লাইফস্টাইল
রেস্তোরাঁ-শপিং মলে প্রবেশের আগে যে বিষয়গুলোতে সাবধান থাকা জরুরি
কারো জন্য বিনোদন, কারো কাছে ঘনিষ্ঠ জনদের সঙ্গে ভালো কিছু সময় কাটানো, কারো বা জীবিকার একমাত্র গন্তব্য। কিন্তু পর্যাপ্ত নিরাপত্তার অভাবে এই কর্মযজ্ঞই পরিণত হচ্ছে ধ্বংসযজ্ঞে। এই ডিস্টোপিয়া সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও গুরুতর হয়ে উঠেছে রাজধানীবাসীর জন্য। নিয়মবহির্ভূত ভবনের নকশা, পরিচালনা সংস্থাগুলোর মধ্যকার সমন্বয়হীনতা এবং দুর্নীতির খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। এমতাবস্থায় ভবনে প্রবেশের সময় জীবন বাঁচানোর জন্য সাবধান হতে হবে ভোক্তা শ্রেণীকেই। চলুন, দেখে নেওয়া যাক রেস্তোরাঁ বা শপিং মলে প্রবেশের সময় কোন বিষয়গুলোর প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখা জরুরি।
বহুমুখী ভবনগুলোতে প্রবেশকালে সাবধানতা কেন এখন সময়ের দাবি
ফায়ার সার্ভিসের মতে, ২০২৩ সালে সারাদেশে মার্কেটসহ নানা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে ৫ হাজার ৩৭৪টির মধ্যে ৪২৪টি ভবন অতি ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে রয়েছে আবার ৫৮টি শপিং মল, যেগুলোর মধ্যে ৯টি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, ১৪টি মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ, এবং ৩৫টি রয়েছে সাধারণ ঝুঁকিতে।
এমন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোতে বিগত কয়েক দশক ধরে অভ্যস্ত হয়ে গেছে অসহায় ঢাকাবাসী। সমস্যাযুক্ত ভবনগুলো নিয়ে বছরের পর বছর ধরে মামলা চলছে। প্রায়ই পিছিয়ে যাচ্ছে ভবন নিরীক্ষণের দিনক্ষণ। যথারীতি নিয়ম মেনে নির্মাণ বিধিতে আসছে পরিবর্তন। কিন্তু থেমে নেই সাধারণ মানুষের মৃত্যু। বরং বিষয়টি এখন এমন এক পরিস্থিতিতে এসে দাঁড়িয়েছে যে, এর সঠিক সুরাহা করতে লেগে যাবে অনেকটা সময়। কেননা ত্রুটিপূর্ণ ভবনগুলো এক নিমেষে ভেঙে ফেলা বা সঠিক নকশা দিয়ে আদ্যোপান্ত বদলে ফেলা সম্ভব নয়।
আরও পড়ুন: আবাসিক ভবনের রেস্তোরাঁ বন্ধের দাবিতে রিট
রেস্তোরাঁয় ভরা ভবন বা অতিকায় শপিং মলে যাওয়াটা জীবনের চেয়ে কতটা গুরুত্বপূর্ণ- এখন সেই হিসাব-নিকাষের সময় এসেছে। সব চাহিদার বিসর্জন দিয়ে হলেও সেই মৃত্যুকূপগুলো থেকে দূরে থাকার কোনও বিকল্প নেই। আর অগত্যা যদি যেতেই হয়, তবে সেক্ষেত্রে অবলম্বন করা উচিত আপোষহীন সতর্কতা।
রেস্তোরাঁ বা শপিং মলে দুর্ঘটনা এড়াতে যে ১০টি বিষয় খেয়াল রাখা দরকার
.
ভবনে নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ
আগুন প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য খোলামেলা জায়গা নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ। প্রধান ফটক থেকে শুরু করে ভেতরের প্রতিটি দরজা প্রবেশের জন্য সহায়ক হতে হবে। এমনকি জানালার বাইরের স্থানগুলোতেও কোনও রকম প্রতিবন্ধকতা থাকা চলবে না। পেছনের দরজা বা অন্য প্রবেশ পথগুলো ময়লা-আবর্জনা বা বাতিল জিনিসের স্তূপে বন্ধ আছে কিনা তা দেখতে হবে।
বহিরাগতরা খুব সহজেই ভেতরে ঢুকে সিঁড়ি বা লিফট ধরতে পারছে কিনা তা খেয়াল করতে হবে। ঠিক একইভাবে দেখতে হবে ভেতরের লোকেরা বাইরে বেরতে যেয়ে কোনও বিড়ম্বনায় পড়ছে কি না। বাণিজ্যিক ভবনগুলোতে প্রায় দেখা যায় জরুরি ডেলিভারিগুলোর কারণে প্রবেশপথ বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া বহুতল ভবনে উপরের তলা থেকে ফেলা ময়লা নিচের তলার জানালার সামনে স্তূপ হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন: বনানীর স্টার কাবাবের আগুন নিয়ন্ত্রণে
সিড়ির প্রশস্ততা ও পর্যাপ্ততা
কোনও আবাসিক ভবন যদি ৬ তলার চেয়ে বেশি হয়, তাহলে আইন অনুযায়ী সেখানে চলাচলের জন্য দু’টি সিঁড়ি থাকতে হবে। একটি সবসময় চলাচলের জন্য, আর অন্যটি জরুরি অবস্থায় নিরাপদ দূরত্বে সরে পড়ার জন্য। সেজন্য একে বলা হয় জরুরি বহির্গমন পথ।
তবে যেগুলো বাণিজ্যিক ভবন, সেখানে লোকসংখ্যার ভিত্তিতে সিঁড়ির সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। এক তলা বাণিজ্যিক বিল্ডিং-এর জন্যও লোকসংখ্যা ৩০০-এর মধ্যে হলে, সেখানে সিঁড়ি দিতে হবে প্রতি ২৩ মিটার পরপর।
প্রশস্ত প্রবেশদ্বার
শপিং মল, রেস্তোরাঁ, বা হাসপাতালের মত ভবনগুলো প্রায় সব সময়ই অধিক লোক সমাগম থাকে। এগুলোর ঢোকার জায়গা বা প্রধান ফটক তিন মিটারের (প্রায় ১০ ফুট) বেশি হতে হবে। অন্যথায় সংকীর্ণ প্রবেশপথের অতিকায় স্থাপনায় প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
জরুরি বহির্গমন পথ এবং ফায়ার এক্সিট লাইট
একটি ভবনে প্রশস্ত প্রবেশপথ যতটা প্রয়োজন তার থেকেও বেশি প্রয়োজন জরুরি বহির্গমন পথ। এ পথে দুর্ঘটনার সময় আত্মরক্ষার জন্য দ্রুত বের হওয়া যায়। এর আরও একটি নাম আছে, আর তা হচ্ছে অগ্নি নির্গমন পথ।
আবাসিক ভবন ছাড়া অন্য যে কোনও ভবনের প্রতি তলায় এই পথ থাকা জরুরি। এগুলোর নির্দেশকগুলো স্পষ্ট এবং সহজে দেখা যায় এমন জায়গায় থাকতে হয়। এই সিঁড়ি পথে বিদ্যুৎ বিভ্রাটেও আলো দেয়ার জন্য লাইটের ব্যবস্থা রাখা হয়, যাকে বলা হয় ফায়ার এক্সিট লাইট।
আরও পড়ুন: কাঁসা, পিতল ও তামার তৈজসপত্র ব্যবহার কতটুকু স্বাস্থ্যসম্মত, বিজ্ঞান কী বলে?
পর্যাপ্ত অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্রাদি
বিএনবিসি (জাতীয় বিল্ডিং কোড) বিধি অনুযায়ী, ৭ তলার চেয়ে উঁচু ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ফায়ার ডিটেক্টর, উচ্চগতির পানি স্প্রে সিস্টেম, স্মোক ডিটেক্টর, এবং ফায়ার এক্সটিংগুইশার থাকা বাধ্যতামূলক।
ধোয়া ও ফায়ার অ্যালার্ম
এই সতর্ক করা ডিভাইসগুলো অগ্নি নিরাপত্তার জন্য অত্যাবশ্যক। কোথাও ধোঁয়া বা আগুন ধরে গেলে এগুলো সঙ্গে সঙ্গেই বিকট শব্দে বেজে উঠে। এতে করে ভবনের প্রত্যেক তলার বাসিন্দারা সতর্ক হয়ে দ্রুত নিচে নেমে আসতে পারে।
ত্রুটিহীন ফায়ার এক্সটিংগুইশার
এই অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রটিতে উচ্চচাপে তরল কার্বন ডাই-অক্সাইড সংরক্ষিত থাকে। আগুন নেভানোর সময় স্প্রে করার মাধ্যমে এই কার্বন ডাই-অক্সাইড ব্যবহার করা হয়।
আগুন লাগার সাথে সাথেই ফায়ার এক্সটিংগুইশার ব্যবহার করলে আগুনকে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তবে ভবনটিতে এই যন্ত্র শুধু থাকলেই হবে না, দেখতে হবে তা ঠিক কোন জায়গায় কিভাবে রাখা আছে।
আরও পড়ুন: ধানমন্ডিতে বুফে খেতে যেসব রেস্তোরাঁয় যেতে পারেন
অফিস বা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাসরুমের মত হালকা ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে প্রতি ৭৫ ফুটে একটি ফায়ার এক্সটিংগুইশার থাকাটা যথেষ্ট।
তবে যে ভবনে রেস্তোরাঁ বেশি, সেখানে স্বাভাবিকভাবেই দুইয়ের অধিক রান্নাঘর থাকে। সেই সাথে থাকে চর্বি এবং তেলের মত দাহ্য বস্তু থেকে প্রচুর পরিমাণে তাপ উৎপাদনের সম্ভাবনা। তাই এই জায়গাগুলোর প্রতি ৩০ ফুটে একটি করে ফায়ার এক্সটিংগুইশার বসানো উচিত। এগুলোর উপস্থিতির জন্য হলুদ-লাল রঙ দিয়ে জেব্রা ক্রসিং চিহ্ন খুঁজতে হবে।
সম্ভব হলে সেগুলো ত্রুটিহীন অবস্থায় আছে কি না তাও নিশ্চিত হয়ে নেওয়া যেতে পারে। কেননা ত্রুটিপূর্ণ ফায়ার এক্সটিংগুইশার স্প্রে করার সময় বিস্ফারিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। খালি চোখে চটজলদি দেখে নেওয়া যেতে পারে এগুলোর সিলিন্ডারের গায়ে কোন ক্ষয় বা ফাটল আছে কিনা। এছাড়া হোস পাইপটির দিকে সুক্ষ দৃষ্টি দিলে চিড় বা লিক চোখে পড়তে পারে।
দেয়াল থেকে বৈদ্যুতিক তার বেরিয়ে থাকা
বর্তমানে প্রায় সব ভবনেই বৈদ্যুতিক কেবল ও তারগুলো দেয়ালের ভেতরে মোটা পাইপ দিয়ে টানা হয়। এগুলোকে বলা হয় ডাক্ট লাইন। অনেক ভবনে দেয়ালে অযাচিত ছোট ছোট গর্তে ক্যাবলগুলো উন্মুক্ত দেখা যায়। সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয় দেয়ালের গর্ত বা ফুটো থেকে বেরিয়ে থাকা ছেঁড়া তার। এই ক্যাবল হোল বা গর্ত দিয়ে ধোঁয়া এবং আগুন খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে গোটা ভবনে। তাছাড়া তারগুলো কোনোভাবে শরীরের সংস্পর্শে আসাটাও বিপজ্জনক।
আরও পড়ুন: অগ্নি দুর্ঘটনা নিরসনে জাতীয় বিল্ডিং কোড ও ফায়ার কোডের যথাযথ প্রয়োগ কেন জরুরি
সিলিন্ডার রাখার জায়গা
অগ্নিকাণ্ডের খুব স্বাভাবিক কারণগুলোর একটি হচ্ছে সিলিন্ডার থেকে আগুন লাগা। তাই ঘরে বা রান্নাঘরে না রেখে ভবনের নিচে সব সিলিন্ডার একসঙ্গে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। একই কাজ করা যায় বাণিজ্যিক ভবনগুলোতেও। তবে সেই জায়গাটি এমন হতে হবে যেন বাতাসের চলাচলে কোনও প্রতিবন্ধকতা না থাকে। তাহলে সিলিন্ডার লিক হলেও নির্দিষ্ট কোনও জায়গায় গ্যাস জমে বিস্ফোরণের কারণ হতে পারবে না।
জায়গাটি পরিদর্শনের সময় খেয়াল করতে হবে প্রতিটি সিলিন্ডার গ্রিলের খাঁচা দিয়ে আবদ্ধ করা আছে কিনা। একটু সন্ধানী দৃষ্টি দিলে আশেপাশে কোনও বিদ্যুতের লাইন বা দাহ্য পদার্থ আছে কিনা তাও চোখে পড়ে যেতে পারে।
ভবনের ভেতরে উপযুক্ত ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা
যে কোনও স্থাপনা নির্মাণের সময় নকশার গুরুত্বপূর্ণ একটি শর্ত থাকে উপযুক্ত ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা।
ভেন্টিলেশন বলতে ভবনের ভেতরে বাতাসের অবাধ চলাচলকে বোঝানো হয়। এর উপর সামগ্রিকভাবে ভেতরের তাপমাত্রা নির্ভরশীল।
ফ্লোরগুলোতে ঘুরে বেড়ানোর সময় দুর্গন্ধ এলে বা স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ অনুভূত হলে বুঝতে হবে ভেন্টিলেশন অবস্থা ভালো নয়। বিল্ডিংয়ে পর্যাপ্ত বায়ুচলাচলের অভাব হলে আর্দ্রতার মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ঘরের ভেতরে আদর্শ আর্দ্রতার মাত্রা ৩০ থেকে ৫০ শতাংশের মধ্যে। এই সীমার বাইরে যাওয়া মানেই ঘরটি বাসযোগ্য নয়।
আরও পড়ুন: রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর গাফিলতির কারণেই বার বার আগুনের ঘটনা
এছাড়া ঘরের দেয়াল ও ছাতে অত্যধিক ধূলিকণা জমতে দেখা যাবে। এটি মূলত বাইরের গাড়ির নির্গমন, ধূলাবালি, বর্জ্য, এমনকি সুগন্ধি থেকেও হতে পারে। ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা উপযুক্ত না হওয়ায় দূষকগুলো ভেতরে এসে ঠিকভাবে বাইরে বেরুতে পারছে না।
ভবনের ডিজাইন ও উদ্দেশ্য পরিবর্তনের রেকর্ড
নির্মাণের সময় প্রাথমিকভাবে আবাসিক ভবন ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে পরিবর্তন করে বাণিজ্যিক করা হয়েছে। এতে করে স্থাপনার সার্বিক নিরাপত্তা ক্ষুণ্নহয়। কেননা বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভিন্ন। বিশেষ করে রেস্তোরাঁ বানানো হলে তা পূর্বের গ্যাসের লাইন ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় না। এরপর আবার দৃষ্টিনন্দনের জন্য কাঁচ বসালে ভেতরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, যা অগ্নি-নিরাপত্তার অন্তরায়। তাই ভবনে প্রবেশের আগে নিরাপত্তার স্বার্থে তার অতীতের রেকর্ড জেনে নেওয়া উত্তম।
ভবন ব্যবহারের অনুমোদনপত্র এবং হালনাগাদকৃত ফায়ার লাইসেন্স
কারিগরি ও ব্যবস্থাপনার দিক থেকে ভবনের প্রতিটি নিরাপত্তার খুঁটিনাটি যাচাই করা জনসাধারণের জন্য অত্যন্ত দুষ্কর। তবে সাধারণ ভোক্তা শ্রেণির জন্য রাজউক ও ফায়ার সার্ভিস থেকে প্রদত্ত ভবন ব্যবহারের সনদ দেখাটাই শ্রেয়। এর পাশাপাশি প্রতি বছর নবায়ন করা ফায়ার লাইসেন্সটিও দেখতে হবে। এই দু’টি নথি প্রদর্শনে অস্বীকৃতি জানালে বা দেখাতে ব্যর্থ হলে, সেই ভবন নিশ্চিন্তে এড়িয়ে চলা যেতে পারে।
শেষাংশ
পরিশেষে, রেস্তোরাঁ কিংবা শপিং মলে দুর্ঘটনা এড়াতে উপরোল্লিখিত বিষয়গুলো যাচাই করা বর্তমান প্রেক্ষাপটের জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ। সিঁড়ি, প্রবেশ ও জরুরি বহির্গমন পথ, উন্মুক্ত বৈদ্যুতিক তার, এবং সিলিন্ডার পরিদর্শন তাৎক্ষণিকভাবে ভবন সম্পর্কে একটা ধারণা দিতে পারে। তবে এই সময় সাপেক্ষ ও জটিল কাজটির বিপরীতে সর্বাধিক সহজসাধ্য আইনগত নথি যাচাই। ইতিবাচক দিক থেকে ভবন ব্যবহারের সনদ প্রদর্শন কোম্পানির ব্র্যান্ডিংয়ের সহায়ক হতে পারে। কেননা ভোক্তা সেখানেই যাবেন, যেখানে তার জীবনের নিরপত্তা আছে।
আরও পড়ুন: কলাবাগানে রেস্তোরাঁয় গ্যাসের চুলার আগুনে দগ্ধ ৬
সুপারশী: যে দ্বীপে পুরুষদের প্রবেশ নিষিদ্ধ
বিশ্ব পরিব্রাজকদের শীর্ষ সারিতে নারীদের অবস্থান এখন আর নতুন কোনও ব্যাপার নয়। গহীন অরণ্য, আকাশচুম্বী পর্বতশৃঙ্গ, এমনকি সাগরের মাঝে জেগে থাকা প্রবাল দ্বীপেও নারীরা এখন সাবলীলভাবে বিচরণ করছে। নারীদের ভ্রমণে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জটি হচ্ছে নিরাপত্তা। ভ্রমণকালে পুরুষদের অযাচিত আচরণের ফলে অনেক ক্ষেত্রেই নারীদের ভ্রমণ হয়ে পড়ে ঝুঁকিপূর্ণ। এমন রূঢ় বাস্তবতার মাঝে অনেক নারী হয়তো এমন কোনো স্থানে ভ্রমণ করতে চান যেটা হবে পুরুষের ছায়া মুক্ত। ‘সুপারশী’ দ্বীপের গল্পটা ভ্রমণপিপাসু নারীদের কাছে কিছুটা স্বপ্নের মতো মনে হতে পারে। কিন্তু বাস্তবে আসলেই এমন একটি দ্বীপ আছে, যেটি শুধু নারীদের এবং যেখানে কোনও পুরুষের প্রবেশাধিকার নেই। চলুন, বিস্ময়কর এই দ্বীপটির ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
সুপারশী দ্বীপের ভৌগলিক অবস্থান
মধ্যরাতের সূর্যের দেশ ফিনল্যান্ডের দক্ষিণ উপকূলবর্তী শহর রেইসবর্গ মিশে গেছে বাল্টিক সাগরে। এই রেইসবর্গ সৈকতের কাছাকাছি বাল্টিক সাগরের বুকে রেইসবর্গ দ্বীপপুঞ্জের একটি ছোট্ট দ্বীপ ফিওর্ড্স্কার। ৮ দশমিক ৪ একরের এই ভূ-খন্ডটি রাজধানী হেলসিন্কির অন্তর্গত রেইসবর্গ শহরের অংশ। এই ফিওর্ড্স্কারই ২০১৮ সাল থেকে সুপারশী নাম নিয়ে বিশ্বের প্রথম ও একমাত্র নারীদের দ্বীপের মর্যাদা অর্জন করেছে।
আরও পড়ুন: সাধ্যের মধ্যে মালদ্বীপের বিকল্প হতে পারে এশিয়ার যেসব ট্যুরিস্ট স্পট
সুপারশী উদ্যোগের পটভূমি
জার্মান বংশোদ্ভূত আমেরিকান নারী উদ্যোক্তা ক্রিস্টিনা রথ ২০১৭ সালে ক্রয় করেন ফিওর্ড্স্কার দ্বীপটি। এই রথ ফোর্বসের দ্রুত সফলতা অর্জনকারী শীর্ষ ১০ নারী উদ্যোক্তাদের একজন। ২০১৬ সালে তিনি তার প্রযুক্তি পরামর্শদানকারী সংস্থা ‘ম্যাটিসিয়া কন্সাল্ট্যান্ট্স’ ৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে বিক্রি করেন। বাংলাদেশি টাকায় এর মূল্য ৭১৩ কোটি ২৩ লাখ ৫৯ হাজার টাকা (১ মার্কিন ডলার = ১০৯ দশমিক ৭৩ বাংলাদেশি টাকা)।
ফিওর্ড্স্কারের মালিক হওয়ার পর রথ দ্বীপের নামকরণ করেন ‘সুপারশী’। তার উদ্দেশ্য ছিল মূলত নেটওয়ার্ক বৃদ্ধির মাধ্যমে বিশ্বের নানান পেশাজীবী নারীদের সান্নিধ্য পাওয়ার। আর এরই অঙ্কুরে জন্ম নেয় সুপারশী।
শুরু থেকেই রথ দ্বীপে শুধুমাত্র নারীদের প্রবেশের রীতি চালু রেখেছিলেন। দ্বীপের বিদ্যুৎ ও পানির লাইন স্থাপনের জন্য পুরুষ নির্মাণ শ্রমিকদের প্রবেশাধিকার ছিল। এছাড়া বিশেষ অনুমতি ছিল রথের ঘনিষ্ঠজনদের মধ্যে অল্প কিছু সংখ্যক পুরুষদের।
আরও পড়ুন: আপনি কি মার্কিন ডলার না কিনে বিদেশে ভ্রমণ করতে পারবেন?
বেশ কয়েকটি মিডিয়াতে নিজের এই উদ্যোগের কথা শেয়ার করেন রথ। মুহুর্তেই তা ভাইরাল হয়ে যাওয়ায়, দ্বীপের সংস্কার কাজ শেষ হওয়ার আগেই বুকিং-এর অনুরোধ আসতে শুরু করে। গোটা বিশ্ব থেকে ৮ হাজারেরও বেশি নারী পর্যটকের আবেদন এসেছিল। এর মধ্য থেকে রথ ১৫০ জনের ভিডিও সাক্ষাৎকার নেন।
অবশেষে ২০১৮ সালের ২৩ জুন পুরো একটি দ্বীপ রিসোর্ট হিসেবে যাত্রা শুরু করে ‘সুপারশী’।
২০২৩ সালের শেষের দিকে শিপিং নির্বাহী কর্মকর্তা ডেয়ান মিহভ দ্বীপটি কিনে নেন এক মিলিয়ন ইউরোতে। মূল্যটি প্রায় ১১ কোটি ৯০ লাখ ৭১ হাজার ৯৯০ টাকার (১ ইউরো = ১১৯ দশমিক ১৫ বাংলাদেশি টাকা) সমান। মালিকানা পরিবর্তনের পরেও চিত্তবিনোদনের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
পবিত্র শবে বরাতের তাৎপর্য, শিক্ষা ও করণীয়
বিশ্বজুড়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য তাৎপর্যবহুল একটি দিবস শবে বরাত। বরাতের রাত বা ভাগ্যের রজনী হিসেবে পরিচিত এই দিনটি পালিত হয় আরবি বর্ষের শাবান মাসের ১৫ তারিখে। এর পটভূমিতে রয়েছে মূলত দিবাগত রাতের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট। সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এর মাহাত্ম্য যথেষ্ট প্রভাব রাখে ইসলামী জীবন ধারা চর্চায়। এ রাতে মহান আল্লাহ অতীতের পাপ-পঙ্কিলতা শুধরে নিয়ে আগামী দিনগুলো নতুন করে শুরু করার সুযোগ দেন। আর তাই এক নিষ্পাপ জীবনের প্রত্যাশায় বিগত কৃতকর্মের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ। চলুন, মহিমান্বিত এই সময়ে পবিত্র শবে বরাতের তাৎপর্য, শিক্ষা ও করণীয়গুলো জেনে নেওয়া যাক।
শবে বরাতের তাৎপর্য
এই রাতে নির্ধারিত হয়েছিল প্রতিটি মানুষের জীবনের শুরু ও শেষ দিনটি। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ভাগ্য বিধাতা আল্লাহ তায়ালা এই রাতে মানুষকে তার জীবনের যাবতীয় পাপ মোচনের সুযোগ দেন। এর মাধ্যমে প্রতিটি মানুষের জন্য নতুন করে জীবন রচনার এক অভাবনীয় দিগন্ত উন্মোচিত হয়। তাই এই রাতকে ক্ষমা ও মুক্তির রাতও বলা হয়। পবিত্র কুরআনে ১৫ শাবানের রাতের কথা না থাকলেও নানা হাদীসগ্রন্থে এর বিভিন্ন ব্যাখা পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন: পবিত্র শবে বরাত ২৫ ফেব্রুয়ারি
বায়হাকী হাদিস অনুসারে, নবী মুহাম্মদ (সাঃ) তার স্ত্রী আয়েশা (রাঃ) কে ১৫ শাবানের গুরুত্ব বোঝাচ্ছিলেন। এ সময় তিনি বলেন, কোন মানুষ কোন সময়ে জন্মগ্রহণ করবে এবং কোন সময়ে মারা যাবে তা এই রাতে নির্ধারণ হয়। তাই এই সময় মানুষের কৃতকর্মের হিসাব-নিকাশ হয় এবং তাদের রিজিকের সিদ্ধান্ত হয়। সেই সঙ্গে তাদের জন্য খোলা থাকে আল্লাহর রহমত ও মাগফেরাতের সমস্ত দরজা।
ইবনে মাজাহ ও বায়হাকী হাদিসে আলী ইবনে আবী তালেব (রাঃ) এর বর্ণনায় আল্লাহর রাসুল (সাঃ) এর বাণীতে উঠে আসে শবে বরাতের তাৎপর্য।
এখানে মুহাম্মদ (সাঃ) শাবান মাসের মাঝামাঝি সময়ে সারা রাত জেগে নামায পড়তে আর দিনের বেলা রোযা রাখতে বলেছেন। কেননা আল্লাহ তায়ালা সূর্যাস্তের পর থেকে ফজরের সময় পর্যন্ত দুনিয়ার আকাশে নেমে এসে ক্ষমা প্রার্থনাকারীর ডাকে সাড়া দেন। এ সময় তিনি যার রিযিক দরকার তাকে রিযিক দেন এবং বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিকে বিপদমুক্ত করেন।
উমর ইবনে আবদুল আজিজসহ অন্যান্য ইসলামী পন্ডিতগণ বছরের চারটি রাতকে অবহেলা করতে নিষেধ করেছেন। কেননা রাতগুলোতে আল্লাহ তার বান্দাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করেন।
এগুলো হচ্ছে- রজবের প্রথম রাত, শাবানের ১৫-তম রাত, ঈদুল ফিতরের আগের রাত এবং ঈদুল আজহার আগের রাতে।
আরও পড়ুন: কালের বিবর্তনে বঙ্গদেশের যে ভাষাগুলো বিলুপ্তির পথে
পবিত্র শবে বরাতের শিক্ষা
সত্যিকারের অনুতাপ
এই বিশেষ রাত পূর্বের ভুল-ভ্রান্তির জন্য সত্যিকার অর্থে অনুতপ্ত হতে শেখায়। এই অনুতাপ ভবিষ্যতে কোনো ভুল করার সময় এই রাত্রির কথা মনে করিয়ে দেবে। ফলে এক রকম দায়বদ্ধতার তৈরি হবে, যা জীবনকে পরিচালিত করতে পারে পূণ্যের পথে।
ক্ষমা করার মনোভাব
সমূহ পাপাচারের পরেও যে মন থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করে, আল্লাহর তাকে ক্ষমা করেন। আর এই বিষয়টি প্রতিটি মানুষকে অন্তরের ঘৃণা দূর করে পরস্পরকে ক্ষমা করতে শেখায়। এই শিক্ষা প্রতিহিংসাপরায়ণতা ও রাগের মত নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মানুষকে দূরে রাখে।
ইবাদত
ইসলামের বিভিন্ন ধর্মীয় দিবসগুলোর মত শবে বরাতও আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য মুসলমানদেরকে উদ্বুদ্ধ করে। ছোট জীবনে যত বেশি ইবাদত করা যায়, পাপ কাজ থেকে ততটাই দূরে থাকা যায়। শুধু তাই নয়, এভাবে সার্বক্ষণিক ইবাদতের মধ্যে থাকা একসাথে দুইটি ক্ষেত্রে সুফল দেয়। এক, এভাবে তওবার মধ্যে থাকলে আল্লাহ যদি চান অতীতের সব গুণাহ ক্ষমা করে দেবেন। দ্বিতীয়ত, প্রতিটি ইবাদতই আল্লাহর কাছে দোয়া করা। এভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা গেলে, এই দোয়াই হবে ভবিষ্যতে বিপদ-আপদ থেকে মুক্তির উপায়।
আরও পড়ুন: কুমিল্লায় দৃষ্টিনন্দন ‘সাত গম্বুজ মসজিদ’
ভূস্বর্গ কাশ্মীরে ভ্রমণ: জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান, ঘুরতে যাওয়ার উপায় ও যাবতীয় খরচ
