বৈদেশিক-সম্পর্ক
দেশের অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে সকলকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান মোমেনের
দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
বুধবার(২৭ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা ইনকর্পোরেটেড আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
মোমেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ১৪ বছরে দেশ অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কল্যাণে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে এই অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখা আমাদের সকলের দায়িত্ব।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে কোনো টানাপোড়েন নেই: পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশ যাতে আর পিছিয়ে না পড়ে সেজন্য দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের সবাইকে দূরদর্শী ভূমিকা পালন করতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, ‘২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র্যমুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কর্মসংস্থান আমাদের জন্য একটি বড় সমস্যা। প্রতি বছর প্রায় ২০ লাখ মানুষ চাকরির বাজারে প্রবেশ করে। এর মধ্যে আমরা দেশে ১৫ লাখ চাকরি দিতে পারি। বাকি ৫ লাখ বিদেশে কাজ করতে যায়। আমরা দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
আরও পড়ুন: মোমেনের সঙ্গে সিটিবিটিও নির্বাহী সচিবের বৈঠক অনুষ্ঠিত
জালালাবাদ এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দের ঐক্য বজায় রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানান ড. মোমেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিলেট ও দেশের কল্যাণে যথাসাধ্য অবদান রাখার জন্য তাদের প্রতি আহ্বান জানান। জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকা ইনকর্পোরেটেডের নেতৃবৃন্দ, নিউইয়র্কে বসবাসরত বৃহত্তর সিলেটের জনগণ এবং বাংলাদেশি কমিউনিটির সদস্যরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর, কিন্তু কিছু গোষ্ঠী তিক্ততা সৃষ্টির চেষ্টা করছে: মোমেন
আঞ্চলিক শিল্প মূল্য শৃঙ্খল তৈরির উপর জোর অর্থনীতিবিদদের
বাংলাদেশ-জাপান এবং উত্তর-পূর্ব ভারতকে সংযুক্ত করে একটি আঞ্চলিক শিল্পে মূল্য শৃঙ্খল (ভ্যালু চেইন) তৈরি করতে সরকারি সংস্থা, থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ও বেসরকারি খাতকে সম্পৃক্ত করে একটি ত্রিপক্ষীয় প্ল্যাটফর্ম গঠনের উপর জোর দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।
বুধবার(২৭ সেপ্টেম্বর) এক আলোচনায় প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদরা এই পরামর্শ দেন।
তারা বলেন, চ্যালেঞ্জগুলো অতিক্রম করে এই অঞ্চলটি একটি বড় প্রবৃদ্ধির কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে। তারা বলেন, এই অঞ্চলে শিল্প, অবকাঠামো ও জ্বালানি সংযোগ স্থাপনের জন্য ব্যাপক বিনিয়োগ, বাণিজ্য নীতি ও কর সংস্কার, পণ্য সমন্বয় এবং শুল্ক ব্যতীত অন্য বাধা অপসারণ প্রয়োজন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর প্রতিষ্ঠার দূরদর্শী সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় বাংলাদেশ উত্তর-পূর্ব ভারতের শান্তি ও স্থিতিশীলতায় সহায়তা করেছে।
আরও পড়ুন: ঢাকা-বেইজিং সম্পর্ক উন্নয়নে কৌশলগত সহযোগিতা বাড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ: রাষ্ট্রদূত ইয়াও
তিনি বলেন,‘এখন সময় এসেছে আঞ্চলিক শিল্প ও উন্নয়নকে আরও এগিয়ে নেওয়ার।’
মঙ্গলবার(২৬ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় জাপান দূতাবাস আয়োজিত বাংলাদেশ ও উত্তর-পূর্ব ভারতসহ বঙ্গোপসাগরে আঞ্চলিক সংযোগ উন্নয়ন এবং শিল্পে মূল্য শৃঙ্খল প্রতিষ্ঠার সেমিনারে বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি এবং এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলমও বক্তব্য দেন।
বাংলাদেশে একটি প্রধান বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগকারী হলো জাপান। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর, একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও বন্দরের সঙ্গে সংযোগকারী সড়ক ও রেল যোগাযোগ স্থাপনে সহায়তা করছে দেশটি।
জাপান ২০১৪ সাল থেকে বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট (বিআইজি-বি) উদ্যোগের অধীনে ৬ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার অঞ্চলে এবং এর বাইরে শিল্প ও অবকাঠামো ত্বরান্বিত করতে কাজ করছে।
এ ছাড়াও উত্তর-পূর্ব ভারতে পরিকাঠামো ও শিল্প নির্মাণে ভারতকে সহায়তা করছে জাপান।
রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম ফর ডেভেলপিং কান্ট্রিজের অধ্যাপক ড. প্রবীর দে বলেন, 'এই অঞ্চলে একটি শিল্প মূল্য শৃঙ্খল এখন খুবই প্রয়োজন।’
