সিলেট
ওসমানীনগরে ট্রাক উল্টে সবজি ব্যবসায়ী নিহত, আহত ৬
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ওসমানীনগর উপজেলায় ট্রাক উল্টে এক সবজি ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ছয় পথচারী।
সোমবার দুপুর পৌনে ১টার দিকে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের সাদীপুর ইউনিয়নের ভাঙ্গা এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে।
নিহত সবজি ব্যবসায়ী সাজিদ মিয়া (৪০) হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার নোয়ারাই গ্রামের বাসিন্দা।
জানা গেছে, হবিগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী ট্রাকটি দুপুর পৌনে একটার দিকে ভাঙা এলাকায় আসামাত্র উল্টে যায়। এ সময় ট্রাকে থাকা সবজি ব্যবসায়ী সাজিদ মিয়া ঘটনাস্থলেই নিহত হন এবং আরও অন্তত ছয়জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।
আহতরা হলেন- আকরাম হোসেন, ইমরান আহমদ, জালাল, এমরান। বাকিদের পরিচয় এখনও জানা যায়নি।
খবর পেয়ে ওসমানীনগর ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা ও শেরপুর হাইওয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে নিহতের লাশ উদ্ধার করে এবং আহতদের সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
আরও পড়ুন: নাটোরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে হাইওয়ে পুলিশের শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পরিমল চন্দ্র দেব বলেন, ট্রাক উল্টে একজন মারা গেছেন। এছাড়া অন্তত আরও ছয়জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।
তিনি আরও বলেন, আহতদের সিলেট ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে এবং সাজিদ মিয়ার লাশ ওসমানী হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
ওসি পরিমল আরও বলেন, ঘটনার পরপরই ঘাতক ট্রাকের চালক পালিয়ে গেছে। তাকে আটক করা যায়নি।
এদিকে- দুর্ঘটনার পর ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরুদ্ধ করে রাখেন স্থানীয়রা। ফলে প্রায় এক ঘণ্টা এ সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরবর্তীতে পুলিশের হস্তক্ষেপে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
বর্তমানে এ সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছেন হাইওয়ে থানার ওসি পরিমল চন্দ্র দেব।
আরও পড়ুন: চাঁপাইনবাবগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় পথচারী নিহত
কেরানীগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত, আহত ২
রাস্তা নয়, হাওরাঞ্চলে ফ্লাইওভার নির্মাণ হবে: পরিকল্পনামন্ত্রী
হাওরাঞ্চলে আর কোনো সড়ক নির্মাণ করবে না সরকার, তবে প্রয়োজনে ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
তিনি বলেন, সরকার হাওরে আর সড়ক নির্মাণ করবে না। যেখানে প্রয়োজন হবে সেখানে উড়াল সড়ক নির্মাণ করা হবে।
রবিবার সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাথারিয়া ইউনিয়নে বন্যাদুর্গত পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী এ সময় বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের মহাপরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে সুনামগঞ্জের বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে গেছেন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বড় প্রকল্প আসছে৷ প্রথমে ত্রাণ, এরপর নির্মাণ। যাদের ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে তাদেরকে সহায়তা দেয়া হবে।
তিনি বলেন, যা সহায়তা আসছে তা প্রয়োজনের তুলনায় কম হলেও এ মানবিক সহায়তা অব্যাহত থাকবে। ধৈর্যের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনোয়ার উজ জামান এবং সঞ্চালনা করেন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নূর হোসেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রীর একান্ত রাজনৈতিক সচিব হাসনাত হোসেন, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান দোলন রানী তালুকদার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি হাজী তহুর আলী, মাওলানা আবদুল কাইয়ূম, শান্তিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খালেদ চৌধুরীসহ প্রমুখ।
আরও পড়ুন: নৌকাডুবি: হাওরে নিখোঁজ তিনজনের লাশ উদ্ধার
ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না কিশোরগঞ্জের হাওরের ধানচাষিরা
সিলেটে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৫ হাজার পরিবারকে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ
সিলেটে বন্যায় ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া পাঁচ হাজার পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। হিসাব মতে, প্রতি পরিবার ১০ হাজার টাকা করে পাবে।
রবিবার দুপুর ১২টার দিকে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বন্যাত্তোদের পুনর্বাসন ও ত্রাণ বিতরণ বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো.মজিবুর রহমান অনুদানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকাসহ ১৩টি উপজেলা, পাঁচ পৌরসভা বন্যা কবলিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী প্রতিনিয়িত আমাদের খোঁজখবর নিচ্ছেন। শনিবার প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বন্যায় যাদের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলো মেরামতের জন্য প্রাথমিকভাবে এই বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ৪ জুলাই থেকে বরাদ্দের টাকা বিতরণ শুরু করা হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যার পানি কমছে
তিনি বলেন, উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচ হাজার ব্যক্তি যাদের ঘর-বাড়ি বিধস্ত বা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেই সকল দরিদ্র মানুষের তালিকা আমরা পেয়েছি। আমিসহ উপজেলা কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়িতে গিয়ে তাদের হাতে টাকা তুলে দেব।
জেলা প্রশাসন জানান, ইতোমধ্যে বন্যাকবলিত সিলেট জেলায় প্রায় তিন কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সরকারিভাবে প্রাপ্ত টাকা প্রায় পৌনে তিন কোটি, বাকি টাকা বেসরকারিভাবে প্রাপ্ত। তবে এই টাকাই যথেষ্ট নয় বলে মনে করছে সিলেট জেলা প্রশাসন। এখনও বন্যা পরিস্থিতি থাকায় বন্যার্তদের মধ্যে বিতরণের জন্য আরও ৭০ লাখ টাকা চেয়েছেন তারা। এর মধ্যে নগদ বিতরণের জন্য প্রয়োজন ৫০ লাখ টাকা। এই টাকা বরাদ্দ চেয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসকের তথ্যানুসারে, গত ১৪ জুন শুরু হয়ে এ পর্যন্ত চলমান দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় সিলেট সিটি করেপোরেশনসহ জেলার ১৩ উপজেলার ১০৫ ইউনিয়ন ও পাঁচ পৌরসভা প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় জেলার চার লাখ ৮৪ হাজার ৩৮৩ পরিবারের প্রায় ৩০ লাখ লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েন। প্রায় ৪১ হাজার ঘরবাড়ি ভেঙে যাওয়া, হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমির ক্ষতি হওয়া ছাড়াও বন্যায় ১০ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এখনও নিম্নাঞ্চলের অনেক ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, পুকুর, রাস্তাঘাট পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।
মো. মজিবুর রহমান জানান, বন্যাকবলিতদের মধ্যে এ পর্যন্ত এক কোটি ৯২ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে প্রাপ্ত ৬৫ লাখ টাকাও বিতরণ করা হয়েছে। এর বাইরে ১ হাজার ৬১২ মেট্রিক টন চাল, শিশুখাদ্যের জন্য ১০ লাখ টাকা, গোখাদ্যের জন্য ১০ লাখ টাকা এবং ২০ হাজার ২১৮ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
তিনি জানান, এখনও বন্যা পরিস্থিতি বিদ্যমান থাকায় ত্রাণ কার্য অব্যাহত রাখতে নগদ বিতরণের জন্য ৫০ লাখ টাকা, শিশুখাদ্যের জন্য ১০ লাখ টাকা এবং গোখাদ্যের জন্য ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়ে দুযোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসক জানান, ত্রাণ হিসেবে বিতরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ৫০ হাজার ১১২ প্যাকেট (ছোট) দুধ পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি কমেছে, বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বন্যায় বেসরকারিভাবে (বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে) নগদ ২৯ লাখ ৪৩ হাজার ৫১৩ টাকা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ২২ লাখ ৭৮ হাজার টাকা, ৫১ হাজার ৮২৫ প্যাকেট খাবার পেয়ে বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারিভাবে ২২ হাজার পিস পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, ১৩ টন চাল, ১০ হাজার পিস স্যালাইন, ১০০ পিস গ্যাস লাইট, ৬০০ প্যাকেট শিশুখাদ্য, ১২শ পিস মোমবাতি ও ১০টি নৌযান পাওয়া গেছে জেলা প্রশাসন। যা সবই বন্যার্তদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।
বন্যা: সিলেটে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট
টানা চারদিন বৃষ্টির পর রোদের দেখা মিলেছে সিলেটে। শনিবার সকাল থেকে আর বৃষ্টি হয়নি সিলেটে। বৃষ্টি থামায় কমতে শুরু করেছে নদ নদীর পানিও। শনিবার সিলেটের সবগুলো নদীরই পানি কমেছে। পানি কমছে প্লাবিত এলাকাগুলো থেকেও। তবে এখনও নগরের বাইরের বেশিরভাগ এলাকা জলমগ্ন হয়ে আছে। প্রায় ১৭দিন ধরে পানিবন্দি থাকা মানুষের দুর্ভোগ সীমা ছাড়িয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার, কানাইঘাট পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার কমেছে। কুশিয়ারা নদীর পানি অমলসীদ পয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটার, শেওলায় ৫ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জে ২ সেন্টিমিটার কমেছে। কমেছে, লোভা, সারি এবং ধলাই নদীর পানিও।
অনেকদিন পর রোদ উঠায় বাসা পরিচ্ছন্নতার কাজ করছিলেন নগরের তেররতন এলাকার বাসিন্দা ইসমাইল আলী। তিনি বলেন, ঘরের ভেতরে প্রায় আটদিন পানি ছিল। ছয়দিন আগে পানি নামলেও বৃষ্টির কারণে ধোয়ামোছা করতে পারিনি। আজ থেকে পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু করেছি। পানি নামার পর এখন ঘরের ভেতরসহ আশপাশে তীব্র দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। দুর্গন্ধের কারণে ঘরেও থাকা যাচ্ছে না।
আরও পড়ুন: বন্যায় সিলেটে ৪০ হাজারের বেশি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত
দোকান থেকে পানি নামলেও এখনও সড়ক তলিয়ে আছে জানিয়ে দক্ষিণ সুরমার বঙ্গবীর রোডের ব্যবসায়ী মুকুল আহমদ বলেন, আজ ১৭ দিন হলো পানিবন্দি হয়ে আছি। ব্যবসাপাতি সব চুলোয় গেছে। এভাবে আর কতদিন থাকতে হবে কে জানে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, সিটি করপোরেশন ছড়া, খালের ময়লা-আবর্জনা পরিচ্ছন্ন করছে। যেদিকে খবর পাওয়া যাচ্ছে, সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা দল সেদিকে গিয়ে অভিযান চালাচ্ছে। পুরো নগরী ব্লিচিং পাউডার দিয়ে পরিষ্কার করা হবে বলে জানান তিনি।
পানি ধীরে কমছে জানিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বলেন, পানি নামার গতি খুবই ধীর। তবে আগামী কয়েকদিন বন্যা পরিস্থিতি আর অবনতি হওয়ার শঙ্কা নেই।
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় মোকাবিলা করছেন সিলেটবাসী। নগরী ও জেলার ৮০ ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়। এমন বন্যা মোকাবিলা করতে হবে, তা স্বপ্নেও ভাবেননি এ অঞ্চলের মানুষ। এতে মানবিক বিপর্যয় দেখা দেয়। বন্যায় অর্ধশতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘরবাড়ি, গবাদিপশু-হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল ভেসে গেছে বানের পানিতে।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যায় ঘরবন্দী সাড়ে ৪ লাখ শিক্ষার্থী
উপদ্রুত এলাকার লোকজন বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করেন। এ অবস্থায় প্রাণে বাঁচা লোকজন খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে ভুগছে।
গত ১৫ জুন থেকে ভারি বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে পরদিন থেকে অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে বন্যার পানি। ভারি বর্ষণ বন্যায় বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রগুলোতে পানি উঠায় সিলেটে সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়ে। ফলে সিলেট নগরের মানুষও পানি সংকটে পড়েন।
আর বন্যা কবলিত উপজেলাগুলোর টিউবওয়েল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় খাবারের পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানির সংকট প্রকট হয়ে ওঠে। চারদিকে পানিতে থৈ থৈ করলেও খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দেয় সবখানে।
যদিও সে সময় থেকে স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠনগুলো ও ব্যক্তি উদ্যোগে বানভাসিদের পাশে দাঁড়ায় খাবার ও পানি নিয়ে।
বন্যায় সিলেটে বন্যা কবলিত হয়ে ৮০ ভাগ নলকূপ পানিতে তলিয়ে যায় বলে জানিয়েছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আলমগীর হোসেন বলেন, সিলেট জেলার ১৩টি উপজেলার ৯৯ টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। জেলায় ৩৫ হাজার নলকূপের মধ্যে ২৭ হাজার বন্যার পানিতে তলিয়েছে। আর বেসরকারি প্রায় দুই হাজার নলকূপ প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া আটটি মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট দেয়া হয়েছে। একটি প্লান্ট থেকে অন্তত পাঁচ হাজার লিটার পানি সরবরাহ করা যায়। বিশেষ করে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, বিশ্বনাথ, ফেঞ্চুগঞ্জে এবং নগর এলাকায় একটি করে মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট দেয়া হয়েছে। আর দুটি রিজার্ভে রাখা হয়েছে। এছাড়া বন্যার পানি কমলে নলকূপের পানি কিভাবে বিশুদ্ধ করতে হবে, সে পদ্ধতি জানাতে প্রচারণা অব্যাহত রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যা: ৩৭ হাজার মানুষ এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে
হবিগঞ্জে মোবাইল কেনা-বেচা নিয়ে সংঘর্ষে যুবক নিহত
হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে মোবাইল ফোন কেনা-বেচা নিয়ে তর্ক-বিতর্কের জের ধরে দু’পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত ও অন্তত ৬০ জন আহত হয়েছেন। শুক্রবার বিকালে উপজেলার আলমপুরে কমপক্ষে দুই ঘন্টাব্যাপী এ সংঘর্ষ চলে। এ সময় হবিগঞ্জ-নবীগঞ্জ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
নিহত মামুন মিয়া (৩৫) আলমপুর গ্রামের আমির হামজার ছেলে।
হবিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, তদন্ত) দৌস মোহাম্মদ জানান, বৃহস্পতিবার রিপন মিয়া ও সোহেল মিয়া নামে দুই যুবকের মধ্যে মোবাইল ফোন কেনা-বেচা নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়।
এক পর্যায়ে স্থানীয় লোকজন দুই যুবককে শান্ত করেন। শুক্রবার বিকালে ওই বিষয় নিয়ে আবারও দুই যুবকের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের লোকজন দেশিয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।
খবর পেয়ে হবিগঞ্জ সদর ও বানিয়াচং থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ঘন্টাব্যাপী চেষ্টার পর টিয়ার সেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণ করেন। পরে আহতদের উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠালে চিকিৎসক মামুন মিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন।
আরও পড়ুন: ভোলা-বরিশাল সীমান্তে চর দখল নিয়ে সংঘর্ষ, পুলিশসহ আহত ২০
নারায়ণগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষে আহত ২০
সিলেটে বন্যার পানি কমছে
গত দুদিন বাড়ার পর শুক্রবার থেকে আবার সিলেটে সুরমা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার ও সিলেট পয়েন্টে ৪ সেন্টিমটার কমেছে। তবে কুশিয়ারা নদীর পানি স্থিতিশীর অবস্থায় আছে।
এদিকে, শুক্রবারও সিলেটে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। তবে এই বৃষ্টিতে পানি বাড়ার শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের উপসহকারী প্রকৌশলী একেএম নিলয় পাশা।
টানা কয়েকদিনের বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীর পানি গত মঙ্গলবার থেকে বাড়ছিল। বন্যার শঙ্কাও ফের দেখা দিয়েছিল। তবে শুক্রবার সকাল থেকে নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল থেকেও কিছুটা পানি নেমেছে।
আরও পড়ুন: হবিগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত
সিলেটের সদর উপজেলার মোগলগাও এলাকার টুনু মিয়া বলেন, ‘পানি আজ সকাল থেকে অনেকটা কমেছে। তবে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি আছে। কয়েকদিন আগে যে ভয়াবহ বন্যা দেখেছি তা আর দেখতে চাই না। ঘরের সব জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। এসবের মধ্যে আবার পানি আসা দেখে ভয় পেয়েছিলাম। আজকে কিছুটা স্বস্তি লাগছে।’
গোয়াইনঘাটের ইসলাম উদ্দিন বলেন, ‘বৃষ্টি কমায় পানি কমছে। বৃহস্পতিবার রাতে তেমন একটা বৃষ্টি হয়নি। আবার বৃষ্টি হলে পানি বাড়বে। এই জুন-জুলাই মাসটা আসলে আমরা ভয়ে থাকি। প্রতি বছর এখানে এই সময়টা পানি আসে।’
দক্ষিণ সুরমার হুমায়ূন কবির লিটন জানান, প্রায় দুই সপ্তাহ পর তার বাড়ির সামনের রাস্তা থেকে পানি কমতে শুরু করেছে।
গত বুধবার রাত থেকে সিলেটে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। আরও তিন দিন বৃষ্টি থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
শুক্রবার সকালে নগরের বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে ঘুরে কিছু এলাকায় জলাবদ্ধ দেখা গেছে। নগরের মির্জাজাঙ্গাল, তালতলা, যতরপুর, শাহজালাল উপশহর এলাকায় পানি জমতে দেখা গেছে। এ ছাড়া দক্ষিণ সুরমার বঙ্গবীর সড়কে জলাবদ্ধতা রয়েছে।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বলেন, শুক্রবার বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকলেও এর ফলে বন্যার কোনো পূর্বাভাস নেই। বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পূর্বাভাস কেন্দ্রের তথ্যে এমনটি জানা গেছে। তাদের পূর্বাভাস অনুযায়ী আজ বৃষ্টি হয়ে বৃষ্টির অবস্থা উন্নতি হবে। বন্যা হওয়ার পূর্বাভাস নেই।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি কমেছে, বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল
তিনি বলেন, বর্তমানে আষাঢ় মাসের মাঝামাঝি সময়, সামনে শ্রাবণ মাস। এই সময়ের মধ্যে আরও দুই একটি বন্যা দেখা দেয়। এ জন্য পূর্বাভাস কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছে জুলাইয়ের শেষের দিকে একটি বন্যা হতেও পারে। এরপরও ১০ দিন আগে আবহাওয়া পূর্বাভাস জানা যাবে। বর্তমানে ভারতের দিকে বৃষ্টি হলেও আগের তুলনায় কম বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এছাড়া সিলেটের বিভিন্ন বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি জানান।
সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি কমেছে, বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল
সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি গতকালের তুলনায় কিছুটা কমলেও জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল আছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সকালে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের কাছে সুরমা নদীর পানির উচ্চতা ছিল সাত দশমিক ৬৩ সেন্টিমিটার। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় সুরমা নদীর পানির উচ্চতা সাত দশমিক ৭৬ সেন্টিমিটার ছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে বৃষ্টি হয়েছে ২১ মিলিমিটার। এর আগের দিন বৃষ্টি হয়েছিল ১৮৫ মিলিমিটার।
আরও পড়ুন: সিলেটে ফের বৃষ্টি, বন্যার অবনতির আশঙ্কা
পাউবোর কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী ২৪ ঘণ্টা বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে। বৃষ্টি হলেই জেলার নদ-নদীর পানি কিছুটা বাড়বে। তবে সেটার পরিমাণ বেশি হবে না। আগের মতো পরিস্থিতি হওয়ার কোনো পূর্বাভাস নেই।
এদিকে জেলায় বানভাসি অনেকেই এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে রয়ে গেছেন। সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে তাঁবু টাঙিয়ে শত শত পরিবার দিন যাপন করছেন। তাদের অনেকেই বাড়িঘর হারিয়েছেন। অন্যদের ঘর থেকে পানি নামছে না। বন্যা পরিস্থিতি উত্তরণ না হওয়ায় চারটি উপজেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ এখনো বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যায় ঘরবন্দী সাড়ে ৪ লাখ শিক্ষার্থী
জানা গেছে, সুনামগঞ্জ পৌর শহরের কাজীর পয়েন্ট, বিলপাড়া, নবীনগর, পশ্চিম নতুনপাড়া এলাকার যেসব স্থানে বৃহস্পতিবার নতুন করে পানি উঠেছিল, রাতে বৃষ্টি না হওয়ায় সেসব স্থান থেকে পানি নেমে গেচে।
সিলেটে ১৪০ টিরও বেশি মেডিকেল টিম কাজ করছে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, বর্তমানে সিলেটে ১৪০টিরও বেশি মেডিকেল টিম কাজ করছে; প্রস্তুত রয়েছে আরও দু’হাজারের বেশি কর্মী।
সোমবার দুপুরে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের সম্মেলন কক্ষে সিলেট বিভাগের বন্যা পরিস্থিতি, ত্রাণ ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ কথা জানান তিনি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এবারের বন্যায় না খেয়ে কিংবা বিনা চিকিৎসায় একজন মানুষও মারা যায়নি, এটাই বড় প্রাপ্তি।
জাহিদ মালেক আরও বলেন, বন্যা পরবর্তী অসুখ মোকাবিলায় স্বাস্থ্য বিভাগ প্রস্তুত আছে।
আরও পড়ুন: সিলেটে পানি কমছে ধীরগতিতে, বাড়ছে দুর্ভোগ
বন্যা কবলিত এলাকায় কমিউনিটি ক্লিনিক, স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও হাসপাতালে সৃষ্ট সমস্যা নিরসনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
চলমান বন্যায় ১৮ জুন পানি ঢুকে পরে ওসমানী হাসপাতালে। এতে তলিয়ে যায় হাসপাতালের নিচতলা। পানি ঢুকে পড়া ও বিদ্যুতহীনতার কারণে ব্যাহত হয় চিকিৎসা সেবা। নতুন রোগী ভর্তিও বন্ধ হয়ে যায় সেদিন।
পানি ঢুকে নষ্ট হয়ে পড়েছে হাসপাতালটির রেডিওথেরাপি, সিটিস্ক্যান ও এম আর আই যন্ত্র। নষ্ট হয়ে গেছে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সও। হাসপাতালের জেনারেটর রুমে পানি ঢুকে পড়ায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা কিছুটা ব্যাহত হয়।
তিনি বলেন, আমরা তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকা থেকে বিকল্প জেনারেটরের ব্যবস্থা করে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করি। যার ফলে ওসমানী হাসপাতালে রোগীদেরকে স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়নি।
ওসমানী হাসপাতালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা না থাকা ও চিকিৎসা সেবা বিঘ্নিত হওয়া প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যতে এমন জলাবদ্ধতা ঠেকাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যা: এবার ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই শুরু
এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, স্থানীয় প্রশাসন ও বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ছিল এবং যে সময় যা দরকার, সে চাহিদা পূরণ করেছি। আমাদের সেনাবাহিনী, পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ সবাই অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে এবং বন্যার্তদের সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছে।
জাহিদ মালেক বলেন, আমরা যেভাবে বিগত সময়ে করোনা মোকাবিলা করেছি, যেভাবে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছি, ঠিক সেভাবে বন্যাপরবর্তী রোগবালাই ছড়ালে সেগুলোও মোকাবিলা করার সকল প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। বন্যাকবলিত প্রত্যেক জেলা-উপজেলায় মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে এবং টিমগুলো কাজ করছে। প্রয়োজনীয় ওষুধ স্থানীয় প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।
এসময় সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) হিমাংশু লাল রায়, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া, মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদসহ স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রী হেলিকপ্টারে করে সুনামগঞ্জের বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন।
এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সিলেট-সুনামগঞ্জের প্রায় সাত হাজার বন্যার্ত মানুষের মধ্যে ত্রাণসহায়তা দেয়া হয়।
আরও পড়ুন: সিলেটে পানি নামায় বন্যার ক্ষয়ক্ষতি দৃশ্যমান
সিলেটে বন্যা: এবার ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই শুরু
সিলেটে ধীরগতিতে নামছে বন্যার পানি। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে মানুষ বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছে। কিন্তু বাড়ি ফিরে তাদেরকে হতাশায় পড়তে হচ্ছে। কারোর ভিটা শূন্য। কারোর বসত ঘরের চিহ্ন নেই। কারো ঘর আবার মাটিতে মিশে গেছে। খেতের ফসল আর খামারের মাছ তো আগেই ভেসে গেছে। গোয়ালের গরু এবং গুদামের ধান সবই বানের পানি কেড়ে নিয়েছে। বন্যার মাঝে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে জয়ী হয়ে বাড়ি ফিরে এখন তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই শুরু হয়েছে।
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের আবদুল কাদির। ছয় সদস্যের পরিবারের উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন ছিল শ’খানে হাঁস। ভয়াবহ বন্যায় পরিবারের সবাইকে নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠেছিলেন। পানি কমায় বাড়ি ফিরে দেখেন কাঁচা বসতঘরটি মাটিতে মিশে গেছে। হাঁস ভেসে গেছে। আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে আসা আবদুল কাদিরের মাথা গুঁজার ঠাঁই, আসবাবপত্র, আয়ের একমাত্র উৎস হাঁস খুঁইয়ে এখন সর্বহারা।
নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করতে গিয়ে বললেন, ‘এমন বেঁচে থাকার চেয়ে বন্যার পানিতে ডুবে মারা যাওয়াটাই ভালো ছিল। এখন তো না পারবো বাঁচতে, না পারবো মরতে। নতুন করে জীবন শুরু করারও কোনো উপায় নেই।’
আরও পড়ুন: আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস, তবে রবিবার ১১টি জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি
আবদুল কাদিরের মতো সিলেটের হাজার হাজার মানুষের একই অবস্থা। এক মাসের ব্যবধানে দুই দফা বন্যায় এলাকার বেশিরভাগের বাড়িঘর হয়তো ভেসে গেছে, নয়তো ভেঙে পড়েছে। যেগুলো এখনো দাঁড়িয়ে আছে সেগুলোর অবস্থাও খুবই খারাপ। যে কোনো সময় ভেঙে পড়ে পারে।
সিলেটের হাওর এলাকার লোকজনের বেশিরভাগই কৃষির উপর নির্ভরশীল। কেউ কৃষিকাজ করে, কেউ মৎস্য চাষ আর কারো জীবন চলে গরু-ছাগল-হাঁস লালন পালন করে। কিন্তু এবার বন্যায় তাদের সর্বস্ব কেড়ে নিয়েছে। বন্যায় ভেসে গেছে বীজতলা ও সদ্য তোলা বোরো ধান। আকস্মিক বন্যার কারণে বেশিরভাগ কৃষক ঘরে সংরক্ষিত ধান নিরাপদে সরিয়ে নিতে পারেননি। ফলে বন্যার পানিতে ধান নষ্ট হয়ে গেছে। মাছ ও হাঁস ভেসে গেছে বন্যায় প্লাবিত হওয়ার পরই। বন্যার পানিতে ভেসে গিয়ে অনেকের গবাদি পশুও মারা গেছে।
সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বন্যায় সিলেটি সিটি করপোরেশনের একাংশ এবং জেলার ১৩টি উপজেলা ও পাঁচ পৌরসভা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এতে চার লাখ ১৬ হাজার ৮১৯ পরিবারের ২১ লাখ ৮৭ হাজার ২৩২ জন মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২২ হাজার ৪৫০ ঘরবাড়ি। ২৮ হাজার ৯৪৫ হেক্টর জমির ফসলহানি হয়েছে। তবে ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ এর দ্বিগুণ হবে বলে ধারণা সাধারণ মানুষের।
আরও পড়ুন: সিলেট বিভাগে বন্যায় ৭ দিনে ২২ জনের মৃত্যু: বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক
এখন পর্যন্ত বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ হিসেবে কেবলমাত্র খাবার ও নগদ টাকা সরকারিভাবে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। রবিবার পর্যন্ত বরাদ্দকৃত ত্রাণ ও নগদ টাকার পুরোটাই বিতরণ হয়ে গেছে। তবে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া এখনো শেষ হয়নি।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান জানিয়েছেন, বন্যার পানি পুরোপুরি নেমে যাওয়ার পর পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে। সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।
সোনাই নদী থেকে বৃদ্ধার লাশ উদ্ধার
সিলেটের বিয়ানীবাজারে সোনাই নদীর শানেস্বর এলাকা থেকে রবিবার ভাসমান অবস্থায় ৮৫ বছরের এক বৃদ্ধার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার ভোর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন।
নিহত বদেলোয়ারি বেগম উপজেলার লাউতা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য ইসলাম উদ্দিনের মা।
আরও পড়ুন: সিলেটে ৭০ বৎসর বয়সের বৃদ্ধের আত্মহত্যা
নিহতের ছেলে ইউপি সদস্য ইসলাম উদ্দিন বলেন, তাদের বাড়ি নদী তীরবর্তী এবং বন্যা কবলিত ছিল। শনিবার ভোরে তার মা বাথরুমে যাওয়ার সময় সবার অগোচরে হয়তো তিনি পানিতে পড়ে যান। দিনভর খোঁজাখুঁজি শেষে মাইকিংও করানো হয়। তবে রবিবার শানেশ্বর মনটেকা এলাকায় ভাসমান লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে আমরা সেখানে গিয়ে তার লাশ শনাক্ত করি।
আরও পড়ুন: গাছ কাটা নিয়ে দ্বন্দ্বে ২ বৃদ্ধের মৃত্যু!
লাউতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন বলেন, লাশ উদ্ধারের পর ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীলদের অনুমতি নিয়ে দাফন সম্পন্ন হয়েছে।