বৈদেশিক-সম্পর্ক
ড. ইউনূস সঠিক বলেননি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে সরকার মামলা দায়ের করেছে বলে যে দাবি তিনি করেছেন, তা সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
মন্ত্রী বলেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি যথেষ্ট সম্মান ও শ্রদ্ধা রেখে বলছি, তিনি যা বলেছেন তা সঠিক নয়। ড. ইউনূসের প্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের পাওনা সঠিকভাবে বুঝিয়ে দিতে পারেনি, তারা বঞ্চিত হয়েছে। এতে সংক্ষুব্ধ শ্রমিকরাই মামলা করেছে। এজন্য শ্রম অধিদপ্তরের একটি অনুমোদন লাগে, সেটি তারা নিয়েছে। বিস্তারিত আইনি ব্যাখ্যা আইন মন্ত্রণালয় দেবে।’
সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিকস মোলার ও কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকোলসের সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রতিনিধি জিয়াওকুন শির পরিচয়পত্র গ্রহণ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এরপর বিকেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে মত বিনিময়কালে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী হলেন হাছান মাহমুদ
ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে মন্ত্রী জানান, রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ডেনমার্কের দ্বিতীয় উন্নয়ন অংশীদার বাংলাদেশ। তারা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। জলবায়ু ইস্যুতে আমরা দীর্ঘদিন ধরে ডেনমার্কের সঙ্গে কাজ করছি। আগামীতেও এই বিষয়ে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার বিষয়ে আলোচনা হয়।
এ ছাড়া বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে 'ডেনমার্কের বিনিয়োগ' বৃদ্ধির বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয় বলে জানান তিনি।
সংসদ ভেঙে নতুন নির্বাচন করতে বিএনপির দাবির প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, 'বিএনপির আবদার রক্ষা করার জন্য কি সংসদ ভাঙবে? নির্বাচনে জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণ ছিল, বিএনপির অংশগ্রহণ ছিল না। সংসদ নির্বাচিত হয়েছে আগামী পাঁচ বছরের জন্য। এই মেয়াদ পূর্ণ করেই আগামী সংসদ নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করতে পারে।'
বঙ্গবন্ধু হত্যায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নূর চৌধুরীকে কানাডা থেকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকোলসের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
আরও পড়ুন: ন্যাম সামিট: বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ
কানাডার হাইকমিশনারের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামি নুর চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কানাডায় মৃত্যুদণ্ড নেই, সেটি একটি অসুবিধা বলে আমাকে হাইকমিশনার জানিয়েছেন। আমি দ্বিপাক্ষিক প্রক্রিয়ার জন্য অনুরোধ করেছি।’
হাইকমিশনার বলেছেন, তিনি বিষয়টি তাদের সরকারকে জানাবেন।
উল্লেখ্য, সরকার বঙ্গবন্ধু হত্যার বিদেশে পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তি কার্যকর করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কানাডা থেকে নূর চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনতে গত কয়েক বছর ধরে জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার।
বাংলাদেশ থেকে ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে' আরও অভিবাসী নিতে ব্যবস্থা গ্রহণ বিশেষ করে কৃষিখাতে নেওয়ার জন্য এবং এ দেশের শিক্ষার্থীদের কানাডার স্টুডেন্টস ডিরেক্ট স্কিমের (এসডিএস) অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে হাইকমিশনারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।
আরও পড়ুন: যারা মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে তাদের সঙ্গে সংলাপ হবে না: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ
মিয়ানমার থেকে আর কোনো মর্টার শেল বাংলাদেশে পড়বে না: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের কারণে সেখান থেকে আর কোনো মর্টার শেল বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এসে পড়বে না বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
এক প্রশ্নের জবাবে সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘মিয়ানমারে সংঘাত চলছে। চলমান এই সংঘর্ষের মধ্যেই মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে মরণঘাতী গোলা পড়ে। সীমান্তে আমাদের বাহিনী সতর্ক রয়েছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সরকার মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে এবং আশা করছে এ ধরনের ঘটনা আর ঘটবে না। ‘আমরা সতর্ক রয়েছি।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে প্রস্তুত ইউএই: পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি
স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, রবিবার কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্ত এলাকা থেকে দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে।
রবিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমারের পরিস্থিতি কখনোই ভালো ছিল না। সেখানে সবসময় অস্থিরতা বিরাজ করে- কখনো ভালো, কখনো খারাপ। মিয়ানমার এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, বর্তমানে রোহিঙ্গাদের তাদের জন্মস্থান রাখাইনে প্রত্যাবাসনের জন্য প্রতিকূল পরিবেশ।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী (ইউএনআরসি) গোয়েন লুইস বলেন, এই মুহূর্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে নিরাপত্তা পরিস্থিতি খুবই কঠিন এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য এটি ভালো সময় নয়।
ইউএনআরসি বলেছে, প্রত্যাবাসন বাংলাদেশের জন্য অগ্রাধিকার এবং রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি বাংলাদেশ তাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের বিষয়ে সম্মত হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের প্রয়োজনীয় মৌলিক সেবাগুলোর জন্য অর্থায়নের ঘাটতি রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমরা সেই অনুযায়ী কাজ চালিয়ে যাব।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে এফএও'র নতুন প্রতিনিধি হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে পরিচয়পত্র পেশ করলেন ড. শি
বিএনপি এখন বলে, তারেক জিয়াই সব শেষ করল: নীলফামারীতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী
সহযোগিতার সম্ভাবনার ক্ষেত্র খুঁজছে বাংলাদেশ-কানাডা
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশ ও কানাডা আরও সহযোগিতার ক্ষেত্র অনুসন্ধান করে দু'দেশের মধ্যে বিদ্যমান বহুমুখী সম্পর্ক সম্প্রসারণে আগ্রহী।
বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকোলসের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘কানাডার সঙ্গে আমাদের চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে। কানাডার সঙ্গে আমাদের একাধিক বিষয়ে সম্পর্ক রয়েছে। তারা (কানাডা) এই সম্পর্ক বিস্তৃত ও সম্প্রসারণ করতে চায়।’
সাংবাদিকদের সঙ্গে পৃথকভাবে আলাপকালে হাই কমিশনার বলেন, তাদের 'বহুমুখী' ও দীর্ঘদিনের সম্পর্ক নিয়ে তারা ' প্রথম ফলপ্রসূ আলোচনা' করেছেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে প্রস্তুত ইউএই: পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি
এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে তিনি বলেন, 'জনগণের সঙ্গে জনগণের শক্তিশালী সম্পর্ক, ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যিক সম্পর্ক এবং একটি ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন কর্মসূচির মাধ্যমে সম্ভাব্য সহযোগিতার অনেক ক্ষেত্র রয়েছে যা আমাদের উভয় দেশের নাগরিকরা উপকৃত হবে।’
তিনি বলেন, বৈঠকে তারা সঠিক গণতন্ত্রের জন্য গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, নাগরিক সমাজ ও বিকল্প কণ্ঠস্বরের গুরুত্ব নিয়েও আলোচনা করেছেন।
হাইকমিশনার রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় কানাডার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
মানবাধিকার ইস্যুতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মানবাধিকার একটি বৈশ্বিক ইস্যু এবং এটি আমেরিকা, ইউরোপ ও কানাডায়ও একটি ইস্যু। 'আমরাও এ বিষয়ে কাজ করছি।'
এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'আমরা গণতন্ত্রের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছি, কারণ আমাদের গণতন্ত্রের সুষ্ঠু চর্চা করতে হবে। আমরা আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর মতামতকে মূল্য দেই।’
আরও পড়ুন: বিএনপি এখন বলে, তারেক জিয়াই সব শেষ করল: নীলফামারীতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী
হাইকমিশনার বলেন, ‘সম্ভাব্য সহযোগিতার অনেক ক্ষেত্র রয়েছে, যেগুলোতে আমাদের উভয় দেশের নাগরিকরা উপকৃত হবে।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি নূর চৌধুরীকে দেশে ফেরত পাঠিয়ে আদালতের রায় কার্যকর করার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলোচনা করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হাইকমিশনারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নেই, তবে তিনি ঢাকার অনুরোধ তার সরকারের সঙ্গে জানাবেন।
তারা দুই দেশের মধ্যে বিশেষ সম্পর্ক এবং দীর্ঘদিনের সম্পর্ক আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে কথা বলেছেন।
হাইকমিশনার বলেন, 'আমাদের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী ও বহুমুখী সম্পর্ক রয়েছে, যার অনেকগুলো মাত্রা রয়েছে।’
আরও পড়ুন: এই সরকার জনগণের: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
হাইকমিশনার বলেন, 'আমরা অবশ্যই উন্নয়ন অংশীদারিত্বের বিকাশ নিয়েও কথা বলেছি এবং এগুলোর প্রত্যেকটি কীভাবে আমাদের দুই দেশের যৌথ সহযোগিতার অনেক সুযোগ এনে দিয়েছে তা নিয়েও কথা বলেছি।’
হাইকমিশনার বলেন, ভালো বন্ধু হিসেবে তারা মত প্রকাশের স্বাধীনতার গুরুত্ব, নাগরিক সমাজের অসাধারণ মূল্যবোধ এবং একটি প্রাণবন্ত নাগরিক সমাজ সম্পর্কে খুব খোলামেলা কথা বলেছেন।
‘আমরা বিকল্প কণ্ঠস্বর ও দৃষ্টিভঙ্গির গুরুত্ব সম্পর্কে কথা বলেছি’, তিনি বলেন। হাইকমিশনার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, 'রোহিঙ্গা সংকটে কানাডার অব্যাহত সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করারও সুযোগ পেলাম।’
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আশাবাদী পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে প্রস্তুত ইউএই: পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি
বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র অনুসন্ধান- বিশেষ করে খাদ্য নিরাপত্তা এবং ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার বিষয়ে গভীর আগ্রহ প্রকাশ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদকে চিঠি দিয়েছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান।
চিঠিতে তিনি বলেন, 'বিদ্যমান সুসম্পর্ক আরও বৃদ্ধি ও উন্নয়নে আমি আপনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছি।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নতুন দায়িত্বভার গ্রহণ করায় ড. হাছান মাহমুদকে উষ্ণ অভিনন্দন ও শুভেচ্ছাও জানান সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
১৯৭৪ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত-বাংলাদেশ সম্পর্কের 'ধারাবাহিক উন্নয়নের' প্রশংসা করেন এবং এই অগ্রগতি অর্জনে উভয় পক্ষের যৌথ প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরা হয় ড. হাছানকে লেখা ওই চিঠিতে।
আরও পড়ুন: বিএনপি এখন বলে, তারেক জিয়াই সব শেষ করল: নীলফামারীতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী
২০২৪ সালকে সংযুক্ত আরব আমিরাত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি হিসেবে উল্লেখ করে বিদ্যমান শক্তিশালী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও জোরদার ও সম্প্রসারণের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছানের নতুন কাজের সাফল্য কামনা করে এবং বাংলাদেশের অব্যাহত সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করে তার চিঠি শেষ করেন।
শেখ আবদুল্লাহর পক্ষ থেকে ঢাকাস্থ সংযুক্ত আরব আমিরাতের দূতাবাস পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছানের কাছে শুভেচ্ছা পৌঁছে দেয়।
আরও পড়ুন: এই সরকার জনগণের: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রীকে সফরের আমন্ত্রণ চীনের
পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সব ক্ষেত্রে বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতা আরও গভীর করতে বাংলাদেশের নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করার জন্য প্রস্তুত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বেইজিংয়ে সরকারি সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছে চীন।
রবিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের সঙ্গে বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, 'চীন আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। পারস্পরিক সুবিধাজনক সময়ে এ সফর করার বিষয়ে আলোচনা চলছে।’
আরও পড়ুন: সুন্দরগঞ্জে অটোরিকশা-মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে শিক্ষিকা নিহত
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে গভীর আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি।
চীনা কর্তৃপক্ষ জানায়, চীন বাংলাদেশের জাতীয় সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা, আঞ্চলিক অখণ্ডতা, ঐক্য ও স্থিতিশীলতা রক্ষা এবং বাইরের হস্তক্ষেপের বিরোধিতায় দৃঢ়ভাবে সমর্থন দেয়।
এর আগে ২০১৯ সালের ১-৬ জুলাই চীন সফর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি দালিয়ানে ১৩তম গ্রীষ্মকালীন দাভোস ফোরামেও অংশ নিয়েছিলেন।
সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
আরও পড়ুন: নেত্রকোণায় প্রাইভেটকার-অটোরিকশার সংঘর্ষে পুলিশসহ নিহত ২
সিংড়ায় সিএনজি অটোরিকশায় চাঁদা আদায়কে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষ
এই সরকার জনগণের: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বর্তমান সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার।
তিনি বলেন, ‘এটি জনগণের সরকার। এটি বাংলাদেশের জনগণের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার। ভারত-রাশিয়া-চীন, যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপীয় ইউনিয়ন-যুক্তরাজ্যসহ কূটনৈতিক সম্পর্কের সব দেশের সঙ্গে আমাদের চমৎকার সম্পর্ক।’
রবিবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চীন ও নেপালের রাষ্ট্রদূত এবং জাতিসংঘের বাংলাদেশ সমন্বয়কের তার সঙ্গে সাক্ষাত করেন। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মত বিনিময়কালে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সাক্ষাৎকালে চীন ও নেপাল উভয় দেশের রাষ্ট্রদূত তাদের নিজ নিজ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অভিনন্দনপত্র পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের হাতে তুলে দেন।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আশাবাদী পররাষ্ট্রমন্ত্রী
চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, চীন আমাদের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগী। চীন থেকে আমরা বেশি আমদানি করি, কম রপ্তানি করি। আমাদের রপ্তানি বৃদ্ধির আলোচনায় চীন বাংলাদেশ থেকে পাট, চামড়া, মাংস, সি-ফুড, মাছ ও আম আমদানিতে আগ্রহ ব্যক্ত করেছে। জুলাই বা আগস্ট মাসে আমরা আম রপ্তানি শুরু করতে পারি। চীন একটি বড় বাজার। সেখানে আমাদের পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার নিয়ে আলোচনা করেছি।
বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে কক্সবাজারে স্থানীয়রাই সংখ্যালঘু, রোহিঙ্গা বেশি। নিরাপত্তা, মাদকসহ নানা সমস্যা সেখানে সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা বলেছি, রোহিঙ্গাদের পূর্ণ অধিকারসহ নিজ দেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনই একমাত্র সমাধান। চীন এ বিষয়ে কাজ করছে এবং প্রত্যাবাসন যাতে শুরু হয় সে লক্ষ্যে কাজ করতে একমত হয়েছে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বৈরি পরিবেশ নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
মন্ত্রী জানান, চীন আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছে, সুবিধাজনক সময়ে সেটি হওয়ার জন্য আলোচনা চলছে।
জাতিসংঘের কো-অর্ডিনেটর গুয়েন লুইসের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে ড. হাছান জানান, জাতিসংঘের মহাসচিব তার চিঠিতে ও আমার সঙ্গে কাম্পালায় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনকে পুনঃনির্বাচিত হওয়ায় অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং বিশ্বনেতাদের কাছেও তার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। কিন্তু এর সঙ্গে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল যে বিবৃতি দেয়, মাঝেমাঝে তা অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। এটি নিয়ে আমি তার সঙ্গে আলোচনা করেছি।
আরও পড়ুন: পাটজাত পণ্য রপ্তানি আয় দ্বিগুণ করতে চাই: বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'পক্ষপাতদুষ্ট ও ভুল উৎস থেকে তারা যে সংবাদ পায়, সেটি যেন না হয়। তারা যাতে ভেরিফায়েড সোর্স থেকে তথ্য পায় এবং আগুনসন্ত্রাস চালিয়ে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা, ঘুমন্ত মানুষকে দগ্ধ করা, ২৮ অক্টোবরের ঘটনাপ্রবাহ সেগুলো যে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের রিপোর্টে আসেনি সেটি আমি তাকে জানিয়েছি। জাতিসংঘের কো-অর্ডিনেটর বলেছেন বিষয়টি তিনি দেখছেন।'
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আলোচনার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী জানান, ইউক্রেন যুদ্ধ ও পরে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের পর সেদিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি বেশি নিবদ্ধ হয়েছে। রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তুর্জাতিক সহায়তাও অর্ধেকে নেমে এসেছে। আমি বলেছি, রোহিঙ্গা ইস্যু যেন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্পটলাইটে থাকে। জাতিসংঘের কো-অর্ডিনেটর বলেছেন, এটি নিয়ে জেনেভায় আন্তুর্জাতিক ওয়ার্কিং গ্রুপ কাজ করছে এবং এ নিয়ে বৈঠক আসন্ন।
নেপালের রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভান্ডারীর সঙ্গে মানুষে-মানুষে যোগাযোগ, যাতায়াত বৃদ্ধি, বাণিজ্য সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের উত্তরের সীমান্ত থেকে নেপাল মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দূরে। ১ লাখ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতার সম্ভাবনার দেশ নেপালের সঙ্গে ইতোমধ্যে আমাদের বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তি হয়েছে, এর ট্যারিফ নিয়ে আলোচনা চলছে।
আরও পড়ুন: বিদেশি বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ আদর্শ স্থান: ব্রিটিশ এমপিদের প্রধানমন্ত্রী
ঢাকায় ‘নিনইয়ো- আর্ট অ্যান্ড বিউটি অব জাপানিজ ডলস’ প্রদর্শনী ২ ফেব্রুয়ারি
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে আগামী ২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে ‘নিনইয়ো- আর্ট অ্যান্ড বিউটি অব জাপানিজ ডলস’ শীর্ষক জাপানি পুতুল প্রদর্শনী।
বাংলাদেশে জাপান দূতাবাসের সহযোগিতায় জাপান ফাউন্ডেশন আয়োজিত এই অনুষ্ঠান সোমবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
আরও পড়ুন: কাঁসা, পিতল ও তামার তৈজসপত্র ব্যবহার কতটুকু স্বাস্থ্যসম্মত, বিজ্ঞান কী বলে?
এই প্রদর্শনীতে থিমগুলো চারটি বিভাগে বিভক্ত-
‘শিশুদের বেড়ে উঠার জন্য প্রার্থনা করবেন নিনইয়ো’, ‘চারুকলা হিসেবে নিনইয়ো’, ‘লোকশিল্প হিসেবে নিনইয়ো’ ও ‘নিনইয়ো সংস্কৃতির বিস্তার’।
জাপানি ভাষায় ‘নিনইয়ো’ মানে পুতুল।
এই প্রদর্শনী জাপানের ইতিহাস ও লোকসংস্কৃতিতে লালিত জাপানি পুতুল ও এর সংস্কৃতি তুলে ধরে। মৌসুমি উৎসবগুলোতে ব্যবহৃত হয় ‘শিশুদের বৃদ্ধির জন্য প্রার্থনারত নিনইয়ো’। এ ছাড়া প্রশংসার জন্য ‘সূক্ষ্ম শিল্প হিসেবে নিনইয়ো’ বিভিন্ন কৌশল, প্রযুক্তি ও শৈলীর মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়। লোক শিল্প হিসেবে নিনইয়ো স্থানীয় বৈচিত্র্য ও সাধারণ সৌন্দর্যের প্রতীক এবং ‘নিনইয়ো সংস্কৃতির বিস্তার’ আজও পুতুলের বৈচিত্র্যকে অব্যাহত রেখেছে তারই প্রতিফলন।
জাপান দূতাবাস আশা করছে, জাপানি পুতুলের সুন্দর উপস্থাপনায় বাংলাদেশের মানুষ মুগ্ধ হবে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের মানুষ আমাকে কলকাতার চেয়ে বেশি ভালোবাসে: স্বস্তিকা
তীব্র শীতে পোষা প্রাণীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয়
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আশাবাদী পররাষ্ট্রমন্ত্রী
মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি একই রকম নাও থাকতে পারে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ জানান, শিগগিরই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।
রবিবার (২৮ জানুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পৃথকভাবে তিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের পরিস্থিতি কখনোই ভালো ছিল না। সেখানে সবসময় অস্থিরতা বিরাজ করে- কখনো ভালো, কখনো খারাপ। মিয়ানমার এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, বর্তমানে রোহিঙ্গাদের তাদের জন্মস্থান রাখাইনে প্রত্যাবাসনের জন্য প্রতিকূল পরিবেশ।
আরও পড়ুন: গণহত্যার নায়ককে পুরস্কৃত করেছিল এরশাদ-খালেদা: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস বলেন, এই মুহূর্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে নিরাপত্তা পরিস্থিতি খুবই কঠিন এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য এটি ভালো সময় নয়।
ইউএনআরসি বলেছে, প্রত্যাবাসন বাংলাদেশের জন্য অগ্রাধিকার এবং রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি বাংলাদেশ তাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের বিষয়ে সম্মত হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের প্রয়োজনীয় মৌলিক সেবাগুলোর জন্য অর্থায়নের ঘাটতি রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমরা সেই অনুযায়ী কাজ চালিয়ে যাব।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছানের সঙ্গে বৈঠকে তারা রোহিঙ্গাদের অর্থায়ন এবং মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ও কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেন।
আরও পড়ুন: মিয়ানমার সীমান্তে সতর্ক রয়েছে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ইউএনআরসি মন্ত্রীকে জানান, মিয়ানমারে মানবিক সহায়তা দিতে তাদের সাধ্যমতো করছে। ‘মানবিক সহায়তার ব্যাপারে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন।’
এর আগে রোহিঙ্গা ও কক্সবাজারে তাদের আশ্রয় প্রদানকারী স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য সংহতি ও তহবিল বাড়ানোর আহ্বান জানায় জাতিসংঘ।
সম্প্রতি নিউইয়র্কে নিয়মিত মিডিয়া ব্রিফিংয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক সাংবাদিকদের বলেন, ‘শরণার্থী ও আশ্রয়দাতা সম্প্রদায়ের প্রয়োজন আমাদের সংহতি। এ সবের জন্য আমাদের তহবিল বাড়াতে হবে।’
মুখপাত্র বলেন, ‘কোনো শরণার্থীকে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে প্রত্যাবাসন করা উচিত নয়।’ এটি স্বেচ্ছায় ও এমনভাবে করা দরকার যাতে তাদের মর্যাদা ও সুরক্ষা রক্ষা হয়।
দুজারিক বলেন, 'আমাদের কাছে এটা স্পষ্ট যে, মিয়ানমারের পরিস্থিতি বর্তমানে তাদের দাবি পূরণ করে না। আমাদের যা প্রয়োজন তা হলো, যারা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের উদারভাবে আশ্রয় দিচ্ছে তাদের জন্য বৈশ্বিক সংহতি বাড়ানো দরকার, যেমন কক্সবাজারের স্থানীয় সম্প্রদায়। এর আগে ওই এলাকা পরিদর্শন করেছেন মহাসচিব।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে বিনিয়োগের চমৎকার সুযোগ রয়েছে: জার্মান রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য সময়টা ভালো নয়: জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী
ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস বলেছেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরের পরিস্থিতি খুবই কঠিন এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য এটি ভালো সময় নয়।
রবিবার (২৮ জানুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
ইউএনআরসি বলেছে, প্রত্যাবাসন বাংলাদেশের জন্য একটি অগ্রাধিকার এবং রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি বাংলাদেশ তাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের বিষয়ে সম্মত হয়েছে।
বৈঠকে রোহিঙ্গাদের জন্য অর্থায়ন এবং মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ও কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেন তারা।
তিনি বলেন, ‘আমাদের অর্থায়নের ঘাটতি রয়েছে।’
এর আগে রোহিঙ্গা ও কক্সবাজারে তাদের আশ্রয় প্রদানকারী স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য সংহতি ও তহবিল বাড়ানোর আহ্বান জানায় জাতিসংঘ।
সম্প্রতি নিউইয়র্কে নিয়মিত মিডিয়া ব্রিফিংয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক সাংবাদিকদের বলেন, ‘শরণার্থী ও আশ্রয়দাতা সম্প্রদায়ের প্রয়োজন আমাদের সংহতি। এ সবের জন্য আমাদের তহবিল বাড়াতে হবে।’
মুখপাত্র বলেন, ‘কোনো শরণার্থীকে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে প্রত্যাবাসন করা উচিত নয়।’ এটি স্বেচ্ছায় ও এমনভাবে করা দরকার যাতে তাদের মর্যাদা ও সুরক্ষা রক্ষা হয়।
দুজারিক বলেন, 'আমাদের কাছে এটা স্পষ্ট যে, মিয়ানমারের পরিস্থিতি বর্তমানে তাদের দাবি পূরণ করে না। আমাদের যা প্রয়োজন তা হলো, যারা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের উদারভাবে আশ্রয় দিচ্ছে তাদের জন্য বৈশ্বিক সংহতি বাড়ানো দরকার, যেমন কক্সবাজারের স্থানীয় সম্প্রদায়। এর আগে ওই এলাকা পরিদর্শন করেছেন মহাসচিব।’
রাখাইনে অস্ত্রবিরতি নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে কাজ করছে চীন: রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন
ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, তার দেশ রাখাইন রাজ্যে আরেকটি অস্ত্রবিরতির জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে কাজ করছে, যাতে খুব শিগগিরই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা যায়।
আজ রবিবার (২৮ জানুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘প্রত্যাবাসন ইস্যুটি নিয়ে আমরা বেশ গভীরভাবে আলোচনা করেছি। আমরা বুঝতে পারছি, এখন আমরা কঠিন সময়ের মুখোমুখি। তবে আমাদের আত্মবিশ্বাসী হতে হবে।’
রাষ্ট্রদূত স্মরণ করিয়ে দেন- তারা অতীতে রাখাইন রাজ্যে চীনের মধ্যস্থতায় অস্ত্রবিরতি দেখে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ, চীন ও মিয়ানমারের যৌথ উদ্যোগে তারা ইতোমধ্যে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের সঙ্গে উজ্জ্বল ভবিষ্যত দেখছে চীন: ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত
রাষ্ট্রদূত ইয়াও বলেন, চীন তার ভূমিকা অব্যাহত রাখবে এবং রোহিঙ্গারা যাতে যত দ্রুত সম্ভব মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সম্পৃক্ত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
তিস্তা প্রকল্প সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চীন এ বিষয়ে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তবে এর জন্য সবার আগে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রস্তাব প্রয়োজন।
চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, তারা বাংলাদেশের সঙ্গে উন্নত ভবিষ্যৎ ও গভীর সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।
শনিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, প্রতিবেশি দেশটিতে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে মিয়ানমার সীমান্তে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী সতর্ক রয়েছে।
তিনি বলেন, মিয়ানমারে সাময়িক বিরতির মাধ্যমে উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং বাংলাদেশ বাহিনী অনেক আগে থেকেই সতর্ক রয়েছে।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি অবশ্যই রোহিঙ্গাদের তাদের জন্মস্থান মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের প্রচেষ্টায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় চাপ সৃষ্টি করলে মিয়ানমার সরকার তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হবে বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন: আগামী নির্বাচনের পর স্থিতিশীলতা ও বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে: আশা চীনা রাষ্ট্রদূতের