%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A5%E0%A7%8D%E0%A6%AF-%E0%A6%93-%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A5%E0%A6%A4%E0%A6%BE
আন্তর্জাতিক নারী উদ্যোক্তা সম্মেলন ২০২২: ‘হেলথ ও ওয়েলনেস’ সেশনে গুরুত্ব পেয়েছে মানসিক স্বাস্থ্য
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ-ভারত বিজনেস কাউন্সিল (বিআইবিসি) ও উইমেনস ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র (ডব্লিউআইসিসিআই) যৌথ উদ্যোগে প্রথমবার অনুষ্ঠিত হল আন্তর্জাতিক নারী উদ্যোক্তা সম্মেলন ২০২২। ‘হেলথ ও ওয়েলনেস’ সেশনে উঠে এসেছে মানসিক স্বাস্থ্য, সামাজিক কুসংস্কার, নারীর বর্তমান অবস্থা শিশুদের স্বাস্থ্যসহ দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা।
দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলন বুধবার (২৩ নভেম্বর) রাজধানীর রেডিসন ব্লু হোটেলে উদ্বোধন করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
উদ্বোধনের দিন সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী পরিচালক লোকমান হোসেন মিয়া, বিআইবিসি’র প্রেসিডেন্ট মানতাশা আহমেদ, ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. মালিহা মান্নান আহমেদসহ অনেকে।
আরও পড়ুন: মানসিক রোগ সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৫% শিক্ষার্থী সচেতন: শাবিপ্রবির গবেষণা
ড. মালিহা মান্নান আহমেদের সঞ্চালনায় ‘হেলথ ও ওয়েলনেস’ সেশনে আলোচনা করেন বিডার নির্বাহী পরিচালক লোকমান হোসেন মিয়া, বুশরা আলম, রুনা খান, জাহিদা ফিজ্জা কবির, ড. রুমানা দৌলা, আরিফ মাহমুদ, মৌসুমী ইসলাম।
‘হেলথ ও ওয়েলনেস’ সেশনে আলোচনা শুরু হয় ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সিনিয়র হেলথ স্পেশালিস্ট ডা. বুশরা আলমের বক্তব্য দিয়ে। উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য বলতে আমরা শারীরিক অবস্থাকেই সাধারণত বুঝি। কিন্তু আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়ে আলাদাভাবে আলোচনা কম। সামাজিক কুসংস্কারের কারণে এটাকে আমরা প্রতিনিয়ত লুকাই। তবে করোনার পরবর্তীতে এ নিয়ে খোলামেলা আলোচনার পরিবেশ কিছু তৈরি হয়েছে।’
সমাজে নারীদের অবস্থান প্রসঙ্গে ডা. বুশরা আলম বলেন, ‘বর্তমানে নারীরা দেশের উন্নয়নে বিভিন্ন ভূমিকা রাখছে। আমরা চেষ্টা করছি নারীদের কাজের অগ্রগতিকে কীভাবে আরও সামনে নিয়ে আসতে পারি। এটা শুধুমাত্র উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরির বিষয় নয়। বরং এর চেয়েও বেশি। নারীরা পাবলিক যানবাহনে করে তাদের কর্মস্থলে যাতায়াত করে। কিন্তু সেখানে তাদের অবস্থা কী? সেখানে তারা প্রতিনিয়ত হেনস্থার শিকার হচ্ছেন। এক্ষেত্রে পুরষদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। কারণ সবার সম্মিলত প্রচেষ্টায় পরিবর্তন আসে।’
আরও পড়ুন: কোন দেশে বেশি স্মার্টফোন ব্যবহার, বেশি মানসিক রোগ?
আলোচনার দ্বিতীয় বক্তা ফ্রেন্ডশিপ এনজিও’র প্রতিষ্ঠাতা রুনা খান। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে তার কাজ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ’২০ বছর আগে আমি এমন একটা বিষয় নিয়ে কাজ শুরু করি যখন দেশে প্রায় ৪০ হাজার এনজিও ছিল। কিন্তু শিশুদের নিয়ে কাজ করার কাউকে তেমন পাইনি। আমি দেখেছি, একজন শিশুর হয়তো ডায়রিয়া হয়েছে, কিন্তু তার মা মাত্র পাঁচ টাকার জন্য শিশুটিকে সেলাইন খাওয়াতে পারছে না। ২০ বছর আগে শিশুদের জন্য ভ্রাম্যমাণ হাসপাতালের কাজটা বেশ কঠিন ছিল। কিন্তু আমাদের প্রত্যয় ছিল কাজটিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। সেখান থেকে আমরা স্যাটেলাইট হাসপাতাল পর্যন্ত এসেছি।’
সাজেদা ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জাহিদা ফিজা কবীর বলেন, ‘সাজেদা ফাউন্ডেশন ব্যতিক্রম একটি উদ্যোগ। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রেনাটার অর্থে এটা চলে। রেনাটার মুনাফার ৫১ শতাংশ এই সাজেদা ফাউন্ডেশনে খরচ করা হয়। এটি দারিদ্র্য বিমোচন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, জীবনমান উন্নয়নে কার্যক্রমসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করছে। বর্তমানে আমরা মানসিক স্বস্থ্য নিয়েও কাজ করছি। যেটি আজকের আলোচনার অন্যতম অংশ।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রায় আট বছর আগে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আমরা কাজ শুরু করি। যখন দেখেছি আমাদের এখানে এ নিয়ে আন্তর্জাতিক মানের সেবা নেই। সেখান থেকেই আমাদের চিন্তা এলো এমন একটি সেবায় বিনিয়োগ করার বিষয়। যেখানে আমরা আন্তর্জাতিক মানে সেবা প্রদান করতে পারব। এক্ষেত্রে সরকারের সহযোগিতা পেয়েছি।’
আরও পড়ুন: মানসিক বিকাশে শিশুর সঙ্গে মা-বাবার টেলিভিশন দেখা হতে পারে উপকারী
বাংলাদেশে প্যালিয়েটিভ অ্যান্ড সাপোর্ট কেয়ার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ডা. রুমানা দোলা সেশনে কথা বলেন দেশে প্যালিয়েটিভ কেয়ারের অবস্থা প্রসঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের দুরারোগ্য ব্যাধিতে প্রতি বছর অনেক মানুষ ভোগে। যার জন্যই প্যালিয়েটিভ কেয়ারের প্রয়োজনীয়তা। অনেকেই আছেন দীর্ঘদিন হৃদরোগ, ক্যান্সার, শ্বাসতন্ত্রের রোগ, এইডস, ডায়াবেটিকে ভুগছেন, এমনকি অনেকে একসময় তীব্র যন্ত্রণায় ভোগেন। প্যালিয়েটিভ কেয়ার এই ধরনের রুগীদের মৌলিক স্বাস্থ্যসেবার অংশ।’
বাংলাদেশে চিকিৎসা সেবা প্রসঙ্গে নিয়ে এভারকেয়ার হাসপাতালের মেডিকেল সার্ভিসের পরিচালক আরিফ মাহমুদ বলেন, ‘চিকিৎসা সেবা দেয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। করোনার সময় আমরা বিষয়টি আরও লক্ষ্য করেছি। তখন বিদেশি যাওয়া বন্ধ ছিল, জনগনকে হয়তো সরকারি বা বেসরকারি চিকিৎসা নিতে হয়েছে। আর আমরা কিন্তু পেরেছি। তবে বর্ডার খুলে দেয়ার পর আবারও মানুষ চিকিৎসার জন্য বাইরে যাচ্ছে। সেটার দুটি কারণ, প্রথমত বাংলাদেশে যেসব চিকিৎসা সম্ভব। দ্বিতীয়ত অনেকের অভিযোগ আমাদের দেশের অনেক ডাক্তার রোগীর বিষয়ে মনযোগী নন। দুটি বিষয়ের উন্নতির জন্য এরই মধ্যে কাজ হচ্ছে।’
বাংলাদেশে মেডিকেল যন্ত্রাংশ ব্যবসায় নিজের উদ্যোগ প্রসঙ্গে প্রমিস্কো গ্রুপের নির্বাহি পরিচালক মৌসুমী ইসলাম বলেন, ‘একজন নারী উদ্যোক্তার হিসেবে আমার শুরু পথটা বেশ কঠিন ছিল। কিন্তু আমি সৌভাগ্যবান, এই কাজে আমি অনেককে বন্ধুর মতো পাশে পেয়েছি। যাদের জন্য আমি এগিয়ে যেতে পেরেছি। বাংলাদেশের অত্যাধুনিক মেডিকেল যন্ত্রাংশ আসার সময়টা কিন্তু নতুন। ২০১৫ থেকে আমরা মেডিকেল যন্ত্রাংশ তৈরি করে আসছি। করোনার সময় আমরা প্রমাণ করেছি বাংলাদেশেরও বিশ্বমানে মেডিকেল যন্ত্রাংশ তৈরি করা সম্ভব।’
আরও পড়ুন: উন্নত দেশ গড়তে ‘ইজ অফ ডুয়িং বিজিনেস’ সূচক উন্নয়নের বিকল্প নেই: বিডা
বিডার নির্বাহী পরিচালক লোকমান হোসেন মিয়া ২০২২ আন্তর্জাতিক নারী উদ্যোক্তা সম্মেলনের আলোচনা সেশনে বলেন, ‘এই সম্মেলন নারী উদ্যোক্তাদের ভালো একটি সুযোগ আমি মনে করি। যারা অংশগ্রহণ করেছেন সবার মনোবল ও আত্মবিশ্বাস আরও বাড়বে বিশ্বাস করি। এ সম্মেলন নারী উদ্যোক্তাদের মনোবল আরও দৃঢ় ও সাহসী করবে। এ সম্মেলনে চার হাজার নারী উদ্যোক্তা ও প্রায় ৪০টি দেশের পেশাজীবী ও বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিগণ অংশগ্রহণ করছেন।’
বিজয় দিবস উপলক্ষে আবারও ৭ দিনের টিকা ক্যাম্পেইন
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, আসন্ন বিজয় দিবস উপলক্ষে দেশব্যাপী সাত দিনের বিশেষ টিকা ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি বলেন, সামনে বিজয় দিবস আসছে, এই উপলক্ষে টিকার ক্যাম্পেইনের উদ্যোগ নিয়েছি। এটি পহেলা ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে, চলবে ডিসেম্বরের ৭ তারিখ পর্যন্ত।
আরও পড়ুন: দেশেই স্থানীয়ভাবে করোনা টিকা তৈরির প্রচেষ্টার অগ্রগতি হচ্ছে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর হোটেল লা মেরিডিয়ানে আয়োজিত বিশ্ব অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী আরও বলেন, বিশেষ এই টিকা ক্যাম্পেইনে ৯০ লাখ লোককে টিকা দেয়া হবে। আমরা এর আগে যতগুলো ক্যাম্পেইন করেছি, সবগুলোই সফল হয়েছে। আশা করি এটিও সফল হবে।
এছাড়া আমরা এ পর্যন্ত ১৪ কোটি ৬৯ লাখ মানুষকে প্রথম ডোজ টিকা আমরা দিয়েছি।
১২ কোটিরও বেশি দ্বিতীয় ডোজ দিয়েছি।
আরও পড়ুন: প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের টিকার ক্যাম্পেইন বাড়ল আরও ৩ দিন
স্ট্রোক চিকিৎসা সেবায় রুপান্তর নিয়ে আন্তর্জাতিক সায়েন্টেফিক সেমিনার
দক্ষ, অভিজ্ঞ, মেধাবী বাংলাদেশিরা ছড়িয়ে আছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। এদের অনেকেই যে যার ক্ষেত্রে কাজ করছেন সুনামের সঙ্গে। এমনই কিছু বাংলাদেশের চিকিৎসক গেল ২০২০ সালের জুলাই মাসে গড়ে তোলেন প্ল্যানেটরি হেলথ অ্যাকাডেমিয়া- পিএইচ এ নামে একটি সংগঠন।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সুইডেন, কানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, অষ্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডসহ আরও বেশ কয়েকটি দেশের দেড়শ’র বেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, গবেষক যাদের লক্ষ্য দেশের চিকিৎসক- স্বাস্থ্য গবেষকদের সঙ্গে বিদেশে থাকা বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকদের সেতুবন্ধন তৈরি করা। যে সেতুবন্ধনে ভাবনা, অভিজ্ঞতা বিনিময় করা যাবে- কমিয়ে আনা যাবে জানা-বোঝার দূরত্ব।
একইসঙ্গে বাংলাদেশের তরুণ চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত হবার সুযোগও তৈরি হবে। এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে পিএইচএ এরইমধ্যে দুই বছরেরও বেশি সময়ে অনেকখানি এগিয়েছে।
সময়ের সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির যেমন হচ্ছে তেমনি বাড়ছে নানারকম অসংক্রামক রোগে মৃত্যুর সংখ্যাও।
গত শুক্রবার গ্র্যান্ড সিলেট হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টে প্ল্যানেটরি হেলথ অ্যাকাডেমিয়া আয়োজন করে সায়েন্টেফিক কনফারেন্সের পিএইচ চেয়ারপার্সন ড. তাসবিরুল ইসলামের উদ্বোধনী বক্তব্য দিয়ে শুরু হওয়া দিনব্যাপী কনফারেন্সে বিভিন্ন বিষয়ে তিনটি সেশন অনুষ্ঠিত হয়।
আরও পড়ুন: স্তন ক্যান্সার সচেতনতায় গোলাপি সড়ক শোভাযাত্রা ও সেমিনার
জানা গেছে,শুক্রবার, ১১ নভেম্বর গ্র্যান্ড সিলেট হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টে সায়েন্টেফিক কনফারেন্সে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আনোয়ার হোসেন হাওলাদার। বিশেষ অতিথি জাতীয় নিউরোসায়েন্সে হাসপাতাল ও ইন্সটিটিউট এর পরিচালক ও বাংলাদেশ কলেজ অফ ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস-বিসিপিএস এর সভাপতি ড. কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, স্বাস্থ্যশিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালক ড. এ কে এম আমিরুল মোরশেদ, সোসাইটি অফ নিউরোলজিস্ট এর সভাপতি অধ্যাপক ড. ফিরোজ আহমেদ কোরেশি, এম এ জি ওসমানি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ড. মইনুল হক উপস্থিত ছিলেন।
ড. তাসবিরুল ইসলাম বলেন, পিএইচএ সব সময় চায় সমসাময়িক উদ্ভাবন ও অভিজ্ঞতা দেশের চিকিৎসকদের সঙ্গে আদান- প্রদান করতে।
বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য গবেষণার সঙ্গে তরুণ ও মেধাবীদের সংযোগও ঘটাতে সংগঠনটির নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন তিনি। বিশেষ করোনা মহামারিতে পিএইচএ দূরে বসেও বাংলাদেশের চিকিৎসকদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার অভিজ্ঞতাও বলেন ড. তাসরির।
তিনি বলেন, স্ট্রোকের ভয়াবহ পরিণাম ও বাড়তে থাকা রোগীর সংখ্যা উদ্বেগ জাগাচ্ছে সব মহলে,একইভাবে স্ট্রোক চিকিৎসাতেও রুপান্তর ঘটানোর সুযোগ আছে। এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে কিভাবে সম্পৃক্ত করা যায়।
এ প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন- সচেতনতার কোন বিকল্প নেই।
আরও পড়ুন: রোগীর প্রেসক্রিপশনে ওষুধের নাম ইংরেজি বড় অক্ষরে লিখতে হবে: বিএসএমএমইউ উপাচার্য
কনফারেন্সে নিউরোলজির প্রায় দেড়শ’ চিকিৎসক দেশের ও বিদেশের ১৬ জন বিশেষজ্ঞের বিভিন্ন সেশনে অংশ নেন। সবকটি সেশন শেষে অতিথি ও প্যানেলিস্টদের মাঝে প্রশ্নোত্তর পর্বও অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম সেশনে ন্যাশনাল হেলথ সিস্টেম,এনএইচএস যুক্তরাজ্যের হেমাটোলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ড. আমিন ইসলাম স্ট্রোকে দ্রুত চিকিৎসার গুরুত্ব নিয়ে কথা বলেন। চারটি বাস্তব উদাহরণে তিনি দেখান কিভাবে প্রাথমিক অবস্থাতেই সঠিক চিকিৎসা রোগীর জীবন বাঁচিয়েছে।
তিনি বলেন, প্রথম চার ঘন্টা অত্যন্ত নাজুক। যত সময় যেতে থাকে স্ট্রোক রোগীর নিউরন ক্ষতিগ্রস্থ হতে থাকে।
অন্যান্য সেশনে বক্তা হিসেবে ছিলেন, যুক্তরাজ্যের দি রয়্যাল লন্ডন হসপিটাল,বারটস হেলথ এনএইচএস ট্রাস্ট এর কনসালটেন্ট ড. অলিভার স্পুনার, যুক্তরাজ্যের স্ট্রোক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ড. ডেভিড হারগ্রোভ, যুক্তরাজ্যের কেন্টের স্ট্রোককেয়ার বিশেষজ্ঞ ড. সাইদুর রহমানসহ অন্যরা।
প্রধান অতিথি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, স্ট্রোক প্রতিরোধযোগ্য একটি রোগ। প্রতিকারওযোগ্য বটে। স্ট্রোকের রোগীকে দ্রুত চিকিৎসা দেয়া গেলে পুরোপুরি সুস্থ করে তোলা সম্ভব।
বিশেষ অতিথি ড. কাজী দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে স্ট্রোক মৃত্যুর অন্যতম কারণ। তাই এর আধুনিক চিকিৎসা জানা থাকা জরুরি হয়ে পড়েছে।’ ভবিষ্যতের যেন বহু মানুষ স্ট্রোকে পঙ্গুত্ব বরণ করে দেশের জন্য বোঝা না হয় তাই বৈশ্বিক স্ট্রোক চিকিৎসা গাইডলাইন ও প্রটোকল এখানেও প্রয়োগ করার ওপর জোর দেন তিনি।
অধ্যাপক ড.কোরেশী বলেন, ‘গেল কয়েক বছরে স্ট্রোকের চিকিৎসায় অসামান্য অগ্রগতি হয়েছে। উন্নত বিশ্বে রোগীর চিকিৎসা শুরু হয় বাড়িতেই। সেখানে জনসাধারণ স্ট্রোকের লক্ষণগুলো জানেন ও সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেন। এতে বহু মানুষ যেমন প্রাণে বেঁচে যান। পঙ্গুত্বের হাত থেকেও রক্ষা পান’।
স্ট্রোক নিয়ে সায়েন্টেফিক কনফারেন্সের সায়েন্টেফিক সহযোগী হিসেবে ছিল ইনসেপটা ফার্মাসিউটিক্যালস ও ইউনাইটেড হাসপাতাল।
আরও পড়ুন: মার্কিন প্রাপ্তবয়স্কদের নিয়মিত উদ্বেগ মূল্যায়ন করা উচিত: বিশেষজ্ঞ দল
স্তন ক্যান্সার সচেতনতায় গোলাপি সড়ক শোভাযাত্রা ও সেমিনার
‘পদ্মা পেরিয়ে দক্ষিণ বাংলায়’- এই স্লোগান নিয়ে বাংলাদেশ স্তন ক্যান্সার সচেতনতা ফোরাম ‘স্তন ক্যানসার সচেতনা দিবস’- ২০২২ উপলক্ষে গোলাপি সড়ক শোভাযাত্রা করেছে।
শনিবার (২৯ অক্টোবর) ঢাকা থেকে শুরু হওয়া শোভাযাত্রাটি রবিবার (৩০ অক্টোবর) রাতে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে এসে পৌঁছায়। সোমবার (৩১ অক্টোবর) সকালে কালীগঞ্জের সমবায় ভিত্তিক স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান প্রকৃতি মেডিকপস্ হাসপাতালের আয়োজনে বলিদাপাড়া গ্রামে সেমিনার, স্তন ক্যান্সার সচেতনা ও স্ক্রিনিং বিষয়ে সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
এছাড়াও সকাল থেকে স্তন ক্যান্সার আক্রান্ত ২৩ জন রোগী দেখা হয়।
আরও পড়ুন: ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ, নির্ণয়ের প্রক্রিয়া, চিকিৎসা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ক্যান্সার ইপিডেমিওলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন এর নেতৃত্বে চিকিৎসকসহ ২২জনের একটি টিম এই শোভাযাত্রা ও সেমিনারে অংশ নেন।
বক্তব্য রাখেন সেচ্ছাসেবী সমাজ কল্যান সংস্থা হীল এর জেবুন নেছা, প্রকৃতি মেডিকপস্ হাসপাতালের সহভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রভাত ব্যানার্জী, হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ডের প্রোগ্রাম অফিসার শাহজাহান আলী বিপাশ প্রমুখ।
সেমিনারে প্রিভেনশন অব ক্যান্সার, আর্লি ডায়াগনোসিস, স্ক্রিনিং ইত্যাদির গুরুত্ব তুলে ধরেন চিকিৎসকরা।
এ সময় বক্তরা বলেন, সার্জিক্যাল ক্যান্সারের জন্য স্ক্রিনিংয়ের জন্য সারা দেশে চারশটি ভায়া সেন্টার তৈরি করা হয়েছিল। সেখানেই ব্রেস্ট ক্যান্সারের স্ক্রিনিং করা যায়। যা অনেকে জানে না।
আরও পড়ুন: রোগীর প্রেসক্রিপশনে ওষুধের নাম ইংরেজি বড় অক্ষরে লিখতে হবে: বিএসএমএমইউ উপাচার্য
আত্মহত্যার প্রবণতা: কারণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধ
রোগীর প্রেসক্রিপশনে ওষুধের নাম ইংরেজি বড় অক্ষরে লিখতে হবে: বিএসএমএমইউ উপাচার্য
রোগীদের সেবার জন্য অবশ্যই ব্যবস্থাপত্রে (প্রেসক্লিপশন) ওষুধের নাম ইংরেজি বড় অক্ষরে লিখতে হবে বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসকদের অবশ্যই রোগীবান্ধব মানসিকতা নিয়ে সেবা দিতে হবে। রোগীদের সেবার জন্য অবশ্যই ব্যবস্থাপত্রে (প্রেসক্লিপশন) ওষুধের নাম ইংরেজি বড় অক্ষরে লিখতে হবে। যাতে রোগী ও ফার্মেসির ওষুধ বিক্রেতা সহজেই বুঝতে পারেন। এজন্য আমি আরএস ও আরপিকে নির্দেশনা দিয়েছি। তারা এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করবে বলে বিশ্বাস করি।’
বুধবার (২৬ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্হিবিভাগ-২ বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকুলার বায়োলজি বিভাগে অনলাইন রিপোর্টিং কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রথমবারের মত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ফলাফল অনলাইনে প্রকাশ কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করা হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকুলার বায়োলজি বিভাগে রোগীর স্বাস্থ্যের প্রায় ১০০ ধরণের পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়।
বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মাসুম আলমের নেতৃত্বে অনলাইন রিপোর্টিং এ সফটওয়ার নির্মাণ করা হয়। এ অনলাইন রিপোর্টিং এর মাধ্যমে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ফল স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে রোগীর মোবাইল ও ই-মেইল আইডিতে পৌঁছে যাবে।
আরও পড়ুন: বিএসএমএমইউতে এনটি-প্রো বিএনপি পরীক্ষা চালু
এর জন্য রোগীকে পরীক্ষার স্যাম্পল বা নমুনা প্রদানের সময় ছোট একটি ফরমে রোগীর নাম ও ই-মেইল আইডি লিখতে হবে। এ অনলাইন রিপোর্টিং কার্যক্রমের ফলে রোগীকে ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষা নিরীক্ষার সেবা প্রদান করা যাবে।
২৪ ঘণ্টার মাঝেই রোগীর স্বাস্থ্য রিপোর্টরে ফল অনলাইনে প্রদান করা সম্ভব হবে।
প্রতিদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সব মিলে নয় হাজার রোগী সেবা নিতে আসেন। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগে আট হাজার রোগী প্রতিদিন সেবা নিতে আসত । বর্তমানে আগত রোগীদের মধ্যে প্রায় আড়াই হাজার রোগী বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকুলার বায়োলজি বিভাগে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য আসেন। এসব রোগীরা অনলাইনে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ফল গ্রহণের মাধ্যমে যেমন তারা সময় বাঁচাতে পারবে তেমনে যাতায়াত ভাড়াও বাঁচাতে পারে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শারফুদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এ অনলাইন সেবা কার্যক্রমের উদ্বোধনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়ের স্বপ্ন যাত্রায় উঠে পড়েছে।
বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন আরেকটি ধাপে উন্নীত হল।
তিনি বলেন, এর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ইতিহাস যোগ হলো।
এছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ফলাফল কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে সকল বিভাগে অতি দ্রুত চালু করা হবে।
বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মাসুম আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়েল বেসিক সাইন্স ও প্যারাক্লিনিক অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. শিরিন তরফদার, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল, এনাটমি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. লায়লা আনজুমান বানু, বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. মতিউর রহমান, অধ্যাপক ডা. ফরহাদুল হক মোল্লা বক্তব্য দেন।
এসময় বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, চিকিৎসক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও নার্স, কর্মচারী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: ৮৮ শতাংশ করোনা রোগী ওমিক্রনে আক্রান্ত: বিএসএমএমইউ’র জরিপ
বিএসএমএমইউতে আগুন
আত্মহত্যার প্রবণতা: কারণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধ
সাম্প্রতিক কিছু দুঃখজনক আত্মহত্যার ঘটনা পৃথিবীর উচ্চ আত্মহত্যা প্রবণতার দেশগুলোর তালিকায় নিয়ে এসেছে বাংলাদেশকে। ব্যাধিটা যখন মনের তখন স্বাভাবিকভাবেই তা সবার অলক্ষ্যে থেকে যায়। শারীরিক রোগ-বালাইয়ের মত তেমন গুরুত্বের সাথে নেয়া হয় না নিরাশা অথবা ভয়ের মত মানসিক অবস্থাগুলোকে। কিন্তু আত্মহত্যার মত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাকে কমাতে হলে এ নিয়ে প্রচুর আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। তাই সতর্ক হতে চলুন জেনে নেই আত্মহত্যার কারণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধ সম্বন্ধে।
তরুণ প্রজন্মের মাঝে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধির কারণ
নিজেকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়ার ধারণাটা গভীর হয়ে উঠতে পারে, যখন ব্যক্তি মনে করেন, যে তিনি তার চারপাশের অপ্রতিরোধ্য পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে আর সক্ষম নন। হতে পারে এটি আর্থিক সমস্যা, প্রিয়জনের মৃত্যু, কোন সম্পর্কের অবসান বা কোন জটিল রোগ বা শারীরিক সীমাবদ্ধতা।
যে কারণগুলো তরুণ প্রজন্মকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিচ্ছে সেগুলো হলো-
· পরিবারের কোন সদস্য/সদস্যদের সাথে মনোমালিন্য
· শারীরিক নির্যাতন, অবহেলা বা মানসিক আঘাত
· জন্ম থেকেই কোন মানসিক সমস্যা
· আত্মহত্যা করেছে এমন কাউকে জানা, এবং তাকে নিয়ে গভীর ভাবে চিন্তা করা
· নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির মানুষের সাথে চলাফেরা করা
· বেপরোয়া বা অতি আবেগপ্রবণ হওয়া
· সার্বক্ষণিক নির্জনতা বা একাকীত্ব অনুভব করা
· মানসিক সমস্যাগুলোর জন্য কারো মনোযোগ না পাওয়া
· কর্ম বা শিক্ষা ক্ষেত্রে ভয়াবহ জটিলতা বা ক্ষতিসাধন
· বন্ধু-বান্ধব বা প্রিয়জনের বড় কোন ক্ষতিসাধন
· শারীরিক অসুস্থতা বা জন্মগত কোন স্বাস্থ্য সমস্যা
· ভয় বা কলঙ্কের কারণে সাহায্য চাইতে লজ্জাবোধ
· জাতি, গোষ্ঠী, ধর্ম ও বর্ণ বৈষম্যের শিকার হওয়া এবং কুসংস্কারের কারণে দুশ্চিন্তা
· সভ্যতা ও সংস্কৃতির ধ্বংসের কারণে ঐতিহাসিক ট্রমার মধ্যে থাকা
· মাদকাসক্ত থাকা
· আইনি ঝামেলা বা ঋণগ্রস্ততা
আরও পড়ুন: ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ, নির্ণয়ের প্রক্রিয়া, চিকিৎসা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
আত্মহত্যা প্রবণ ব্যক্তিকে শান্ত করার উপায়
· তাৎক্ষণিকভাবে তার আবেগ ও অনুভূতি সম্পর্কে সরাসরি জিজ্ঞাসা করতে হবে। এমন সময় যদিও অনেক ক্ষেত্রে এটা কাজ না করতে পারে। কিন্তু মনপ্রাণ দিয়ে তার যা বলার আছে তা শোনা হলে এবং গুরুত্ব সহকারে নেয়া হলে অবস্থার উন্নতি হতে পারে।
· তাকে উন্মু্ক্তভাবে যোগাযোগের জন্য একটি আরামদায়ক জায়গা দিতে হবে। তার লজ্জা, অপরাধবোধগুলোকে ইতিবাচক দিক দিয়ে তার কাছে তুলে ধরতে হবে। কারণ আত্মহত্যার চেষ্টা করতে যাওয়া ব্যক্তিরা এমনিতেই ভেতরে ভেতরে অনেক লজ্জিত, অপরাধী বা বিব্রত বোধ করেন। দোষ-ত্রুটি ধরে নয়; সমর্থন দিয়ে সহজ ভাষায় তাকে বোঝাতে হবে। মতামত প্রকাশের সময় তার কথা মনোযোগ সহকারে শুনতে হবে। এ সময় যে কোন ধরনের বিতর্কে জড়ানোটা এড়িয়ে যেতে হবে।
· তার আবেগ-অনুভূতির ব্যাপারে শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। তবে অনুভূতিগুলোর মূল্য দিতে যেয়ে তাকে পৃথিবীর একমাত্র দুঃখী মানুষে পরিণত করা যাবে না। বরং আবেগগুলোর গঠনমুলক প্রয়োগের ব্যাপারে কথা বলতে হবে। আর এ সময় সেই প্রায়োগিক কার্যক্রমের সাবলিলতা ফুটিয়ে তুলতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, যে আত্মহত্যা প্রবণ ব্যক্তি যৌক্তিকভাবে চিন্তা না করলেও, তার আবেগগুলো বাস্তব। সেগুলো কোন ভাবেই মূল্যহীন হিসেবে প্রকাশ করা যাবে না। এতে পারস্পরিক যোগাযোগ ব্যাহত হতে পারে এবং ব্যক্তিটি নিজেকে নিজের মধ্যে আরো গুটিয়ে নিতে পারে।
আরও পড়ুন: চোখ উঠা রোগের লক্ষণ, কারণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
· আবেগের মূল্য দিয়ে যেয়ে তার আত্মহত্যার অনুভূতি গোপন রাখার প্রতিশ্রুতি দেয়া যাবে না। কারো জীবন বিপদের মধ্যে থাকলে এমন প্রতিশ্রুতি রাখা অবান্তর। বরং আরো কারো জানার ফলে যদি উপকার হয় তবে তা করাই উত্তম। এ বিষয়টি তাকে বুঝিয়ে বলতে হবে। এমনকি এ কাজে তাকেও সহযোগিতা করার অনুরোধ করতে হবে।
· যখন কেউ আত্মহত্যা করতে উদ্যত হয়, তখন তার মনে হয় এ থেকে উত্তরণের সব পথই বন্ধ। এ অবস্থা থেকে তাকে বের করার জন্য পরিস্থিতি মোকাবেলা করার সমূহ উপায়ের কথা তাকে জানাতে হবে। এক্ষেত্রে যারা ইতোমধ্যেই এই অবস্থা থেকে উতড়ে যেতে পেরেছে তাদের জীবনের গল্পকে অনুপ্রেরণা হিসেবে ব্যক্ত করা যেতে পারে। সহজ রাস্তা পাওয়ার ফলে সে আবার জীবন নিয়ে চিন্তা শুরু করতে পারে।
· তাকে মাদক ব্যবহার এড়াতে উৎসাহিত করতে হবে। এ অবস্থায় ড্রাগ বা অ্যালকোহল ব্যবহার করা বেদনাদায়ক অনুভূতিগুলোকে সহজ করে বলে মনে হতে পারে। কিন্তু দিন শেষে তা সবকিছুকে আরও খারাপ করে তোলে। ফলে তা বেপরোয়া আচরণ বা আরও বিষণ্ন বোধের দিকে ধাবিত করতে পারে। এক্ষেত্রে তাকে তার জীবনের সবথেকে প্রিয় কাজগুলো করার দিকে প্রলুব্ধ করা যেতে পারে। সে কাজগুলো করার সময় ধৈর্য্য ধরে তার সাথে পুরোটা সময় থাকতে হবে। সে যেন কিছুতেই ড্রাগ ব্যবহারের সুযোগ না পায় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে এখানে তার প্রিয়জনদের সাহায্য নেয়া যেতে পারে।
আরও পড়ুন: রাজধানীতে গায়ে আগুন দিয়ে রিকশাচালকের আত্মহত্যা!
· সম্ভব হলে তার হাতের কাছ থেকে আত্মহত্যার জন্য সম্ভাব্য বিপজ্জনক আইটেমগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে। যেমন ছুরি, ক্ষুর, বন্দুক বা মাদক। এমনকি সাধারণ ওষুধও সরিয়ে ফেলতে হবে। তার শারীরিক উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় ঔষধগুলোর সঠিক ডোজ সরবরাহের জন্য তার সাথে বেশি সময় নিয়ে থাকতে হবে। এর জন্য তার প্রিয়জনদের সাহায্য এবং ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে।
আত্মহত্যা প্রতিরোধে করণীয়
আত্মহত্যার দিকে প্ররোচিত করে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি না করাটাই এর প্রতিরোধের উপায়। এর জন্য সামগ্রিক ভাবে তার চারপাশটা তার জন্য আরামদায়ক করে তোলা জরুরি। এর জন্য যে বিষয়গুলো সবচেয়ে বেশি সাহায্য করতে পারে তা হলো-
· পরিবার এবং সমাজের সবার সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ বজায় রাখা
· যে কোন সমস্যা সমাধান এবং বিরোধ মোকাবেলা করার উপায়গুলোর সহজলভ্যতা
· এমন বিশ্বাসের ভিত স্থাপন করা, যা আত্মহত্যাকে নিরুৎসাহিত করে এবং নিজেকে ভালবাসার প্রতি উৎসাহিত করে
· আত্মসম্মানবোধ এবং জীবনের নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নির্ধারণে সাহায্য করা
· সমাজের অন্যান্যদের প্রতি যত্নশীল হতে শেখানো। এতে সে অন্যান্যদের পক্ষ থেকেও যত্ন পাবে।
· তার চারপাশে এমন পরিবেশ গড়ে তোলা যেন ব্যক্তিগত সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলার ক্ষেত্রে সে কোন রকম দ্বিধা বোধ না করে
· মাদকাসক্তির ক্ষতিকর প্রভাবগুলো ব্যাপারে সচেতন করা
· নিয়মিত ব্যায়াম করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা
· নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রতি অনুপ্রাণিত করা
· প্রতিদিন কমপক্ষে ৬ থেকে ৭ ঘন্টা ঘুমের জন্য উৎসাহিত করা
· গান শোনা বা ভ্রমণের ব্যাপারে উৎসাহিত করা|
আরও পড়ুন: গলায় ফাঁস দিয়ে চাঁদপুরে শিশুর আত্মহত্যা!
আত্মহত্যা প্রতিরোধে সাংগঠনিক উদ্যোগ
মানুষকে আত্মহত্যা থেকে বিরত রাখতে সদা তৎপর ইয়েশিম ইকবালের সংগঠন ‘কান পেতে রই’। বাংলাদেশে আশঙ্কাজনকভাবে বাড়তে থাকা আত্মহত্যার প্রবণতাকে কমাতে ২০১৩ এর ২৮ এপ্রিল থেকে শুরু হয় এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা। এদের নির্দিষ্ট কিছু হেল্পলাইনের মাধ্যমে হতাশাগ্রস্ত মানুষের কল গ্রহণ করে শোনা হয় তাদের দুঃখের কথাগুলো। অতঃপর কল রিসিভ করা প্রশিক্ষিত পরিশ্রমী তরুণ স্বেচ্ছাসেবী তাদের কথাগুলো শুনে তাদের নিরাশা এবং আত্মহত্যার প্রবণতা দূর করতে পরামর্শ দেন। এই কাউন্সেলিং-এর জন্য কোন রকম ফি নেয়া হয় না।
আন্তর্জাতিকভাবে কাউন্সিলিং-এর স্বীকৃত মডেল বিফ্রেন্ডিং-এর মাধ্যমে মানুষের নানা জটিলতার সমাধান দেয়ার চেষ্টা করা হয়। এ সময় কর্মরত স্বেচ্ছাসেবীদের কলকারীদের পরিচয় সম্পর্কিত কোনো তথ্য জিজ্ঞাসা করার কোন নিয়ম নেই। কাজ শুরুর পূর্বে স্বেচ্ছাসেবীদের সাথে অত্যন্ত কঠোর গোপনীয়তা সংরক্ষণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে হয়।
কলকারি ব্যক্তিটি আবেগের বশে কোন ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করে ফেললেও তা নোট না করার জন্য প্রশিক্ষকরা স্পষ্ট নির্দেশনা থাকে। মূল কথা এখানে ব্যক্তি নয়; সমস্যা সমাধানই আসল। তাই কান পেতে রই’য়ের গ্রাহকদের মধ্যে কোন রকম অস্বস্তি নেই। বরং গ্রাহকদের রীতিমত নির্ভরতার জায়গা গড়ে উঠেছে সংগঠনটিকে ঘিরে।
আরও পড়ুন: স্মার্ট ফোন কিনে না দেয়ায় স্কুল ছাত্রের আত্মহত্যা!
পরিশিষ্ট
আত্মহত্যার প্রবণতাই যেখানে গোপন রয়ে যায়, সেখানে গোড়াতেই ধামা চাপা পড়ে যায় আত্মহত্যার কারণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধ সম্বন্ধে সতর্ক থাকার বিষয়গুলো। প্রতিনিয়ত রাজনৈতিক অস্থিরতা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও জনসংখ্যা সংক্রান্ত জটিলতার পাশাপাশি পরিবেশের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কারণে জীবন ধারণে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি হওয়াটা স্বাভাবিক। তাই অতিরিক্ত আবেগের বিড়ম্বনা ও নিরাশাকে রুখতে পরস্পরের মাঝে নৈতিকতার শিক্ষা ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের প্রথা গড়ে তোলা জরুরি।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ, নির্ণয়ের প্রক্রিয়া, চিকিৎসা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
ডেঙ্গুর ভয়াবহতা গত ২ দশক জুড়ে আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। স্মরণকালের সবচেয়ে মারণাত্মক কীটপতঙ্গ জনিত মানব রোগে পরিণত হয়েছে এই ডেঙ্গু, যা সবচেয়ে বেশি আঘাত হানছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে। বিশেষ করে বাংলাদেশে পেছনের সব রেকর্ড ভেঙে ডেঙ্গু প্রকট আকার ধারণ করেছে। তাই অনতিবিলম্বে ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ, নির্ণয়, চিকিৎসা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার ব্যাপারে সতর্ক হওয়া আবশ্যক।
ডেঙ্গু কি
ডেঙ্গু হলো এডিস গোত্রের স্ত্রী মশাবাহিত এক ধরনের ভাইরাস, যা ডেঙ্গি নামে পরিচিত। ভাইরাসটিতে সংক্রমিত মশার কামড়ের মাধ্যমে ডেঙ্গু জীবাণু মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়। কোন আক্রান্ত মানুষ থেকে আরেক মানুষে এই রোগ ছড়ায় না। তবে সংক্রমিত মানুষটিকে কামড়ানোর ফলে আক্রান্ত মশা অন্য মানুষকে কামড়ালে তখন সেই মানুষটি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়। ডেঙ্গি ভাইরাসে সংক্রমণের ফলে ডেঙ্গু জ্বর হয়। সংক্রমিত মশার সংস্পর্শে আসা সব বয়সের মানুষই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে এই ডেঙ্গু একটি বৈশ্বিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি সাধারণত গ্রীষ্মমন্ডলীয় ও উপকান্ত্রিয় অঞ্চল বিশেষত দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ আমেরিকার শহুর এবং মফস্বল শহরগুলোতে বেশি দেখা যায়। প্রতি বছর প্রায় ৪০ হাজার মানুষ মারা যায় ডেঙ্গু জ্বরে।
পড়ুন: নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকবে: বিশেষজ্ঞরা
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণগুলো হলো- হঠাৎ প্রচণ্ড জ্বর, তীব্র মাথাব্যথা, চোখের পিছনে ব্যথা, পেশি ও অস্থিসন্ধিতে গুরুতর ব্যথা, ক্লান্তি, বমি বমি ভাব, বমি, ত্বকে ফুসকুড়ি ওঠা (যা জ্বর শুরু হওয়ার ২ থেকে ৫ দিন পরে দেখা দেয়) এবং হালকা রক্তপাত (যেমন নাক ও মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া)।
এই লক্ষণগুলো সাধারণত সংক্রমণের ৪ থেকে ৬ দিন পরে শুরু হয় এবং ১০ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। কখনও কখনও লক্ষণগুলো এতটাই হালকা হয় যে ফ্লু বা অন্য কোনও ভাইরাল সংক্রমণের মত মনে হতে পারে।
ডেঙ্গুর গুরুতর মাত্রাগুলোর মধ্যে রয়েছে ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর, রক্তনালীগুলোর ক্ষতি, নাক এবং মাড়ি থেকে অধিক রক্তপাত, লিভার এবং সংবহনতন্ত্রের কার্যক্ষমতা হ্রাস পাওয়া। এই লক্ষণগুলো এতটাই ভয়াবহ যে তা মৃত্যুর দিকে টেনে নিয়ে যেতে পারে। এই অবস্থাকে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম (ডিএসএস) বলা হয়।
পড়ুন: চোখ উঠা রোগের লক্ষণ, কারণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল এবং সেইসাথে যাদের দ্বিতীয়বারের মত ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে, তাদের ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
ডেঙ্গু জ্বর নির্ণয়ের প্রক্রিয়া
২০১৯ সাল থেকে বাংলাদেশ সরকার ডেঙ্গু চিকিৎসার খরচ কমানোর প্রয়াসে সারাদেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার পূর্বে এবং চিকিৎসা সময়কালীন প্রয়োজনীয় পরীক্ষার জন্য হার নির্ধারণ করে।
জ্বরের তিন দিনের মধ্যে ডেঙ্গু নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা এনএস-১ অ্যান্টিজেন টেস্টের সর্বোচ্চ ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০০ টাকা। পরবর্তী পর্যায়ে ডেঙ্গু নির্ণয় করার জন্য অন্য দুটি পরীক্ষা - আইজিজি এবং আইজিএম-এর ফি সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা। কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট (সিবিসি) পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত মূল্য সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা।
পড়ুন: মশা কেন আপনাকেই কামড়ায়?
ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা
ডেঙ্গু সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য আসলে কোনো নির্দিষ্ট ওষুধ নেই। তাৎক্ষণিক চিকিৎসার জন্য এর লক্ষণগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধে সাহায্য করার জন্য সাধারণত চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পানি পান ও স্বাস্থ্যকর পানীয় খাবার খাওয়া, প্রচুর পরিমাণে বিশ্রাম নেয়া। তাৎক্ষণিক ব্যথা উপশমের জন্য ডাক্তাররা টাইলেনল বা প্যারাসিটামল প্রেসক্রাইব করে থাকেন, যা অনেক সময় জ্বর কমাতেও সাহায্য করে।
অ্যাসপিরিন বা আইবুপ্রোফেনের মতো ননস্টেরয়ডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধগুলো উপযুক্ত নয়, কারণ এতে অভ্যন্তরীণ রক্তপাতের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বরের ঘরোয়া প্রতিকার
ডেঙ্গুর উপসর্গ নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু ঘরোয়া প্রতিকার ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে এগুলোর উপর চূড়ান্তভাবে নির্ভর করা উচিত নয়। ডেঙ্গুর উপসর্গ দেখা দেয়ার সাথে সাথেই উচিত অবিলম্বে ডেঙ্গু টেস্ট করানো এবং ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া।
গিলয় জ্যুস
গিলয় আয়ুর্বেদিক ওষুধে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত এক প্রকার ভেষজ উদ্ভিদ, সংস্কৃত ভাষায় যার নাম অমৃত; অর্থ অমরত্বের শিকড়। গিলয়ের শিকড় গুঁড়ো করে বা স্যুপে সিদ্ধ করে খাওয়া হয়। ডেঙ্গু জ্বর প্রতিকারে গিলয় জ্যুসের বেশ খ্যাতি আছে। এটি বিপাকে সাহায্য করে এবং অনাক্রম্যতা তৈরি করে।
পড়ুন: অ্যান্টিবায়োটিক-এর অপপ্রয়োগ: কেন অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ করছে না?
শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ডেঙ্গু জ্বর থেকে আরোগ্য লাভের প্রথম শর্ত। এই জ্যুস প্লেটলেটের সংখ্যা বাড়াতে সাহায্য করে এবং রোগীকে স্বস্তি দেয়। এক গ্লাস পানিতে গিলয় গাছের দুটি ছোট কান্ড সিদ্ধ করে তা খাওয়া যেতে পারে। এছাড়া এক কাপ ফুটানো পানিতে কয়েক ফোটা গিলয়ের রস যোগ করে দিনে ২বার পান করা যেতে পারে। তবে গিলয় রস বেশি খাওয়া ঠিক নয়।
পেঁপে পাতার জ্যুস
যেহেতু ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে প্লেটলেটের পরিমাণ কমে যায়, তাই এই সমস্যা সমাধানে পেঁপে পাতার জ্যুস একটি দুর্দান্ত প্রতিকার। এই জ্যুস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়। ডেঙ্গু জ্বরের সময় কিছু পেঁপে পাতা পিষে রস বের করে দিনে ২বার অল্প পরিমাণে পান করা যেতে পারে।
পেয়ারার জ্যুস
পেয়ারার জ্যুসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এক কাপ পেয়ারার রস দিনে ২বার পান করা যেতে পারে। এছাড়া জ্যুসের বদলে তাজা পেয়ারাতেও ভালো প্রতিকার পাওয়া যায়।
পড়ুন: ডায়রিয়া বা উদরাময়: কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধ ও প্রতিকারের উপায়
মেথি বীজ
এক কাপ গরম পানিতে কিছু মেথির বীজ ভিজিয়ে রেখে তা ঠান্ডা করতে হবে। অতঃপর এই পানীয় দিনে ২বার করে পান করলে জ্বর কমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে উপকার পাওয়া যাবে। ভিটামিন সি, কে এবং ফাইবার সমৃদ্ধ মেথির পানি অনেক স্বাস্থ্যগুণ সম্পন্ন।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী খাবার
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী থাকলে ডেঙ্গুর থেকে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকে। দেহকে রোগ প্রতিরোধক্ষম রাখার জন্য প্রতিদিনের খাদ্যাভাসে লেবু, কমলা, জাম্বুরার মত সাইট্রাস জাতীয় ফল, রসুন, বাদাম, এবং হলুদ রাখা যেতে পারে।
বাংলাদেশে কখন ডেঙ্গু জ্বর হয়
বাংলাদেশে ডেঙ্গু জ্বরের সংক্রমণের ঝুঁকি সারা বছরব্যাপীই বিদ্যমান থাকে। তবে বর্ষাকাল তথা জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে ঝুঁকির মাত্রাটা সবচেয়ে বেশি থাকে।
পড়ুন: উচ্চ রক্তচাপ (হাই প্রেশার) হলে যা এড়িয়ে চলা উচিত: ক্ষতিকর খাবার, পানীয়, অভ্যাস
ডেঙ্গু জ্বরের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
এই রোগ প্রতিরোধের সর্বোত্তম উপায় হলো সংক্রামিত মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষা করা। এর জন্য মশার বংশ বিস্তারের সব রকম পরিবেশ সমূলে ধ্বংস করতে হবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধের উপায়গুলো হলো-
- বর্ষার মৌসুমে বাড়ির ভিতরেও মশা নিরোধক ব্যবহার করা
- বাইরে বেরলে লম্বা-হাতা শার্ট, লম্বা প্যান্ট এবং পায়ে মুজা পড়ে পুরো শরীর ঢেকে রাখার চেষ্টা করা
- সন্ধ্যার আগে আগেই জানালা ও দরজা লাগিয়ে দেয়া। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা না থাকলে ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করা।
- মশার বংশবৃদ্ধির সম্ভাব্য সব জায়গাগুলো ধ্বংস করা। সাধারণত পুরানো টায়ার, বাড়ির সানশেড, ক্যান বা ফুলের টবে বৃষ্টির পানি জমে থাকে। এগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা। ঘরের বাইরে পোষা পশু ও পাখির বাসার বিশেষ করে খাবারের পাত্রগুলো নিয়মিত পরিবর্তন করে দেয়া।
- বাড়িতে কেউ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরকে মশার কামড় থেকে রক্ষা করার জন্য বিশেষভাবে সতর্কতা অবলম্বন করা। এ সময় ঘর ও ঘরের আঙ্গিনা থেকে মশা নির্মুলের দিকে অধিক নজর দিতে হবে।
পড়ুন: টেক্সট নেক সিন্ড্রোম: অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলাফল
শেষাংশ
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার ব্যাপারে বিশদ জ্ঞানার্জন ডেঙ্গু প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। এ জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি প্রতিটি জনসাধারণকে সচেষ্ট হতে হবে তার নিজ নিজ অবস্থান থেকে। শুধু নিজেদের সুস্বাস্থ্যের জন্যই নয়; ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য পৃথিবীকে বাসযোগ্য করতে হলে এখনি প্রয়োজন ডেঙ্গু নির্মূলে সোচ্চার হওয়া।
কদবেলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
কদবেল এমন একটি মৌসুমি ফল, যার বাইরের আবরণটি শক্ত, রুক্ষ ও বাদামী। ভেতরটা গাঢ় বাদামী সজ্জা বিশিষ্ট কুঁচকানো রজনী লোমের বীজযুক্ত। ভেতরের এই নরম শাঁসালো খাওয়ার অংশটি ঝাঁঝালো গন্ধযুক্ত। টক স্বাদের কারণে এটি জ্যাম এবং চাটনি তৈরির জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। কদবেল মূলত ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, থাইল্যান্ড এবং মালয়েশিয়ার জনপ্রিয় ফল। আজকের নিবন্ধটি কদবেলের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে।
মৌসুমি ফল কদবেলের পুষ্টিগুণ
প্রতি ১০০ গ্রাম কদবেলের মধ্যে ১৩৪ ক্যালরি শক্তি, সাত গ্রাম প্রোটিন, চার গ্রাম ফ্যাট, দুই গ্রাম খনিজ, পাঁচ গ্রাম ফাইবার, ১৮ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১৩০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং ১১০ মিলিগ্রাম ফসফরাস থাকে।
কদবেলে রয়েছে ফাইটোকনস্টিটিউয়েন্ট মারমেনল, মারমিন, মারমেলোসিন, মারমেলাইড, সোরালেন, অ্যালোইম্পেরেটোরিন, রুটারেটিন, স্কোপোলেটিন, এজেলিন, মারমেলিন, ফ্যাগারিন, লিমোনিন, এ-ফেল্যান্ডরিন, বেটুলিনিক অ্যাসিড এবং অ্যানহাইড্রোমারমেলিন।
আরও পড়ুন: খেজুর খাওয়ার উপকারিতা: সারাদিন রোযা রেখে ইফতারে কেন খেজুর খাবেন?
এছাড়াও ট্যানিন, রিবোফ্লাভিন এবং অ্যাসকরবিক অ্যাসিড, টারটারিক অ্যাসিড, অক্সালিক অ্যাসিড এবং ম্যালিক অ্যাসিডের মত বিভিন্ন জৈব অ্যাসিডে ভরপুর কদবেল।
কদবেলের স্বাস্থ্য উপকারিতা
ডায়রিয়া প্রতিরোধ এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি
কদবেলে ডায়রিয়া প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা ই. কোলাই এবং শিগেলা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট পাকস্থলীর সংক্রমণ বন্ধ করতে পারে। কদবেলের অপরিপক্ক ফল অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করা বন্ধ করতে পারে। আয়ুর্বেদ এবং লোকজ ওষুধ বহু শতাব্দী ধরে ডায়রিয়ার জন্য কদবেল ব্যবহার করে আসছে। এর ভেতরের রাসায়নিক উপাদান রাইবোফ্লাভিন এবং থায়ামিন শরীরকে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। এর রস কিডনির রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং অন্ত্রকে সুস্থ রাখে।
বদহজমের প্রাকৃতিক ঔষধ
উচ্চ ফাইবার সামগ্রী এবং রেচক গুণের কারণে কদবেল কোষ্ঠকাঠিন্য এবং বদহজমের প্রাকৃতিক নিরাপত্তা হিসেবে সহায়ক।
আরও পড়ুন: রন্ধন পাঠশালা: ঢাকায় কোথায় রান্না শেখার কোর্স করতে পারবেন?
ছত্রাক, ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া বিরোধী
কদবেলে এমন যৌগ রয়েছে যা রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাসিলাস সাবটিলিস, স্ট্যাফিলোকক্কাস অরিয়াস, ই. কোলাই এবং সিউডোমোনাস অ্যারুগিনোসার মতো ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে সবচেয়ে কার্যকর। এছাড়াও মেনিনজাইটিস, হেমোরেজিক কনজাংটিভাইটিস, মায়োকার্ডাইটিস এবং এনসেফালাইটিস রোগগুলোর জন্য দায়ী কক্সস্যাকি ভাইরাসের বিরুদ্ধে কদবেলের অ্যান্টি-ভাইরাল কার্যকারিতা রয়েছে।
হাঁপানির বিরুদ্ধে কার্যকারিতা
হাঁপানির উপসর্গ নিয়ন্ত্রণের জন্য কদবেল পাতার নির্যাসের আয়ুর্বেদিক ব্যবহার আছে। উদ্ভিদের অ্যালকোহলযুক্ত নির্যাসটিতে অ্যান্টিহিস্টামাইন কার্যকলাপ রয়েছে, যা অ্যালার্জির ট্রিগারের কারণে অ্যাজমার উপসর্গগুলোকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়। এটি ফুসফুসের হিস্টামিন প্ররোচিত সংকোচন উপশম করতে সাহায্য করে।
মধুর সাথে ৮ থেকে ১৬ গ্রাম তাজা কদবেল পাতার নির্যাস হাঁপানির বিরুদ্ধে বেশ কার্যকর। কারণ কদবেল ফলের পাতায় থাকে অ্যালকালয়েড এবং এজেলিন দায়ী।
আরও পড়ুন: গোল্ডেন মিল্কের জাদুকরি উপকারিতা
ক্যান্সার থেকে প্রতিরক্ষা
কদবেলের নির্যাস স্তন ক্যান্সার সৃষ্টিকারি কোষের বিস্তার বন্ধ করতে পারে। লুপেওল, ইউজেনল, সিট্রাল, সিনেওল এবং ডি-লিমোনিনের মত ফাইটোকেমিক্যালগুলো ক্যান্সার প্রতিরোধক ওষুধের মতো কাজ করে।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ
কদবেল ফল উচ্চ কোলেস্টেরল পরিচালনায় সহায়ক হতে পারে। এর পাতার গুঁড়া অপরিশোধিত ফাইবারের একটি সমৃদ্ধ উৎস। জলীয় নির্যাসে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েড, অ্যালকালয়েড এবং ফেনোলিক্স মানবদেহে লিপিড-হ্রাসকারী প্রভাবের জন্য দায়ী। তাই এই ফলের রস দেহের জন্য একটি প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা হতে পারে।
আলসার নিরাময়
কদবেল পেটের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো হতে পারে, কারণ এতে আলসার নিরাময়ে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কদবেলে ট্যানিক এবং ফেনোলিক উপাদান রয়েছে, যা মুলত উচ্চমাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। আর তাই পাইলস এবং আলসারের চিকিৎসায় এটি সহায়ক হতে পারে।
আরও পড়ুন: পুষ্টিগুণ অটুট রেখে শীতকালীন সবজি খাওয়ার সঠিক উপায়
কিডনির স্বাস্থ্য এবং রক্তচাপের জন্য ভালো
কদবেল একটি মূত্রবর্ধক, যা কিডনিকে সাহায্য করে প্রস্রাবের আকারে শরীর থেকে অতিরিক্ত সোডিয়াম অপসারণ করতে। ফলে রক্তচাপ কমে যেয়ে রক্ত শিরা এবং ধমনী থেকে চাপ কমে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ
শরীরে কার্বোহাইড্রেটের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে কদবেল ডায়াবেটিসের অগ্রগতি ধীর করে দেয়। এই সময় এটি শরীরের জন্য ক্ষতিকর চিনির বৃদ্ধি প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
কদবেলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
কোষ্ঠকাঠিন্য
অতিরিক্ত কদবেল খাওয়ায় কোষ্ঠকাঠিন্য এবং অন্যান্য পাচন সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং ডায়রিয়ার লক্ষণগুলো পরিচালনার জন্য এই ফল খাওয়ার পরিমাণ সম্পর্কে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।
আরও পড়ুন: লাল চাল: কেন খাবেন এবং কারা এড়িয়ে চলবেন?
হাইপোগ্লাইসেমিয়া
রক্তে শর্করার মাত্রা কমানোর সম্ভাবনা থাকায় কদবেল একটি উপকারি ফল। কিন্তু এর অত্যধিক ব্যবহার রক্তে শর্করার মাত্রা খুব কমিয়ে দেয়। এতে মাথাব্যথা, বিভ্রান্তি এবং চেতনা শূন্যতা অনুভূত হতে পারে। এই ধরনের হাইপোগ্লাইসেমিয়ায় জরুরি ভিত্তিতে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
এলার্জি প্রতিক্রিয়া
এই মৌসুমি ফলে বেশ কিছু ফাইটোকেমিক্যাল উপাদান রয়েছে, যা কখনো কখনো অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। বমি বমি ভাব, বমি, পেট খারাপ, শ্বাসকষ্ট, ত্বকে ফুসকুড়ির মতো আরও গুরুতর লক্ষণের মাধ্যমে এই প্রতিক্রিয়াগুলো প্রকাশ হতে পারে।
কাদের জন্য কদবেল খাওয়া উচিত নয়
ফল খাওয়া ভালো কিন্তু অতিরিক্ত ফল খাওয়া বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকির সৃষ্টি করতে পারে। তাই অন্যান্য ফলের মতো এই ফলের বেলায়ও বিশেষজ্ঞগণ ভারসাম্য বজায় রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
আরও পড়ুন: কঠোর ডায়েটের স্বাস্থ্য ঝুঁকিসমূহ জেনে নিন
থাইরয়েড সমস্যাযুক্ত ব্যক্তিদের এই ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। এছাড়া গর্ভবতী এবং বুকের দুধ খাওয়ানো নারীদেরও এই ফল পরিত্যাগ করা উচিত। দীর্ঘ সময় ধরে কদবেল খেলে এতে থাকা ট্যানিন অন্তঃসত্ত্বা নারীদের দ্রুত গর্ভপাতের দিকে ধাবিত করতে পারে।
যারা বদহজমের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য এই ফলটি যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত। বেশি পরিমাণে এই ফল খাওয়ার ফলে গ্যাস, ফোলাভাব এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলোর ফলে পরিপাকতন্ত্র সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
নানা পরিবেশনে কদবেল ফল
একটি ছুরি দিয়ে কদবেল ফলের বাইরের শক্ত আবরণে ছিদ্র করার সাথে সাথেই এর ভেতরের শাঁসের ঝাঁঝালো গন্ধ পাওয়া যায়। পুরো ফলটিকে আপেলের মতো খোসা ছাড়িয়ে বা অর্ধেক করে কেটে ভেতরের অংশ বের করে নেয়া যেতে পারে। তবে বেশ শক্ত কদবেলের জন্য এটিকে ভারী ধারালো ছুরি কয়েকবার সজোরে আঘাত করতে হতে পারে।
আরও পড়ুন: জেনে নিন ডালিমের খোসার গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার
ভেতরের শাঁসটি যেমন আছে ঠিক তেমন ভাবেই খেয়ে নেয়া যায়। তবে বেশি টক হলে তাতে কিছুটা গুড় বা মধু মেশিয়ে নেয়া যেতে পারে। গুড়ের সাথে কদবেলের শাঁস মিশিয়ে তাতে একটু পানি যোগ করা যেতে পারে। তারপর তাতে গোলমরিচ এবং এলাচ গুঁড়ো দিলেই দারুণ একটি সতেজ পানীয় তৈরি হয়ে যাবে।
কদবেলের আবরণের ভেতরেই সজ্জায় চিনি, লবণ এবং মরিচ ভালোভাবে মিশিয়ে সুস্বাদু নাস্তা তৈরি করা যায়। তারপর তাতে ছোট কাঠি দিয়ে রাস্তাঘাটে বিক্রি করা হয়। এটি জনপ্রিয় একটি স্ট্রিট ফুড। এছাড়াও চাটনি এবং জ্যাম তৈরিতে কদবেল একটি বহুল ব্যবহৃত ফল।
পরিশিষ্ট
কদবেল এমন জায়গায় বেড়ে উঠতে সক্ষম, যেখানে অন্য গাছ টিকতে পারে না। এর গাছ মাটির প্রতিকূল পরিবেশ, জলাবদ্ধতা এবং অস্বাভাবিকভাবে ব্যাপক তাপমাত্রায় অনেকটাই সহনশীল। তবে এর বৃদ্ধি খুব ধীর গতি সম্পন্ন। প্রথম ফল আসতে কমপক্ষে ১৫ বছর সময় লাগে।
আরও পড়ুন: গ্রীন কফি: উপকারিতা, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও বানানোর নিয়ম
মৌসুমি ফল কদবেলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতার জন্য চিকিৎসা ক্ষেত্রে এর বহুল ব্যবহার আছে। সবচেয়ে বড় ব্যবহারটি হলো কিডনির সমস্যার ওষুধ তৈরিতে। চিকিৎসার পাশাপাশি কদবেল ব্যবহারের আরও কিছু জায়গা আছে। থাইল্যান্ড এবং মায়ানমারের নারীরা কদবেলের শক্ত অংশটিকে প্রসাধনী বানানোর কাজে ব্যবহার করেন। কদবেলের বহিরাবরণটি ছোট বাক্স বা গোলাকার আকৃতির পাত্রে পরিণত করা যেতে পারে। কদবেলের আঠা বিভিন্ন রঙ এবং কালি উৎপাদনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
ভারী ব্যাগ বহনে মেরুদণ্ডের সমস্যা নিয়ে বেড়ে উঠছে শিশুরা
শিশুদের জন্য স্কুলে ব্যবহৃত বেঞ্চ বা চেয়ারগুলো স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এছাড়া দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ভারী স্কুলব্যাগ বহন করে। দীর্ঘসময় ভারী ব্যাগ বহনের কারণে অনেকের মেরুদণ্ড বাঁকা হয়ে যায়, পিঠে-ঘাড়ে চাপ পড়ে।
অল্প বয়স থেকেই তারা মেরুদণ্ডের সমস্যা নিয়ে বেড়ে ওঠে। পরে তারা ৪০-৫০ বছরে পৌঁছলে অনেকেই মেরুদণ্ডজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হন।
রবিবার (১৬ অক্টোবর) সকাল ১০টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) বাংলাদেশ নিউরো স্পাইন সোসাইটি আয়োজিত বৈজ্ঞানিক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: ৮৮ শতাংশ করোনা রোগী ওমিক্রনে আক্রান্ত: বিএসএমএমইউ’র জরিপ
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে বিগত দিনের তুলনায় স্পাইন রোগের চিকিৎসা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ নির্দেশনায় অনেক দূর এগিয়েছে। বর্তমানে কমসংখ্যক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানের ঘাটতি ও আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে দেশের জনগোষ্ঠীর ৫০ শতাংশ চিকিৎসাসেবার বাইরে রয়েছে।
বর্তমান সরকার আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে মেরুদণ্ডের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম জেলা পর্যায়ে পৌঁছাতে কাজ করে চলেছে।
সেমিনারে বলা হয়, বিশ্বের ৫৪ কোটি মানুষের মেরুদণ্ডের সমস্যা ভুগছেন। বাংলাদেশে প্রায় ৫০ লাখ মানুষের এ সমস্যা রয়েছে। প্রতি বছর বাংলাদেশ প্রায় ২০ হাজার এ ধরণের রোগী চিকিৎসা সেবা নেন। বাংলাদেশের এসব রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছে মাত্র ২১২ জন। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। অনেক সময় গাছ থেকে পড়ে যাওয়া ও আঘাতজনিত সমস্যা হলে অস্ত্রোপচার করতে হয়। অন্য রোগীদের ইনজেকশন, ওষুধ ও থেরাপি জাতীয় চিকিৎসা দেয়া হয়। প্রতিবছর এ রোগে আক্রান্ত ৪০ হাজার রোগীর অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন। এদের অধিকাংশই থেকে যান চিকিৎসার বাইরে।
তাছাড়া ব্যয়বহুল হওয়ায় অনেকে চিকিৎসা ব্যয় বহনে অসমর্থ্য। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য শ্রেণিকক্ষে বসার ব্যবস্থা থাকে না। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার কারণে তাদেরও মেরুদণ্ডের সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
সেমিনারে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে বর্তমানে উন্নতমানের নিউরো স্পাইনের সব ধরণের চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন চিকিৎসাসেবা কেন্দ্রগুলোকে বিশ্বমানের করা প্রয়োজন। বর্তমান সরকারপ্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই বাংলাদেশে নিউরো সার্জারি এমএস কোর্স চালু করা হয়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন।অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নিউরো স্পাইন সোসাইটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোঃ কামাল উদ্দিন। সঞ্চালনা করেন অধ্যাপক ডা. মোঃ রফিকুল ইসলাম।
আরও পড়ুন: বিএসএমএমইউতে আগুন
তিন ডোজ টিকা নেয়ার দাবিদার ফারুক বিএসএমএমইউতে
চোখ উঠা রোগের লক্ষণ, কারণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
চোখ উঠা হলো কনজাংটিভা বা চোখের স্বচ্ছ ঝিল্লির প্রদাহ বা সংক্রমণ, যা চোখের পাতাকে একসাথে করে চোখের সাদা অংশ বা শ্বেতমন্ডলকে ঢেকে রাখে। যখন কনজাংটিভায় ছোট রক্তনালীগুলো স্ফীত হয়, তখন সেগুলো আরও দৃশ্যমান হয়। এই কারণেই চোখের সাদা অংশ লাল বা গোলাপী দেখায়। চোখ উঠা খুব বিরক্তিকর হলেও দৃষ্টিশক্তির উপর তেমন নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না। কিন্তু এক চোখে হলে সেটা আরেক চোখেও সংক্রমিত হতে পারে। সাধারণত এই অস্বস্তিকর অবস্থা এক কিংবা দুই সপ্তাহের মধ্যেই ঠিক হয়ে যায়। তবে এক সপ্তাহের পরেও অবস্থার উন্নতি না হলে বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। চলুন, চোখ উঠা রোগের লক্ষণ, কারণ ও প্রতিকারের পাশাপাশি জেনে নেয়া যাক কিভাবে এই রোগ থেকে দূরে থাকবেন।
চোখ উঠা রোগের লক্ষণ
বিভিন্ন কারণের উপর ভিত্তি করে চোখ উঠার লক্ষণগুলোর মধ্যে তারতম্য পরিলক্ষিত হয়। সাধারণত যে লক্ষণগুলো দেখা যায় সেগুলো হলো-
• চোখের সাদা অংশতে গোলাপি বা লাল বর্ণ হওয়া
• চোখের সাদা অংশ এবং চোখের পাতার ভেতরের অংশে রেখাযুক্ত পাতলা স্তর সৃষ্টি হয়
• চোখের পাতা ফুলে যায়
• ঘন ঘন অশ্রু বের হওয়া
• চোখে ঝাপসা দেখা এবং ঘন ঘন চোখ ঘষার উপক্রম হওয়া
• চোখে চুলকানি ও জ্বালা অনুভূত হওয়া
• চোখ থেকে পুঁজ বা শ্লেষ্মা নিঃসৃত হয়ে চোখের পাপড়ি ও চক্ষুলোম ভিজে যেতে পারে বিশেষ করে সকালে ঘুম থেকে উঠার সময়। ফলে চোখ সম্পূর্ণ মেলে তাকাতে কষ্ট হয়।
পড়ুন: মশা কেন আপনাকেই কামড়ায়?
চোখ উঠা রোগের কারণ
ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়াজনিত
এ ধরনের রোগ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অ্যাডিনোভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট হয়, তবে হার্পিস সিমপ্লেক্স, ভেরিসেলা জোস্টার এবং করোনা ভাইরাস সহ অন্যান্য বিভিন্ন ভাইরাসের কারণেও হতে পারে।
ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়াজনিত উভয় ক্ষেত্রে সর্দি বা শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ ঘটতে পারে। অপরিষ্কার কন্টাক্ট লেন্স থেকেও হতে পারে এই ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ। এ সময় ব্যাকটেরিয়া সংক্রামিত ব্যক্তির চোখ থেকে নিঃসৃত তরলের সাথে ছড়িয়ে পড়ে। তখন একটি বা উভয় চোখই প্রভাবিত হতে পারে।
অ্যালার্জির কারণে
এটি মূলত পোলেন বা পরাগরেণুর মতো অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী পদার্থের প্রতিক্রিয়া। এর ফলে শরীর ইমিউনোগ্লোবুলিন-ই (আইজিই) নামে একটি অ্যান্টিবডি তৈরি করে। এই অ্যান্টিবডি চোখের মিউকাস আস্তরণের এবং শ্বাসনালীতে মাস্ট সেল নামে বিশেষ কোষগুলোকে উদ্দীপিত করে, যা হিস্টামিন সহ প্রদাহজনক পদার্থগুলোর কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। শরীর থেকে শুধুমাত্র এই হিস্টামিন নিঃসরণই যথেষ্ট চোখ উঠা রোগের সব রকম লক্ষণ এবং উপসর্গ দৃশ্যমান করতে। এ সময় তীব্র চুলকানি, চোখ ফেটে যাওয়া এবং প্রদাহ অনুভূত হবে। সেইসাথে হাঁচি এবং অবিরাম সর্দি হতে পারে।
পড়ুন: অ্যান্টিবায়োটিক-এর অপপ্রয়োগ: কেন অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ করছে না?
চোখ জ্বালা-পোড়া বা প্রদাহ থেকে
চোখ রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে চোখে জ্বালা-পোড়া ভাব সৃষ্টি হতে পারে। কখনও কখনও এই রাসায়নিক বস্তু থেকে মুক্তির জন্য চোখ ঘষার কারণেও লালভাব এবং জ্বালা সৃষ্টি করে। এর ফলে চোখে পানি জমে থাকা এবং শ্লেষ্মা নির্গত হওয়ার মত পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। অবশ্য এগুলো সাধারণত প্রায় এক দিনের মধ্যে নিজেই পরিষ্কার হয়ে যায়।
যদি তা না হয় বা রাসায়নিক বস্তুটি যদি চোখের সাথে লেগে থাকে, তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তার বা চক্ষু বিশেষজ্ঞের সাথে দেখা করতে হবে। চোখের মধ্যে যে কোন রাসায়নিক বস্তুর উপস্থিতি চোখের স্থায়ী ক্ষতি করতে পারে। ক্রমাগত উপসর্গগুলোর দীর্ঘস্থায়ী হওয়া চোখে রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি প্রমাণ করে। আবার অনেক সময় চোখ জোরে জোরে ঘষার কারণেও কর্নিয়া বা চোখের বলের আবরণে আঁচড় পড়তে পারে।
চোখ উঠা রোগের ঘরোয়া প্রতিকার
ঠান্ডা ভাপ দেয়া
চোখে ঠান্ডা বাপ দেয়া চরম ব্যথা থেকে তাৎক্ষণিক আরাম দিতে পারে। প্রথমে লিনেন কাপড়ের এক বা একাধিক ছোট টুকরা বরফ-ঠান্ডা জলে ডুবিয়ে রাখতে হবে। তারপর কাপড় থেকে বাড়তি পানি ঝরিয়ে চোখে লাগানো যেতে পারে। এটি চোখের মধ্যে প্রবেশ করা রাসায়নিক পদার্থের কারণে চুলকানি এবং ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করতে পারে। কমপক্ষে ৫ থেকে ১০ মিনিটের ধরে এটি বেশ কয়েকবার করা যেতে পারে। সংক্রমণ এড়াতে উভয় চোখের জন্য ভিন্ন কাপড়ের টুকরো ব্যবহার করা উত্তম।
পড়ুন: তীব্র গরমে হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে করণীয়
লবণ চিকিৎসা
স্যালাইন দ্রবণ দিয়ে চোখ ধোয়া অ্যালার্জির বিরুদ্ধে একটি কার্যকর ঘরোয়া প্রতিকার। এই দ্রবণে থাকে সাধারণ লবণ, যা চোখের জ্বালা কমাতে সক্ষম। তবে খেয়াল রাখতে হবে যে, গরম স্যালাইন দ্রবণ যেন ব্যবহার করা না হয়। এতে চোখের ভালোর চেয়ে ক্ষতিই হয়ে যেতে পারে।
গোলাপ জলের ফোটা
গোলাপ জলে প্রদাহরোধী এবং প্রশান্তিদায়ক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সংক্রামিত চোখে প্রতিদিন কয়েক ফোঁটা গোলাপ জল ২ থেকে ৩ দিনের জন্য চোখের অ্যালার্জি নিরাময়ে সহায়তা করতে পারে। গোলাপজলে ডুবিয়ে তুলোর বলও চোখের ওপর রাখা যেতে পারে। এটি চোখের বিরক্তি লাঘব করবে। গোলাপ জল চোখে শীতলতা প্রদানের পাশাপাশি ধূলিকণা থেকে মুক্তি পেতেও সাহায্য করে।
পড়ুন: এয়ার কন্ডিশনার ছাড়াই গরমে ঘর ঠান্ডা রাখার কার্যকরী উপায়
অ্যালোয়ভেরা জেল ব্যবহার
অ্যালোয়ভেরায় অ্যালোইন এবং ইমোডিনের মতো যৌগ বিদ্যমান, যাতে রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ভাইরাল বৈশিষ্ট্য। এই কারণে অ্যালোয়ভেরা জেল চোখের অ্যালার্জি বিরুদ্ধে একটি কার্যকর ঘরোয়া প্রতিকার। অ্যালোয়ভেরা প্রদাহ কমাতেও সাহায্য করে এবং ধূলিকণার কারণে সৃষ্ট অ্যালার্জির বিরুদ্ধে নিরাময় প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। সংক্রামিত এলাকার চারপাশে অ্যালোয়ভেরা জেল প্রয়োগ করা যেতে পারে।
হলুদ জলের উষ্ণ ভাপ
হলুদের গুঁড়ার অনেক নিরাময় বৈশিষ্ট্যের মধ্যে একটি হচ্ছে, চোখের এই অ্যালার্জির বিরুদ্ধে কার্যকারিতা। হলুদ চোখের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে। এটিতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা চোখের অন্যান্য যাবতীয় সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। সিদ্ধ হলুদ জলের পাত্রে এক টুকরো তুলা বা কাপড় ভিজিয়ে তার উষ্ণ ভাপ ক্ষতিগ্রস্ত চোখে দিলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
পড়ুন: উচ্চ রক্তচাপ (হাই প্রেশার) হলে যা এড়িয়ে চলা উচিত: ক্ষতিকর খাবার, পানীয়, অভ্যাস
চোখ উঠা রোগের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
এই রোগ প্রতিরোধের সর্বোত্তম উপায় হলো এর কারণগুলো খুঁজে বের করে তা থেকে দূরে থাকা।
• যে সময়টিতে বাতাসে পরাগরেণুর সংখ্যা বেশি থাকে সে সময়টিতে যথাসম্ভব দরজা-জানালা বন্ধ রেখে ঘরের ভেতরে থাকতে হবে। সাধারণত মধ্য-সকাল এবং সন্ধ্যার প্রথম দিকে বাতাসে পরাগরেণুর সংখ্যা সর্বোচ্চ হয়।
• অনেক ঘাস, ফুল বা গাছ আছে এমন জংলা এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে
• বাইরে থেকে ঘরে ফিরেই গোসল করে পোশাক বদলে ফেলতে হবে
• ধূলাবালি, পরাগরেণু, ময়লার প্রতি বেশি অ্যালার্জি থাকলে অন্য কাউকে দিয়ে ঘরের আঙ্গিনা, কার্পেট, আসবাবপত্র ও বাগান পরিষ্কার করিয়ে নিতে হবে। নিজে পরিষ্কার করলে সাবধানে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার অথবা একটি পরিষ্কার স্যাঁতসেঁতে কাপড় ব্যবহার করতে হবে
• পারফিউম বা নির্দিষ্ট কোন গন্ধে অ্যালার্জি থাকলে গন্ধমুক্ত সাবান এবং ডিটারজেন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে
• পোলেন গৃহস্থালি বা ঘরের পোষা বিভিন্ন প্রাণী থেকেও ছড়ায়। তাই যাদের বাড়িতে পোষা কুকুর, বিড়াল আছে তাদেরকে সাবধান হতে হবে। পোষা প্রাণীটিকে রাখতে হবে বেডরুমের বাইরে। কাউকে দিয়ে তাদেরকে নিয়মিত গোসল করাতে হবে। পাশাপাশি সেগুলোর থাকার জায়গাও নিয়মিত ধুয়ে ফেলতে হবে।
• চোখ রক্ষা করতে পুরো চোখ ঢাকা সানগ্লাস ব্যবহার করা যেতে পারে|
পড়ুন: টেক্সট নেক সিন্ড্রোম: অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলাফল
শেষাংশ
চোখ উঠা রোগের লক্ষণ, কারণ ও প্রতিকার জানার মাধ্যমে এই রোগ থেকে সাবধান থাকা যায়। যারা কন্টাক্ট লেন্স পরেন তাদেরকে এ রোগের ক্ষেত্রে সাবধান থাকতে হবে। লক্ষণ শুরু হওয়ার সাথে সাথে কন্টাক্ট লেন্স পরিহার করাই উত্তম। চোখ উঠা রোগের উপর ঋতুগত প্রভাব আছে। ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে ব্যাকটেরিয়াজনিত, গ্রীষ্মের মাসগুলোতে ভাইরাসজনিত এবং অ্যালার্জিজনিত চোখ উঠা পুরো বসন্ত ও গ্রীষ্ম জুড়ে দেখা যায়। তাই প্রতিরোধমুলক ব্যবস্থাগুলো সারা বছর ধরেই নেয়া উচিত।