বিশেষ সংবাদ
করোনার মন্দার পর বৈদেশিক কর্মসংস্থানে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ
বৈশ্বিক শ্রমবাজারে বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য স্বাভাবিকতা ফিরে আসার ইতিবাচক লক্ষণ হিসাবে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) থেকে এক মাসে অভিবাসন ছাড়পত্র প্রাপ্ত কর্মীদের সংখ্যা গত এক মাসে (নভেম্বর) এক লাখ ছাড়িয়েছে।
বিএমইটি মহাপরিচালক শহীদুল আলম ইউএনবিকে জানান, ২০২১ সালে নভেম্বর মাসে এক লাখ দুই হাজার ৮৬৩ জন কর্মীকে বিদেশে যাওয়ার জন্য ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। যেটা কিনা করোনা শুরু হওয়ার পর এক মাসে সর্বোচ্চ।
মহাপরিচালক জানান, ২০১৭ সালের মার্চ মাসে ১ লাখের বেশি কর্মী বিদেশে গিয়েছিলেন। আর ওই বছর মোট বিদেশে গিয়েছিলেন ১০ লাখ ৮ হাজার ৫২৫ জন, যা বাংলাদেশের এযাবৎকালের রেকর্ড। অবশ্য তখন করোনা মহামারি ছিল না। সেই হিসাবে নভেম্বর মাসের এক লাখ কর্মীর বিদেশে যাওয়ার ঘটনা রেকর্ড বলে জানা যায়।
আরও পড়ুন: মধ্যপ্রাচ্যের বাইরেও শ্রমবাজার খোঁজার তাগিদ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
বিএমইটি থেকে জানা যায়, স্বাধীনতার পরপর বছরে মাত্র হাজার পাঁচেক মানুষের বৈদেশিক কর্মসংস্থানের মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক শ্রমবাজারে প্রবেশ করে বাংলাদেশ। ১৯৮৯ সালে প্রথমবারের মতো বছরে এক লাখ কর্মীর বিদেশে কর্মসংস্থান ঘটে। এরপর সেটি ২-৩ লাখ হয়ে ২০০৭ সালে ৮ লাখে পৌঁছে যায়। এরপর ২০০৮ সালে বাংলাদেশ থেকে ৮ লাখ ৭৫ হাজার বাংলাদেশির বিদেশে কর্মসংস্থান হয়। এরপর টানা কয়েক বছর গড়ে ৫-৬ লাখ শ্রমিক বিদেশে গিয়েছেন। ২০১৭ সালে বছরে ১০ লাখ কর্মী পাঠানোর রেকর্ড করা হয়। তবে পরের বছর ২০১৮ সালে ৭ লাখ ৩৪ হাজার এবং ২০১৯ সালে ৭ লাখ কর্মী বিদেশে যান।
বিএমইটি জানায়, ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে ৩৫ হাজার ৭৩২, ফেব্রুয়ারি মাসে ৪৯ হাজার ৫১০ এবং মার্চ মাসে ৬১ হাজার ৬৫৩ জন কর্মী বিদেশে গেছেন। তবে দেশে দ্বিতীয় দফায় করোনা মহামারির প্রকোপ বৃদ্ধি পেলে এপ্রিলে আবার লকডাউনের কারণে কর্মী যাওয়া কমে যায়। এই মাসে ৩৪ হাজার ১৪৫, মে মাসে ১৪ হাজার ২০০, জুনে ৪৫ হাজার ৫৬৭, জুলাই মাসে আবার ১২ হাজার ৩৮০ ও আগস্টে ১৯ হাজার ৬০৪ জন কর্মী বিদেশে যান।
বাংলাদেশ আমার দ্বিতীয় জন্মভূমি: ম্যালকম আর্নল্ড
ভালোবেসে এনজিও কর্মী হালিমা খাতুনকে বিয়ে করে খুলনা সোনাডাঙা আবাসিক এলাকায় গত ১৮ বছর ধরে বসবাসকারী অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক ম্যালকম আর্নল্ড জানালেন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশে থাকতে চান।
৭৬ বছর বয়সী ম্যালকম জানান, বাংলাদেশকে তার দ্বিতীয় জন্মভূমি বা মাতৃভূমি মনে হয়। এ দেশের মানুষ, প্রকৃতি ও সবুজের সমারোহ আর মানুষের আন্তরিকতায় তিনি মুগ্ধ।
তিনি বলেন, যতই দিন যাচ্ছে ততই এদেশের প্রতি আমার ভালোবাসা ও ভালোলাগা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ইউএনবিকে তিনি জানান, পৃথিবীর অনেক দেশ সম্পর্কে তার ধারণা আছে। কিন্তু এদেশের মানুষের মত আপন করে নেয়ার ক্ষমতা ও আতিথেয়তা কোথাও পাওয়া যায় না।
২০০৪ সালে হালিমা খাতুনকে বিয়ে করেন ম্যালকম আর্নল্ড। এরপর কয়েকবার তিনি হালিমাকে নিয়ে অস্ট্রলিয়ায় গেলেও প্রতিবার কয়েকদিন থেকে আবারও ফিরে এসেছেন বাংলাদেশের টানে। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি অস্ট্রেলিয়ায় যান ম্যালকম। এরপর করোনার কারণে আর যাওয়া হয়নি।
আরও পড়ুন: ভালোবেসে ১৮ বছর ধরে বাংলাদেশে যেভাবে জীবন কাটছে অস্ট্রেলিয়ার ম্যালকমের
হালিমা খাতুন জানালেন, প্রথম দিকে ম্যালকমের খাওয়ার অসুবিধা হলেও ধীরে ধীরে তা কেটে যায়। প্রথম দিকে শুধু ফাস্টফুড আর বিভিন্ন প্রকার ফল খেতেন ম্যালকম। তবে আস্তে আস্তে সে ভাত, রুটি, সবজি, মুরগির মাংসতে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। তবে তিনি খুব কম পরিমাণ ভাত খান, তবে রুটি খেতে খুব পছন্দ করেন। হঠাৎ করে তার হাটের সমস্যা দেখা দেয়ায়, এখন তিনি খুব বেছে বেছে খাবার খান। দুধ, আম, আপেল ও কমলা তার খুব প্রিয়।
ছবি আঁকতে বসলে তার আর কোনো দিকে খেয়াল থাকে না। কখন সকাল-দুপুর গড়িয়ে রাত হয়ে যায় তার খেয়াল থাকে না। সে সব রকম ছবি আঁকলেও বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও প্রাকৃতিক দৃশ্য আকতে খুব ভালোবাসেন। ছবিগুলো তার সন্তানের মত। সেগুলো খুব যত্ন সহকারে সংরক্ষণ করেন আর্নল্ড।
তার দুই মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে ম্যালকম। তার বড় মেয়ে নাকি (৫১) আর ছোট মেয়ে নাতাশা (৪৯) অস্ট্রেলিয়ায় ভালো আছেন।
বয়সের ভারে ম্যালকমের এখন হাঁটতে-চলতে অসুবিধা হয়। তারপরও তার মুখে হাসি লেগে থাকে।
তিনি জানান, ইউএনবিতে তাকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করার পর অনেকে তার খোঁজ-খবর নিয়েছেন। এজন্য তিনি ইউএনবিকে ধন্যবাদ জানান।
বাংলাদেশে অস্ট্রেলিয়ার দূতাবাস থেকেও তার খোঁজ-খবর নেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
সবশেষে ম্যালকম জানান তার জীবনের একটা ইচ্ছা হলো, বাংলাদেশের ক্রিকেটের ওপর তার অপ্রকাশিত গ্রন্থটি প্রকাশ করা।
আরও পড়ুন: খুলনার রাস্তায় পড়ে থাকা সেই বৃদ্ধের ঠাঁই হলো ঢাকার বৃদ্ধাশ্রমে
নারীদের স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে সানজিদার ‘ঠাকুরগাঁও অনলাইন উদ্যোক্তা পরিবার’
বাংলাদেশের বর্তমান অগ্রযাত্রায় নারীদের একটা বড় অবদান রয়েছে এটা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। দেশের অনেক নারীই এখন তাদের শিক্ষা ও কর্ম দক্ষতার মাধ্যমে নিজেদের সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় ‘ঠাকুরগাঁও অনলাইন উদ্যোক্তা পরিবার’ নামের একটি অনলাইন প্লাটফর্ম নারীদের স্বাবলম্বী করে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছে। এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে উঠেছে ঠাকুরগাঁও পৌরসভাধীন কলেজপাড়া এলাকায়।
২০২০ সালে এই অনলাইন প্লাটফর্ম যাত্রা শুরু করে। এই প্লাটফর্মটির মাধ্যমে প্রায় শতাধিক নারী স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। বর্তমানে এই গ্রুপের সদস্য সংখ্যা প্রায় ৫৫ হাজার, যারা নিয়মিত এই গ্রুপ থেকে কেনাকাটা করে। ক্রেতারা এই গ্রুপের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের কুশন, পাটজাত পণ্য, শো-পিছ, গায়ে হলুদের গহনা ইত্যাদি কিনে থাকেন। গ্রামাঞ্চলের নারীরা ঘরে বসে এগুলো তৈরি করেন। এগুলোর মাধ্যমে তাদের স্বাবলম্বী করার মাধ্যম তৈরি করে দিয়েছেন সানজিদা শারমিন সেতু।
সেতু তাদের কাজ করতে শেখাচ্ছেন, বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে কাজ করতে সহযোগিতা করছেন এবং সেই পণ্যগুলোও বাজারজাতকরণের চেষ্টা করছেন।
তার এই সংগ্রাম যুদ্ধের গল্পের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে আরও একটি রূপকথা। সেতু সাধারণ নারীদের কথা ভেবে একটি ফ্ল্যাট বাসা ভাড়া নিয়ে প্রথমত ২০ জনকে নিয়ে স্বল্প পরিসরে কাজ শুরু করেন। বর্তমানে শতাধিক নারী এখান থেকে কাজ শিখেছে। ৪০ জন নারী নিয়ে তার এই ছোট পরিসরে কোনোরকমে কাজ করে আসছেন। প্রয়োজনীয় মেশিন ও তৈজসপত্রের স্বল্পতা থাকার পরও কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
আরও পড়ুন: হাত-পা বিহীন এসএসসি পরীক্ষার্থী সালাহ উদ্দিনের স্বপ্ন বড়
বৃহত্তর ঐক্য গড়তে সরকারবিরোধী দলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা বিএনপির
নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অভিন্ন দাবিতে ‘৯০ দশকের মতো’ যুগপৎ আন্দোলন করতে ডান ও বামপন্থীদের সম্পৃক্ত করে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৃহত্তর ঐক্য গঠনের পরিকল্পনা করছে বিএনপি।
দলটি ইতোমধ্যে কয়েকটি বাম দলের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে বৈঠক করেছে। কিছু শর্তের ভিত্তিতে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার-এ সাধারণ ইস্যুতে কাজ করার ব্যাপারে ইতিবাচক সংকেতও পেয়েছে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য ইউএনবিকে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, তাদের সর্বশেষ স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে তাদের দাবি আদায়ে কীভাবে কার্যকর আন্দোলন চালানো যায় সে বিষয়ে তাদের পরামর্শ ও মতামত নিতে অধিকাংশ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: দুদকের মামলায় বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ইউএনবিকে বলেন, ‘আমরা এখন আমাদের চেয়ারপার্সনের বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। এ বিষয়ে আমাদের কর্মসূচি শেষ হলে আমরা আমাদের প্রধান দাবি নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের জন্য আন্দোলনে মনোনিবেশ করব।’
এ বিষয়ে আন্দোলন শুরু করার আগে তারা সব ডান ও বাম গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের মধ্যে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে অধিকাংশ বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করবেন বলে জানান বিএনপির মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল জানান, ইতোমধ্যে বাম গণতান্ত্রিক জোট ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের একাধিক দলের সঙ্গে তাদের অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছে এবং আগামী দিনে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের সঙ্গে বসবেন।
তিনি বলেন, দেশে গণতন্ত্র, জনগণের ভোটাধিকার ও একটি সুস্থ নির্বাচন ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করতে সর্বস্তরের জনগণ ও সব রাজনৈতিক দলের শক্তিশালী ঐক্য এখন অপরিহার্য।
আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা: আরও ৪০ জেলায় সমাবেশ করবে বিএনপি
রাজধানীতে নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমুখী দামে নাকাল সাধারণ মানুষ
রাজধানীর কাচাঁবাজারগুলোতে শীতের মতো ঝেঁকে বসেছে নিত্যপণ্যের চড়া দাম। ক্রমবর্ধমান হারে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি শীতের মৌসুমেও ভোগাচ্ছে মধ্যবিত্ত ও প্রান্তিক আয়ের মানুষদের।
শামীম গওহর নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, আমরা এখন শীতের মাঝামাঝি। এই সময়ে এসে শাকসবজির দাম কমে যাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু দাম ক্রমাগত বাড়ছেই।
বিভিন্ন কাচাঁবাজার ঘুরে ইউএনবির প্রতিবেদক দেখতে পান, পাইকারি বাজারে সরবরাহ স্বল্প এই অজুহাতে খুচরা বিক্রেতারা সবজি প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি করছেন। কিন্তু পাইকারি বিক্রেতাদের দাবি খুচরা বিক্রেতারা অকারণে সবজির দাম বেশি রাখছেন।
কয়েক সপ্তাহ ধরে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজি প্রতি ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। যা অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য চাল, ভোজ্য তেল, চিনি ও ডালের ক্রমবর্ধমান মূল্যের মতো ইতোমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ মানুষের পকেট কাটছে।
আরও পড়ুন: ডিজেল ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে সংসদে বিরোধী নেতাদের অসন্তোষ
পাঁচ প্রতিবন্ধী সদস্য নিয়ে এক হতদরিদ্র পরিবারের করুণ কাহিনী
গাছ থেকে পড়ে গিয়ে কোমড় ভেঙে যাওয়ার পর প্রতিরাতেই হাড় ভাঙার তীব্র যন্ত্রণায় ছটফট করেন জিয়া শেখ (৪০)। তীব্র ব্যাথায় তার গোঙানির শব্দ শুনে ফ্যালফ্যাল করে অসহায়ের মতো মুখের দিকে চেয়ে থাকে ঘরের বৃদ্ধা মা, অসহায় স্ত্রী ও চারটি শিশু সন্তান। যাদের মধ্যে তিনজন জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী।
ফরিদপুরের মধুখালীর এক হতদরিদ্র জিয়া শেখের পরিবারের করুণ কাহিনী এটি। মাত্র ছয় মাস আগে একটি তাল গাছ ঝুড়তে যেয়ে গাছ থেকে পড়ে চলাচলের শক্তি হারান জিয়া। ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নেয়ার পর ডাক্তার বলেছেন অপারেশন করাতে। কিন্তু অপারেশন করানোর সামর্থ্য নেই তার পরিবারের।
মধুখালী উপজেলার মেগচামী গ্রামের প্রতিবন্ধী জিয়া শেখের বাবা করিম শেখ ছিলেন একজন হতদরিদ্র গৃহকর্তা। বাসাবাড়িতে ভিক্ষা করে যা পেতেন তাই দিয়েই কোনমতে দিন কাটতো পরিবারের। ভূমিহীন এই পরিবারের মাথা গোঁজার কোন ঠাই ছিল না। এই অবস্থায় সাত বছর আগে তিন ছেলে ও স্ত্রী রেখে মারা যান করিম শেখ। ছোট ছেলে জিয়া নিজেও একজন শ্রবণ প্রতিবন্ধী।
আরও পড়ুন: নেতিবাচক প্রভাবে কক্সবাজারে পর্যটনে ভাটা
জিয়া শেখ জানান, দিনমজুরির পাশাপাশি তালগাছ ও নারকেল গাছ ঝুড়ে (গাছের ডগা পরিচর্যা) চলতো তার সংসার। তার স্ত্রী আরজিনা শ্রবণ প্রতিবন্ধী। তাদের সংসারে দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। এর মধ্যে বড় ছেলে আকাশ (১৫) জন্ম থেকে শারিরীক ও মানসিক প্রতিবন্ধী। ছয় বছর বয়সী ছোট মেয়ে ইয়াসমিন বাবা-মায়ের মতোই শ্রবণ প্রতিবন্ধী। শারিরীক কোন প্রতিবন্ধকতা নেই ১৪ বছর বয়সী বড় মেয়ে হেলেনার। সে এখন মেগচামী স্কুল এন্ড কলেজ আদর্শ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। তাদের আরেক ছেলে রয়েছে আট বছর বয়সী তামিম। সে স্থানীয় প্রাইমারী স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। সামর্থ্যহীন পরিবারের ঘানি টানতে স্ত্রী আরজিনা বেগম) স্থানীয় একটি মিলে মজুরের কাজ করতেন। আরজিনা নিজেও প্রতিবন্ধী হওয়ায় মিলে কাজ করতে যেয়ে তিনি অসুস্থ্ হয়ে পড়েন।
নেতিবাচক প্রভাবে কক্সবাজারে পর্যটনে ভাটা
সাম্প্রতিক সময়ে পর্যটক নারী ও স্কুলছাত্রী ধর্ষণের ঘটনাসহ খাবারের দাম বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাবে কক্সবাজারে কাঙ্খিত পর্যটক আসেনি। আগে থার্টি ফাস্ট নাইট উদযাপনে কক্সবাজারে হোটেলে কোন রুম খালি থাকত না। এবার ৫০ শতাংশ হোটেলের রুম খালি রয়েছে। দেশে অনেকটা স্বাভাবিক পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও এমন দিনে কাঙ্খিত পর্যটক না থাকা কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে ও পর্যটন ব্যবসায়ীদের জন্য উদ্বেগজনক।
গাড়ি পার্কিং পর্যটন গলফ মাঠের ইজারাদার কক্সবাজার পৌরসভার কাউন্সিলর সালাহউদ্দিন সেতু বলেন, গত ১৬ ডিসেম্বর ছুটির ৩ দিনে পর্যটকদের বড় বাস পার্কিং ছিল সাড়ে ৩শ টি। পার্কিং জায়গা না পেয়ে স্থানীয় ইলিয়াছ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠসহ বিভিন্ন স্থানে আরো আড়াইশ বড় বাস পার্কিং করা হয়। প্রতিদিন প্রায় ৭শ বাস কক্সবাজারে পার্কিং হয়। কিন্তু এবারে বছরের বিদায় ও বরণ উপলক্ষে কক্সবাজারে পর্যটকদের বড় বাস পার্কিং করা হয় মাত্র ৫০ টির মতো। এ থেকে বুঝা যায় অন্যান্য ছুটির সময়ের তুলনায় এবার পর্যটক আসেনি বললেই চলে।
তিনি বলেন, এতে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে পর্যটক ব্যবসায়ীরা। মূলত থার্টি ফাস্ট নাইটকে উপলক্ষ্য করে পার্কিং ইজারা নেয়া হয়। এতে করে এবার কাঙ্খিত প্রাপ্তি হয়নি। মূলত পর্যটক নারী ধর্ষণ ও ডাল ভাতের দাম বেশি নেয়ার ঘটনা ভাইরাল হওয়ার কারণে এবার কক্সবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে পর্যটকরা।
কক্সবাজারে পর্যটকদের স্বাগত জানিয়ে জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, কক্সবাজার শুধু দেশের নয় পৃথিবীর একটি আকর্ষণীয় পর্যটন জোন। তাই বিদেশি বেশ কিছু পর্যটক এসেছে এবার। বছরের প্রথম দিনে পর্যটকদের ফুল দিয়ে বরণ করা হয়। এ জন্য স্ব স্ব হোটেল পর্যটকদের ফুল দিয়ে বরণ করেন।
তিনি বলেন, সম্প্রতি কক্সবাজারকে নিয়ে প্রচারণায় কিছুটা নেতিবাচ প্রভাব পড়লেও পর্যটকদের সেবার মান বাড়াতে এবং সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে একাধিক বৈঠকে প্রয়োজনী সিদ্ধান্ত ও প্রস্তুতি নেয়া হয়। শুধু থার্টি ফাস্ট নাইট বা বর্ষবরণ নয় ভরা পর্যটন মৌসুমে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
মনিটরিং কমিটি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছেন জানিয়ে মামুনুর রশীদ বলেন, সরকারিভাবে জানিয়ে দেয়ার কারণে এবার উন্মুক্ত স্থানে থার্টি ফাস্ট নাইটের কোন আয়োজন করা হয়নি।
আরও পড়ুন: কক্সবাজারে নারী পর্যটককে ‘সংঘবদ্ধ ধর্ষণ’: আরেক আসামি গ্রেপ্তার
ফিরে দেখা ২০২১: আগের মতো এবারও জনমত গঠনে ব্যর্থ বিএনপি
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিগত কয়েক বছরের তুলনায় ২০২১ সালে বিএনপি জনগণের মাঝে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা তৈরির বেশ ভালো প্রচেষ্টা চালালেও ২০২৩ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দৃশ্যপটে বড় কোনও প্রভাব ফেলার মতো কিছু করতে পারেনি।
বিশ্লেষকদের মতে, খেলার ধরন যেমন পাল্টেছে, বিএনপিকেও তেমনি পরিকল্পনার ক্ষেত্রে কৌশলী হতে হবে।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর আন্দোলন ছাড়াও, বিএনপির উচিত এখন এমন কিছু করা যাতে জনগণের মাঝে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। জনগণ একটি কঠিন আন্দোলন দেখতে চায়। বিএনপির এ বিষয়ে দৃষ্টি দেয়া উচিত।
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক আলী রীয়াজের মতে, বিএনপির উচিত প্রথমে নিজেদের দল গোছানো, এরপর ভবিষ্যতের জন্য কৌশল নির্ধারণ করা।
২০২১ সালে কোনো অর্জন নেই
২০২১ সালের প্রথম দিনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, তারা দেশের জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে পুরোপুরি মুক্ত করে দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের নতুন শপথ নিয়েছে। কিন্তু দলটি তাদের অঙ্গীকার রক্ষায় তেমন কিছু করতে পারেনি।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসাসহ অন্য আরও বেশ কিছু দাবিতে বিএনপি র্যালি, মানববন্ধনসহ অনেকগুলো কর্মসূচি পালন করেছে।
কক্সবাজারে ‘থার্টি ফাস্ট নাইট’: নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ৮০ ভাগ রুম বুকিং
২০২২ সালকে স্বাগত জানাতে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে উন্মুক্ত স্থানে অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি নেই। করোনা মহামারির কারণে ৩১ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’ কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অত্যন্ত সীমিত পরিসরে আয়োজন করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তারপরও দেশের বিভিন্ন স্থানের লোকজন কক্সবাজারে ২০২১ সালের শেষ সূর্যাস্তকে বিদায় ও রাতে বিভিন্ন হোটেলের ইনডোরে বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে এবং বিশাল সমুদ্র সৈকতে ঘুরে বেড়িয়ে ইংরেজি নতুন বছর ২০২২ সালকে বরণ করতে কক্সবাজারে ছুটে আসবেন।
নতুন বছর বরণকে কেন্দ্র করে আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। একইভাবে জেলা প্রশাসন বিশেষ মনিটরিং সেল গঠন করেছেন। শৃঙ্খলা রক্ষায় নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মানা ও পর্যটকদের নিরাপত্তায় কয়েক স্তরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লোনা জলে গা ভাসানো আর বালুকা বেলায় দাঁড়িয়ে নতুন বছরের নতুন সূর্যের রোদে আলোকিত হয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে লাখো পর্যটকের সমাগম ঘটতে পারে এমন আশা কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদারের।
আরও পড়ুন: চাঁদার ৫০ হাজার টাকা না পেয়ে কক্সবাজারে পর্যটককে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ
তিনি জানান, এবারে থার্টি ফাস্ট নাইট উপলক্ষে এ পর্যন্ত ৭০ থেকে ৮০ ভাগ রুম বুকিং হয়েছে। সৈকতে উন্মুক্ত স্থানে অনুষ্ঠান আয়োজনে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকায় কোন আয়োজন হচ্ছে না। তাই এবার কক্সবাজারে পর্যটক আগমন আশানুরূপ হবে না।
আবুল কাশেম জানান, নতুন বছর ভালোভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে হোটেল মোটেল গেস্ট হাউজ এবার একটি বিশেষ ছাড় দিচ্ছে। তা হচ্ছে রুমে দুজনের জায়গায় তিন জন, তিন জনের জায়গায় চার জন এভাবে প্রতিটি রুমে অতিরিক্ত পর্যটক থাকার ব্যবস্থা করা হবে। এ জন্য অতিরিক্ত কোন টাকা নেয়া হবে না। নিয়ন্ত্রিত মূল্যে সব রুম বুকিং দেয়া হচ্ছে।
দেশে ওমিক্রনের কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের
করোনার ডেল্টা ধরনের স্থলে ভাইরাসটির নতুন ধরন ওমিক্রন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, বাংলাদেশেও করোনার এ প্রাণঘাতী ধরনের নতুন ঢেউ নিশ্চিতভাবে দেখা দেবে।
তারা আশঙ্কা করছেন, মানুষের মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার চরম অনীহার মধ্যে যদি করোনার নতুন এ ধরন মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে টিকা না নেয়া আট কোটি মানুষের ওপর এটি চরম আঘাত হানতে পারে বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের ওপর।
ওমিক্রন ডেল্টার চেয়ে তিন গুণ বেশি সংক্রমক। এ জন্য বিশ্লেষকরা সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন, জনগণকে করোনার সব স্বাস্থ্যবিধি মানাতে প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে জোরদার করা এবং পাশাপাশি বিমান ও স্থল বন্দরের মাধ্যমে দেশে আসা যাত্রীদের সঠিকভাবে স্ক্রিনিং করা ও তাদের কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা।
তারা মনে করেন, দ্রুত সংক্রমক করোনার এ ধরনের বিস্তার রোধ করতে ওমিক্রন-আক্রান্ত দেশগুলো থেকে আসা সব যাত্রীদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা উচিত।
আরও পড়ুন: অস্ট্রেলিয়ায় ওমিক্রনে প্রথম রোগীর মৃত্যু
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুশতাক হোসেন ও গণবিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. বিজন কুমার শীল ইউএনবির সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন।