শিল্প-ও-সংস্কৃতি
খুলনায় ৩ দিনব্যাপী রবীন্দ্রমেলা শুরু
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের ১৬১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে খুলনার ফুলতলায় তিন দিনব্যাপী রবীন্দ্রমেলা শুরু হয়েছে।
রবিবার সন্ধ্যায় উপজেলার দক্ষিণডিহি রবীন্দ্র কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে মেলার উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক।
জেলা প্রশাসন খুলনার উদ্যোগে মেলার উদ্বোধনী দিনের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ।
আরও পড়ুন: রবীন্দ্রনাথের কাছে পূর্ব বাংলার মানুষ ছিল অভিজ্ঞতার জায়গা: সেলিনা
খুলনার জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদারের সভাপতিত্বে আলোচনায় বক্তব্য দেন, নেত্রকোনা শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. রফিকউল্লাহ খান, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব অসীম কুমার দে, সাবেক ডিআইজি অলিউর রহমান ও ফুলতলা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ আকরাম হোসেন, ফুলতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ মো. আবুল বাশার, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মৃণাল হাজরা ও ফুলতলা প্রেসক্লাবের সভাপতি এস এম মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।
পরে স্থানীয় শিল্পীরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন।
এর আগে রবিবাবর সকালে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তার পিতৃপুরুষের ভিটা রূপসা উপজেলার পিঠাভোগ গ্রামে তিনদিনব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. ইসমাইল হোসেন।
আরও পড়ুন: রবীন্দ্রনাথের জন্মবার্ষিকী পালিত হচ্ছে
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব অসীম কুমার দে, খুলনা জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার, খুলনা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পুলক কুমার মন্ডল উপস্থিত ছিলেন।
আজ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১তম জন্মবার্ষিকী
করোনা মহামারির জন্য দুই বছর নীরবে উদযাপনের পর সারাদেশে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে রবিবার নোবেল বিজয়ী বাঙালি কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১তম জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হচ্ছে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একজন কবি, শিল্পী, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক, সেইসঙ্গে একজন সুরকার যার কাজ ১৯ শতকের শেষের দিকে এবং ২০ শতকের প্রথম দিকে বাংলা সাহিত্য ও সঙ্গীতকে নতুন রূপ দিয়েছিল।
১৮৬১ সালের ৭ মে কলকাতার জোড়াসাঁকো বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন রবীন্দ্রনাথ। তিনি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং সারদা দেবীর ১৩ জন জীবিত সন্তানের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন।
১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলির জন্য সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার জেতার পর তিনি এশিয়ার প্রথম নোবেল বিজয়ী হন।
তার দুটি গান এখন বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় সঙ্গীত।
আরও পড়ুন: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১তম জন্মবার্ষিকী রবিবার
রবীন্দ্রনাথ রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত বিষয়ে উপন্যাস, ছোটগল্প, গান, নাটক এবং প্রবন্ধ লিখেছেন। গীতাঞ্জলি, গোরা এবং ঘরে-বাইরে, চোখের বালি তাঁর বিখ্যাত রচনাগুলোর মধ্যে অন্যতম।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হামিদ জন্মবার্ষিকী উদযাপনের জন্য পরিকল্পনা করা সকল অনুষ্ঠানের সার্বিক সাফল্য কামনা করে বলেন, ‘পঁচিশে বৈশাখের আহ্বান যেন প্রতিটি বাঙালির হৃদয় স্পর্শ করে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, বিশ্বকবির জীবন দর্শন ও তাঁর সৃষ্টি বাঙালিদের চিরকাল শোষণ-বঞ্চনামুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে অনুপ্রাণিত করবে।’
বাংলাদেশ টেলিভিশন, বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং বাংলাদেশ বেতার রবীন্দ্রনাথের জীবন ও কর্ম তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে।
প্রতি বছরের মতো, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন ঠাকুরের জীবন ও কর্মের উপর পারফরম্যান্স এবং বক্তব্যের মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করার জন্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
আরও পড়ুন: টিআইসিতে তির্যকের নাটক রবীন্দ্রনাথের ‘রাজা’
রবীন্দ্রনাথের জন্মবার্ষিকী পালিত হচ্ছে
চট্টগ্রামে আজ ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলীখেলা
চট্টগ্রাম আজ (২৫ এপ্রিল) সোমবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী আব্দুল জব্বারের বলীখেলা (কুস্তি প্রতিযোগিতা)। এ উপলক্ষে চলছে তিন দিনের বৈশাখী মেলা।
বিকেলে শহরের লালদীঘির জেলা পরিষদ মার্কেট প্রাঙ্গণের সড়কের উপর বিশেষ ব্যবস্থায় এ বলীখেলা অনুষ্ঠিত হবে। করোনার মহামারির কারণে দুই বছর এ আয়োজন বন্ধ থাকার পর ঐতিহ্যবাহী এ বলীখেলা ও মেলার এবার বসছে ১১৩তম আসর। প্রতিযোগিতায় অংশ নেবেন চট্টগ্রাম কক্সবাজার, নোয়াখালী কুমিল্লাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের শতাধিক বলী।
এদিকে আজকের বলীখেলা ও গতকাল রবিবার থেকে শুরু তিন দিনের বৈশাখী মেলার কারণে কয়েকদিন ধরে লালদীঘি, কে সি দে রোড, বক্সিরহাট, সিনেমা প্যালেস, আমানত শাহ রোড, খাতুনগঞ্জ-আসাদগঞ্জগামী রোড সহ কয়েক কিলোমিটার এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। সিএমপির পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা। কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে লাগানো হয়েছে সিসি টিভি ক্যামেরা।
তিন দিনব্যাপী এ মেলা আজ এবং আগামীকাল পর্যন্ত চলবে। মেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা নানা ধরনের গৃহস্থালি ও লোকজ পণ্য নিয়ে হাজির হয়েছেন। ঐতিহ্যবাহী এ মেলায় হরেক রকমের পণ্যের পসরা সাজিয়েছেন বিক্রেতারা। মাটির তৈরি তৈজসপত্র, মাটির টেপা পুতুল, কাঁচের চুড়ি, পাটপণ্যের পাশাপাশি কাঠের পুতুল, খেলনা, বাঁশ-বেতের জিনসিপত্র আর মুড়ি-মুড়কি বাতাসার দোকানের ভিড় লেগেছে।
বৈশাখের তপ্ত দুপুরে মাথার ওপর প্রচণ্ড তাপদাহ। তারই মাঝে বাহারি গ্রামীণ পণ্যের পসরায় সেজেছে লালদিঘী মাঠের আশে পাশের প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা। মেলায় এসেছে নানা বয়সী মানুষ।
পড়ুন: চট্টগ্রামে জব্বারের বলীখেলা হবে: মেয়র
গ্যালারি চিত্রকে বিপাশা হায়াতের ‘প্রস্তরকাল’
মনোমুগ্ধকর শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর জন্য প্রশংসিত অভিনেত্রী-চিত্রশিল্পী বিপাশা হায়াতের ‘প্রস্তরকাল’ শিরোনামের একক প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়েছে।
শনিবার রাজধানীর ধানমন্ডির গ্যালারি চিত্রক-এ এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়েছে। এই চিত্রকর্মগুলোতে সাম্প্রতিক বিশ্বব্যাপী বিপর্যয়, সংকট এবং উত্থান-পতন দেখানো হয়েছে।
বিপাশা হায়াতের সপ্তম একক প্রদর্শনী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন একুশে পদক প্রাপ্ত বিশিষ্ট কার্টুনিস্ট ও চিত্রকর রফিকুন নবী এবং সভাপতিত্ব করেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রশিল্পী ও মুদ্রণকার শহীদ কবির।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন এবং কিংবদন্তি অভিনেতা ও বিপাশা হায়াতের বাবা আবুল হায়াত, পোল্যান্ডে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মাহফুজুর রহমানসহ অন্যান্য শিল্পী ও শিল্প অনুরাগীরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
জল উৎসবের মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে বৈসাবি
রাঙামাটিতে মারমাদের ঐতিহ্যবাহী সাংগ্রাই বা জল উৎসবের মধ্য দিয়ে শনিবার পাহাড়ে শেষ হচ্ছে বৈসাবি উৎসব।
শনিবার সকালে রাঙামাটিতে কেন্দ্রীয়ভাবে মারমা সংস্কৃতি সংস্থা (মাসস) আয়োজনে ‘পার্বত্য অঞ্চলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও সংস্কৃতি বিকাশে এগিয়ে আসুন’এই শ্লোগানে কাউখালী বেতবুনিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে পিতলের ধর্মীয় ঘণ্টা বাঁজিয়ে পানি খেলার সূচনা করেন রাঙামাটির সংসদ সদস্য ও খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার।
আরও পড়ুন: প্রবারণা পূর্ণিমা: পাহাড়ে সম্প্রীতির কল্প জাহাজ ভাসলো
এরপর ফিতা কেটে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিরা মারমা তরুণ-তরুণীদের গায়ে পানি ছিটিয়ে জলকেলির শুভ সূচনা করেন।
বাঙালি সংস্কৃতি ধারণ করেই আমরা এগিয়ে যাব: মেয়র তাপস
বাঙালি সংস্কৃতিকে ধারণ করেই আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাব বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) সকালে রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান অবলোকন শেষে গণমাধ্যমের সাথে মতবিনিময়কালে তাপস এই মন্তব্য করেন।
ডিএসসিসি মেয়র শেখ তাপস বলেন, ‘আজ আমরা রমনা বটমূলে সমবেত হয়েছি। রমনা বটমূলের এই বর্ষবরণ অনুষ্ঠান আমাদের জাতীয় সংস্কৃতির অন্যতম ও অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ। আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্যের সাথে রমনা বটমূলের এই সাংস্কৃতিক মিশেল আমাদেরকে পরিতৃপ্ত করে, বাঙালিত্বে সামগ্রিকতা দান করে। তাই, আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হলে বাঙালি সংস্কৃতিকে ধারণ করেই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।’
পড়ুন: পহেলা বৈশাখ: বাংলা নববর্ষের উৎপত্তি এবং ইতিহাস
পহেলা বৈশাখ: বাংলা নববর্ষের উৎপত্তি এবং ইতিহাস
নতুন বছরে উষ্ণ এপ্রিলের অন্দরমহলে হালকা ঝড়ো হাওয়ায় আয়োজন চলছে চৈত্র সংক্রান্তির; রূপরেখায় বাংলা নববর্ষ ১৪২৯। ১৪ এপ্রিল তারিখটি বাঙালিদের বিশেষ করে বাংলাদেশের উৎসব প্রিয় বাঙালিদের জন্য একটি আবেগের বিষয়। প্রকৃতির দেখাদেখি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নতুন করে বছর শুরুর উন্মাদনার আরেক নাম পহেলা বৈশাখ। শুধু ঝড় এলো বলে জীবনের বিপণীগুলো গুটিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে পৌছা নয়, বাঙালির জীবন ও জীবিকার হিসেব-নিকেষ জড়িয়ে আছে গ্রীষ্মের এই প্রথম দিনটির নেপথ্যে। বেশ কয়েক শতাব্দি লেগেছে এই প্রথার ইতিহাস সমৃদ্ধ হতে। চলুন, নতুন করে আবারো হয়ে যাক বাংলা নববর্ষ কড়চা।
বাংলা নববর্ষের সূচনালগ্ন
বাংলা নববর্ষের গোড়াপত্তনের খোঁজে ফিরে যেতে হবে অনেক অনেক আগে অবাংলা অধ্যূষিত এলাকায়। খ্রিস্টপূর্ব ৫৭ অব্দে প্রাচীন ভারতের রাজা বিক্রমাদিত্যের নামানুসারে হিন্দু বিক্রমী পঞ্জিকা প্রণয়ন করা হয়েছিলো। এই পঞ্জি অনুসারে ভারতের পূর্বাঞ্চল, উত্তর পূর্বাঞ্চল ও নেপালের বিভিন্ন অংশে বসবাসরত গ্রামীণ বাঙালি সম্প্রদায়ের মধ্যে নিছক একটি ঋতু উৎসব হিসেবে প্রচলিত ছিলো পহেলা বৈশাখ।
তবে তার আমেজ বাংলা অব্দি পৌছতে চলে এসেছিলো ৫৯৩ খ্রিস্টাব্দ। ৭ম শতকে বাংলা বর্ষের প্রমাণ সময়ে বেশ পরিবর্তন এনে বাংলার বুকে বাংলা দিনপঞ্জির উদ্ভব ঘটান বাংলার প্রথম স্বাধীন নৃপতি গৌড়েশ্বর মহারাজাধিরাজ শশাঙ্ক মহাদেব।
পড়ুন: দুই বছর পর মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্য প্রস্তুত ঢাবি
বাংলা পঞ্জিকা ও বাংলা নববর্ষ
ভারতবর্ষে মুঘল শাসনামলে আরবী হিজরী পঞ্জিকা অনুযায়ী কৃষি পণ্যের খাজনা আদায়ের কাজ করা হতো। কিন্তু এই বর্ষপঞ্জি কৃষিকাজের জন্য উপযোগী ছিল না, কারণ চন্দ্র বছরের ৩১ বছর সৌর বছরের ৩০ বছরের সমান। কৃষিকাজ সৌর বছরের হিসাবের ওপর নির্ভর করা সত্ত্বেও চন্দ্র বছরের হিসাবেই কৃষকদের রাজস্ব প্রদানে বাধ্য করা হতো। তাছাড়া চন্দ্র বছরের ৩৫৪ দিন আর সৌর বছর ৩৬৫ বা ৩৬৬ দিনের মধ্যে ১১ বা ১২ দিনের ব্যবধান। ফলে রাজস্ব আদায় সহ অন্যান্য কাজকর্মে প্রশাসনিক জটিলতা তৈরি হতো। এমতাবস্থায় ১৫৮৫ সালের ১০ কিংবা ১১ মার্চ-এ মুঘল সম্রাট আকবর এক ডিক্রি জারির মাধ্যমে প্রবর্তন করেন প্রাথমিক বাংলা সন তারিখ-এ-এলাহী। এই গণনা পদ্ধতির হিসেব কার্যকর হয়েছিলো সম্রাট আকবরের সিংহাসনের অধিষ্ঠিত হওয়া সময় অর্থাৎ ১৫৫৬ সালের ৫ নভেম্বর থেকে। তিনি একটি কর্মপোযোগী, বৈজ্ঞানিক, ও সার্বজনীন বর্ষপঞ্জি প্রণয়নের লক্ষ্যে সে সময়ের বিখ্যাত বিজ্ঞানী ও জ্যোতির্বিদ আমীর ফতুল্লাহ সিরাজিকে নতুন বর্ষপঞ্জি তৈরির নির্দেশ দেন। এভাবে রাজস্ব আদায়ের সংস্কারের পটভূমিতে জন্ম নেয় আধুনিক বাংলা সন। প্রথমে ফসলি সন নামে প্রকাশ পেলেও, পরে তা বহুলভাবে পরিচিতি পায় "বঙ্গাব্দ" বা বাংলা বর্ষ হিসেবে।
মারমাদের সাংগ্রাই উৎসব শুরু
পার্বত্য চট্টগ্রামের দ্বিতীয় বৃহত্তম নৃগোষ্ঠী মারমা সম্প্রদায়ের প্রধান সামাজিক ও ধর্মীয় উৎসব সাংগ্রাই উৎসব শুরু হয়েছে। খাগড়াছড়ি বান্দরবান রাঙ্গামাটির মারমা সম্প্রদায় অত্যন্ত আনন্দ-উল্লাসে সাংগ্রাই উৎসব পালন করছে। পুরনো বছরের বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ উপলক্ষে মারমারা সাংগ্রাই উৎসব পালন করে থাকে সুপ্রাচীন কাল থেকে।
মঙ্গলবার খাগড়াছড়ির পানখাইয়া পাড়ায় মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে সাংগ্রাই উৎসবের উদ্বোধন করেন শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। পরে মারমা উন্নয়ন সংসদ ও মারমা যুব কল্যাণ সংসদের উদ্যোগে বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পানখাইয়া পাড়ায় এসে শেষ হয়।
আরও পড়ুন: নদীতে ফুল উৎসর্গের মধ্যদিয়ে পাহাড়ে ‘বৈসাবি’ উৎসব শুরু
এসময় খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী, সেনাবাহিনীর খাগড়াছড়ি জোন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন, খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বশিরুল হক ভূঁইয়া, সেনা বাহিনীর খাগড়াছড়ি রিজিয়নের জিটুআই মেজর জাহিদ হাসান, পৌর মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী ও পরিষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
হাজারো নারী-পুরুষের অংশগ্রহনে মারমা নৃগোষ্ঠীর মানুষের বর্ণিল পোষাকে বৈচিত্র্য ও বর্ণাঢ্যতা ছিল দেখার মতো। এরপর মারমাদের ঐতিহ্যবাহী নৃত্যকলা পরিবেশিত হয়।
পরে সেনাবাহিনীর খাগড়াছড়ি জোন কমান্ডার লে. কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন মারমাদের ঐতিহ্যবাহী পানি খেলা উদ্বোধন করেন।
আরও পড়ুন: রাঙামাটিতে ৫ দিনব্যাপী বৈসাবি মেলা আয়োজন
বাংলা নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রার ইতিহাস: রূপরেখায় অপশক্তির অবসান কামনায় শান্তি মিছিল
ফুল ও পশু-পাখির প্রতীতি হাতে হাজারো মানুষের কলতান; আবহ সঙ্গীতে কালবৈশাখী ও শ্রেষ্ঠাংশে চৈত্র সংক্রান্তি। এভাবেই মঙ্গল শোভাযাত্রা শিরোনামে বাংলার সরণীকে রঙিন করে স্বাগতম জানানো হয় নববর্ষকে। সহস্র পদব্রজের প্রতিধ্বনিতে অনুরণিত হতে থাকে ধর্ম ও বর্ণের বৃত্ত ভাঙার শব্দ। প্রতিটি পাড়া থেকে শহুরে রাজপথ; ধুলোয় ধূসরিত বাঙালির গন্ড থেকে বাংলা সংস্কৃতি; মিলে মিশে একাকার হয় এক মঞ্চে। এরই চিত্রপট জুড়ে থাকে তিন যুগের পুরোনো এই আনন্দ মিছিলের ইতিহাসের কথা। বাঙালি ঐতিহ্যের এই গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের পর্বগুলো নিয়েই আজকের ফিচার।
মঙ্গল শোভাযাত্রা কি এবং কেন
প্রত্যেক বছর বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখকে বরণ করে নেয়ার মহোৎসব এই মঙ্গল শোভাযাত্রা। এর আয়োজনে থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকবৃন্দ। এই শোভাযাত্রার বিস্তৃতি ঢাকার প্রাণকেন্দ্র শাহবাগ, রমনা ও এর আশেপাশের এলাকা নিয়ে।
বৈশাখের প্রথম দিনে এই আনন্দ মিছিলটি নিমেষে পরিণত হয় বাংলার সর্বস্তরের ও বিভিন্ন বয়সের মানুষের মহা সম্মেলনে। উৎসবের সব থেকে চোখ জুড়ানো বিষয়টি হচ্ছে বিভিন্ন ফুল, পশু-পাখি ও রূপকথার চরিত্রের রঙ-বেরঙের শিল্পকর্ম।
নিছক আনন্দ মিছিল ছাড়াও মঙ্গল শোভাযাত্রার নেপথ্যে রয়েছে নতুন বছরে সকল অপশক্তির অবসানপূর্বক শান্তি প্রতিষ্ঠায় ঐক্যতার প্রত্যয়।
পড়ুন: পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান দুপুর ২টার মধ্যে শেষ করতে হবে: ডিএমপি কমিশনার
নদীতে ফুল উৎসর্গের মধ্যদিয়ে পাহাড়ে ‘বৈসাবি’ উৎসব শুরু
পুরনো বছরকে বিদায় ও বাংলা নতুন বছরকে বরণ উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিজু-সাংগ্রাই-বৈসু তথা বৈসাবি উৎসব শুরু হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িদের প্রধান সামাজিক ও ধর্মীয় উৎসব ‘বৈসাবি’কে স্বাগত জানিয়ে খাগড়াছড়িতে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়।
মঙ্গলবার সকালে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা।