এ দলে নাম লেখানো মধ্য বয়স্ক রোহিঙ্গা নারী সমুদা বেগম জানান, নিজ সমাজের নারীদের মানবাধিকার সম্পর্কে সচেতন করতে এবং তারা যাতে সমান অধিকার নিয়ে জীবনযাপন করতে পারেন সে জন্য কাজ করতে চান তিনি।
বুধবার মঞ্চে দাঁড়িয়ে কয়েক শ শ্রোতার সামনে এ সাহসী প্রত্যয় ব্যক্ত করেন সমুদা। বাস্তুচ্যুত এ রোহিঙ্গা নারী কক্সবাজারের উখিয়ায় ১৮ নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরে বসবাস করছেন।
কমিউনিটি অ্যাডভোকেটদের নেটওয়ার্ক ‘পরিবর্তক’ রোহিঙ্গা শিবিরে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা রোধ এবং লিঙ্গভিত্তিক সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে শরণার্থীদের সচেতন করার কাজ করবে। বুধবার ৯ নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার কাজী মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক।
‘একসাথে চলার মাধ্যমে শুরু, একতাবদ্ধ থাকাই উন্নতি এবং একসাথে কাজ করাতেই সাফল্য’- এ মন্ত্রে উজ্জীবিত ‘পরিবর্তক’ সদস্যরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার বিরুদ্ধে নারী ও মেয়ে শিশুসহ সমাজের সকল স্তরের মানুষদের সচেতন করবে। ইতিমধ্যে ৪০০ রোহিঙ্গা কমিউনিটি অ্যাডভোকেট সমাজের জন্য নিজেদের কার্যকরী পরিবর্তক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আইওএম বাংলাদেশ মিশনের উপ-প্রধান ম্যানুয়েল পেরেরা পেরেজ বলেন, ‘আইওএম বাংলাদেশে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা বন্ধে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। আইওএম সব সময় নতুন নতুন কাজের ধারণা নিয়ে আসে। পরিবর্তক নেটওয়ার্কটি তেমনই একটি ব্যতিক্রমী ধারণা।’
আইওএম ও পালস বাংলাদেশ কক্সবাজারের শিবিরগুলো থেকে ১০০টি সাব ব্লক বেছে নেয় এবং প্রতিটি সাব ব্লকে চারজন কমিউনিটি অ্যাডভোকেট নেয়া হয়েছে। একজন নারী, একজন পুরুষ, একজন ছেলে শিশু এবং একজন মেয়ে শিশু- এ চারজন বাছাইকৃত প্রতিটি সাব ব্লকে কাজ করবেন।
তারা নিজ সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীকে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার ব্যাপারে সচেতন করতে প্রতি সপ্তাহে এক ঘণ্টা সময় ব্যয় এবং প্রতি মাসে একদিন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবেন। এভাবে তারা প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ২ হাজার মানুষের কাছে পৌঁছাবেন এবং নিয়মিত নিজ সম্প্রদায়ের নেতা ও সামাজিক সংগঠনগুলোর কাছে বার্তা নিয়ে যাবেন। নিজেদের সামাজিক রীতিনীতি ও সংস্কৃতি অনুযায়ী তারা সমাজে লিঙ্গভিত্তিক সমতার জন্য কাজ করবেন।
রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোর পাশাপাশি আইওএম ও পালস বাংলাদেশ স্থানীয় জনগোষ্ঠীদেরও লিঙ্গভিত্তিক ইস্যুগুলোতে আরও সচেতন করতে ৩২০ জন কমিউনিটি অ্যাডভোকেট নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে কাজ করছে।
এসব কমিউনিটি অ্যাডভোকেটরা সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায় এবং কোনো প্রকার আর্থিক সহায়তা ছাড়াই এ সামাজিক দায়িত্ব পালনে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত কমিশনার মোজাম্মেল হক বলেন, ‘যেহেতু এ কমিউনিটি অ্যাডভোকেটদের তাদের নিজ জনগোষ্ঠী থেকেই নির্বাচন করা হয়েছে তাই তারা খুব দ্রুতই তাদের সম্প্রদায়ের বিশ্বাস অর্জন করতে পারবেন।’
১৯ বছর বয়সী কমিউনিটি অ্যাডভোকেট আনাস হোসাইন বলেন, ‘আমি আমার সম্প্রদায়কে লিঙ্গভিত্তিক ইস্যুগুলোতে সচেতন করার মাধ্যমে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে বদ্ধপরিকর। আমি মনে করি যে কারো পক্ষেই এমন পরিবর্তন আনা সম্ভব। সব মানুষেরই সমান মর্যাদা পাওয়ার অধিকার আছে এবং সবাইকে সম্মান দেয়ার ব্যবহার নিজের থেকেই প্রথম শুরু করতে হবে।’