��������������� ���������������
খুলনা বিভাগের ৩৬টি আসনে ভোটার এক কোটি ৩৪ লাখ ৪৬ হাজার
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় মোট ভোটারের সংখ্যা এক কোটি ৩৪ লাখ ৪৬ হাজার ৭৮৩জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ৬৭ লাখ ৪৬ হাজার ৪৯১জন এবং নারী ভোটারের সংখ্যা ৬৭ লাখ ২০৫ জন।
মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৪ হাজার ৯৮৪ টি এবং ভোটকক্ষের সংখ্যা ৩০ হাজার ২৫৩টি। খুলনা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবীর এসব তথ্য জানান।
খুলনা বিভাগের মোট ৩৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে দাখিলকৃত মনোনয়নপত্রের সংখ্যা ৩২২টি, যার মধ্যে বৈধ ২২৮টি, বাতিল ৯৪ টি এবং প্রত্যাহার করা হয় ৩৮টি মনোনয়নপত্র। বিভাগের ৩৬টি সংসদীয় আসনের মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ২৩৬ জন।
বিভাগের ১০ জেলার মধ্যে খুলনা জেলার ৬টি সংসদীয় আসনে মোট ভোটারের সংখ্যা ১৯ লাখ ৯৯ হাজার ৮৮২জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ১০ লাখ ৮৪ জন, নারী ভোটারের সংখ্যা ৯ লাখ ৯৯ হাজার ৭৮৪ জন, হিজড়া ভোটারের সংখ্যা ১৪ জন। জেলায় ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৭৯৩টি এবং ভোটকক্ষের সংখ্যা ৪৭২০টি। মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ৩৯ জন।
আরও পড়ুন: খুলনা-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আকরাম হোসেনের গুলি করার হুমকি!
বাগেরহাট জেলার ৪টি সংসদীয় আসনে মোট ভোটারের সংখ্যা ১২ লাখ ৮১ হাজার ১৩৪ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৮৬জন, নারী ভোটারের সংখ্যা ৬ লাখ ৩৭ হাজার ৪০ জন, হিজড়া ভোটারের সংখ্যা ৮ জন। জেলায় ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৪৮৮টি এবং ভোটকক্ষের সংখ্যা ২৭৯৬টি। মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ২৬ জন।
সাতক্ষীরা জেলার ৪টি সংসদীয় আসনে মোট ভোটারের সংখ্যা ১৭ লাখ ৪৬ হাজার ২২৪ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ৮ লাখ ৭৬ হাজার ৯৮৪ জন, নারী ভোটারের সংখ্যা ৮ লাখ ৬৯ হাজার ২২৮জন, হিজড়া ভোটারের সংখ্যা ১২ জন। জেলায় ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৬০২টি এবং ভোটকক্ষের সংখ্যা ৩৭১৮টি। মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ৩০ জন।
যশোর জেলার ৬টি সংসদীয় আসনে মোট ভোটারের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩৯ হাজার ৫৫ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ১১ লাখ ৭৬ হাজার ১০৫জন, নারী ভোটারের সংখ্যা ১১ লাখ ৬২ হাজার ৯৫৩ জন, হিজড়া ভোটারের সংখ্যা ১৫জন। জেলায় ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৮২৫টি এবং ভোটকক্ষের সংখ্যা ৫ হাজার ২১৭টি। মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ৩২জন।
নড়াইল জেলার ২টি সংসদীয় আসনে মোট ভোটারের সংখ্যা ৬ লাখ ৪১ হাজার ১৩২ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ৩ লাখ ২১ হাজার জন, নারী ভোটারের সংখ্যা ৩ লাখ ২০ হাজার ১২৯জন, হিজড়া ভোটারের সংখ্যা ৩ জন। জেলায় ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ২৫৭টি এবং ভোটকক্ষের সংখ্যা ১ হাজার ৪৪১টি। মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ১৪ জন।
মেহেরপুর জেলার ২টি সংসদীয় আসনে মোট ভোটারের সংখ্যা ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৯৬৬ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ২ লাখ ৭৭ হাজার ৪৯জন, নারী ভোটারের সংখ্যা ২ লাখ ৭৮ হাজার ৯১৫জন, হিজড়া ভোটারের সংখ্যা ২জন। জেলায় ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ২০৭টি এবং ভোটকক্ষের সংখ্যা ১ হাজার ২৯৮টি। মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ১৩জন।
আরও পড়ুন: খুলনা-৪ আসন: আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে আ. লীগের প্রার্থীকে আদালতে তলব
ঝিনাইদহ জেলার ৪টি সংসদীয় আসনে মোট ভোটারের সংখ্যা ১৫ লাখ ১ হাজার ৪৮০জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ৭ লাখ ৫৪ হাজার ৬৭০ জন, নারী ভোটারের সংখ্যা ৭ লাখ ৪৬ হাজার ৭৯৮ জন, হিজড়া ভোটারের সংখ্যা ১২জন, জেলায় ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৫৮৫টি এবং ভোটকক্ষের সংখ্যা ৩ হাজার ৪২১টি। মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ২৬জন।
কুষ্টিয়া জেলার ৪টি সংসদীয় আসনে মোট ভোটারের সংখ্যা ১৬ লাখ ৪৩ হাজার ৯১২ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ৮ লাখ ২২ হাজার ৫১৬জন, নারী ভোটারের সংখ্যা ৮ লাখ ২১ হাজার ৩৮৮জন, হিজড়া ভোটারের সংখ্যা ৮জন। জেলায় ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৫৭৮ টি এবং ভোটকক্ষের সংখ্যা ৩৮২৩টি। মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ৩১ জন।
চুয়াডাঙ্গা জেলার ২টি সংসদীয় আসনে মোট ভোটারের সংখ্যা ৯ লাখ ৫০ হাজার ৭৮ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৭৯২জন, নারী ভোটারের সংখ্যা ৪ লাখ ৭৪ হাজার ২৭৮ জন, হিজড়া ভোটারের সংখ্যা ৮জন। জেলায় ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৩৫৪ টি এবং ভোটকক্ষের সংখ্যা ২ হাজার ২২২টি। মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ১৫ জন।
মাগুরা জেলার ২টি সংসদীয় আসনে মোট ভোটারের সংখ্যা ৭ লাখ ৮৭ হাজার ৯২০ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ৩ লাখ ৯৮ হাজার ২০৫ জন, নারী ভোটারের সংখ্যা ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৭১০জন, হিজড়া ভোটারের সংখ্যা ৫ জন। জেলায় ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ২৯৫টি এবং ভোটকক্ষের সংখ্যা ১ হাজার ৫৯৭টি। মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ১০ জন।
খুলনা বিভাগের ১০ জেলার ১০ জন রিটার্নিং অফিসার, ৭১ জন সহকারী রিটার্নিং অফিসার, ৪ হাজার ৯৮৪ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ৩০ হাজার ২৫৩ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং ৬০ হাজার ৫০৬ জন পোলিং দায়িত্ব পালন করবেন।
আরও পড়ুন: জমে উঠেছে খুলনা- ৪ আসনের নির্বাচন, হবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই
খুলনায় সরিষার বাম্পার ফলনের প্রত্যাশা
খুলনায় এবার সরিষার বাম্পার ফলনের হাতছানিতে কৃষকের চোখে-মুখে আনন্দের রেখা ফুটেছে। চলতি মওসুমে খুলনায় রেকর্ড পরিমাণ জমিতে উন্নত জাতের সরিষা চাষ করেছেন চাষিরা।
এ মওসুমে ২৮৯ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ বেড়েছে। ৯ উপজেলার পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন মাঠে মাঠে হলুদের সমারোহ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। বেড়ে ওঠা ফসল আর ফুল দেখে অধিক ফলনের স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা।
উন্নত জাতের বীজ ও সার প্রণোদনা পাওয়ার পাশাপাশি গত বছর সরিষা চাষ করে লাভবান হওয়ায় এবার কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছরও প্রত্যেক সরিষা চাষি অধিক মুনাফা লাভ করবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।
আরও পড়ুন: প্লাস্টিক দূষণ সংকট: বুড়িগঙ্গার নিকটবর্তী স্থানীয়দের পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্রকল্প গ্রহণ
খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মওসুমে জেলায় এক হাজার ৯৫৪ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। এর মধ্যে দৌলতপুর মেট্রো এলাকায় ১৪ হেক্টর, লবণচরায় ৭ হেক্টর, রূপসা উপজেলায় ৩০৫ হেক্টর, বটিয়াঘাটা উপজেলায় ২৫০ হেক্টর, দিঘলিয়া উপজেলায় ১২০ হেক্টর, ফুলতলা উপজেলায় ১৮০ হেক্টর, ডুমুরিয়া উপজেলায় ৪২০ হেক্টর, তেরখাদা উপজেলায় ১৬০ হেক্টর, দাকোপ উপজেলায় ২৮ হেক্টর, পাইকগাছা উপজেলায় ২৬০ হেক্টর ও কয়রা উপজেলায় ২১০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে।
গত বছর খুলনায় এক হাজার ৬৬৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়।
এদিকে সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ করতে জেলার এক হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদের জন্য ১৩ হাজার ৬০০ জন চাষিকে বীজ ও সার দিয়ে সহায়তা করেছে কৃষি বিভাগ। দৌলতপুর মেট্রো এলাকার ৫০ জন, লবণচরা মেট্রোর ৫০ জন, রূপসা উপজেলার দুই হাজার জন, বটিয়াঘাটার এক হাজার ৮০০ জন, দিঘলিয়ার এক হাজান ২০০ জন, ফুলতলার এক হাজার ৪০০ জন, ডুমুরিয়ার দুই হাজার ৩০০ জন, তেরখাদার এক হাজার ২০০ জন, দাকোপের ৩০০ জন, পাইকগাছার এক হাজার ৮০০ জন ও কয়রার এক হাজার ৫০০ জন চাষির প্রত্যেককে এক কেজি বীজ, ১০ কেজি ডিএপি সার ও ১০ কেজি এমওপি সার প্রণোদনা দিয়েছে কৃষি বিভাগ।
আরও পড়ুন: চাকরির পেছনে না ছুটে কমলা চাষে স্বাবলম্বী হওয়ার পথে কুড়িগ্রামের যুবক
খেলাপি ঋণ, বোর্ডের হস্তক্ষেপের কারণে চাপে ব্যাংক এমডিরা: বিশেষজ্ঞরা
খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়া এবং অযোগ্য কোম্পানিগুলোকে ঋণ দেওয়ার চাপের কারণে বেশি চাপের মধ্যে রয়েছেন বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা (এমডি)।
এমন চাপে কাজ করতে না পেরে সাম্প্রতিক সময়ে তিনটি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চারজন এমডি পদত্যাগ করেছেন।
অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর ইউএনবিকে বলেন, এমডিরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন না, এই পরিস্থিতি তারই ইঙ্গিত দেয়। একই সঙ্গে ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুসরণ করতে পারছেন না।
তিনি বলেন, ‘যখন ব্যাংকে পেশাদারিত্বকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয় এবং ব্যাংক ভালো কাজ করে, তখন ব্যাংকের এমডিকে কখনই পদত্যাগের চেষ্টা করতে হয় না।’
ড. মনসুরের সঙ্গে একমত পোষণ করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, অনেক এমডি মনে করেন, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অবৈধ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়া থেকে কেউ আটকাতে পারবে না।
আরও পড়ুন: ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের অনুমোদন আইএমএফ বোর্ডের
তিনি বলেন, এটি ব্যাংকিং খাতে বিপর্যয়ের লক্ষণ। তাই আর্থিক খাতকে বাঁচাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সজাগ হতে হবে।
সম্প্রতি ব্যাংক এশিয়া, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক ও আভিভা ফাইন্যান্সের এমডি পদত্যাগ করেছেন।
এর মধ্যে পদ্মা ব্যাংক ও এসবিএসি ব্যাংকের এমডি বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপে নিজ পদে ফিরলেও ব্যাংক এশিয়া ও আভিভা ফাইন্যান্সের পদত্যাগ করা এমডি আর ফিরে আসেননি। এই দুই প্রতিষ্ঠানে নতুন এমডি নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
ব্যাংক এশিয়ার এমডি আরিফ বিল্লাহ আদিল চৌধুরী গত ২৬ জুলাই পদত্যাগ করেন। পদ্মা ব্যাংকের এমডি তারেক রিয়াজ খান গত সেপ্টেম্বরে পদত্যাগ করেন। একই মাসে সাউথ বেঙ্গল এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের (এসবিএসি) এমডি হাবিবুর রহমানও পদত্যাগপত্র জমা দেন। সর্বশেষ পদত্যাগ করেন নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান আভিভা ফাইন্যান্সের এমডি আবদুল জব্বার।
পদত্যাগের ফলে এই খাতে অস্থিতিশীলতার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
অস্থিরতা এড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পদত্যাগকারী এমডিদের ডেকেছেন এবং কিছু ক্ষেত্রে চেয়ারম্যানকে ডেকে তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেছেন। এসব বৈঠকে পদত্যাগকারী এমডিদের দায়িত্বে ফিরে আসার আহ্বান জানানো হয়।
এমডিদের তাদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে পরিচালনা পর্ষদ হস্তক্ষেপ করলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের রক্ষা করবে বলে আশ্বস্ত করা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই প্রক্রিয়া শুরু করার আগেই দায়িত্বে ফিরেছেন এসবিএসি ব্যাংকের এমডি হাবিবুর রহমান।
আরও পড়ুন: আইএমএফ ফর্মুলায় ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির পর বাংলাদেশের রিজার্ভ ২০.২৫ বিলিয়ন ডলার: বাংলাদেশ ব্যাংক
পদ্মা ব্যাংকের এমডি তারেক রিয়াজ খান গত ১৯ নভেম্বর তার পদে ফিরে আসেন। এদিকে ব্যাংক এশিয়ার এমডি আরিফ বিল্লাহ আদিল চৌধুরীর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়নি। কিন্তু তিনি কাজে ফিরতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
মেঘনা ব্যাংকের এমডি সোহেল আর কে হুসেইনকে তার স্থলাভিষিক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যেটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আভিভা ফাইন্যান্সের এমডি তার দায়িত্বে ফিরে আসেননি।
আরও পড়ুন: প্লাস্টিক দূষণ সংকট: বুড়িগঙ্গার নিকটবর্তী স্থানীয়দের পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্রকল্প গ্রহণ
বাগেরহাটে নির্বাচনকে ঘিরে প্রত্যাশার শেষ নেই নতুন ভোটারদের
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বাগেরহাটে নতুন ভোটারদের উৎসাহ-উদ্দীপনার শেষ নেই। পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে এমন প্রত্যাশা নতুন প্রজন্মের ভোটারদের। তাদের ভোটে নির্বাচিতরা সংসদে গিয়ে দেশের উন্নয়ন করবেন এবং মানুষের ভাগ্য বদলে দেবেন- এমনটিই মনে করেন নতুন ভোটাররা।
প্রার্থীদের বয়স এবং যোগ্যতা নিয়েও নতুন ভোটাদের মতামত রয়েছে। আগামী নির্বাচনে বিজয়ী সংসদ সদস্যেদের কাছে এলাকার নানাবিধ উন্নয়নের দাবি নতুন ভোটারদের- দেশ হবে সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত। আর দেশের প্রতিটি নাগরিক হবেন স্মার্ট এবং সরকার দেশের যুব সমাজকে শক্তিতে পরিণত করবে- এমন আশা নতুন প্রজম্মের ভোটারদের।
৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরইমধ্যে নির্বাচন নিয়ে বাগেরহাটের হাট-বাজার এবং চায়ের দোকান থেকে শুরু করে পথে-প্রান্তে চলছে নানা আলোচনা। নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনায় সরব নানা বয়সের ভোটাররা। তবে নতুন প্রজন্মের ভোটারদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে বেশ আগ্রহ দেখা গেছে।
বাগেরহাটের ৪টি আসনে আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং স্বতন্ত্র মিলে মোট বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা ২৮ জন।
বাগেরহাট জেলার বিভিন্ন এলাকার বেশ কয়েকজন নতুন নারী-পুরুষ ভোটারের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে ইউএনবির এ প্রতিবেদকের কথা হলে তারা নানা মতামত তুলে ধরেন।
বাংলাদেশ হবে স্মার্ট, সেইসঙ্গে দেশের সব নাগরিককে স্মার্ট হিসেবে গড়ে তুলবে নতুন সরকার- এমন প্রত্যাশা নতুন ভোটারদের। প্রার্থী পছন্দের নানা মাপকাঠি রয়েছে নতুন ভোটারদের মধ্যে। সেই সঙ্গে এলাকার নানামুখী উন্নয়ন এবং নির্বাচিত সরকারের কাছে দেশকে এগিয়ে নিতে নানা পরামর্শ দিয়েছে নতুন ভোটাররা। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষাব্যবস্থা, কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থাকে সময়োপযোগী করা, প্রাথমিক থেকে শিক্ষার মান বৃদ্ধিসহ বেকারত্ব ঘোচাতে কর্মসংস্থানের দাবি নতুন ভোটারদের।
চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখার দাবি নতুন প্রজম্মের ভোটারদের। দেশ সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত রাখার ওপর জোর দিয়েছে নতুন ভোটাররা। স্বাধীনতাবিরোধী চক্র যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সে বিষয়ে কথা বলেছে নতুনরা।
নতুন ভোটাররা তাদের এলাকার উন্নয়নের জন্য সড়ক যোগাযোগ, পানগুছি নদীর উপর সেতু, মোংলায় নদীর উপর সেতু নির্মাণ; বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন ও ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজ মসজিদকে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা, নদী-খাল পুনঃখনন, কৃষিক্ষেত্রে নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন, বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা, সব ধরনের দুর্যোগ থেকে সাদাসোনাখ্যাত চিংড়ি শিল্পকে রক্ষাসহ নানা ধরনের উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরেন।
আরও পড়ুন: জবি শিক্ষক সমিতি নির্বাচন: সভাপতি ড. জাকির, সম্পাদক ড. মাসরিক
বাগেরহাট জেলা নির্বাচন অফিসার সেক মুহাম্মদ জালাল উদ্দিন বলেন, বাগেরহাট জেলায় ৪টি আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ১২ লাখ ৮১ হাজার ২৪১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ লাখ ৪৪ হাজার ১৩৬ জন এবং নারী ভোটার ৬ লাখ ৩৭ হাজার ৯৭ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৮ জন।
নতুন ভোটার এক লাখ ৬৮ হাজার ২৪৮ জন। নতুন ভোটারদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৮৪ হাজার ৭৮৫ জন এবং নারী ভোটার ৮৩ হাজার ১৬২ জন। ভোটাররা জেলার ৪টি আসনে ৪৮৮টি কেন্দ্রে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজের অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্র ইমন শেখ বলেন, তরুণ প্রজম্মের প্রার্থীরা তার কাছে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। বয়োবৃদ্ধদের থেকে যুবকরা সমাজে বেশি কাজ করতে পারে বলে তার ধারণা। শিক্ষার বিষয়টি নিয়ে ভাববে এমন প্রার্থী তার পছন্দ।
অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্র শেখ হুসাইন বলেন, এলাকার রাস্তাঘাট, অবকাঠামো এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা দরকার। সেইসঙ্গে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশে শিক্ষার মান বাড়াতে হবে।
শিক্ষার্থী শেখ সাকের মাহমুদ প্রিন্স বলেন, ‘সৎ, যোগ্য এবং মেধাবী প্রার্থী চাই। বিগত সময়ে দেখা গেছে, নির্বাচিত হওয়ার পর অনেকের সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে। যারা জনগণের সম্পদ লুটে খাবে, আমরা এমন প্রার্থী চাই না।’
শিক্ষার্থী তাসলিমা বলেন, প্রার্থীদের অবশ্যই উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। নানাভাবে তাদের সততার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। এলাকাভিত্তিক পরিকল্পিত উন্নয়ন করতে হবে।
নাজমুস সাকিব, বিল্পব, আলামিন, মনিকাসহ আরো বেশ কয়েকজন নতুন ভোটারের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, নানাক্ষেত্রে যুবসমাজকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। সব ধরনের মানুষের জন্য কর্মসংস্থান করতে হবে সরকারকে। শিক্ষিত যুব সমাজকে শক্তিতে পরিণত করতে হবে। সেই সঙ্গে প্রতিটি নাগরিকেরও দেশপ্রেম থাকতে হবে।
আরও পড়ুন: নির্বাচন নিয়ে ইনসানিয়াত বিপ্লবের করা রিটের শুনানি বুধবার
জলবায়ু সংকটের বিজ্ঞানভিত্তিক সমাধানসহ অভিযোজন তহবিল দ্বিগুন করার দাবি বাংলাদেশের
বিশ্ব জলবায়ু সংকটের বিজ্ঞানভিত্তিক সমাধানের পাশাপাশি অভিযোজন তহবিল দ্বিগুন করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ বলছে, ‘বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে জীবাশ্ম জালানির ব্যাপারে বড় ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এসময় দুর্বল অভিযোজন লক্ষ্যমাত্রার খসড়ার ব্যাপারে হতাশা প্রকাশ করে বৈশ্বিক জলবায়ু অভিযোজনের অর্থ দ্বিগুণ করারও দাবি জানিয়েছে। বাংলাদেশ চাইছে বৈশ্বিক কার্বন নির্গমন হ্রাসে প্রধান নির্গমনকারী দেশগুলোর রাজনৈতকি প্রতিশ্রুতি। এক্ষেত্রে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে উন্নত দেশগুলোকেই নেতৃত্ব দিতে হবে।
আরও পড়ুন: ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় জলবায়ু সংকট থেকে মনোযোগ সরানো উচিত নয়: প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের পার্টি হেড প্রধানমন্ত্রীর জলবায়ুবিষয়ক দূত সাবের হোসেন চৌধুরী ইউএনবিকে বলেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে হলে ফসিল ফুয়েলের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। অনেক দেশ অনেক কথা বলছে। কিন্তু বিজ্ঞান কী বলছে আমদের সেটাতে গুরুত্ব দিতে হবে। ২৮তম জলবায়ু সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অবশ্যই বিজ্ঞানের ভিত্তিতে গ্রহণ করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আলোচনার খসড়াগুলোতে সব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আজ সোমবার ও আগামীকাল (মঙ্গলবার) দুই দিন হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ। এই দুই দিনে আশা করছি, আমরা এই সম্মেলন থেকে একটি গ্রহণযোগ্য ফল বের করে আনতে পারব।’
অভিযোজনের লক্ষ্যের দুর্বল খসড়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “‘বৈশ্বিক অভিযোজন লক্ষ্যে’র যে খসড়া তৈরি করা হয়েছে তা আমরা পর্যালোচনা করছি। আশা করছি, সমমনা দেশগুলোকে নিয়ে আমরা শেষ দুই দিনে এই খসড়াকে শক্তিশালী করতে পারব।”
বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন ইউএনবিকে বলেন, আমরা নতুন ও অতিরিক্ত সরকারি অর্থায়নে গুরুত্ব দেব। বাংলাদেশ দৃঢভাবে ন্যাপ বাস্তবায়নের জন্য দ্বিগুণ অভিযোজন তহবিল চাই। আমরা জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা অর্জনের জন্য সময়সীমাবদ্ধ বাস্তবায়নযোগ্য লক্ষ্যগুলোর ওপর জোর দিয়ে অভিযোজন সংক্রান্ত গ্লোবাল গোলের সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য উন্মুখ।
ক্ষয়ক্ষতির অর্থ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রস্তুতির বিষয়ে পরিবেশ সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ বলেন, এই তহবিল থেকে অর্থ নিতে বাংলাদেশ পুরোপুরি প্রস্তত। এ ব্যাপারে আমরা কাজ করছি।
আগামীকাল মঙ্গলবার শেষ হচ্ছে বহুল আলোচিত দুবাই জলবায়ু সম্মেলন। উদ্বোধনের দিনেই ক্ষয়ক্ষতি তহবিলকে কার্যকর করার যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্যদিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করা দুবাই জলবায়ু সম্মেলন শেষ দিনে চূড়ান্ত চুক্তিতে বিশ্ববাসীকে কী উপহার দেবে সেটা দেখার অপেক্ষায় অধীর বাংলাদেশের মতো ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো।
দুবাই জলবায়ু আলোচনা সোমবার চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। সেই সঙ্গে আলোচনার ক্ষেত্রও ছোট হয়ে এসেছে। এখন কেবলমাত্র দুটি ইস্যু সামনে আছে। একটি হচ্ছে, জলবায়ু প্রশমনে বৈশ্বিক কার্বন নির্গমন কমানোর উচ্চাভিলাসী লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে- জলবায়ু সংকট উত্তরণে দেশগুলোর সদিচ্ছা প্রকাশ।
এ প্রসঙ্গে জাতিসংঘ জলবায়ু সংস্থার প্রধান সাইমন স্টিয়েল সোমবার সকালে সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুবাইয়ে একটি অর্থবহ চুক্তিতে উপনীত হতে হলে আমাদের বাধা সৃষ্টির মানসিকতা ত্যাগ করতে হবে। বৈশ্বিক মূল্যায়ন (গ্লোবাল স্টকটেক) অনুমোদনে সব দেশের সহযোগিতা প্রয়োজন। এখানে হারজিতের কিছু নেই। আমি জিতব, আপনি হারবেন- এই মানসিকতা পরিত্যাগ করতে হবে। এখানে একজনের পরাজয় মানে সবার ব্যর্থতা। যা বিশ্বের ৮০০ কোটি মানুষকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেবে। তাই আলোচনার টেবিলে প্রত্যেককে মঙ্গলের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। সব দেশের লক্ষ্য হতে হবে বিশ্বের সব মানুষের মঙ্গলের জন্য চূড়ান্ত চুক্তিতে উপনীত হওয়া।’
দুবাইয়ে গত ৩০ নভেম্বর থেকে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন ২০২৩ (কপ-২৮) শুরু হয়েছে। তা চলবে আগামীকাল ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত। ১৩ দিনব্যাপী এই সম্মেলনে ১৯৮টি দেশের সরকার প্রধানসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন।
আরও পড়ুন: আসন্ন জলবায়ু সংকট এড়াতে প্রধান অর্থনীতিগুলোকে অবশ্যই ন্যায্য অংশীদারিত্ব করতে হবে: জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী
বিশ্বব্যাপী খাদ্য ও জলবায়ু সংকট মোকাবিলার কৌশল নিয়ে ইইউ, দক্ষিণ এশিয়ার নীতি নির্ধারক-বিশেষজ্ঞদের আলোচনা
২০৩০ সালের জন্য কার্বন নিঃসরণ কমানোর অঙ্গীকার আরও জোরদার করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেছেন, প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী কার্বন নিঃসরণের লক্ষ্যমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রিতে সীমাবদ্ধ রাখতে ২০৩০ সালের জন্য নির্গমন হ্রাসের প্রতিশ্রুতি সাত গুন বাড়ানো দরকার।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ উন্নত দেশগুলোকে তাদের ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য জোরালো আহ্বান জানিয়েছে। তিনি বলেন, সবুজ জলবায়ু তহবিল (জিসিএফ), স্বল্পোন্নত দেশের তহবিল (এলডিসিএফ), অভিযোজন তহবিল (এএফ) এবং জিইএফ ট্রাস্ট তহবিলকে পর্যাপ্ত সংস্থান দিয়ে শক্তিশালী করতে হবে এবং সেই তহবিলের প্রবেশাধিকার দ্রুত ও সহজ হওয়া উচিত।
আরও পড়ুন: জলবায়ু সহনশীল প্রকল্পে বিনিয়োগে উৎসাহিত করার তাগিদ
রবিবার (১০ ডিসেম্বর) সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইতে কপ২৮-এ বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সবংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন পরিবেশমন্ত্রী।
পরিবেশমন্ত্রী বলেন, প্যারিস চুক্তির সিদ্ধান্তের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অভিযোজন ও প্রশমন এবং অনুদানভিত্তিক অর্থায়নের মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ ৫০:৫০ বরাদ্দের পক্ষে বাংলাদেশের অবস্থান দৃঢ়। আমরা নতুন ও অতিরিক্ত সরকারি অর্থায়নে গুরুত্ব দেব। বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে জাতিসংঘের ন্যাশনাল অ্যাডাপটেশন প্ল্যানস (এনএপি) বাস্তবায়নের জন্য দ্বিগুণ অভিযোজন তহবিল ও সমর্থনের উপর জোর দেয়, যা ৪৯টি দেশের অগ্রাধিকার। এসব দেশ ইতোমধ্যে তাদের এনএপি প্রস্তুত করেছে এবং জমা দিয়েছে। আমরা জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা অর্জনের জন্য সময়সীমাবদ্ধ বাস্তবায়নযোগ্য লক্ষ্যগুলোর ওপর জোর দিয়ে অভিযোজন সংক্রান্ত গ্লোবাল গোলের সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য প্রস্তুত।
পরিবেশমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে জলবায়ুসংক্রান্ত কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি অটল, যার উদাহরণ "ক্লাইমেট মোবিলিটি চ্যাম্পিয়ন লিডার অ্যাওয়ার্ড" এবং "জিসিএ লোকাল অ্যাডাপ্টেশন চ্যাম্পিয়নস অ্যাওয়ার্ড" প্রাপ্তি।
আরও পড়ুন: কপ-২৮ উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক: সীমিত সম্পদ সত্ত্বেও কম কার্বনের পথে বাংলাদেশ
শাহাব উদ্দিন সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনে গৃহীত ৭০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি ক্ষয়ক্ষতির তহবিলের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের জন্য কপ২৮-এর প্রেসিডেন্ট ও সংশ্লিষ্ট দেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
একই সঙ্গে তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, উভয় প্রশমন কর্ম কর্মসূচির অগ্রগতি, গ্লোবাল স্টক টেক (জিএসটি) এর অধীনে প্রশমন এবং ন্যায্য রূপান্তরের কর্মসূচি খুবই অপর্যাপ্ত। তিনি জরুরি ভিত্তিতে জলবায়ু অর্থের একটি সাধারণ সংজ্ঞা ঠিক করতে অর্থসংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির (এসসিএফ) প্রতি আহ্বান জানান। জলবায়ু অর্থায়নের নিউ কালেক্টিভ কোয়ান্টিফাইড গোল (এনসিকিউজি) আলোচনার জন্যও এটি গুরুত্বপূর্ণ।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী, মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব (জলবায়ু পরিবর্তন) সঞ্জয় কুমার ভৌমিক এবং আবুধাবিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. আবু জাফর এসময় উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশসহ ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে ক্ষয়ক্ষতি তহবিল নিয়ে আশার সঞ্চার
বাগেরহাটে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ পাচ্ছেন শহরের সুবিধা
বাগেরহাটের শহর, বন্দর, গ্রামসহ সর্বত্র উন্নয়নের ছোঁয়া লাগায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক মানুষ শহরের সুবিধা পাচ্ছেন।
মোংলায় ইপিজেডের পাশাপাশি অর্থনৈতিক জোন করা হয়েছে। খুলনা-মোংলা রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে। জেলার কয়েক হাজার ভূমি ও গৃহহীনদের জমিসহ বসতবাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কমপ্লেক্স ও বসতবাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে।
মৃতপ্রায় মোংলা সমুদ্রবন্দর কর্মচাঞ্চল্যতা ফিরে পেয়েছে। পলি মাটি জমে ভরাট হয়ে যাওয়া মোংলা ঘষিয়াখালী চ্যানেলসহ প্রায় ২০০টি নদী-খাল পুনঃখনন করে প্রবাহ ফিরিয়ে আনা হয়েছে। সুন্দরবনে বাঘরক্ষাসহ পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিতে নানা উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
জেলায় হতদরিদ্রদের স্বল্পমূল্যে নানাভাবে খাদ্য সহায়তার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে প্রশাসন। তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে জেলাজুড়ে। জেলার মোট জনসংখ্যার টার্গেট অনুযায়ী প্রায় শতভাগ মানুষকে করোনার ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হয়েছে। কৃষি ক্ষেত্রেও এই জেলায় ব্যাপক সফলতা রয়েছে।
বাগেরহাটে সরকারের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা হলে জানা গেছে, জেলায় নানা ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে। এরইমধ্যে বেশকিছু উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ায় মানুষ এর সুফল ভোগ করছে। শিগগিরই আরো বেশকিছু উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।
আশ্রয়ণ
জেলার কয়েক হাজার ভূমি ও গৃহহীন মানুষ দীর্ঘদিন ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছিলেন। এই সরকার প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ প্রকল্পের অধীনে জেলার ৩ হাজার ৬৬৪টি ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে জমিসহ গৃহনির্মাণ করে দিয়েছে। পঞ্চম ও ষষ্ঠ প্রকল্পের অধীনে আরো ৯৩৯টি পরিবারকে জমিসহ ঘর দেওয়ার কাজ চলমান রয়েছে।
স্বাস্থ্য
স্বাস্থ্য সেবা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া হচ্ছে। বাগেরহাট ১০০ শয্যার সদর হাসপাতালকে ২৫০ শয্যার জেলা হাসপাতালে রূপান্তরিত করা হয়েছে। ২৫০ শয্যা হাসপাতালের জন্য ৭তলা নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়। এই হাসপাতালে ১০ শয্যার আইসিইউ এবং ২০ শয্যার আইশোলেশন নির্মাণ করা হয়েছে। সম্প্রতি ১০ শয্যার আইসিইউ উদ্বোধন করা হয়।
প্রতিদিন গড়ে এই হাসপাতালে এক হাজার ৫০০ জন মানুষ চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। জেলার সব উপজেলায় স্বাস্থ্য বিভাগের চাহিদা অনুযায়ী সম্প্রসারিত ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। জেলার ২৫০ শয্যার হাসপাতাল এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে বিনামূল্যে রোগীদের ওষুধ সরবারহসহ চিকিৎসা সেবার মান বাড়ানো হয়েছে।
খাদ্য
খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় বাগেরহাটে ১৫ টাকা কেজি দরে জনপ্রতি ৩০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হচ্ছে। প্রায় ৯৮ হাজার পরিবার বছরে ৫ মাস এই খাদ্য সহায়তা পাচ্ছেন। ভিডব্লিউডি কার্ডের মাধ্যমে ২১ হাজার ১৩০টি পরিবারকে প্রতিমাসে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ওএমএসের মাধ্যমে জেলায় প্রায় ২২ হাজার পরিবার ৫ কেজি করে চাল ও ৫ কেজি করে আটা স্বল্পমূল্যে ক্রয় করতে পারছেন। জেলায় ১৫ বছরে ৫ লাখ ৯৭ হাজার ৩২০ মেট্রিক টন চাল ও আটা নানাভাবে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাগেরহাটে লোকালয়ে বাঘের পায়ের ছাপে আতঙ্ক
কপ-২৮ উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক: সীমিত সম্পদ সত্ত্বেও কম কার্বনের পথে বাংলাদেশ
দুবাইয়ে অনুষ্ঠেয় কপ-২৮ সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দানকারী পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেছেন, সীমিত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জ্বালানি দক্ষতা ও জ্বালানি সংরক্ষণের ওপর জোর দিয়ে স্বল্প কার্বন উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের সপ্তম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ দেশের দুর্বলতাকে সহনশীলতার দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী কপ-২৮ এর উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য দেন।
তিনি বলেন, 'আমরা ২০০৯ সালে আমাদের নিজস্ব সীমিত সম্পদ থেকে বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছি। এখন পর্যন্ত, আমরা ৪৯০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছি যা ৮৫০ টিরও বেশি প্রকল্পকে সহায়তা করে। এছাড়াও 'আমাদের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির অংশ হিসেবে সরকার জলবায়ু সংক্রান্ত কার্যক্রমে ৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ব্যয় করার,’ কথাও তুলে ধরেন শাহাব উদ্দিন।
গত বছর বাংলাদেশ ইউএনএফসিসিসিতে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা জমা দেয়। ন্যাপ ২০২৩ থেকে ২০৫০ সাল পর্যন্ত সময়সীমা সহ ৮টি ঝুঁকিপূর্ণ খাতের জন্য ১১৩টি হস্তক্ষেপ চিহ্নিত করেছে। এই অগ্রাধিকারমূলক হস্তক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করতে ২৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা প্রতি বছর প্রায় সাড়ে ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন হবে। এর অর্থ ন্যাপ বাস্তবায়নে প্রতি বছর প্রায় সাড়ে ৫ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক ঘাটতি থাকবে।
মন্ত্রী বলেন, ২০১৫ সালের তুলনায় ২০২১ সালে বাংলাদেশ তার জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (এনডিসি) তিনগুণ বর্ধিত নির্গমন হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে হালনাগাদ করেছে।
আরও পড়ুন: পাঁচটি বিপর্যয়কর জলবায়ু টিপিং পয়েন্ট অতিক্রম করার দ্বারপ্রান্তে পৃথিবী: বিজ্ঞানীদের সতর্কতা
শাহাব উদ্দিন বিশ্বব্যাপী প্রতিনিধিদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন 'সম্প্রতি প্রকাশিত বৈজ্ঞানিক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, আমরা ভুল পথে এগোচ্ছি। ২০৩০ সালের জন্য নির্গমন হ্রাসের অঙ্গীকারের উচ্চাকাঙ্ক্ষা প্যারিস চুক্তির ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি লক্ষ্য বজায় রাখতে সাত গুণ বেশি হওয়া দরকার।’
তিনি বলেন, কপ-২৮-এ নিম্নলিখিত ক্ষেত্রগুলোতে অগ্রগতি অপরিহার্য হবে-
‘আমাদের বেঁচে থাকার জন্য আমাদের অবশ্যই ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি লক্ষ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। এমনকি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সীমার অস্থায়ী ওভারশ্যুট অভিযোজন সীমা ছাড়িয়ে অতিরিক্ত স্থায়ী ক্ষতির দিকে পরিচালিত করে। নির্গমন ব্যবধান মোকাবিলার জন্য আমাদের প্রধান নির্গমনকারীদের দ্বারা দৃঢ় রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি প্রয়োজন।’
‘প্রথম গ্লোবাল স্টকটেককে অবশ্যই ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ফলাফলের বিপরীতে অগ্রগতি মূল্যায়নের জন্য সুনির্দিষ্ট মাইলফলকও অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে।
আরও পড়ুন: জলবায়ু সংকট: অন্তর্ভুক্তিমূলক আন্তর্জাতিক অর্থায়ন ব্যবস্থা প্রণয়নের আহ্বান
‘ন্যাপ এবং এনডিসি বাস্তবায়নে সহায়তা করার জন্য সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ উন্নয়নশীল দেশগুলো - এলডিসি এবং এসআইডিএস - জনসাধারণের উৎস থেকে পর্যাপ্ত আর্থিক সংস্থান সংগ্রহ করা। উন্নত দেশগুলোকে অবশ্যই ২০১৯ সালের স্তর থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে অভিযোজন অর্থায়ন দ্বিগুণ করার জন্য কপ-২৬ এর আহ্বান পূরণ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘উন্নত দেশগুলোকে তাদের ঐতিহাসিক অঙ্গীকার অনুযায়ী বছরে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সরবরাহ করতে হবে। জলবায়ু অর্থায়ন সম্পর্কিত নিউ কালেক্টিভ কোয়ান্টিফাইড গোলসের অধীনে ২০২৫ পরবর্তী অর্থায়ন অবশ্যই সবচেয়ে দুর্বলদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা বিবেচনা করে এবং বাস্তবায়নের জন্য একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ সহ বর্তমান প্রতিশ্রুতির চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি হতে হবে।’
জলবায়ু পরিবর্তনের চরম হুমকি মোকাবিলায় প্যারিস চুক্তির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন এবং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বিশ্বকে একটি নিরাপদ ও উন্নত স্থান হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার প্রধান ও প্রতিনিধিদের প্রতি আহ্বান জানান মন্ত্রী।
তিনি কপ-২৮ উদ্বোধনের প্রথম দিনেই লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ডের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ইতিহাস সৃষ্টির জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের সরকার ও জনগণ এবং কপ-২৮ সভাপতিকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
২০২৩ সালের বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন (কপ-২৮) গত ৩০ নভেম্বর দুবাইয়ে শুরু হয়েছে এবং ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। ১৩ দিনব্যাপী এই সম্মেলনে ১৯৮টি দেশের সরকার প্রধান ও প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
আরও পড়ুন: কপ-২৮ সম্মেলন : শুক্রবার শুরু হচ্ছে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক
প্লাস্টিক দূষণ সংকট: বুড়িগঙ্গার নিকটবর্তী স্থানীয়দের পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্রকল্প গ্রহণ
বাংলাদেশের প্লাস্টিক দূষণ সংকটের ভয়াবহ চিত্র দেখা যায় বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে। এখানে, প্লাস্টিকের আধিক্যের কারণে নদীর পানির অস্তিত্ব টের পাওয়া যায় না। এসব প্লাস্টিকের কারণে পরিবেশগত চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে দেশ। একই সঙ্গে গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দ্রুত নগরায়ণের ফলে বাংলাদেশে প্লাস্টিকের ব্যবহার ও দূষণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০৩১ সালের মধ্যে দেশের উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এই ইস্যুটি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের উপর গুরুত্বারোপ করেছে বিশ্বব্যাংক।
বিশ্বব্যাংক প্লাস্টিক দূষণ মোকাবিলা এবং সবুজ প্রবৃদ্ধির প্রচারের জন্য বাস্তবসম্মত কর্মপরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তার উপরও জোর দিয়েছে।
বিষয়টি কোনো বিচ্ছিন্ন এলাকা নয়। কামরাঙ্গীরচরসহ আশপাশের এলাকাগুলো বর্জ্য ফেলার হটস্পটে পরিণত হয়েছে।
আরও পড়ুন: ঢাকা ও রংপুরের কিছু অংশ থেকে ১৫৮ কেজি প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ
সম্প্রতি শ্যামপুর, কামরাঙ্গীরচর ও লালবাগ এলাকা সরেজমিনে দেখা গেছে, এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আগ্রহী একটি গোষ্ঠী। কিন্তু এই সংকটে কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাব রয়েছে।
এই পরিবেশগত উদ্বেগের মধ্যে, প্লাস্টিক বর্জ্য পুনব্যবহারের জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। টয়লেট প্যান, পিভিসি পাইপসহ পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক থেকে বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন শুরু করেছেন কামরাঙ্গীরচরের স্থানীয় উদ্যোক্তা ইউসুফ আলী। সেসব সারাদেশে বিক্রিও করছেন।
তিনি গর্ব করে বলেন, নিয়মিত প্রশিক্ষণের জন্য তার কারখানাটি উন্নত পণ্যের গুণমান এবং শ্রমিক সুরক্ষাসহ একটি পরিবেশবান্ধব প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
আরও পড়ুন: প্লাস্টিকের একক ব্যবহার নিষিদ্ধে আইন প্রয়োগের আহ্বান বিশেষজ্ঞদের
বাংলাদেশসহ ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে ক্ষয়ক্ষতি তহবিল নিয়ে আশার সঞ্চার
বাংলাদেশের মতো উপকূলীয় অঞ্চলের দেশগুলোকে নবগঠিত ক্ষয়ক্ষতি তহবিল আশার আলো দেখাচ্ছে। সম্মেলনের প্রথম দিনেই কার্যকর করা এই তহবিলে অর্থায়নে আশানুরূপ অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে।
গত এক সপ্তাহে এই তহবিলে ৭০০ মিলিয়ন বা ৭০ কোটি ডলার জমা পড়েছে। যদিও চাহিদার তুলনায় এটি অত্যন্ত নগন্য। তারপরও গঠনের পর থেকে উন্নত দেশগুলো একে একে এগিয়ে আসছে এই তহবিলে অর্থায়নের ক্ষেত্রে। যা বিশ্বের উপকূলীয় অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে।
আরও পড়ুন: কপ-২৮: ৫ গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানে অন্য দেশের সঙ্গে কাজ করবে বাংলাদেশ
নতুন আশা তৈরি করলেও এই তহবিল থেকে অর্থ পেতে বাংলাদেশের আরও অন্তত আট মাস সময় লাগবে। কারণ বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত এই তহবিল ব্যবহারের মতো প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও দক্ষতা অর্জন করতে পারেনি। এজন্য জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা শুরু থেকে এই তহবিলের অর্থ ব্যবহারের জন্য দ্রুত প্রস্তুতি গ্রহণের তাগিদ দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণের বিষয়ে একটি সমীক্ষা পরিচালনা করছে। এই সমীক্ষা শেষ হলে জানা যাবে, বাংলাদেশে কোনে খাতে কী পরিমাণ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষয়ক্ষতির শিকার হচ্ছে। সেটি নিরুপনের পর বাংলাদেশ নবগঠিত ক্ষয়ক্ষতি তহবিল থেকে অর্থ পাওয়ার আবেদন করতে পারবে।
বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য ও এলডিসি গ্রুপের লস অ্যান্ড ড্যামেজ সমন্বয়কারী এম হাফিজুল ইসলাম খান ইউএনবিকে বলেন, ক্ষয়ক্ষতি তহবিলের কার্যক্রম শুরু হতে আরও ৮ মাস সময় দরকার হবে। আগামী বছরের জানুয়ারিতে প্রথম সভায় বসবে এই তহবিল পরিচালনায় গঠিত পরিচালনা পরিষদ। আর এই পরিষদই ক্ষয়ক্ষতি তহবিলের অর্থ দেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
আরও পড়ুন: জলবায়ু সহনশীল প্রকল্পে বিনিয়োগে উৎসাহিত করার তাগিদ
তিনি বলেন, বাংলাদেশ প্রস্তুতির অভাবে বৈশ্বিক জলবায়ু তহবিলের অর্থ ব্যবহার করতে পারছে না। তাই শুরু থেকে ক্ষয়ক্ষতি তহবিলের অর্থ পাওয়ার জন্য দক্ষ জনবল ও কাঠামো তৈরির কাজ শুরু করতে হবে। দীর্ঘ লড়াই সংগ্রাম শেষে গত বছর মিশরের রাজধানী শার্ম আল শেখে ২৭তম জলবায়ু সম্মেলনে ঐতিহসিক ক্ষয়ক্ষতি তহবিল গঠন করা হয়। ফলে অর্থবিহীন এই তহবিলকে কার্যকর করা ছিল একটি চ্যালেঞ্জের বিষয়। কিন্তু এবারের ২৮তম জলবায়ু সম্মেলনের প্রথম দিনেই এই কঠিন কাজটি সহজ করে দেয় আয়োজক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত কপ২৮ সভাপতির তহবিল দেওয়ার ঘোষণা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য ও পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মির্জা শওকত আলী ইউএনবিকে বলেন, কপ২৮ সম্মেলনের সভাপতি আয়োজক দেশের পরিবেশমন্ত্রী সুলতান আল জাবের সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ১০ কোটি ডলার বরাদ্দ দিয়ে এই তহবিলকে কার্যকর করার প্রস্তাব করেন। প্রায় ২০০ দেশের প্রতিনিধিরা সর্বসম্মতিক্রমে ঐতিহাসিক এই তহবিলকে কার্যকর করার প্রাস্তব অনুমোদন করেন। ফলে অন্য দেশগুলোও এই তহবিলে অর্থায়নে এগিয়ে আসে।
এ পর্যন্ত এই তহবিলে ৭০ কোটি ডলারেরও বেশি অর্থ জমা পড়েছে। আরব আমিরাতের ১০ কোটি ডলার ছাড়াও জার্মানি ১০ কোটি ডলার, ইতালি ১০ কোটি ৮০ লাখ ডলার, ফ্রান্স ১০ কোটি ৮০ লাখ ডলার, যুক্তরাজ্য ৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার, অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ ১৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার এবং যুক্তরাষ্ট্র ১ কোটি ৭৫ লাখ ডলার দিয়েছে।
আরও পড়ুন: কপ-২৮ সম্মেলন : শুক্রবার শুরু হচ্ছে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক
এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়া এই তহবিলে কোনো অর্থ না দিলেও তারা আবার জলবায়ু অর্থায়নে ফিরে এসেছে। দেশটির সাবেক সরকার জলবায়ু অর্থায়নে অস্ট্রেলিয়াকে প্রত্যাহার করে নিলেও বর্তমান সরকার শুক্রবার প্যাসিফিক দেশগুলোর জন্য ১৫ কোটি ডলার বরাদ্দ দিয়েছে। তবে এই অর্থ এখনও প্রত্যাশার চাইতে অনেক কম। ক্ষয়ক্ষতির জন্য প্রতি বছর ক্ষতিগ্রস্ত দশেগুলোর প্রয়োজন ১০০ বিলিয়ন থেকে ৫৮০ বিলিয়ন ডলার। সেই তুলনায় অর্থ প্রাপ্তি চাহিদার মাত্র দশমিক ২ শতাংশ।
মির্জা শওকত আরও বলেন, ক্ষয়ক্ষতি তহবিলগুলো যেসব দেশ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সে ফান্ড পরিচালনায় বিশ্বব্যাংককে একসেস দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা খুব একটা সন্তুষ্ট না হলেও সবাই রাজি হয়েছে। বিশ্বব্যাংক আগামী ৪ বছর ট্রাস্টি হিসেবে কাজ করবে।
২৫ সদস্যের একটি গভর্নিং বডি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির কাজ হবে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে তহবিল নিয়ে আলোচনা করবে।
তিনি বলেন, অ্যাডাপটেশন ফান্ড দিগুন করার বিষয়ে এই কপে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ গুরুত্বারোপ করেছে। তবে ন্যাশানাল অ্যাডাপটেশন প্ল্যানের (ন্যাপ) ড্রাফট টেক্সট অ্যাডাপট করতে পারিনি। একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে, আমরা এই টেক্সটটা দিয়ে কাজ করব আগামী ২০২৪ সালের জুন মাসে জার্মানির বন সেশনে।
আরও পড়ুন: উদ্বোধনের এক মাস পরও খুলনা-মোংলা রুটে শুরু হয়নি ট্রেন চলাচল
এছাড়াও আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ জনসংখ্যা জলবায়ু সহনশীল করার লক্ষ্যমাত্রা। আরলি ওয়ার্নিংয়ের মাধ্যমে কত শতাংশ জনসংখ্যা আনা হবে, সেটি চূড়ান্ত হয়নি। তবে কপ৩০ এ গিয়ে এটি চূড়ান্ত করা হবে বলে জানান মির্জা শওকত আলী।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কোস্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালক আমিনুল হক ইউএনবিকে বলেন, তহবিলে যে পরিমাণ অর্থ পাওয়া গেছে তা অতি নগন্য। আবার এই অর্থ উন্নত দেশগুলো কবে দেবে তার সময়সীমা সংক্রান্ত কোনো রূপরেখা নির্ধারণ করেনি।
তিনি বলেন, ক্ষয়ক্ষতি তহবিলে অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতির কারণে ধনী দেশগুলো বিপদাপন্ন দেশগুলোর জন্য বিশেষায়িত অভিযোজন তহবিলের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অর্থ দিচ্ছে না। চলতি কপে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ৪০ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার কথা থাকলেও মাত্র ২১ বিলিয়ন ডলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে ১৫-২০ শতাংশ কম। অভিযোজন তহবিলে অর্থ বরাদ্দ না বাড়লে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর বিপদ আরও বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।
আরও পড়ুন: চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশের অর্থনীতি জিম্মি: ব্যবসায়ী নেতারা
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত বিশ্বের উপকূলীয় অঞ্চলের দেশগুলো তাদের আর্থিক ও অ-আর্থিক ক্ষতির জন্য এই তহবিল থেকে অর্থ ব্যবহার করতে পারবে।