তবে এটি এখনও একটি জরুরি পরিস্থিতি হিসেবে বিবেচিত যেখানে দুর্যোগ প্রবণ স্থানে বসবাসরত অসহায় পরিবারগুলোর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চলমান সহায়তা প্রয়োজন এবং মানবিক সংস্থাগুলোর কাজ চালিয়ে যাওয়া অপরিহার্য, জানান তারা।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম), জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই-কমিশন (ইউএনএইচসিআর) এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরিত করা; জরুরি খাদ্য সহায়তা প্রদান; এবং ক্ষতিগ্রস্ত আবাসন, রাস্তা ও বাঁধ মেরামত ও পুনস্থাপনের জন্য তাদের কর্মী, অংশীদার এবং শরণার্থী স্বেচ্ছা-সেবকদের নিয়োজিত করেছে।
২০১৭ সালের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আগমন থেকে শুরু করে বর্তমান অবধি গত এক সপ্তাহে কক্সবাজারে সর্বোচ্চ প্রতিকূল আবহাওয়া বিরাজ করছে। গত আট দিনব্যাপী চলমান বৃষ্টি ও ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত শরণার্থীদের সাময়িক স্থানান্তর, আবাসন মেরামত এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যকর করতে অবিরাম কাজ করে চলেছে জাতিসংঘের সংস্থাসমূহ।
যৌথ প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কক্সবাজারে জুলাই মাসের গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ১০৪০ মিলিমিটার, যার মধ্যে গত ৪ থেকে ১২ জুলাই কুতুপালং শরণার্থী আবাসনের বিভিন্ন অংশে প্রায় ৭০৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
ভূমিধস, বন্যা এবং দমকা বাতাসে শত-শত স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত এবং বিনষ্ট হওয়ায় হাজার-হাজার শরণার্থী সাময়িকভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রায় দশ লাখ শরণার্থীর আনুমানিক পাঁচ শতাংশ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে এটি মোট জনসংখ্যার একটি ছোট অংশ মনে হলেও, ইতোমধ্যে সহায়-সম্বলহীন হয়ে যাওয়া শরণার্থীদের ওপর এর গুরুতর প্রভাব পড়েছে।
বাংলাদেশ সরকারের সার্বিক নেতৃত্বে, জাতিসংঘের সংস্থাসমূহ এবং তাদের অংশীদারবৃন্দ বর্ষা ও ঘূর্ণিঝড়ের মৌসুমের জন্য প্রস্তুতি নিতে সারাবছরজুড়ে শরণার্থীদের সাথে কাজ করে। আবাসন ও স্থাপনাসমূহকে আরও মজুতকরণ, জরুরি ত্রাণ মজুদ ও বিতরণের ব্যবস্থা এবং দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাসকরণের জন্য শরণার্থীদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়া এর মধ্যে অন্যতম।
সচেতনতা বৃদ্ধি, অগ্রিম ঝুঁকি সনাক্তকরণ, আবাসনে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসকরণ, এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ইউনিট ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবক কর্মসূচির মাধ্যমে বর্ষা মৌসুমের ক্ষয়-ক্ষতি হ্রাস করতে এবং দুর্যোগ পরবর্তী কার্যে শরণার্থীরা নিজেরাও কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করছেন।
আইওএম-বাংলাদেশের ডেপুটি হেড অব মিশন ম্যানুয়েল মার্কেজ পেরেইরা বলেন, চলমান ঝড়-বৃষ্টির প্রকোপ কিছুটা স্তিমিত হয়ে এসেছে বলে মনে হলেও, আমাদের মনে রাখতে হবে যে আমরা ২০১৯ সালের বর্ষা মৌসুমের মাঝামাঝি পর্যায়ে রয়েছি এবং এ বছরের প্রতিকূল আবহাওয়া মোকাবেলায় নিয়োজিত সম্পদ ইতোমধ্যেই ২০১৮ সালের ব্যয়কে অতিক্রম করেছে। এবছরের প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তার মাত্র এক-তৃতীয়াংশ পূরণ হয়েছে।
‘ফলে, রোহিঙ্গা পরিস্থিতির ত্রাণকার্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরও দৃঢ় আর্থিক ও রাজনৈতিক অঙ্গীকার প্রয়োজন,’ যোগ করেন তিনি।
ইউএনএইচসিআর হেড অব অপারেশন অ্যান্ড সাব অফিস ইন কক্সবাজার, মারিন ডিন কাজদোমকাজ বলেন, ‘২০১৮ সালে জরুরি ত্রাণ ব্যবস্থাপনার ভিত্তি ও অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। এখন আমাদের লক্ষ্য হবে প্রশিক্ষিত শরণার্থী স্বেচ্ছাসেবকদের নিজস্ব দক্ষতা, আত্ম-নির্ভরশীলতা, সচেতনতা বৃদ্ধির সক্ষমতাকে কেন্দ্রে রেখে তাদেরকে প্রথম সংবেদনে নিয়োজিত হতে সহায়তা করা।’
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সরকার, জাতিসংঘের সংস্থাসমূহ এবং অংশীদারবৃন্দের সমন্বিত সংবেদনে প্রমাণিত হয়েছে যে এই কমিউনিটি কেন্দ্রিক পদক্ষেপ, অবকাঠামোগত উন্নতি এবং বহুমুখী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা টিম একযোগে শরণার্থীদেরকে সুস্থ ও নিরাপদ রাখার জন্য সময়োপযোগী সেবা প্রদান করছে।
ডব্লিউএফপি বাংলাদেশ প্রতিনিধি রিচার্ড রেগান এ বছরের বর্ষা মৌসুমের প্রভাবের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ২০১৮ সালের পুরো জুলাই মাসে আমরা যেই খাদ্য-সহযোগিতা প্রদান করেছিলাম এই বছর এর মধ্যেই তার চেয়ে বেশ অধিক মাত্রায় তা করেছি। উপর্যুপরি ভূমিধ্বসের ফলে স্লোপ মেরামত কাজে প্রকৌশলীদের টিমও এ বছর তুলনামূলক বেশি ব্যস্ত। বৃষ্টির ক্ষয়-ক্ষতি হ্রাস করতে বিগত ১৮ মাস যাবত অভাবনীয় মাত্রায় প্রকৌশল-কার্য সাধিত হয়েছে। তবে শরণার্থীদের আবাসন স্থল নিরাপদ রাখতে প্রায় একই পরিমাণের কাজ চলমান রাখতে হবে। এর জন্য চলমান অর্থ ও মানব-সম্পদ প্রবাহ অব্যাহত রাখতে হবে।
কক্সবাজার উপকূলীয় এলাকায় অবস্থিত যা ঘূর্ণিঝড়সহ প্রতিকূল আবহাওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। সরাসরি সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি, জাতিসংঘের সংস্থাগুলো ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির আওতায় দুর্যোগ মোকাবেলা ইউনিটের মাধ্যমে শরণার্থীদেরকে প্রথম সংবেদক হিসেবে প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে। এতে বৃষ্টির মৌসুমের সার্বিক ক্ষয়-ক্ষতি হ্রাস করা সম্ভব হয়েছে।
তবে, সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে প্রমাণিত হয়েছে যে শরণার্থীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে আরও আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন।