শিল্প-সংস্কৃতি
বাংলাদেশের দশটি প্রাচীন মসজিদ: দেশের ঐতিহাসিক স্থাপত্যের নিদর্শন
মধ্যযুগীয় পূর্ব সময় থেকে বর্তমান বাংলাদেশ নামে এই স্বাধীন ভূ-খণ্ডটি অনেক মুসলিম শাসক শাসন করেছেন। সেই সময় থেকেই ধীরে ধীরে বিবর্তন হয়েছে এই জায়গাটির সভ্যতা ও সংস্কৃতি। তৈরি হয়েছে প্রাসাদ, বিশাল জলাশয়, দূর্গ, কূপ, সেতু এমনকি গোটা একটা শহর। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে এই তল্লাটে স্থাপনাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষনীয় ছিল মসজিদগুলো। এখানকার ধর্মপ্রাণ মানুষগুলোর প্রার্থনাসহ রীতিনীতি, দরবার-শালিস সব কিছু এই মসজিদ কেন্দ্রীক ছিল। তারই ফলস্বরূপ সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে প্রার্থনা কেন্দ্রগুলো। আজকের ফিচারটি সাজানো হয়েছে বাংলাদেশের এই ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন প্রাচীন মসজিদ নিয়ে।
১০ প্রাচীন মসজিদ: বাংলাদেশের ঐতিহাসিক স্থাপত্যের নিদর্শন
ষাট গম্বুজ মসজিদ, খুলনা
বাংলা সালতানাতের সময় সুন্দরবনের গভর্নর খান জাহান আলী এই মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। এটি সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক মুসলিম স্মৃতিস্তম্ভগুলোর মধ্যে একটি। সাতটি সারিতে সাজানো ৭৭ নিচু গম্বুজ এবং প্রতিটি কোণে একটি করে গম্বুজ নিয়ে মোট গম্বুজ সংখ্যা ৮১টি। এখানকার চারটি টাওয়ারের মধ্যে আযান দেয়ার জন্য দুটি ব্যবহার করা হত। বিস্তীর্ণ নামাযের জায়গায় ২১টি কাতারে একসাথে প্রায় তিন হাজার মুসল্লি নামাজ পড়তে পারেন। ৬০টি সরু পাথরের স্তম্ভ গম্বুজগুলোকে ধরে রাখে। এই কারণেই মূলত একে ষাট গম্বুজ মসজিদ বলা হয়ে থাকে।
বাঘা মসজিদ, রাজশাহী
১৫২৩ থেকে ১৫২৪ সালে হোসেন শাহী রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা আলাউদ্দিন শাহের পুত্র সুলতান নুসরাত শাহ মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদের গম্বুজ ভেঙ্গে পড়লে ১৮৯৭ সালে ধ্বংস হওয়া মসজিদটি পুনর্নির্মাণ করা হয়। মসজিদটি ২৫৬ বিঘা জমির উপর অবস্থিত। মসজিদের আঙিনা সমতল ভূমি থেকে প্রায় ১০ ফুট উঁচু।
প্রয়াত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের স্মরণ করল ‘বঙ্গীয় সাহিত্য সংসদ’
করোনাকালীন সময়ে মারা যাওয়া প্রয়াত বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের এক বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্মরণ করল বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদ।
রবিবার সন্ধ্যায় একাডেমির উন্মুক্ত মঞ্চে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও সংস্কৃতি সংসদের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘স্মরণে শ্রদ্ধা’ অনুষ্ঠানে প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, বীর উত্তম সিআর দত্ত এবং কিংবদন্তি ভারতীয় বাঙালি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে স্মরণ করা হয়।
