%E0%A6%AE%E0%A6%A7%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%9A%E0%A7%8D%E0%A6%AF
আরব আমিরাতে ভারী বৃষ্টিপাত, বন্যায় ওমানে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৮
ওমানে ভারী বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ জনে। এ ছাড়া এখনো নিখোঁজ রয়েছে অনেকে। এর মধ্যেই ঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসন।
অন্যদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভারী বৃষ্টিপাতে প্রধান মহাসড়কের কিছু অংশ প্লাবিত হয়েছে। দুবাইয়ে অনেক রাস্তায় যানবাহন পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে।
সারারাত ধরে চলা বৃষ্টিতে সড়কগুলোতে পানি জমে জলাশয়ের মতো তৈরি হয়েছে। এছাড়া বাতাসের কারণে দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান ওঠানামা ব্যাহত হয়েছে।
আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় সকালেও আলোস্বল্পতার কারণে হেড জ্বালিয়ে গাড়িগুলো চলাচল করছিল। এছাড়া রাস্তায় পানি জমে থাকায় গাড়ি ধীরে ধরে চলছিল। মাঝে মাঝে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন বুর্জ খলিফার চূড়া ছুঁয়ে যাচ্ছিল বজ্রপাত।
ঝড়ের আগেই সংযুক্ত আরব আমিরাতের স্কুলগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। অধিকাংশ সরকারি কর্মচারীরা বাসা থেকে কাজ করছিলেন। তবে এ দুর্যোগের মধ্যেও অনেক কর্মজীবী বাড়ির বাইরে বেরিয়েছিলেন আর বৃষ্টির পানিতে ডুবে যাওয়া রাস্তায় তাদের গাড়ি আটকে যায়।
রাস্তা ও মহাসড়কগুলো থেকে পাম্প দিয়ে পানি সরিয়ে নিতে ট্যাংকার ট্রাক পাঠায় কর্তৃপক্ষ।
আরব উপদ্বীপের শুষ্ক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে বৃষ্টিপাত অস্বাভাবিক, তবে শীতকালে মাঝেমধ্যে বৃষ্টি দেখা যায়। নিয়মিত বৃষ্টিপাতের দেশ না হওয়ায় অনেক রাস্তাঘাট ও এলাকায় পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। সেকারণেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
মঙ্গলবার সকালে দুবাইয়ে ৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সারা দিন ধরে ১২৮ মিমি (৫ ইঞ্চি) বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
এছাড়াও বাহরাইন, কাতার ও সৌদি আরবেও বৃষ্টি হয়েছে।
অন্যদিকে আরব উপদ্বীপের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত ওমানে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে কমপক্ষে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে মঙ্গলবার দেশটির জরুরি ব্যবস্থাপনাবিষয়ক জাতীয় কমিটির এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। এর মধ্যে একজন প্রাপ্তবয়স্ক ও প্রায় ১০ জন স্কুলছাত্রসহ একটি গাড়ি ভেসে গিয়েছে। এ দুর্ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছে অঞ্চলটির প্রশাসন।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রথম সরাসরি সামরিক হামলা ইরানের
শনিবার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো সরাসরি সামরিক হামলা চালিয়েছে ইরান।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, ইরান ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে শতাধিক বোমা বহনকারী ড্রোন নিক্ষেপ করেছে। এর কয়েক ঘণ্টা পর ইরান জানায়, তারা আরও অনেক ধ্বংসাত্মক ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করেছে।
গত সপ্তাহের শুরুর দিকে সিরিয়ায় ইরানি কনস্যুলেটে ইসরায়েলের বিমান হামলায় ইরানের ২ এলিট জেনারেলসহ ১২ জন নিহত হওয়ার পর দেশটি ইসরায়েলে হামলার হুমকি দিয়ে আসছিল।
আরও পড়ুন: ইরান হামলা করলে আত্মরক্ষায় পাল্টা আঘাত হানতে প্রস্তুত ইসরায়েল
রবিবার ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, ইরান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের 'অধিকাংশ' ইসরায়েলের সীমান্তের বাইরে প্রতিহত করা হয়েছে। ইসরায়েল ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে।
গাজা উপত্যকায় হামাস সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ইসরায়েলের ৬ মাসের যুদ্ধে ইসরায়েল ও ইরান সংঘর্ষের পথে রয়েছে।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ভয়াবহ হামলায় ১ হাজার ২০০ মানুষ নিহত ও ২৫০ জন অপহৃত হন। গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে এবং ৩৩ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে বলে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: সরাসরি ইরানে হামলা চালানোর হুমকি ইসরাইলের
ইরান হামলা করলে আত্মরক্ষায় পাল্টা আঘাত হানতে প্রস্তুত ইসরায়েল
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বৃহস্পতিবার বলেছে, সিরিয়ায় ইরানি কনস্যুলেটে প্রাণঘাতী বিমান হামলার প্রতিশোধ নিলে তারা আত্মরক্ষা করতে এবং পাল্টা আঘাত হানতে প্রস্তুত রয়েছে।
চলতি মাসের শুরুর দিকে সিরিয়ায় ইরানি কনুলেটে হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে তেহরান। ওই হামলা ইসরায়েল চালিয়েছে বলে বিশ্বাস করে মার্কিন সামরিক বাহিনীও। তবে ইসরায়েল এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
এদিকে গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের বাকি অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।
গাজায় ছয় মাসের যুদ্ধ ফিলিস্তিনি অঞ্চলকে মানবিক সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছে। ১০ লাখেরও বেশি মানুষ অনাহারে-অর্ধাহারে জীবনযাপন করছে।
আরও পড়ুন: রুশ নিয়ন্ত্রিত জাপোরিঝঝিয়া পরমাণু কেন্দ্রে ড্রোন হামলা
ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের প্রধান সামান্থা পাওয়ার বুধবার আইনপ্রণেতাদের বলেছেন, গাজার উত্তরাঞ্চলে দুর্ভিক্ষ চলছে বলে যে 'বিশ্বাসযোগ্য' প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে তা তিনি মেনে নিয়েছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চলতি সপ্তাহে বলেছেন, গাজায় মানবিক ত্রাণ প্রবাহ বাড়াতে ইসরায়েল যথেষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
গাজায় ইসরায়েলি বোমা হামলা ও স্থল হামলায় অন্তত ৩৩ হাজার ৩৬০ ফিলিস্তিনি নিহত ও ৭৪ হাজার ৯৯৩ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে কতজন বেসামরিক ও কতজন যোদ্ধা রয়েছে তা আলাদা করে জানাতে না পারলেও নিহতদের দুই-তৃতীয়াংশই নারী ও শিশু বলে জানায় মন্ত্রণালয়।
গত ৭ অক্টোবর হামাসের অতর্কিত হামলায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হওয়ার পর যুদ্ধ শুরু হয়, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। ফিলিস্তিনি সশস্ত্র বাহিনী প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, ইরান হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নিলে তারা দেশটিকে রক্ষা করতে এবং পাল্টা হামলা চালাতে প্রস্তুত রয়েছে।
ইরান গত সপ্তাহে দামেস্কে বিমান হামলায় নিহত তার দুই জেনারেলের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়ে আসছে। তারা এ হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করলেও ইসরায়েল এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
ইরান বা ওই অঞ্চলে সমর্থিত বহু সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার আশঙ্কায় ইসরায়েল অতিরিক্ত বিমান প্রতিরক্ষা ইউনিট প্রস্তুত রেখেছে এবং অন্যান্য সেনাদের সক্রিয় করেছে।
সেনাবাহিনীর প্রধান মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইরানি ভূখণ্ড থেকে হামলা হলে এটি স্পষ্ট যে, মধ্যপ্রাচ্যকে উত্তেজিত করতেই ইরান হামলা চালাবে। ’
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইসরায়েল আক্রমণাত্মক ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা উন্নত করেছে। 'যেখানে প্রয়োজন সেখানে কীভাবে কাজ করতে হবে তা আমরা জানব।’
হাগারি বলেন, মার্কিন সামরিক বাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান জেনারেল এরিক কুরিলা ইসরায়েলি সামরিক নেতাদের সঙ্গে কৌশলগত মূল্যায়নের জন্য ইসরায়েলে পৌঁছেছেন।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে তীর্থযাত্রীবাহী বাস দুর্ঘটনায় নিহত ১৭
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ সপ্তাহে বলেছেন, ইসরায়েলের নিরাপত্তার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি এখনো আগের মতোই দৃঢ়।
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ইসরায়েলি বিক্ষোভ, জিম্মি মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ এবং গাজায় হামাসের হাতে আটক কয়েক ডজন জিম্মির মুক্তির দাবিতে বৃহস্পতিবার রাতে তেল আবিবের রাস্তায় নেমে আসে বিক্ষোভকারীরা।
বিক্ষোভকারীরা জিম্মিদের বড় বড় ছবি এবং ইংরেজি ও হিব্রু ভাষায় লেখা স্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড বহন করে।
অক্টোবরে দেশটিতে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার পর থেকে চলতি মাসের শুরুতে হাজার হাজার ইসরায়েলি জেরুজালেমে জড়ো হয়, যা সরকারবিরোধী সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ। প্রায় ছয় মাসের যুদ্ধ নেতানিয়াহুর নেতৃত্ব নিয়ে নতুন করে বিভক্তি তৈরি করেছে, যদিও দেশটির অধিকাংশই মূলত যুদ্ধের পক্ষে রয়েছে।
নেতানিয়াহু বলেন, আগাম নির্বাচন ইসরায়েলকে ছয় থেকে আট মাসের জন্য অচল করে দেবে এবং জিম্মি আলোচনাকে থামিয়ে দেবে। তিনি হামাসকে ধ্বংস করার এবং সমস্ত জিম্মিকে ঘরে ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তবে সেই লক্ষ্যগুলো অধরা রয়েছে।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কারিন জিন-পিয়েরে বৃহস্পতিবার বারবার জোর দিয়ে বলেছেন, গাজার কিছু অংশে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি "আসন্ন", ইউএসএআইডি প্রশাসক সামান্থা পাওয়ারকে নরম করে বলেছেন, সেখানে এরইমধ্যে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়ে গেছে তা "বিশ্বাসযোগ্য"।
জিন-পিয়েরে বলেন, ‘এ কারণেই আমরা গাজায় পৌঁছানো মানবিক সহায়তা বাড়ানোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে গাজায় ত্রাণ বহনকারী ট্রাকের সংখ্যা বেড়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জানি গাজার পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ, তাই আমরা অবশ্যই এই প্রতিবেদনগুলো সম্পর্কে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা চব্বিশ ঘণ্টা কাজ করে যাচ্ছি, যাতে গাজায় আরও বেশি সহায়তা পাওয়া যায়।’
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র গাজায় ত্রাণের প্রবাহ বাড়াতে ইসরাইলকে চাপ দেওয়া অব্যাহত রাখবে।
মার্কিন চাপের মুখে ইসরায়েল নাটকীয়ভাবে গাজায় সহায়তা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। গত সপ্তাহে বলেছে যে তারা আরও একটি কার্গো ক্রসিং খুলবে এবং অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি অঞ্চলে আগের চেয়ে আরও বেশি ট্রাক পাঠাবে। কিন্তু কয়েকদিন পরও এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। আন্তর্জাতিক কর্মকর্তারা বলছেন, মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত উত্তর গাজায় বিপুল সংখ্যক লোক অনাহারে রয়েছে।
যদিও ইসরায়েল বলছে, তারা এই অঞ্চলে প্রবেশকারী ত্রাণ ট্রাকের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বাড়িয়েছে, জাতিসংঘের কর্মীরা কেবল সামান্য বৃদ্ধির কথা জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: সরাসরি ইরানে হামলা চালানোর হুমকি ইসরাইলের
সরাসরি ইরানে হামলা চালানোর হুমকি ইসরাইলের
ইরান যদি তাদের ভূখণ্ড থেকে ইসরাইলের বিরুদ্ধে হামলা চালায় তাহলে ইসরায়েলি বাহিনী সরাসরি ইরানে হামলা চালাবে বলে হুমকি দিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
সম্প্রতি সিরিয়ায় ইরানি কনস্যুলেটে বিস্ফোরণে ইরানি জেনারেলদের হত্যার পর প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তিগুলোর মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।
ফার্সি ও হিব্রু উভয় ভাষায় এক্স অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেন, ‘ইরান যদি তার ভূখণ্ড থেকে হামলা চালায়, তাহলে ইসরায়েল পাল্টা জবাব দেবে এবং ইরানে হামলা চালাবে।’
চলতি মাসের শুরুতে দামেস্কে সৌদি কনস্যুলেটে হামলার ঘটনায় ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে বুধবার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। এরপরই ইসরায়েলের পক্ষ থেকে এ মন্তব্য এলো।
তেহরান এই হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে, যাতে ভবনটি ধসে ১২ জন নিহত হয়েছে। তবে ইসরায়েল এ ঘটনায় তাদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেনি। যদিও তারা এই হামলার বিষয়ে ইরানের প্রতিক্রিয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল, যা তাদের দীর্ঘকালীন স্নায়ু যুদ্ধের সম্প্রসারণ।
মুসলমানদের পবিত্র রমজান মাসের শেষে প্রার্থনা অনুষ্ঠানে খামেনি বলেন, বিমান হামলা ছিল 'অন্যায়' এবং ইরানি ভূখণ্ডে হামলার অনুরূপ।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত বক্তব্যে খামেনি বলেন, ‘আমাদের কনস্যুলেট এলাকায় হামলা চালানোর মানে আমাদের ভূখণ্ডে হামলা চালানো। দুষ্ট শাসকদের অবশ্যই শাস্তি দিতে হবে এবং তারা শাস্তি পাবে।'
কাৎজ বা আয়াতুল্লাহ কেউই কীভাবে প্রতিশোধ নেবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলেননি।
১ এপ্রিলের ওই বিস্ফোরণে নিহত ১২ জনের মধ্যে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের সাতজন সদস্য, চারজন সিরীয় ও হিজবুল্লাহ মিলিশিয়া বাহিনীর এক সদস্য রয়েছেন।
গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইসরাইলকে সমর্থন করায় পশ্চিমাদের, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনেরও সমালোচনা করেন খামেনি।
তিনি বলেন, 'আশা করা হচ্ছিল তারা (ইসরায়েল) এই দুর্যোগে প্রতিরোধ করবে। তারা তা করেনি। পশ্চিমা সরকারগুলো তাদের দায়িত্ব পালন করেনি।’
ইরান ফিলিস্তিনের হামাস ও লেবাননের হিজবুল্লাহর মতো ইসরাইলবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন দিয়ে থাকে। তারা ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয় না।
আফগানিস্তানের গ্রামে পুরনো ‘মাইন’ বিস্ফোরণে ৯ শিশু নিহত
আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে কয়েকটি শিশু খেলার সময় পুরনো ল্যান্ড মাইন খুঁজে পায় এবং সেটি বিস্ফোরিত হয়। এ ঘটনায় ৯টি শিশু মারা গেছে।
সোমবার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় শহর গজনিতে তালেবানের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের পরিচালক হামিদুল্লাহ নিসার বলেন, গজনি প্রদেশের গেরো জেলায় নিজেদের গ্রামের কাছে শিশুরা যে মাইন খুঁজে পেয়েছিল তা কয়েক দশক আগের।
তিনি বলেন, রবিবারের ওই বিস্ফোরণে ৫ থেকে ১০ বছর বয়সী ৫টি ছেলে ও ৪টি মেয়ে নিহত হয়েছে।
আফগানিস্তান কয়েক দশক ধরে যুদ্ধের শিকার হয়েছে এবং যেসব শিশু তাদের পরিবারকে সহায়তা করার জন্য ফেলনা ধাতু সংগ্রহ করে তারা অত্যন্ত বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে রয়েছে। তাদের অনেকেই নিহত বা পঙ্গু হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন: সিরিয়ার আলেপ্পোতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ৪২
পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাতে নিহত ৮, আহত ১২
সিরিয়ার আলেপ্পোতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ৪২
সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় শহর আলেপ্পোতে শুক্রবার ইসরায়েলের বিমান হামলায় ‘বেশ কয়েকজন’ হতাহত হয়েছে বলে জানিয়েছে সিরিয়ার সেনাবাহিনী।
বিরোধীপক্ষের যুদ্ধ পর্যবেক্ষণ সংস্থা জানিয়েছে, এসব হামলায় ৪২ জন নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই সিরীয় সেনা।
আরও পড়ুন: ব্রাজিলের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৩
ব্রিটেনভিত্তিক পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, আলেপ্পোর দক্ষিণাঞ্চলীয় উপশহর জিবরিনে লেবাননের জঙ্গি গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র ডিপোতে ইসরায়েলি বিমান হামলা চালানো হয়েছে।
অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস আরও জানিয়েছে, ৩৬ জন সিরীয় সেনা এবং ৬ হিজবুল্লাহ যোদ্ধা নিহত ও কয়েক ডজন লোক আহত হয়েছে। এটিকে কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক হামলা বলে অভিহিত করা হয়েছে।
এই হামলার বিষয়ে ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের তাৎক্ষণিক কোনো বিবৃতি পাওয়া যায়নি।
উত্তরাঞ্চলীয় প্রতিবেশী দেশটিতে ইরানি অনুপ্রবেশ বন্ধ করার অঙ্গীকার করেছে ইসরায়েল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সিরিয়ার সরকার নিয়ন্ত্রিত এলাকায় শত শত হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। কিন্তু খুব কমই হামলার কথাই স্বীকার করেছে।
বৃহস্পতিবার রাজধানী দামেস্কের কাছে বিমান হামলার কথা জানিয়েছে সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম। এতে বলা হয়, দুই বেসামরিক লোক আহত হয়েছে।
সিরিয়ায় সরকারি বাহিনীর পাশাপাশি লড়াইয়ে যোগ দেওয়ার পর থেকে হিজবুল্লাহর সশস্ত্র উপস্থিতি রয়েছে।
সিরিয়ার বৃহত্তম শহর ও একসময়ের বাণিজ্যিক কেন্দ্র আলেপ্পোতে অতীতেও এ ধরনের হামলা করা হয়েছিল। যার ফলে এর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বন্ধ হয়ে যায়। তবে শুক্রবারের হামলায় বিমানবন্দরে কোনো প্রভাব পড়েনি।
গাজায় যুদ্ধ এবং লেবানন-ইসরায়েল সীমান্তে হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলি বাহিনীর মধ্যে চলমান সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে গত পাঁচ মাস ধরে এই হামলা বেড়েছে।
আরও পড়ুন: দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে বাস খাদে পড়ে নিহত ৪৫, বেঁচে গেল ৮ বছরের শিশু
হাসপাতাল পরিদর্শন করে 'অকল্পনীয়' পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়েছে ত্রাণ সংস্থাগুলো
হাসপাতাল পরিদর্শন করে 'অকল্পনীয়' পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়েছে ত্রাণ সংস্থাগুলো
গাজার একটি জনাকীর্ণ হাসপাতাল পরিদর্শন করে ত্রাণ সংস্থার দলগুলো এক 'অকল্পনীয়' পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়েছে। হাসপাতালটিতে আহতদের বড় বড় ক্ষতগুলো চিকিৎসা না করেই উন্মুক্ত অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে।
তিনটি ত্রাণ সংস্থার সমন্বয়ে একটি জরুরি মেডিকেল টিম দুই সপ্তাহ ধরে খান ইউনিসের নিকটবর্তী ইউরোপীয় গাজা হাসপাতালে অস্ত্রোপচারসহ অন্যান্য চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। চলতি বছরের শুরু থেকেই দক্ষিণাঞ্চলীয় এই শহরে ইসরায়েলি বাহিনী ও ফিলিস্তিনি জঙ্গিদের মধ্যে প্রচণ্ড লড়াই চলছে।
সোমবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ওই মেডিকেল টিম জানায়, স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা সেখান থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। তারা হাসপাতালে যেতে পারছেন না।
ইসরায়েলি বিধিনিষেধের কারণে গজ এবং ভাঙা হাড় জোড়া লাগাতে ব্যবহৃত প্লেট ও স্ক্রুর মতো প্রয়োজনীয় জিনিসসহ চিকিৎসা সরবরাহের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
পরিদর্শনকারী চিকিৎসকরা প্রতিবেদনে আরও জানান, খাবারের অভাব রোগীর চিকিৎসায় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছিল। এ কারণে রোগীদের বড় সংক্রামিত খোলা ক্ষত পরীক্ষার আগে শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করতে হয়েছিল।
আন্তর্জাতিক ত্রাণ কর্মকর্তারা বলছেন, গাজা উপত্যকার পুরো জনগোষ্ঠী (২৩ লাখ মানুষ) খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে এবং মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত উত্তরাঞ্চলে দুর্ভিক্ষ আসন্ন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, অঞ্চলটিতে ৩২ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে এবং ৭৪ হাজারেরও বেশি আহত হয়েছে। নিহতদের দুই-তৃতীয়াংশই নারী ও শিশু।
গত ৭ অক্টোবর হামাসের অতর্কিত হামলায় ইসরায়েলের প্রায় ১২০০ মানুষ নিহত হয় এবং আরও ২৫০ জনকে অপহরণ করা হয়। হামাস এখনও প্রায় ১০০ জন ইসরায়েলিকে জিম্মি করে রেখেছে বলে মনে করা হয়, পাশাপাশি আরও ৩০ জনের দেহাবশেষও রয়েছে।
গাজায় বিপুল পরিমাণ ত্রাণ দেওয়ার সময় এসেছে: জাতিসংঘ মহাসচিব
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস শনিবার অপেক্ষমাণ ট্রাকের দীর্ঘ লাইনের কাছে দাঁড়িয়ে বলেছেন, গাজায় বিপুল পরিমাণ জীবন রক্ষাকারী ত্রাণ দেওয়ার সময় এসেছে। গাজার অভ্যন্তরে অনাহারকে 'নৈতিক অবমাননা' বলে অভিহিত করেছেন তিনি।
তিনি ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতিরও আহ্বান জানান।
গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহ’র অদূরে সীমান্তের মিশর অংশে বক্তব্য রাখেন গুতেরেস। যেখানে ইসরায়েল সম্ভাব্য বিপর্যয়ের ব্যাপক সতর্কতা সত্ত্বেও স্থল হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে। গাজার অর্ধেকের বেশি মানুষ সেখানে আশ্রয় নিয়েছে।
মহাসচিব বলেন, ‘আবারও হামলা পরিস্থিতিকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাবে। এতে পরিস্থিতি যা দাঁড়াবে তাতে ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের, জিম্মিদের এবং ওই অঞ্চলের সব মানুষের জন্য আরও খারাপ হবে।’
আরও পড়ুন: গাজায় রমজানে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ভোট
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ 'অবিলম্বে ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির' সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় আনা প্রস্তাবের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়ার একদিন পর তিনি এসব কথা বললেন।
গুতেরেস বারবার গাজায় ত্রাণ পেতে অসুবিধার কথা উল্লেখ করেছেন। আর আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো মূলত ইসরায়েলকে দোষারোপ করেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘এখানে এই ক্রসিং থেকে আমরা হৃদয়বিদারক ও হৃদয়হীনতা দেখতে পাচ্ছি… গেটের একপাশে অবরুদ্ধ ত্রাণ নিয়ে ট্রাকের লম্বা সারি, অন্যদিকে অনাহারের দীর্ঘ ছায়া।’
গভর্নর মোহাম্মদ আবদেল-ফাদেল শৌশা এক বিবৃতিতে বলেছেন, মিশরের উত্তর সিনাই প্রদেশে প্রায় ৭ হাজার ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে।
আরও পড়ুন: গাজা-ইউক্রেন বিষয়ে 'দ্বৈত নীতি' পরিহার করতে ইইউর প্রতি জাতিসংঘ মহাসচিবের আহ্বান
গাজায় দুর্ভিক্ষ ‘আসন্ন’, উত্তরাঞ্চলের প্রধান হাসপাতালে আবারও ইসরায়েলি হামলা
গাজায় দুর্ভিক্ষ ‘আসন্ন’, উত্তরাঞ্চলের প্রধান হাসপাতালে আবারও ইসরায়েলি হামলা
গাজার উত্তরাঞ্চলের প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ ভয়াবহ খাবারের সংকটে ভুগছে। বলা হচ্ছে অঞ্চলটিতে দুর্ভিক্ষ 'আসন্ন'।
খাদ্য সংকটের তীব্রতা নির্ধারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কর্তৃপক্ষের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুদ্ধের তীব্রতা বাড়লে গাজার মোট জনসংখ্যার অর্ধেককে অভুক্ত থাকতে হবে।
এই প্রতিবেদনটি এমন সময় এলো যখন গাজা উপত্যকায় ত্রাণ প্রবেশ সহজ করে দিতে এবং আরও স্থল ক্রসিং খুলে দিতে কাছের মিত্রদেরও ক্রমবর্ধমান চাপের মুখোমুখি হচ্ছে ইসরায়েল। অন্যদিকে ত্রাণ সংস্থাগুলো অভিযোগ করেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশের আকাশ ও সমুদ্রপথে পণ্য সরবরাহ খুবই ধীর গতির এবং কম।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ কূটনীতিক বলেন, আসন্ন দুর্ভিক্ষ 'সম্পূর্ণরূপে মানবসৃষ্ট' কারণ 'ক্ষুধাকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।’
এদিকে, গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তম হাসপাতাল শিফাতে হামাস সেনারা পুনরায় সংগঠিত হয়ে তাদের ওপর গুলি চালিয়েছে এমন দাবি তুলে হাসপাতালটিতে সোমবার ভোরে অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।
হাসপাতালের ভেতরে ও এর আশপাশে দিনভর সংঘর্ষ অব্যাহত ছিল, যেখানে হাজার হাজার লোক আশ্রয় নিয়েছে, বলছেন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা।
হামাস সেনা হিসেবে চিহ্নিত করে ২০ জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি সেনারা। এসময় তাদের একজন সৈন্যও নিহত হয়েছে। যদিও নিহতদের হামাস সদস্য হিসেবে শনাক্ত করা যায়নি।
ইসরায়েলি বাহিনীর দাবি, নিহতদের মধ্যে গাজার হামাসের পুলিশ বাহিনীর একজন জ্যেষ্ঠ কমান্ডার রয়েছেন, যিনি ওই হাসপাতালে লুকিয়ে ছিলেন। অন্যদিকে গাজার কর্মকর্তারা জানান, ওই কমান্ডার ত্রাণবাহী গাড়িবহরের সুরক্ষার সমন্বয় করছিলেন।
আরও পড়ুন: বড় বাধার মুখে ফিলিস্তিনের নতুন প্রধানমন্ত্রীর সংস্কারের পরিকল্পনা
শিফা হাসপাতালের ভেতরে ও নিচে হামাস কমান্ড সেন্টার গড়ে তুলেছে এমন দাবি করে গত নভেম্বরে হাসপাতালটিতে সর্বশেষ অভিযান চালিয়েছিল ইসরায়েলি বাহিনী। কিছু ভূগর্ভস্থ কক্ষের দিকে যাওয়ার একটি সুড়ঙ্গ এবং হাসপাতালের ভিতরে অস্ত্র পাওয়া গেছে বলেও দাবি করেছিলেন তারা। তবে অভিযানে আগে তারা যে পরিমাণ অস্ত্র আছে বলে দাবি করেছিল তার চেয়ে কমই ছিল যে কারণে বেপরোয়াভাবে বেসামরিক নাগরিকদের জীবন বিপন্ন করার অভিযোগে সমালোচকরা ইসরায়েলি বাহিনীকে অভিযুক্ত করেন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হাসপাতালে রোগী, চিকিৎসা কর্মী এবং নিরাপত্তার খোঁজে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া লোকজনসহ প্রায় ৩০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। যুদ্ধের কারণে গাজার প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর প্রধান মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন, হামাসের জ্যেষ্ঠ যোদ্ধারা হাসপাতালে পুনরায় সংগঠিত হয়ে ভেতর থেকে হামলার নির্দেশ দিচ্ছে।
হামলায় নিহতদের মধ্যে গাজা পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ফাইক মাভুহও রয়েছেন বলে দাবি করে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলছে, তিনি সশস্ত্র ছিলেন এবং শিফায় লুকিয়ে ছিলেন এবং পাশের একটি কক্ষে অস্ত্র পাওয়া গেছে।
গাজা সরকার জানিয়েছে, মাভুহ উত্তরাঞ্চলে ত্রাণ বিতরণ সুরক্ষা এবং ত্রাণ গোষ্ঠী ও স্থানীয় উপজাতিদের মধ্যে সমন্বয়ের দায়িত্বে ছিলেন।
হাগারি বলেন, রোগী ও চিকিৎসা কর্মীরা মেডিকেল কমপ্লেক্সে থাকতে পারেন এবং যেসব বেসামরিক নাগরিক চলে যেতে চান তাদের জন্য নিরাপদ পথের ব্যবস্থা রয়েছে।
ইসরায়েল অভিযোগ করেছে যে হামাস তার যোদ্ধাদের রক্ষা করার জন্য হাসপাতাল এবং অন্যান্য বেসামরিক স্থাপনা ব্যবহার করছে এবং যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বেশ কয়েকটি হাসপাতালে অভিযান চালিয়েছে।
গাজার অর্ধেককে অনাহারের দিকে ঠেলে দিতে পারে রাফাহর আক্রমণ
২০০৪ সালে সোমালিয়ার দুর্ভিক্ষের সময় প্রতিষ্ঠিত একটি সংস্থা ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন বা আইপিসি যা এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার তীব্রতা নির্ধারণের জন্য জাতিসংঘের এক ডজনেরও বেশি সংস্থা, সহায়তা গোষ্ঠী, সরকার এবং অন্যান্য সংস্থাকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। তারা গাজায় ক্ষুধা পরিস্থিতি নিয়ে সর্বশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
সংস্থাটি বলছে, গাজার মানুষ পর্যাপ্ত খাবার জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছে এবং প্রায় ৬ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ অর্থাৎ গাজার জনগোষ্ঠীর প্রায় এক তৃতীয়াংশ সর্বোচ্চ মাত্রার খাদ্য সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে। খাদ্যের চরম অভাব এবং তীব্র অপুষ্টির গুরুতর স্তরে রয়েছে তারা। এর মধ্যে উত্তরাঞ্চলেরই প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার মানুষ রয়েছেন।
এখন থেকে মে মাসের মধ্যে যে কোনো সময় উত্তরাঞ্চলে সরাসরি দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
যখন ২০ শতাংশ পরিবারে খাদ্যের চরম অভাব থাকে, ৩০ শতাংশ শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভোগে এবং প্রতি ১০ হাজার লোকের মধ্যে কমপক্ষে ২ জন প্রাপ্তবয়স্ক বা ৪টি শিশু প্রতিদিন মারা যায় তখন সেই অঞ্চলকে দুর্ভিক্ষপীড়িত মনে করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রথম শর্তটি পূরণ হয়েছে এবং দ্বিতীয় শর্তটিও পূরণ হওয়ার 'অত্যন্ত সম্ভাবনা' রয়েছে। শিগগিরই মৃত্যুর হার আরও বাড়বে এবং দুর্ভিক্ষের পর্যায়ে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়েছে, ইসরায়েল যদি দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহতে আক্রমণ চালায়, তাহলে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ (গাজার জনসংখ্যার অর্ধেক) বিপর্যয়কর ক্ষুধা পরিস্থিতিতে পড়বে এবং দক্ষিণাঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হবে।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর ম্যাথিউ হলিংওয়ার্থ বলেন, 'এই মুহূর্তে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হচ্ছে এবং এটি ঘটতে মাত্র পাঁচ মাস সময় লেগেছে।’
ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে জাতিসংঘের মানবিক সমন্বয়কারী জেমি ম্যাকগোল্ডরিক উত্তর ও মধ্য গাজাসহ ত্রাণের জন্য 'সব রাস্তা' খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
ডব্লিউএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাকে করে যে সহায়তা আনা হয় তার তুলনায় এয়ারড্রপ থেকে সহায়তা 'নগণ্য'।
আরও পড়ুন: যুদ্ধবিরতি আলোচনা থমকে যাওয়ায় গাজায় ত্রাণের জন্য আলোচনায় সমুদ্রপথ
গাজা শহরসহ গাজার উত্তরাঞ্চল ছিল আগ্রাসনের প্রথম লক্ষ্যবস্তু এবং পুরো এলাকা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এটি এখন গাজার মানবিক বিপর্যয়ের কেন্দ্রবিন্দু। অপুষ্টি ও পানিশূন্যতায় অন্তত ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
ফিলিস্তিনি ইস্যু নিয়ে কাজ করা ইসরায়েলি সামরিক সংস্থার মুখপাত্র শিমন ফ্রিম্যান বলেছেন, ইসরায়েল 'গাজা উপত্যকায় প্রবেশের সব সুযোগ দিচ্ছে এবং দেশগুলোকে সহায়তা প্রেরণে উৎসাহিত করছে।
ইসরায়েলের অভিযোগ, জাতিসংঘের সংস্থাগুলো সময়মতো ত্রাণ বিতরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যদিকে ত্রাণ সংস্থাগুলো বলছে, শত্রুতা, সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয়ের অসুবিধা এবং আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার কারণে গাজার বেশির ভাগ এলাকায় বিতরণ অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়ার্ল্ড পিস ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক এবং বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষ বিশেষজ্ঞ অ্যালেক্স ডি ওয়াল বলেছেন, ইসরায়েলকে ‘যথেষ্ট হুঁশিয়ারি’ দেওয়া হয়েছে যে, তারা যদি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস করা অব্যাহত রাখে, বিপুলসংখ্যক লোককে বাস্তুচ্যুত করে এবং ত্রাণ তৎপরতায় বাধা দেয় তবে এর পরিণতি হবে বিপর্যয়কর।
তিনি বলেন, 'নীতি পরিবর্তন করতে না পারলে এসব মৃত্যুর জন্য দায়ী হবেন তারা।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল বলেছেন, আরও ত্রাণ সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি ইসরায়েলের বিষয়। ইসরাইলকে এটা করতেই হবে। এটা লজিস্টিকের প্রশ্ন নয়। এর কারণ এই নয় যে, জাতিসংঘ পর্যাপ্ত সহায়তা দেয়নি। ট্রাক থামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মানুষ মারা যাচ্ছে, আর ল্যান্ড ক্রসিংগুলো বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।
ত্রাণ সংস্থাগুলো বলছে, পুলিশের ওপর ইসরায়েলি হামলা জনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার অন্যতম কারণ, যার ফলে মরিয়া ফিলিস্তিনিরা রাস্তায় ত্রাণবাহী ট্রাকে উপচে পড়ছে।
সোমবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি অভিযানে অন্তত ৩১ হাজার ৭২৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই নারী ও শিশু।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাস অতর্কিত হামলা চালিয়ে প্রায় ১২০০ মানুষকে হত্যা করে এবং আরও ২৫০ জনকে জিম্মি করে। গত বছর যুদ্ধবিরতির সময় বাকিদের বেশিরভাগ মুক্তি দেওয়ার পরেও হামাস এখনও প্রায় ১০০ জন জিম্মির পাশাপাশি ৩০ জনের দেহাবশেষ নিজেদের হেফাজতে রেখেছে বলে মনে করা হয়।
আরও পড়ুন: কয়েক মাস ধরে দুর্ভিক্ষের সতর্কতার পর গাজায় বাড়তে শুরু করেছে শিশুদের মৃত্যু
বড় বাধার মুখে ফিলিস্তিনের নতুন প্রধানমন্ত্রীর সংস্কারের পরিকল্পনা
ফিলিস্তিনের নতুন প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মুস্তাফা বলেছেন, তিনি একটি টেকনোক্র্যাট সরকার গঠন করবেন এবং গাজার পুনর্গঠনের জন্য একটি স্বাধীন ট্রাস্ট ফান্ড প্রতিষ্ঠা করবেন।
মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) গণমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন।
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) হাতে বিবৃতি এসেছে। এতে সংঘাত নিরসনে মার্কিন কর্তৃপক্ষ যুদ্ধ পরবর্তী যে ধরনের ফিলিস্তিন সরকার গঠন করতে চেয়েছিল, তার জন্য বিস্তৃত পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন তিনি।
কিন্তু উল্লেখ করার মতো আরেকটি বিষয় হলো, গাজায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কোনো ক্ষমতা নেই। ২০০৭ সালে হামাস তাদের বাহিনীকে বিতাড়িত করেছে। ইসরায়েলি অধিকৃত পশ্চিম তীরের কিছু অংশে কেবল সীমিত কর্তৃত্ব রয়েছে এই ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের গাজায় ফেরার সম্ভাবনাকে নাকচ করে দিয়েছেন এবং তার সরকার ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ঘোর বিরোধী।
আরও পড়ুন: ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধে ২৯ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত: গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস গত সপ্তাহে মুস্তাফাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন। যিনি মার্কিন অর্থনীতিবিদ এবং আব্বাসের দীর্ঘদিনের উপদেষ্টা, যার কোনো রাজনৈতিক ভিত্তি নেই।
বিবৃতিতে মোস্তফা বলেন, তিনি একটি নির্দলীয়, টেকনোক্র্যাট সরকার গঠন করবেন। যা তাদের জনগণের আস্থা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন উভয়ই অর্জন করতে পারবে। তিনি পিএ প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপক সংস্কার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
তিনি বলেন, তিনি অঞ্চলগুলোকে পুনরায় একত্রিত করতে চাইবেন এবং গাজার পুনরুদ্ধার ও পুনর্গঠনের জন্য একটি ‘স্বাধীন, দক্ষ ও স্বচ্ছ সংস্থা এবং প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহ, পরিচালনা ও বিতরণের জন্য একটি আন্তর্জাতিকভাবে পরিচালিত ট্রাস্ট ফান্ড গঠনের চেষ্টা করবেন।’
ভিশন বিবৃতিতে হামাসের কথা উল্লেখ করা হয়নি, যারা ২০০৬ সালে শেষবার ফিলিস্তিনিদের জাতীয় নির্বাচনে বিপুল বিজয় অর্জন করেছিল এবং কোনো কোনো জরিপ ইঙ্গিত দেয় যে এখনও উল্লেখযোগ্য সমর্থন রয়েছে।
আরও পড়ুন: ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৭০
পিএ'র সার্বিক নিয়ন্ত্রণে থাকা ৮৮ বছর বয়সী আব্বাস ২০০৯ সালে তার নিজের ম্যান্ডেটের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে ক্ষমতায় রয়েছেন এবং ইসরায়েলি বিধিনিষেধের কথা উল্লেখ করে নির্বাচন করতে অস্বীকার করেছেন।
জনমত জরিপে দেখা গেছে, ফিলিস্তিনিদের একটি বড় অংশ চায় তিনি পদত্যাগ করুন।
মুস্তাফা বলেন, পিএ প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচন করতে চায়। কিন্তু তিনি কোনো সময়সূচি ঘোষণা করে বলেন, এটি গাজা, পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমের 'বাস্তবতা'র ওপর নির্ভর করবে। ১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধে ইসরায়েল দখল করা অঞ্চলগুলোর ওপর ফিলিস্তিনিরা তাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র চায়।
২০২১ সালে, আব্বাস নির্বাচন অনির্দিষ্টকালের জন্য বিলম্বিত করার সিদ্ধান্তের জন্য অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে ইসরায়েলি বিধিনিষেধকে দায়ী করেন, যেখানে তার ধর্মনিরপেক্ষ ফাতাহ পার্টি বড় ক্ষতির সম্মুখীন হবে বলে ধারণা করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: উত্তর গাজায় সাহায্যের অপেক্ষায় থাকা ফিলিস্তিনিদের হত্যার নিন্দা জাতিসংঘ প্রধানের