অনৈতিক টাকা দাবির অভিযোগের ঘটনায় দুদকের সহকারী পরিচালক ও তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরকে সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্ত থেকে প্রত্যাহার করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তার বিরুদ্ধে অনৈতিকভাবে মোবাইলে যোগাযোগের বিষয়টি তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থাসহ আইনগত ব্যবস্থা নিতে দুদকের প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গতকাল সোমবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি এস এম মজিবুর রহমানের বেঞ্চ এ রায় দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. কামাল হোসেন। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. আসিফ হাসান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।
ঢাকা সদরের সাবেক সাব রেজিস্ট্রার এবং বর্তমানে পিরোজপুরের জেলা রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত মো. আব্দুল কুদ্দুস হাওলাদার ও তার স্ত্রী মাহিনুর বেগমের বিরুদ্ধে দুদকের করা একটি মামলার তদন্ত করছেন তদন্ত কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন। কিন্তু ওই জেলা রেজিস্ট্রারের ভাইয়ের মোবাইলে ফোন দিয়ে ঘুষ দাবি করছেন-এমন অভিযোগ তুলে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা আলমগীর হোসেনকে পরিবর্তনের দাবিতে দুদক চেয়ারম্যান বরাবর একটি আবেদন দাখিল করেছিলেন। কিন্তু দুদক চেয়ারম্যান তাতে সাড়া না দেয়ায় তারা হাইকোর্টে রিট করেন।
আরও পড়ুন: গাজীপুরে ২০৬ হাসপাতাল-ক্লিনিক কেনো বন্ধ হবে না, জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট
এ রিটের প্রাথমিক শুনানি করে গত ৭ মার্চ হাইকোর্ট রিট আবেদনকারী জেলা-রেজিস্ট্রার মো. আব্দুল কুদ্দুস হাওলাদারের ভাই এবং দুদকের ওই সহকারি পরিচালক আলমগীর হোসেনের মধ্যে ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোবাইল কথোপকথনের রেকর্ড এবং কল লিস্ট আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেন। ওই আদেশ অনুযায়ী বিটিআরসি (বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন) এবং গ্রামীণ ফোন (জিপি) প্রতিবেদন দাখিল করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই সহকারী পরিচালক এবং অভিযুক্ত জেলা রেজিস্ট্রারের বড় ভাইয়ের মোবাইল নাম্বারে দফায় দফায় কথোপকথন হয়েছে। আসামিপক্ষের আইনজীবীর দাবি, তদন্তের প্রয়োজনে কথা বললে অভিযুক্তদের সাথে তদন্ত কর্মকর্তা কথা বলবেন। কিন্তু অভিযুক্তের বড় ভাইয়ের সাথে কথা বলেছেন। এ কারণে হাইকোর্ট দুদকের ওই সহকারি পরিচালককে তলব করেন। একই সঙ্গে রুল জারি করেন।
আরও পড়ুন: সন্তানের অভিভাবকত্ব সংক্রান্ত সব মামলা ৬ মাসে নিষ্পত্তির নির্দেশ হাইকোর্টের
আদেশের পরে এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক জানান, সোমবার এ বিষয়ে চূড়ান্ত শুনানি শেষে রুল নিষ্পত্তি করে রায় দেন। রায়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরকে এ মামলার তদন্ত কাজ থেকে প্রত্যাহার করতে দুদককে নির্দেশ দিয়েছেন এবং তার বিরুদ্ধে অনৈতিকভাবে মোবাইলে যোগাযোগের বিষয়টি তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থাসহ আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।
২০১৯ সালের ৩ মার্চ জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য জানাতে জেলা রেজিস্ট্রার মো. আব্দুল কুদ্দুস হাওলাদার ও তার স্ত্রী মাহিনুর বেগমকে নোটিশ পাঠায় দুদক। দুদকের (ঢাকা-১) উপপরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিমের পাঠানো নোটিশের উপযুক্ত জবাব না পেয়ে ২০২০ সালের ২২ অক্টোবর ওই দম্পতির বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিচারিক আদালতের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশের আদালতে মামলা করে দুদক। মামলায় ২৪ লাখ ৭০ হাজার ৫৪৩ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন, ৯০ লাখ ১২ হাজার ৭৯৬ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনপূর্বক দখল রাখার অভিযোগ আনা হয়। মামলা দায়েরের পর তদন্তে নামেন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আলমগীর হোসেন। তদন্তের সময়ে তিনি আসামিদের অনৈতিক লেনদেনের প্রস্তাব দিতে থাকেন।
আরও পড়ুন: ডেসটিনি গ্রুপের পরিচালকের জামিন প্রশ্নে বিভক্ত আদেশ হাইকোর্টের