চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমন ধান খেতে ক্ষতিকর কারেন্ট পোকা তথা বাদামী গাছ ফড়িংয়ের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। কৃষকরা প্রতিষেধক ওষুধ বা কীটনাশক প্রয়োগ করেও ফল পাচ্ছে না। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে এমন অবস্থা চলতে থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা।
তারা জানান, আক্রান্ত ধান গাছের গোড়ায় খুব ছোট আকৃতির এই পোকা দেখা যায়। এই পোকা বিদ্যুতের মত দ্রুত গতিতে ক্ষয়-ক্ষতি করে বলে স্থানীয়ভাবে এ পোকার নাম কারেন্ট পোকা। এর আক্রমণে দ্রুত ধানগাছ নষ্ট হয়ে যায়।
আরও পড়ুন: আবাদ মৌসুমে সারের দাম বৃদ্ধি, ফরিদপুরে আমন উৎপাদনে শঙ্কিত চাষিরা
জেলার সদর, নাচোল, গোমস্তাপুর ও ভোলাহাট উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আমন ধান খেতে এই ক্ষতিকর পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে।
কৃষকরা জানান, এবার মাঠজুড়ে ধানের ফলন ভালো ছিল। বর্তমানে ধানের শীষ ফুটছে। এমন অবস্থায় কারেন্ট পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। পোকা দমনে একাধিকবার কীটনাশক প্রয়োগ করেও তেমন ফল মিলছেনা। এনিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তারা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার আতাহার এলাকার আমন চাষি আকবর আলী বলেন, ‘কারেন্ট পোকা নিয়ে প্রায় ১৫ দিন থেকে আমরা কৃষকরা অস্থির হয়ে আছি। যেখানে পোকা লাগছে সেখানে শীষ ফুটছে না।’
একই এলাকার আরেক চাষি জাহাঙ্গীর বলেন, কারেন্ট পোকাতে ধান নষ্ট করে দিচ্ছে, বিষ দিয়ে কাজ হচ্ছে না। বিষ দিলে একটু দমছে কিন্তু পোকা মরছে না। এ পর্যন্ত আমার দুইবার বিষ স্প্রে করা হয়ে গেলো। বিষের দাম অনেক তার উপর কাজ হয় না।
আরও পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ে আমন আবাদে ব্যস্ত কৃষকরা
গোমস্তাপুর উপজেলার চকপুস্তম এলাকার কৃষক বদরুল ইসলাম জানান, এবার তিনি পাঁচ বিঘা জমিতে আমন ধান আবাদ করেছেন। কিন্তু হঠাৎ করে প্রচুর পরিমাণে কারেন্ট পোকা হয়েছে, চার বার বিষ স্প্রে করেছেন। বর্তমানে একটু দমেছে মনে হচ্ছে। এনিয়ে চিন্তায় আছেন তিনি। কারণ এমন যদি চলে তবে ধানের ফলন একে বারে কমে যাবে।
নাচোল উপজেলার নেজামপুর এলাকার আমন চাষি এস্তাব আলী জানান, এবার প্রথম থেকে ধানের অবস্থা ভালো ছিল। ধানের শিষ ফুটতে শুরু করেছে। ধান দেখে চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছিলো। আশা ছিলো খুব ভালো ফলন হবে। কিন্তু হঠাৎ করে কারেন্ট পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। বিষ স্প্রে করার পর পোকা কমেছিল। কিন্তু আবার পোকা দেখা দিয়েছে। আবার বিষ স্প্রে করতে হচ্ছে। এতে খরচ বাড়ছে।
আমন খেতে পোকার আক্রমণের কথা স্বীকার করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
আরও পড়ুন: ঝিকরগাছায় আমন ধানের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি
চাঁপাইনবাবগঞ্জের উপ-পরিচালক নজরুল বলেন, বর্তমানে যে আবহায়া বিরাজ করছে তা ধানের জন্য অনুকূলে নয়। এর কারণে পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। আমাদের মাঠ পর্যায়ে কর্মীরা মাঠে আছে। সঠিক এবং পরিমিত কীটনাশক ব্যবহারে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে।
তিনি জানান, এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৫২ হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও তা ছাড়িয়ে ৫২ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে।