প্রধানমন্ত্রীর-কার্যালয়
বহিরাগত চাপে পদ্মা সেতু থেকে সরে গেছে বিশ্বব্যাংক: ভবিষ্যতের দিকে নজর দেওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থে নির্মিত আইকনিক পদ্মা সেতুর অর্থায়নে বিশ্বব্যাংক প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এক দশমিক দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ বাতিলের জন্য বহিরাগত চাপকে দায়ী করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি দুঃখিত যে বহিরাগত চাপের কারণে বিশ্বব্যাংক এরূপ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে (পদ্মা বহুমুখী সেতু) অর্থায়ন থেকে সরে এসেছে।
সোমবার বিশ্বব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের শিহাতা সম্মেলন কক্ষে বিশ্বব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক বোর্ডের সঙ্গে এক অনানুষ্ঠানিক মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা অবশ্য বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে অংশীদারিত্বের ভবিষ্যৎ দেখতে চান।
তিনি বলেন, ‘আমরা এখন আমাদের অংশীদারিত্বের ভবিষ্যত দেখতে চাই।’
বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে অংশীদারিত্বের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনে অংশ নিতে প্রধানমন্ত্রী এখন যুক্তরাষ্ট্রে সপ্তাহব্যাপী সরকারি সফরে ওয়াশিংটন ডিসিতে রয়েছেন।
২০১২ সালে ব্যাংকের প্রতিশ্রুত ঋণ বাতিল করা হলেও, হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ সেতুটি স্ব-অর্থায়নে এগিয়ে যায় এবং গত বছরের ২৫ জুন এটি উদ্বোধন করে।
প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংককে তার দারিদ্র্য বিমোচন ও উন্নয়ন অর্থায়নের মূল উদ্দেশ্যের প্রতি মনোযোগী থাকতে বলেন।
তিনি উল্লেখ করেন যে বিশ্বব্যাংক এখন বাংলাদেশে ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ৫৩টি বিভিন্ন প্রকল্পে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এটি ওয়াশিংটন-ভিত্তিক বহুপক্ষীয় ঋণদাতা দ্বারা এ পর্যন্ত দেওয়া ৩৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অনুদান এবং ঋণের অংশ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির সুযোগ এবং শোষণ ক্ষমতার ইঙ্গিত দেয়।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ তার ঋণ পরিশোধে কখনোই খেলাপি হয়নি, বা তথাকথিত 'ঋণের ফাঁদে' পড়েনি।’
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অবকাঠামো মেগা-প্রকল্পে আমাদের বিনিয়োগে’ মানুষের পুঁজি গঠনে বাংলাদেশের শক্তিশালী পারফরম্যান্স মিলেছে।
তিনি গর্ব করে বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সংস্থান দিয়ে ছয় দশমিক এক কিলোমিটার পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ আমাদের অর্থনৈতিক পরিপক্কতার লক্ষণ।’
শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপান্তরে সক্রিয়ভাবে নিয়োজিত রয়েছে কারণ সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার মাধ্যমে জনগণের কাছে তার কথা রেখেছে।
তিনি উল্লেখ করেন, সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে জ্ঞানভিত্তিক ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হওয়ার পরবর্তী লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।
তিনি বলেন,‘আমি বিশ্বব্যাংকের মতো আমাদের উন্নয়ন সহযোগীদের আমাদের ডিজিটাল এবং ভৌত অবকাঠামোতে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা বাণিজ্য বহুমুখীকরণ, বিনিয়োগ প্রচার এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ উৎপাদনের জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থন চাই।’
তিনি উল্লেখ করেন যে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১২ লাখ রোহিঙ্গাদের জন্য অনুদান সহায়তা বাড়িয়েছে যখন তাদের দীর্ঘায়িত উপস্থিতি দেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে।
তিনি বলেন,‘আমরা ভাসানচর দ্বীপে তাদের এক লাখের জন্য চমৎকার সুযোগ-সুবিধা তৈরি করেছি। মিয়ানমারে তাদের প্রত্যাবর্তন মুলতুবি থাকা, আমরা আশা করি বিশ্বব্যাংক তাদের মানবিক প্রয়োজনে সহায়তা অব্যাহত রাখবে।’
বিশ্ব যেন এই অসহায় মানুষদেরকে আর ভুলে না যায়, পুনর্ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ দেখিয়েছে যে তারা তার প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারে। ‘আমি নিশ্চিত যে আমাদের তরুণরা সঠিক রাজনৈতিক পরিবেশে আমাদের জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমরা জাতির সম্প্রদায়ের একজন দায়িত্বশীল এবং অবদানকারী সদস্য হিসাবে আমাদের ভূমিকা আরও প্রসারিত করতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বিদ্বেষ নয়’ এই বৈদেশিক নীতির ভিত্তিতে বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক কূটনীতি অব্যাহত রাখবে।
তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি যে আমাদের আন্তর্জাতিক অংশীদাররা আমাদের অগ্রযাত্রার ইতিবাচক দিকগুলোতে মনোনিবেশ করবে এবং সামনে একটি প্রতিশ্রুতিশীল উন্নয়ন যাত্রায় আমাদের সাথে যোগ দেবে।’
হাসিনা বিশ্বব্যাংককে ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে বলেছেন কারণ বিশ্ব এই বছর ভূ-অর্থনীতিতে কিছু বড় পরিবর্তন প্রত্যক্ষ করছে যার প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রূপান্তরিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের বৃহত্তম বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত বিশ্বের বৃহত্তম সক্রিয় ব-দ্বীপ। এটি ইন্দো-প্যাসিফিক নামে পরিচিত এর কেন্দ্রস্থলে একটি অবস্থান।
‘আমরা এখন ৪৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের জিডিপি সহ বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতি। দক্ষিণ এশিয়ায় আমরা দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি এবং একটি উদীয়মান বৃদ্ধির চালিকাশক্তি। আমরা তিনটি মানদণ্ডে যোগ্যতা অর্জন করে জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) মর্যাদা থেকে উন্নীত হয়েছি।’
তিনি উল্লেখ করেছেন যে ২০২২ সালে, প্রধান গণনা দারিদ্র্য ১৮ দশমিক সাত শতাংশে নেমে এসেছে, চরম দারিদ্র্যের তীব্র হ্রাস পাঁচ দশমিক ছয় শতাংশে নেমে এসেছে।
কোভিড-১৯ মহামারি, ইউরোপে যুদ্ধ এবং গভীরতর জলবায়ু সংকটের কারণে সৃষ্ট বহু-মাত্রিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও এই সব ঘটেছে।’
তিনি উল্লেখ করেন যে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো এর সহনশীলতা। ১৯৭১ সালে একটি গণহত্যার পরে স্বাধীনতা অর্জন করে এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত অর্থনীতি নিয়ে।
‘আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আমাদের জনগণের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। বিশ্বব্যাংকও সাড়া দিয়েছে এবং এইভাবে আমাদের অংশীদারিত্ব শুরু করেছে,’ তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি স্মরণ করেন যে উন্নয়ন যাত্রা মসৃণ থেকে অনেক দূরে ছিল। বাংলাদেশ বারবার সামরিক শাসকের দখল, চরমপন্থী হুমকি এবং মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হয়েছে। গত দেড় দশকে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে জাতি অবশেষে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে মধ্যস্থতা করতে পারে জাপান: প্রধানমন্ত্রী
ওয়াশিংটনে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিন দেশ জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফরের দ্বিতীয় ধাপে শুক্রবার ওয়াশিংটন ডিসি পৌঁছেছেন।
প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী ফ্লাইটটি ওয়াশিংটন সময় বিকাল ৩টা ৩৫ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় অনুসারে শুক্রবার দিবাগত রাত ১টা ৩৫ মিনিট) ওয়াশিংটনের ডুলেস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরান এবং বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক ড. আহমদ কায়কাউস বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান। এ সময় যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা এর আগে শুক্রবার বিকালে ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ২৫ এপ্রিল থেকে জাপানে তার চার দিনের সরকারি সফর শেষ করে টোকিও ত্যাগ করেন।
প্রধানমন্ত্রী ১ মে ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশের অংশীদারিত্বের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড আর ম্যালপাস তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
২৯ এপ্রিল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন তুলে ধরে আগামী ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে 'রিফ্লেকশন অন ৫০ ইয়ারস অব বাংলাদেশ-ওয়ার্ল্ড ব্যাংক পার্টনারশিপ' শীর্ষক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। সেমিনারে প্রধানমন্ত্রী ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বক্তৃতা করবেন।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের জন্য আরও সমর্থন বাড়ান: আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রা এবং বিগত পাঁচ দশকে দেশটিতে বিশ্বব্যাংকের কার্যক্রম তুলে ধরা হবে।
এছাড়া 'বাংলাদেশ-ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ৫০ ইয়ারস অব পার্টনারশিপ' শীর্ষক মাল্টিমিডিয়া প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। একই দিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের একান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের ঊর্ধ্বতন নির্বাহী কর্মকর্তারা আগামী ২ মে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একান্ত বৈঠক করবেন।
এরপর ইউএস চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুজান পি ক্লার্ক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
একই দিন তিনি ইউএস বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট নিশা বিসওয়ালের আমন্ত্রণে মার্কিন ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের নির্বাহী গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেবেন এবং মূল বক্তব্য পেশ করবেন।
সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী দ্য ইকোনমিস্টকে সাক্ষাৎকার দেবেন।
আরও পড়ুন: ওয়াশিংটনের উদ্দেশে টোকিও ছেড়েছেন প্রধানমন্ত্রী
পরে প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন।
তিনি বিশ্বব্যাংকের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
৪ মে প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাজ্যের উদ্দেশ্যে ওয়াশিংটন ডিসি ত্যাগ করার কথা রয়েছে।
যুক্তরাজ্যে প্রধানমন্ত্রী ৬ মে বাকিংহাম প্যালেসে আয়োজিত রাজা তৃতীয় চার্লসের রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
এর আগে ৫ মে সকালে তিনি বাকিংহাম প্যালেসে রাজা ও রানি কনসোর্টের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
একই দিনে কমনওয়েলথ মহাসচিবের আয়োজনে মার্লবরো হাউসে রাজার উপস্থিতিতে কমনওয়েলথ লিডারস ফোরাম অনুষ্ঠিত হবে। এসব অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন শেখ হাসিনা।
প্রায় ১৩০টি দেশের রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানরা (বেশিরভাগ কমনওয়েলথ দেশের সরকার প্রধানসহ) ৭০ বছর পর যুক্তরাজ্যে অনুষ্ঠেয় রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
সফরকালে প্রধানমন্ত্রী লন্ডনের একটি হোটেলে আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনায় যোগ দেবেন এবং প্রবাসী বাংলাদেশি ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন।
প্রধানমন্ত্রী ৯ মে দেশে ফিরবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে মধ্যস্থতা করতে পারে জাপান: প্রধানমন্ত্রী
ওয়াশিংটনের উদ্দেশে টোকিও ছেড়েছেন প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফরের দ্বিতীয় ধাপে শুক্রবার ওয়াশিংটনের উদ্দেশে টোকিও ত্যাগ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার জাপানে তার চার দিনের সরকারি সফর শেষ করেছেন। তিনি জাপানি প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার আমন্ত্রণে ২৫ এপ্রিল টোকিও এসেছিলেন।
আরও পড়ুন: আ. লীগ একাই গণতন্ত্র চর্চা করে ও বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন করে: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট শুক্রবার জাপান সময় বিকাল ৩টা ৫৫ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় ১২টা ৫৫ মিনিট) হানেদা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে যাত্রা করে।
ফ্লাইটটি ওয়াশিংটনের সময় বিকাল ৩টা ৫০ মিনিটে ওয়াশিংটনের ডুলেস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের কথা রয়েছে।
শেখ হাসিনা ১ মে ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশের অংশীদারিত্বের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড আর ম্যালপাস তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
২৯ এপ্রিল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন তুলে ধরে আগামী ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে 'রিফ্লেকশন অন ৫০ ইয়ারস অব বাংলাদেশ-ওয়ার্ল্ড ব্যাংক পার্টনারশিপ' শীর্ষক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।
সেমিনারে প্রধানমন্ত্রী ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বক্তৃতা করবেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রা এবং বিগত পাঁচ দশকে বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের কার্যক্রম তুলে ধরা হবে।
এছাড়া 'বাংলাদেশ-ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ৫০ ইয়ারস অব পার্টনারশিপ' শীর্ষক মাল্টিমিডিয়া প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে।
একই দিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের একান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
আগামী ৯ মে দেশে ফেরার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে মধ্যস্থতা করতে পারে জাপান: প্রধানমন্ত্রী
৪ দিনের জাপান সফর শেষে শুক্রবার ওয়াশিংটন যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে মধ্যস্থতা করতে পারে জাপান: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাপান মধ্যস্থতা করতে পারে এবং রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে সহায়তা করতে পারে।
জাপানের সর্ববৃহৎ ইংরেজি দৈনিক দ্য জাপান টাইমস-এ প্রকাশিত এক নিবন্ধে তিনি বলেন, ‘এখন তারা (রোহিঙ্গারা) বাংলাদেশ ও পুরো অঞ্চলের জন্য নিরাপত্তা হুমকি হয়ে উঠছে। জাপান মধ্যস্থতা করতে পারে এবং রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে সহায়তা করতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চার দিনের জাপান সফরকালে গত ২৫ এপ্রিল 'জাপান হোল্ডস আ স্পেশাল প্লেস ইন আওয়ার হার্টস' শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করে জাপান টাইমস।
শেখ হাসিনা বলেন, গণহত্যার মুখে থাকা রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গত ছয় বছরে বাংলাদেশ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের প্রায় ১১ লাখ নাগরিকের যত্ন নিতে দ্বিধাদ্বন্দ্বের সম্মুখীন হয়েছে।
আরও পড়ুন: ৪ দিনের জাপান সফর শেষে শুক্রবার ওয়াশিংটন যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
তিনি বলেন, ‘তাদের প্রাপ্য উপস্থিতি স্থানীয় সম্প্রদায়ের জীবন ও জীবিকাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে।’