এছাড়াও স্মরণ করা হয় ঢাকায় নটরডেম কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও প্রতিষ্ঠাতাদের একজন ফাদার আরডব্লিউ টিম, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ জামিলুর রেজা চৌধুরী, নাট্য অভিনেতা আলী যাকের, সাংবাদিক কামাল লোহানী, লেখক বুদ্ধদেব গুহ, রূপালী পর্দার অভিনেতা সারা বেগম কবরীকে। মুক্তিযোদ্ধা আবু ওসমান চৌধুরী, বাংলা একাডেমির সাবেক চেয়ারম্যান ও লোকসাহিত্যিক শামসুজ্জামান খান, লেখক শঙ্খ ঘোষ, লেখক বোরহান উদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, কিংবদন্তি বাঁশি বাদক ইন্দ্র মোহন রাজবংশী, বিশিষ্ট গায়ক এন্ড্রু কিশোর, ফোক আইকন ফকির আলমগীর ও ঔপন্যাসিক খাতুন রাবেয়ার প্রতিও গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
আরও পড়ুন: সুলতানের শিল্পকর্ম গবেষণায় অর্থায়ন করবে যুক্তরাষ্ট্র
অভিনেতা-নাট্যকার ডক্টর এনামুল হক, কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, সুরকার আজাদ রহমান, বিশিষ্ট সাংবাদিক আতিকুল্লাহ খান মাসুদ, কিংবদন্তি চিত্রশিল্পী মুর্তজা বশীর, নাট্যকার আফসার আহমেদ, অভিনেতা মাহমুদ সাজ্জাদ, কবি অলোকেরঞ্জন দাশগুপ্ত, সুফিয়া আহমেদ, লেখক দেবেশ রায়, বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক হাবিবুল্লাহ সিরাজী, রবীন্দ্র গবেষক মিতা হক, রূপালী পর্দার কিংবদন্তি এটিএম শামসুজ্জামান, সাংবাদিক রাহাত খান, কালী ও কলমের সাবেক সম্পাদক আবুল হাসনাত, রক আইকন আইয়ুব বাচ্চু ও মান্নান হীরাকেও স্মরণ করা হয়।
মঞ্চসারথি আতাউর রহমান, রামেন্দু মজুমদার, আসাদুজ্জামান নুর, নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, এম হামিদ, লিয়াকত আলী লাকী ও সারা যাকের সহ বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা অনুষ্ঠানে যোগ দেন এবং প্রয়াত ব্যক্তিত্বদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস।
আরও পড়ুন: কালিদাস কর্মকারের স্মরণে গ্যালারি কসমসের দিনব্যাপী আয়োজন
মাটিরাঙ্গায় বন বিহারে কঠিন চীবর দান
খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার সাপমারা আর্য মার্গ বন বিহারে ৪র্থ তম দানোত্তম শুভ কঠিন চীবরদান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার সকাল থেকে দিন ব্যাপী কঠিন চীবরদান অনুষ্ঠানে প্রধান অথিতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুই প্রু চৌধুরী অপু।
আরও পড়ুন: পানছড়িতে দিনব্যাপী কঠিন চীবর দান
চীবরদান অনুষ্ঠানে অংশ হিসেবে সকালে বৌদ্ধ নর-নারীরা পঞ্চশীল গ্রহণের পর কঠিন চীবরদান, মুর্তি দান, সংঘ দান, অষ্ট পরিষ্কার দান ও বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পিণ্ডদানসহ নানাবিধ দান করা হয়।
অনুষ্ঠানে ধর্মীয় আলোচক ছিলেন অগ্র জ্যোতি মহাস্থবির ভান্তে, দীপনন্দ মহাস্থবির ও বিহারধ্যক্ষ বুদ্ধজয় ভান্তে। দান অনুষ্ঠানে দেশ জাতি তথা সকলে মঙ্গল কামনা প্রার্থনা করা হয়।
চীবর দানোৎসবে মুখর পাহাড়
দানোত্তম কঠিন চীবর দানোৎসবকে ঘিরে মুখরিত পাহাড়ি জনপদ। রাঙ্গামাটির বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহারে চলছে মাসব্যাপী বৌদ্ধদের প্রধান দানোৎসব কঠিন চীবর দান।
এ উপলক্ষে ধর্মীয় নানা আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে লংগদু উপজেলার আটরকছড়া ইউনিয়নের করল্যাছড়ির আর্যগিরি বনবিহারে বৃহস্পতিবার সকালে থেকে শুরু হয়ে শুক্রবার বিকালে দু’দিন ব্যাপী উদযাপিত হয়েছে ৪র্থ তম দানোত্তম কঠিন চীবর দানোৎসব।
কর্মসূচির মধ্য বুদ্ধপূজা, বুদ্ধমূর্তিদান, সংঘদান, অষ্টপরিষ্কার দান, কঠিন চীবর দান, পঞ্চশীল প্রার্থনা, সূত্রপাঠ, ধর্মীয় দেশনা, হাজার বাতি দান, কল্পতরু প্রদক্ষিণ ও উৎসর্গসহ নানাবিধ দান উল্লেখযোগ্য।
আরও পড়ুন: পানছড়িতে দিনব্যাপী কঠিন চীবর দান
উৎসবে বিশ্বের সকল প্রাণীর হিতসুখ ও মঙ্গল কামনায় এবং মহামারি করোনাভাইরাস থেকে পরিত্রাণের জন্য ভিক্ষু সংঘের সমীপে নিবেদন করা হয়েছে বিশেষ প্রার্থনা। স্মরণ করা হয় মহাসাধক সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তেকে। ভগবান বুদ্ধের জয়ধ্বনিতে হাজারো পুণ্যার্থীদের ভক্তি ও শ্রদ্ধায় মুখর হয়ে উঠে পুরো বিহার প্রাঙ্গণ।
শুক্রবার দুপুরে কল্পতরু ও কঠিন চীবরকে পুরো বিহার এলাকা প্রদক্ষিণ করে আনন্দ শোভাযাত্রা করা হয়। পরে উদ্বোধনী ধর্মীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মধ্যদিয়ে কঠিন চীবর দানোৎসব শুরু হয়।
অনুষ্ঠানে রুপেল চাকমার পরিচালনায় পঞ্চশীল পাঠ করেন বিহার পরিচালনা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক দিবাকর চাকমা। বিশেষ প্রার্থনা পাঠ করেন বৈশাখী চাকমা। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি অজয় চাকমা (মিত্র) ও বিহার পরিচালনা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক দিবাকর চাকমা, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা টিটন খীসা, ১নং আটরকছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মঙ্গল কান্তি চাকমাসহ প্রমুখ।
আরও পড়ুন: খাগড়াছড়িতে বৌদ্ধ বিহারে দানোত্তম কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠিত
ধর্মীয় বনভান্তের অমৃতময় বাণীর উদ্ধৃতি দিয়ে পুণ্যার্থীদের মাঝে ধর্মদেশনা দেন, সাধনাটিলা বনবিহারের বিহার অধ্যক্ষ ভদন্ত শ্রীমৎ বুদ্ধবংশ মহাস্থবির, রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারের ভিক্ষু ভদন্ত শ্রীমৎ মুদিতা বংশ মহাস্থবির, রাজবন বিহারের আবাসিক ভিক্ষু ভদন্ত শ্রীমৎ গিরিমানন্দ স্থবির ও জয়বর্ধন স্থবিরসহ প্রমুখ। এসময় আটকরকছড়া আর্যগিরি বনবিহারের বিহার অধ্যক্ষ ভদন্ত শ্রীমৎ অমর রতন্ন স্থবিরসহ অন্যান্য প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সুলতানের শিল্পকর্ম গবেষণায় অর্থায়ন করবে যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের অর্থায়নে প্রথমবারের মতো এসএম সুলতানের শিল্পকর্ম নিয়ে তিন বছরব্যাপী যুগান্তকারী গবেষণা ও পুনরুদ্ধার কাজ শুরু হচ্ছে। মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্টদূত আর্ল মিলার এবং বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ নুরুল হুদা ধানমন্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে এসএম সুলতানের শিল্পকর্ম বিষয়ক এই সংস্কৃতি সংরক্ষণ প্রকল্প উদ্বোধন করেন।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের 'অ্যাম্বাসেডরস ফান্ড ফর কালচারাল প্রিজারভেশন' এর ২০ বছর পূর্তি এবং বাংলাদেশের সুবর্ণ জয়ন্তীর সম্মানে যুক্তরাষ্ট্র এসএম সুলতানের চিত্রকর্ম নিয়ে গবেষণা এবং পুনরুদ্ধারে কাজ করার জন্য বেঙ্গল ফাউন্ডেশনকে অর্থায়ন করছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা মুক্ত দেশের তালিকা ২০২১
তিন-বছরের এই উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মর্যাদাপূর্ণ অ্যাম্বাসেডরস ফান্ড ফর কালচারাল প্রিজারভেশন (এএফসিপি) থেকে অর্থায়ন করা হবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের অন্যতম বিখ্যাত শিল্পী সুলতানের শিল্পকর্ম নিয়ে গবেষণা, বিশ্লেষণের পাশাপাশি তার চিত্রকর্মগুলো পুনরুদ্ধার করা হবে। মূল্যবান এই শিল্পকর্মগুলো পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে এই প্রকল্পটি বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সম্পর্কে সামষ্টিক বোঝাপড়া বাড়াতে সহায়তা করবে এবং ভবিষ্যত্ প্রজন্মের জন্য এই শিল্প ও ইতিহাস সংরক্ষণ করবে।
রাষ্ট্রদূত মিলার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্পের ঘোষণা দেয়ার জন্য বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরীর হাতে ঘোষণাফলক তুলে দেন এবং তিনি বেঙ্গল গ্যালারিতে চলমান সুলতানের কয়েকটি বিখ্যাত শিল্পকর্মের প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন।
দূতাবাস জানায়, এএফসিপি বিদেশে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক উদ্যোগগুলোর অন্যতম। গত ২০ বছরে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধারমূলক ১২টি এএফসিপি প্রকল্পে ৮ লাখ ৭০ হাজার আমেরিকান ডলার এরও বেশি আর্থিক সহায়তা দিয়েছে।
পড়ুন: পানছড়িতে দিনব্যাপী কঠিন চীবর দান
ভ্যালি সিটি: পূণ্যভূমি সিলেটে বাংলাদেশের লন্ডনি পাড়া
পানছড়িতে দিনব্যাপী কঠিন চীবর দান
খাগড়াছড়ির পানছড়ি তারাবন ভাবনা কেন্দ্রে ৮ম দানোত্তম কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুই প্রু চৌধুরী অপু।
দিনব্যাপী অনুষ্ঠান মালার মধ্যে সকালে বৌদ্ধ নর-নারীদের পঞ্চশীল গ্রহণ, বৌদ্ধ মুর্তি দান, সংঘদান, অষ্ট পরিস্কার দান, চীবরদান, কল্পতরু দান ও বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পিন্ডদানসহ নানা বিধ দান করা হয়।
আরও পড়ুন: খাগড়াছড়িতে বৌদ্ধ বিহারে দানোত্তম কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠিত
অনুষ্ঠানে প্রধান ধর্মীয় আলোচক হিসেবে ছিলেন, সংঘ প্রধান শ্রীমৎ বৌধিপাল মহাস্থবির ভান্তে, রাঙ্গামাটি বনবিহারের আবাসিক প্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির, শ্রীমৎ জ্ঞান জ্যোতি ভান্তে ও তারাবন ভাবনা কেন্দ্রের বিহারাধ্যক্ষ আদি কল্যান স্থবির।
আরও পড়ুন: প্রবারণা পূর্ণিমা: পাহাড়ে সম্প্রীতির কল্প জাহাজ ভাসলো
দানোত্তম কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানে ধর্মীয় দেশনায় দেশ জাতি সকলের মঙ্গল কামনায় প্রার্থনা করা হয়।
খাগড়াছড়িতে বৌদ্ধ বিহারে দানোত্তম কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠিত
ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে ও নানা আনুষ্ঠানিকতায় খাগড়াছড়িতে ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধ বিহারে দানোত্তম কঠিন চীবর দান হচ্ছে।
শুক্রবার য়ংড বৌদ্ধ বিহারের দায়ক দায়িকাদের আয়োজনে সকাল থেকে শুরু হয়েছে দিনব্যাপী কঠিন চীবর দান উৎসব। এই উপলক্ষে দূর দূরান্ত থেকে পূণ্য সঞ্চয় করার জন্য শতশত পূণ্যার্থীরা বিহারে সমাগম হয়েছে।
কঠিন চীবর দান উপলক্ষে বিহারে বুদ্ধ পূজা, পঞ্চশীল গ্রহণ, সংঘদান, অষ্ট পরিস্কার দান, পানীয়, কল্পতরু দানসহ সকল দানীয় বস্তু দান করা হয়। এসময় ধর্মীয় গুরুরা পুণ্যার্থীদের উদ্দেশে য়ংড বৌদ্ধ বিহারের বিহারাধ্যক্ষ ভদন্ত কেমাসারা থের ধর্ম দেশনা দেন। এসময় জগতের সকল প্রাণীর সুখ শান্তি ও মঙ্গল কামনা করা হয়।
আরও পড়ুন: প্রবারণা পূর্ণিমা: পাহাড়ে সম্প্রীতির কল্প জাহাজ ভাসলো
অনুষ্ঠানে মং সার্কেলের রাজা সাচিংপ্রু চৌধুরী, মারমা সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান চাইথোই অং মারমা, মারমা ঐক্য পরিষদ নেতা ম্রাসাথোয়াই মারমা, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কল্যাণ মিত্র বড়ুয়াসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এসময় দায়ক দায়িকারা প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, ফুল-ফল, ছোয়াইং (খাবার) বৌদ্ধসহ ভান্তিদেরকে দান করেন। সন্ধ্যায় ভগবান বৌদ্ধের উদ্দেশে আকাশে প্রদীপ (ফানুস) উড়িয়ে দেয়া হবে।
আরও পড়ুন: ফ্রাঙ্কফুর্ট ৭৩তম আন্তর্জাতিক বইমেলা: বাংলাদেশ স্টলের উদ্বোধন
একইভাবে জেলা সদরের ধর্মপুর আর্য্য বন বিহারে দু’দিন ব্যাপী দানোত্তাম কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান শেষদিন শুক্রবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর আগে বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। খাগড়াছড়ি সদরের কল্যাণপুর মৈত্রী বৌদ্ধ বিহারে দায়ক দায়িকা ও উপাসক উপাসিকাদের আয়োজনে ২৯তম দানরাজা দানোত্তম কঠিন চীবর দানোৎসব হয়েছে।
আরও পড়ুন: ২০০ কেজি সোনায় কারুকার্যমণ্ডিত হতে যাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পবিত্র কোরআন
প্রসঙ্গত, আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে মহামতি গৌতম বুদ্ধের জীবদ্দশায় তার প্রধান সেবিকা মহা পূণ্যবর্তী বিশাখা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তুলা থেকে সুতা তৈরি করে সুতাগুলো রং করে বয়ন করে সেলাই শেষে চীবর বিশেষ পরিধেয় বস্ত্র দান কার্য সম্পাদন করেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মহা যঙ্গ সম্পাদন করার কারণে বৌদ্ধরা এই ধর্মীয় উৎসবকে কঠিন চীবর দান বলে থাকে।
প্রবারণা পূর্ণিমা: পাহাড়ে সম্প্রীতির কল্প জাহাজ ভাসলো
প্রবারণা পূর্ণিমা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব। এই উৎসবেরই একটা অংশ হচ্ছে ফানুস উড়ানো। ফানুসের আলোয় আলোকিত হওয়ার পর কল্প জাহাজ ভাসার আনন্দে মেতেছিল কক্সবাজারের রামুর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ।
বাঁশ, কাঠ, বেত ও রঙ-বেরঙের কাগজের কারু কাজে তৈরি দৃষ্টিনন্দন পাঁচটি কল্প জাহাজ ভাসালো রামুর চেরাংঘাট বাঁকখালী নদীতে। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের উৎসব হলেও এই দিন সনাতন, মুসলিম, খৃষ্টানসহ পর্যটকদের সম্প্রীতির মহা মিলনমেলায় পরিণত হয়।
সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পের এই সময়ে উৎসবটি অসাম্প্রদায়িক চেতনায় সম্প্রীতির মহা মিলনমেলায় পরিণত হয়। রামু কেন্দ্রীয় প্রবারণা ও জাহাজ ভাসা উৎসব উদযাপন পরিষদের আয়োজনে শত বছরের অধিক সময় ধরে চলা এ উৎসব যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মহা মিলনমেলা।
আরও পড়ুন: ফ্রাঙ্কফুর্ট ৭৩তম আন্তর্জাতিক বইমেলা: বাংলাদেশ স্টলের উদ্বোধন
দেখা গেছে, কক্সবাজারের রামুর বাঁকখালী নদীতে দৃষ্টিনন্দন কল্প জাহাজে হাতি, সিংহ, ঘোড়া, ময়ুর ভাসলো। ২৮ বুদ্ধের আসন ও বৌদ্ধ প্যাগোডার আকৃতিতে দৃষ্টিনন্দন কল্প জাহাজে ভাসলো এসব প্রাণী। পাঁচটি কল্প জাহাজে ঢোল, কাঁসর, মন্দিরাসহ নানা বাদ্যের তালে তালে শিশু-কিশোর ও যুবকরা মেতে ওঠে বাঁধভাঙা আনন্দে। রঙ-বেরঙের কাগজে আকর্ষণীয় নির্মাণ শৈলীতে নদীর এপার থেকে ওপারে পাঁচটি কল্প জাহাজে ‘বুদ্ধ কীর্তন’ ও নানা বাদ্যের তালে তালে নাচ চলে। আর নদীর দু’পাড় ছিল বৌদ্ধ, সনাতন, খৃষ্টান, মুসলিম ধর্মাবলম্বী নানা বয়সী মানুষে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মিলন মেলা। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার অংশগ্রহণে বারেবারেই ধর্মের সীমারেখা অতিক্রম করে এ উৎসব মূলত সার্বজনীনে পরিণত হয়।
আরও পড়ুন: রবীন্দ্র-নজরুল প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে নড়াইলে বিশেষ আয়োজন
সাম্প্রদায়িকতার বিষ বাষ্পের এ যুগে অসাম্প্রদায়িক চেতনার সম্প্রীতির মহা মিলনমেলায় পরিণত হয় এ জাহাজ ভাসা উৎসব। আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূণির্মা পর্যন্ত তিনমাস বর্ষাব্রত পালনের শেষদিন প্রবারণা পূর্ণিমা অত্যন্ত জমকালোভাবে পালনের ধারাবাহিকতায় চলে জাহাজ ভাসা উৎসব। প্রবারণা পূর্ণিমা পালনের পরদিন বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা থেকে ঐতিহ্যবাহী কল্প জাহাজ ভাসা উৎসব চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। শত বছরের অধিক সময়ের ঐতিহ্যবাহী এ জাহাজ ভাসা উৎসব যেন নির্মল আনন্দ এবং সৌহার্দ্য সম্প্রীতির সুদৃঢ় বন্ধন। এটাই হোক অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ নির্মাণের সহযোগী। এ উৎসবের মধ্যদিয়ে ছড়িয়ে পড়ুক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আসল বাংলাদেশের চিত্র।
আরও পড়ুন: ২০০ কেজি সোনায় কারুকার্যমণ্ডিত হতে যাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পবিত্র কোরআন
রামুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রণয় চাকমা বলেন, ‘শুধু বৌদ্ধ সম্প্রদায় নয়, সকল সম্প্রদায়ের মানুষ জাহাজ ভাসা উৎসবে যোগ দিয়েছেন। ধর্ম যার যার, উৎসব হোক সবার। যে যার ধর্ম পালন করবে, কেউ কারো ধর্মে আঘাত করবে না, এটাই হোক আমাদের শিক্ষা।’
কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনে সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, প্রবারণা দিবসে সজ্জিত জাহাজে করে বৈশালী নগরবাসীর অন্তহীন দুর্দশা দূর করে বিম্বিসার রাজগৃহে ফেরার পথে মানুষ, দেবতা, বক্ষ্রা, নাগ সবাই মহামতি বুদ্ধকে পূজা করেছিলেন। সেই হৃদয়স্পর্শী স্মৃতিকে অম্লান রাখতে শত বছর ধরে রামুতে জাহাজ ভাসা উৎসব লালন করে আসছে।
কালিদাস কর্মকারের স্মরণে গ্যালারি কসমসের দিনব্যাপী আয়োজন
একুশে পদক বিজয়ী আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পী কালিদাস কর্মকারের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার দিনব্যাপী কর্মসূচির মাধ্যমে তাকে স্মরণ করেছে গ্যালারি কসমস।
রাজধানীর মালিবাগের কসমস সেন্টারে গ্যালারি কসমস এবং কসমস আতেলিয়ার৭১ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
কালিদাস কর্মকার তার মনোমুগ্ধকর শিল্পকর্মের মাধ্যমে বাংলাদেশি শিল্প ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য প্রশংসিত। ২০১৯ সালের ১৮ অক্টোবর ৭৩ বছর বয়সে কালিদাস কর্মকার মারা যান।
গ্যালারি কসমসের একজন উপদেষ্টা ছিলেন কালিদাস কর্মকার। স্মরণ সভায় কালিদাস কর্মকারের শুভাকাঙ্ক্ষীরা দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
আরও পড়ুন: শিল্পী কালিদাস কর্মকারের ৭৫তম জন্মবার্ষিকী রবিবার
আইয়ুব বাচ্চুর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ
কিংবদন্তি গায়ক, গিটারিস্ট, সুরকার, গীতিকার ও সংগীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ সোমবার। ২০১৮ সালের এই দিনে ৫৬ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান জনপ্রিয় সংগীত ব্যান্ড এলআরবি’র (লাভ রানস ব্লাইন্ড) প্রতিষ্ঠাতা ও ফ্রন্টম্যান আইয়ুব বাচ্চু।
১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের এই কিংবদন্তি, যিনি এবি নামেই বেশি পরিচিত।
মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় তার অনেক ভক্ত এবং সংগীত তারকা রক কিংবদন্তির প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
বাচ্চুর স্ত্রী ফেরদৌস চন্দনা আইয়ুব জানান, আইয়ুব বাচ্চুর স্মরণে একটি জাদুঘর তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে যেখানে তার ব্যবহৃত ৪০টি গিটার প্রদর্শন করা হবে।
পড়ুন: দেশের প্রথম ভাসমান মসজিদ ও সাতক্ষীরার একজন ইমামের গল্প
১৯৭৮ সালে চট্টগ্রামের স্থানীয় ব্যান্ড ‘ফিলিংস’-এ যোগ দেয়ার মধ্য দিয়ে ব্যান্ড জগতে প্রবেশ করেন আইয়ুব বাচ্চু। এরপর ১৯৮০ সালে তিনি যোগ দেন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ‘সোলস’ ব্যান্ডে। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত তিনি এই ব্যান্ডের সাথেই যুক্ত ছিলেন। পরে ১৯৯১ সালে গড়ে তোলেন ব্যান্ডদল এলআরবি।
মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এলআরবি’র মূল কন্ঠশিল্পী ভোকাল ছিলেন আইয়ুব বাচ্চু।
‘আম্মাজান’, ‘আমি তো প্রেমে পড়িনি’, ‘আমি কষ্ট পেতে ভালোবাসি’, ‘সেই তুমি’, ‘ফেরারি এই মনটা আমার’, ‘চলো বদলে যাই’, ‘এখন অনেক রাত’, ‘হাসতে দেখো গাইতে দেখো’ সহ আরও অসংখ্য জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা তিনি।
পড়ুন: তোগুড়: তরমুজের রস দিয়ে বানানো নতুন গুড়
নাজমুন নাহার: পৃথিবীর ১৫০তম দেশ ভ্রমণ করে ইতিহাস সৃষ্টিকারী বাংলাদেশি পরিব্রাজক