%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%8F%E0%A6%A8%E0%A6%AA%E0%A6%BF
বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ডাকা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ চলছে
সহিংসতার আশঙ্কার মধ্যে দিয়ে আজ রবিবার (২৬ নভেম্বর) সকালে বিএনপি ও সমমনা বিরোধী দলগুলোর ডাকা দেশব্যাপী আরও একটি ৪৮ ঘণ্টার সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়েছে।
সর্বশেষ অবরোধ কর্মসূচিটি আজ সকাল ৬টা থেকে শুরু হয়ে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত চলবে।
আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতা ছাড়তে এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে চাপ সৃষ্টি করতে বিরোধী দলগুলো ইতোমধ্যে ৬ দফায় অবরোধ পালন করেছে।
আরও পড়ুন: ডিসেম্বরে অবরোধের পরিবর্তে অবস্থান কর্মসূচির পরিকল্পনা বিএনপির
আগের অবরোধ কর্মসূচিগুলোতে অগ্নিসংযোগ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।
আগের মতো এবারও ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি বেশি দেখা গেছে।
ঢাকার সড়কে রিকশার সংখ্যা বেশি এবং কিছু ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে।
গণমাধ্যমের যানবাহন, অ্যাম্বুলেন্স এবং অক্সিজেন সিলিন্ডার ও ওষুধ বহনকারী যানবাহন এ অবরোধের আওতাবহির্ভূত থাকবে।
৪৮ ঘণ্টার অবরোধকে সামনে রেখে সিলেট নগরীর কুমারগাঁওয়ে একটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে অবরোধে বিএনপির ২০ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার
২৯ অক্টোবর থেকে চলমান হরতাল-অবরোধে ৩১০টি ভাঙচুর ও ৩৭৬টি অগ্নিসংযোগ হয়েছে: পুলিশ
২৮ অক্টোবরে মহাসমাবেশ থেকে চট্টগ্রামের বিএনপি নেতা গ্রেপ্তার, কারাগারে মৃত্যু
গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রামের এক বিএনপি নেতার মৃত্যু হয়েছে।
মারা যাওয়া গোলামুর রহমান চট্টগ্রাম নগরীর মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির সহ-সভাপতি।
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের হাই সিকিউরিটি ইউনিটের সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
শনিবার(২৫ নভেম্বর) দুপুরে কারাগারে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন গোলাপুর রহমান। তাকে দ্রুত কারাগারের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাকে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে জানান সুব্রত কুমার।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইদ্রিস আলী জানান, শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে কাশিমপুর কারাগার থেকে টেলিফোনে তার পরিবারকে বিষয়টি জানানো হয়।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে রাশিয়ার ইতিবাচক ভূমিকা প্রত্যাশা বিএনপির: রিজভী
ইদ্রিস বলেন, তার লাশ নিতে পরিবারের সদস্যদের কাশিমপুর কারাগারে যেতে বলা হয়েছে।
গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশে যোগ দিতে ঢাকায় যান গোলাপুর রহমান। সমাবেশের সময় নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে থেকে মোহরা ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ আজম ও গোলাপসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর থেকে তারা কাশিমপুর কারাগারে বন্দি রয়েছেন।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দেওয়া তালিকা ধরে নির্বাচনে বিজয়ী ঘোষণা করবে ইসি: বিএনপি
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দেওয়া তালিকা ধরে নির্বাচনে বিজয়ী ঘোষণা করবে ইসি: বিএনপি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া তালিকা অনুযায়ী বিজয়ী ঘোষণা করতে শত কোটি টাকা নষ্ট করে নির্বাচন কমিশন (ইসি) জালিয়াতির নির্বাচন করতে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।
শনিবার (২৫ নভেম্বর) এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই অভিযোগ করেন।
রবিবার থেকে শুরু হওয়া দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ সফল করতে দৃঢ় সংকল্প ও সাহসের সঙ্গে রাজপথে নামার জন্য বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বানও জানান তিনি।
রিজভী বলেন, '২০১৪ সালে অটোপাস নির্বাচন এবং ২০১৮ সালে রাতের ডাকাতির পর এবার আরেকটি জালিয়াতি হবে। নির্বাচন কমিশন শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন বা অফিস থেকে দেওয়া একটি তালিকানুযায়ী বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করবে।’
আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের নামে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে শত শত কোটি টাকা অপচয় করা হবে উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, 'দেশের জনগণকে ফাঁকি দিয়ে সবচেয়ে নিখুঁত প্রতারণায় এটা করা হবে। গণভবন থেকে যে তালিকা তৈরি করা হয়েছে, তা নির্বাচনের রাতেই পড়ে শোনানো হবে।’
তিনি বলেন, নির্বাচন এখন একটি কৌতুক, প্রহসন এবং ব্যবসার মাধ্যম হয়ে উঠেছে। কারণ জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করার ক্ষমতা হারিয়েছে।
বিএনপি নেতা বলেন, আসন বণ্টনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার সহানুভূতি, উপহার ও করুণায় জনপ্রতিনিধি তৈরি করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠ পর্যায়ের প্রশাসন নিয়ে চিন্তা নেই: ইসি রাশেদা
রিজভী অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক নেতাদের কিংস পার্টিতে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে এবং কম পরিচিত দলগুলো তাদের নগদ অর্থের প্রলোভন দিচ্ছে এবং রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে তাদের এমপি করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। কিন্তু, যাদের নীতি আছে এবং যারা আদর্শবাদী ও দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদ, তাদের বোঝাতে পারেনি তারা।
তিনি বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরও উৎসবমুখর পরিবেশের পরিবর্তে সারাদেশে ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের লোকজন ছাড়া মানুষ এখন গ্রেপ্তারের ভয়ে পলাতক এবং অনেক গ্রাম মানুষহীন হয়ে পড়েছে।’ ‘তারা (আওয়ামী লীগ) ইতোমধ্যে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে হত্যাযজ্ঞ শুরু করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রতি রাতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়িতে অভিযান চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। ‘এভাবে মাফিয়া সরকার নির্বাচন করতে যাচ্ছে। কিন্তু নির্বাচনের নামে এই খেলা কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে বানচাল করা হবে।’
আরও পড়ুন: রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে লুটপাট করে নতুন দল তৈরি করছে সরকার: রিজভী
বিএনপি ও এর সক্রিয় নেতাদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিচার বিভাগের মাধ্যমে বেছে বেছে 'মিথ্যা' মামলায় সাজা দেয়ার জন্য সরকারের সমালোচনা করেন তিনি।
রিজভী বলেন, শনিবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে বিএনপির ৩২৫ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে এবং সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় প্রশাসনের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো রবিবার সকাল ৬টা থেকে সারাদেশে ৪৮ ঘণ্টার সড়ক-রেল-নৌপথ অবরোধ পালন করবে।
তিনি বলেন, 'আমি আশা করি গণতন্ত্রকামী জনগণ এবং বিরোধী দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা অবিচল ও সাহসিকতার সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে রাজপথে নেমে অবরোধ পালন করবেন।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে রাশিয়ার ইতিবাচক ভূমিকা প্রত্যাশা বিএনপির: রিজভী
বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে রাশিয়ার ইতিবাচক ভূমিকা প্রত্যাশা বিএনপির: রিজভী
বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে অন্যান্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পাশাপাশি রাশিয়ার ইতিবাচক ভূমিকা প্রত্যাশা করছে বিএনপি।
বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হয়।
রিজভী বলেন, 'রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা ২০২৩ সালের ২২ নভেম্বর রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক্স (টুইটার) অ্যাকাউন্টে কিছু মন্তব্য করেছেন বলে বাংলাদেশের জনগণ ও বিএনপির নজরে এসেছে।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বিরুদ্ধে সরকারবিরোধী সমাবেশ আয়োজনের জন্য বিরোধী দলের এক সদস্যের সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের অভিযোগ করেন জাখারোভা।
আরও পড়ুন: রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে লুটপাট করে নতুন দল তৈরি করছে সরকার: রিজভী
রিজভী বলেন, ‘জাখারোভার বক্তব্য একটি স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশের নাগরিকদের আশা-আকাঙ্ক্ষার সম্পূর্ণ বিরোধী। বিএনপি ভুল তথ্য ছড়ানোর বিষয়টি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করে।’
২০১৪ ও ২০১৮ সালের প্রহসনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কলঙ্কিত ট্র্যাক রেকর্ড ও রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রেক্ষাপটে বিএনপির এই নেতা বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ ও প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো বিশ্বাস করে, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের অধীনে একটি স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অসম্ভব।
রিজভী বলেন, বাংলাদেশের জনগণ ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক বিরোধী শক্তি তাদের চুরি হওয়া ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সংগ্রাম করছে।
তিনি বলেন, 'পুলিশের নৃশংস নিপীড়ন এবং পুলিশ ও ক্ষমতাসীনদের যৌথ হামলা মোকাবিলা করে বর্তমানে আমাদের দেশের জনগণ নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার ও প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও আন্তর্জাতিকমানের শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য শান্তিপূর্ণ ও অহিংস আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে নিয়োজিত রয়েছে।’
আরও পড়ুন: নির্বাচনে কারচুপি করতে সরকার এজেন্সিগুলো ব্যবহার করে কিংস পার্টি গঠন করছে: রিজভী
রিজভী বলেন, গত কয়েক মাসে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো রাজধানী ঢাকা ও বিভাগীয় সদরে স্বতঃস্ফূর্তভাবে লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে অসংখ্য সমাবেশের আয়োজন করেছে।
তিনি বলেন, 'কোনো বিদেশি কূটনীতিকের এ ধরনের সমাবেশে সহায়তা করার প্রশ্নটি শুধু অসত্যই নয়, গণতন্ত্রের জন্য জনগণের ন্যায়সঙ্গত সংগ্রাম সম্পর্কে সুস্পষ্ট মনগড়া অভিযোগ।’
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, দুর্নীতিগ্রস্ত স্বৈরাচারী সরকারের সঙ্গে জোট বেঁধে এবং জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জাখারোভার বক্তব্য নিজেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল, যা অপ্রত্যাশিত ও দুর্ভাগ্যজনক।
তিনি আরও বলেন, ২০০৯ সালে এই স্বৈরাচারী শাসনের সূচনার পর থেকে তাদের জীবন উৎসর্গ করেছে তাদের স্বজনসহ লাখ লাখ মানুষের অনুভূতিতে আঘাত করেছে জাখারোভার বক্তব্য।
রিজভী বলেন, বর্তমানে গণতান্ত্রিককামীরা গণতন্ত্রের মূল্যবোধ, আইনের শাসন ও বাকস্বাধীনতার জন্য রক্ত ঝরিয়ে রাস্তায় নেমেছেন।
আরও পড়ুন: অগ্নিসংযোগ-নাশকতার পেছনে আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা: রিজভী
তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ বিশ্বের গণতন্ত্রপ্রিয় দেশ ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ইতিবাচক ভূমিকাকে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্বীকার করে। অনুপ্রেরণামূলক কূটনৈতিক উদ্যোগ রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা ও মতাদর্শকে অতিক্রম করে জনগণের জন্য ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের অভিন্ন লক্ষ্যে বাংলাদেশীদের ঐক্যবদ্ধ করেছে।
রিজভী বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান স্বৈরাচারী সরকারের পাশে অন্য কোনো দেশকে দেখতে গণতন্ত্রপন্থী নাগরিকরা পছন্দ করে না।
তিনি বলেন, পারস্পরিক ব্যবসা-বাণিজ্য ও অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক স্বার্থে রাশিয়া বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বন্ধু। বিএনপি রাশিয়ার ঐতিহাসিক অবদানকে স্বীকৃতি দেয় এবং দুই দেশের নাগরিকদের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ককে মূল্য দেয়।
তিনি বলেন, 'আমরা আশা করি, রাশিয়া বাংলাদেশিদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাবে না। আমাদের জনগণ যখন ভোটাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তখন রাশিয়ার সমর্থন করাই উচিৎ হবে।’
আরও পড়ুন: বিশ্ব স্বীকৃতি দিয়েছে বিএনপির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অপপ্রচার একতরফা নির্বাচনের কৌশল: রিজভী
রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে লুটপাট করে নতুন দল তৈরি করছে সরকার: রিজভী
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন, রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে লুটপাট করা টাকা দিয়ে সরকার বিভিন্ন দলের ত্যাগী লোকদের নিয়োগ দিয়ে নতুন দল তৈরি করছে।
শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) এক ভার্চুয়াল প্রেস ব্রিফিংয়ে দেওয়া বক্তব্যে বলেন, বিশ্বাসযোগ্য ভোটে জয়ী হওয়ার সুযোগ না থাকায় জনগণকে একতরফা নির্বাচন করার জন্য ফাউল গেম অবলম্বন করার অভিযোগ করেন তিনি।
এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল কখনই অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের নিয়োগ দেয় না। গ্রামাঞ্চলের টাউট এবং খারাপ মানুষেরা বিরোধীদের সমস্যায় ফেলতে এটা করে...শেখ হাসিনাও একই কাজ করছেন।’
তিনি বলেন, সুবিধাবাদীরা বিভিন্নভাবে বিভিন্ন দলে অনুপ্রবেশ করে এবং এই লোকেরা নিজেদের লাভের সুযোগ পেলেই তাদের আসল রঙ পরিবর্তন করে। ‘এরশাদের শাসনামলে আমরা তাকে এই ধরনের লোক নিয়ে দল ও সরকার গঠন করতে দেখেছি। শেখ হাসিনা এখন সেই অশুভ পন্থা অনুসরণ করছেন।’
আরও পড়ুন: বিশ্ব স্বীকৃতি দিয়েছে বিএনপির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অপপ্রচার একতরফা নির্বাচনের কৌশল: রিজভী
রিজভী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপি ও সমমনা দলের লোকদের বিভিন্নভাবে লোভ দেখিয়ে নিয়োগ দিতে।
তিনি আরও বলেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এখন লোকদেরকে টাকা দিয়ে লোভ দেখিয়ে দলে নিয়ে যাচ্ছে এবং নিশ্চিত মনোনয়ন ও বিজয়ের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।
তিনি বলেন, একদিকে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করে জনগণকে দমন করতে সব ধরনের নিষ্ঠুর পদক্ষেপ নিচ্ছেন, অন্যদিকে অর্থ ব্যবহার করে বিভিন্ন পক্ষের ফেলে দেওয়া লোকদের নিয়ে দল গঠনের চালাকি চালাচ্ছেন। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে লুট করা হয়েছে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, অন্য স্বৈরাচারীদের মতো শেখ হাসিনাও ক্ষমতাকে আঁকড়ে ধরার জন্য নির্লজ্জ ও ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। ‘কারণ জনগণের কাছে গিয়ে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে জয়ী হওয়ার কোনো উপায় তার নেই। তাই নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি সব গণবিরোধী, অনৈতিক কর্মকাণ্ড ও নানা অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছেন।
তিনি অভিযোগ করেন, নির্বাচনের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সরকার বিএনপি নেতা-কর্মীদের বেপরোয়াভাবে গ্রেপ্তার এবং তাদের বাড়িতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। এজন্য সারাদেশে র্যাবের ৪২৮টি কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
বিশ্বকাপ ফাইনালে প্রতিবেশী দেশের ক্রিকেট দলের পরাজয়ে বাংলাদেশিদের উদযাপন নিয়ে ভারতীয় রাজনীতিবিদদের ক্ষোভের বিষয়ে তিনি ভারতীয় মিডিয়া ও নীতিনির্ধারকদের প্রতি বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মনোভাব বৃদ্ধির কারণ খুঁজে বের করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ এখন গণতান্ত্রিক ও মৌলিক অধিকারের অভাবে… শেখ হাসিনা কেন সুষ্ঠু নির্বাচন দিচ্ছেন না? কারণ অনেক দেশ (ভারত সহ) তাকে ক্ষমতায় থাকার গ্যারান্টি দিচ্ছে, যাতে সে তাদের উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারে। এ কারণে অনেক দেশ তাকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে।’
আরও পড়ুন: নির্বাচনে কারচুপি করতে সরকার এজেন্সিগুলো ব্যবহার করে কিংস পার্টি গঠন করছে: রিজভী
অগ্নিসংযোগ-নাশকতার পেছনে আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা: রিজভী
ডিসেম্বরে অবরোধের পরিবর্তে অবস্থান কর্মসূচির পরিকল্পনা বিএনপির
ডিসেম্বরের শুরুতে হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি থেকে সরে এসে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে বিএনপি।
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময়সীমা শেষ হওয়ার আগে কোনো ইতিবাচক অগ্রগতি না হলে আগামী ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের জন্য এই পরিবর্তনের কথা ভাবা হচ্ছে।
ইউএনবির সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির সিনিয়র নেতারা জানান, দলীয় নেতাদের খোলাখুলিভাবে নির্বাচনে যাওয়ার সুযোগ তৈরির লক্ষ্যে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময়সীমা শেষ হওয়ার পর হরতাল-অবরোধের পরিবর্তে বিক্ষোভ, অবস্থান কর্মসূচি ও মিছিলের মতো বিকল্প কর্মসূচি নেবে তারা।
তারা বলেন, নভেম্বরে তাদের প্রথম ধাপের আন্দোলন শেষ হবে এবং তারপর বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে কোনো বোঝাপড়া ছাড়াই তাদের বর্তমান নির্বাচনী পরিকল্পনা নিয়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশন (ইসি) এগিয়ে গেলে, নির্বাচন বানচালের জন্য নতুন কৌশল নিয়ে তারা দ্বিতীয় দফা আন্দোলন শুরু করবে এবং 'একতরফা' নির্বাচন বর্জন করতে জনমত তৈরি করবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পশ্চিমা বিশ্বের অব্যাহত চাপে পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে, তাই তারা ভিন্নভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। ‘ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত কোনো উন্নয়ন না হলে, আমরা নির্বাচন ব্যাহত করার জন্য আমাদের কৌশল পরিবর্তন করব এবং আবার হরতাল বা অবরোধ কার্যকর করব।’
তিনি বলেন, গণগ্রেপ্তার এবং দলের নেতা-কর্মীদের উপর দমন-পীড়নের কারণে পরিস্থিতি অত্যন্ত প্রতিকূল। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরও জনগণের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে দৃশ্যমান উৎসাহ না থাকায় তাদের প্রথম দফা আন্দোলন সফল হয়েছে।
এই বিএনপি নেতা বলেন, তারা এখন বিকল্প কার্যকর কর্মসূচি খুঁজছেন। কারণ তারা মনে করেন, কারণ মানুষকে কোনো স্বস্তি না দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি চালিয়ে গেলে জনগণ বিরক্ত হতে পারে।
তিনি বলেন, তাদের সাম্প্রতিক স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তাদের চলমান কর্মসূচি পর্যালোচনা করা হয়েছে এবং পরবর্তী কর্মপন্থা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। ‘আমাদের বেশিরভাগ স্থায়ী কমিটির সদস্য ইসি ঘোষিত বর্তমান নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত অবরোধ অব্যাহত রাখার মত প্রকাশ করেছেন। এরপর আমরা বিক্ষোভ, সমাবেশ, মিছিল, অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করব।’
নির্বাচনের তফসিল পরিবর্তন না করলে আগামী ৩০ নভেম্বর হরতাল বা অবরোধের পরিবর্তে ঢাকায় ইসির কার্যালয় এবং জেলা পর্যায়ের রিটার্নিং কর্মকর্তাদের অফিস ঘেরাও করার প্রস্তাব দিয়েছেন দলের কয়েকজন নীতিনির্ধারক।
এই বিএনপি নেতা বলেন, তারা অন্য বিরোধী দলগুলোর সঙ্গেও কথা বলেছে, যারা দীর্ঘদিন ধরে তাদের সঙ্গে একযোগে আন্দোলন করে আসছে; তারাও একই মতামত দিয়েছেন। ‘তারা ইসি, সচিবালয়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান অবরোধ বা সেখানে অবস্থান কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি জনসভা করার পরামর্শ দেন। বিরোধী দলগুলোকে তাদের গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পালন করতে না দিলে ইসির ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হবে বলে তারা মত দেন।
বিএনপি ও জোটের শরিকদের নেতারা মনে করছেন, মনোনয়নপত্র দাখিলের সময়সীমা শেষ হলে আওয়ামী লীগের ছেড়ে দেওয়া আসনে ক্ষমতাসীন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ও ছোট দলের প্রার্থীদের মধ্যে হাতাহাতি হবে। অংশীদার এবং যারা একটি বোঝাপড়া ও প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে নির্বাচনে যোগদান করছে।
এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘যদি এমন পরিস্থিতি আসে, তাহলে আমরা আমাদের রাজনৈতিক লাভের জন্য একটি সময়োপযোগী কৌশল নিয়ে আসব।’
গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশে সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনার পর গত ২৯ অক্টোবর থেকে ছয় দফায় ১৩ দিন দেশব্যাপী অবরোধ এবং দুই দফায় তিন দিন হরতাল পালন করে বিএনপি ও সমমনা জোট ও বিরোধী দলগুলো।
অবরোধের ষষ্ঠ ধাপ শুক্রবার সকাল ৬টায় শেষ হয়েছে এবং রবিবার সকাল ৬টা থেকে ফের ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ শুরু হবে।
যোগাযোগ করা হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আগামী সপ্তাহব্যাপী অবরোধ চলবে। এর পর জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী নতুন ধরনের কর্মসূচি প্রণয়ন করা হবে।
তিনি বলেন, তাদের দলের নীতিনির্ধারকরা ‘একতরফা’ জাতীয় নির্বাচন বানচালের জন্য আরও জনসমর্থন জোগাড় করতে সম্ভাব্য পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করছেন। ‘আমরা এখনও কর্মসূচি চূড়ান্ত করিনি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, তৃণমূল পর্যায়ের জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে বর্তমান আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে, যারা পুলিশ ও প্রশাসনের সহায়তায় বিরোধী দলের নেতাদের দমন করার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, 'আমরা পূর্ণ ধৈর্য ধরে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। এই সরকার জনগণের দৃঢ় মনোবল ও ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনের কাছে হার মানতে বাধ্য হবে। জনগণ বিএনপিকে হৃদয় থেকে গ্রহণ করেছে এবং তারা দুঃশাসন থেকে মুক্তি চায়।’
বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর এক সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও এখনও জনগণের মধ্যে নির্বাচনী উৎসাহ দেখা যাচ্ছে না। ‘এটা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়েছে যে কেউ নির্বাচনে আগ্রহী নয়। তাই আমাদের আন্দোলন সফল এবং জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। জনগণ কোনো একতরফা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না।’
তিনি আরও বলেন, জনগণের আকাঙ্ক্ষা এবং নতুন রাজনৈতিক উন্নয়নের ভিত্তিতে আন্দোলন নিজেই তার পরবর্তী পথ নির্ধারণ করবে।
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠ পর্যায়ের প্রশাসন নিয়ে চিন্তা নেই: ইসি রাশেদা
আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মাঠ পর্যায়ের প্রশাসন নিয়ে কোনো উদ্বেগ নেই বলে আশ্বাস দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) রাশেদা সুলতানা।
তিনি বলেন, ইসি সবার সঙ্গে মিলে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রস্তাব দেবে।
শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) সকালে রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের সম্মেলনকক্ষে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রস্তুতি সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে কমিশনার রাশেদা এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: নির্বাচন কারো জন্য অপেক্ষা করবে না: ইসি আনিছুর
তিনি বলেন, ‘কমিশন এখন ভোটারদের জন্য একটি নতুন আইন করেছে। তাদের (ভোটারদের) অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
নির্বাচন বিলম্বিত হতে পারে কি না জানতে চাইলে ইসি বলেন, ‘নির্বাচন যথাসময়ে হবে, তফসিল পেছানোর কোনো সুযোগ নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেকোনো পরিস্থিতিতে মোকাবিলা করবে।’
রংপুর বিভাগীয় কমিশনার হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও লালমনিরহাট জেলার রিটার্নিং কর্মকর্তা, পুলিশ সুপার, ঊর্ধ্বতন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: ইসি ও আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে: ডিএমপি
সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে তফসিল ঘোষণা করবেন সিইসি
চট্টগ্রামে অবরোধে বিএনপির ২০ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার
সরকার পতনের একদফা দাবি ও ঘোষিত নির্বাচনী তফসিল বাতিলের দাবিতে বিএনপির ডাকা ৬ষ্ট দফা অবরোধের দ্বিতীয় দিন চট্টগ্রামে মিছিল ও সড়ক অবরোধকালে আরও ২০জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) মহানগরী ও জেলার বিভিন্ন স্থানে থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
সিএমপির চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মখর্তা (ওসি) মঞ্জুর কাদের মঞ্জুর বলেন, গ্রেপ্তারদের মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক এমদাদুল হক বাদশাও আছেন। তাকে সন্ধ্যা নগরীর কাতালগঞ্জর পার্কভিউ হাসপাতালের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এর আগে নগরীর হালিশহর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে হালিশহর থানা বিএনপির সভাপতি মোশারফ হোসেন ডিপতি।
মহানগর বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ইদ্রিস আলী এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ড বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিমকে বৃহস্পতিবার দুপুরে সাদা পোশাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। দক্ষিণ আগ্রাবাদ ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা কাজী মিন্টুকে ডবলমুরিং থানা, পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ড বিএনপি নেতা মো. ফারুককে বাকলিয়া থানা, সাতকানিয়া পৌরসভা বিএনপির আহ্বায়ক শওকত আলীকে ডিবি, চকবাজার ওয়ার্ড ছাত্রদল নেতা সাখাওয়াত হোসেন সিনবাদকে চকবাজার থানা, চান্দগাঁও থানা যুবদল নেতা মোরশেদ ফয়সালকে র্যাব, মোহরা যুবদল নেতা নুরুল আবছার ও পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ড যুবদল নেতা মো. আলাউদ্দিনকে চাঁন্দগাও থানা, হাটহাজারী পৌরসভা বিএনপি'র সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক ওয়ার্ড কাউন্সিলর এম এ শুক্কুরকে র্যাব, হাটহাজারী সড়কের ফতেয়াবাদ এলাকা থেকে বিএনপি নেতা আমজাদ আলী, যুবদল নেতা খোরশেদ আলম, ছাত্রদল নেতা কামরুল ইসলাম শিহাব, শহিদুল ইসলাম হৃদয়, মোহাম্মদ রাকিব, তৌহিদুল ইসলাম, সাঈদুল হোসেন অভি, আবুল খায়ের জিসানকে গ্রেফতার করেছে হাটহাজারী থানা পুলিশ।
এদিকে নগর বিএনপির পক্ষ থেকে দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অবরোধে দিনভর শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভকালে মহানগর ও জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ২০ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার এবং বাঁশখালী উপজেলা ছাত্রদল নেতা মঈনুদ্দীন যায়েদকে না পেয়ে তার ব্যবসায়ী বড় ভাই তৌহিদুল ইসলামকে বাসা থেকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায় বাঁশখালী থানা পুলিশ। থানায় রাতভর অমানুষিক নির্যাতন করে বৃহস্পতিবার বিশেষ ক্ষমতা আইনে মিথ্যা মামলা দিয়ে আদালতে চালান করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে।
বিএনপির ৬২ নেতা-কর্মীর সাড়ে তিন বছরের কারাদণ্ড
পাঁচ বছর আগে রাজধানীর বংশাল থানায় পুলিশের কাজে বাধা ও দাঙ্গার অভিযোগের মামলায় বিএনপির ৬২ নেতা-কর্মীকে পৃথক দুই ধারায় সাড়ে তিন বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শেখ সাদীর আদালত এ রায় দেন।
দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন- লতিফ উল্লাহ ফারুক, তাইজুদ্দিন ওরফে লম্বা তাইজু, আ. রহমান ওরফে বোমা রহমান, জহিরুল ইসলাম তুষার ওরফে কালা, মো. রকি প্রমুখ।
দাঙ্গার অভিযোগে আসামিদের দেড় বছর করে কারাদণ্ড, দুই হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড, অনাদায়ে তাদের আরও সাত দিনের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া অভিযোগে তাদের আরও দুই বছরের কারাদণ্ড, দুই হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও সাত দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে বংশাল এলাকায় নাশকতার অভিযোগে পুলিশ মামলাটি দায়ের করে।
একতরফা নির্বাচন প্রতিহত করার হুমকি বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা দলগুলোর
বিএনপিসহ কয়েকটি সমমনা দল ও জোটের নেতারা বলেছেন, দেশের জনগণ তাদের সর্বশক্তি দিয়ে আগামী ৭ জানুয়ারি সরকারের একতরফা জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের অপচেষ্টা রুখে দেবে।
বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) তাদের চলমান ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের সমর্থনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে তারা একটি বিশ্বাসযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ প্রশস্ত করতে নির্বাচনের তফসিল বাতিলের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
৪৮ ঘণ্টার অবরোধের দ্বিতীয় দিনে রাজধানীর ফকিরাপুল, মতিঝিল, পান্থপথ, ধূপখোলা, মেরুল বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী, আগারগাঁও, শ্যামপুর কদমতলী, ডেমরা, সবুজবাগ, খিলগাঁও, বাংলামোটরসহ বিভিন্ন এলাকায় ঝটিকা মিছিল বের করে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
এছাড়া গণতন্ত্র মঞ্চ, গণ-অধিকার পরিষদের দুটি উপদল, ১২ দলীয় জোট, বাম গণতান্ত্রিক জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণফোরাম ও পিপলস পার্টি বিজয়নগর, নয়াপল্টন পুরানা পল্টন ও জাতীয় প্রেস ক্লাব এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে।
এসব মিছিল-সমাবেশ থেকে বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীরা নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও সরকারের বিরুদ্ধে একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানের ‘চেষ্টা’র বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেন।
গত ২৯ অক্টোবর পরবর্তী সময়ের মতো বৃহস্পতিবারও নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কের দুই পাশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উপস্থিতি ছিল এবং কেন্দ্রীয় কার্যালয় তালাবদ্ধ ছিল।
অবরোধের সমর্থনে সকাল ৬টার দিকে ফকিরাপুল এলাকায় ঝটিকা মিছিল করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবসহ দলের কয়েকজন নেতা-কর্মী।
রিজভী বলেন, সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সারাদেশে বিএনপি নেতা-কর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ কর্মসূচি পালনে রাজপথে নেমেছে।
তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার এবার ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। কারণ জনগণ তার একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানের পদক্ষেপ নস্যাৎ করবে।’
এই বিএনপি নেতা অভিযোগ করেন, পুলিশ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করছে, তাদের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা’ ও ‘গায়েবি’ মামলা করছে, বাড়িঘরে হামলা ও তল্লাশি চালাচ্ছে এবং বাবা-মা-ভাইদের গ্রেপ্তার করছে। কিন্তু এরপরও অবরোধ প্রতিহত করা যাচ্ছে না।’
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট, সরকার আর ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে জনগণকে ফাঁকি দিতে পারবে না। জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে দমন করা যাবে না।’
রিজভী বলেন, বর্তমান সরকারকে নির্দলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে পদত্যাগ করতে হবে। ‘সেই সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন করতে হবে এবং তাদের অধীনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একটি নতুন কমিশন গঠন করতে হবে। এ ছাড়া নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।’
বিএনপির ঢাকা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় মতিঝিল এলাকায় আয়োজিত সমাবেশে নির্বাচনের তফসিল বাতিলের দাবি জানান।
এ ছাড়া নগরীর বিভিন্ন এলাকায় মিছিল বের করেন বিএনপির বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতারা।
এদিকে, সকাল ১১টায় তোপখানা রোড থেকে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা-কর্মীদের বের করা একটি মিছিল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, নির্বাচনী মাঠকে বিষাক্ত ফুলে সাজিয়ে সরকার একমুখী নির্বাচনের খেলা শুরু করেছে।
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে বিরোধী দল যেকোনো উপায়ে একতরফা নির্বাচন প্রতিহত করবে।
হক বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বর্তমান সরকারকে শুধু ভোট চোর-ডাকাতই বলবে না, গণশত্রুও বলবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই এসব খেলা বন্ধ করুন... এই খেলা বন্ধ না হলে বাংলাদেশের মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়েও চূড়ান্ত লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত।’
এছাড়া দেশব্যাপী অবরোধ কর্মসূচির সমর্থনে ঢাকার ১০টি পয়েন্টে মিছিল করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
দলের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দলের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর নেতাদের নেতৃত্বে উত্তরা, মিরপুর, মতিঝিল, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, ওয়ারী, গেন্ডারিয়া ও শনির আখড়া এলাকায় মিছিল করেছে জামায়াত।