বিএনপি
রাসিক নির্বাচনে বিএনপির কেউ অংশ নিলে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হবে: মিনু
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু বলেছেন, রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে বিএনপির কেউ অংশ নিলে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হবে। তাকে আর বিএনপির রাজনীতি করার সুযোগ দেওয়া হবে না।
রবিবার (২১ মে) দুপুরে নগরের মালোপাড়ায় মহানগর বিএনপি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
আরও পড়ুন: আ'লীগ মনোনয়ন প্রত্যাশীদের আয়ের উৎস দেখার দাবি রাসিক মেয়রের
দলের নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে মহানগর বিএনপি এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মিজানুর রহমান মিনু।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোন নির্বাচন নিরপেক্ষ হওয়া সম্ভব নয়। এই নির্বাচন ভোট ডাকাতি ও প্রহসনের নির্বাচন হবে। আন্দোলনের মাধ্যমে বর্তমান সরকারের পতন এবং এই নির্বাচন কমিশন ভেঙে দিয়ে সকল দলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে নির্বাচন নিশ্চিত করা হবে।
তিনি আরও বলেন, গত ১৯ মে পুঠিয়া উপজেলার শিবপুরের জনসভা শেষ করে বাড়িতে ফেরার পথে বিএনপি ও সহযোগী সংঠনের ১১ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এভাবে বিনা কারণে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে হয়রানি করা হচ্ছে।
গ্রেপ্তার সকল নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করেন বিএনপির এই কেন্দ্রীয় নেতা।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, বিএনপির ত্রাণ ও পুণর্বাসন বিষয়ক সহ-সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন, রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ইশা, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাইদ চাঁদ, নগর বিএনপির সদস্য সচিব মামুন অর রশিদ প্রমুখ।
আরও পড়ুন: কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে রাসিক কর্মকর্তা কারাগারে
চট্টগ্রামে স্ত্রীর মামলায় আইনজীবী কারাগারে
আসন্ন সিটি নির্বাচনে জনগণের কোনো আগ্রহ নেই: ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন কমিশনের অধীনে সিটি নির্বাচনে জনগণের কোনো আগ্রহ নেই।
বিএনপি কোনো প্রার্থী না দিলেও আগামী পাঁচ সিটি করপোরেশনে সাজানো নির্বাচন হবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
রবিবার (২১ মে) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) প্রতিষ্ঠাতা শফিউল আলম প্রধানের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দলটির একটি অংশের আয়োজিত অনুষ্ঠানে ফখরুল এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘তারা (সরকার) রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে নির্বাচন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন সরকারের নিয়ন্ত্রণে। দেশে নির্বাচন নিয়ে জনগণ আগ্রহী নয়।’
ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচন ব্যবস্থাকে তারা (সরকার) ধ্বংস করে দিয়েছে। দেখেন আপনারা আজ নির্বাচনের অবস্থা কেমন? এই যে মেয়র ইলেকশন হচ্ছে, বেশির ভাগ সিটি করপোরেশনে বিরোধী দল কোনো প্রার্থী দিচ্ছে না।’
আরও পড়ুন: ‘স্বৈরাচারের’ বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে শ্রমিকদের প্রতি মির্জা ফখরুলের আহ্বান
তিনি বলেন, সিলেটে অত্যন্ত জনপ্রিয় মানুষ আরিফ (আরিফুল হক চৌধুরী) দুইবার মেয়র হয়েছেন এবং সিলেটের মানুষ তাকে আবারও মেয়র হিসেবে চায়। সেই আরিফ শনিবার জনসভা করে বলেছেন যে এ নির্বাচন কখনোই গ্রহণযোগ্য হবে না, নির্বাচনই হবে না। তারা ব্লু প্রিন্ট করে ফেলেছে। এ নির্বাচনে যাওয়ার অর্থই হয় না।
তিনি বলেন, সিলেট নগরীর জনগণ তাদের প্রিয় নেতা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় চোখের পানি ফেলেছে। তিনি (আরিফ) স্পষ্টভাবে বলেছেন, এই নির্বাচন অর্থহীন হবে এবং এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না।
তিনি আরও বলেছেন, আমিও মনে করি এ নির্বাচন অর্থহীন হবে এবং এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, সব জায়গায় একই অবস্থা। আজ প্রতিটি নির্বাচনকে একই অবস্থার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পুরো নির্বাচন ব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠানটাকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে।
তিনি বলেন, এটাই হচ্ছে এ ধরনের কর্তৃত্ববাদী যারা, এ ধরনের ফ্যাসিবাদী যারা তাদের একটা হাতিয়ার। নির্বাচন একটা টুল, দেখাবে নির্বাচন হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সুতরাং আমরা খুব পরিষ্কার, স্পষ্ট ও দৃঢ়ভাবে বলছি যে এ সরকার থাকলে কোনো নির্বাচন হবে না। শেখ হাসিনা সরকার থাকলে কোনো নির্বাচন হবে না। একটা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন হতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, নির্বাচন নিয়ে এমন একটা অবস্থা হয়েছে, তাদের যে জোট আছে, ১৪ দলের এক শরিক দল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির আমাদের অত্যন্ত সম্মানিত শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব রাশেদ খান মেনন, তিনি কিছুদিন আগে বলেছেন, পরিকল্পিত নির্বাচন চাই না। ম্যাসেজ ইজ ভেরি ক্লিয়ার যে আওয়ামী লীগ পরিকল্পিত নির্বাচন করে, সেই নির্বাচন তিনি চান না।
আরেকজন প্রতিমন্ত্রী বলেছেন যে এখানে মন্ত্রীরাই সিন্ডিকেট তৈরি করে, তারাই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে। এসব আমার কথা নয়, সরকারের মন্ত্রীরা বলছেন।
এছাড়া রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে সরকার দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।
আরও পড়ুন: দাবি একটাই, শেখ হাসিনার পদত্যাগ: মির্জা ফখরুল
‘খেলাপী ঋণ প্রসঙ্গে’
মির্জা ফখরুল বলেন, পত্রিকায় আজ এসেছে যে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক তার রিপোর্টে বলছে বাংলাদেশ ইজ চ্যাম্পিয়ান অব ডিফল্ট লোনস, এই যে খেলাপি ঋণ, এটাতে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ান হয়ে গেছে। এক নম্বরে শ্রীলঙ্কা ছিল, শ্রীলঙ্কাকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ কেন হবে না? যারা ঋণ নেয়, শোধ করে না। তারা তো তাদের অ্যাডভাইজার মন্ত্রী, আমি নাম বলব না। হাজার হাজার কোটি টাকা তারা ঋণ নিয়ে রিসিডিউল করছে বছরের পর বছর ধরে।
এই বিএনপি নেতা বলেন, আর আমাদের ছোটখাটো ব্যবসায়ীরা যদি একটা-দুইটা ডিফল্ট হয় তো তার বিরুদ্ধে মামলা হয়ে যাচ্ছে, তাকে কারাগারে নিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, এই সরকারের অপকর্ম বলে শেষ করা যাবে না। এনাফ ইজ এনাফ। এই সরকার যদি একটা মুহূর্ত আর দেশের পরিচালনায় থাকে, দেশ আরও খারাপের দিকে যাবে।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ যে কমিটমেন্টগুলো করেছিলো, জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতি করেছিলো প্রত্যকটা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে। আওয়ামী লীগ হচ্ছে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের দল, আওয়ামী লীগ হচ্ছে জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর দল, আওয়ামী লীগ হচ্ছে স্বাধীনতার বিরুদ্ধের দল।
আরও পড়ুন: সরকার মিথ্যা কথা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে: মির্জা ফখরুল
‘অনেক খেলা হবে’
মির্জা ফখরুল বলেন, এখানে অনেক খেলা হচ্ছে, খেলা হবে। এই যে, উনি (ওবায়দুল কাদের) তো প্রায় বলেন খেলা হবে। সেটা হবে। অনেক চেষ্টা হবে আমাদের মধ্যে ভুলবুঝাবুঝি সৃষ্টি করানোর।
তিনি বলেন, যারা দেশপ্রেমিক আছেন তারা কখনো ভুল বুঝবেন না। আজকে ইস্পাত কঠিন ঐক্য নিয়ে আমরা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেবকে দেশে ফিরিয়ে আনা, গণতন্ত্রের মুক্তি, বাংলাদেশের মুক্তি, ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা এবং একটা সাম্যের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে আমরা এক ও অনঢ় হয়ে থাকব।
এছাড়া এই আন্দোলন আমাদের শুরু হয়ে গেছে। আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায় যাওয়ার জন্য আমাদের সবাইকে সর্বশক্তি দিয়ে নামতে হবে একাত্তর সালে যেভাবে আমরা নেমেছিলাম আজকেও একইভাবে আন্দোলনে নেমে শান্তিপূর্ণভাবে এই সরকারকে সরিয়ে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা আমাদেরকেই করতে হবে।
তিনি বলেন, এই কাজটা বাইর থেকে কেউ করে দেবে না। অনেকে অপেক্ষায় আছেন। অপেক্ষায় থাকার কোনো কারণ নাই। আপনাকে করতে হবে, আমাদের সবাইকে করতে হবে। এটা প্রত্যেকের দায়িত্ব বিশেষ করে তরুন সমাজের।
মির্জা ফখরুল বলেন, বিচার বিভাগের কি অবস্থা, তারা নিয়ন্ত্রণ করছে। আপনি হাইকোর্ট থেকে জামিন নিচ্ছে, নিম্ন আদালতে গেলে সেই জামিন ক্যানসেল করে কারাগারে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন।
আর গায়েবি মামলার কথা আমরা বলতে বলতে হয়রান হয়ে গেছি, আর বলতে ইচ্ছা করে না।
তিনি বলেন, খুলনাতে দেখেন একটা সভায় গিয়ে কিভাবে পুলিশ সেখানে আক্রমণ করেছে, ন্যাক্কারজনক। সেখানে অসংখ্য মানুষকে গুলিবিদ্ধ করেছে, আহত করেছে এবং হয়রানি করেছে।
এছাড়া এক হাজার ৩০০ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে।
আরও পড়ুন: ২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহের তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন মির্জা ফখরুলের
আরও কঠোর কর্মসূচি দিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করার ইঙ্গিত মোশাররফের
বিএনপির সিনিয়র নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে আগামী দিনে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার ইঙ্গিত দিয়েছেন এবং আন্দোলন সফল করতে দলের নেতাকর্মীদের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিতে বলেছেন।
শনিবার রাজধানীর এক সমাবেশে বক্তৃতায় তিনি জনগণের ওপর গুলি না চালাতে এবং শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা না দেওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক করে দেন।
এই স্বৈরাচারী সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য আগামী দিনে বৃহত্তর আন্দোলনে অংশ নিতে এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদের কঠোর কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য সবাইকে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান এই বিএনপি নেতা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মোশাররফ বলেন, ‘দুঃশাসন’, লুণ্ঠন ও দমন-পীড়নে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, দেশের জনগণ বর্তমান সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না।
'মিথ্যা মামলায়' দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ তাদের ১০ দফা দাবি আদায়ের জন্য দলটির দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীর কমলাপুর এলাকার পীর জঙ্গী মাজার সড়কে সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপির ঢাকা দক্ষিণ সিটি শাখা।
বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে 'গায়েবি' মামলা দায়ের, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ঘন ঘন বিদ্যুত বিপর্যয় এবং আওয়ামী লীগ সরকারের 'সবক্ষেত্রে' দুর্নীতির বিরুদ্ধে দলের প্রতিবাদ হিসেবে আরও ২০টি নগর ও জেলায শহরে সমাবেশ করেছে বিএনপি।
শুক্রবার খুলনায় এবং শনিবার লালমনিরহাট, রাজবাড়ী ও পটুয়াখালীতে বিএনপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশে পুলিশ হামলা ও গুলি চালায় বলে অভিযোগ করেন মোশাররফ।
এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘আমরা প্রশাসন এবং বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী বাহিনীকে মনে করিয়ে দিতে চাই তারা প্রজাতন্ত্রের সেবক…আপনাদের জনগণের সেবা করার কথা। কিন্তু আপনারা এখন দেশের জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে গুলি চালাচ্ছেন।’
তিনি জনগণের পক্ষে অবস্থান নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের বেআইনি নির্দেশ পালন না করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: দাবি একটাই, শেখ হাসিনার পদত্যাগ: মির্জা ফখরুল
মোশাররফ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় না থাকলে আপনাদের অনেকের (আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী) অনেক সমস্যায় পড়ার আশংকা আছে। তাই আমরা বলছি আপনারা এখনই নিজেদের সংশোধন করুন। আপনারা এখন থেকে জনগণের পক্ষে দাঁড়ান। ভবিষ্যতে যে সরকার আসবে তারা ক্ষমা করবে না।’
তিনি বলেন, যারা জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে তাদের ওপর গুলি চালাবে এবং শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দেবে, দেশের জনগণ ও তাদের সরকার তাদের ক্ষমা করবে না।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় বসতে গণতন্ত্রকে বিলুপ্ত করে জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন এই বিএনপি নেতা।
তিনি বলেন, সরকার ব্যাপক লুটপাট ও দুর্নীতি করে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। ‘আওয়ামী লীগ তাদের ব্যবসায়িক সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে দেশবাসীকে চরম সমস্যায় ফেলেছে।’
মোশাররফ বলেন, সরকার রাজনীতিকরণের মাধ্যমে বিচার বিভাগকে ধ্বংস করেছে বলে দেশে আইনের শাসন নেই।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ অর্থনীতি ও গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে, তারা তা পুনরুদ্ধার করতে পারবে না। ‘তাই মানুষ এখন এই সরকারের পতন দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। ‘যারা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়িয়ে নিজেদের পকেট ভারী করেছে তারা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।’
তিনি বলেন, অতীতের মতো বর্তমান স্বৈরাচারী সরকারকে উচ্ছেদ করে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করা এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা বিএনপির দায়িত্ব।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, ক্ষমতাসীনরা হামলা করলে তাদের দলও পাল্টা হামলা করবে।
তিনি ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।
বিএনপির এই নেতা বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দমন ও তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিন্দা করেন।
তিনি হুঁশিয়ারি দেন, ‘যারা মানুষের ওপর গুলি চালাচ্ছে তাদের মনে রাখতে হবে যে সবসময় আপনার ইউনিফর্ম থাকবে না। যারা বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা ও হত্যা করছে, তাদের রেহাই দেওয়া হবে না।’
আরও পড়ুন: 'আপনার সময় শেষ': সরকারের প্রতি ফখরুল
রাষ্ট্রদূতদের ‘অতিরিক্ত পুলিশ এসকর্ট’ প্রত্যাহার সরকারের ‘চরম দায়িত্বহীনতা’: ফখরুল
দাবি একটাই, শেখ হাসিনার পদত্যাগ: মির্জা ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দাবি একটাই, হাসিনার পদত্যাগ। ফয়সালা হবে রাজপথে। সেই বাংলাদেশকে ফিরিয়ে দিতে হবে। যেই বাংলাদেশ আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে পেয়েছি, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। শনিবার (২০ মে) বিকালে লালমনিরহাট কালেক্টরেট মাঠে জেলা বিএনপি আয়োজিত জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় মির্জা ফখরুল বলেন, ভোট ডাকাত সরকার ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াতে চেয়ে পারেনি, সারের দাম কয়েক দফায় কয়েকগুণ বাড়িয়েছে, আজ মানুষ পেঁয়াজ কিনতে পারছে না, ডিম কিনতে পারছে না। দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে আওয়ামী লীগ দেশের সম্পদ লুটপাট করে বিদেশে পাচার করে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করেছে।
তিনি বলেন, আমাদের দলের প্রায় ৪০ লাখ নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। সাবেক এমপিসহ হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গুম করেছে। ক্রসফায়ারের নামে নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। অসংখ্য শিশু বাবার জন্য, অসংখ্য স্ত্রী তার স্বামীর জন্য, অনেক মা তার সন্তানের আগমনের প্রতিক্ষা করছে। শেখ হাসিনা সরকার আমাদের এমন দেশ উপহার দিয়েছে।
আরও পড়ুন: 'আপনার সময় শেষ': সরকারের প্রতি ফখরুল
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ উন্নয়নের কথা বলে। সে উন্নয়ন কোথায়? উন্নয়ন তাদের ঘরে। যাদের সাইকেল ছিল না সেই নেতা এখন গাড়ি চালায়। ভূমিহীন নেতারা এখন অসংখ্য আলিসান বাড়ি-গাড়ির মালিক। এই সব তাদের উন্নয়ন। দেশকে ধ্বংস করে নিজেদের উন্নয়ন করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। আমরা বলেছি যে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। এজন্য শেখ হাসিনা সরকারকে আগে পদত্যাগ করতে হবে। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায় সরকার গঠন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। নতুন আইন করেছে, নির্বাচন কমিশন কোনো নির্বাচন বাতিল করতে পারবে না। এমন বানানো নির্বাচন কমিশন আমরা চাই না।
ফখরুল বলেন, যারা আমাদের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র কেড়ে নিয়েছে। তাদের আর ক্ষমতায় থাকার সময় নেই। তাদেরকে বিতাড়িত করার সময় এসেছে। ‘কোনঠে বাহে জাগো সবাই’। দাবি একটাই, শেখ হাসিনার পদত্যাগ।
সরকার পতনের আন্দোলনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলুর সভাপতিত্বে জনসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির সহ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা।
বেগম কালেদা জিয়ার শর্তহীন মুক্তি, দ্রব্যমুল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে ও ১০ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ব্যারিস্টার হাসান রাজিব প্রধান, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি রোকন উদ্দিন বাবুল, যুগ্ন সম্পাদক একেএম মমিনুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেনসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
আরও পড়ুন: রাষ্ট্রদূতদের ‘অতিরিক্ত পুলিশ এসকর্ট’ প্রত্যাহার সরকারের ‘চরম দায়িত্বহীনতা’: ফখরুল
এটা সরকারের সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র: খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা প্রসঙ্গে ফখরুল
সিলেট সিটি নির্বাচন: দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে সরে দাঁড়ালেন আরিফ
আগামী ২১ জুন অনুষ্ঠিতব্য সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলেন মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী।
শনিবার (২০ মে) বিকাল ৩টায় নগরীর ঐতিহাসিক রেজিস্ট্রারি মাঠে আয়োজিত এক নাগরিক সভায় তিনি এ ঘোষণা দেন।
জনসভায় আরিফ বলেন, ‘আমি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শে বিএনপির রাজনীতি শুরু করি। আমার জীবন থাকতে এই দলের ক্ষতি হয় এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেবো না। এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন করার পরিবেশ নেই। বিশেষ করে ইভিএম নিয়ে নগরের মানুষজন জানে না। এটা ভোট কারচুপির মহাআয়োজন। ইভিএমে উন্নত দেশগুলোও ভোট করছেনা। ইভিএমে আপনারা এক মার্কায় ভোট দিবেন, দেখবেন সেটা আরেক মার্কায় চলে গেছে।
আরিফ বলেন, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে আমার দল বিএনপি অংশ নেবে না। আমি এই সিদ্ধান্ত মেনে নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়ালাম।
এসময় আরিফ নগরবাসীকে ভোট বর্জন করার আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেছেন সিসিক মেয়র আরিফ
তিনি বলেন, জেল-জুলুম-নির্যাতন সহ্য করে সিলেটের উন্নয়নে মনোনিবেশ করেছিলাম। আমার উন্নয়ন কাজ নিয়ে যারা সমালোচনা করছেন তাদের বলতে চাই, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও আমার কাজের প্রশংসা করেছেন। আর তাই সিলেটের মানুষজন, মা-বোন যে যেখানেই আমাকে পাচ্ছেন, নির্বাচন করার জন্য বলছেন। অনুরোধ করছেন।
তিনি সরকারের সমালোচনা করে বলেন, এখনো আমি মনোনয়নপত্র কিনিনি। অথচ আমার নেতাকর্মীদের ঘরে ঘরে পুলিশ তল্লাশি করছে। গ্রেপ্তার-নির্যাতন, এমনকি রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমি আপনাদের সন্তান, আমি আপনাদের ভাই। আমি মেয়র না থাকলেও আপনাদের পাশে সবসময় থাকবো। আমাকে আপনারা ক্ষমা করুন।
আরও পড়ুন: দুই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে পেঁয়াজ কিনলেন সিসিক মেয়র আরিফ!
পটুয়াখালীতে আ.লীগ-বিএনপি সংঘর্ষে পুলিশসহ ৩০ জন আহত
পটুয়াখালী সদর উপজেলায় পূর্বনির্ধারিত সমাবেশকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ (আ.লীগ)ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। শনিবার সকালে পটুয়াখালী জেলা বিএনপির কার্যলয়ের সামনে এ সংঘর্ষ ঘটে।
জানা যায়, সরকারের পদত্যাগ দাবিতে পূর্বঘোষিত কর্মসূচিতে অংশ নিতে এদিন সকাল থেকেই বিভিন্ন উপজেলা থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা কার্যালয়ের সামনে আসতে শুরু করে। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল রশিদ চুন্নু মিয়ার সভাপতিত্বে বনানী মোড়ে জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে এ বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু।
জেলা বিএনপি সমাবেশ শুরুর আগে নেতাকর্মীরা পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। এ সময় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ সমাবেশে হামলা শুরু করলে উভয়েই সম্মুখ সংঘর্ষ ও ইটপাটকেল নিক্ষেপে জড়িয়ে পড়ে। পুলিশ উভয় দলের নেতাকর্মীদেরকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে।
আরও পড়ুন: সিরাজগঞ্জে আ.লীগ-বিএনপি সংঘর্ষে আহত ১৯; ১২টি মোটরবাইক ভাঙচুর ৩টিতে আগুন
এতে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি উজ্জ্বল তালুকদারসহ বিএনপি ও আওয়ামী লীগের ৩০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
পুলিশ সুপার (এসপি) মো. সাইদুল ইসলাম জানান, পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং শহরের বিএনপি কার্যালয়ের সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এসপি বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তারা টিয়ারগ্যাস ব্যবহার করেছে, তবে কত রাউন্ড ব্যবহার হয়েছে তা তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেননি।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মইনুল হাসান জানান, সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, যারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা করেছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি করার চেষ্টা করেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রক্রিয়া চলছে।
বিএনপির জেলা শাখা তাদের ১০ দফা দাবির পক্ষে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেছে এবং আজ বিকালে একটি হোটেলে তাদের সমাবেশে ‘হামলার’ প্রতিবাদ জানিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না।
এদিকে, সকালে স্থানীয় আ’লীগের নেতাকর্মীরা শান্তি সমাবেশ করে।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের জেলা শাখার সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলমগীর ও সহ-সভাপতি সুলতান আহমদ মৃধা প্রমুখ।
জেলা আ.লীগের সভাপতি বলেন, তাদের সমাবেশে ‘হামলার’ অভিযোগে তারা বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করবেন।
আরও পড়ুন: রাজধানীতে আ.লীগ-বিএনপি সংঘর্ষ
খুলনায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাসহ ১৩০০ জনের নামে মামলা, গ্রেপ্তার ১৩
খুলনায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় শুক্রবার রাতে বিএনপির তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলালসহ ৪৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ১২০০/১৩০০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। খুলনা সদর থানার এসআই খালিদ উদ্দিন বাদী হয়ে এ মামলা করেন। মামলায় ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
খুলনা সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আল মামুন বলেন, শুক্রবার রাতেই মামলাটি করা হয়েছে। মামলায় বিএনপির তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলালসহ ৪৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ১২০০/১৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
জানা যায়, শুক্রবার (১৯ মে) বিকালে সরকারের পদত্যাগ, মামলা ও গণগ্রেপ্তার বন্ধসহ ১০ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে খুলনা প্রেসক্লাব চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ আহ্বান করে বিএনপি। বিকালে প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপি নেতাকর্মীরা জড়ো হয়। আগে থেকেই সেখানে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল।
সমাবেশের প্রধান অতিথি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত ও তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল প্রাইভেটকারে করে ক্লাবের সামনে আসেন।
এসময় বিএনপি নেতাকর্মীরা শ্লোগান দিতে থাকে। বিকাল সোয়া ৪টার দিকে পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এসময় বিএনপির নেতাকর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। অপরদিকে পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল, রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।
সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপির ২০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এসএম শফিকুল আলম মনা বলেন, সমাবেশে আমাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। বক্তব্য দিতে দেয়নি। উল্টো আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
খুলনায় সমাবেশে ১৫ নেতাকর্মী পুলিশের গুলিতে আহত হওয়ার দাবি বিএনপির
খুলনায় পূর্বনির্ধারিত সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপির সঙ্গে সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে খুলনা যুবদলের সাধারণ সম্পাদকসহ অন্তত ১৫ নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে দাবি করেছে বিএনপি।
শুক্রবার বিকালে নগরীর খুলনা প্রেসক্লাবের সামনে দলের সমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হয়।
খুলনা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল ইসলাম তুহিন দাবি করেছেন পুলিশের হামলায় আরও ২০ জন আহত হয়েছেন।
তিনি দাবি করেন, ‘কোনও প্ররোচনা ছাড়াই পুলিশ তাদের উপর গুলি চালালে দলের অন্তত ১৫ জন গুলিবিদ্ধ আহত হয়।’
গুলিবিদ্ধদের মধ্যে রয়েছেন জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এবায়দুল হক রুবায়েদ, ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক আশিকুর রহমান অনি, সিটি কলেজের সদস্য সচিব আরিফ মোল্লা তুর্জো, সদর থানা সদস্য শাহিল, ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ কিমিয়া সাদাত, যুবদল নেতা জাহিদুর রহমান এবং দিঘলিয়া উপজেলার সেনহাটি ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা মুজিবুর রহমান প্রমুখ।
বিএনপি নেতাদের আহত হওয়ার ছবি থেকে বোঝা যায় পুলিশ রাবার বুলেট ব্যবহার করেছে, প্রাণঘাতী গোলাবারুদ নয়।
এছাড়া সমাবেশস্থল থেকে ১০ জনকে আটক করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, গুলিবিদ্ধ ও আহতদের নগরীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
কোনো উস্কানি ছাড়াই সমাবেশে পুলিশ তাদের ওপর গুলি চালায়, লাঠিচার্জ করে এবং টিয়ারশেল ব্যবহার করে বলে অভিযোগ করেন বিএনপিরি এই নেতা।