তার সফর সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার দেশ, বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও জোরদার করতে আমি আবার টোকিওতে এসেছি, যখন আমাদের দেশগুলো কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫১তম বার্ষিকী উদযাপন করছে। আমি সম্রাট নারুহিতো ও সম্রাজ্ঞী মাসাকোর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই এবং আমন্ত্রণ জানানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদাকে ধন্যবাদ জানাই। আমি বাংলাদেশের মহান বন্ধু সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকেও শ্রদ্ধা জানাই।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাধীনতা অর্জনের দুই মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানকারী কয়েকটি দেশের মধ্যে জাপান অন্যতম। এমনকি ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ও জাপান প্রয়োজনীয় সমর্থন ও সহায়তা প্রদান করেছিল, যা আমরা কখনও ভুলিনি এবং কখনও ভুলব না।’
তিনি বলেন, সবচেয়ে অবিস্মরণীয় ছিল জাপানি স্কুল শিক্ষার্থীদের দাতব্য উদ্যোগ, যারা তাদের টিফিনের অর্থ সঞ্চয় করে ঘূর্ণিঝড় ও আমাদের দেশকে ধ্বংস করে দেওয়া যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তা করার জন্য দান করেছিল। তারপর থেকে জাপান আমাদের সময়ের পরীক্ষিত বন্ধু হয়ে আছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের সময়ের পরীক্ষিত বন্ধু জাপান: প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাপান আমার হৃদয়ের খুব কাছের একটি দেশ, ঠিক যেমন এটি আমার পরিবার ও আমাদের জনগণের জন্য। আমার বোন শেখ রেহানা ১৯৭৩ সালের অক্টোবরে আমাদের বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং আমাদের কনিষ্ঠ ভাই শেখ রাসেলের সঙ্গে জাপানে তাদের প্রথম সফরে গিয়েছিলেন। আমার বাবা জাপানের উন্নয়নে মুগ্ধ হয়েছিলেন এবং দেশটিকে একটি মডেল হিসেবে অনুসরণ করতে চেয়েছিলেন।’
তিনি বলেন, জাপানি পতাকার নকশায় বঙ্গবন্ধুও অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। উভয় পতাকাই আয়তক্ষেত্রাকার ও মাঝখানে লাল বৃত্ত, এর চারিদিকে বাংলাদেশের পতাকায় রয়েছে সবুজ ও জাপানের পতাকায় সাদা রঙ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাপান আমাদের বিশ্বস্ত উন্নয়ন অংশীদার। বাংলাদেশ এর উন্নয়নের জন্য অবিচল সমর্থন পেয়েছে এবং আমাদের স্বাধীনতার পর থেকে জাপানের কাছ থেকে সর্বাধিক সরকারি উন্নয়ন সহায়তা পেয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি ওডিএ ঋণ প্যাকেজে জাপান বাংলাদেশকে দুই দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার সফট লোন দিয়েছে, যা অন্য যে কোনো দেশের চেয়ে বেশি। আমাদের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ২০২১-২০২২ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো চার বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে।
আরও পড়ুন: জাপানের ‘মিরাইকান’ জাদুঘর পরিদর্শন করলেন প্রধানমন্ত্রী
আ. লীগ একাই গণতন্ত্র চর্চা করে ও বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন করে: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের চর্চা হয় শুধুমাত্র তার দল আওয়ামী লীগে, যার অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ইতিহাস রয়েছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার চর্চা করে এবং আওয়ামী লীগের শাসনামলে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক চর্চা বিরাজ করে।
জাপানে চার দিনের সরকারি সফরে বৃহস্পতিবার ওয়েস্টিন হোটেলে এক নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীএসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে সব নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ শান্তিপূর্ণভাবে দুই মেয়াদ শেষ করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন।
তিনি বলেন, ‘এটি দেশের ইতিহাসে প্রথমবার যেখানে বিদায়ী রাষ্ট্রপতি এবং নতুন রাষ্ট্রপতি শান্তিপূর্ণভাবে সমস্ত সম্পর্কিত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেন। এটি একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া।’
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, সাবেক সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান তার সামরিক শাসনামলে নির্বাচন প্রক্রিয়া ধ্বংস করেছিলেন। আরেক সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদ ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এই প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছিলেন।
তিনি উল্লেখ করেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর বাংলাদেশে ৫০ বছরের মধ্যে ২৯ বছরে কোনো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছিল না।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের সময়ের পরীক্ষিত বন্ধু জাপান: প্রধানমন্ত্রী
তিনি বলেন, ‘সেদিন কোনো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ছিল না এবং কোনো গণতান্ত্রিক আইনের শাসন ছিল না।’
যারা দেশে গণতন্ত্র ও উন্নয়ন দেখতে পান না তাদের নিন্দা করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, বিরোধী দল বিএনপির ইতিহাস এতটাই কলঙ্কিত যে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো মুখ নেই।
তিনি বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট মাত্র ৩০টি আসন পায় এবং আওয়ামী নেতৃত্বাধীন মহাজোট বাকি সব আসন পায়।
তিনি বলেন, এ কারণে তারা (বিএনপি-জামায়াত) ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ নেয়নি।
২০১৩-১৫ সালে বিএনপি-জামায়াত জোটের অগ্নিসংযোগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা অন্তত ৫০০ মানুষকে হত্যা করেছে এবং অনেক সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা ধ্বংস করেছে।
‘এখন তারা কীভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে এবং জনগণের কাছে ভোট চাইবে?’ তিনি প্রশ্ন তোলেন।
দেশকে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত রাখতে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে বিনিয়োগ ব্যাপক সাফল্য বয়ে আনবে: জাপানি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশের সময়ের পরীক্ষিত বন্ধু জাপান: প্রধানমন্ত্রী
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়তে জাপান সবসময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে এবং একে সুযোগের দেশে পরিণত করবে বলে দৃঢ় বিশ্বাস ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আমরা আত্মবিশ্বাসী যে জাপান অতীতের মতো আমাদের পাশে থাকবে। আমি এও আত্মবিশ্বাসী যে জাপানের জনগণ অতীতে আমাদের প্রয়োজনে তাদের সরকারের পাশাপাশি সবসময় আমাদের পাশে থাকবে।’
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মহান অবদানের জন্য টোকিওর আকাসাকা প্যালেস গেস্ট হাউসে চার জাপানি নাগরিককে ‘ফ্রেন্ডস অব লিবারেশন ওয়ার অনার’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
তিনি আশা প্রকাশ করেন যে বিগত পঞ্চাশ বছরের দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব এবং ঈর্ষণীয় অংশীদারিত্ব আগামী বছরগুলোতে নতুন প্রজন্ম এগিয়ে নিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের বন্ধুদের কখনই ভুলি না।’
শেখ হাসিনা দেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিতে জাপানের টেকসই অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও সমর্থনের কথা স্বীকার করেন যা এলডিসি মর্যাদায় উন্নীত হয়ে একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হতে সহায়তা করেছে।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সত্যিকারের সোনার বাংলা (সোনার বাংলা) স্বপ্নে এবং বাংলাদেশকে সুযোগের দেশে পরিণত করতে আমরা নিজেদেরকে উৎসর্গ করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে জাপানের জনগণ বাংলাদেশের দুঃখী মানবতার পাশে দাঁড়িয়েছিল।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে ভালো ব্যবসার জন্য ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করা হবে: জাপানি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী
তিনি উল্লেখ করেন যে বাংলাদেশের ৮ জন সম্মানিত ব্যক্তির একটি পরিমিত তালিকা ছিল যাদেরকে ২০১২ সালের ২৭ মার্চ এবং ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর 'ফ্রেন্ড অব লিবারেশন ওয়ার অনার' দিয়ে সম্মানিত করেছে।
তিনি বলেন, ‘আজ সন্ধ্যায় আমরা টোকিওতে রয়েছি বাংলাদেশের আরও চারজন মহান বন্ধুকে সম্মান জানাতে, যারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, নৈতিক ও বৈষয়িক সহায়তার আয়োজন করেছেন এবং সহায়তা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে জাপানের জনগণের সমর্থনের কথা স্মরণ করেন, যা পুনরায় নিশ্চিত করেছে যে কারণটি সঠিক ছিল এবং এটি নষ্ট করা যাবে না।
‘আপনারা আমাদের ন্যায়বিচার, সম্মান, মর্যাদা এবং মানবাধিকারের আকাঙ্ক্ষা শুনেছেন। আপনাদের কণ্ঠস্বর আমাদের কণ্ঠে শক্তি যোগ করেছে এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে বড় হয়েছে। আপনারা আমাদের উদ্দেশ্য নিয়ে সমাবেশ করেছেন এবং একসঙ্গে একটি নির্মম শক্তির বিরুদ্ধে একটি মানব দুর্গ গড়ে তুলেছেন। উদীয়মান সূর্যের দেশে, আমরা মর্যাদা ও মানবতার সঙ্গে একটি জাতির প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই।
তিনি উল্লেখ করেন যে জাপানের জনগণ নৃশংসতার প্রতিবাদে উঠে এসেছে এবং বাংলাদেশের অসহায় মানুষের জন্য মানবিক ত্রাণ, চিকিৎসা সুবিধা পাঠিয়েছে।
‘এটি ছিল দুঃখের সময় যা নিছক কথায় প্রকাশ করা যায় না। আমাদের দেশ দখলদার বাহিনীর হাতে ধ্বংস হয়ে গেছে।’
সেই সংকটময় মুহূর্তের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাপানি বন্ধুরা আমাদের দুর্দশা বুঝতে পেরে মানবতার স্বার্থে এগিয়ে গেছে। তারা বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিল, কিন্তু পিছিয়ে যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘তাদের নিঃস্বার্থ আচরণ হুমকির মুখে আমাদের আত্মাকে পুনরুজ্জীবিত করেছে। সবচেয়ে অবিস্মরণীয় ছিল জাপানি স্কুলের শিশুদের দাতব্য কার্যক্রম যারা
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে বিনিয়োগ ব্যাপক সাফল্য বয়ে আনবে: জাপানি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী
আমাদের লোকেদের সাহায্য করার জন্য তাদের টিফিনের অর্থ সঞ্চয় এবং দান করেছিল।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পারস্পরিক আস্থা, শ্রদ্ধা, বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার ওপর প্রতিষ্ঠিত।
তিনি আরও বলেন, ১৯৭৩ সালের অক্টোবরে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক জাপান সফর একটি অটল ও দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্বের ভিত্তি স্থাপন করেছিল।
‘আমি আমার বাবার উত্তরাধিকারী হিসাবে আমাদের সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করতে ১৯৯৭, ২০১০, ২০১৪, ২০১৬ এবং ২০১৯ সালে জাপান সফর করা আমার জন্য সম্মানের। আমি আজ খুশি যে আমার মেয়াদে, আমাদের সময়-পরীক্ষিত বন্ধুত্ব একটি ‘ব্যাপক অংশীদারিত্ব’ থেকে ‘কৌশলগত অংশীদারিত্ব’-এ গভীরতা এবং মাত্রায় বিকশিত হয়েছে।
তিনি বলেন, সমতা, গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক চর্চা, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন, সামাজিক ন্যায়বিচার ও আইনের শাসনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও জাপান একই মহৎ ধারণা ও নীতির।
উপস্থিত ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা।
আরও পড়ুন: জাপানের ‘মিরাইকান’ জাদুঘর পরিদর্শন করলেন প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশে বিনিয়োগ ব্যাপক সাফল্য বয়ে আনবে: জাপানি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার জাপানের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অর্জনের অংশীদার হওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, কারণ এটি একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
হোটেল ওয়েস্টিনে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট উদ্বোধনকালে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা চাই আপনারা সবাই আমাদের উন্নয়ন ও অর্জনের অংশীদার হোন।’
তিনি সবাইকে বাংলাদেশে এসে ব্যবসা ও বিনিয়োগের সম্ভাবনা অনুসন্ধানের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে বিনিয়োগ করুন। আমরা আত্মবিশ্বাসী যে আপনাদের বিনিয়োগ আপনাদেরকে বড় ধরনের সাফল্য এনে দেবে।’
জাপানের অর্থনীতি, বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী নিশিমুরা ইয়াসুতোশি, জাপান এক্সটারনাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেট্রো) চেয়ারম্যান ইশিগুরো নোরিহিকো এবং জাপান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (জেসিসিআই) চেয়ারম্যান কেন কোবাইয়াশি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) যৌথভাবে 'বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ' (ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট অপরচুনিটিজ বিট্যুইন বাংলাদেশ অ্যান্ড জাপান) শীর্ষক সম্মেলনের আয়োজন করে।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ও জাপানের কোম্পানিগুলোর মধ্যে সহযোগিতা দেখে আনন্দ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা জাপানি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে বিশেষত আড়াইহাজারে জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চলে আরও বিনিয়োগ আশা করছি।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে ভালো ব্যবসার জন্য ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করা হবে: জাপানি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী
তিনি বলেন, ‘জাপানে বসবাসরত প্রবাসী (অনাবাসী) বাংলাদেশি (এনআরবি) এবং বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মানুষের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তারা তাদের রেমিটেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে উল্লেখযোগ্য সহায়তা প্রদান করছে। আমি তাদের আরও উদ্যোক্তা বিকাশ, ব্যবসায়িক উদ্যোগ এবং তাদের জাপানি বন্ধুদের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে জড়িত হওয়ার আহ্বান জানাই।’
শেখ হাসিনা বলেন, যেহেতু বাংলাদেশ ২০২৬ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, তাই দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি করতে জাপানের সঙ্গে কাজ করছে।
অর্থনীতিতে আইসিটি, ইলেকট্রনিক্স, অবকাঠামো, চামড়া, টেক্সটাইল, আতিথেয়তা ও পর্যটন, ভারী শিল্প, রাসায়নিক ও সার এবং এসএমইর মতো বিভিন্ন খাতে সুযোগ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সরকার ব্যবসা করার মসৃণ, সহজ ও দক্ষ উপায়গুলো সহজতর করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। বিদেশি বিনিয়োগের জন্য আমরা ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল, হাই-টেক এবং সফটওয়্যার পার্ক নির্মাণ করছি।’
তিনি জাপানি বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করে বলেন, বাংলাদেশ তাদের জন্য প্রস্তুত এবং সেখানে গেলে তাদের দারুণ অভিজ্ঞতা হবে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্ক কৌশলগত অংশীদারিত্বে উন্নীত হয়েছে: জাপানের প্রধানমন্ত্রী
তিনি বলেন, ‘আপনাদের ব্যবসার সুবিধার্থে সমস্ত প্রয়োজনীয় এজেন্সি এবং কাঠামো স্থাপন করা হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন মেয়াদে আমি সরকারের রূপকল্প ২০২১ ও রূপকল্প ২০৪১ অনুযায়ী জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন সাধন করে যাচ্ছেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন, ডিজিটালাইজেশন, খাদ্য উৎপাদন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল এবং দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। স্থিতিস্থাপক জনগণ এখন ২০২৬ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার আশা ও আশাবাদ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে আধুনিক, উন্নত ও জ্ঞানভিত্তিক 'স্মার্ট বাংলাদেশ'-এর পথে আমরা বদ্ধপরিকর।’
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ১৭ কোটি মানুষের দেশ, যা নিজেই একটি ক্রমবর্ধমান বাজার। প্রায় তিন বিলিয়ন ভোক্তাদের বৃহত্তর বাজারের কেন্দ্রে এর অবস্থান, যা ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য একটি বিশাল আকর্ষণ সরবরাহ করে।
আরও পড়ুন: আঞ্চলিক শান্তি, স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে শেখ হাসিনা ও কিশিদার আলোচনা
জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে দুই সপ্তাহের সরকারি সফরের প্রথম ধাপে টোকিওর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে দুই সপ্তাহের সরকারি সফরের প্রথম ধাপে মঙ্গলবার সকালে টোকিওর উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছেন।
শেখ হাসিনা জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার আমন্ত্রণে ২৫ থেকে ২৮ এপ্রিল জাপান সফর করবেন।
প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি চার্টার্ড ফ্লাইট সকাল ৭টা ৫৬ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে।
টোকিওর হানেদা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিকাল ৫টায় (জাপান সময়) এই ফ্লাইট অবতরণের কথা রয়েছে।
জাপানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তাকেই শুনসুকে বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাবেন। বিমানবন্দরে তাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, তার সফরকালে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে ক্রয় ছাড়াই প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ আটটি সমঝোতা স্মারক (এমওসি) বা চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারে।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর টোকিও সফর: প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ ৮টি চুক্তি সইয়ের সম্ভাবনা
আগামী ২৬ এপ্রিল দুই প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা ও ফুমিও কিশিদা) বন্ধুত্বপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বৈঠকে এসব সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে।
জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দুই দেশের সরকার প্রধানদের মধ্যে আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে দুই নেতার উপস্থিতিতে কৃষি, মেট্রোরেল, শিল্প উন্নয়ন, জাহাজ পুনর্ব্যবহার, কাস্টমস বিষয়, মেধাস্বত্ব, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, আইসিটি ও সাইবার নিরাপত্তা সহযোগিতা ইত্যাদি খাতে দু'দেশের মধ্যে আটটি সমঝোতা স্মারক বা চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারে।
শেখ হাসিনা ২৬ এপ্রিল জাপানের সম্রাট নারুহিতোর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন এবং সেখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হবে।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফর: ঢাকা ও টোকিওর মধ্যে ৮-১০টি চুক্তি, সমঝোতা স্মারক সইয়ের সম্ভাবনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মানে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে আয়োজিত নৈশভোজের মধ্য দিয়ে বৈঠকের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে।
এটি হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ষষ্ঠ জাপান সফর। এর আগে প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৭, ২০১০, ২০১৪, ২০১৬ ও ২০১৯ সালে জাপান সফর করেন।
সফরকালে প্রধানমন্ত্রী একটি বিনিয়োগ সম্মেলন ও একটি কমিউনিটি সংবর্ধনা এবং কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে যোগ দেবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তিনি কয়েকজন জাপানি নাগরিকের হাতে 'ফ্রেন্ডস অব লিবারেশন ওয়ার অনার' তুলে দেবেন।
আরও পড়ুন: সজাগ থাকুন, যাতে যুদ্ধাপরাধী, গ্রেনেড হামলাকারী, দুর্নীতিবাজরা আবার ক্ষমতায় আসতে না পারে: প্রধানমন্ত্রী
১৯৭৭ সালের গণহত্যার অপরাধী ও বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসীদের শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা ১৯৭৭ সালে অবৈধ কোর্ট মার্শালের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর শতাধিক সদস্য হত্যার সঙ্গে জড়িত, তারা তাদের অপরাধের শাস্তি পাচ্ছে।
তিনি বলেন, ২০১৩-১৫ সালে বিএনপি ও জামায়াতের আন্দোলনের নামে অগ্নিসংযোগ ও অগ্নিসন্ত্রাসের অপরাধীদেরও শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।
মঙ্গলবার তিনি তার সরকারি বাসভবন গণভবনে এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘যারা অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত তারা শাস্তি পেয়েছে, শাস্তি পাচ্ছে এবং শাস্তি পাবে।’
এসময় তৎকালীন সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ১৯৭৭ সালে অবৈধ কোর্ট মার্শালের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সদস্যদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়াত জোটের অগ্নিসংযোগের সন্ত্রাসের শিকার এবং স্বজনরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি এবং তার ছোট বোন নিহতদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি সহানুভূতিশীল, কারণ তিনি এবং তার ছোট বোন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এক দিনে বাবা, মা, ভাই, ভাবি এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের হারিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ ও এর জনগণের জন্য আজীবন কষ্ট সহ্য করেছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আমার একমাত্র লক্ষ্য এই দেশের মানুষ যাতে ভাল থাকে তা নিশ্চিত করা।’
আরও পড়ুন: সামরিক শাসন নয়, রাজনৈতিক নেতৃত্ব বাংলাদেশের সমৃদ্ধির চাবিকাঠি: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, দেশ যখন অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তখন মার্কেটে অগ্নিসংযোগ ও অগ্নিসন্ত্রাসের ঘটনায় নিরীহ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়ছে।
তিনি বলেন, ‘যারা এটা করছে তারা পুরো জাতির সঙ্গে বৈরিতা করছে। আমি মনে করি আল্লাহও এটা সহ্য করবেন না।’
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াতের কার্যক্রম পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর মতোই বর্বর ছিল।
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান হাসতে হাসতে মৃত্যুদণ্ডের রায় লিখতেন।
তিনি আরও বলেন, এরপর জিয়ার স্ত্রী এবং তারপর তাদের ছেলেরা অগ্নিসংযোগের আশ্রয় নেয়, কারণ তারা দেশ ও জনগণের কোনো মঙ্গল চায় না।
নিহতদের পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের কষ্ট তিনি বুঝতে পারেন বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি সবসময় আপনার পাশে আছি, আমি আপনাদের কষ্ট বুঝতে পারি।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ভুক্তভোগী সার্জেন্ট দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী নুরুন্নাহার বেগম ও সার্জেন্ট মোরশেদুল আলমের মেয়ে মাকসুদা পারভিন।
স্বজনরা বক্তব্য দেওয়ার সময় হৃদয় বিদারক পরিস্থিতি বিরাজ করে।
অনুষ্ঠানে অগ্নিসংযোগের শিকার উপ-পরিদর্শক মকবুল হোসেন ও মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ভূঁইয়া তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
এই বিষয়ে দুটি পৃথক তথ্যচিত্রও প্রদর্শন করা হয় অনুষ্ঠানে।
প্রধানমন্ত্রী ভুক্তভোগী ও নিহতের স্বজনদের ঈদ উপহার দেন।
আরও পড়ুন: অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে সরকার বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের যথাসম্ভব সহায়তা করবে: প্রধানমন্ত্রী
সারাদেশে আরও ৫০ মডেল মসজিদের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
চতুর্থ ধাপে সারাদেশে আরও ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসবের উদ্বোধন করেন।
তিনি এ পর্যন্ত সারা দেশে ৯ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৫৬৪টি নতুন মসজিদের মধ্যে ২০০টি উদ্বোধন করেছেন।
অবশিষ্ট মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
এর আগে, তিনি ২০২১ সালের ১০ জুন প্রথম ধাপে ৫০টি, চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপে ৫০টি এবং ১৬ মার্চ তৃতীয় ধাপে ৫০টি মসজিদ উদ্বোধন করেন।
মডেল মসজিদ এবং ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের মধ্যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাসহ ওযু ও নামাজের জন্য আলাদা জায়গা রয়েছে।
এছাড়া হজযাত্রীদের নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, গবেষণা কেন্দ্র ও ইসলামিক লাইব্রেরি, অটিজম কর্নার, দাফনের আগে জানাযার ব্যবস্থা, গাড়ি পার্কিং সুবিধা, হিফজাখানা, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ও কোরআন শিক্ষার ব্যবস্থা, ইসলামিক কনফারেন্স রুম থাকবে। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড এবং ইসলামী দাওয়াত, ইসলামী বই বিক্রয় কেন্দ্র, মসজিদের সঙ্গে দেশি-বিদেশি অতিথিদের জন্য বোর্ডিং সুবিধাও রয়েছে।
ইসলামের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে প্রধানমন্ত্রী সারাদেশে ৫৬৪টি মডেল মসজিদ নির্মাণের ধারণা নিয়ে এসেছেন।
আরও পড়ুন: দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো ইসলামী ভ্রাতৃত্ব এবং এর মূল্যবোধকে প্রচার করা এবং সেইসঙ্গে চরমপন্থা ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ইসলামের সারমর্ম প্রচার করা কারণ ধর্ম কখনই এগুলোকে সমর্থন করে না।
এটি সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রচারের পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদ ও নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টিতেও মনোনিবেশ করবে।
‘এ’ ক্যাটাগরির অধীনে ৬৪টি জেলা ও সিটি কর্পোরেশন এলাকায় লিফট সুবিধা এবং দুই হাজার ৩৬০ দশমিক ০৯ বর্গ মিটার প্রতিটি মেঝেসহ প্রায় ৬৯টি চারতলা মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে।
‘বি’ ক্যাটাগরির অধীনে, প্রতিটি এক হাজার ৬৮০ দশমিক ১৪ বর্গ মিটার ফ্লোর স্পেস দিয়ে ৪৭৫টি মসজিদ তৈরি করা হচ্ছে এবং উপকূলীয় অঞ্চলে সি ক্যাটাগরির অধীনে দুই হাজার ৫২ দশমিক ১২ বর্গমিটার মেঝের ১৬টি মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে।
গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া উপজেলা ও সিলেট জেলার বিশ্বনাথ উপজেলা থেকেও এ কর্মসূচিতে স্থানীয় সংসদ সদস্য, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতারা, সরকারি কর্মকর্তা, আলেম-উলামাসহ সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ওপর একটি ভিডিও-ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী এনামুল হাসান।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া।
আরও পড়ুন: ইসলামের মর্মবাণী প্রচারে আরও ৫০ মডেল মসজিদ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী