসজেবি ঐক্য সরকার গঠনের জন্য প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছে।
এসজেবির প্রধান রঞ্জথ মাদুমা বানাদারা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেছেন,‘এই দেশের মানুষ চায় গোতাবায়া এবং পুরো রাজাপাকসে পরিবার ক্ষমতা ছাড়ুক। আমরা জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যেতে পারি না এবং আমরা দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে মিলে কাজ করতে পারি না।’
২২৫ সদস্যের সংসদে এসজেবি’র ৫৪ জন আইনপ্রণেতা রয়েছে।
সোমবার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের অফিস থেকে প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তিনি এই জাতীয় সংকটের সমাধান খুঁজতে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সমস্ত রাজনৈতিক দলকে সরকারে যোগ দেয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
তার এ আহ্বানের পরে নতুন চার মন্ত্রী শপথ নিয়েছেন।
দেশটির প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সাবেক বিচারমন্ত্রী আলি সাবরি নতুন অর্থমন্ত্রী, জিএল পিরিস পররাষ্ট্রমন্ত্রী, দিনেশ গুনাবর্র্দেনা শিক্ষামন্ত্রী ও জনস্টন ফার্নান্দো পরিবহনমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন।
তবে এসজেবি তাৎক্ষণিকভাবে ঐক্য সরকার গঠনে প্রেসিডেন্টের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।
এদিকে সোমবারও নেতৃত্ব পরিকর্তনের দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। এসময় হাজার হাজার মানুষ জরুরি অবস্থা ও কারফিউ অমান্য করে রাস্তায় নেমে সরকারবিরোধী স্লোগান দিতে থাকে।
আরও পড়ুন: শ্রীলঙ্কায় নতুন ৪ মন্ত্রীর শপথ গ্রহণ
গত রবিবার রাতে দেশটির ২৬ জন মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন।
শুক্রবার মধ্যরাতে ডিক্রির মাধ্যমে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়।
জনগণের ক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দু হওয়া সত্ত্বেও রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী রাজাপাকসে পরিবার থেকে প্রেসিডেন্ট এবং তার বড় ভাই প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে ক্ষমতায় ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ক্রীড়ামন্ত্রী নামাল রাজাপাকসের সঙ্গে যারা পদত্যাগ করেছেন তাদের মধ্যে আরও দুই ভাই, অর্থমন্ত্রী বাসিল রাজাপাকসে এবং সেচ মন্ত্রী চামাল রাজাপাকসে ছিলেন।
এই পদত্যাগগুলোকে নির্বাহী, প্রতিরক্ষা এবং আইন প্রণয়নের ক্ষমতা ধরে রেখে জনগণের ক্ষোভ প্রশমিত করার প্রচেষ্টা হিসেবে মনে করা হচ্ছে।
এছাড়া অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার দায়ে অভিযুক্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাও সোমবার পদত্যাগ করেছেন।
আরও পড়ুন: সংকট সমাধানে দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দলকে অংশগ্রহণের আহ্বান শ্রীলঙ্কান প্রেসিডেন্টের
শ্রীলঙ্কায় একসঙ্গে ২৬ মন্ত্রীর পদত্যাগ