যেহেতু এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে অনেকগুলো উপাদান জড়িত থাকবে, তাই আঞ্চলিক শিল্প মূল্য শৃঙ্খল প্রতিষ্ঠায় অগ্রগতির জন্য বাংলাদেশ, ভারত ও জাপানকে একটি ত্রিপক্ষীয় কাঠামোগত সহযোগিতা চুক্তির আওতায় আসার পরামর্শ দেন তিনি।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের বিশিষ্ট ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, যদিও এটি একটি সম্ভাব্য এবং গুরুত্বপূর্ণ ধারণা, কিন্তু এটি এমন কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি যা মোকাবিলা করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, 'প্রকল্পের ব্যয় বেশি হচ্ছে কি না তাও মাথায় রাখতে হবে।
মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর ২০২৬ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ হবে উল্লেখ করে ড. দেবপ্রিয় বলেন, বন্দরের চাহিদা মূল্যায়ন করা গুরুত্বপূর্ণ। যদি বন্দরে পর্যাপ্ত পরিমাণে কার্গো আসে তবেই এর সর্বোত্তম ব্যবহার হবে। সেই চাহিদা তৈরির জন্য এখনই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও উত্তর-পূর্ব ভারতে প্রয়োজনীয় শিল্প স্থাপন করা গুরুত্বপূর্ণ, নেপাল ও ভুটানকে কীভাবে মূল্য শৃঙ্খলে সংযুক্ত করা যায় তাও ভাবতে হবে।
আরও পড়ুন: পারমাণবিক অস্ত্র সম্পূর্ণ নির্মূলে বৈশ্বিক অঙ্গীকার আরও জোরদারের আহ্বান মোমেনের
তিনি বলেন, নেপাল ও ভুটানের সংযোগ ছাড়া মাতারবাড়ী কার্যকর হতে পারে না।
দেবপ্রিয় বলেন, প্রায়শই প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা ভূ-রাজনৈতিক ইস্যুরা মাধ্যমে তৈরি হয়। ভারত একটি ফেডারেল ব্যবস্থা এবং বৈদেশিক ও বাণিজ্য সম্পর্ক দিল্লির মাধ্যমে নির্ধারণ হয়। এই বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়া দরকার বলে জানান তিনি।
অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘জাপান তার শিল্প চীন থেকে বাংলাদেশে স্থানান্তর করবে কি না সেটিও একটি বিষয় হবে।’
ভারতভিত্তিক এশিয়ান কনফ্লুয়েন্সের নির্বাহী পরিচালক সব্যসাচী দত্ত অনলাইনে যুক্ত হয়ে বলেন, জাপান ইতোমধ্যেই উত্তর-পূর্ব ভারত ও বাংলাদেশে অনেক সংযোগ পরিকাঠামো তৈরি করেছে, তবে আরও অনেক কিছু করা দরকার।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মাতারবাড়ী ও চট্টগ্রাম থেকে ত্রিপুরার সাব্রুম ও আগরতলা পর্যন্ত চার লেনের মহাসড়ক ও রেলপথের মধ্যে মাল্টিমোডাল কানেক্টিভিটির উন্নয়নে একটি আমূল পরিবর্তন আনতে পারে।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর, কিন্তু কিছু গোষ্ঠী তিক্ততা সৃষ্টির চেষ্টা করছে: মোমেন
বাংলাদেশ ও ভারতের পাশাপাশি জাপানের মধ্যে বাণিজ্যের প্রতিবন্ধকতাগুলোও দূর করার পরামর্শ দেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বিস্তৃত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি সই, বিনিয়োগের পরিবেশের উন্নতি, সীমান্তের ওপারে পণ্যের নির্বিঘ্ন চলাচল এবং তৃতীয় দেশের বাণিজ্যকে সহজতর করার কিছু অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।
আরও পড়ুন: মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা: গণমাধ্যমের কথা উল্লেখ করেননি স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র
পারমাণবিক অস্ত্র সম্পূর্ণ নির্মূলে বৈশ্বিক অঙ্গীকার আরও জোরদারের আহ্বান মোমেনের
পারমাণবিক অস্ত্র সাধারণ ও সম্পূর্ণ নির্মূলের মাধ্যমে একটি নিরাপদ বিশ্ব নিশ্চিতকরণে অধিকতর আন্তর্জাতিক সংহতির আহ্বান জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) পারমাণবিক অস্ত্র সম্পূর্ণ নির্মূল বিষয়ক আন্তর্জাতিক দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে আয়োজিত এক উচ্চ পর্যায়ের সভায় এমন আহ্বান জানান তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘পৃথিবীতে যতদিন পরমাণু অস্ত্র থাকবে, ততদিন আমরা কেউ নিরাপদ নই। কারণ, পারমানবিক অস্ত্র সারা বিশ্বে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তে মৃত্যু ও ধ্বংস ঘটায়। কেবলমাত্র পারমাণবিক অস্ত্রের সম্পূর্ণ নির্মূলই মানব জাতির এই হুমকির বিরুদ্ধে সুনিশ্চিত সমাধান।’
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর, কিন্তু কিছু গোষ্ঠী তিক্ততা সৃষ্টির চেষ্টা করছে: মোমেন
ড. মোমেন বিশ্বব্যপী পারমাণবিক অস্ত্রের সাধারণ ও সম্পূর্ণ নির্মূল এবং পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তির (ট্রিটি অন প্রহিবিশন অব নিউক্লিয়ার ওয়েপনস) বাস্তবায়নের প্রতি বাংলাদেশের সুদৃঢ় অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি এই চুক্তির সদস্য রাষ্ট্রসমূহের প্রথম বৈঠক, এতে গৃহীত রাজনৈতিক ঘোষণাপত্র ও ৫০-দফা কর্মপরিকল্পনাকে স্বাগত জানান এবং পারমাণবিক অস্ত্রধারি রাষ্ট্র ও নিউক্লিয়ার আমব্রেলা রাষ্ট্রসহ সকল রাষ্ট্র কর্তৃক পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন।
প্রদত্ত বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ঝুঁকির কথাও তুলে ধরেন। তা উদ্দেশ্যমূলক হোক বা দুর্ঘটনাজনিত হোক।
তিনি বলেন, এই বিধ্বংসী অস্ত্রগুলো পরিচালনা করার বহুমুখী চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান।
তিনি পরমাণু অস্ত্রধারী দেশগুলোকে সন্ত্রাসবাদী বা অন্য অননুমোদিত অপশক্তির হাতে পারমাণবিক অস্ত্র পড়ার ঝুঁকি এড়াতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: ই-কোয়ালিটি সেন্টার ফর ইনক্লুসিভ ইনোভেশনের উদ্বোধন করলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পারমাণবিক প্রযুক্তির গবেষণায় অধিকতর বিনিয়োগ ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং মানবজাতির স্বার্থে এর শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের সম্ভাবনা অন্বেষণের আহ্বান জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি পারমাণবিক অস্ত্রের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বন্ধ করে সেই অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলা, টেকসই উন্নয়ন, শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রকল্পে ব্যবহারের আহ্বান জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিশ্বব্যাপী শান্তির সংস্কৃতি লালন, পরমাণুমুক্ত বিশ্বের জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা এবং নিরস্ত্রীকরণ আলোচনা পুনরায় শুরু করার আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, সভাটিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দেশের উপ রাষ্ট্রপ্রধান, মন্ত্রী, রাষ্ট্রদূত ও অন্যান্য উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: ভুল তথ্য-অপপ্রচার মোকাবিলা করতে প্রবাসীদের প্রতি মোমেনের আহ্বান
যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর, কিন্তু কিছু গোষ্ঠী তিক্ততা সৃষ্টির চেষ্টা করছে: মোমেন
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর, কিন্তু কিছু গোষ্ঠী তিক্ততা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে এবং বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যাচার করছে।
মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩) নিউ ইয়র্কের বাঙালি অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটসে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, যুক্তরাষ্ট্র শাখা আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। আমরা যে নীতি ও মূল্যবোধে বিশ্বাস করি, যুক্তরাষ্ট্র সেই নীতি ও মূল্যবোধে বিশ্বাস করে। বাংলাদেশ হচ্ছে সেই দেশ যেখানে গণতন্ত্রের জন্য আমরা লড়াই সংগ্রাম করেছি। আমরা জনগণের ভোটে জয়লাভ করলেও ১৯৭১ সালে আমাদের সরকার গঠন করতে দেয় নাই। বরং আমাদের উপর গণহত্যা চালানো হয়েছিল আর তখন বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।’
আরও পড়ুন: সবার সহযোগিতা ছাড়া সহিংসতামুক্ত নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিতে পারবে না সরকার: মোমেন
ড. মোমেন বলেন, ‘আমরা স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলাম গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। এজন্য স্বাধীনতা যুদ্ধে আমাদের ৩০ লাখ মানুষের প্রাণ দিতে হয়েছে। পৃথিবীর কোথাও গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য এতো অল্প সময়ে এতো মানুষ আত্মত্যাগ করেনি। আমরা পৃথিবীর মধ্যে একমাত্র জাতি যারা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য এতো বড় ত্যাগ স্বীকার করেছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্রে ও মানবাধিকারে বিশ্বাস করে। তাই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের মতের, চিন্তার মিল আছে। নীতিগতভাবে আমাদের দুদেশের মধ্যে মিল রয়েছে। তবে তাদের কোনো কোনো ব্যক্তিবিশেষ হয়তো আমাদের উন্নয়ন পছন্দ করছেন না, তাদের ব্যাপারে সজাগ থাকতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আহবান জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
কেউ বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যাচার করলে তাদের মিথ্যাচারকে চ্যালেঞ্জ করতে দলমত নির্বিশেষে প্রবাসী বাংলাদেশিদের রুখে দাঁড়াতে আহ্বান জানান তিনি।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে যেসব ভালো পরামর্শ দেয় আমরা সেটা গ্রহণ করি। যুক্তরাষ্ট্র অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন প্রত্যাশা করে আর আমরাও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তিনি আরও বলেন, কিন্তু আমাদের দেশের কিছু লোক আছে যারা নির্বাচন বয়কট করতে চায়, নির্বাচন ভয় পায়। নির্বাচন বানচাল করতে তারা সবরকমের চেষ্টা করে থাকেন বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকলে কয়েক বছরের মধ্যে আমরা ২৬তম বড় অর্থনীতিতে পরিণত হব।’
আরও পড়ুন: ভুল তথ্য-অপপ্রচার মোকাবিলা করতে প্রবাসীদের প্রতি মোমেনের আহ্বান
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের রয়েছে ১৭ কোটি মানুষ, তাই আমাদের নিজস্ব বাজারও অনেক বড়। সেজন্য আমাদের দেশের প্রতি অনেকেরই আগ্রহ বেড়েছে, কারণ আমাদের মাথাপিছু আয় ৫ গুণ বেড়েছে। দারিদ্রের হার অর্ধেকের বেশি কমেছে। এসবই শেখ হাসিনার সরকারের লক্ষ্যভিত্তিক পদক্ষেপ বাস্তবায়নের কারণে সম্ভব হয়েছে।’
ড. মোমেন বলেন, ‘আমরা এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। মাছ এবং সবজি উৎপাদনে আমরা বিশ্বে তৃতীয়। চাল উৎপাদনে আমরা বিশ্বে চতুর্থ। আমাদের কৃষি জমি অনেক কমে গেছে কিন্তু খাদ্য উৎপাদন চারগুণ বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে এটা সম্ভব হয়েছে। তবে আমরা এই উন্নতি করছি বলে অনেকেরই গাত্রদাহ হচ্ছে।’
তিনি বলেন, আমাদের দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অনেকেরই পছন্দ হচ্ছে না। কারণ এখন আমরা বিদেশির পয়সায় চলি না। আর আমরা উন্নতি করেছি বলে অনেকের আগ্রহ বেড়েছে। অনেকেই আমাদের কাছে টানার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা কারো লেজুরবৃত্তি করতে চাই না। আমরা একটা স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। আমরা বিজয়ের জাতি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের একটি সুন্দর পররাষ্ট্রনীতি দিয়ে গেছেন। আর এই নীতি হচ্ছে ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’ আমরা এই নীতিতে বিশ্বাস করি। আমরা একটা ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করি।
বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন যুক্তরাষ্ট্র শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সভাপতি ড. মসিউর মালেক।
অন্যান্যের মধ্যে কবি ও সাহিত্যিক ফকির ইলিয়াস, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি আব্দুল খালেক মিয়া, বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার নিউইয়র্ক প্রতিনিধি লাভলু আনসার, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন যুক্তরাষ্ট্র শাখার নেতৃবৃন্দ এবং নিউইয়র্কে বাংলাদেশি কমিউনিটির সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে কোনো টানাপোড়েন নেই: পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন
ঢাকা-বেইজিং সম্পর্ক উন্নয়নে কৌশলগত সহযোগিতা বাড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ: রাষ্ট্রদূত ইয়াও
বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, চীন জাতীয় সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় এবং বহিরাগত হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করতে বাংলাদেশকে সমর্থন করে, যাতে দেশটি অভ্যন্তরীণ ঐক্য ও স্থিতিশীলতা বজায় রেখে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন করতে পারে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে এক-চীন নীতি অনুসরণ করে এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বৃদ্ধিতে চীন যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে তার প্রশংসা করে। উভয় পক্ষ কৌশলগত সহযোগিতাকে আরও গভীর এবং এর ফলে নতুন যুগে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ককে উচ্চ স্তরে উন্নীত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ ও চীন যৌথ উন্নয়নের ঘনিষ্ঠ অংশীদার।
আরও পড়ুন: কারো বিরুদ্ধে মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের সম্ভাব্য কারণ কী হতে পারে?
সোমবার(২৫ সেপ্টেম্বর) রাতে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রতিষ্ঠার ৭৪তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
চলতি বছর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের দশম বার্ষিকী পালন করেছে।
চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন,‘বিআরআই-এর অধীনে চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে সহযোগিতাও সুফল পাওয়ার সময়ে প্রবেশ করেছে।’
বাংলাদেশই প্রথম দক্ষিণ এশিয়ার দেশ যারা বিআরআইতে যোগ দিয়েছে।
গত সাত বছরে, বিআরআই সোনালী বঙ্গোপসাগরে শিকড় গেড়েছে এবং প্রস্ফুটিত হয়েছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, পদ্মা বহুমুখী সেতু ও এর রেল সংযোগ, দশেরকান্দি স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল এবং আরও অনেক মেগা প্রকল্প একের পর এক সম্পন্ন হয়েছে,যা বাংলাদেশে অবকাঠামোগত অবস্থার উন্নয়ন এবং জনগণের জীবনযাত্রার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।
আরও পড়ুন: ই-কোয়ালিটি সেন্টার ফর ইনক্লুসিভ ইনোভেশনের উদ্বোধন করলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিআরআই সম্পর্কে দৃঢ়ভাবে বলেছেন যে এটি বাংলাদেশের জন্য উন্নয়নের একটি নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে।
রাষ্ট্রদূত ইয়াও বলেন, ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে দুই দেশের উচিত উন্নয়নের নতুন ঐতিহাসিক সুযোগগুলো কাজে লাগানো। উন্নয়ন কৌশলকে আরও সংহত করা, উচ্চমানের উন্নয়নের লক্ষ্যে বেল্ট অ্যান্ড রোড সহযোগিতা করা। এবং একে অপরের পূরক ও পরিপূরক হিসেবে আমাদের নিজ নিজ অর্থনৈতিক সুবিধাকাজে লাগানো।
তিনি বলেন, 'আমরা অবকাঠামো উন্নয়ন, তথ্য প্রযুক্তি, নতুন জ্বালানি, কৃষি ইত্যাদি ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও গভীর করতে পারি। যৌথ প্রচেষ্টায় আমরা অবশ্যই চীনা জাতির মহান পুনরুজ্জীবনের স্বপ্ন এবং বাংলাদেশের রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়ন করতে পারব।
আরও পড়ুন: মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা: গণমাধ্যমের কথা উল্লেখ করেননি স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র
রাষ্ট্রদূত বলেন, দেশগুলোর মধ্যে সুসম্পর্ক ঘন ঘন যোগাযোগের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থেকে উদ্ভূত হয়। জনগণের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া এবং সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানকে আরও জোরদার করার জন্য এটি চীন ও বাংলাদেশের নেতারা একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐকমত্যে পৌঁছেছে।
তিনি বলেন, ‘চীন আন্তর্জাতিক ভ্রমণ এবং কর্মী বিনিময়ের বিশাল চাহিদা মেটাতে একাধিক সুবিধামূলক ব্যবস্থা চালু করেছে।’
তিনি বলেন, আপাতত দুই দেশের মধ্যে প্রতি সপ্তাহে ৫০টি সরাসরি ফ্লাইট চলমান রয়েছে। এতে ১০ হাজার মানুষ যাতায়াত করছে।
আরও পড়ুন: জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বেইজিং ঢাকাকে সমর্থন করে: চীনা রাষ্ট্রদূত
মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা: গণমাধ্যমের কথা উল্লেখ করেননি স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র
মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বাংলাদেশের জন্য ঘোষিত ভিসা বিধিনিষেধ নীতিতে গণমাধ্যমের অন্তর্ভুক্তির কথা উল্লেখ করলেও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর গণমাধ্যমের কথা উল্লেখ করেননি।
সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার নিয়মিত এক ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ‘আমি বলব যে শুক্রবার আমাদের ঘোষিত এই নতুন ভিসা বিধিনিষেধের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, ক্ষমতাসীন দল এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী গত মে মাসে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেন। সে সময় কোনো পক্ষ নেওয়া উদ্দেশ্য ছিলনা। বরং বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করা বা সমর্থন করা প্রকৃত উদ্দেশ্য।
ভিসা বিধিনিষেধে গণমাধ্যমকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, 'আমি মনে করি আমরা যা বলেছি এবং ভিসা রেকর্ড গোপনীয় হওয়ায় আমরা নির্দিষ্ট সংখ্যা বা নির্দিষ্ট ব্যক্তির নাম প্রকাশ করিনি। তবে এটি স্পষ্ট করা হয়েছে যে এগুলো আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, ক্ষমতাসীন দল এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
আরও পড়ুন: দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী ঢাকা: শাহরিয়ার আলম
মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের মন্তব্যের পর বিষয়টি স্পষ্ট করে মার্কিন দূতাবাস সোমবার একটি ফেসবুক পোস্টে বলেছে, ‘আমরা (ভিসা সীমাবদ্ধতা) নীতিটি যে কারো বিরুদ্ধে ভারসাম্যপূর্ণ উপায়ে প্রয়োগ করছি (যারা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করে)। এর মধ্যে সরকারপন্থী, বিরোধী দল, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, বিচার বিভাগের সদস্য বা মিডিয়া ব্যক্তিরা রয়েছে।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, যে কাউকে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনকে ‘ক্ষুণ্ণ’ করতে দেখা গেলে ভিসা নিষেধাজ্ঞার নীতিটি তার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হতে পারে।
আরও পড়ুন: জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বেইজিং ঢাকাকে সমর্থন করে: চীনা রাষ্ট্রদূত
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি ইউএনবিকে বলেন, ‘এর মধ্যে ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, জনগণকে তাদের সংগঠনের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতার অধিকার প্রয়োগ করতে বাধা দেওয়ার জন্য সহিংসতার ব্যবহার এবং পরিকল্পিতভাবে রাজনৈতিক দল বা ভোটারকে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করা কিংবা সুশীল সমাজ বা মিডিয়াকে তাদের মতামত প্রকাশ করতে বাধা দেওয়ার কাজে জড়িত থাকার জন্য নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে।’
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র মিলার বলেন, এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই।
আরও পড়ুন: গণমাধ্যম কর্মীরাও ভিসা নীতির মুখোমুখি হতে পারে: হাস
জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বেইজিং ঢাকাকে সমর্থন করে: চীনা রাষ্ট্রদূত
চীন জাতীয় সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষা এবং বাহ্যিক হস্তক্ষেপের বিরোধিতায় বাংলাদেশকে সমর্থন করে, যাতে দেশটি অভ্যন্তরীণ ঐক্য ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারে এবং উন্নয়ন ও পুনরুজ্জীবন অর্জন করতে পারে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে এক-চীন নীতি অনুসরণ করে এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার উন্নয়নে চীনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রশংসা করে। উভয় পক্ষ কৌশলগত সহযোগিতা আরও গভীর করতে এবং এর মাধ্যমে নতুন যুগে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ককে আরও উচ্চ স্তরে উন্নীত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ ও চীন যৌথ উন্নয়নের ঘনিষ্ঠ অংশীদার।
আরও পড়ুন: অগ্রাধিকারমূলক ঋণ, জিডিআই ও সাউথ-সাউথ কো-অপারেশন তহবিলের উপযুক্ত ব্যবহার করবে বাংলাদেশ: প্রত্যাশা চীনা রাষ্ট্রদূতের
সোমবার গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার ৭৪তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
এ বছর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ এর দশম বার্ষিকী।
চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বিআরআই-এর আওতায় চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে সহযোগিতার ফল পাওয়ার সময়ে পৌঁছেছে।’
দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিআরআইতে যোগ দেয়।
এছাড়া গত সাত বছরে বিআরআই সোনালী বঙ্গোপসাগরে শিকড় গেড়েছে এবং প্রস্ফুটিত হয়েছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, পদ্মা বহুমুখী সেতু ও এর রেল সংযোগ, দাশেরকান্দি সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলসহ আরও অনেক মেগা প্রকল্প একের পর এক সম্পন্ন হয়েছে, যা বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ও অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিআরআই'র ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, এটি বাংলাদেশের জন্য উন্নয়নের নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে।
রাষ্ট্রদূত ইয়াও বলেন, ‘সামনের দিকে তাকিয়ে, উভয় দেশের উচিৎ উন্নয়নের নতুন ঐতিহাসিক সুযোগগুলো গ্রহণ করা, উন্নয়ন কৌশলগুলো আরও সংহত করা, উচ্চ মানের উন্নয়নের লক্ষ্যে বেল্ট অ্যান্ড রোড সহযোগিতা পরিচালনা করা এবং একে অপরের পরিপূরক হিসেবে আমাদের নিজ নিজ অর্থনৈতিক সুবিধাগুলো কাজে লাগানো।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে হবে বাংলাদেশিদের: চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও
তিনি বলেন, ‘সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, আমরা অবকাঠামো উন্নয়ন, তথ্য প্রযুক্তি, নতুন জ্বালানি, কৃষি ইত্যাদি ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও গভীর করতে পারি। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা অবশ্যই চীনা জাতির মহান পুনরুজ্জীবনের চীনা স্বপ্ন এবং বাংলাদেশের রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়ন করতে পারব।’
রাষ্ট্রদূত বলেন, দেশগুলোর মধ্যে সুসম্পর্ক ঘন ঘন যোগাযোগের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থেকে উদ্ভূত হয়। চীন ও বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দের মধ্যে জনগণ থেকে জনগণে পারস্পরিক যোগাযোগ ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান আরও জোরদার করার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐকমত্য।
তিনি বলেন, ‘চীন আন্তর্জাতিক ভ্রমণ এবং কর্মী বিনিময়ের বিশাল চাহিদা মেটাতে বেশ কয়েকটি সুবিধাজনক ব্যবস্থা চালু করেছে।’
তিনি বলেন, আপাতত দুই দেশের মধ্যে সাপ্তাহিক ভিত্তিতে ৫০টি সরাসরি ফ্লাইট রয়েছে, যার ধারণক্ষমতা ১০ হাজার।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘চীন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেয়। দূতাবাস দু'দেশের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্বকে একটি নতুন স্তরে উন্নীত করতে সর্বস্তরের বাংলাদেশি বন্ধুদের সঙ্গে যৌথ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
তিনি বাংলাদেশে চীনা উদ্যোক্তাদের সক্রিয়ভাবে সামাজিক দায়িত্ব পালন এবং বাংলাদেশে অবস্থানরত চীনা নাগরিকদের স্থানীয় সমাজের সঙ্গে আরও একীভূত হওয়ার আহ্বান জানান, যাতে দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের প্রসারে আরও বেশি অবদান রাখা যায়।
১৯তম এশিয়ান গেমস চীনের হাংঝুতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত ইয়াও বলেন, বাংলাদেশ ক্রীড়াবিদদের একটি ‘উদীয়মান’ প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই তারা প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করুক এবং বাংলাদেশের নাম সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরুক।’
আরও পড়ুন: যারা মিয়ানমারের পরিস্থিতি প্রত্যাবাসনের ‘উপযোগী নয়’ বলে দাবি করছে, তারা কখনোই রাখাইন যায়নি: চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও
ই-কোয়ালিটি সেন্টার ফর ইনক্লুসিভ ইনোভেশনের উদ্বোধন করলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ সদর দপ্তরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনের একটি সাইড ইভেন্টে ‘ই-কোয়ালিটি সেন্টার ফর ইনক্লুসিভ ইনোভেশন’ উদ্বোধন করেন।
‘ই-কোয়ালিটি সেন্টার ফর ইনক্লুসিভ ইনোভেশনের’ মাধ্যমে ‘ডিজিটাল বৈষম্যমুক্ত বিশ্বের রূপকল্প’ শীর্ষক সাইড ইভেন্টটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও এটুআইয়ের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত হয়।
গাম্বিয়া, উগান্ডা, ঘানা, সোমালিয়া, সাঁউ তুমি ও প্রিন্সিপির মন্ত্রী ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, জাতিসংঘ সচিবালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ, জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন এবং এটুআইয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
ই-কোয়ালিটি সেন্টারের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে সাউথ-সাউথ সহযোগিতার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তিগত বিভাজন দূর করা।
বাংলাদেশ সরকারের প্রতিষ্ঠিত এই সেন্টারটি সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার, গবেষণা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে বিশ্বের দেশগুলোর মাঝে প্রযুক্তিগত পার্থক্য দূরীকরণে কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
আরও পড়ুন: মোমেনের সঙ্গে সিটিবিটিও নির্বাহী সচিবের বৈঠক অনুষ্ঠিত
এর উদ্দেশ্য হচ্ছে বৈশ্বিক প্রযুক্তি হস্তান্তর, গবেষণা এবং অর্থনৈতিক সহায়তার মাধ্যমে সমতামূলক ডিজিটাল ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার বক্তব্যে বাংলাদেশের ডিজিটাল ব্যবস্থার উন্নয়ন, অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে উত্তরণের যাত্রার বিষয়টি তুলে ধরেন।
উন্নয়নশীল দেশে প্রযুক্তি হস্তান্তরের প্রয়োজনীয়তা, দেশসমূহের মধ্যে সহযোগিতা, সমাজের সকল স্তরের মানুষের প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা এবং ডিজিটাল বৈষম্য দূরীকরণের উপর তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইসিটি এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি অনুবিভাগের মাধ্যমে প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নিশ্চিতকরণ ও প্রয়োজনীয় উদ্ভাবনমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে যার মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের ডিজিটাল ভিশন বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
সুদৃঢ় অংশীদারত্ব, বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি এবং সর্বাধুনিক প্রযুক্তি আত্মীকরণের মাধ্যমে ই-কোয়ালিটি সেন্টার ডিজিটাল বিভাজনমুক্ত মানবজাতি সৃজনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
অনুষ্ঠানে ই-কোয়ালিটি সেন্টারের কারিগরি ও ব্যবহারিক নানা দিক উপস্থাপন করা হয়।
উপস্থিত বিভিন্ন দেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ ও জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিগণ এই উদ্যোগের ব্যাপারে তাদের মতামত উপস্থাপন করেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে কোনো টানাপোড়েন নেই: পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন
তারা প্রযুক্তির অন্তর্ভুক্তিমূলক বন্টন, উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশসমূহের মধ্যে পারস্পারিক সহযোগিতা এবং নতুন ডিজিটাল বাস্তবতার চ্যালেঞ্জসমূহের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
এ লক্ষ্যে ই-কোয়ালিটি সেন্টার কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এই অনুষ্ঠানে ইন্টারন্যাশনাল আইসিটি ইনোভেশন ফ্যাসিলিটির বিজয়ী প্রকল্পসমূহকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পুরস্কার বিতরণ করেন।
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন।
জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সদস্যদের অংশগ্রহণে আরও একটি অনলাইন সেশন আয়োজন করা হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইসিটি এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি অনুবিভাগের মহাপরিচালক ড. সৈয়দ মুনতাসির মামুন এবং অন্যান্য কর্মকর্তাগণ সেশনটিতে অংশগ্রহণ করেন।
দেশ ও বিদেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সদস্যদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সাইড ইভেন্ট এবং উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সাফল্যের সঙ্গে সমাপ্ত হয়।
আরও পড়ুন: ভুল তথ্য-অপপ্রচার মোকাবিলা করতে প্রবাসীদের প্রতি মোমেনের আহ্বান
বেনাপোল বন্দর দিয়ে দুই দিনে ভারতে গেল ১১৮ টন ইলিশ
বেনাপোল বন্দর দিয়ে সরকারের বিশেষ অনুমতির ৩ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন ইলিশের মধ্যে গত দুই দিনে ১১৭ মেট্রিক টন ৯০০ কেজি ইলিশ ভারতে রপ্তানি হয়েছে।
পূজার আগে পদ্মার ইলিশ পেয়ে ভারতীয়রা খুশি হলেও রপ্তানিতে দেশে ইলিশের সংকট দেখিয়ে দাম বৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ ক্রেতারা। বর্তমানে দেশীয় বাজারে কেজিতে ইলিশের দাম বেড়েছে ৬০০ টাকা পর্যন্ত।
বাণিজ্য সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০ অক্টোবর শুরু হচ্ছে পূজা উৎসব। আর এ পূজা উৎসবে পশ্চিম বাংলার মানুষের কাছে অত্যন্ত প্রিয় এপারের পদ্মার ইলিশ। সারা বছর ধরে তারা অপেক্ষায় থাকে পূজার সময় বাংলাদেশ থেকে ইলিশ আসবে, আর তারা অতিথিদের আপ্যায়নে ইলিশ তুলে দিবেন প্লেটে।
তবে ইলিশ আহরণ কমে যাওয়ায় সরকার ২০১২ সাল থেকে দেশের বাইরে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করে। এতে ছয় বছর ধরে ইলিশ ছাড়ায় পূজা পার করে পশ্চিম বাংলার মানুষ। অবশেষে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য আর দীর্ঘ দিনের বন্ধুত্বের ধারাবাহিকতায় সরকার ২০১৯ সাল থেকে পূজার উপলক্ষে আবারও নির্দিষ্ট হারে ইলিশ রপ্তানি করে আসছে।
এবছর পূজায় ৩ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতিতে গত ২ দিনে ১১৭ মোট্রিক টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে।
আরও পড়ুন: দুর্গা পূজার আগে ভারতে ৩৯৫০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন
ভুল তথ্য-অপপ্রচার মোকাবিলা করতে প্রবাসীদের প্রতি মোমেনের আহ্বান
দেশের জন্য সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে বাংলাদেশি প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
তাদের সত্য তথ্য ও পরিসংখ্যান দিয়ে ভুল তথ্য ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে লড়াই করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বাংলাদেশকে বিশ্বের সঙ্গে সংযুক্ত করতে তাদের ভূমিকার প্রশংসা করেন এবং তাদের দেশের অর্জনগুলো তুলে ধরার আহ্বান জানান।
সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রবিবার নিউইয়র্কের কুইন্সের সেন্টার ফর নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশির উদ্যোগে আয়োজিত ‘ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ থ্রু ইউএন পিসকিপিং অ্যান্ড এনআরবি’-শীর্ষক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
ড. মোমেন বাণিজ্য ও অভিন্ন মূল্যবোধ উভয় ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার শক্তিশালী সম্পর্কের ওপর জোর দেন।
তিনি প্রবাসীদের দেশের সঙ্গে সংযুক্ত থাকতে এবং উভয় দেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিতে অবদান রাখতে উৎসাহিত করেন।
ড. মোমেন বাংলাদেশে সহনশীলতার কথা তুলে ধরেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তা (সহনশীলতা) প্রকাশ পায়; সেসময় জাতিগত নিপীড়ন, অবিচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে দেশবাসী দৃঢ়ভাবে রুখে দাঁড়িয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ৩০ লাখ মানুষের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল।’
তিনি বলেন, ‘এই সংগ্রাম বাঙালি জাতির সাহস ও আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে কোনো টানাপোড়েন নেই: পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন
তিনি দুর্ভিক্ষ ও জলবায়ু বিপর্যয়সহ স্বাধীনতার পরের চ্যালেঞ্জগুলো স্বীকার করেছেন, যার ফলে পশ্চিমারা বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ হিসেবে অভিহিত করেছিল।
মোমেন বলেন, ‘তবে কয়েক বছর ধরে, বাংলাদেশ একটি প্রাণবন্ত অর্থনীতিতে বিকশিত হয়েছে। রপ্তানি ও জিডিপিতে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি এর সাক্ষী। এটি এখন বিশ্বব্যাপী ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে দাঁড়িয়েছে, উল্লেখযোগ্যভাবে দারিদ্র্য হ্রাস করেছে এবং বিভিন্ন সামাজিক সূচকে উন্নতি করেছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫-১৯৯০ সালে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৩ দশমিক ২ শতাংশ। এখন গড় প্রবৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ৮ শতাংশ।
তিনি বলেন, ২০০১-২০০৬ সময়কালে বাংলাদেশকে ‘উগ্রবাদ, জিহাদি ও সন্ত্রাসের ঘাঁটি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। সুখবর হলো এখন আর সেদিন নেই।
তিনি বলেন, জাতির পিতার জঘন্য হত্যাকাণ্ডের পর কুখ্যাত ইনডেমনিটি আইন প্রণয়ন করা হয়। যা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত খুনিদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে বরং নজিরবিহীন আইনি দায়মুক্তি দেয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, খুনিদের সম্মানজনক চাকরি ও পদে ভূষিত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: সবার সহযোগিতা ছাড়া সহিংসতামুক্ত নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিতে পারবে না সরকার: মোমেন
ড. মোমেন বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন।
তিনি বলেন, ‘তার নির্দেশনায় বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক সূচক, জলবায়ু কূটনীতি এবং মানবিক প্রচেষ্টায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে।’
ড. মোমেন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে শীর্ষ অবদানকারী হিসেবে বাংলাদেশের ভূমিকা তুলে ধরে শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতির ওপর জোর দেন।
তিনি ১২ মিলিয়ন বাংলাদেশি প্রবাসীর অমূল্য অবদানের স্বীকৃতি দিয়েছেন। যারা রেমিট্যান্স এবং বিভিন্ন খাতে অবদানের মাধ্যমে তাদের দেশকে সমর্থন করে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, সেন্টার ফর এনআরবি’র চেয়ারপার্সন এম এস শেকিল চৌধুরী, ইউএস অ্যাম্বাসেডর অব পিস, ইউএন অ্যান্ড এক্সপার্ট ডব্লিউএইচও ড. সিমা কারেতনয়া, নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল নাজমুল হুদা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: ‘বন্ধু পরামর্শ দিতে পারে’: মোমেন