প্রধানমন্ত্রীর-কার্যালয়
আশা করি তিস্তা চুক্তিসহ সব অমীমাংসিত সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে: প্রধানমন্ত্রী
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে ভারত সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ, ভারত ও এই অঞ্চলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি টেকসই এবং শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টার ওপর জোর দিয়েছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত অংশীদার হিসেবে একসঙ্গে কাজ করতে পারলে এটি শুধু দুই দেশের জন্যই নয়, এ অঞ্চলে শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করবে।
দিল্লির হায়দ্রাবাদ হাউজে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পর এক প্রেস বিবৃতিতে তিনি বলেন, ৫৪টি নদীর দ্বারা সংযুক্ত এবং চার হাজার কিলোমিটার সীমান্ত ভাগ করে নেয়া, বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশের সম্মিলিত সমৃদ্ধি সাধনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক প্রতিবেশি কূটনীতির রোল মডেল হিসেবে প্রশংসিত।
তিনি বলেন, গত এক দশকে উভয় দেশই বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুই দেশ বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার চেতনায় অনেক অসামান্য সমস্যার সমাধান করেছে।
আরও পড়ুন: ভারত প্রয়োজনে সব সময় বাংলাদেশকে সাহায্য করে: প্রধানমন্ত্রী
তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষর সহ সকল অমীমাংসিত সমস্যা দ্রুত সমাধান হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, গত ৫০ বছরে একটি শক্তিশালী অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার পর বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারত পারস্পরিক স্বার্থে ক্রমবর্ধমান বৃহৎ পরিসরে কাজ করছে।
তিনি ভারতের স্বাধীনতার ৭৫তম বছর উপলক্ষে বছরব্যাপী উদযাপন ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’-এর সফল সমাপ্তির জন্য ভারতকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী তাদের এই দ্বিপক্ষীয় বৈঠককে আরেকটি ফলপ্রসূ আলোচনা হিসেবে অভিহিত করেন এবং আশা প্রকাশ করেন যে এই বৈঠকের ফলাফল উভয় দেশের জনগণের জন্য সুফল বয়ে আনবে।
শেখ হাসিনা বলেন, পারস্পরিক যোগাযোগ, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা ও ঋণ সহ কয়েকটি বিষয়ে তারা আলোচনা করেছেন।
তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত সরকার ও জনগণের অমূল্য সমর্থনের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এরপর থেকে, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক পারস্পরিক ইতিহাস ও সংস্কৃতি, পারস্পরিক আস্থা ও সম্মান, দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব এবং অব্যাহত সহযোগিতার পথে যাত্রা অব্যাহত রেখেছে।’
এসময় শেখ হাসিনা নরেন্দ্র মোদির দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রশংসা করেন, যা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও গতিশীল করে চলেছে।
তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন যে ভারত বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও নিকটতম প্রতিবেশি।
আরও পড়ুন: ঢাকা-দিল্লি ৭ সমঝোতা স্মারক সই
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করের সাক্ষাৎ
৪ দিনের সফরে ভারতের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা ত্যাগ
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে সোমবার সকালে নয়াদিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ইউক্রেন সংকট, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা এবং চলমান কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে এই সফরকে খুব গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। কেননা দক্ষিণ এশিয়ার এই দুই প্রতিবেশী দেশ চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে ওঠার জন্য বর্ধিত সহযোগিতা বাড়াতে চায়।
প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি চার্টার্ড ফ্লাইট সকাল ১০টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে।
বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টায় ফ্লাইটটি নয়াদিল্লির পালাম বিমানবন্দরে অবতরণের কথা রয়েছে। বিমানবন্দরে ভারতের রেল ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী দর্শনা বিক্রম জারদোশ এবং ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুহাম্মদ ইমরান প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাবেন।
৬ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভ্যর্থনা জানানো হবে এবং রাষ্ট্রপতি ভবনে তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হবে।
একই দিন হায়দরাবাদ হাউসে মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা এবং ওয়ান টু ওয়ান বৈঠক করার কথা রয়েছে।
হায়দরাবাদ হাউসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যকার আলোচনায় নিরাপত্তা সহযোগিতা, বিনিয়োগ, ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য সম্পর্ক, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সহযোগিতা, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, মাদক চোরাচালান ও মানব পাচার রোধ সংক্রান্ত বিষয়গুলো অগ্রাধিকার পাবে।
দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পানি ব্যবস্থাপনা, রেলপথ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ও তথ্য ও সম্প্রচার বিষয়ে সাতটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে।
পরে সেখানে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া মধ্যাহ্নভোজে শেখ হাসিনা যোগ দেয়ার কথা রয়েছে।
একই দিনে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ার সঙ্গে সঙ্গে পৃথকভাবে সাক্ষাৎ করবেন শেখ হাসিনা।
এছাড়াও ৫ সেপ্টেম্বর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানি পৃথকভাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করবেন। ৭ সেপ্টেম্বর ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের উন্নয়নমন্ত্রী জি কিষান রেড্ডি এবং নোবেল বিজয়ী কৈলাশ সত্যার্থী তার সাথে পৃথকভাবে বৈঠক করবেন।
প্রধানমন্ত্রী সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) দিল্লির নিজামুদ্দিন আউলিয়া দরগাহ, খাজা গরীব নওয়াজ দরগাহ শরীফ এবং ৮ সেপ্টেম্বর রাজস্থানের আজমির (আজমির শরীফ দরগা) পরিদর্শন করবেন।
আগামী ৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে হাসিনা বাংলাদেশ-ভারত বিজনেস ফোরামে যোগ দেবেন।
পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর: দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা নিয়ে বেশ কিছু চুক্তির সম্ভাবনা
একই দিনে প্রধানমন্ত্রী ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ ও গুরুতর আহত ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর ২০০ জন সদস্যের বংশধরদের বাংলাদেশ সরকারের একটি উদ্যোগ মুজিব বৃত্তি প্রদান করবেন।
এর আগে কোভিড-১৯ মহামারি শুরু হওয়ার আগে ২০১৯ সালে ভারত সফর করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
সফরে প্রধানমন্ত্রী একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন, যেখানে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, উপদেষ্টা, সচিব এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রয়েছেন।
প্রতিনিধি দলের সদস্যদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, রেলমন্ত্রী মোঃ নুরুল ইসলাম সুজন, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোঃ শাহরিয়ার আলম, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এবং পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহেদ ফারুক রয়েছেন।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর: ঢাকা-দিল্লির ৭টি চুক্তি, সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের সম্ভাবনা
‘আলোচনার মাধ্যমে মতপার্থক্য দূর করা যায়, বাংলাদেশ-ভারত সেটাই করছে’: এএনআইকে প্রধানমন্ত্রী
রাজনীতিতে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত জয় ও দেশের জনগণের ওপর নির্ভর করছে: প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় তার সরকারের অনেক ডিজিটাল উদ্যোগের পিছনে মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে ছিলেন, তবে রাজনীতিতে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত তার (জয়ের) এবং দেশের জনগণের ওপর ছেড়ে দেয়া উচিত।
ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআই-এর সঙ্গে একটি সাক্ষাত্কারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ছেলে সম্পর্কে এসব কথা বলেন। বর্তমানে জয় প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেখুন... সে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ। এটা তার ব্যাপার, তবে সে দেশের জন্য কাজ করছে… আমরা যে ডিজিটাল বাংলাদেশ (উদ্যোগ) বাস্তবায়ন করেছি, এসব স্যাটেলাইট বা সাবমেরিন ক্যাবল বা কম্পিউটার প্রশিক্ষণ-এই সবই তার আইডিয়া এবং সে আমাকে সহায়তা করছে…কিন্তু দলে বা মন্ত্রিসভায় কখনই সে কোনো পদ নেয়ার কথা ভাবেনি।’
শেখ হাসিনা বলেন, দলীয় একটি অনুষ্ঠানে জয়ের পদ নেয়ার জন্য নেতাকর্মীদের কাছ থেকে জোরালো দাবি ছিল।
তিনি বলেন, ‘এমনকি আমাদের দলীয় সম্মেলনেও তাকে একটি পদ দেয়ার জোরালো দাবি উঠেছিল। তখন আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কি চাও মাইক্রোফোনে তা বলো, এবং সে তা করেছে।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ একটি আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলছে: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, সেসময় জয় বলল, ‘আমি এই মুহূর্তে দলে কোনো পদ চাই না। বরং যারা এখানে কাজ করছেন, তারা যেন এই পদটি পান। আমি কেন একটি পদ দখল করে থাকবো? আমি আমার মায়ের সঙ্গে আছি, আমি দেশের জন্য কাজ করছি এবং আমি তাকে সহায়তা করছি... আমি এটি করে যাব।’
সাক্ষাৎকারে তিনি তার জাতির পররাষ্ট্রনীতি গঠনে তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকার কথাও স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’- যা আমার পিতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘে তার ভাষণে বলেছিলেন। এবং আমরা তার আদর্শ অনুসরণ করি। আমার বক্তব্য হল আমাদের জনগণের ওপর ফোকাস করা উচিত... কিভাবে তাদের একটি ভালো জীবন দেয়া যায়... আমাদের একটি শত্রু আছে। সেটা হলো দারিদ্র্য। সুতরাং, আসুন আমরা একসঙ্গে কাজ করি।’
হাসিনা বলেন, তিনি সবসময় মনে করেন নেতৃস্থানীয় দেশগুলোর উচিত আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ ও মতভেদ দূর করা। ‘...চীন ও ভারতের মধ্যে যদি কোনো সমস্যা হয়, আমি তাতে নাক গলাতে চাই না। আমি আমার দেশের উন্নয়ন চাই এবং ভারত যেহেতু আমাদের পাশের প্রতিবেশি, তাই আমাদের সম্পর্ক খুব ভালো। আমাদের অনেক দ্বিপক্ষীয় সমস্যা ছিল, এটা সত্য, কিন্তু আমরা অনেক সমস্যার সমাধানও করেছি।’
ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনাল (এএনআই) এর সঙ্গে তার সাক্ষাত্কারের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, বাংলাদেশের জন্য অগ্রাধিকার ছিল উন্নয়ন এবং তার জনগণের জন্য উন্নতি করতে পারে এমন যে কোনও দেশের সাহায্য নিতে তারা ইচ্ছুক।
আরও পড়ুন: ‘শুধু বাংলাদেশে নয়, ভারতেও সংখ্যালঘুরা অনেক সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে’
‘আলোচনার মাধ্যমে মতপার্থক্য দূর করা যায়, বাংলাদেশ-ভারত সেটাই করছে’: এএনআইকে প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশ একটি আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলছে: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার বলেছেন, তার সরকার দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলছে।
খুলনা ও বরিশাল বিভাগের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ স্থাপনকারী পিরোজপুরের বেকুটিয়ায় কঁচা নদীর ওপর এক হাজার ৪৯৩ মিটার দীর্ঘ ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু’ উদ্বোধনকালে তিনি বলেন, ‘আমরা আধুনিক এক পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলছি।’
প্রধানমন্ত্রী রাজধানীতে তার কার্যালয় থেকে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সেতুটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
