বিশেষ সংবাদ
মশার উপদ্রবে অতিষ্ট ঢাকা দক্ষিণ সিটির বাসিন্দারা
মহামারি করোনা ভাইরাসের পর আরেক বড় সমস্যার সঙ্গে লড়াই করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটির (ডিএনসিসি)বাসিন্দারা। মশার উপদ্রবে অতিষ্ট তারা। ডিএনসিসি মশা নিয়ন্ত্রণে অভিযানের কথা দাবি করলেও মশার যন্ত্রণা থেকে রেহাই মিলছে না তাদের।
মিরপুর-৬ এলাকায় বাসিন্দা রেজাউল করিম বলেন, মশার ব্যাপক উপদ্রব আমাদেরকে হতাশ করেছে। কারণ করোনা মহামারির মধ্যেই এই সমস্যার মোকাবিলা করতে হচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার জন্য লড়াই করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, সাধারণত গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে বন্যার পানির সঙ্গে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে মশার সংখ্যা বেড়ে যায়। জমে থাকা বৃষ্টির পানি মশার নিখুঁত প্রজনন ক্ষেত্র।
কিন্তু ডিএনসিসির গৃহীত পদক্ষেপগুলো অপ্রতুল বলে জানা গেছে। ডিসেম্বরের ঠাণ্ডা আবহাওয়ায়ও মশার উপদ্রব থেকে নগরবাসী রেহাই পাচ্ছেন না।
ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ অবশ্য দাবি করছে,পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাই তারা নিয়েছে।
মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করতে না পারার কারণেই মূলত ডিএনসিসির আওতাধীন কয়েকটি এলাকায় মশা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। মশারি, কয়েল, ইলেকট্রিক ব্যাট এবং মশানাশক স্প্রে করেও এই অবস্থা থেকে প্রতিকার মিলছে না বলে অভিযোগ নগরবাসীর।
দীর্ঘ বর্ষার কারণে বিগত বছরের তুলনায় এ বছর মশার উপদ্রব আরও বেশি হয়েছে।
নগরবাসী জানায়, নগরীর বাসা-বাড়ি, অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কর্মস্থল এমনকি চলন্ত যানবাহনসহ সর্বত্রই মশা।
মশা নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসির বরাদ্দ
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন মশা নিয়ন্ত্রণে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। ডিএনসিসির বাজেট অনুসারে, এ সমস্যা মোকাবিলার জন্য ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ১১০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
বরাদ্দের মধ্যে কীটনাশক সংগ্রহের জন্য ৪৫ কোটি টাকা, আগাছা পরিষ্কারের জন্য তিন দশমিক ৫০ কোটি টাকা, মশা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি বাস্তবায়নে তিন কোটি টাকা, মশা নিয়ন্ত্রণ অভিযানে ডিএনসিসির অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগের জন্য ২৭ কোটি টাকা এবং চিরুনি অভিযানের জন্য চার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া মশা নিয়ন্ত্রণ সরঞ্জাম সংগ্রহের জন্য আরও ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
ক্রমবর্ধমান অভিযোগ
দক্ষিণ সিটির মালিবাগ, রামপুরা, বনশ্রী, মেরাদিয়া, গোড়ান, খিলগাঁও, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, ধানমন্ডি, পুরান ঢাকা, ফকিরাপুল, আরামবাগ, পল্টন, মতিঝিল, কমলাপুর, মানিকনগর, বাসাবো, মুগদা, খিলগাঁও, ধোলাইখাল, কুড়িল, মীর হাজীরবাগ,শ্যামপুর, কামরাঙ্গীরচর, সূত্রাপুর, মোহাম্মদপুর,হাজারীবাগে মশার উপদ্রব বেশি।
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বসবাসকারী আকবর আলী বলেন, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা হিসেবে চমৎকার হলেও মশার সমস্যায় অনেকেই সেখানে থাকতে চান না। এখানে থাকতে হলে আপনাকে সন্ধ্যায় মশারির নীচে যেতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বসুন্ধরা এলাকায় মশার উপদ্রব রোধে ডিএনসিসির কোনো অভিযান বা কর্মসূচি আমার চোখে পড়েনি।
ভাটারা এলাকার রুহুল আমিন ইউএনবিকে বলেন, মশার আতঙ্কে আমরা খুবই আতঙ্কিত। মশা যেনো শহর দখল করে নিয়েছে। রাস্তায় স্পে করা ছাড়া মশা নিয়ন্ত্রণে নগর কর্তৃপক্ষের আর কোনো কার্যক্রম দেখা যায় না।
আরও পড়ুন: ‘মশার কোন বর্ডার নেই, সচেতনতার বিকল্প নেই’
বাড্ডার বাসিন্দা আবদুল্লাহ আল মেহেদী বলেন, এ এলাকায় মশার উপদ্রব একটি সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও আমরা মশার কামড় এড়াতে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছি, তা সাময়িক হলেও, মশার উপদ্রব আবার দেখা যেতে পারে।
শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা ফারুক রহমান বলেন, সিটি করপোরেশনের উচিত সারা বছরই মশা নিয়ন্ত্রণ অভিযান চালানো। মাঝে মাঝে অভিযান পরিচালনা কোনভাবেই যথেষ্ট নয়। বাস্তবতা হলো, সিটি করপোরেশন এই সমস্যা রোধে কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ডায়রিয়ার প্রকোপ, বাড়ছে শিশু রোগীর চাপ
চাঁপাইনবাবগঞ্জে গত কয়েকদিন ধরে শিশুদের ডায়রিয়া রোগের প্রকোপ বেড়েছে। রোটা ভাইরাসের প্রভাবে শীতের হিমেল হাওয়ার কারণে ডায়রিয়া বাড়ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তাই অভিভাবকদের বাড়তি সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।
জানা গেছে, বেডের তুলনায় সাত গুণ রোগী হওয়ায় হাসপাতালের বারান্দায় রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে শীতকালীন রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন অন্তত ৬০ শিশু হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। শীতের তীব্রতা ও ঠান্ডা বাতাস থেকে রক্ষা পেতে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়ে বারান্দার চারদিকে কাপড় দিয়ে ঘিরে দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা শিশুর স্বজনরা ওষুধ না পাওয়ার অভিযোগ করছেন। তবে পর্যাপ্ত পরিমাণে ওষুধ ও চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
আরও পড়ুন: গাজীপুরে ডায়রিয়া আক্রান্ত ৩ শতাধিক রোগী হাসপাতালে
সদর উপজেলার মহারাজপুর গ্রামের তাসলিমা বেগম আড়াই বছরের নাতনী তাইয়েবাকে নিয়ে দুইদিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তিনি বলেন, ওয়ার্ডের ভেতরে তো দূরের কথা বারান্দাতেই জায়গা পাওয়া যায় না। পাটি বিছিয়ে গত সোমবার (২০ ডিসেম্বর) থেকে চিকিৎসা নিচ্ছি। বাইরে থেকে সবকিছু কিনতে হচ্ছে। ওষুধ, এমনকি খাবার স্যালাইনও কিনতে হচ্ছে বাইরে থেকে।
হলুদের সমারোহে দুলছে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন
খুলনার ডুমুরিয়ায় সরিষা ফুলের হলুদ রাজ্যে মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত ফসলের মাঠ। দিগন্ত জোড়া হলুদের সমারোহ। আর হলুদের এ সমারোহে দুলছে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন।
এ বছর উপজেলার খর্ণিয়া ইউনিয়নের টিপনা, রঘুনাথপুর ইউনিয়নের বিল ডাকাতিয়া ও আটলিয়া ইউনিয়নের বরাতিয়া ও চুকনগর মাঠে সরিষা চাষ করা হয়েছে। আর এসব এলাকা ঘুরে দেখে গেছে এমন দৃশ্য।
কৃষকরা জানান, সরিষা খুবই লাভজনক একটা চাষ। অতি অল্প সময়ে ও অল্প পুঁজিতে কৃষকরা লাভবান হয়। তাই অধিকাংশ কৃষক এখন সরিষা চাষের দিকে ঝুঁকছেন।
আব্দুল হালিম নামে এক কৃষক জানান, দুই বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন তিনি। প্রতি বিঘা জমিতে দেড় হাজার টাকা করে ব্যয় হয়েছে। সরিষার ফুলে খেত ভরে গেছে। ফলন ভালো হলে বিঘা প্রতি পাঁচ থেকে ছয় মণ সরিষা পাওয়া যাবে।
ইউনিয়নের বিল ডাকাতিয়া এলাকার কৃষক আফসার আলী জানান, আমন ধান কাটার পর প্রায় বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। আশা করছেন ফলন বেশ ভালো হবে। এই সরিষা বিক্রি করে বোরো আবাদের তেল ও সার কেনার টাকা জোগাড় হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন: হলুদে ছেয়ে গেছে মাঠ, সরিষার বাম্পার ফলনের আশায় কৃষক
টিপনা গ্রামের কৃষক পরিতোষ রাহা বলেন, সরিষা আবাদে খরচ কম, লাভ বেশি। এক থেকে দুই বার সেচ দিলেই চলে। বাজার দর ভালো হলে এক মণ সরিষা ১৭০০ থেকে ১৮০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যায়।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ডুমুরিয়া উপজেলার খর্ণিয়া ইউনিয়নে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি চাষ হয়েছে। দুটি ফসলের মাঝে কৃষকরা সরিষা চাষের ফলনকে বোনাস হিসেবে দেখছেন। সরিষা কেটে ওই জমিতে আবার বোরো আবাদ করা হয়। এতে কৃষি জমির সর্বাধিক ব্যবহার নিশ্চিত হয়।
এক সময় কৃষকরা আমন ধান কাটার পর জমি পতিত ফেলে রাখলেও সময়ের ব্যবধানে এ চিত্র পাল্টে গেছে। বর্তমানে আমন ধান কাটার পর জমিতে সরিষা লাগানো হচ্ছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, সরিষা মূলত একটি মসলা জাতীয় ফসল। স্বল্প সময়ের মধ্যে কৃষক যেন অধিক ফলন পায় সে জন্য নানাভাবে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। আশা করছি প্রাকৃতিক কোনো বিপর্যয় না ঘটলে এ বছর সরিষার বাম্পার ফলন হবে।
আরও পড়ুন: মাগুরায় সরিষার বাম্পার ফলন
মাশরুম চাষে সফল যশোরের ফয়সাল
২৬ বছরের যুবক ফয়সাল আহম্মেদ। বন্ধুর সঙ্গে আড্ডার ছলেই উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন জাগে। আর এতেই স্বল্প পুঁজি নিয়ে মাশরুম চাষও শুরু করে দেন তিনি। ইউটিউবে চাষের পদ্ধতি ও পরিচর্যার ভিডিও দেখে শুরুতেই সফল হন। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাকে।
ফয়সাল আহম্মেদ যশোরের বাঘারপাড়ার দরাজহাট গ্রামের হাজী হায়দার আলীর ছেলে। তিনি ছাতিয়ানতলা দাখিল মাদরাসায় ইমামতি করেন।
ফয়সাল জানান, নিজের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও পালন করা একটি ছাগল বিক্রি করে ৩০ হাজার টাকার পুঁজি নিয়ে গত বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি বাড়ির আঙিনায় মাশরুম চাষ শুরু করেন। মাগুরার ড্রিম মাশরুম সেন্টার থেকে ৩০০ পিস স্পন (বীজ) এনে প্রথমে এক হাজার বেডে চাষ করেন। আর প্রথম চালানেই ২০ হাজার টাকা মতো লাভ হয় তার।
তিনি জানান, চাষের শুরু থেকেই ইউটিউব দেখেন তিনি। এর কয়েক মাস পরে মাগুরায় ড্রিম মাশরুম সেন্টার থেকে তিনদিনের প্রশিক্ষণ নিয়ে মাশরুম চাষের পাশাপাশি বীজ উৎপাদনও শুরু করেন। আগ্রহ আর ইচ্ছা শক্তির বলে মাশরুম চাষের এক বছরের মধ্যেই সফলতা অর্জন করেন তিনি।
আরও পড়ুন: তরমুজ চাষে সফল হওয়ার প্রত্যাশা পাঁচ তরুণের
বর্তমানে দুটি ঘর করে দেড় হাজার বেডে মাশরুম চাষ করেছেন। এ থেকে তিনি দেড় হাজার থেকে দুই হাজার কেজির মতো মাশরুম উত্তোলনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছেন। একই সঙ্গে বসতঘরের একটি কক্ষে বীজ উৎপাদনের কাজ করছেন। ওয়েস্টার, প্রিয় টু ও ডাব্লিউ এস জাতের বীজ ব্যবহার করছেন তিনি। এতে সব মিলিয়ে প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ হয়েছে তার।
ঢাবি গ্রন্থাগার: পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকায় ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা
গ্রন্থাগার বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। কেননা শিক্ষক ও ছাত্রদের সমস্ত একাডেমিক প্রয়োজন মেটায় এ গ্রন্থাগার৷ কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) লাইব্রেরি ‘অবশ্যই’ যা হওয়া উচিত তা হয়ে উঠে নি। দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সেরা বলে বিবেচিত হওয়া ঢাবি প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে তাল মিলিয়ে গ্রন্থাগার আধুনিকায়নে তেমন ভূমিকা রাখতে পারে নি।
অনেকগুলো সমস্যা অমিমাংসিত রেখে চলতি বছরে বিশ্ববিদ্যালয়টি তার ১০০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন করেছে। এরূপ অনেকগুলো অমীমাংসিত সমস্যার একটি হলো গ্রন্থাগার সমস্যা।
লাইব্রেরিতে পড়াশুনার জন্য জায়গা পেতে ছাত্রদের প্রতিদিনই যেনো এক যুদ্ধে নামতে হয়। শিক্ষার্থীদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে লাইব্রেরি সম্প্রসারণের জন্য গত ১১ বছরে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন: করোনায় ঢাবি অধ্যাপকের মৃত্যু
বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, এটি বেশ আশ্চর্যজনক যে ১৫ বছরের ‘মাস্টার প্ল্যান’ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের গ্রন্থাগারের সুবিধা সম্প্রসারণের আলাদা কোন পরিকল্পনা নেই। মাস্টার প্ল্যানে স্পষ্টতই গ্রন্থাগার সুবিধা সম্প্রসারণের একটি সুযোগ রয়েছে। তবে এর বাস্তবায়ন দেখার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রায় ১৫ বছর অপেক্ষা করতে হবে।
ইউএনবির সঙ্গে আলাপকালে কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি বছর শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও সে অনুযায়ী গ্রন্থাগারগুলোর সম্প্রসারণ না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের লাইব্রেরিতে প্রবেশে অনীহা তৈরি হচ্ছে।
সংকটের মধ্যেও ২০২১ সালে সরগরম ঢালিউড
ঢালিউডে সিনেমার খরা ছিল বেশ কয়েকটি বছর। তবে ২০১৮ ও ২০১৯ সালের দিকে নতুন উদ্যোমে আবারও ঘুরে দাঁড়ায় ঢালিউড। সিনেমা মুক্তির সংখ্যা কম থাকলেও নির্মাণের সংখ্যা বেড়েছিল ওই বছরগুলোতে। পুরোনো তারকাদের সঙ্গে নতুন অনেকেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছিলেন। শুধু তাই নয়, ঢাকাই সিনেমায় উন্নত প্রযুক্তির ছোঁয়া লাগতে শুরু করে সেসময়। বলা যায়, ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন বীজ বোনা শুরু হয়, যার ফলের জন্য সংশ্লিষ্ট সবার অপেক্ষা ছিল ২০২০ সাল।
২০২০ সালের বছরের শুরুটা ভালোই ছিল। কিন্তু বাধ সাধে মহামারি করোনাভাইরাস। কয়েকটি বড় বাজেটের সিনেমা মুক্তির পরও শেষ পর্যন্ত নামিয়ে নিতে হয়। এর মধ্যে অন্যতম ছিল কাজী হায়াৎ পরিচালিত শাকিব খান অভিনীত প্রথম সিনেমা ‘বীর’ । নির্মাণের ঘোষণার পর থেকেই তুমুল আলোচনায় ছিল এই সিনেমাটি। কিন্তু বিগ বাজেটের এই সিনেমা মুক্তির কয়েক সপ্তাহ পরেই আসে লকডাউনের ঘোষণা।
শুধু সিনেমা নয়, লকডাউনের কারণে সেসময় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল দেশের সকল সাংস্কৃতিক কার্যক্রম। এমন অবস্থার পর গত বছরটা খুব একটা ভালো না গেলেও ২০২১ এর শুরুর দিকে নতুন সম্ভাবনা দেখে ঢালিউড। কিন্তু আবারও মহামারির হানা। তবে এবারের চিত্রটা পাল্টে দেয় ৩ জুন কান চলচ্চিত্র উৎসবের অফিশিয়াল সিলেকশনে বাংলাদেশের সিনেমা ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ নির্বাচিত হওয়ার পর।
আরও পড়ুন: মেহজাবীন-রাজীবের প্রেমের গুঞ্জন সত্যি হলো!
বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক এই চলচ্চিত্র উৎসবে ঢালিউডের অংশগ্রহণ ইন্ডাস্ট্রিকে নতুন এক মোড়ে নিয়ে আসে। দেশের গণমাধ্যম থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক অনেক গণমাধ্যমের চোখ তখন ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ এর দিকে। সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ। নাম ভূমিকায় অভিনয় করে দীর্ঘদিন পর আলোচনায় এসেছেন অভিনেত্রী আজমেরি হক বাঁধন।
‘রেহেনা মরিয়ম নূর’ নিয়ে আলোচনা চলতে থাকলেও তখন পর্যন্ত দেশের অন্য সিনেমাগুলোর জন্য সময়টা ছিল প্রেক্ষাগৃহ খোলার অপেক্ষা। যার অবসান হয় অক্টোবরে। এতদিন পর হল খোলার পর সংশ্লিষ্ট সবার মুখে হাসি ফুটেছিল। একই মাসে মুক্তি পায় আলোচিত তিন সিনেমা। সেগুলো হলো- পদ্মপূরাণ, চন্দ্রাবতীর কথা ও ঢাকা ড্রিম।
চলতি বছরের সিনেমার ব্যবসা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন স্টার সিনেপ্লেক্সের জ্যৈষ্ঠ ব্যবস্থাপক মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘আমরা তো গত বছর থেকেই খুব ভালো অবস্থায় নেই। তবে এই বছর অনেকটাই ভালো অবস্থার মধ্য দিয়ে কেটেছে। দর্শকরাও হলমুখি হয়েছে। যে কয়টি সিনেমা আমাদের সিনেপ্লেক্সে চলেছে সেগুলো স্বাভাবিক দর্শক ছিল। আসলে করোনার সঙ্গে গত বছর মোকাবিলার অভিজ্ঞতা ছিল নতুন। তাই হলে আশা নিয়েও বেশিরভাগ দর্শকের মধ্যে দ্বিধা কাজ করেছে। তবে এবারের চিত্রটা ভিন্ন। মাঝে হল বন্ধ থাকার পর যখন আবারও খোলা ঘোষণা এলো, শুরুতেই বেশ কয়েকটি বাংলা সিনেমা মুক্তি পায়। এটি অবশ্যই ইন্ডাস্ট্রির জন্য বেশ ইতিবাচক দিক। আর সবগুলো সিনেমাই ছিল আলোচিত। ব্যবসায়িক জায়গা থেকে আমরা সন্তুষ্ট। আগামী বছর আরও কয়েকটি বড় বাজেটের সিনেমা মুক্তির অপেক্ষায় আছে।’
আরও পড়ুন: স্টার সিনেপ্লেক্সে মুক্তি পেল ‘স্পাইডার ম্যান: নো ওয়ে হোম’
নভেম্বর মাসও ছিল ঢালিউডের আলোচনার মাস। যার কেন্দ্রবিন্দু ‘রেহানা মরিয়ম নূর’। কান চলচ্চিত্র উৎসব জয় করা আসা সিনেমাটি মুক্তি পায় ১২ নভেম্বর। যা এদেশের দর্শকদেরও হৃদয় ছুঁয়ে যায়। এই সিনেমার মধ্য দিয়ে প্রথমবার প্রকাশ্যে এসেছিলেন পরিচালক আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বাঁধনসহ তার টিম নিয়ে প্রচারণাও চালিয়েছেন সাদ।
৩ ডিসেম্বর মুক্তি পায় এ বছরের বিগ বাজেটের সিনেমা ‘মিশন এক্সট্রিম’। দেশের বাইরেও একই দিনে মুক্তি দেয়া হয় সিনেমাটি। সাড়াও মিলেছে বেশ ভালো। সানি সানোয়ার পরিচালিত এই সিনেমা দিয়ে দীর্ঘদিন পর পর্দায় দেখা দিলেন আরিফিন শুভ। এবার তার সঙ্গে জুটি বাঁধেন সাবেক ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী।
এত আশার মাঝে খানিকটা হতাশার কথা ব্যক্ত করলেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ও মধুমিতা হলের কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ।
তিনি বলেন, ‘সিনেমার সোনালী সময় আমরা দেখে এসেছি। আর এখন কী অবস্থা দেখছি! সারা দেশে ভালো মানের হলের সংখ্যা একশও নেই। যার কারণ ভালো মানের সিনেমার অভাব। এখন সেগুলো দিয়ে ব্যবসা হয় না। আমরা বলেছিলাম এদেশে বিদেশি সিনেমার বাজার খুলে দেয়া হোক। আমরা চাই কলকাতার ও হিন্দি সিনেমার বাজার এখানে গড়ে উঠুক। এতে যেমন ব্যবসা হবে তেমনি প্রতিযোগিতাও বাড়বে। এখন সাফটা (সাউথ এশিয়ান ফ্রি ট্রেড এরিয়া) চুক্তির মাধ্যমে এই সুবিধা পাওয়া গেলেও সেটিতে উপকার হচ্ছে না। একটি হিন্দি সিনেমা ভারতে যেদিন মুক্তি দেয়া হবে সেদিন আমাদের দেশেও দিতে হবে। তাহলে আসল ব্যবসাটা হবে।’
সরকার থেকে হল সংস্কারের জন্য পদক্ষেপ নেয়া হলেও বাড়ছে না হলের সংখ্যা। এই প্রসঙ্গে ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ আরও বলেন, ‘হল সংস্কারের জন্য লোন বরাদ্দ হয়েছে এটি খুবই আনন্দের খবর আমাদের জন্য। এর জন্য সরকারকেও সাধুবাদ জানাই। কিন্তু সমস্যা হলো ব্যবসা করার মতো সিনেমাই তো নির্মাণ হচ্ছে না। তাহলে একজন হল মালিক লোন নিয়ে সেটা ফেরত দেবেন কীভাবে! মাল্টিপ্লেক্সের সময় এখন। বাজারের টিকে থাকতে হলে সেভাবেই সবাইকে গড়তে হবে। কিন্তু এজন্য প্রয়োজন ব্যবসায়িক উন্নতি। এর জন্য দেশের সিনেমারও উন্নতি প্রয়োজন।’
অন্যদিকে দেশের সিনেমার উন্নতি বা সিনেমা হলের সংকট নিয়ে যে সমস্যা, সেটি দীর্ঘদিন থাকবে না বলে মনে করেন এ বছরেরর আলোচিত সিনেমা ‘পদ্মপুরাণ’-এর পরিচালক রাশিদ পলাশ।
আরও পড়ুন: মিস ইউনিভার্স ২০২১: কে এই হারনাজ সান্ধু
তিনি বলেন, ‘দর্শক এখন ভালো পরিবেশে সিনেমা দেখতে অভ্যস্ত হচ্ছেন। সিঙ্গেল স্ক্রিনের হলগুলোর অবস্থা ভালো নয়। সেগুলোর আধুনিকায়ন প্রয়োজন। মাল্টিপ্লেক্সগুলোয় কিন্তু দর্শক আসছে। এখন যেহেতু মাল্টিপ্লেক্সের সংখ্যা কম তাই ব্যবসার অগ্রগতিও কম। কিন্তু আমি আশাবাদী। কারণ এখন মাল্টিপ্লেক্স বাড়ছে। আগামীতে সংখ্যাটা আরও বাড়বে। আমরা নতুন এক সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। যার বীজটা এখন বোনা হচ্ছে। ফল পেতে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।’
এ বছর এখনও দুটি সিনেমার মুক্তি বাকি রয়েছে। যার মধ্যে নির্মাতা রনি ভৌমিকের পরিচালনায় ‘মৃধা বনাম মৃধা’ মুক্তি পাবে ২৪ ডিসেম্বর। যেখানে প্রথমবার জুটি বেঁধেছেন সিয়াম আহমেদ ও নোভা ফিরোজ। এছাড়াও ৩১ ডিসেম্বর মুক্তি পাবে মীর সাব্বির পরিচালিত ‘রাত জাগা ফুল’। সরকারি অনুদানের এই সিনেমায় অভিনয় করেছেন আবু হুরায়রা তানভীর, জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী, মীর সাব্বির প্রমুখ। বছরের শেষ দুটি সিনেমা নিয়েও আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা। এখন অপেক্ষা মুক্তির।
হলুদে ছেয়ে গেছে মাঠ, সরিষার বাম্পার ফলনের আশায় কৃষক
ঠাকুরগাঁওয়ে দিগন্তজুড়ে সরিষা ফুলের সমারোহ। দু’চোখ যেদিকে যায় শুধু হলুদ আর হলুদ। আঁকাবাঁকা রাস্তার দু’পাশে প্রকৃতি যেন সেজেছে আপন মহিমায়। এমন নয়নাভিরাম সরিষা ফুলের দৃশ্য, ফুলের গন্ধ, পাখির কিচিরমিচির শব্দ আর মৌমাছির গুঞ্জন মনকে বিমোহিত করে।
প্রকৃতি যেনো হলুদের দুয়ার উন্মুক্ত করে দিয়েছে ঠাকুরগাঁওয়ের মাঠে মাঠে। খেতের পর খেত সরিষা আর সরিষা। হলদে সাজের সমাহার ইঙ্গিত করছে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা।
রাণীশংকৈল উপজেলার লেহেম্বা, বিরাশি, রাতোর, নন্দুয়ার ,ভরনিয়া , ধর্মগড়ে বিস্তীর্ণ মাঠে এখন সরিষার হলুদ রঙের ফুলের সমারোহ। যেন হলুদ রঙের সুষমা শোভা পাচ্ছে দিকে দিকে। গুনগুন শব্দে মধুলোভী মৌমাছিরা এখন এক ফুল থেকে অন্য ফুলে বসে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। চলতি রবিশস্য মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং সরিষাখেতে রোগবালাই কম হওয়ায় সরিষার বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষক ও কৃষি বিভাগ।
আরও পড়ুন: তরমুজ চাষে সফল হওয়ার প্রত্যাশা পাঁচ তরুণের
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ৫ হাজার কৃষককে বিনামূল্য সরিষা বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। রাণীশংকৈল উপজেলায় বিতরণ করা হয়েছে ১৬০০ জন কৃষককে। এই উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নে এবারই প্রথম একসাথে ৫০ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়।
রাণীশংকৈল উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাদেকুল ইসলাম জানান, গত বছরের চেয়ে এবার বেশি জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। গত মৌসুমে সরিষার অর্জিত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল তিন হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে। কিন্তু চলতি মৌসুমে উপজেলায় এবার চার হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে পাচঁ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ চলতি মৌসুমে গত বছরের চেয়ে ১৭০ হেক্টর জমিতে বেশি সরিষা চাষ হয়েছে।
আরও পড়ুন: বিশ্বনাথে মাঠে মাঠে শীতকালীন সবজি
তরমুজ চাষে সফল হওয়ার প্রত্যাশা পাঁচ তরুণের
কৃষিকে ঘিরেই সন্তুষ্টি পাঁচ তরুণের। পড়াশোনার পাশাপাশি কৃষি নিয়েই মেতেছেন তারা। দিনের পর দিন যত্ন করে লালন করছেন প্রিয় ফসল। প্রত্যাশা সফল হওয়ার।
সুনামগঞ্জের ছাতকের কালারুকা ইউনিয়নের গোবিন্দগঞ্জ-ছাতক সড়কের তাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় সোয়া একর অনাবাদি জমিতে পাঁচ জাতের উচ্চ ফলনশীল জাতের তরমুজ চাষ করেছেন এ পাঁচ তরুণ।
এ তরমুজ চাষের মূল উদ্যোক্তা গড়গাঁও গ্রামের আশরাফুর রহমান। এ কাজে তার সঙ্গে যুক্ত করেন স্থানীয় রামপুর গ্রামের আব্দুর রহমান, শেখকান্দি গ্রামের নজরুল ইসলাম, রায়সন্তোষপুর গ্রামের নাঈম আহমদ ও একই গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমান সাকিবকে। তারা পাঁচজনই পড়াশোনার পাশাশাশি এ কাজ করছেন।
জানা যায়, তারা একই মাঠে পাঁচ রঙের তরমুজ চাষাবাদ করেছেন। এতে রয়েছে গোন্ডেন ত্রুাউন (গোল), বাইরে হলুদ ভেতর লাল; ডায়না (লম্বা) ইয়েলো হানি, বাইরে কালো ভেতর হলুদ; থাই সুইট ব্লাক ২, বাইরে কালো ভেতর লাল, বাংলালিং নামে পরিচিত বাইরে ডোরাকাটা ভেতর লাল, কালো, হলুদ এবং সবুজ ডোরাকাটাসহ পাঁচ রঙের তরমুজ।
গত অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে বীজ রোপন করেন তারা। উন্নত জাতের এসব তরমুজের চাষাবাদে খরচ হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা। বাগানের তরমুজ বিক্রি করে প্রায় ছয় লাখ টাকা আয় হবে বলে আশা করছেন উদ্যোক্তা পাঁচ যুবক।
আরও পড়ুন: পান চাষে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন অভয়নগরের চাষিরা!
দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা: শীতেও ভবদহ অঞ্চলে ভোগান্তি
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা-যশোর বিস্তৃত অঞ্চলের ভবদহের ৫২টি গ্রাম ২০ বছর ধরে দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতায় ডুবে আছে। বর্ষাকাল বিদায় নিয়ে শীতের আগমন ঘটলেও ভবদহ এলাকা এখনও জলাবদ্ধ। ফলে এসব এলাকার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে চরম ভোগান্তিতে রয়েছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ও বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বিএডিসি) এই বিশাল এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে সেচ প্রকল্প গ্রহণ করেছে। তবে এর সফলতা নিয়ে সন্দিহান বাসিন্দারা।
ভবদহের দুঃখ
১৯৬১-৬২ সালে খুলনার ডুমুরিয়া, ফুলতলা ও যশোর জেলার অভয়নগর, মণিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হরি নদীর উপর ২১ ভেন্টের স্লুইস গেট নির্মিত হয়েছিল। এর কিছু দুরে ৯ ভেন্টের আরেকটি স্লুইস গেট স্থাপন করা হয়।
আরও পড়ুন: চাঁদপুর-সিলেট আন্তনগর ট্রেন এখনও স্বপ্ন!
সে সময় এ অঞ্চলে স্লুইস গেট নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিল ভবদহ এলাকার অর্ধশত বিলের ফসলকে বন্যার পানি ও সাগরের নোনা পানি থেকে রক্ষা করা। কিন্তু মাত্র ২০ বছর পরে সেটি এখানকার মানুষের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। হরি নদী ভরাট হতে থাকে এবং স্লুইস গেটগুলো ধীরে ধীরে অকার্যকর হয়ে পড়ে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি ‘ভবদহের দুঃখ’ বলে পরিচিতি পেয়েছে।
হাটগাছা গ্রামের অনামিকা বিশ্বাস জানান, ঘরের চারপাশে পানি কিন্তু খাওয়ার উপযোগী নেই একটুও। গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি ঘরেই থাকে। ঘরের নিচ দিয়ে মাছ চলে বেড়ায় কিন্তু তা ধরে খাওয়ার কোন উপায় নেই। প্রভাবশালীরা সেখানে মাছ চাষ করছে।
সেচ পাম্প ‘লোকসান প্রকল্প’
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভবদহের স্থায়ী জলাবদ্ধতা নিরসনে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ও বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বিএডিসি) যৌথ উদ্যোগে সেচ প্রকল্প গ্রহণ করেছে। কিন্তু প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেও ভবদহ স্লুইস গেট দিয়ে বাসিন্দাদেন জন্য কোনো সুফল বয়ে আনতে পারেনি।
ভবদহ সংলগ্ন বিলে ফসল ফলাতে ও পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ কমাতে এ বছরের শুরুতে সেচ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে স্থানীয়রা এই পদ্ধতিকে সাগরে ঢিল ফেলার সঙ্গে তুলনা করেছেন।
এর আগে ভবদহর জলাবদ্ধতা নিরসনে ২০১২ সালে সরকার ৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। কিন্তু সেই প্রকল্পও কোন কাজে আসেনি। বছর দুয়েক আগে, পানি উন্নয়ন বোর্ড ৮০০ কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষে একটি প্রকল্প জমা দেয় যা বর্তমানে পরিকল্পনা কমিশনে রয়েছে। এছাড়া, বর্তমানে সেচ পাম্পের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশনের জন্য ৪৩ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
বিএডিসির যশোরাঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (সেচ বিভাগ) আব্দুল্লাহ আল রশিদ জানান, এ অঞ্চলের বিলে ফসল ফলাতে ও মানুষের দুর্ভোগ কমাতে পাউবোকে বিএডিসি ৩০ এইচপি (হর্সপাওয়ার) পাওয়ারের ২০টি পাম্প সরবরাহ করে। যা রক্ষণাবেক্ষণে বিএডিসির ৮ জন শ্রমিকসহ একজন উপ-প্রকৌশলী সেখানে সার্বক্ষণিক দেখভাল করে থাকেন। কিন্তু লিকেজ দৃষ্টিগোচর হওয়ায় তা পাউবোকে অবহিত করা হলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
আরও পড়ুন: দেশি প্রকৌশলীদের চেষ্টায় সচল গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের পাম্প
পাউবো যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম বলেন, বিএডিসির কাছ থেকে ২০টি পাম্প পাওয়া গেলেও চাহিদার তুলনায় কম। তাই আরও বড় পাম্প নিতে ৪৩ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে ডিপিপি জমা দেয়া হয়েছে। এছাড়া ২ বছর আগে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে একটি প্রকল্প সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পড়ে আছে। সেটিরও অনুমোদন মেলেনি।
ভবদহ অঞ্চলের বিল কেদারিয়ার বাসিন্দা সত্য বিশ্বাস জানান, আশির দশকে ভবদহতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। আজ ৪০ বছর পরও এই জলাবদ্ধতা দিন দিন প্রসারিত হচ্ছে। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে শুধু প্রভাবশালীরা লাভবান হচ্ছে কারণ তারা সরকারি বরাদ্দ আনছে আর লুটপাট করছে।
ড্রেজিংয়ের বিকল্প নেই
নদীর তলদেশ পলিতে ভরে যাওয়ায় বিলের পানি কোথাও যেতে পারছে না। ফলে এসব বিলের পানি নামতে না পারায় মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ধোঁয়া-ওঠা গরম গরম পিঠা খাওয়ার ধুম পড়েছে খুলনায়
স্থানীয় খুলনা-৫ আসনের (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিএডিসির সেচ প্রকল্প কতটা সফল এ নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ভবদহের জলাবদ্ধতা নিরসনে হরি নদী খননসহ এর শাখা প্রশাখা খননের কোন বিকল্প নেই। ভবদহের জল হরি নদী দিয়ে ভদ্রা, ঘ্যাংরাইল হয়ে শিপসা নদীতে পড়ে সাগরে মিশে। তাই ভবদহের মধ্যে খালের মুখের বাঁধ অপসারণ করতে হবে।
চাঁদপুর-সিলেট আন্তনগর ট্রেন এখনও স্বপ্ন!
চাঁদপুর ও সিলেট রুটে আন্তনগর ট্রেন সার্ভিস দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি।
এ অঞ্চলের শত শত মানুষ চাঁদপুর থেকে হযরত শাহজালাল ও শাহ পরানের পবিত্র মাজার জিয়ারত করতে যান। এছাড়াও সিলেটের মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শিক্ষার্থী রয়েছে। বিপুল সংখ্যক পর্যটকও এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে উত্তর-পূর্ব জেলায় যান। তাই এই রুটে চলাচলে ঝুঁকিপূর্ণ ও সময়সাপেক্ষ হওয়ায় দিন দিন ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
আরও পড়ুন: দেশি প্রকৌশলীদের চেষ্টায় সচল গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের পাম্প
রেলওয়ে কর্মকর্তাদের মতে, ২০০০ সালে চাঁদপুর থেকে লাকসামগামী একটি কমিউটার ট্রেনে সিলেটগামী যাত্রীদের জন্য বেশ কয়েকটি বগি সংযুক্ত ছিল। লাকসাম জংশনে পৌঁছার পর এসব কোচ জালালাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেনের সাথে লিংক করা হতো। এতে করে অনেক আরামে ও সাশ্রয়ী মূল্যে ঝামেলা ছাড়াই সিলেটে ভ্রমণ করতে পারতেন যাত্রীরা।
২০০০ সালে ২০ সেপ্টেম্বর মেঘনা নদীর ভয়াবহ ভাঙনে চাঁদপুর বড় রেল স্টেশনের বেশ কিছু অংশও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। পরে বিলীন হওয়া স্থানটি বালু দিয়ে ভরাট করা হলেও লাকসাম হয়ে সিলেটে ট্রেন চলাচল পুনরায় চালু করেনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ফলে এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও সিলেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, মাজারে ভক্ত ও পর্যটকরা সিলেটে যাতায়াতের সময় নানা অসুবিধার সম্মুখীন হন।
এমনকি চাঁদপুর রেলস্টেশন থেকে সিলেটের টিকিটও দেয়া হয় না বলে জানিয়েছেন স্টেশন মাস্টার শোয়াইবুল সিকদারসহ বেশ কয়েকজন টিটি।
আরও পড়ুন: ধোঁয়া-ওঠা গরম গরম পিঠা খাওয়ার ধুম পড়েছে খুলনায়
তিনি বলেন, চাঁদপুর ও সিলেটের মধ্যে নির্বিঘ্নে যাতায়াতের জন্য আন্তনগর ট্রেন চালু করা খুবই প্রয়োজন। আগের তুলনায় সিলেটগামী যাত্রীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এটা এখন সময়ের দাবি।