%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি গ্রহণ করছে বাংলাদেশ: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক অংশীজনদের সঙ্গে তাদের বৈশ্বিক কর্মসূচিতে সমন্বয় সাধনের জন্য বাংলাদেশ ক্লাইমেট ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ (বিসিডিপি) তৈরি করা হয়েছে।
বিসিডিপি জলবায়ু পরিবর্তন সমস্যা মোকাবিলায় অংশীজন, উন্নত দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং তহবিল কর্মসূচির সঙ্গে কাজ করবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জের (ইউএনএফসিসিসি) নির্বাহী সচিব সাইমন স্টিল সোমবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক কক্ষে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি শুরু করছে।
এ সময় জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা এবং জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনাসহ (ন্যাপ) বাংলাদেশের বিভিন্ন অভিযোজন ও প্রশমন কর্মসূচির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের কারণে বাংলাদেশ প্রায়ই নানা ধরনের ঘূর্ণিঝড়, ভারী বৃষ্টিপাত ও তাপপ্রবাহের সম্মুখীন হচ্ছে।
তিনি বলেন, 'আমরা বনায়নের জন্য সামাজিক আন্দোলনকে উৎসাহিত করছি, ৮৪ হাজার স্বেচ্ছাসেবক তৈরি করেছি এবং বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করছি।’
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশের গবেষকরা লবণাক্ততা, বন্যা ও খরা সহনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন।
আগামী জুন থেকে বর্ষা মৌসুমে সারা দেশে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি শুরু করা হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তার দল আওয়ামী লীগ এই আন্দোলনের অগ্রদূত।
নিজ উদ্যোগে জলবায়ু তহবিল গঠনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করেন সাইমন স্টিল।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ কেবল জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় কাজ করে না, বরং অভিযোজন ও প্রশমনের জন্য বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কর্মসূচি গ্রহণ করছে।
তিনি বলেন, এই বিষয়গুলো নিঃসন্দেহে সারা বিশ্বের জন্য উদাহরণ।
সাইমন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে দায়িত্ব পালনকারী নেতা এবং তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে অংশ নিয়েছেন যেখানে তিনি জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যু নিয়ে কথা বলেছেন।
তিনি আরও বলেন, 'জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে আন্দোলন ত্বরান্বিত করতে আপনারা এসব ফোরামে বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় আপনাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে পারেন।‘
অন্যান্য দেশগুলো বাংলাদেশের এই অভিজ্ঞতাকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমনে কাজে লাগিয়ে নিজস্ব অভিযোজন ও প্রশমন পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সাইমন বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে বাংলাদেশ শুধু নিজের দেশে নয়, সারা বিশ্বে তার পদচিহ্ন রেখে যাচ্ছে।’
অনুষ্ঠানে ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী, মুখ্য সচিব মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুয়েন লুইস এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফারহিনা আহমেদ।
আরও ৭২ ঘণ্টার জন্য হিট অ্যালার্ট জারি
সারাদেশে বিরাজমান তাপপ্রবাহ পরিস্থিতির পরিবর্তন না হওয়ায় সোমবার থেকে ৭২ ঘণ্টা আবার ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছে।
সোমবার (২২ এপ্রিল) বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এ সংক্রান্ত সতর্কতা জারি করা হয়।
আরও পড়ুন: খুলনায় শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই সুপেয় পানির তীব্র সংকটে জনজীবন ভোগান্তি
আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ায় অস্বস্তি থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
এর আগে গত ১৯ এপ্রিল আবহাওয়া অফিস হিট অ্যালার্ট জারি করে।
সম্পর্ক জোরদারে সরকারি সফরে বুধবার থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী শ্রেথা থাভিসিনের আমন্ত্রণে দু'দেশের মধ্যে সম্পর্ক জোরদারে ৬ দিনের সরকারি সফরে আগামীকাল বুধবার থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার (২২ এপ্রিল) এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনার বিষয়ে লেটার অব ইনটেন্টসহ বেশ কয়েকটি সহযোগিতা চুক্তি সই হবে এই সফরে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা ছাড়, জ্বালানি সহযোগিতার বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করতে পারে। এছাড়া সম্পর্ক সম্প্রসারণের জন্য পর্যটন খাতে সহযোগিতা এবং শুল্ক সম্পর্কিত পারস্পরিক সহযোগিতা সম্পর্কিত আরও দুটি সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব নথি সই প্রত্যক্ষ করবেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'এটি দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় সফর।’
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশও থাইল্যান্ডের সমর্থন চাইবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নৌপরিবহন সংযোগের বিষয়টিও আলোচিত হবে। ‘আমি বিষয়টি উত্থাপন করতে খুব আগ্রহী।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশ থাইল্যান্ডের কাছ থেকে বিনিয়োগ বাড়াতে চাইবে।
১৯৭২ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর এই প্রথম বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ড শীর্ষ পর্যায়ে সফর করছেন প্রধানমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের মানবাধিকার রক্ষা করতে হবে: জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞরা
তথ্যমন্ত্রী বলেন, এই সফর বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড উভয়ের জন্যই তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এটি দুই বন্ধুত্বপূর্ণ দেশের মধ্যে সহযোগিতার নতুন দ্বার উন্মোচন করবে।
মন্ত্রী, উপদেষ্টা, সচিব এবং সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ২৪ থেকে ২৯ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে থাকবেন।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে রয়েছেন।
২৬ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীকে থাইল্যান্ডের উপস্থাপক শ্রেষ্ঠ থাভিসিন আনুষ্ঠানিকভাবে অভ্যর্থনা জানাবেন এবং তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হবে।
একই দিনে গভর্নমেন্ট হাউজে প্রধানমন্ত্রী থাভিসিনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
সফরকালে প্রধানমন্ত্রী মহা ভাজিরালংকর্ন ফ্রা ভাজিরাকলাওচাওহুয়া এবং থাইল্যান্ডের রাজা ও রানী সুথিদা বজ্রসুধাবিমালাক্ষনের সঙ্গে রাজকীয় সাক্ষাৎ করবেন।
শেখ হাসিনা তার সম্মানে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া রাষ্ট্রীয় মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন।
বহুপক্ষীয় কর্মসূচিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কমিশন ফর এসকাপ’র ৮০তম অধিবেশনে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।
আরও পড়ুন: ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রার সফর 'স্থগিত'
তিনি ২৫ এপ্রিল এসকাপ’র অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। একই দিনে জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল এবং এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (এসকাপ) নির্বাহী সচিব আরমিদা সালসিয়া আলিসজাবানা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
'লিভারেজিং ডিজিটাল ইনোভেশন ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট ইন এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক' প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে অষ্টম অধিবেশনটি টেকসই উন্নয়নের জন্য ২০৩০ এজেন্ডা দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য ডিজিটাল উদ্ভাবনকে কাজে লাগাতে অঞ্চলব্যাপী সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ জোরদার করার একটি সুযোগ হবে।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ডিজিটাল উদ্ভাবন কীভাবে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলকভাবে অবদান রাখতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করতে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সরকারি নেতা ও মন্ত্রী এবং অন্যান্য মূল স্টেকহোল্ডারদের এই অধিবেশনে একত্রিত করবে।
এছাড়াও, অংশগ্রহণকারীরা ডিজিটাল উদ্ভাবনের রূপান্তরমূলক সম্ভাবনাকে সম্পূর্ণরূপে উন্মোচনের সুযোগগুলো চিহ্নিত করতে এবং টেকসই উন্নয়নে তাদের অবদান জোরদার করার পথগুলো নিয়ে আলোচনা করতে সক্ষম হবেন।
একটি ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা অংশীদার ও স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে জড়িত হওয়ার সুযোগ দেবে। এখানে ডিজিটাল উদ্ভাবনগুলো প্রদর্শন করা হবে যা এরই মধ্যে এই অঞ্চল জুড়ে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অবদান রাখছে।
টেকসই উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অবস্থান অনন্য।
এরই মধ্যে, এই অঞ্চল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ডিজিটাল ফিন্যান্স, গভটেক ও ইন্টারনেট অব থিংসের মতো অগ্রণী প্রযুক্তির মাধ্যম ডিজিটালি চালিত উদ্ভাবনের জন্য একটি গতিশীল কেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে।
তবুও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় বিশাল সম্মিলিত প্রচেষ্টা জোরদার করতে আরও দক্ষতা ও ডিজিটাল উদ্ভাবনকে কাজে লাগানোর জন্য, এই অঞ্চলের একটি পরিকল্পনা প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনার থাইল্যান্ড সফরে সহযোগিতার নতুন দ্বার উন্মোচনের প্রত্যাশা: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
নিরাপদ বিশ্ব গড়তে অভিযোজন সক্ষমতা বাড়াতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ ও সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলতে অভিযোজন সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা জোরদারের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ ও সুন্দর পৃথিবী গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য অভিযোজন সক্ষমতা বৃদ্ধি, সহনশীলতা জোরদার এবং সমন্বিত ঝুঁকি হ্রাসের উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
সোমবার (২২ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) চার দিনব্যাপী জাতিসংঘ জলবায়ু অভিযোজন সম্মেলন জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (ন্যাপ) এক্সপো-২০২৪-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য ছয়টি বিষয় বাস্তবায়নের উপর গুরুত্বারোপ করেন।
প্রথমত, প্রধান কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোকে তাদের কার্বন নিঃসরণ কমাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।
দ্বিতীয়ত, উন্নত দেশগুলো বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলারের জলবায়ু তহবিলের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা পূরণ করতে হবে। অভিযোজন ও প্রশমনের মধ্যে এই তহবিল সমানভাবে বণ্টন করতে হবে।
তৃতীয়ত, উন্নত দেশগুলোকে অবশ্যই দক্ষ জ্বালানি সমাধান এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রযুক্তি হস্তান্তর নিশ্চিত করতে হবে।
চতুর্থত, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তরের সময়, জড়িত দেশগুলোর উন্নয়ন অগ্রাধিকারগুলো তাদের ক্ষতি এবং ক্ষতির ভিত্তিতে বিবেচনায় নেওয়া উচিত।
পঞ্চমত, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা, নদীভাঙন, বন্যা ও খরার কারণে বাস্তুচ্যুত মানুষদের পুনর্বাসনের দায়িত্ব সব দেশকে ভাগ করে নিতে হবে।
পরিশেষে, আগামী প্রজন্মের জন্য একটি টেকসই ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে প্রধান অর্থনীতিগুলোকে অবশ্যই সকল স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বিশ্বব্যাপী কাজ করতে হবে।
আরও পড়ুন: প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীর উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফারহিনা আহমেদ, বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুয়েন লুইস, জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনের (ইউএনএফসিসিসি) নির্বাহী সচিব সাইমন স্টিল এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী কার্বন নিঃসরণ প্রণয়নে বাংলাদেশের অবদান শূন্য দশমিক ৪৮ শতাংশেরও কম হলেও এটি নেতিবাচক প্রভাবের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি।
জলবায়ু পরিবর্তনের এসব বিরূপ প্রভাব আমাদের সম্ভাবনাময় উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য হুমকি। অব্যাহত বৈশ্বিক উষ্ণতা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়িয়ে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি বড় এলাকা যা দেশের মোট আয়তনের প্রায় ১২-১৭ শতাংশ এবং এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ ডুবে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
তিনি বলেন, 'আমরা বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার জন্য উন্নত বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি।
শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাসে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ইনটেন্ডেড ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন (আইএনডিসি) প্রণয়ন করে এবং সেটি হালনাগাদ করে ২০২১ সালে ইউএনএফসিসিসিতে জমা দিয়েছে।
তিনি বলেন, চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ নিঃশর্ত ৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ এবং শর্তসাপেক্ষে ১৫ দশমিক ১২ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাসে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস করেছে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি করেছে। একই সঙ্গে ২০২৩ সালে মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা (এমসিপিপি) প্রণয়ন করেছে। এটির লক্ষ্য জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় দুর্বলতা থেকে সমৃদ্ধির দিকে সহনশীলতায় পৌঁছানো।
তিনি বলেন, এছাড়া এমসিপিপির অভিযোজন ও প্রশমন কর্মসূচিতে স্থানীয় জনগণ ও অংশীজনদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এবং প্রকৃতিভিত্তিক সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: আসুন সুন্দর ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে একযোগে কাজ করি: পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রী
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ২০২২-২০৫০ সালের জন্য জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (ন্যাপ) প্রণয়ন করেছে এবং ২০২২ সালের অক্টোবরে ইউএনএফসিসিসিতে জমা দিয়েছে। এই পরিকল্পনায় ১১টি জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার ৮টি খাতে ১১৩টি অগ্রাধিকার কর্মসূচি চিহ্নিত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আগামী ২৭ বছরে ন্যাপে গৃহীত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাংলাদেশের প্রায় ২৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন।
আমি ধনী দেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সুনির্দিষ্ট তহবিল ও অতিরিক্ত আর্থিক সম্পদ দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নত দেশগুলো ব্যাপক কার্বন নিঃসরণের মাধ্যমে বৈশ্বিক উষ্ণায়নে অধিক অবদান রাখছে।
তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে রক্ষা করা তাদের নৈতিক দায়িত্ব। ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে আমরা অভিযোজন ও প্রশমন কার্যক্রমে উন্নত দেশগুলোর পক্ষ থেকে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার প্রদানের অঙ্গীকার বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছিলাম। আশা করি উন্নত দেশগুলো তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে।’
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের হুমকিতে পড়া বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পরও আর্থিক, বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি সহায়তা অব্যাহত রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও ধনী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, কপ-২৬ এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উন্নত দেশগুলোর ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৫ সালের মধ্যে অভিযোজন অর্থায়ন দ্বিগুণ করা উচিত। ধনী দেশগুলোকে এই প্রতিশ্রুতি পূরণের আহ্বান জানান তিনি।
আরও পড়ুন: খেলাধুলাই যোগ্য নাগরিক গড়ে তুলতে পারে : প্রধানমন্ত্রী
‘যেসব দেশ ইতোমধ্যে ন্যাপ প্রণয়ন করেছে তারা যাতে তাদের এনএপি বাস্তবায়নে ইউএনএফসিসিসিসহ সহজে ও দ্রুত সব উৎস থেকে আর্থিক সহায়তা পেতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট সম্ভাব্য ক্ষতি হ্রাসে অভিযোজন ও প্রশমনে যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ইউএনএফসিসিসির লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড থেকে অর্থায়নের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশ সব সময় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে উন্নয়ন অংশীদারদের নিয়ে 'বাংলাদেশ ক্লাইমেট ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ' (বিসিডিপি) গঠন করেছে যেখানে সব পক্ষ একমত হয়েছে।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, বিসিডিপি মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা, জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা, জাতীয় নির্ধারিত অবদান এবং বাংলাদেশের রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
তিনি বলেন,‘আসুন আমরা এই গ্রহকে আরও নিবিড়ভাবে রক্ষার জন্য একসঙ্গে কাজ করি।’
এ অনুষ্ঠান থেকে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ক্লাইমেট ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপের (বিসিডিপি) উদ্বোধন করেন।
আরও পড়ুন: চার দিনব্যাপী জাতিসংঘ ক্লাইমেট অ্যাডাপশন এক্সপোর উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
‘লালজমিন’র মতো মুক্তিযুদ্ধের ওপর আরও নাটক হওয়া দরকার: ড. হাছান মাহমুদ
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের ওপর আরও নাটক হওয়া দরকার। লালজমিনের মতো মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক আরও মঞ্চায়িত হলে সেটি আমাদের নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে সহায়তা করবে। আমাদের নাট্যাঙ্গনকে সমৃদ্ধ করবে।
রবিবার(২১ এপ্রিল) রাজধানীর বেইলি রোডে অবস্থিত ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে মঞ্চ নাটক 'লালজমিন'র মঞ্চায়ন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একথা বলেন।
ড. হাছান বলেন, মুক্তিযুদ্ধ একদিকে যেমন আমাদের স্বাধীনতা এনেছে, তেমনি মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক কিছু সৃষ্টিও হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের গানগুলো এখনো যখন বাজে, তখন আমরা থমকে দাঁড়াই। সেগুলোর কখনো তুলনা হয় না। মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক গল্প লেখা হয়েছে, যেগুলো আমাদের সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে।
আরও পড়ুন: প্রবাসীদের বৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠানোর আহ্বান রাষ্ট্রদূত ইমরানের
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আগামীতে বিদেশি কূটনৈতিকদের সামনে 'লালজমিন' নাটকটি মঞ্চায়িত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এতে কূটনৈতিকরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে পারবে।
এসময় দেশে নাটকের বিস্তার ও নাট্য আন্দোলনকে শক্তিশালী করার বিষয়ে ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা ও অনুভূতির কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'লালজমিন' নাটকটি নাট্যাঙ্গনকে সমৃদ্ধ করেছে।
সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, ফরেন অফিস স্পাউসেস অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক নুরান ফাতিমা ও সভাপতি ফাহমিদা জাবীন, অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিকরা, অভিনেত্রী মোমেনা চৌধুরী, নাট্য নির্দেশক সুদীপ চক্রবর্তীসহ শুন্যন রেপার্টরি থিয়েটারের সদস্যরা, দেশের প্রথিতযশা নাট্য নির্মাতা ও অভিনয় শিল্পীরা এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও তথ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: অভ্যন্তরীণ কারণে ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সফর স্থগিত: হাছান মাহমুদ
চার দিনব্যাপী জাতিসংঘ ক্লাইমেট অ্যাডাপশন এক্সপোর উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
চার দিনব্যাপী জাতিসংঘ জলবায়ু অভিযোজন সম্মেলন জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (ন্যাপ) এক্সপো-২০২৪ উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার (২২ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক এই প্রদর্শনীটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
ন্যাপ এক্সপো একটি আন্তর্জাতিক ফোরাম। এই ফোরামে বিভিন্ন দেশ, সংস্থা এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক স্টেকহোল্ডাররা ন্যাপ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে পারস্পরিক যোগাযোগ ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করে।
আয়োজনটি বিশ্বজুড়ে জলবায়ু অভিযোজন কৌশল সম্পর্কে অন্তর্দৃষ্টি বিনিময়ের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম হিসাবে কাজ করবে এবং পারস্পরিক সুবিধাগুলোকে উৎসাহিত করবে।
ন্যাপ এক্সপো ২০২৪-এ অংশ নিতে ১০৪টি দেশের ৩৮৩ জন প্রতিনিধি ইউএনএফসিসিসি-তে নিবন্ধন করেছেন।
এছাড়া দেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তর ও সংস্থার প্রতিনিধি, জলবায়ু বিশেষজ্ঞ, এনজিও প্রতিনিধি ও স্বেচ্ছাসেবকসহ ৫৫০ জন এই অভিযোজন সভায় অংশ নেবেন।
এক্সপোতে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ন্যাপ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার ফাঁকফোকর ও প্রয়োজনীয়তা চিহ্নিত করতে প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হবে।
এবারের সম্মেলনে মোট ২৩টি স্টল থাকবে, যেখানে বিভিন্ন দেশের অভিযোজন কার্যক্রম প্রদর্শিত হবে।
আরও পড়ুন: কৃষি উৎপাদন বাড়াতে কৃষকদের সমবায় গঠনের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
এছাড়া চার দিনের ৩৪টি সেশনে বিশেষজ্ঞরা ট্রান্সফরমেশনাল অ্যাডাপটেশন, ফাইন্যান্সিয়াল মেকানিজম, অ্যাডাপটেশন অ্যাক্টিভিটি মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন টুলস এবং জেন্ডার রেসপনসিভ অ্যাডাপটেশন নিয়ে আলোচনা করবেন।
জলবায়ু অভিযোজন বিষয়গুলো প্রদর্শনের জন্য বাংলাদেশের জন্য ১৩টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ তার উদ্ভাবনী অভিযোজন ব্যবস্থা যেমন বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, পার্বত্য অঞ্চলে সৌরশক্তি চালিত পানি আহরণ, জলবায়ু সহিষ্ণু কৃষি এবং ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ও রাস্তার কাজের মতো অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রদর্শন করবে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সমৃদ্ধ ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তুলে ধরা হবে।
জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জের (ইউএনএফসিসিসি) নির্বাহী সচিব সাইমন স্টিল এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: কাউকে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন করতে দেব না: প্রধানমন্ত্রী
খুলনায় শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই সুপেয় পানির তীব্র সংকটে জনজীবন ভোগান্তি
খুলনার দাকোপ উপজেলায় শুষ্ক মৌসুমের শুরু থেকেই সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে জন জীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে খাবার পানির সংকট মানুষকে আরও দিশেহারা করে ফেলছে।
দ্বৈত সংকটে বিশুদ্ধ খোলা পানি বিক্রির দোকানেও পড়ছে পানি কেনার দীর্ঘ লাইন। কিছু লোক আবার দূর-দূরান্ত থেকেও সংগ্রহ করছেন এই পানি। আবার বাধ্য হয়েও কিছু লোক ডোবা-নালার পানি খেয়ে ডায়রিয়াসহ নানা পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
সরেজমিনে এলাকাবাসীর সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনের কোল ঘেঁষা এই উপজেলায় ৩টি পৃথক দ্বীপের সমন্বয় গঠিত। এর চার পাশে নদীতে লবণ পানির প্রচণ্ড চাপ থাকায় খরা মৌসুমে সুপেয় পানির চরম সংকট দেখা দেয়। প্রতি বছরের মতো এবারও ১টি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়নের সর্বত্রই সুপেয় পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। বর্তমানে দুই লাখেরও বেশি মানুষ সুপেয় পানির জন্য হা-হুতাশ করছেন। এমনকি চায়ের দোকান, খাবার হোটেল, মিষ্টির দোকানে খরিদ্দারকে বিশুদ্ধ পানি দিতে না পেরে দোকানীরা দিশেহারা হয়ে পড়ছেন। আবার চলতি রবি মৌসুমে এ অঞ্চলের প্রধান ফসল তরমুজ, বোরো ক্ষেতেও সেচ দিতে না পারায় গাছ মরাসহ ফল ভালো বড় না হওয়ার কারণে অনেক কৃষক লোকসানে পড়েছেন।
এখানে কোথাও গভীর নলকুপ সফল না হওয়ায় রয়েছে অগভীর নলকুপ যা অধিকাংশ অকেজো। আবার কোন কোন নলকুপের পানিতে লবণ, আর্সেনিকযুক্ত এবং অতিরিক্ত আয়রন। এছাড়া এ অঞ্চলে পর্যাপ্ত রেইন ওয়াটারও নেই। যে কারণে এলাকার মানুষের খাবার পানির একমাত্র ব্যবস্থা পুকুরের পানি ফিল্টার করে খাওয়া। কিন্তু অপ্রতুল পুকুরগুলোতে পানি স্বল্পতার কারণে প্রায় সকল ফিল্টার বা পিএসএফগুলো অকেজো হয়ে পড়েছে। এলাকার কতিপয় স্বচ্ছল ব্যক্তিরা বটিয়াঘাটা, খুলনাসহ বাহিরের বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি কিনে জীবন ধারণ করছেন। আর মধ্যবিত্ত এবং নিন্ম আয়ের মানুষ বাধ্য হয়ে জীবন বাঁচাতে যে পুকুরে পানি আছে সেখান থেকে সরাসরি পানি নিয়ে পান করছেন। ফলে বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র অভাবের কারণে একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠী বাধ্য হয়ে অস্বাস্থ্যকর খাবার অনুপযোগী পানি খেয়ে জীবন ধারণ করতে হচ্ছে। এতে অনেকেই ডায়রিয়াসহ নানা পানিবাহিত রোগে ভুগছেন বলে জানা গেছে।
কালাবগি এলাকার রবিউল ইসলামসহ আরও অনেকে জানান, প্রায় ৪ থেকে ৫ কিলোমিটার পথ নৌকায় যাওয়া আসা করে কৈলাশগঞ্জ এলাকা থেকে অতি কষ্টে বিশুদ্ধ পানি এনে খেতে হচ্ছে। আর যাদের ভাল অবস্থা টাকা পয়সা আছে তারা বাহিরে থেকে পানি কিনে খায়। আবার এলাকার কিছু অসহায় গরিব মানুষ সরাসরি পুকুরের পানি পান করছেন বলে তিনি জানান।
আরও পড়ুন: খুলনা-চট্টগ্রামে জলবায়ু সহনশীল উদ্যোগ পর্যবেক্ষণে ইউএনডিপির শুভেচ্ছা দূত
দাকোপের হোটেল মালিক রচীন ইউএনবিকে বলেন, পানি সংকটের কারণে খরিদ্দারদের পানি দিতে পারছি না। পুকুরের পানি খাবার অনুপযোগী হওয়ায় তা দিয়ে পেলেট ধোয়ার কাজ চলছে আর খরিদ্দারদের এক টাকারও বেশি দামে প্রতি লিটার পানি কিনে খেতে দিতে হচ্ছে।
তার মতো চা দোকানদার হাফিজুর রহমানও একই অভিমত ব্যক্ত করেন।
এ বিষয়ে চালনা পৌর মেয়র সনত কুমার বিশ্বাস বলেন, সুপেয় পানি সংকট নিরসনে ৩২ পৌরসভা পানির প্রকল্পের আওতায় একটি পানি বিশুদ্ধকরণ প্ল্যান্টের কাজ শেষ হয়েছে। একই সঙ্গে পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি বাড়ি পাইপ লাইনের কাজও। বর্তমানে সেটি পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে আর এই কাজ সম্পন্ন হলেই পৌর এলাকায় সুপেয় পানি সংকট অনেকটা নিরসন হবে বলে মনে করেন তিনি ।
এ ব্যাপারে উপজেলা উপসহকারী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, বর্তমানে এখানে সুপেয় পানির আধারের মধ্যে ২ হাজার ৬৬৮টি রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং (ট্যাংকি), ২৭টি গভীর নলকূপ, ৫০০টি অগভীর নলকূপ সচল রয়েছে। এছাড়া সারা দেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের ২৩৪টি, উপকূলীয় জেলা সমুহে বৃষ্টির পানি সরবরাহ প্রকল্পের ৮৩৩টি ট্যাংকি, কমিউনিটি রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং ২১টি, ১৮টি পন্ড আল্টা ফিল্টার, আরও প্লান্ট ২টি ও ১৫টি ভ্যাসেল টাইপ পিএসএফের কাজ চলমান রয়েছে। তাছাড়া কয়েকটি এনজিও কিছু পানির ট্যাংকি ও কয়েকটি পানি বিশুদ্ধকরণ প্যান্ট নির্মাণ করলেও প্রয়োজনের তুলনায় রয়েছে অপ্রতুল। এই উপজেলার অধিকাংশ মানুষ নিরাপদ সুপেয় পানির জন্য রেইন ওয়াটার হারভেস্টিংয়ের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু মার্চ হতে মে মাস পর্যন্ত প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ এবং খরার কারণে পানির চাহিদা তীব্র থাকে। এ অঞ্চলে তরমুজ চাষের সময়ও ব্যাপক পানির সংকট দেখা দেয়। এই সময়ের জন্য ব্যক্তিগত এবং প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে পুকুর, দিঘি খনন করা প্রয়োজন। এছাড়াও বিভিন্ন খাল খননের মাধ্যমে কৃষি জমিতে সেচের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
তিনি বলেন, পানি সংকট সমাধানের জন্য এ অঞ্চলে আরও অনেক বেশি রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং (ট্যাংকি) ও পুকুর খনন করা দরকার। একই সঙ্গে পানির জন্য বিশেষ প্রকল্প গ্রহণও করতে হবে।
আরও পড়ুন: খুলনায় বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি
চুয়াডাঙ্গায় অতি তীব্র তাপপ্রবাহে শরবত বিক্রেতাদের 'পোয়াবারো'
চুয়াডাঙ্গা জেলায় গত এক সপ্তাহ ধরে চলছে তীব্র তাপপ্রবাহ থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ। তারপরও জীবিকার তাগিদে মানুষকে ঘরের বাইরে বের হতে হচ্ছে। মরু অঞ্চলের মতো প্রখর তাপ আর ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এ অঞ্চলের জনজীবন।
অসহ্য গরমে সামান্য প্রশান্তির খোঁজে মানুষ ছুটছে ভ্রাম্যমাণ শরবতের দোকানে। শরবতের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় রাস্তার মোড়ে বসেছে ভ্রাম্যমাণ শরবতের দোকান। অর্থাৎ এই গরমে শরবত, জুস বা শরবত জাতীয় পানীয় বিক্রেতাদের পোয়াবারো। আগে যে বিক্রেতা দিনে ১ হাজার টাকার শরবত বিক্রি করতেন, সে এখন দিনে বিক্রি করছেন পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা। যে বিক্রেতা দিনে দুইশো গ্লাস বিভিন্ন শরবত বা জুস বিক্রি করতেন, তার বিক্রি বেড়ে এখন এক-দেড় হাজার গ্লাসে পৌঁছেছে।
প্রতিদিন বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে দিনের তাপমাত্রা। সেই সঙ্গে এসব দোকানে সব বয়সের মানুষের ভিড়ও বাড়ছে। লেবু শরবত বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লেবু, ট্যাং, বিট লবণ মিশ্রিত লেবু শরবত বিক্রি হচ্ছে নানা দামে। এক টুকরো লেবুর রস, বিট লবণ, ট্যাং আর ঠান্ডা পানি মিশ্রিত এক গ্লাস লেবু শরবত বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ২০ টাকায়। এছাড়া দুধের তৈরি মাঠার চাহিদাও তুঙ্গে এই গরমের দিনে। চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরসহ জেলার উপজেলা শহরগুলোতে শরবত বিক্রির ধুম। ১০ টাকা গ্লাস থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন ফলের রসের তৈরি এসব শরবত কিনে পান করছেন পথচারীরা।
আরও পড়ুন: তাপপ্রবাহে আইসিডিডিআর,বি'র স্বাস্থ্যবিধি জারি
বিশ্বনাথে পুকুরে ডুবে ২ ভাইয়ের মৃত্যু
সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার চানসিরকাপন গ্রামে পুকুরের পানিতে ডুবে ১০ ও ১১ বছর বয়সী দুই চাচাতো ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে।
নিহতরা হলো- নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা উপজেলার সিরাজ মিয়ার ছেলে রিহান আহমদ ইয়াসিন (১০) ও চানসিরকাপন গ্রামের টিটন মিয়ার ছেলে ইউসুফ রুহান (১১)।
স্থানীয়রা জানান, বিশ্বনাথ সদরের ৭নং ওয়ার্ডের চাঁনসিরকাপন গ্রামের একটি কলোনিতে ভাড়া বাসায় পরিবার নিয়ে থাকতেন রিহান ও রুহানের পরিবার।
বিকাল ৫টার দিকে পরিবারের কারও অনুপস্থিতিতে পুকুর পাড়ে খেলার সময় ওই দুই শিশু পানিতে পড়ে যায়।
আরও পড়ুন: কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনে দেশে মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু কমেছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে পুকুরে শিশুদের লাশ ভাসতে দেখা যায়।
পরে তাদের উদ্ধার করে বিশ্বনাথ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
বিশ্বনাথ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রমা প্রসাদ চক্রবর্তী মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আরও পড়ুন: সড়ক দুর্ঘটনায় শিশুমৃত্যু হার ১৭ শতাংশ বেড়েছে: এসসিআরএফ
নিরাপদ সড়কের দাবিতে চোখে কালো কাপড় বেঁধে স্কুল শিক্ষার্থীর অবস্থান
নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার দাবিতে নওগাঁয় চোখে কালো কাপড় বেঁধে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে পঞ্চম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থী।
রবিবার (২১ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ঘণ্টাখানিক শহরের তাজের মোড় ও ব্রীজের মোড়ে তিনি এই অবস্থান করেন।
ওই শিক্ষার্থীর নাম ফাতেমা আফরিন ছোঁয়া। তিনি নওগাঁ সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
এসময় শিক্ষার্থীর হাতে থাকা পোষ্টারে লেখা ছিল 'সড়কে নিরাপত্তা চাই, বাঁচার মতো বাঁচতে চাই, দুর্ঘটনা এড়াতে ট্রাফিক আইন প্রয়োগ চাই'। এসময় স্থানীয় পথচারীরাও এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানান।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরের সড়ক দুর্ঘটনার দায় পুলিশ-বিআরটিএ এড়াতে পারে না: জাতীয় কমিটি
এসময় একই পথে যাওয়া পথচারী জুলফিকার রহমানের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা আসলে সড়কে কেউ নিরাপদ নয়। বাসা থেকে বের হলে সুস্থভাবে নিরাপদে বাড়িতে ফিরতে পারব কি না তার কোন নিশ্চয়তা নাই। একটি ছোট শিশু শিক্ষার্থীর এমন উদ্যোগ সত্যিই আমাদের মুগ্ধ করেছে। সবারই উচিত নিরাপদ সড়কের দাবিতে সোচ্চার হওয়া।
নিলুফার ইয়াসমিন, তানহা খাতুন নামের আরও দুই পথচারী বলেন, তীব্র রোদ ও গরম উপেক্ষা করে বাচ্চাটির এমন প্রতিবাদ ও দাবি খুবই যৌক্তিক। আমরা তার দাবিকে সমর্থন করছি। তাকে দেখে আমাদের অনেক কিছুই শেখার আছে। প্রতিদিনই সড়কে তাজা প্রাণ ঝরে যাচ্ছে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে সবাই এক হয়ে আন্দোলন করতে হবে।
এ বিষয়ে ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হলে বলেন, টিভি-পত্রিকাতে প্রতিদিন দেখি মৃত্যুর খবর। তার অধিকাংশই সড়ক দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু। রাস্তায় বের হলে বা স্কুলে যাওয়ার পথে আবার বাড়িতে মা-বাবার কাছে ফিরতে পারব কি না তার কোন নিশ্চয়তা নাই। প্রতিদিন এত মৃত্যুর খবর দেখে খুবই কষ্ট পাই, ভয়ও লাগে।
ছোঁয়া আরও বলেন, বেশ কয়েকদিন আগে নওগাঁ-সড়কের সাহাপুর নামক স্থানে সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যায় এক বাবা-মা। আর বেঁচে যায় তাদের ৫ বছর বয়সী এক শিশু। এখন ভাবুন সেই শিশুটির কি হবে। শিশুটি বাবা-মার আদর-ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়ে গেল সারা জীবনের জন্য। আমি চাই নিরাপদ সড়ক। নিরাপদে সড়কে চলাফেরা করতে চাই। সরকারের কাছে আকুল আবেদন নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনা: ১৮ মাসের ইয়াসিন বাবার পর মাকে হারালো, মৃত্যু বেড়ে ১৫
ফাতেমা আফরিন ছোঁয়ার বাবা সঙ্গীত শিল্পী খাদেমুল ইসলাম ক্যাপ্টেন বলেন, গত ১৮ এপ্রিল সুনামগঞ্জের ছাতকের সুরমা ব্রিজ এলাকায় জনপ্রিয় গানের গীতিকার, সুরকার শিল্পী মতিউর রহমান হাসান ওরফে পাগল হাসান মারা যায় সড়ক দুর্ঘটনায়। পাগল হাসান আমার সহকর্মী ও বন্ধু ছিল। এর আগে ১৭ এপ্রিল নওগাঁ-সান্তাহার সড়কের সাহাপুরের নামক স্থানে সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যায় এনামুল হক ও বৃষ্টি আক্তার নামের দম্পত্তি। আর বেঁচে যায় তাদের ৫ বছরের শিশু জুনাইদ ইসলাম। এই ঘটনাগুলো আমার মেয়ের মনে মারাত্মকভাবে দাগ কেটে যায়। মেয়েটি আমার এত মৃত্যুর খবর প্রতিদিন শুনে নিজেকে স্থির রাখতে পারছে না। যার কারণেই সে বলেছে, আব্বু আমি নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় দাঁড়াতে চাই। মেয়ের এই মহৎ ও যৌক্তিক চাওয়াকে না বলতে পারিনি। যার কারণে পুরো সমর্থন জানিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আজ আমার ছোট্ট মেয়েটা একাই যেভাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে নিরাপদ সড়কের দাবি করছে ঠিক সেভাবে দেশের সবাই যদি এমন করে সচেতন হতো ও দাবিগুলো তুলে ধরতো, তাহলে প্রতিদিন এমন প্রাণহানির মতো ঘটনা অনেকটাই কমিয়ে আসতো। আমরা নিরাপদ সড়ক চাই, সবাই যেন ট্রাফিক আইন মেনে চলে সেই উদ্যোগের বাস্তবায়ন চাই। আর তা বাস্তবায়নের জন্য সরকারের পাশাপাশি সাধারণ জনগণ, যানবাহন চালক ও মালিকদেরকে একসঙ্গে কাজ করার আহব্বান জানাচ্ছি।
বিষয়টি নিয়ে কথা হলে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) নওগাঁ জেলা শাখার সভাপতি এ এস এম রায়হান আলম বলেন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে যাচ্ছি। পাশাপাশি যানবাহন চালক ও মালিকদের সচেতনও করছি। শিক্ষার্থী ফাতেমা আফরিন ছোঁয়ার এমন উদ্যোগ আমাদের অনেক মুগ্ধ করেছে। এমন দাবি ও সচেতনতাবোধ যদি সবার মাঝে জাগ্রত হতো তবে সড়ক দুর্ঘটনা অনেক কমিয়ে নিয়ে আসা সম্ভব বলে মনে করি।
আরও পড়ুন: গুলিস্তানে সড়ক দুর্ঘটনায় স্ত্রী নিহত, স্বামী আহত