তিনি বলেন, তার সরকার দেশের মোট মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ২২ হাজার কিলোমিটার এবং ৭১৮ কিলোমিটার মহাসড়ককে চার বা তার অধিক লেনে উন্নীত করা হয়েছে। এদিকে ৬০০ কিলোমিটারের বেশি দৈর্ঘ্যের মহাসড়ককে চার বা তার অধিক লেনে উন্নীত করার কাজ চলমান আছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার এখন ঢাকায় মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প, গাজীপুর থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার র্যাপিড বাস ট্রানজিট প্রকল্প, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল এবং ১০ লেনের টঙ্গী সেতু নির্মাণ প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসা বিশ্বব্যাংকের
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি প্রকল্পগুলো সম্পন্ন হলে আমাদের অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে।’
২০১৮ সালের ১ নভেম্বর সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ ৮৯৪ দশমিক আট কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ করেছে।
চীন সরকার সেতু প্রকল্প সহায়তা হিসেবে ৬৫৪ দশমিক ৮০ কোটি এবং বাংলাদেশ সরকার বাকি ২৩৯ দশমিক ৮০ কোটি টাকা দিয়েছে।
সেতুটির কারণে পিরোজপুর ও ঢাকার মধ্যে সড়ক সংযোগ হয়েছে। এটি কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর, মোংলা সমুদ্র বন্দর এবং দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোলের মধ্যে সরাসরি সড়ক সংযোগ স্থাপনে ভূমিকা রেখেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সারা দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা তার সরকারের দায়িত্ব। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যেই আমাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন যাত্রায় অনেক দূর এগিয়েছি। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। আমি মনে করি আমরা আরও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হব।’
তিনি বলেন, রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত ছিল। এ অঞ্চলের মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বেশ কয়েকটি খরস্রোতা নদী পাড়ি দিয়ে জীবিকার জন্য ঢাকায় আসত।
শেখ হাসিনা বলেন, কিন্তু এখন তার সরকার পদ্মা বহুমুখী সেতু, শিকারপুর-দোয়ারিকা সেতু ও গাবখান সেতুসহ অনেক সেতু নির্মাণ করায় ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ সহজতর হয়েছে।
আরও পড়ুন: কঁচা নদীর ওপর বঙ্গমাতা সেতুর উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
এ অঞ্চলে আরও অনেক সেতু নির্মাণ হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ আর অবহেলিত হবে না।
নতুন উদ্বোধন করা সেতু সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি পিরোজপুরের মানুষের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনতে সহায়ক হবে। পিরোজপুর ও ঢাকার মধ্যে যোগাযোগ এখন অনেক সহজ হয়ে যাবে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী সঙ্কটের মধ্যে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী সবার প্রতি তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি আরও বলেন, ‘এমনকি এক ইঞ্চি পরিমাণ জমিও যেন অনাবাদি না থাকে।’
প্রধানমন্ত্রী আবারও এই কঠিন সময়ে বিদ্যুৎ, পানি ও জ্বালানি ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউসের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সড়ক, পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিংও বক্তব্য দেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী সেতুর দুই পাশের সেতুর সুবিধাভোগীদের সাথে মতবিনিময় করেন।
সেতুর পশ্চিম পাড়ে সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী এবং পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য এস এম রেজাউল করিম। পিরোজপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন মঞ্জু পূর্ব পাড়ে অন্য এক সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী নবনির্মিত সেতুর একটি ডিজিটাল উপস্থাপনা পেশ করেন।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম-মোংলা বন্দরের সুবিধা নিতে পারে নেপাল: প্রধানমন্ত্রী
কঁচা নদীর ওপর বঙ্গমাতা সেতুর উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
পিরোজপুরের বেকুটিয়ায় কঁচা নদীর ওপর বহুল প্রতীক্ষিত ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু’ উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এক হাজার ৪৯৩ মিটার দীর্ঘ সেতুটি খুলনা বিভাগ ও বরিশাল বিভাগের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করেছে।
রবিবার প্রধানমন্ত্রী রাজধানীতে তার কার্যালয় থেকে একটি ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সেতুটির উদ্বোধন করেন।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর: দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা নিয়ে বেশ কিছু চুক্তির সম্ভাবনা
২০১৮ সালের ১ নভেম্বর সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ ৮৯৪ দশমিক আট কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ করেছে।
চীন সরকার সেতু প্রকল্প সহায়তা হিসেবে ৬৫৪ দশমিক ৮০ কোটি এবং বাংলাদেশ সরকার বাকি ২৩৯ দশমিক ৮০ কোটি টাকা দিয়েছে।
সেতুটির কারণে পিরোজপুর ও ঢাকার মধ্যে সড়ক সংযোগ হয়েছে। এটি কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর, মোংলা সমুদ্র বন্দর এবং দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোলের মধ্যে সরাসরি সড়ক সংযোগ স্থাপনে ভূমিকা রেখেছে।
আরও পড়ুন: তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তি ভারতের ওপর নির্ভর করছে: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউসের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সড়ক, পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিংও বক্তব্য দেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী সেতুর দুই পাশের সেতুর সুবিধাভোগীদের সাথে মতবিনিময় করেন।
সেতুর পশ্চিম পাড়ে সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী এবং পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য এস এম রেজাউল করিম। পিরোজপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন মঞ্জু পূর্ব পাড়ে অন্য এক সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী নবনির্মিত সেতুর একটি ডিজিটাল উপস্থাপনা পেশ করেন।
আরও পড়ুন: সহযোগিতার নতুন দ্বার খুলবে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
চা শিল্প বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে, এটির ক্ষতি করা উচিত নয়: প্রধানমন্ত্রী
দেশের চা শিল্প যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সবাইকে এ বিষয়ে সজাগ থাকতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, ‘চা শিল্প আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এটি একটি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী ফসল। তাই এই শিল্পের ক্ষতি করা উচিত নয়; এটাকে অবশ্যই আরও সমৃদ্ধ করতে হবে।’
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক: চা-শ্রমিকদের মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ
শনিবার প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট ও চট্টগ্রাম এলাকার চা শ্রমিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সব সময় চা শ্রমিকদের উন্নয়ন ও চা বাগান সম্প্রসারণে কাজ করেছে।
তিনি আরও বলেন, চা শ্রমিকদের কাজের ধরন ও পরিবেশ অন্যান্য শ্রমিকদের তুলনায় ভিন্ন।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চা শ্রমিকদের দেশের নাগরিকত্ব ছিল না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৪ সালে শিল্পমন্ত্রী থাকাকালে তাদের নাগরিকত্ব দিয়েছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ কারণে আমি মনে করি আপনাদের প্রতি আমাদের কিছু অতিরিক্ত দায়িত্ব রয়েছে। আমরা সবসময় আপনাদের সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করেছি।’
আরও পড়ুন: হামলা হলে পুলিশের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে: সংসদে প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কয়েকদিন আগে চা শ্রমিকেরা তাদের মজুরি বাড়ানোর দাবি উত্থাপন করলে তিনি চা বাগানের মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণ করেন।
তিনি বলেন, মালিকরা যাতে চা শ্রমিকদের মর্যাদা নিশ্চিত করতে পারে এবং তাদের সুযোগ-সুবিধার প্রতি খেয়াল রাখে সেজন্য সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী সংক্ষিপ্তভাবে দেশের সার্বিক উন্নয়নের উদ্যোগের বর্ণনা দিয়ে বলেন, সরকার দেশের প্রতিটি মানুষের জন্য বাড়ি নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নিয়েছে।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাস মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
আরও পড়ুন: চতুর্থ শিল্প বিপ্লব উদ্ভূত পরিবর্তন মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেয়ার ওপর জোর প্রধানমন্ত্রীর
তিনি বলেন, ‘সেই আঘাতের ঢেউয়ের প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে, তাই আমরা সাধারণ মানুষের জন্য ন্যায্য মূল্যে খাদ্য সরবরাহ করার চেষ্টা করছি। যাতে তারা তাদের আয় দিয়েই নিজেদের পরিবার নিয়ে টিকে থাকতে পারে।’
পরে তিনি চার জেলার চা শ্রমিকদের কথা মনোযোগ সহকারে শোনেন।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চা শ্রমিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে চা বাগান মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে ১৭০ টাকায় উন্নীত করার নির্দেশ দেন।
এছাড়া, প্লাকিং বোনাস (অতিরিক্ত চা পাতা তোলার সুবিধা), উৎসব বোনাস, অর্জিত ছুটি, অসুস্থতার সময় পাওয়া ছুটি ভাতা, প্রভিডেন্ট ফান্ড, রেশন কার্ড এবং অবসর সুবিধাসহ শ্রমিকদের অন্যান্য সুবিধাগুলিও আনুপাতিকভাবে বৃদ্ধি করা হবে।
আরও পড়ুন: শ্রীলঙ্কার মতো সংকট বাংলাদেশে হবে না: প্রধানমন্ত্রী
হামলা হলে পুলিশের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে: সংসদে প্রধানমন্ত্রী
পুলিশের ওপর হামলা হলে তাদের আত্মরক্ষা করার অধিকার রয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার সংসদে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘পুলিশ বলেই আক্রমণের মুখে পড়লে নিজেদের রক্ষা করার অধিকার কি তাদের থাকবে না? তাদের (বিএনপির) মন্তব্য দেখে মনে হচ্ছে যে পুলিশের দিকে বোমা, লাঠিসোটা ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করার পরও বা তারা বন্দুক হামলার শিকার হওয়ার পরও তারা (পুলিশ) কিছুই করতে পারে না।’
এর আগে বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা সংসদে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশের বিপরীতে ভোলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের দলের সাম্প্রতিক প্রতিবাদ কর্মসূচিতে হামলা হয়েছে।
তার এই বক্তব্যের জবাবে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির আন্দোলন ও কর্মসূচি যেখানে শান্তিপূর্ণ ছিল, সেখানে পুলিশ কিছুই করেনি।
পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে ঢাকা-দিল্লির বহুমাত্রিক সম্পর্ক বৃদ্ধির প্রত্যাশা
তিনি বলেন, ‘বিরোধী দলগুলো আন্দোলন করবে এটাই স্বাভাবিক। হ্যাঁ, আমি পুলিশকে বলেছি কিছু না বলার জন্য, এটা ঠিক আছে, কিন্তু পুলিশ প্রথমে কিছুই করেনি। যদি কোনো ব্যক্তি আক্রমণের শিকার হয়, তবে সেই ব্যক্তির সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার রয়েছে।’
বর্তমান সংসদের ১৯তম অধিবেশনে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা তার সমাপনী ভাষণে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ মিছিল ও আন্দোলনের ক্ষেত্রে কেউ কিছু বলবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। যেখানে কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ, সেখানে কেউ কিছু করবে না।’
তিনি বলেন, বিএনপির লোকজন হামলার চেষ্টা করে বা মিডিয়া কভারেজের জন্য পরিস্থিতি তৈরি করে।
মিডিয়া এবং বিরোধী দলগুলোর একটি অংশের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা সাম্প্রতিক সময়ে হতাশা ছড়াচ্ছে যেন সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তবে তারা (সমালোচক) ভালো অবস্থায় আছে।
বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ খাদ্য ঝুঁকিতে নেই। গত ১৬ আগস্ট আইএমএফও তার মূল্যায়নে মন্তব্য করেছে যে বাংলাদেশ কোনো সংকটে নেই।
পড়ুন: শ্রীলঙ্কার মতো সংকট বাংলাদেশে হবে না: প্রধানমন্ত্রী
রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে বাংলাদেশের অর্থ পরিশোধে টান পড়তে পারে: সংসদে প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে ঢাকা-দিল্লির বহুমাত্রিক সম্পর্ক বৃদ্ধির প্রত্যাশা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন দিল্লি সফরে দু’দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধন, পারস্পরিক বিশ্বাস এবং বোঝাপড়াসহ বহুমুখী সম্পর্ক স্থাপিত হবে বলে আশা করছে ভারত।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে আগামী ৫-৮ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রীয় সফরে ভারত যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে ২০১৯ সালে ভারত সফর করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফর বিষয়ে খুব শিগগির গণমাধ্যমকে জানানো হবে।
পড়ুন: শ্রীলঙ্কার মতো সংকট বাংলাদেশে হবে না: প্রধানমন্ত্রী
ভারত সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং উপ রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় মিলিত হবেন।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করবেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এছাড়াও শেখ হাসিনা আজমীর শরীফ পরিদর্শনেরও সম্ভাবনা রয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে উভয় পক্ষই উচ্চ পর্যায়ের এবং সর্বোচ্চ পর্যায়ের সম্পৃক্ততা বজায় রেখেছে।
পড়ুন: রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে বাংলাদেশের অর্থ পরিশোধে টান পড়তে পারে: সংসদে প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রীর সফরে কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে চূড়ান্ত সমঝোতা চুক্তি সাক্ষর করা হবে।
কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ সহযোগিতায় অক্টোবরের শুরুতে ‘মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্লান্টের’ প্রথম ইউনিটের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হবে।
আরও পড়ুন:চতুর্থ শিল্প বিপ্লব উদ্ভূত পরিবর্তন মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেয়ার ওপর জোর প্রধানমন্ত্রীর
রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে বাংলাদেশের অর্থ পরিশোধে টান পড়তে পারে: সংসদে প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোভিড-১৯ মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে দেশের অর্থ প্রদানের ভারসাম্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মশিউর রহমান রাঙার এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।
তিনি বলেন, বিশ্ব অর্থনীতির দুর্বল প্রবৃদ্ধি, সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন, জ্বালানি, গ্যাসও খাদ্য সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি, ভোক্তা পণ্য, শিল্পের কাঁচামাল ও আন্তর্জাতিক মালবাহী খরচ বৃদ্ধি, রপ্তানি বন্ধ, রেমিট্যান্স কম আহরণসহ নানা কারণে বাংলাদেশের অর্থপ্রদানে ভারসাম্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
সংসদ নেত্রী হাসিনা আরও বলেন, গত চৌদ্দ বছরে ঋণ ও বাজেট ঘাটতি উভয়কে টেকসই ও সহনশীল করে তার সরকার উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
পড়ুন: জনগণের কল্যাণে কাজ করুন: সরকারি কর্মকর্তাদের প্রধানমন্ত্রী
তিনি বলেন, করোনা মহামারিসহ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নানা সমস্যার মধ্যেও বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশ ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে।
ঋণ ও জিডিপি সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে, যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ২০২১-২০২২ অর্থবছরের শেষে ঋণ ও জিডিপির হার ৩৪ শতাংশ রাখা যা আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের স্বীকৃত ঋণের সীমার অনেক নিচে।
তিনি এসময় বিভিন্ন পরিস্থিতি মোকাবিলায় তার সরকারের পদক্ষেপগুলোকে তুলে ধরেন।
জাতীয় পার্টির ঢাকার আরেক সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসাইন এর প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চাহিদার আলোকে যে পরিমাণ
বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা আছে সে হিসাবে দেশে কোন বিদ্যুৎ সংকট নেই।
পড়ুন: আ.লীগ নেতা নুরুজ্জামানের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক
তিনি অবশ্য বলেন, জ্বালানি সাশ্রয়ে মিতব্যয়িতা, পরিকল্পিত লোডশেডিং –এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে চলমান সসম্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।
তিনি উল্লেখ করেন যে, বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও জ্বালানি সাশ্রয়ে সরকার ১০০০-২০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ লোডশেডিং দিচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিক সংকট মোকাবেলায় সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপগুলোর মধ্যে সহনশীল মাত্রায় লোডশেডিং দিচ্ছে।’
তিনি অবশ্য আশা করছেন যে অল্প কিছুদিন পরই বর্তমান বিদ্যুতের লোডশেডিং বন্ধ করা যাবে।
পরিস্থিতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, নতুন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়া শুরু হলে ও বিদ্যুৎ ব্যয়ে মিতব্যয়ীতা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে উন্নতির আশা করা যায়।
নাটোরের ক্ষমতাসীন সরকার দলীয় সংসদ সদস্য এম শহিদুল ইসলাম বকুলের প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন বর্তমানে দেশে ৭ দশমিক শূণ্য এক মেট্রিক টন পরিশোধিত ও অপরিশোধিত তেল আছে যা দিয়ে ৩০-৩৫ দিন চলবে।
তিনি বলেন, এই সময়ের মধ্যে দেশে নিরবিচ্ছিন্ন তেল সরবরাহ নিশ্চিত করতে আরও দুটি তেলের ট্যাংকার দেশে পৌঁছাবে।
তিনি বলেন, আগামী ছয়মাসের জন্য (জুলাই-ডিসেম্বর)দেশের চাহিদার আলোকে সরবরাহকারী কোম্পানিগুলোকে আমদানি আদেশ দেয়া আছে ।
সংসদীয় বগুড়া-৫ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৫২১জন নারীসহ দেশের ৬ হাজার ৮৩৬ জন শান্তিরক্ষী বিশ্বের জাতিসংঘের অধীনে ৮টি মিশনে নিয়োজিত রয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিশনে দায়িত্ব পালনকালে মোট ১৬১ জন নিহত ও ২৫৮ জন আহত হয়েছেন।
আরও পড়ুন: শ্রীলঙ্কার মতো সংকট বাংলাদেশে হবে না: প্রধানমন্ত্রী
শ্রীলঙ্কার মতো সংকট বাংলাদেশে হবে না: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কখনও শ্রীলঙ্কার মতো হবে না। কারণ আমাদের সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশের উন্নয়ন করছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে অনেক মিথ্যা অভিযোগ করে লাভ নাই। বাংলাদেশ কখনও শ্রীলঙ্কা হবে না, হতে দেয়া হবে না।’
মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের উদ্যোগে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপরিবারকে হত্যা, শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসের আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে তার সরকার পরিকল্পিতভাবে বাজেট প্রণয়ন করেছে।
তিনি বলেন, প্রতিটি উন্নয়ন প্রকল্প অর্থনৈতিকভাবে দেশকে লাভবান করতে গ্রহণ করা হয়েছে।
পড়ুন:আ.লীগ নেতা নুরুজ্জামানের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক
তিনি আরও বলেন, ‘প্রত্যেকটি উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা গ্রহণের আগে আমরা চিন্তা করেছি দেশ ও দেশের মানুষ এটি থেকে কিভাবে লাভবান হতে পারবে। একটি বড় প্রকল্প থেকে মোটা অংকের কমিশন নিতে সর্বোপরি আমরা কখনও চিন্তা করিনি।’ ‘শেখ হাসিনা কোন প্রকল্প থেকে এভাবে (টাকা কামাই করতে) চিন্তা করেনি,’ তিনি যোগ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সময়মতো বিদেশি বিনিয়োগের ব্যয় পরিশোধ করছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা ধারের টাকায় ঘি খাই না। আমাদের ঋণের পরিমাণ খুব বেশি নয় যে আমরা কোন প্রকার ঋণের ফাঁদে পড়ে যাবো।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফি অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন। এতে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর উত্তর আ.লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস উত্তরের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর উত্তর আ.লীগের সহ-সভাপতি সাদেক খান এমপি এবং এমএ কাদের খান, সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহ-সভাপতি শহীদ সেরনিয়াবাত এবং নূরুল আমিন রুহুল এমপি এবং সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির প্রমুখ।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টন সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক সই: প্রতিমন্ত্রী