%E0%A6%B8%E0%A6%BF%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%9F
বকেয়া বেতনের দাবিতে রাজপথে তারাপুর বাগানের চা শ্রমিকরা
দুই সপ্তাহ ধরে বেতন না পাওয়া, প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত বকেয়ার তৃতীয় কিস্তি না পাওয়াসহ সাত দফা দাবিতে সিলেটের তারাপুর চা বাগানের অচলাবস্থা দীর্ঘায়িত হচ্ছে।
চার দিন ধরে কাজ বন্ধ করে কর্মবিরতি চালিয়ে যাচ্ছেন শ্রমিকরা।
দাবি বাস্তবায়নে মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) থেকে কর্মবিরতির পাশাপাশি অবস্থান, বিক্ষোভ মিছিল ও জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে তারাপুর চা বাগান শ্রমিক ও পঞ্চায়েত কমিটি।
আরও পড়ুন: আলোচনা ছাড়াই রাত ৩টায় চুক্তি সাক্ষর: আন্দোলন অব্যাহত চা শ্রমিকদের
চা বাগান শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে শুকনো মৌসুমের কলম বন্ধ থাকায় উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বেতন না পাওয়ায় শ্রমিকদের ঘরে ঘরে অভাব, হাহাকার দেখা দিয়েছে।
স্কুলে সন্তানদের ভর্তি করতে পারছেন না শ্রমিকরা।
তারাপুর চা বাগানের শ্রমিক তারুনী মোদী বলেন, দুই সপ্তাহ ধরে কোনো বেতন ভাতা পাচ্ছি না। ঘরে ঘরে খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে। বাগান বন্ধ থাকুক এটা চাই না, বাধ্য হয়ে আন্দোলন শুরু করেছি।
আরও পড়ুন: হবিগঞ্জে ৭ দফা দাবিতে চা শ্রমিকদের মানববন্ধন
অপর শ্রমিক বেলী রায় বলেন, বেতন বকেয়া থাকায় সন্তানদের স্কুলে ভর্তি যেমন করতে পারিনি, তেমনি নতুন ক্লাসের বইও কিনে দিতে পারছি না। আমরা আমাদের ন্যায্য পাওনাটা চাই। আমরা কাজ বন্ধ করে আন্দোলনে নেমেছি।
পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুনীল মোদী জানান, কর্তৃপক্ষ বার বার বেতন আটকে দিচ্ছে আমাদের। এতে করে শ্রমিক পরিবারে নানান সংকট বাড়ছে। বার বার বাগান বন্ধ থাকাটা আমরাও চাই না। বাধ্য হয়ে অভাবের তাড়নায় আন্দোলন করছি।
আরও পড়ুন: কাজে ফিরেছেন চা শ্রমিকরা
পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি চৈতন্য মোদী জানান, গত দুই সপ্তাহ ধরে বেতন না পেয়ে আমরা ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছি। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত বকেয়া বেতনের সব কিস্তি অন্যান্য বাগানে পরিশোধ করা হলেও আমরা শেষ কিস্তি পাচ্ছি না। আমরা দাবি আদায়ে রাজপথে নেমেছি। জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি।
আরও পড়ুন: চা শ্রমিকদের ধর্মঘট অব্যাহত, মৌলভীবাজারে সড়ক অবরোধ
এক বাঘাইড় মাছের দাম দেড় লাখ
পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে ২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলে আসছে হবিগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী পইলের মাছের মেলা।
সোমবার (১৫ জানুয়ারি) দেশের নানা প্রান্ত থেকে বিভিন্ন ধরনের মাছ উঠেছে মেলায়।
তবে আব্দুল খালেকের বাঘাইড় মাছটিই মেলার প্রধান আকর্ষণ হয়ে ওঠেছে। ৫০ থেকে ৬০ কেজি ওজনের বৃহৎ এ মাছটি দাম চাওয়া হয়েছে দেড় লাখ টাকা।
আরও পড়ুন: বাগেরহাটে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ৮ হাজার মাছের ঘের ক্ষতিগ্রস্ত
বিক্রেতা আব্দুল খালেক জানান, পইল মাছের মেলায় বিক্রির জন্য সুরমা নদী থেকে তিনি এই বিশাল বাঘাইড় মাছটি সংগ্রহ করেছেন। মাছটি তরতাজা ও খেতে ভালো লাগবে। দেড় লাখ টাকা চাইলেও এক লাখ হলেও তিনি মাছটি বিক্রি করবেন।
মেলায় আসা ক্রেতাদের আগ্রহ শেষ পর্যন্ত মাছটি কত দিয়ে বিক্রি হয়।
শাহজাহান মিয়া নামে অপর বিক্রেতা জানান, তিনি ২৬ কেজি ওজনের একটি কাতলাসহ বেশ বড় বড় মাছ নিয়ে মেলায় এসেছেন। বড় কাতলাটির দাম তিনি চাইছেন ৬০ হাজার টাকা। ৪০ হাজার টাকা পেলে তিনি সেটি বিক্রি করে দেবেন।
জিলু মিয়া নামে আরও এক মাছ বিক্রেতা বলেন, এখনও কেনা বেচা তেমন হয়নি তবে রাতের বেলায় বাড়বে।
যুক্তরাজ্য থেকে আসা সদর উপজেলার আলাপুর গ্রামের কামাল আহমেদ মাছের মূল্য নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, মেলার সময় প্রতি বছর দেশে আসি। আমরা তো মাছ কিনতে এসেছি। মূল্য বেশি হাঁকা হচ্ছে। যে কারণে অনেক মাছ অবিক্রিত থেকে যেতে পারে।
আরও পড়ুন: দেশীয় মাছের প্রজাতি সংরক্ষণে সহায়তা দিতে রাষ্ট্রপতির আহ্বান
এদিকে সরেজমিনে মেলা ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকেই হবিগঞ্জের সদর উপজেলার পইল গ্রামের মাঠে ক্রেতা-বিক্রেতারা ভিড় জমিয়েছেন। প্রায় ২৫০ মৎস্য বিক্রেতার পাশাপাশি হাজার হাজার ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা মেলায় ভিড় জমিয়েছেন। এবারের মেলায় বোয়াল ও আইড় মাছ সবচেয়ে বেশি উঠেছে।
এছাড়াও বাঘাইড়, রুই, কাতল, চিতল, গজার, গ্রাস কার্প, মৃগেল, সিলভার কার্প, ব্রিগেড, পোয়া, টেংরা, পুটি, শিং, কই, শোল, বাইম, চাপিলা, চান্দা, কাকিয়াসহ বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির মাছ ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছে।
মাছের মেলা ঘিরে কৃষি, গৃহস্থালি, ভোগ্যপণ্য, আখ ও শিশুদের খেলনা ছিল উল্লেখযোগ্য। তাই মেলায় নারী, পুরুষ ও শিশুদের ব্যাপক সমাগম দেখা গেছে। এ মেলা নিজেদের ঐতিহ্য হিসেবে ধারণ করেন পইল গ্রামসহ এর আশপাশের লোকজন।
আরও পড়ুন: মাছের আঁশ: রপ্তানি বৈচিত্র্যে আশা জাগানো নতুন পণ্য
পইল গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি শেখ মহরম আলী বলেন, এই মেলা মানেই মিলনমেলা। এ মেলা ঐতিহাসিক। পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে এই মেলায় দেশ-বিদেশ থেকে বড় বড় মাছ আসে। এলাকাবাসী এই মেলায় আনন্দ করেন। এই উপলক্ষে আত্মীয়-স্বজন আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। যে কারণে এই কয়দিন আমরা আনন্দের সঙ্গে কাটাই।
এ ব্যাপারে পইল বাজার কমিটির সভাপতি ও পইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মঈনুল হক আরিফ জানান, পইল মাছের মেলা আমাদের জন্য ঐতিহ্যের একটি মেলা। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম বাগ্মী নেতা বিপিন চন্দ্র পালের জন্মভূমি পইল গ্রামে প্রতি বছর এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
আরও পড়ুন: শরীয়তপুরে মাছের ঘেরে মিলল ৮ ফুট কুমির
গোয়াহরি বিলে পলো বাওয়া উৎসব
‘ঝপ-ঝপা-ঝপ’ শব্দে মুখর সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের গোয়াহরি গ্রামের বিল (দক্ষিণের বড় বিল)। বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বার্ষিক পলো বাওয়া উৎসবে অংশ নিয়েছে স্থানীয়রা।
প্রতি বছরের ন্যায় এবারের পলো বাওয়া উৎসবে যোগ দিতে দেশে এসেছেন অনেক প্রবাসী। স্বামী-সন্তান নিয়ে বাবার বাড়ি এসেছে গ্রামের অনেক মেয়েরা। পলো বাওয়া উৎসবকে কেন্দ্র করে গোয়াহরি গ্রামে গত কয়েক দিন ধরে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।
আরও পড়ুন: বিশ্বনাথে ঐতিহ্যবাহী পলো বাওয়া উৎসব শুরু
সোমবার (১৫ জানুয়ারি) বার্ষিক পলো বাওয়া উৎসব শুরুর আগে সকাল থেকেই গ্রামে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়। বেলা ১১টার দিকে গ্রামের সব বয়সের পুরুষ ও অন্য গ্রাম থেকে আসা আত্মীয়-স্বজন একসঙ্গে গোয়াহরি গ্রামের বিলে মাছ শিকারে নামেন।
তবে পানি চলাচলের ব্যবস্থা না থাকায় বিলে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি নেই। এর সঙ্গে কচুরিপানা থাকায় এবারের পলো বাওয়া উৎসবে মাছ শিকারের পরিমাণ কম। তাই পলো বাওয়া উৎসবে যোগ দেওয়া অনেককেই ঘরে ফিরতে হয়েছে খালি হাতে।
পূর্ব পুরুষদের রেখে যাওয়া ঐতিহ্যকে যুগ যুগ ধরে বুকে ধারণ করে রেখেছেন গোয়াহরি গ্রামের বর্তমান প্রজন্মের বাসিন্দারা। তাই নিজেদের ঐতিহ্য অনুযায়ী প্রতি বছর মাঘ মাসের ১ তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় বার্ষিক পলো বাওয়া উৎসব।
আরও পড়ুন: পর্দা উঠল ২১তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের
সোমবার থেকে আগামী ১৫ দিন পর্যন্ত চলবে ওই উৎসব। গোয়াহরি গ্রামের পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে ওই ১৫ দিন বিলে মাছ ধরার ক্ষেত্রে নেই কোনো নিষেধাজ্ঞা।
এজন্য ওই ১৫ দিনের ভেতরে বিলে গ্রামের যে কেউ হাত দিয়ে বা ঠেলা জাল (হাতা জাল) দিয়ে মাছ ধরতে পারবেন। তবে গ্রামবাসীর ঐতিহ্য অনুযায়ী আগামী ১৫ দিন পর দ্বিতীয় ধাপে এক সঙ্গে আবারও পলো বাওয়া উৎসবে যোগ দেবে গ্রামবাসী।
এবারের পলো বাওয়া উৎসবে পলোর সঙ্গে সঙ্গে ঠেলা জাল (হাত জাল), উড়াল জাল, চিটকি জাল, কুচাসহ মাছ শিকারের বিভিন্ন রকমের সরঞ্জাম নিয়ে মাছ শিকারে অংশ নেয় কয়েক শতাধিক সৌখিন শিকারী।
আরও পড়ুন: ঢাকা লিট ফেস্টে শনিবার সন্ধ্যায় প্রদর্শিত হবে ‘রিকশা গার্ল’
তবে বিলে পানি চলাচলের ব্যবস্থা না থাকায় বিলের পানি কমে যাওয়ায় মাছ শিকার হয়েছে অনেক কম। মাছের মধ্যে রয়েছে- বোয়াল, কাতলা, রুই, কার্প, শোল, গণিয়া, মৃগেলসহ বিভিন্ন প্রজাতির ছোট মাছ।
পলো বাওয়া উৎসবে অংশ নিতে ও দেখতে সোমবার সকাল ৮টা থেকেই গোয়াহরি গ্রামবাসীর পাশাপাশি আশপাশের গ্রামের লোকজন বিলের পাড়ে এসে জমায়েত হতে থাকে।
পুরুষদের পাশাপাশি নারীরা আসে বিল পাড়ে। শিশুরাও এসেছে ঠান্ডা উপেক্ষা করে। প্রায় দুই ঘণ্টা চলে বার্ষিক ওই পলো বাওয়া উৎসব।
আরও পড়ুন: ‘নাসেক নাসেক’ দিয়ে শেষ হলো দশম ঢাকা লিট ফেস্ট
তবে অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে ঠিকমতো পলো বাইতে পারেননি অনেকেই। তবে মাছ শিকার করতে নিজ নিজ পলো নিয়ে বিলের ঝাঁপিয়ে পড়া শিকারীদের এসময় মাছ ধরার এ দৃশ্যটি উপভোগ্য ছিল।
মাছ শিকারী সাহিদুর রহমান বলেন, গত বছর ১৫টি মাছ শিকার করেছিলাম। কিন্তু এবার মাত্র একটি মাছ শিকার করেছি।
যুক্তরাজ্য প্রবাসী আলম খান বলেন, ছোট বেলায় তিনটা মাছ শিকার করেছিলাম। তা নিয়ে বাড়িতে অনেক আনন্দ হয়েছিল। দীর্ঘদিন পর আজ আবার পলো বাওয়াতে অংশ নিয়ে মাছ শিকার করতে পেরে খুব ভালো লাগছে।
আরও পড়ুন: সারাদেশে পিঠা উৎসবের মতো উৎসব ছড়িয়ে দিতে হবে: কে এম খালিদ
তাজ উদ্দিন বলেন, বিলে পানি কম থাকায় কেউ মাছ শিকার করতে পারছে, আবার কেউ পারছে না। তবে আমি দুইটি বোয়াল শিকার করতে পেরে আনন্দ লাগছে।
গ্রামে আসা আত্মীয় সৌখিন মাছ শিকারী শামীম আহমদ বলেন, পলো বাওয়াতে অংশ নিতে খালার বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলাম। আর পলো বাওয়াতে অংশ নিয়ে একটি বোয়াল শিকার করতে পেরে আনন্দই লাগছে।
পাঁচ বছর পর সৌদি আরব থেকে দেশে আসা প্রবাসী গোলাম কামরান বলেন, দীর্ঘদিন পলো বাওয়া উৎসবে অংশ গ্রহণ করা থেকে বঞ্চিত ছিলাম। তাই এবারে দেশে এসে পলো বাওয়া উৎসবে যোগ পেতে পেরে খুবই আনন্দ পেয়েছি। আর মাছ শিকার করতে পেরে এর পরিধি আরও বেড়েছে।
আরও পড়ুন: লক্ষ্মীপুরে শিক্ষার্থীদের পিঠার সঙ্গে পরিচয় করাতে ব্যতিক্রমী উৎসব
মাছ শিকার কম হওয়ার ব্যাপারে গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা ময়না মিয়া বলেন, দিন বিলের সঙ্গে এলাকার নদী-নালার পানি চলাচল না থাকার কারনে বিলের পানি কমে গেছে। তাছাড়া কচুরিপানাও আছে প্রচুর। এসব কারণে এবার মাছ কম শিকার করতে পেরেছেন শিকারীরা।
সুনামগঞ্জে সেতুর নিচে মিলল মাঝির লাশ
সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুরে আবু সুফিয়ান নামে এক মাঝির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
সোমবার (১৫ জানুয়ারি) সকালে উপজেলার ফহেতপুর ইউনিয়নের রঙ্গিয়ারচর সেতুর নিচে পড়ে থাকা অবস্থায় লাশটি উদ্ধার করা হয়।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে কিশোরের গলাকাটা লাশ উদ্ধার
নিহত আবু সুফিয়ান উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়ন খিরধরপুর গ্রামের আলী আহমদের ছেলে। এক সন্তানের জনক সুফিয়ান নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
নিহতের বাবা আলী আহমদ বলেন, আবু সুফিয়ান রবিবার রাত ৮টার দিকে খাওয়া দাওয়া শেষে ২০ হাজার টাকা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। কিন্তু আলীপুরে নৌকায় না যাওয়াতে রাতে তাকে খোঁজাখুঁজি করেও পাইনি। সকালে রঙ্গিয়ারচর সেতুর নিচে ছেলের লাশ দেখে লোকজন বাড়িতে খবর পাঠায়। কে বা কারা আমার ছেলেকে মেরে ফেলেছে!
আরও পড়ুন: নাটোরে পৃথক স্থান থেকে ২ জনের লাশ উদ্ধার
ফতেহপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক আমহেদ বলেন, এটি হত্যাকাণ্ড। যারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তাদের চিহ্নিত করে কঠিন শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
বিশ্বম্ভরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শ্যামল বণিক বলেন, ভোর ৬টায় স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে দুপুরে ঘটনাস্থলে আসি। নিহত আবু সুফিয়ান পেশায় নৌকার মাঝি।
আরও পড়ুন: সিরাজগঞ্জে যমুনার তীর থেকে অজ্ঞাত বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার
তিনি আরও বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, দুর্বৃত্তরা তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এই বিষয়টি সামনে রেখে প্রাথমিক তদন্ত চলছে। তবে এখনো কাউকে আটক দেখানো হয়নি।
ওসি বলেন, ইতোমধ্যে মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। ময়না তদন্তের জন্য লাশ সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হচ্ছে।
আরও পড়ুন: মনপুরায় মানসিক প্রতিবন্ধী নারীর লাশ উদ্ধার
সিলেটে কর্মবিরতিতে চা বাগানের শ্রমিকরা
দুই সপ্তাহ ধরে বেতন না পাওয়া, প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত বকেয়ার তৃতীয় কিস্তি না পাওয়াসহ ৭ দফা দাবিতে সিলেটের তারাপুর চা বাগানে কর্মবিরতি পালন করছেন শ্রমিকরা।
শনিবার (১৩ জানুয়ারি) থেকে কর্মবিরতি শুরু করেছেন তারা।
দ্রুত দাবি বাস্তবায়ন না হলে মঙ্গলবার থেকে কর্মবিরতির পাশাপাশি অবস্থান, বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন তারাপুর চা বাগান শ্রমিক ও পঞ্চায়েত কমিটি।
চা বাগান শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে শুকনো মৌসুমের কলম বন্ধ থাকায় উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বেতন না পাওয়ায় শ্রমিকদের ঘরে ঘরে অভাব, হাহাকার দেখা দিয়েছে। স্কুলে সন্তানদের ভর্তি করাতে পারছেন না শ্রমিকরা।
তারাপুর চা বাগানের শ্রমিক মমতা রায় বলেন, ‘চা বাগানই আমাদের জীবন। আমরা চা বাগান বন্ধ থাকুক এটা চাই না। ২ সপ্তাহ ধরে কোনো বেতন-ভাতা পাচ্ছি না। ঘরে ঘরে খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে। বাধ্য হয়ে পেটের তাগিদে আন্দোলন শুরু করেছি।’
আরও পড়ুন: সিলেট ওসমানী হাসপাতালে আত্মসাতের ৬ লাখ টাকাসহ দুই ‘ব্রাদার’ আটক
অপর শ্রমিক গীতা হালদার বলেন, ‘জানুয়ারি মাসে কোনো বেতন ভাতা নাই। সন্তানদের স্কুলে ভর্তি যেমন করাতে পারিনি, তেমনি নতুন ক্লাসের বইও কিনে দিতে পারছি না। আমরা আমাদের ন্যায্য পাওনাটা চাই।’
পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুনীল মোদী জানান, ‘কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালির কারণে বার বার বেতন আটকে যাচ্ছে। এতে শ্রমিক পরিবারে নানান সংকট বাড়ছে। বেতন না পাওয়ার কারণে সংক্রান্তি উৎসব পানসে হয়ে গেছে। আমরা অচলাবস্থার অবসান চাই। বার বার বাগান বন্ধ থাকাটা আমরাও চাই না। বাধ্য হয়ে অভাবের তাড়নায় আন্দোলন করছি।’
পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি চৈতন্য মোদী জানান, ‘গত ২ সপ্তাহ ধরে বাগান শ্রমিকরা বেতন পাচ্ছেন না। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত বকেয়া বেতনের তৃতীয় কিস্তিও আমরা পাচ্ছি না। অধিকার হারিয়ে, অধিকার পাবার দাবিতে ১৬ জানুয়ারি মঙ্গলবার সকাল থেকে কঠোর আন্দোলন শুরু করবে।’
আরও পড়ুন: তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে শুল্ক কর বৃদ্ধির কারণে পাথর আমদানি বন্ধ
সিলেট ওসমানী হাসপাতালে আত্মসাতের ৬ লাখ টাকাসহ দুই ‘ব্রাদার’ আটক
সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক নার্সের ছয় লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে হাসপাতালের দুই পুরুষ নার্সকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) দুপুরে তাদের আটক করা হয় বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মাহবুবুল আলম ভুঁইয়া।
তিনি সাংবাদিকদের জানান, আটক দুই ব্রাদার হলেন সুমন ও আমিনুল। তাদের একজন হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগে এবং অপরজন বহির্বিভাগে কাজ করেন।
আরও পড়ুন: নারায়ণগঞ্জে ভোটকেন্দ্রে ককটেলের বিস্ফোরণ, যুবক আটক
ব্রিগেডিয়ার মাহবুব দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা সংস্থার বরাত দিয়ে সাংবাদিকদের জানান, হাসপাতালের নার্সিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শামিমা প্রথমে তাকে জানান, সাদা পোশাকের একদল লোক সিনিয়র নার্স আমিনুলকে ধরে নিয়ে গেছে। এরপরই
ডিজিএফআই’র সংশ্লিষ্টরা তাকে ফোন করে জানিয়েছেন, অবৈধ লেনদেনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে ৬ লাখ টাকাসহ তারা আমিনুল ও সুমনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছেন।
তিনি আরও জানান, একজন নার্সের এরিয়ার বিল সংক্রান্ত লেনদেনের সূত্র ধরে এদের আটক করা হয়। তবে আমিনুলকে আটক করা হলেও ওই গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তথ্য ছিলো, ওসমানীর নার্সিং অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি আলোচিত সমালোচিত ইসরাইল আলী সাদেক সেখানে লেনদেন করার কথা ছিলো। কিন্তু তিনি না গিয়ে সেখানে অন্যদের পাঠিয়েছেন।
আরও পড়ুন: ভোট কারচুপির অভিযোগে প্রিসাইডিং অফিসারসহ আটক ৩
সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মাহবুব আরও জানান, হাসপাতালটিকে জিম্মি করতে বিভিন্ন দালাল চক্র সক্রিয়, এটা সবাই জানেন। তবে উপযুক্ত তথ্য প্রমাণের অভাবে কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেন না। গোয়েন্দা সংস্থাটি এখন এ বিষয়ে কাজ করছে।
তিনি জানান, ছয় লাখ টাকাসহ আটক আমিনুল ও সুমনের ব্যাপারে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি বোর্ড গঠন করে পুরো বিষয়টি তদন্ত করবেন।
এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক।
আরও পড়ুন: আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে রাসিক প্যানেল মেয়র আটক
তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে শুল্ক কর বৃদ্ধির কারণে পাথর আমদানি বন্ধ
সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে পাথর আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে। পণ্য আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্ক কর বৃদ্ধির প্রতিবাদে পাথর আমদানি বন্ধ করে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
তামাবিল স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারকরা সোমবার (৮ জানুয়ারি) দুপুর ১২টায় এক মতবিনিময় সভা থেকে ভারত থেকে পাথর আমদানি বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তামাবিল স্থলবন্দরে অবস্থতি বাংলাদশে শুল্ক বিভাগ পণ্য আমদানিতে প্রতি টনে পূর্বের নির্ধারিত এসেসমেন্ট ১২ ডলারের পরিবর্তে বর্তমানে ১৩ ডলার করেছে। বাড়তি শুল্ক কর প্রত্যাহাররে দাবিতে সোমবার (৮ জানুয়ারি) থেকে উভয় দেশে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ করে দেন পাথর আমদানিকারকরা।
আমদানিকারকরা জানান, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে প্রতি টনে ১৩ ডলার এসেসমেন্ট রেট নির্ধারণ করায় ব্যবসায়ীদের পূর্বের তুলনায় ৫০ টাকা হারে বেশি রাজস্ব দিতে হবে। এই হারে রাজস্ব বাড়ার কারণে ব্যবসায়ীদের লোকসান গুণতে হবে।
আরও পড়ুন: ৫দিন পর সিলেটের সব বন্দর দিয়ে পাথর ও চুনাপাথর আমদানি শুরু
ফলে ব্যবসায়ীরা বাড়তি শুল্ক হার প্রত্যাহারে দাবিতে পণ্য আমদানি বন্ধ রেখেছেন। শুল্ক কর না কমানো পর্যন্ত তারা পাথর আমদানি করবেন না বলে জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে তামাবিল চুনা পাথর ও কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি লিয়াকত আলী বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (জারাবো) ভারত থেকে পাথর ও চুনাপাথর আমদানির উপর এসেসমেন্ট ভ্যালু প্রতি মেট্রিক টনে বৃদ্ধি করে। এই বাড়তি শুল্ক দিয়ে পণ্য আমদানি করতে হলে আমদানিকারকরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বেন।
তাই তামাবিলসহ সিলেটের সবকটি বন্দর ও শুল্ক স্টেশন দিয়ে পাথর ও চুনপাথর পাথর আমদানি বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।
জারাবো কর্তৃক সিলেট অঞ্চলের স্থলবন্দরগুলোতে ভারত থেকে আমদানি করা বোল্ডার স্টোন, স্টোন চিপস এবং লাইমস্টোন পাথরের উপর অতিরিক্ত শুল্ক মূল্য বৃদ্ধি সংক্রান্ত সিলেট কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট কর্তৃক গত ৪ জানুয়ারি এক চিঠিতে ৮ জানুয়ারি থেকে বাড়তি শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা ছিল।
আরও পড়ুন: আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির প্রতিবাদে সিলেট সীমান্ত দিয়ে পাথর ও চুনাপাথর আমদানি বন্ধ
সিলেট-৩ আসনে ফলাফল প্রত্যাখান দুলালের
নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম, সন্ত্রাসী হামলা ও জালিয়াতির অভিযোগ করেছেন সিলেট-৩ আসনের সতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল।
তিনি রবিবার (৭ জানুয়ারি) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ট্রাক প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। সোমবার (৮ জানুয়ারি) দুপুরে নগরীর পূর্ব জিন্দাবাজার এলাকায় একটি অভিজাত হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এমন অভিযোগ করেন।
আরও পড়ুন: সিলেটে বিএনপির ৪৬ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা
পাশাপাশি ভোটের দিন বিকাল পৌনে ৪টায় সামগ্রিক অনিয়ম বিবেচনায় তিনি নির্বাচনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রত্যাহার করে নেন বলেও দাবি করেন।
ডা. দুলালের অভিযোগ, তার নির্বাচনি এলাকার প্রায় ৪৭টি ভোটকেন্দ্র থেকে ট্রাক প্রতীকের এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়। বিকাল ৩টার দিকে নৌকার এজেন্টরা নির্বাচন পরিচালনাকারীদের সহায়তায় জাল ভোট প্রদানের উৎসব শুরু করেন।
তাছাড়া ট্রাক প্রতীকের কর্মীদের মারধর, হুমকি প্রদান ও পেশীশক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। এসব বিষয়ে জেলা রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট থানায় অভিযোগ করলেও তারা তা আমলে নেয়নি।
আরও পড়ুন: সিলেট-২ আসন: পুনঃনির্বাচনের দাবি চার প্রার্থীর
লিখিত বক্তব্যে ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখান করে বলেন, নির্বাচনি প্রচারকালে তার কর্মীদের ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য হুমকি দেওয়া হয়। পোস্টার, লিফলেট ছিঁড়ে ফেলা হয়। নির্বাচনের কয়েকদিন আগে নৌকার প্রার্থীর কম্বল বিতরণ, স্কুলে অনুদানের ঘোষণা, তোরণ নির্মাণসহ নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন ছিল স্বাভাবিক ব্যাপার।
নির্বাচনের দিন দুপুর থেকেই শুরু হয় সন্ত্রাস আর জাল ভোটের উৎসব। সকাল থেকেই তার বিভিন্ন এজেন্টকে কেন্দ্রে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয় ও কোনো কোনো জায়গায় ঢুকার পর বের করে দেওয়া হয়। দুপুর সাড়ে ১২টায় বালাগঞ্জের বোয়ালজুর বিদ্যালয় কেন্দ্রে জাল ভোট প্রদানে বাধা দিলে তার একজন কর্মীকে নৌকার সমর্থকরা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করে মারাত্মক জখম করে।
শুধু তাই নয় আক্রান্ত ব্যক্তিকে আটকে রেখে অন্যান্য এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়। একই সময় বালাগঞ্জের বোয়ালজুড় ইউনিয়নের বিভিন্ন কেন্দ্রে হামলা, ট্রাক এজেন্টদের ভয়ভীতি প্রদর্শন ও কেন্দ্র্র থেকে বেরিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: সিলেট-৪ আসনে তৃণমূল বিএনপি প্রার্থীর ভোট বর্জন
সোনাপুর কেন্দ্রে সব এজেন্টকে বের করে দেওয়া হয়। নির্বাচন পরবর্তী এখন পর্যন্ত তার নির্বাচনি এলাকায় বিভিন্ন কর্মীদের মারধর ও বাড়ি ছাড়া করার ঘটনা ঘটেছে। তিনি স্থানীয় নির্বাচন কমিশনের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করে ফলাফল প্রত্যাখান করেন।
তিনি আরও বলেন, কামালবাজার জালালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রটি নৌকার প্রার্থীর জন্য সকাল সাড়ে ৯টা থেকে উক্ত কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। কারণ নৌকার প্রার্থী নিজে প্রথম ভোট প্রদানের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ কার্যক্রম শুরু করবেন সেজন্য এই অনিয়ম।
আরও পড়ুন: সিলেটে ভোটকেন্দ্রের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ, আগুন
সিলেট-২ আসন: পুনঃনির্বাচনের দাবি চার প্রার্থীর
ভোটকেন্দ্রে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ তুলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সিলেট-২ আসনের ফলাফল বাতিল করে পুণরায় নির্বাচনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন চার প্রার্থী।
সোমবার (৮ জানুয়ারি) দুপুরে নগরীর পূর্ব জিন্দাবাজারের একটি অভিজাত রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলন করে তাদের অভিযোগগুলো বিস্তারিত তুলে ধরেন।
এর আগে রবিবার দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে নিজেদের এজেন্টদের মারধর করে কেন্দ্রে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ তুলে ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন তারা।
আরও পড়ুন: সিলেট-২ আসনে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস
তারা হলেন, গণফোরামের প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান (উদীয়মান সূর্য), জাতীয় পার্টির প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য ইয়াহইয়া চৌধুরী (লাঙ্গল), স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমান (ট্রাক) এবং তৃণমূল বিএনপির মোহাম্মদ আবদুর রব (সোনালী আঁশ)।
সংবাদ সম্মেলনে এই চার প্রার্থী ভোট বাতিল করে আবারও ভোট গ্রহণের দাবি জানান। না হলে তারা আইনি লড়াইসহ আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহিবুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, নির্বাচনের দিন রবিবার যেটি হয়েছে সেটি সম্পূর্ণ একটি প্রহসনের নির্বাচন। আমরা প্রধানমন্ত্রী ও ইলেকশন কমিশনের কথায় বিশ্বাস করে প্রতারিত হয়েছি। রবিবারের এটি কোনো নির্বাচনই ছিল না। তাই আমরা বর্জন করতে বাধ্য হয়েছি। আমাদের এজেন্টদের মারধর, জোর করে বের করে দেওয়া, কেন্দ্র দখল করে টেবিল কাস্টসহ ব্যাপক অনিয়মের কারণে আমরা নির্বাচনের দিন দুপুর ১২টার আগেই ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত নেই। পরে বেলা ২টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেই আমরা চারজন। আমরা সবাই রবিবারের সিলেট-২ আসনের সব কেন্দ্রের ভোট ও ফলাফল প্রত্যাখ্যান করছি এবং আবারও নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি। আমরা আমাদের আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করে দু-এক দিনের মধ্যে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হবো। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে পাশাপাশি আমরা আন্দোলনও চালিয়ে যাব।
আরও পড়ুন: সিলেট-৪ আসনে তৃণমূল বিএনপি প্রার্থীর ভোট বর্জন
গণফোরামের প্রার্থী মোকাব্বির খান বলেন, নির্বাচনের দিন আমরা পদে পদে বাধাগ্রস্ত হয়েছি। সরকারের বিভিন্ন পর্যায় ও ইলেকশন কমিশন থেকে আমাদের বার বার বলা হয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হবে। কিন্তু তাদের কথায়-কাজে মিল পাওয়া যায়নি, প্রহসনের নির্বাচন উপহার দেওয়া হয়েছে।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইয়াহইয়া চৌধুরী বলেন, আমাকে একটি সেন্টারে অবরুদ্ধ করে রেখে নৌকার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা টেবিল কাস্ট করেছেন। আমি বার বার ফোন করেও নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা প্রশাসনের কোনো সহযোগিতা পাইনি। আমি প্রায় দুই ঘণ্টা তালাবদ্ধ অবস্থায় ছিলাম। এরপরই আমরা ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত নেই। আমাদের এজেন্টদের নৌকার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা অনেক কেন্দ্রে ঢুকতেই দেয়নি, অনেক কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছে। এই অবস্থায় নির্বাচন বর্জন করা ছাড়া আমাদের আর কিছু করার ছিলো না। তা ছাড়া প্রহসনের নির্বাচন দেখে আমি নিজেও ভোট দিইনি।
তৃণমূল বিএনপির আব্দুর রব মল্লিক বলেন, আমি একটি সূত্রে জানতে পেরেছি, আগের রাতেই ৩৮টি কেন্দ্রের ব্যালট পেপারে নৌকায় সিল মারা হয়ে গিয়েছিল। আমরা এই চার প্রার্থী দীর্ঘ প্রবাস জীবন কাটিয়েছি। সেখানকার সুস্থ ধারার রাজনীতি চর্চা এখানেও করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। একটি প্রহসনের নির্বাচন আমাদেরকে উপহার দেওয়া হয়েছে। আমরা এ নির্বাচনে সিলেট-২ আসনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে পুনঃভোটের আবেদন করছি। পাশাপাশি আমরা আইনি লড়াই চালিয়ে যাবো।
আরও পড়ুন: সিলেটে ভোটকেন্দ্রের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ, আগুন
উল্লেখ্য, ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী সিলেট-২ আসনে নৌকা প্রাতীকে ৭৮ হাজার ৩৮৮ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী শফিকুর রহমান চৌধুরী।
তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহিবুর রহমান ট্রাক প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ১৬ হাজার ৬৬১টি।
জাতীয় পার্টির ইয়হইয়া চৌধুরী লাঙল প্রতীকে ৬ হাজার ৮৭৪, গণফোরাম প্রার্থী মোকাব্বির খান উদীয়মান সূর্য প্রতীকে ১ হাজার ৯২২টি এবং তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী আব্দুর রব মল্লিক সোনালী আঁশ প্রতীকে ৯৪৪টি ভোট পেয়েছেন।
আরও পড়ুন: বরিশাল-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের উপর হামলা-গুলির অভিযোগ
সিলেটে ভোটকেন্দ্রের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ, আগুন
সিলেট নগরীর পাঠানটুলা এলাকায় দুটি ভোটকেন্দ্রের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের পাশাপাশি সড়কে টায়ার ফেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে একদল লোক। এ সময় কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা চালায় শতাধিক ব্যক্তি। পরে পুলিশ এসে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, পাশাপাশি অবস্থিত পাঠানটুলা দ্বিপাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয় ও পাঠানটুলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বেলা ১১টার দিকে শতাধিক ব্যক্তি হঠাৎ লাঠিসোঁটা নিয়ে এসে কেন্দ্রে ঢোকার চেষ্টা করে। এ সময় তারা সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে ককটেল বিস্ফোরণের পাশাপাশি টায়ারে আগুন জ্বালান।
আরও পড়ুন: নারায়ণগঞ্জে ভোটকেন্দ্রে ককটেলের বিস্ফোরণ, যুবক আটক
খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ এসে শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় বিক্ষোভকারীরা দ্রুত পালিয়ে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিক্ষোভকারীরা ‘অবৈধ সরকারের অবৈধ ভোট, মানি না মানব না’ বলে স্লোগান দিচ্ছিলেন। তবে তাদের বেশিরভাগেরই মুখে মাস্ক ও মাথায় হেলমেট ছিল।
আরও পড়ুন: হাজারীবাগে ককটেল বিস্ফোরণ, শিশুসহ আহত ৪
এবিষয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. আজবাহার আলী শেখ জানান, কেন্দ্র দখল করে ভোট ভণ্ডুল করার চেষ্টা চালিয়েছিল একদল বিক্ষোভকারী। যদিও পুলিশ ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যায়।
পুলিশ অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে। প্রাথমিকভাবে তারা বিএনপির কর্মী-সমর্থক বলে জানা গেছে বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন: খুলনায় ভোট কেন্দ্রের সামনে থেকে ককটেল উদ্ধার