তুহিনের মতো একই সুরে খুলনা মহানগর বিএনপির সদস্য মিজানুর রহমান মিল্টন বলেন, কোনো উস্কানি ছাড়াই পুলিশ তাদের ওপর অতর্কিত হামলা করেছে।
তিনি বলেন, পুলিশের হামলার সময় প্রেসক্লাবের ভেতরে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা আজিজুল বারী হেলাল ও আনিদ্রা ইসলাম অমিতসহ ২৫ থেকে ৩০ জন দলীয় নেতাকর্মী আটকা পড়েছিলেন।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘বিএনপির লোকজন কোনো অজুহাত ছাড়াই আমাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে আমরা টিয়ারশেল ব্যবহার করতে বাধ্য হই।
আরও পড়ুন: খুলনায় বিএনপির সমাবেশে পুলিশের লাঠিচার্জ, টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ
তিনি জানান, ঘটনাস্থল থেকে বিএনপির ১০ জনকে আটক করা হয়েছে এবং এ ঘটনায় কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
তিনি বলেন, কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনা এড়াতে অতিরিক্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে, পরিস্থিতি এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
অভিযোগ অস্বীকার করে খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আল মামুন বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা অনুমতি ছাড়া সমাবেশ করার চেষ্টা করে তাদের ওপর হামলা চালায়।
বিএনপির সদস্যদের ওপর গুলি চালানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে এড়িয়ে যান।
বিএনপির অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, শুক্রবার বিকালে প্রেসক্লাবের সামনে সরকারের পদত্যাগ, ভুয়া মামলা বন্ধ, গণগ্রেপ্তার এবং সরকারের দুর্নীতির প্রতিবাদসহ ১০ দফা দাবিতে জনসভার নির্ধারিত সময় ছিল।
জেলা ও নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে দলীয় নেতাকর্মীরা দুপুর থেকেই সমাবেশস্থলে জড়ো হতে থাকেন। পুলিশ সমাবেশস্থলের দিকে অগ্রসর হওয়া মিছিলে বাধা দিলে সংঘর্ষ শুরু হয়।
আরও পড়ুন: 'আপনার সময় শেষ': সরকারের প্রতি ফখরুল
'আপনার সময় শেষ': সরকারের প্রতি ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যতই দেশ সফর করুন না কেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় শেষ।
শুক্রবার রাজধানীতে এক সমাবেশে বক্তব্যে তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান। কারণ, দেশের জনগণ এবং গণতান্ত্রিক বিশ্ব বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটি বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় নির্বাচন চায়।
বিএনপি নেতা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যতই চিৎকার করুক না কেন এই শাসনের সময় শেষ। আপনি (প্রধানমন্ত্রী) জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কাতার, সৌদি আরব এবং চীনে যান না কেন, আপনি কোন লাভ করতে পারবেন না। আপনার সময় শেষ এবং এটাই বাস্তবতা।’
জনগণকে 'দুঃশাসন' থেকে মুক্ত করতে এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি মেনে নিতে সময় ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান ফখরুল।
দলটির দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ তাদের ১০ দফা দাবি আদায়, এবং 'মিথ্যা মামলায়' দলীয় নেতাকর্মীদের হয়রানি ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে রাজধানীর শ্যামলী ক্লাব মাঠে ঢাকা উত্তর মহানগর বিএনপি এই সমাবেশের আয়োজন করে।
এছাড়াও বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের 'গায়েবি' মামলা দায়ের, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ঘন ঘন বিদ্যুত বিপর্যয় এবং সরকারের 'সর্বব্যাপী' দুর্নীতির বিরুদ্ধে দলের প্রতিবাদ জানাতে দেশের আরও ২৭টি মহানগর ও জেলায় সমাবেশ করেছে দলটি।
ফখরুল অভিযোগ করেন, সরকার বারবার ইউটিলিটি সার্ভিসের শুল্ক বাড়ালেও বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংকটে মানুষ দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, চাল, তেল, ডিম, লবণ, চিনি, পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম দুই থেকে তিনগুণ বেড়ে যাওয়ায় মানুষ বেঁচে থাকতে হিমশিম খাচ্ছে।
‘কিন্তু মন্ত্রীরা এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতারা যারা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বিলাসবহুল থাকেন তারা বলছেন সবকিছু ঠিক আছে এবং বাংলাদেশের মানুষ খুব ভালো অবস্থায় আছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা প্রায়ই লোকেদের উপহাস করে এই বলে যে তারা সিঙ্গাপুরের চেয়ে ভাল,’ বিএনপি নেতা বলেছিলেন।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দলের নেতারা তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় জনগণের স্পন্দন বুঝতে পারছেন না। ‘কোনও রাষ্ট্রীয় প্রোটোকল ছাড়াই মানুষের সামনে দাঁড়ান তাদের চোখ এবং শরীরের ভাষা বুঝতে।’
আরও পড়ুন: সরকারবিরোধী আন্দোলন: রাজধানীতে আবারো পদযাত্রা করল বিএনপি
বিএনপি নেতা বলেন, বর্তমান সরকারের ‘দুঃশাসনে’ মানুষ বিরক্ত হয়ে গেছে। ‘তারা বেঁচে থাকা কঠিন মনে করছে। ‘জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যারা ক্ষমতায় থাকে তারা মানুষকে সম্মান করতে পারে না। যারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিভিন্ন বাহিনীর ওপর নির্ভর করে ক্ষমতায় থাকে তারা পতন না হওয়া পর্যন্ত মানুষের মন শান্ত হতে পারে না।
তিনি অভিযোগ করেন, সরকার দেশের প্রতিটি সেক্টরকে ধ্বংস করে দিয়েছে। ‘তারা কুইক রেন্টালের মাধ্যমে বিদ্যুৎ খাত থেকে প্রতি বছর ৭৮ হাজার কোটি টাকা চুরি করে... শিক্ষা ব্যবস্থাকেও ধ্বংস করে দেয়। কলেজ, স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয় সহ কোথাও কোনো একাডেমিক পরিবেশ নেই। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দখল করে রেখেছে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা। তৃতীয় শ্রেণীর ডিগ্রিধারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হচ্ছেন।
বিএনপি নেতা আরও বলেন, সরকার ব্যাপক দুর্নীতি ও লুটপাটে লিপ্ত হয়ে স্বাস্থ্য খাতকেও ধ্বংস করেছে।তিনি বলেন, সরকার এখন বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা ও ভুতুড়ে’ মামলা দিয়ে ক্ষমতায় থাকার শেষ অবলম্বন হিসেবে ব্যবহার করছে।
ফখরুল বলেন, গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে তাদের দলের নেতাকর্মীরা দমন, কারাবরণ ও হত্যার শিকার হয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ১৭ ভাই বর্তমান আন্দোলনে তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। আজ (শুক্রবার) খুলনায় আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশ গুলি চালিয়েছে বলে আমরা শুনেছি। গুলি করে মানুষের এই আন্দোলন বন্ধ করা সম্ভব হবে না।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ইতোমধ্যে কবরে চলে গেছে এমন মন্তব্যের জন্য ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের নিন্দা করেন ফখরুল।
তিনি বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে, নিজেদের ভোট দিতে এবং সুষ্ঠু ফলাফল নিশ্চিত করতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন এদেশের জনগণ মেনে নেবে না।
আরও পড়ুন: আগামী ২৩ ও ২৮ মে ঢাকা ছাড়া সব মহানগরে পদযাত্রা করবে বিএনপি
বিএনপি নেতা আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। ‘আমরা ২০১৮ এবং ২০১৪ সালের নির্বাচন দেখেছি…..তাদের আর বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। আপনার (শেখ হাসিনা) অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নই আসতে পারে না।
তিনি বলেন, সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে এবং ৪০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ফখরুল। ‘তাহলে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা কোথায়? আপনি কি বাংলাদেশের সব মানুষকে বোকা মনে করেন? আর কতদিন মানুষকে ঠকাবেন? আপনি আর এটা করতে পারবেন না।’
বর্তমান সরকার দেশে ও বিদেশে সমর্থন হারিয়েছে বলে তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কোনো পক্ষপাতমূলক ভূমিকা পালন না করার আহ্বান জানান। ‘দেশের মানুষ এবং গণতান্ত্রিক বিশ্ব একটি সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায় এবং তারা জানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তা সম্ভব হবে না। তাই দয়া করে এমন পরিস্থিতি তৈরি করবেন না যেখানে আপনাকে (আইনশৃঙ্খলা বাহিনী) চিহ্নিত করা হবে (আপনার পক্ষপাতমূলক ভূমিকার জন্য)।
শনিবার ঢাকা দক্ষিণ মহানগরী, ২১টি সাংগঠনিক জেলা ও অন্যান্য মহানগরে সমাবেশ করবে বিএনপি।
আরও পড়ুন: খুলনায় বিএনপির সমাবেশে পুলিশের লাঠিচার্জ, টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ
খুলনায় বিএনপির সমাবেশে পুলিশের লাঠিচার্জ, টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ
খুলনা নগরীর প্রেসক্লাবে বিএনপির সমাবেশে লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে এ সময় বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারগ্যাস ছোড়া হয়।
শুক্রবার বিকাল ৪টায় এ ঘটনা ঘটে। এতে বিএনপির বেশকয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছে।