গত বুধবার গভীর রাতে সাটুরিয়ার উত্তর কাউন্নারা গ্রামের সৌদি প্রবাসি মজনু মিয়ার স্ত্রী পারভীন আক্তার ও তার ছয় বছরের ছেলে নুর হোসেন তাদের দুতলা ফ্ল্যাট বাসায় খুন হন। সকালে পুলিশ তাদের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় মানিকগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত-৯ এর বিচারক জান্নাতুল রাফিন সুলতানের কাছে সোলাইমান হোসেন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। পরে সোলাইমানকে রাতেই আদালত থেকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার রিফাত রহমান শামীম এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, ১৬৪ ধারা জবানবন্দিতে সোলাইমান হোসেন খুনের কথা স্বীকার করেছেন। স্বীকারোক্তি অনুয়ায়ী সোলাইমান হোসেনের সাথে তার মেঝ ভাই মজনু মিয়ার স্ত্রী পারভীনের পরকীয়ার সম্পর্ক তৈরি হয়। তিন মাস আগে সোলাইমান মালয়েশিয়া থেকে পড়াশুনা করে দেশে আসেন। এরপর পারভীনের সাথে পরকীয়ার সম্পর্ক আরও গভীর হয়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পারভীন সোলাইমানকে বিয়ের জন্য চাপ দেয়। ঘটনার দিন রাত ১০টার দিকে সোলাইমান হোসেন পারভীনের ঘরে প্রবেশ করে। তাদের মধ্যে দৈহিক সম্পর্কের এক পর্যায়ে পারভীন আক্তার সোলাইমানকে বিয়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করে।
সোলাইমান দুই ভাতিজা আব্দুল করিম (১০) ও আব্দুল নুরের (৬) কথা চিন্তা করে বিয়ের জন্য রাজি হননি। বিয়েতে রাজি না হওয়াতে পারভীন আক্তার তার নিজের দুই ছেলে, স্বামী ও সোলাইমানকে হত্যার হুমকি দেন। এ নিয়ে দুইজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এসময় সোলাইমান ঘরে থাকা ধারাল চাকু দিয়ে পারভীনের গলায় আঘাত করেন। ভাতিজা আব্দুল নুর জেগে উঠলে তাকেও চাকু দিয়ে হত্যা করে সোলাইমান এবং রক্তমাখা চাকু ও তার পরিহিত কাপড় ধুয়ে নিজ ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন।
তবে সোলাইমানের বাবা ক্বারী আব্দুল রহমান দাবি করেন, পুলিশ সোলাইমানকে ফাঁসানোর জন্য ধরে নিয়ে গেছে। ‘তার সাথে আমার পরিবারের কাউকে দেখা করতে দেয় না,’ বলেন তিনি।
বাড়িতে বহিরাগত কেই আসে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাঝে মধ্যে অপরিচিত একাধিক ছেলে আসত বৌমার কাছে। কিন্তু তাদের আমি চিনি না।’
তবে ক্বারী আব্দুল রহমানের স্ত্রী রোমেনা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলের বৌ পর্দা করে থাকত। সে হাত পায়ে মোজা পরে বাইরে বের হত। আত্মীয়-স্বজন ছাড়া আমার বাড়িতে কেউ আসত না।’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) আবুল কালাম বলেন, সাটুরিয়াতে মা-ছেলে খুনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় হত্যাকাণ্ডের সাথে সোলাইমান জড়িত। তাকে বৃহস্পতিবার রাতেই গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসবাদে সোলাইমান হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেন।
শুক্রবার দুপুরে তাকে আদালতে তোলা হলে তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এই ঘটনায় নিহত পারভীনের মা মজিরন বেগম বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন বলে জানান তিনি।
এদিকে সাটুরিয়া থানা পুলিশ জোড়া খুনের আলামত সংগ্রহ করেছে। বৃহস্পতিবার রাতে মা ও ছেলেকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।