ইউরোপ
রেলস্টেশনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা: কড়া জবাব চায় ইউক্রেন
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় এলাকার ক্রামতোর্স্ক রেলস্টেশনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৫২ জন নিহতের ঘটনায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে কড়া বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
শুক্রবার রাতে দেয়া এক ভাষণে জেলেনস্কি বলেন, ক্রামতোর্স্ক রেলস্টেশনে হামলা যুদ্ধাপরাধের সমান।
তবে এ হামলায় দায় অস্বীকার করেছে রাশিয়া।
জেলেনস্কি বলেন, ‘বুচা হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য রুশ যুদ্ধাপরাধের মতো ক্রামতোর্স্কে ক্ষেপণাস্ত্র হামলাটিও অবশ্যই ট্রাইব্যুনালে একটি অভিযোগ হওয়া উচিত।’
তিনি বলেন, ‘কে কী করেছে, কে কী আদেশ দিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্রটি কোথা থেকে এসেছে, কে তা বহন করেছে, কারা নির্দেশ দিয়েছে এবং কীভাবে এই হামলার বিষয়ে সম্মত হয়েছে; তা নিশ্চিত করতে প্রচেষ্টা নেয়া হবে।’
দনবাসের দোনেৎস্কের আঞ্চলিক গভর্নর পাভলো কিরিলেঙ্কো বলেছেন, এ ঘটনায় পাঁচ শিশুসহ ৫২ জন নিহত এবং আরও কয়েক ডজন আহত হয়েছেন।
ক্র্যামাটর্স্কের মেয়র অলেক্সান্ডার গনচারেঙ্কো বলেন, ‘হাত বা পা ছাড়া অনেক মানুষ গুরুতর অবস্থায় আছেন।’
ইউক্রেনের প্রসিকিউটর জেনারেলের কার্যালয় জানিয়েছে, ওই সময় স্টেশনটির ভেতরে ও আশ-পাশে প্রায় চার হাজার বেসামরিক নাগরিক ছিলেন।
এ হামলার ঘটনায় বিশ্বনেতারা হতবাক বলেই মনে হচ্ছে।
ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস এই হামলাকে যুদ্ধাপরাধ বলে নিন্দা করেছেন এবং জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এটিকে ‘সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য’ বলে মন্তব্য করেছেন।
ইউক্রেনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়েন সাংবাদিকদের বলেন, ‘(রাশিয়ার) নিষ্ঠুর আচরণের প্রায় কোনো মানদণ্ড নেই।’
ইউক্রেনীয় রেলস্টেশনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত ৫২
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় এলাকার ক্রামতোর্স্ক রেলস্টেশনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ৫২ জন নিহত এবং আরও কয়েক ডজন মানুষ আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন দেশটির কর্মকর্তারা।
ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা বলছেন, শুক্রবার হামলার সময় স্টেশনটিতে হাজারো মানুষ ছিলেন। তাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। রাশিয়ার নতুন আক্রমণের মুখে তারা ওই অঞ্চল থেকে পালনোর চেষ্টা করছিলেন।
দনবাসের দোনেৎস্কের আঞ্চলিক গভর্নর পাভলো কিরিলেঙ্কো বলেছেন, পাঁচ শিশুসহ ৫২ জন নিহত এবং আরও কয়েক ডজন আহত হয়েছেন।
আরও পড়ুন: রেলস্টেশনে রাশিয়ার রকেট হামলায় ৩০ জনের বেশি নিহত: ইউক্রেন
ক্র্যামাটর্স্কের মেয়র অলেক্সান্ডার গনচারেঙ্কো বলেন, ‘হাত বা পা ছাড়া অনেক মানুষ গুরুতর অবস্থায় আছেন।
ইউক্রেনের প্রসিকিউটর জেনারেলের কার্যালয় জানিয়েছে, ওই সময় স্টেশনটির ভেতরে ও আশ-পাশে প্রায় চার হাজার বেসামরিক নাগরিক ছিলেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও অন্য নেতারা রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ইচ্ছাকৃতভাবে স্টেশনে আক্রমণ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন। তবে রাশিয়া ইউক্রেনকে দোষারোপ করে বলছে, তারা স্টেশনে আঘাত হানা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে না।
ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস এই হামলাকে যুদ্ধাপরাধ বলে নিন্দা করেছেন এবং জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এটিকে ‘সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য’ বলে মন্তব্য করেছেন।
আরও পড়ুন: জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে রাশিয়ার সদস্যপদ স্থগিত
রেলস্টেশনে রাশিয়ার রকেট হামলায় ৩০ জনের বেশি নিহত: ইউক্রেন
ইউক্রেনের দোনেৎস্ক অঞ্চলের ক্রামতোর্স্ক রেলস্টেশনে রাশিয়ার রকেট হামলায় ৩০ জনের বেশি নিহত এবং শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় রেল কোম্পানি।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ তথ্য জানিয়েছে।
এ স্টেশনটি পূর্ব ইউক্রেনের বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার কাজে ব্যবহারের জন্য বেশ পরিচিত।
দোনেৎস্কের গভর্নর পাভলো কিরিলেনকো বলেন, হামলার সময় স্টেশনে হাজারো মানুষ ছিল। তারা ওই অঞ্চল থেকে সরে যাওয়ার জন্য ট্রেনে উঠার চেষ্টা করছিলেন।
ইউক্রেনীয় রেলের প্রধান অলেক্সান্ডার কামিশিন বলেছেন, দুটি রকেট স্টেশনটিতে আঘাত হেনেছে।
এ ঘটনার পর ক্রামতোর্স্ক সিটি কাউন্সিল নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে থাকার বিষয়ে সতর্ক করেছে।
পশ্চিমা দেশের কাছে আরও অস্ত্রের আবেদন ইউক্রেনের
পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে আরও অস্ত্রের আবেদন করেছে ইউক্রেন।
বৃহস্পতিবার ব্রাসেলসে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা নৃশংসতা প্রতিরোধে সহায়তা করার জন্য তার যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে আরও অস্ত্র সরবরাহ করার জন্য ন্যাটোর কাছে অনুরোধ জানান।
সামরিক সংস্থাটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনার জন্য ন্যাটো সদরদপ্তরে যান কুলেবা। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমার এজেন্ডা খুবই সহজ... এটি অস্ত্র, অস্ত্র ও অস্ত্র।’
আরও পড়ুন: রাশিয়া নতুন করে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে
তিনি বলেন, ‘আমরা যত বেশি অস্ত্র পাব এবং যত তাড়াতাড়ি সেগুলো ইউক্রেনে পৌঁছাবে তত বেশি মানুষের জীবন রক্ষা পাবে।’
ন্যাটোর কিছু দেশ রাশিয়ার পরবর্তী লক্ষ্য হতে পারে; তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। তবে ৩০ সদস্যের কেউ যুদ্ধে সরাসরি জড়িয়ে পড়তে পারে এমন পদক্ষেপ এড়াতে চেষ্টা করছে সামরিক জোটটি। এরপরও ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ সদস্য দেশগুলোকে ইউক্রেনকে আরও অস্ত্র পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘ইউক্রেন একটি প্রতিরক্ষামূলক যুদ্ধে লড়ছে। তাই আক্রমণাত্মক ও প্রতিরক্ষামূলক অস্ত্রের মধ্যে পার্থক্যের প্রকৃত কোনো অর্থ নেই।’
আরও পড়ুন: মারিউপোলে ৫ হাজারের বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত
পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে পোর্টেবল অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক ও অ্যান্টি-এয়ারক্রাফ্ট অস্ত্র সরবরাহ করেছে। তবে ইউক্রেনীয় সেনাদের ব্যবহার করার জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া লাগবে এমন কোনো সরঞ্জাম যেমন বিমান, ট্যাঙ্ক, সরবরাহ করতে অনিচ্ছুক তারা।
ইউক্রেন আর কী চাইছে জানতে চাইলে কুলেবা বলেন, বিমান, স্থল ভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র, সাঁজোয়া যান ও বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
রাশিয়া নতুন করে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে
ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাশিয়া ইউক্রেনের সরকার এবং সামরিক বাহিনীকে ধ্বংস করার জন্য অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তুতে বোমা বর্ষণ করছে। বর্তমানে তারা ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে নতুন করে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় একটি গোয়েন্দা বার্তায় বলেছে, ‘পূর্ব ইউক্রেনে আক্রমণাত্মক হামলা চালানো রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর প্রধান লক্ষ্য।’
আরও পড়ুন: মারিউপোলে ৫ হাজারের বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত
এতে বলা হয়েছে, রাশিয়া ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণরেখা ডনবাসে এবং রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাতে আর্টিলারি ও বিমান হামলার মধ্যকার ‘নিয়ন্ত্রণ রেখা’কে লক্ষ্যবস্তু করছে।
রাশিয়ান সামরিক বাহিনী ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ অবকাঠামোকেও লক্ষ্যবস্তু করছে।
তবে যুক্তরাজ্য বলেছে ‘রুশ বাহিনী মানসিক দুর্বলতা ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ এবং সেনা ঘাটতির সম্মুখীন হতে পারে।’
আরও পড়ুন: ইউক্রেনের বুচা শহরে ৪১০টি লাশের সন্ধান
রাশিয়ান সৈন্যরা পিছু হটছে: জেলেনস্কি
পিছু হটা রুশ সেনারা অসংখ্য মাইন রেখে গেছে: জেলেনস্কি
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তার দেশের জনগণকে সতর্ক করে বলেছেন, রুশ বাহিনী পিছু হটার সময় রাজধানী কিয়েভের বাইরে ‘সম্পূর্ণ বিপর্যয়ের’ ফাঁদ তৈরি করে রেখে গেছে। তারা আশেপাশের পুরো অঞ্চল জুড়ে; এমনকি বাড়িঘর ও লাশের নিচেও মাইন রেখে গেছে।
শনিবার ভোরে এমন সময় জেলেনস্কি এই সতর্কবার্তা দিলেন যখন মারিউপোলে মানবিক করিডোর খুলে দেয়া হয়েছে। বেসামরিক নাগরিকরা শহর ছাড়ার চেষ্টা করছেন। যদিও রুশ সেনারা এই প্রক্রিয়ায় বাধা দিচ্ছে বলেও অভিযোগ তুলেছে ইউক্রেন।
জেলেনস্কি জাতির উদ্দেশ্যে তার রাতের ভিডিও ভাষণেও বলেন, তারা পুরো এলাকায় মাইন রেখে গেছে। তারা বাড়ি-ঘর, যন্ত্রপাতি, এমনকি নিহত ব্যক্তিদের লাশের নিচেও মাইন ফেলে গেছে।
তিনি বাসিন্দাদের তাদের স্বাভাবিক জীবন শুরু করার জন্য অপেক্ষা করার আহ্বান জানান। যতক্ষণ না তারা আশ্বস্ত হয় যে মাইনগুলো পরিষ্কার করা হয়েছে এবং গোলাগুলির বিপদ কেটে গেছে।
এদিকে ক্রেমলিন ইউক্রেনীয়দের রাশিয়ার মাটিতে একটি জ্বালানি ডিপোতে হেলিকপ্টার হামলা চালানোর জন্য অভিযুক্ত করে। যদিও ইউক্রেন এই হামলার দায় অস্বীকার করেছে।
আরও পড়ুন: যুদ্ধে ইউক্রেনের ৫৩ ঐতিহাসিক স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত: ইউনেস্কো
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, নিশ্চয়ই এ ধরনের ঘটনা আলোচনা অব্যাহত রাখার জন্য আরামদায়কপরিস্থিতি তৈরি করবে না।
এই সপ্তাহের শুরুতে ইউক্রেনের রাজধানী এবং উত্তরের শহর চেরনিহিভের কাছে সামরিক তৎপরতা কমিয়ে দেয়ার কথা বলে, রাশিয়া কিয়েভের আশেপাশের এলাকা থেকে তার কিছু স্থল বাহিনী প্রত্যাহার করে নিচ্ছে।
রাশিয়া কিয়েভ ও চেরনিহিভের চারপাশে তাদের বোমাবর্ষণ অব্যাহত রাখলেও, ইউক্রেনীয় সেনারা পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে বেশ কয়েকটি শহর ও গ্রাম পুনরুদ্ধার করেছে।
ইউক্রেন ও তার মিত্ররা সতর্ক করে বলেছে, ক্রেমলিন দর কষাকষির টেবিলে যেভাবে সময়ক্ষেপণ করছে, তা মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রুশ সেনাদের পুনরায় মোতায়েন ও স্থানান্তরের উদ্দেশ্যে। রাশিয়া এখন পূর্বের ডনবাস অঞ্চলে (অধিকাংশ রুশ ভাষাভাষী) একটি তীব্র আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে; যার মধ্যে মারিউপোলও রয়েছে।
রাশিয়া তার সেনাদের পুনরায় মোতায়েন করা দেখে জেলেনস্কি সামনে কঠিন যুদ্ধের বিষয়ে তার দেশের মানুষকে সতর্ক করে বলেন, আমরা আরও সক্রিয় প্রতিরক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে শুক্রবার ভিডিওর মাধ্যমে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ সংলাপের বিষয়ে জেলেনস্কি কিছু বলেননি।
আরও পড়ুন: রাশিয়ার তেল ডিপোতে ইউক্রেনের হামলা: রুশ গভর্নর
চেরনোবিল ছেড়েছে রুশ সেনারা
যুদ্ধে ইউক্রেনের ৫৩ ঐতিহাসিক স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত: ইউনেস্কো
রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইউক্রেনের কমপক্ষে ৫৩টি সাংস্কৃতিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেস্কো।
শনিবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়।
ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনাগুলোর মধ্যে রয়েছে ২৯টি গির্জা, ১৬টি ঐতিহাসিক ভবন, চারটি জাদুঘর ও চারটি স্মৃতিস্তম্ভ।
ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনাগুলোর অধিকাংশই ইউক্রেনের বৃহত্তম শহর কিয়েভ ও খারকিভে অবস্থিত। তবে দেশটির প্রাচীন শহর চেরনিহিভেও রয়েছে কয়েকটি।
আরও পড়ুন: ইউক্রেনে সহিংসতা বন্ধের আহ্বান ভারতের
সংস্থাটির এক মুখপাত্র জানান, ‘এটি সর্বশেষ তালিকা। তবে সম্পূর্ণ নয়। কারণ আমাদের বিশেষজ্ঞরা বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন যাচাই করে চলেছেন।’
ইউনেস্কো বলছে, তারা ক্ষয়ক্ষতি যাচাই করতে স্যাটেলাইটের ছবি ও প্রত্যক্ষদর্শীদের প্রতিবেদন ব্যবহার করছে।
রাশিয়ার তেল ডিপোতে ইউক্রেনের হামলা: রুশ গভর্নর
ইউক্রেন নিয়ে আলোচনা পুনরায় শুরু হলেও, অবরুদ্ধ ইউক্রেনীয় শহর মারিউপোলের জন্য জরুরি ত্রাণ এবং নাগরিকদের অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। কারণ এবার রুশ কর্মকর্তারা ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সীমান্ত জুড়ে হেলিকপ্টার গানশিপ উড়ানোর এবং একটি রুশ তেল ডিপোতে হামলা করার অভিযোগ করেছে।
শুক্রবার ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে পুনরায় শুরু হয়েছিল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিরতি আলোচনা। অন্যদিকে এদিনই রাশিয়ার বেলগোরোড অঞ্চলের গভর্নর ইউক্রেনের বিমান হামলায় তেল ডিপো ও আশেপাশের বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন লাগার এবং দু’জন আহত হওয়ার কথা বলেছেন।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলার ঘটনাটি রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের মধ্যকার আলোচনাকে দুর্বল করতে পারে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিশ্চয়ই এ ধরনেরঘটনা আলোচনা অব্যাহত রাখার জন্য আরামদায়ক পরিস্থিতি তৈরি করবে না।
তবে ইউক্রেনীয় হেলিকপ্টারগুলো তেলের ডিপো বা বেলগোরোডের আশেপাশের বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আঘাত করার অভিযোগটি তাৎক্ষণিকভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
আরও পড়ুন: চেরনোবিল ছেড়েছে রুশ সেনারা
এর আগেও রাশিয়া ইউক্রেন থেকে গোলাবর্ষণের কথা জানিয়েছে, যার মধ্যে গত সপ্তাহে একটি সামরিক চ্যাপ্লেন নিহত হওয়ার ঘটনাও রয়েছে।
মঙ্গলবার তুরস্কে রাশিয়া ও ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদের একটি বৈঠকের পর শুক্রবার আবারও আলোচনাটি শুরু হয়েছে। যেখানে ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগদানের উচ্চাশা ত্যাগ করার ব্যাপারে তার ইচ্ছা পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং বিভিন্ন বিদেশি দেশের দ্বারা তার নিরপেক্ষ সামরিক মর্যাদা নিশ্চিত করার প্রস্তাব দিয়েছে।
রাশিয়ান প্রতিনিধি দলের প্রধান ভ্লাদিমির মেডিনস্কি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, ক্রিমিয়ান উপদ্বীপের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা এবং রাশিয়া-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দখলে থাকা পূর্ব ইউক্রেনের অঞ্চল সম্প্রসারণের বিষয়ে মস্কোর অবস্থান ‘অপরিবর্তিত’।
ইন্টারন্যাশনাল কমিটি ফর দ্য রেড ক্রস (আইসিআরসি) বলেছে, মারিউপোল এবং অন্যান্য শহরের বেসামরিক নাগরিকদের জন্য জরুরি সহায়তা পাঠানোর রসদ সংগ্রহের কাজ এখনও চলছে। শহরের বাসিন্দারা খাদ্য, পানি, ও চিকিৎসা সরবরাহের অভাবে কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রচণ্ড সংকটে রয়েছে।
আইসিআরসি মুখপাত্র ইওয়ান ওয়াটসন শুক্রবার জেনেভায় জাতিসংঘের একটি ব্রিফিংয়ের সময় বলেছেন, মারিউপোলের বাসিন্দারা যে ভয়াবহতা ভোগ করছে, তা বর্ণনা করার জন্য আমাদের শব্দ শেষ হয়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: ইউক্রেনের ২ শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করলেন জেলেনস্কি
তিনি বলেন, পরিস্থিতি ভয়াবহ এবং অবনতিশীল। এবং এটি এখন একটি মানবিক দায়বদ্ধতার ব্যাপার হয়ে গেছে যে হয় মারিউপোলবাসীদের স্থানান্তরের সুযোগ দিতে হবে অথবা সাহায্য সরবরাহের অনুমতি দিতে হবে।
ইউক্রেন সরকার জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ক্রেমলিনের সীমিত যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার পরে মারিউপোল থেকে লোকেদের সরিয়ে নেয়ার সময় ৪৫টি বাসের কনভয়কে রুশ বাহিনী বাধা দেয় এবং শুধুমাত্র ৬৩১ জন ব্যক্তিগত গাড়িতে করে শহর ছেড়ে যেতে সক্ষম হয়।
ইউক্রেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইরিনা ভেরেশচুক বলেছেন, রুশ বাহিনী মারিউপোলে নিয়ে যাওয়া ১৪ টন খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রীও জব্দ করেছে।
যুদ্ধের সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ভোগ ভোগ করছে মারিউপোলবাসী। কয়েক হাজার বাসিন্দা গত কয়েক সপ্তাহে মানবিক করিডোরের মাধ্যমে শহর ছেড়েছে। যুদ্ধ পূর্ব সময়ে শহরটিতে ৪ লাখ ৩০ হাজার বাসিন্দা থাকলেও গত সপ্তাহে জনসংখ্যা ১ লাখে নেমে এসেছে। কিন্তু ক্রমাগত রাশিয়ার আক্রমণের কারণে মারিউপোলবাসীদের জন্য পাঠানো সাহায্য বারবার ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে।
মারিউপোলের মেয়রের উপদেষ্টা পেট্রো আন্দ্রিউশচেঙ্কো শুক্রবার টেলিগ্রাম বার্তায় লিখেছেন, মারিউপোলের বাসিন্দাদের ইউক্রেন নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে সরিয়ে নেয়ার সুযোগ দেয়ার জন্য রাশিয়া ও তার মিত্রদের সত্যিকার সদিচ্ছা আমরা দেখতে পাচ্ছি না।
আরও পড়ুন: মারিউপোল থেকে নাগরিকদের সরিয়ে নিতে যাচ্ছে বাসের বহর
চেরনোবিল ছেড়েছে রুশ সেনারা
চেরনোবিল পারমাণবিক কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ ইউক্রেনীয়দের হাতে ফেরার পর রুশ সেনারা পারমাণবিক কেন্দ্র ছেড়ে চলে গেছে।
শুক্রবার ভোরে ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ কোম্পানি, এনারগোএটম জানিয়েছে, রাশিয়ার সেনারা চেরনোবিল প্লান্টের সবচেয়ে দূষিত অংশে পরিখা খনন করেছে এবং বিকিরণের ‘উল্লেখযোগ্য ডোজ’ পেয়েছে বলেও নিশ্চিত করেছে সংস্থাটি। কেউ কেউ বেলারুশে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলেও অসমর্থিত সূত্রের খবরে জানা যাচ্ছে।
অন্যদিকে শুক্রবার সকালে রাশিয়ার বেলগোরোড অঞ্চলের গভর্নর ইউক্রেনকে সীমান্তের ওপারে হেলিকপ্টার গানশিপ উড়ানোর এবং একটি তেল ডিপোতে আঘাত করার জন্য অভিযুক্ত করেছেন।
রাশিয়ান এনার্জি জায়ান্ট রোসনেফ্ট পরিচালিত ডিপোটি ইউক্রেন-রাশিয়া সীমান্তের প্রায় ৩৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।
বেলগোরোডের গভর্নর ব্যাচেস্লাভ গ্ল্যাডকভের একটি টেলিগ্রাম পোস্ট অনুসারে, হেলিকপ্টার হামলায় ডিপোটি পুড়ে গেছে, এসময় দু’জন আহত হয়েছে।
আরও পড়ুন: ইউক্রেনের ২ শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করলেন জেলেনস্কি
অন্যদিকে, ইউক্রেনীয় বাহিনী অবরুদ্ধ উত্তর শহর চেরনিহিভের দক্ষিণের শহর স্লোবোদা এবং লুকাশিভকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
রাশিয়ান বাহিনী চেরনিহিভ এবং কিয়েভ উভয় স্থানেই বিমান এবং স্থল-চালিত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা অব্যাহত রেখেছে। যদিও মঙ্গলবার মস্কো বলেছিল তারা এই অঞ্চলে সামরিক তৎপরতা কমানোর পরিকল্পনা করেছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সতর্ক করে বলেন, দেশের উত্তর অংশ ও কেন্দ্র থেকে সেনা প্রত্যাহার, ইউক্রেনের দক্ষিণ-পূর্বে নতুন আক্রমণের জন্য শক্তি তৈরির জন্য রাশিয়ার একটি সামরিক কৌশল মাত্র।
জেলেনস্কি জাতির উদ্দেশ্যে তার রাতের ভিডিও ভাষণে বলেন, ‘আমরা তাদের উদ্দেশ্য জানি। আমরা জানি যে তারা সেই অঞ্চলগুলো থেকে দূরে সরে যাচ্ছে যেখানে আমরা তাদের আঘাত করেছি। তারা দেশের অন্য অংশের খুব গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে ফোকাস করছে, যেসব জায়গায় তাদের হামলা প্রতিহত করা আমাদের পক্ষে কঠিন হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ‘সামনে আরও যুদ্ধ হবে।’
আরও পড়ুন: রাশিয়া-ইউক্রেন নিয়ে আরও আলোচনার প্রস্তাব তুরস্কের
ইউক্রেন ‘টার্নিং পয়েন্টে’: জেলেনস্কি
ইউক্রেনের ২ শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করলেন জেলেনস্কি
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দেশটির দুজন জ্যৈষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ আখ্যা দিয়ে বরখাস্ত করেছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ তথ্য জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে দেয়া এক ভাষণে জেলেনস্কি বলেন, ‘আজকে অ্যান্টি-হিরোদের বিষয়ে আরেকটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। সব বিশ্বাসঘাতের মোকাবিলা করার সময় আমার নেই। তবে ধীরে ধীরে তাদের সবাইকে শাস্তি দেয়া হবে।’
আরও পড়ুন: মারিউপোল থেকে নাগরিকদের সরিয়ে নিতে যাচ্ছে বাসের বহর
তিনি দুই শীর্ষ কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করে বলেন, যারা ইউক্রেনীয় জনগণের প্রতি আনুগত্যের সামরিক শপথ ভঙ্গ করবে... তারা অবশ্যই উচ্চ সামরিক পদ থেকে বঞ্চিত হবে।