পাহাড় চূড়া, দীঘল উপত্যকা ও এক পশলা হৃদের প্রাণবন্ত ঐকতানের অন্য নাম কাশ্মীর। তুষারাবৃত চূড়া এবং ব্যস্ত-সমস্ত তৃণভূমির অবারিত মোহনীয়তায় নিমেষেই খুঁজে পাওয়া যায় ভূস্বর্গ নামটির মানে। সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও উষ্ণ আতিথেয়তা যে কোনো পরিব্রাজককে আপন করে নিতে যথেষ্ট। ভারতীয় উপমহাদেশের সর্ব উত্তরে অবস্থিত বিশ্ব জোড়া পর্যটকদের এই প্রিয় গন্তব্য নিয়েই এবারের ভ্রমণ কড়চা। চলুন, জেনে নেয়া যাক কাশ্মীর ভ্রমণের আদ্যোপান্ত।
বাংলাদেশ থেকে কাশ্মীরে যাওয়ার উপায়
ভিসা প্রক্রিয়া
কাশ্মীর ঘুরতে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশিদের ভারতের ট্যুরিস্ট ভিসা লাগবে। এর জন্য ভিসা আবেদনকারীর পাসপোর্টটি আনুমানিক প্রস্থানের দিন থেকে ন্যূনতম ছয় মাসের মেয়াদ থাকতে হবে। সেই সঙ্গে পাসপোর্ট বইয়ে কমপক্ষে দুটি পৃষ্ঠা খালি থাকতে হবে।
এই পাসপোর্টের পাশাপাশি জাতীয় পরিচয়পত্র এবং ড্রাইভিং লাইসেন্সও সঙ্গে রাখা যেতে পারে।
ভিসা আবেদনের জন্য একটি পাসপোর্ট আকারের ছবি জেপিজি বা পিএনজি ফাইলের মাধ্যমে আপলোড করতে হবে।
কাশ্মীরে যেয়ে কোথায় থাকা হবে তার একটা প্রমাণপত্র দেখাতে হবে। হোটেলে থাকার ক্ষেত্রে বুকিংয়ের কাগজপত্র প্রিন্ট করে নিতে হবে।
ভারতে প্রবেশ ও ত্যাগ করার সময়টা নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে বিমান বা ট্রেন যেভাবেই যাওয়া হোক না কেন, আসা-যাওয়ার টিকেট দেখাতে হবে।
সর্বোপরি, কাশ্মীরে যাবতীয় খরচ চালানোর জন্য যথেষ্ট ভ্রমণ তহবিল আছে কিনা তার একটা প্রমাণ দেখাতে হবে।
আরও পড়ুন: ২০২৪ সালে ভিসা ছাড়াই যেসব দেশে যেতে পারবেন বাংলাদেশিরা
ঢাকা থেকে কাশ্মীর যাতায়াত
জম্মু-কাশ্মীরের সঙ্গে সংযোগ আছে ভারতের দিল্লী অথবা চণ্ডিগড়ের। ঢাকা থেকে আকাশপথে সরাসরি এই রাজ্যগুলোতে পৌঁছা যায়। স্থলপথে যেতে হলে রেলপথে বা বাসে কলকাতা দিয়ে ভারতে প্রবেশ করতে হবে।
কাশ্মীরের জনপ্রিয় জায়গাগুলো ঘুরতে হলে প্রথমে যে পর্যন্ত যেতে হবে সে জায়গাটি হচ্ছে শ্রীনগর। দিল্লী থেকে শ্রীনগর বিমানে যেতে সময় লাগে সর্বোচ্চ ৯ ঘণ্টা। এখানে খরচ হতে পারে প্রায় ২৫ হাজার থেকে সাড়ে ৫৫ হাজার টাকা।
রেলপথে যাওয়ার জন্য ঢাকা থেকে কলকাতার হাওড়ার ট্রেন আছে যেখানে শ্রেণীভেদে জনপ্রতি ভাড়া ২ হাজার ৫৯৯ থেকে ৩ হাজার ৮৯৯ টাকা। তারপর হাওড়া থেকে ট্রেন বদলে যাওয়া যাবে জম্মু। এখানে ননএসি স্লিপারগুলোর ভাড়া ৭৫০ থেকে ৭৯০ রুপি বা ৯৯০ থেকে ১ হাজার ৪২ দশমিক ৮ টাকা (১ ভারতীয় রুপি = ১ দশমিক ৩২ বাংলাদেশি টাকা)।
ঢাকা থেকে বাসে গেলে কলকাতা পর্যন্ত বাস ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ১ হাজার ১০০ থেকে ২ হাজার ৬০ টাকা। অতঃপর রেলপথে জম্মু পৌঁছানোর পর শ্রীনগরের বাকিটা পথ গাড়িতে শেয়ার করে কিংবা বাসে করে যেতে হবে। সব মিলিয়ে এভাবে শ্রীনগর পর্যন্ত যেতে সময় লাগতে পারে সর্বোচ্চ ২ দিন ১৯ ঘণ্টা।
আরও পড়ুন: মালয়েশিয়া ভ্রমণ: জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান, ঘুরতে যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
কাশ্মীরের জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানগুলো
শ্রীনগর
কাশ্মীরের প্রবেশদ্বার শ্রীনগরেই মিলবে অপার্থিব অনুভূতির সঞ্চার করা ডাল লেকের স্নিগ্ধতা। এছাড়া এই লেকে রয়েছে এশিয়ার প্রথম ভাসমান সিনেমা হল। শঙ্করাচার্য মন্দিরের চূড়া থেকে জম্মু ও কাশ্মীরের এই রাজধানী শহরটির প্রায় পুরোটা চোখে পড়ে।
মিলানে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের নিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করা হয়েছে ইতালির মিলানের বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলে।
২১ ফেব্রুয়ারি ‘মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২৪’ উপলক্ষে ভোরে কনস্যুলেট প্রাঙ্গণে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করার মধ্য দিয়ে দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়।
প্রথম পর্বে সকাল ৯টায় কনসাল জেনারেলের নেতৃত্বে পদযাত্রার মাধ্যমে কনস্যুলেট প্রাঙ্গণে স্থাপিত শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এরপর কনস্যুলেটের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী একুশে ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলনে মহান শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ইউনেস্কোর মহাপরিচালকের বিশেষ বাণী পাঠ করা হয়।
শহীদদের রুহের মাগফেরাত ও দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মোনাজাতের মাধ্যমে প্রথম পর্বের সমাপ্তি ঘটে।
সম্মিলিতভাবে দিবসটি উদযাপনের লক্ষ্যে স্থানীয় সময় ২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৭.০১ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় ২১ ফেব্রুয়ারি রাত ১২.০১ মিনিটে) ইতালির মিলানের অস্থায়ী শহীদ মিনারে কনসাল জেনারেলের নেতৃত্বে মিলানের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা এবং প্রবাসী বাংলাদেশিরা ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
এছাড়া আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে মাতৃভাষার বহুমাত্রিকতার প্রভাব তুলে ধরতে আলোচনাসভা আয়োজন করা হয়। কনসাল জেনারেল এম জে এইচ জাবেদের সঞ্চালনায় মিলানস্থ বিভিন্ন দেশের কনস্যুলেট-এ কর্মরত কূটনৈতিকদের মধ্যে মিলানে নিযুক্ত ক্রোয়োশিয়ার কনসাল জেনারেল স্টেফান রিবিচ, মিলানে নিযুক্ত মিশরের কনসাল জেনারেল মানাল আবদেলদাইম, লা স্টাম্পা এসতেরার সাংবাদিক ডেভিড রোসি এবং লা গেজেটা ডি মিলানের সাংবাদিক আগস্টিনো মারোতা বক্তব্য দেন।
এম জে এইচ জাবেদ বলেন, ভাষা শহীদদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের বিনিময়ে ১৯৫২ সালে মাতৃভাষার সম্মান সুরক্ষিত হয়েছিল, যার পথ ধরে বঙ্গবন্ধুর সৃজনশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ অর্জন করে পরম কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা।
মালয়েশিয়া ভ্রমণ: জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান, ঘুরতে যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
নৈসর্গিক প্রকৃতি, স্বতন্ত্র সভ্যতা-সংস্কৃতি এবং জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ মালয়েশিয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সেরা গন্তব্য। দক্ষিণ চীন সাগর বিধৌত দেশটির সীমানা বহু যত্নে আগলে রেখেছে ঘন সবুজ অরণ্যে ঢাকা সুউচ্চ পর্বতমালা। উপকূলবর্তী দেশটির স্নিগ্ধ সৈকত, রেইনফরেস্ট, উদ্যান এবং ঐতিহাসিক শহরগুলো বিশ্ব জুড়ে দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে। ১৮ শতকের মালয় রাজ্য থেকে উদ্ভূত এই দেশটি ভ্রমণের প্রয়োজনীয় রসদ সংগ্রহই আজকের নিবন্ধের আলোচ্য বিষয়।
চলুন, মালয়েশিয়ার জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান থেকে শুরু করে সেখানে ভ্রমণ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
মালয়েশিয়ার জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানগুলো
কুয়ালালামপুর শহর
মালয়েশিয়ার অভিজাত সভ্যতার সম্মুখীন হতে হলে প্রথমেই দেখতে হবে রাজধানী কুয়ালালামপুর। এখানেই অবস্থিত দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ল্যান্ডমার্ক পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার। ১ হাজার ৪৮৩ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট ৮৮ তলার এই স্থাপনা বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু জোড়া অট্টালিকা। এর ভেতরে উপভোগের জন্য রয়েছে স্কাই ব্রিজ, অবজারভেশন ডেক ও গিফট শপ।
কুয়ালালামপুরের অন্যান্য আকর্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে হচ্ছে কেএল বা কুয়ালালামপুর টাওয়ার, সুলতান আব্দুল সামাদ ভবন ও বাতু গুহা।
আরও পড়ুন: সাধ্যের মধ্যে মালদ্বীপের বিকল্প হতে পারে এশিয়ার যেসব ট্যুরিস্ট স্পট
কালের বিবর্তনে বঙ্গদেশের যে ভাষাগুলো বিলুপ্তির পথে
একটি ভাষা শুধু কতক জনগোষ্ঠীর যোগাযোগের মাধ্যম নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে সংশ্লিষ্ট মানবগোষ্ঠীর শত বছরের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। একটি ভাষার মৃত্যু মানে সেই শত বর্ষের জীবনধারার ইতিহাসের পরিসমাপ্তি। সময়ের বিবর্তনে ঠিক সেই বিলুপ্তির শিকারেই পরিণত হয়েছে বাংলাদেশের নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষাগুলো। সংখ্যালঘু মানুষগুলোর নিবাস দেশের প্রত্যন্ত ও দুর্গম অঞ্চলগুলোতে হওয়ায় অগোচরেই থেকে যাচ্ছে এই ভাষা বিলুপ্তি। বিগত দশকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটের সর্বশেষ সমীক্ষা অনুযায়ী বঙ্গদেশের বিলুপ্তপ্রায় ভাষার সংখ্যা মোট ১৪টি। চলুন, বিপন্নপ্রায় সেই ভাষাগুলোর ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
বঙ্গদেশের যে ভাষাগুলো হারিয়ে যাচ্ছে
কন্দ
১৯ শতকের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশে আগমন ঘটেছিল কন্দ ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর। কন্দদের আদিভাষার নাম কন্দফারসি। ভারতের ওড়িশা থেকে এ দেশে কন্দদের আনা হয়েছিল মূলত রেললাইন স্থাপন ও চা বাগানের কাজে। এদের মধ্যে বর্তমানে কেউই আর সেই কন্দতে কথা বলতে পারে না। ভাবের আদান-প্রদানটা হয়ে থাকে উড়িয়া ভাষায়।
খাড়িয়া
অস্ট্রো-এশিয়াটিক গোত্রের মুণ্ডা শাখার অন্তর্গত খাড়িয়া ভাষার সর্বাধিক ব্যবহার হয় ভারতের ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড়, ও ওড়িশায়। বাংলাদেশের শ্রীমঙ্গলে মংরাবস্তিতে প্রায় ১০০-এরও বেশি পরিবারের মাতৃভাষা খাড়িয়া। কিন্তু এ ভাষায় স্বাচ্ছন্দ্যে কথা বলতে পারে মাত্র ২ জন। এদের একজন খাড়িয়া সমাজকর্মী হিসেবে নিজেদের মাতৃভাষা রক্ষার কাজ করছেন।
আরও পড়ুন: আসামের বাংলা ভাষা আন্দোলন নিয়ে মাসুদ করিমের তথ্যচিত্র
২০২০ সালে তিনি খাড়িয়াদের ওপর একটি সমীক্ষা করেছিলেন, যেখানে বাংলাদেশে ৪১টি খাড়িয়া গ্রামের খোঁজ পাওয়া যায়। গ্রামবাসীদের সংখ্যা ছিল প্রায় ৫ হাজার ৭০০ জন।
কোডা
পশ্চিমবঙ্গ, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং বাঁকুড়া জেলার প্রচলিত এক ধরনের মুণ্ডা ভাষার নাম কোডা। এর আরও নাম আছে, যেমন কোরা, কাওরা, কোরালি, কোরাটি, কোরে, এবং মুদিকোরা। ভারত ও বাংলাদেশের কোরা গোষ্ঠী দ্বারা কথিত একটি বিপন্ন মুণ্ডা ভাষা। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ কোডা-ভাষী গ্রামগুলো হচ্ছে রাজশাহী বিভাগের কুন্দং এবং কৃষ্ণপুর। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে কোডা বাংলার সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে গেছে। দুয়েক জন প্রবীণদের মুখে কিছু কোডা শোনা গেলেও তরুণদের সবাই বাংলাতেই কথা বলেন।
মুণ্ডারি
অস্ট্রোএশিয়াটিক ভাষা বিভাগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুণ্ডা ভাষা এই মুণ্ডারি। নেপাল, পূর্ব ভারতীয় রাজ্যের ঝাড়খন্ড, ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গের মুণ্ডাদের এই কথ্য ভাষার সঙ্গে সাঁওতালি ভাষার অনেক মিল।
আরও পড়ুন: একুশে বইমেলার শিকড়ের সন্ধান
বাংলাদেশে মুণ্ডারির ব্যবহার দেখা যায় খুলনার কয়রা উপজেলার উত্তর ও দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নে, ডুমুরিয়া, এবং সাতক্ষীরার শ্যামনগর, দেবহাটা ও তালা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামগুলোতে। সুন্দরবন সংলগ্ন নদী পাড়ের গ্রামগুলোর এই আদিবাসীরা এখন কদাচিৎ মুণ্ডা ব্যবহার করে। পাবনার ঈশ্বরদীর তরুণ মুণ্ডাদের অনেকেই প্রথম দিকে জানতো না যে, তাদের নিজস্ব একটি মাতৃভাষা ছিল।
কোল
একদম আলাদা মুণ্ডা ভাষা হলেও কোল এবং কোডাকে মুণ্ডারির মিশ্র ভাষা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ১৮৩১ থেকে ১৮৩২ সালে কোলরা বৃটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। সুযোগ্য নেতৃত্বের অভাব, আঞ্চলিক সীমাবদ্ধতা, শিক্ষিত শ্রেণীর সমর্থনের অভাব এবং নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগের অভাবে আন্দোলন ব্যর্থ হয়।
কোলদের গ্রাম সবচেয়ে বেশি রয়েছে রাজশাহীর গোদাগাড়ি উপজেলার বরেন্দ্র অঞ্চলে এবং রংপুরের বাবুডাইংয়ে।
আরও পড়ুন: টাকা কীভাবে এলো? মানব সভ্যতায় টাকার ইতিহাস
সৌরা
ভারতের সীমান্ত পিলার ও ত্রিপুরা বনবাজার খেকে ২০০ গজ দূরত্বে বাংলাদেশের শ্রীমঙ্গলের রাজগাট ইউনিয়নের সৌরা পল্লী। এই গ্রাম পরম যত্নে আগলে রেখেছে ২২টি সৌরা পরিবারকে। এছাড়া উত্তরবঙ্গের রংপুরেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সৌরারা। এদের বেশিরভাগই কথা বলেন ওড়িয়া, সাদরি ও স্থানীয় তথা উত্তরবঙ্গের আঞ্চলিক ভাষায়।
মালতো
পূর্ব ভারতের মাল্তো উপজাতির মুখে প্রচলিত উত্তর দ্রাবিড় ভাষা এই মালতো। এর ‘পাহাড়িয়া’ নামটিও বেশ প্রসিদ্ধ, তবে ‘রাজমহালি’ নামটি খুব কম শোনা যায়।
পাবনার ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়া ইউনিয়নের মাড়মি পল্লীর অধিবাসীদের প্রথম ভাষা মালতো। এছাড়া নাটোর, রাজশাহী ও নওগা জেলায়ও রয়েছে মালতোদের বসবাস। বর্তমানে জীবিকার উদ্দেশ্যে লেখালেখির যাবতীয় কাজ বাংলায় হওয়ায়, কথা বলার সময়েও কমে গেছে মালতোর ব্যবহার।
আরও পড়ুন: বাংলা ভাষার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ: কোথা থেকে এলো বাংলা ভাষা
খুমি
বার্মার (বর্তমান মিয়ানমার) দক্ষিণ চীন রাজ্যের ভাষা দক্ষিণ চীনের একটি উপভাষা খুমি। বার্মার পালেওয়া ও তার আশেপাশের অঞ্চল এবং বাংলাদেশের বান্দরবান জেলার আদিবাসীরা এই ভাষা ব্যবহার করে। আরাকানীয় (বর্তমান রাখাইন, যা মিয়ানমারের একটি অঞ্চল) এবং বর্মী ভাষার বিস্তর প্রভাব এই ভাষার ওপর। বান্দরবানের রুমা, থানচি এবং রোয়াংছড়িতে খুমিদের বসবাস।
পাংখোয়া
ভারতের মিজোরাম রাজ্যে ব্যবহৃত কুকি ভাষার নাম পাংখোয়া, যা পাংখু, পাংখোয়া বা পাং নামেও পরিচিত। পাংখোয়ার দুইটি উপভাষা হচ্ছে বিলাইছড়ি ও কংলাক। বাংলাদেশে পার্বত্য রাঙ্গামাটির সাজেক উপত্যকা থেকে বারাবানের রুমা সংলগ্ন এলাকায় পাংখোয়া জাতির বসবাস।
২০২২ সালে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ থেকে পাহাড়ি ৭টি উপজাতীয় ভাষার স্বতন্ত্র শব্দকোষ প্রকাশ করা হয়েছিল। সেগুলোর মধ্যে পাংখোয়া অন্যতম।
আরও পড়ুন: বাংলা নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রার ইতিহাস: রূপরেখায় অপশক্তির অবসান কামনায় শান্তি মিছিল
রেংমিটচ্য
খুমি এবং ম্রো ভাষার ঘনিষ্ট প্রভাব থাকলেও মায়ানমারের কুকি-চীন ভাষার শ্রেণীভুক্ত রেংমিটচ্য একটি স্বতন্ত্র ভাষা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রাক্কালে আলীকদমের পার্টি পাড়ায় বাস করতো শতাধিক রেমিটচ্য পরিবার। আলীকদম সদর থেকে ১০ থেকে ১২ মাইল দূরে তৈনখালের উপত্যকার ছোট্ট গ্রাম ক্রাংসিপাড়া। সেখানে রেমিটচ্যভাষীদের বসতি ছিল প্রায় ৩০০ বছর ধরে। কালের বিবর্তনে এই সম্প্রদায়ের লোকসংখ্যা কমতে কমতে ২০২২ সালে ৬-এ এসে দাঁড়ায়। এদের বেশিরভাগই আবার ছিলেন ষাটোর্ধ্ব। এদের মধ্যে ২ জন থাকতেন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ম্রোদের সঙ্গে।
মূলত স্থানীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ায় সংখ্যা কমছে রেংমিটচ্য ভাষাভাষীদের।
চাক
মিয়ানমারের চাক নৃ-গোষ্ঠীর কথ্য হিসেবে প্রচলিত আরও একটি চীন-তিব্বতি ভাষা চাক। শাল বিভাগভুক্ত এই ভাষাটি সাক নামেও পরিচিত। ১৩ শতকের মাঝামাঝি সময়ে কাদু জনগোষ্ঠী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আলাদা ভাবে পরিচিতি লাভ করে চাকরা। ১৪ শতকে তাদের রাজ্য আরাকানিরা দখল করলে তারা পার্বত্য চট্রগ্রামে প্রবেশ করে। বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ের ছড়া অঞ্চলগুলোই এখন এই চাকদের নিবাস। সুরপ্রধান চাক ভাষা সাহিত্যে বেশ সমৃদ্ধ হলেও লেখায় তেমন প্রচলন না থাকায় এখন বিপন্ন হতে চলেছে।
আরও পড়ুন: পহেলা বৈশাখ: বাংলা নববর্ষের উৎপত্তি এবং ইতিহাস
খিয়াং
রাঙামাটির কাপ্তাই ও চন্দ্রঘোনা এবং বান্দরবানের থানচি ও রোয়াংছড়িতে বসবাসরত খিয়াং আদিবাসীদের কথ্য ভাষা খিয়াং। বাংলাদেশে খিয়াংরা মূলত দুটি গ্রুপে বিভক্ত- লাইতু ও কংতু। লাইতুরা থাকে সমতলে আর কুংতুরা থাকে পাহাড়ি এলাকায়। এদের বেশিরভাগই বর্তমানে বাস করে রাজকীয় মং সম্প্রদায়ের সঙ্গে। তাই কথ্য রীতিতে আর আগের সেই মৌলিকতা নেই। অবশ্য তা ফিরিয়ে আনার জন্য খুব ছোট পরিসরে হলেও তোড়জোড় শুরু হয়েছে। রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের ৭টি পাহাড়ি ভাষার শব্দকোষের মধ্যে খিয়াং একটি।
লুসাই
উত্তর-পূর্ব ভারত ও মিয়ানমারের প্রসিদ্ধ একটি উপজাতীয় ভাষা লুসাই। আসামের লুসাই পাহাড় থেকেই এই ভাষার নামকরণ হয়েছে। বাংলাদেশের লুসাইভাষীরা নিজেদের মঙ্গোলীয়দের বংশধর বলে দাবী করে। রাঙ্গামাটির সদরের বাঘাইছড়ি এবং বান্দরবান সদর ও রুমায় রয়েছে লুসাইদের গ্রাম।
পাহাড়ি ভাষা সংরক্ষণের জন্য রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ কর্তৃক যে শব্দকোষগুলো প্রকাশ করা হয়েছিল, তার মধ্যে লুসাইও রয়েছে।
আরও পড়ুন: কীভাবে এল বাংলা ক্যালেন্ডার: দিনলিপি গণনার ইতিবৃত্ত
লালেং (পাত্র)
বাংলাদেশের উপভাষাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম পরিচিত পাত্র বা লালেং ভাষা। সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে গহীন জঙ্গলে এই ভাষাভাষী লোকদের বসবাস। এই ভাষার নাম মূলত লালেং ঠার বা লাইয়ুংটার। এর কোনও শব্দের সঙ্গে বাংলা অথবা অন্য ভাষার কোনও মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি।
শেষাংশ
দেশের এই ১৪টি বিলুপ্তপ্রায় ভাষা কোনোরকম বেঁচে আছে উপজাতিগুলোর গুটি কয়েক প্রবীণ সদস্যের মাঝে। এলাকায় অন্যান্য সংখ্যাগরিষ্ঠ ভাষার প্রভাবে নৃ-গোষ্ঠীগুলোর নতুন প্রজন্মের কাছ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে মাতৃভাষা। ফলে হুমকির মুখে রয়েছে খাড়িয়া, কোল, রেংমিটচ্য, খিয়াং, ও লুসাইয়ের মত ভাষা, যেগুলো এক সময় নিজ নিজ অঞ্চলে যথেষ্ট প্রভাবশালী ছিল।
সমৃদ্ধ শব্দকোষ তৈরি পাংখোয়া, লুসাই ও খিয়াং ভাষার জন্য নিঃসন্দেহে এক যুগান্তকারী উদ্যোগ। এমন পদক্ষেপ বাকি বিপন্নপ্রায় ভাষাগুলোর ক্ষেত্রেও শিগগিরই গ্রহণ করা জরুরি। এক্ষেত্রে শুধু সরকারি মহলগুলোই নয়, এগিয়ে আসতে হবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও।
আরও পড়ুন: ‘ধারণার চেয়েও বেশি’: মধ্যযুগে বাংলায় হাবশি শাসন এবং আফ্রিকা-ভারত সংযোগ সম্পর্কে ডা. কেনেথ রবিন্স
গরুর দুধের বিকল্প হিসেবে খেতে পারেন যেসব স্বাস্থ্যসম্মত খাবার
মানবদেহের ক্ষুদ্রান্ত্রে তৈরি হওয়া ল্যাকটেজ নামক পাচক এনজাইম দুগ্ধজাত খাবারের ল্যাকটোজ বা চিনিকে ভেঙে তা হজমের জন্য উপযোগী করে তোলে। অনেকের ক্ষেত্রে এই ল্যাকটেজ যথেষ্ট পরিমাণে তৈরি হয় না। ফলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় ল্যাকটোজ হজমে। ল্যাকটোজ ইন্টলারেন্স নামে পরিচিত হজমের এই নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ায় পেট ব্যথা থেকে শুরু করে ডায়রিয়া পর্যন্ত হয়ে থাকে।
ল্যাকটোজ ইন্টলারেন্ট ব্যক্তিরা গরুর দুধসহ দুধের তৈরি নানান ধরনের খাবারগুলো এড়িয়ে চলেন। এতে একদিকে বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা থেকে মুক্ত থাকলেও অন্যদিকে তারা বঞ্চিত হন ক্যালসিয়ামের মতো অপরিহার্য পুষ্টিগুণ থেকে। কিন্তু দুধ ছাড়াও এমন কিছু ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার আছে যেগুলো সামগ্রিকভাবে দুধের পুষ্টির যোগান দিতে পারে। চলুন, গরুর দুধের সেই স্বাস্থ্যসম্মতো বিকল্পগুলোর ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
প্রাপ্তবয়স্কদের ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণে গরুর দুধের ১০টি উৎকৃষ্ট বিকল্প
বীজ জাতীয় বা দানাদার খাবার
নিয়মিত শরীর চর্চায় শণ, তিল, চিয়া, সয়ার মতো বীজগুলো রীতিমতো সুপারফুড হিসেবে পরিচিত। তন্মধ্যে চিয়া বীজে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ অন্যগুলোর তুলনায় বেশি। এমনকি এই পরিমাণ বিভিন্ন দুগ্ধজাত দ্রব্যে থাকা ক্যালসিয়াম থেকেও বেশি।
আরও পড়ুন: কেক ও বিস্কুট খাওয়ার ক্ষতিকর দিক: বিকল্প কিছু স্বাস্থ্যসম্মত পুষ্টিকর খাবার
চিয়া বীজ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ফাইবারের জন্যও সুপরিচিত। এই বীজগুলোতে রয়েছে ফসফরাস এবং ম্যাগনেসিয়ামসহ সুস্থ হাড়ের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ। দুই টেবিল চামচ চিয়া বীজে প্রায় ১.৭৯ গ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।
এক টেবিল চামচ তিলের বীজে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ প্রায় ০.৮৮ গ্রাম। তিলের বীজে আরও আছে স্বাস্থ্যকর চর্বি (বিশেষত পলিআনস্যাচুরেটেড এবং মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট), যা হৃদপিন্ডের কার্যকারিতায় অবদান রাখে। এছাড়াও তিলে আছে খনিজ, ভিটামিন, প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন-ই ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
বীজগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় সয়াবিন বা সয়া দিয়ে বানানো খাবারগুলো যেমন সয়ার দুধ ও দই। এ ধরনের ফোরটিফাইড বা সংরক্ষিত খাবারগুলো মূলত গরুর দুধে অ্যালার্জি থাকা লোকদের ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণেই তৈরি। রান্না করা সয়া খাবারের তুলনায় অপরিপক্ক কাঁচা বীজগুলোতেই ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে।
আরও পড়ুন: ধানমন্ডিতে বুফে খেতে যেসব রেস্তোরাঁয় যেতে পারেন
দুধের উৎকৃষ্ট বিকল্প সুষম খাবার হিসেবে কাজ করতে পারে মটরশুঁটি। এই সবুজ বীজে আছে ভিটামিন এ, সি, কে, ফাইবার, আয়রন এবং ক্যালসিয়াম। এটি ভূমিকা রাখে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে, হিমোগ্লোবিন তৈরিতে, হৃদপিন্ডের সুস্থতা, ও চোখের জ্যোতি বাড়ানো সহ ওজন নিয়ন্ত্রণে।
বাদাম
প্রোটিন, ফাইবার ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ চিনা বাদাম, পেস্তা, আখরোট, কাঠ বাদাম এবং কাজু বাদাম শুধু স্বাস্থ্যকরই নয়; বেশ উপাদেয়। এছাড়াও অন্যান্য খনিজ যেমন ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাসিয়াম, তামা এবং সেলেনিয়ামের পাশাপাশি আছে ভিটামিন ই, বি-২, ও ফোলেট। বাদামে থাকা উপাদান দীর্ঘমেয়াদে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাসে অবদান রাখতে পারে।
এগুলোর মধ্যে ক্যালসিয়ামের অনুপাতে কাঠ বাদাম সবার থেকে এগিয়ে। এক আউন্স কাঠ বাদামে থাকে প্রায় ৭৬ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম।
আরও পড়ুন: প্যাকেটজাত আলুর চিপস কেন শরীরের জন্য ক্ষতিকর?
সয়া দুধের মতো বাদামের দুধও বেশ জনপ্রিয় একটি খাবার। সুষম খাবারের সঙ্গে মুখরোচক খাবারের সংমিশ্রণে বাদামের কোনও জুড়ি নেই। কম ক্যালোরি সম্পন্ন বাদাম দুধে গরুর দুধের তুলনায় কার্বোহাইড্রেট থাকে অনেক কম। ওজন ঠিক রাখার জন্য বেশ সুখ্যাতি থাকলেও এগুলো হাড়ের স্বাস্থ্য উন্নতিতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তবে যাদের বাদামে অ্যালার্জি আছে তাদের এই খাবারগুলোর ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
বাঁধাকপি
চর্বি, চিনি ও কোলেস্টেরল-মুক্ত এবং স্বল্প পরিমাণে সোডিয়াম ও ক্যালরি যুক্ত বাঁধাকপি দেহের প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদানের সেরা উৎস। দুই কাপ কাঁচা বাঁধাকপিতে ক্যালসিয়াম থাকে প্রায় ১.৮ গ্রাম। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর এই সবুজ সবজি কোষ প্রাচীরের ক্ষয়কে বিলম্বিত করতে পারে।
অন্যান্য উদ্ভিজ্জ খাবারের ন্যায় বাঁধাকপিতেও আছে অক্সালেটের মতো যৌগ, যেগুলো ক্যালসিয়াম শোষণে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। তাই এই অক্সালেটের পরিমাণ হ্রাস করার জন্য বাঁধাকপি ভালোভাবে রান্না করে নেওয়া উচিৎ। রান্না ছাড়া সেদ্ধ করে প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় সালাদ হিসেবেও রাখা যেতে পারে।
আরও পড়ুন: নিরাপদ ব্রয়লার মুরগি কী, কেন খাবেন
ব্রকলি বা সবুজ ফুলকপি
একই গোত্রভুক্ত উদ্ভিদ হওয়ায় বাঁধাকপির মতো ফুলকপিও ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ। বিপাকের সময় শরীরে নানা ধরনের ফ্রি র্যাডিকেল নামক জৈব অণু তৈরি হয়। খুব বেশি পরিমাণে এই ফ্রি র্যাডিকেল এতটাই বিষাক্ত যে তা কোষের ক্ষতি সাধন করে ক্যান্সারের দিকে ধাবিত করতে পারে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এই জৈব অণুগুলোর পরিমাণকে মাত্রা ছাড়াতে দেয় না।
দেহের শক্ত হাড়ের জন্য ক্যালসিয়ামের সঙ্গে এক হয়ে কাজ করে কোলাজেন। এই কোলাজেন তৈরিতে প্রয়োজন হয় ভিটামিন সি। রক্ত জমাটের পাশাপাশি হাড়ের গঠনে কাজ করে ভিটামিন কে। আর এই ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি ও কে সবই থাকে ব্রকলিতে। এক কাপ হিমায়িত ব্রকলিতে প্রায় ০.৮৭ গ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।
ছোট মাছ
মানবদেহের কাঠামোকে সুদৃঢ় করে রাখে হাড়গুলো, আর এই হাড়ের দৃঢ়তা প্রদানের দরকারি উপাদান রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ছোট মাছের মধ্যে। গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোর ছোট মাছ আর দুধ একই পরিমাণে ক্যালসিয়ামের যোগান দেয়।
আরও পড়ুন: কাঁসা, পিতল ও তামার তৈজসপত্র ব্যবহার কতটুকু স্বাস্থ্যসম্মত, বিজ্ঞান কী বলে?
ছোট মাছে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ গ্রাম প্রতি ৮.৬ থেকে ১ হাজার ৯০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়াও রয়েছে ভিটামিন এ, আয়রন এবং জিঙ্ক, যেগুলো দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি ও রক্তের সুস্থ পরিচলনে অবদান রাখে। গ্রামে ও শহরে অধিক বিক্রিত ছোট মাছগুলোর মধ্যে পুটি, কাচকি, মলা-ঢ্যালা ও দারকিনা অন্যতম।
মিষ্টি আলু
তিন বেলা খাবারে সঙ্গে মিষ্টি আলুর সংযোজন হতে পারে প্রতিদিনের সর্বোচ্চ পুষ্টির নিশ্চয়তা। একটি বড় মিষ্টি আলু খাওয়া মানে প্রায় ০.৬৮ গ্রাম ক্যালসিয়াম শরীরে প্রবেশ করা। কম ফ্যাটযুক্ত এই সবজিতে আছে ভিটামিন সি, এ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার। এই পুষ্টিগুলো বার্ধক্যজনিত প্রভাবগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে, ক্যান্সার প্রতিরোধে এবং দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে উপযোগী।
সরিষা শাক
শাক-সবজি ভিত্তিক খাদ্যাভ্যাস পরিচালনার শুরুটা হতে পারে সরিষা শাক দিয়ে। থায়ামিন (বি-১) নিয়াসিন (বি-৩) এবং পাইরিডোক্সাইন (বি-৬) সহ বি ভিটামিনের এক বিরাট উৎস এই শাক। এরা মূলত হৃৎপিণ্ড এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতায় কাজ করে। তবে সরিষায় থাকা ভিটামিন কে অংশ নেয় হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি করতে এবং ফ্র্যাকচার থেকে রক্ষা করতে। কাটাছেড়ার সময় ধমনীতে ক্যালসিয়ামের প্রাচীর গড়ে রক্তক্ষরণ রোধ হয়। এই প্রাচীর গড়াতে যেন কোনো বাধা সৃষ্টি না হয় তার জন্য প্রতিরোধের ব্যবস্থা করে ভিটামিন 'কে'।
আরও পড়ুন: নিপাহ ভাইরাস সতর্কতা: কাঁচা খেজুরের রস খাওয়ার ঝুঁকি
এক কাপ রান্না করা সরিষার শাকে ১.০৩ গ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। এর সঙ্গে বাঁধাকপি যুক্ত করে তৈরি খাবার দৈনিক ক্যালসিয়ামের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারে।
পালং শাক
দেশের সাধারণ উপাদেয় সবজি পালং শাকের প্রধান উপাদান ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন এ, সি, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, এবং পটাসিয়াম। প্রতি কাপ শাকে ২৫০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়ামের উপস্থিতি বিদ্যমান। দাঁত ও হাড়ের যত্নে প্রতিদিন খাবারের সঙ্গে পালং শাক রাখাই শ্রেয়।
এতে থাকা ভিটামিন কে হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষার পাশাপাশি শরীর যথাযথভাবে ক্যালসিয়াম শোষণ করতে পারছে কি না তা নিশ্চিত করে। কম ক্যালরি থাকায় এটি ওজন কমানোর জন্যও উপযুক্ত। এছাড়াও এই শাকে আছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষমতা, যেটি ডায়াবেটিসের মতো রোগের ক্ষেত্রেও সহায়তা করতে পারে।
আরও পড়ুন: অপরাজিতা ফুলের নীল চা: জাদুকরী স্বাস্থ্যগুণ, বানানোর পদ্ধতি
ঢেঁড়শ
বিস্ময়কর হলেও দুগ্ধজাত খাবারের ভালো একটি বিকল্প হচ্ছে ঢেঁড়শ। এক কাপ ঢেঁড়শে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ প্রায় ০ দশমিক ৮২ গ্রাম। এছাড়াও একটি সুষম খাবার হওয়ার জন্য যতটুকু পুষ্টি প্রয়োজন তার সবটুকুই আছে এতে। ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফোলেট এবং ফাইবারের এই উৎকৃষ্ট বাহক ব্যবহৃত হয় নিত্যদিনের তরকারিতে। এতে থাকা প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাসিয়াম সামগ্রিকভাবে শরীরিক সুস্থতা বজায় রাখে।
এর উপযোগীতার মধ্যে আরও রয়েছে বদ হজম দূরীকরণ, কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানো, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ ও প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য।
শুকনো ডুমুর
সুস্বাদু ফল ও মিষ্টি জলখাবারের ক্ষেত্রে ক্যালসিয়ামের একটি উপযুক্ত জৈব উৎস হচ্ছে ডুমুর। আধা কাপ শুকনো ডুমুর প্রায় ১.২১ গ্রাম ক্যালসিয়াম সরবরাহ করতে পারে। এছাড়া উচ্চ মাত্রায় ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম এবং ফসফরাসের উপস্থিতি হাড়ের রক্ষণাবেক্ষণে সম্মিলিত ভাবে কাজ করে।
আরও পড়ুন: খেজুর খাওয়ার উপকারিতা: সারাদিন রোযা রেখে ইফতারে কেন খেজুর খাবেন?
ডুমুর প্রাকৃতিকভাবেই মিষ্টি, তাই এতে আলাদা করে কোনও চিনি দেওয়া লাগে না। তাই চকোলেট, কেক এবং বিস্কুটে মতো প্রক্রিয়াজাত মিষ্টির ক্ষেত্রেও এটি একটি স্বাস্থ্যকর বিকল্প। এতে থাকা ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান বার্ধক্যজনিত লক্ষণগুলো দূর করতে সহায়তা করে।
শেষাংশ
সর্বপরি, এই ১০টি খাবার গরুর দুধের বিকল্প হিসেবে একটি সুষম খাদ্যাভ্যাসের সহায়ক হতে পারে। বাদামসহ বীজ জাতীয় দানাদার খাবারের সাইড ডিশগুলোর যে কোনোটি যথেষ্ট নিত্যদিনের ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণে। এরকম হাল্কা নাস্তার তালিকায় দারুণ প্রতিস্থাপন হতে পারে শুকনো ডুমুর অথবা মিষ্টি আলু। দুপুর ও রাতের খাবারের সঙ্গে তরকারিতে রাখা যেতে পারে বাঁধাকপি, ফুলকপি, পালং শাক বা সরিষা শাক। এছাড়া ঢেঁড়শ কিংবা ছোট মাছ দিয়েও পরিপূর্ণ করা যেতে পারে প্রতিদিনের স্বাস্থ্যকর খাদ্যতালিকা।
সবমিলিয়ে, এই খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত হওয়া মানেই দীর্ঘ মেয়াদে সুস্থ জীবনের মাইলফলক রচনা।
আরও পড়ুন: শহরে রান্নার জন্য গ্যাসের চুলার সেরা কয়েকটি বিকল্প
জীবনে রঙ ও আনন্দ নিয়ে আসে পহেলা ফাল্গুন
বাংলা ফাল্গুন মাসের বসন্তের প্রথম দিন পহেলা ফাল্গুনে বর্ণিল পোশাক, ফুল আর সংগীতায়জনের মধ্য দিয়ে উৎসবে মেতে উঠেছে দেশের উৎসবপ্রেমী মানুষ।
ফাল্গুন বাংলা বর্ষপঞ্জির একাদশ মাস এবং ঋতুর প্রথম মাস বসন্ত। উষ্ণ রোদ, প্রস্ফুটিত ফুল আর পাখির কিচিরমিচির বসন্তকে বাংলাদেশের ষষ্ঠ ঋতুর রাজা করে তোলে।
পহেলা ফাল্গুন উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে হাজার হাজার মানুষের সমাগমে রাজধানীতে উদযাপনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে চারুকলার বকুলতলা।
আরও পড়ুন: গ্যালারি অন হুইলস: ইউনেস্কোর ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় রিকশা পেইন্টারদের কসমস ফাউন্ডেশনের সংবর্ধনা
বাংলাদেশে পহেলা ফাল্গুন উদযাপনের ঐতিহ্য শুরু হয় ১৪০১ বঙ্গাব্দে। এরপর থেকে সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় আনন্দঘন সাংস্কৃতিক আয়োজনের মধ্য দিয়ে নিয়মিত পহেলা ফাল্গুন উদযাপন করে আসছে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ।
বুধবার সকাল ৭টায় সংগঠনের আয়োজনের মধ্য দিয়ে চারুকলার বকুলতলায় পহেলা ফাল্গুন উৎসব শুরু হয়। বিকালে রাজধানীর উত্তরা রবীন্দ্র সরণি ও বাহাদুর শাহ পার্কে মুক্তমঞ্চে অনুরূপ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে বাতিঘরে ‘রাইজিং ইকোস’ শুরু
সেকেন্ডহ্যান্ড মোটরসাইকেল কেনার আগে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখা জরুরি
অন্যান্য যানবাহনের তুলনায় আকারে বেশ ছোট হওয়ায় যানজটের শহরে মোটরসাইকেলের জুড়ি মেলা ভার। ইঞ্জিনচালিত এই দ্বিচক্রযানে নেই প্যাডেল ঘুরানোর ক্লান্তি, সেইসঙ্গে দীর্ঘ যাত্রায় থাকে রোমাঞ্চের আনন্দ। এছাড়া নিত্যনৈমিত্তিক প্রয়োজনে বেরনোর সময় মুক্তি দেয় গাড়ি খোঁজার ঝামেলা থেকে।
এতসব সুবিধা একটু কম খরচে পেতে অনেকেই ঝুঁকে পড়েন পুরাতন মোটরবাইক কেনার দিকে। ব্র্যান্ডের নতুন মোটরবাইকে হাত দেওয়ার আগে এই যানগুলো ড্রাইভিংয়ে পরিপক্ক হওয়ার উপযুক্ত উপায়। তাই চলুন, সেকেন্ড হ্যান্ড মোটরসাইকেল কেনার সময় কোন বিষয়গুলোর প্রতি নজর রাখতে হবে তা জেনে নেওয়া যাক।
পুরাতন মোটরসাইকেল কেনার সময় যে ১০টি বিষয় যাচাই করা উচিৎ
বর্তমান বাজার মূল্য
বাজেট অনুযায়ী কাঙ্ক্ষিত বাইকটি পেতে প্রথমেই বাজারে তার বর্তমান অবস্থার ব্যাপারে খোঁজ-খবর করে নেওয়া জরুরি। এর ফলে কত দিন ব্যবহার করা হয়েছে এবং কোনো কিছু মেরামতো বা পরিবর্তন করা হয়েছে কি না- তা বিবেচনা করে দামদর করতে সুবিধা হবে। এজন্যে সহায়ক তথ্যের জন্য বাইক সংক্রান্ত নির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইটগুলো সহায়ক হতে পারে।
সরেজমিনে দেখার জন্য সরাসরি দোকানে চলে যাওয়াটা উত্তম। মূল্যের পরিধির ব্যাপারে স্বচ্ছ ধারণা নিয়ে তবেই বিক্রেতার সঙ্গে দেখা করা উচিৎ।
আরও পড়ুন: রয়্যাল এনফিল্ড-৩৫০: বাংলাদেশের প্রথম ৩৫০ সিসি মোটরবাইক
এক নজরে বাহ্যিক দর্শন
বিক্রেতার সঙ্গে দেখা করার সময় প্রথম দর্শনে বাইকের যতটুকু দৃষ্টিগোচর হচ্ছে তার সবটুকুই সুক্ষ্মভাবে খুঁটিয়ে দেখতে হবে। খেয়াল করতে হবে ফ্রেমে কোনো দাগ বা মরিচা পড়েছে কি না, সামনের ও পেছনের লাইটগুলো সঠিকভাবে জ্বলছে কি না এবং বসার সিট কভারে কোনো ছেঁড়া আছে কি না। বাইক স্টার্ট দেওয়ার চাবি কী হোলের ভেতর নির্বিঘ্নে ঢুকছে কি না এবং তা কোনো জ্যাম ছাড়াই ঘুরছে কি না- তা খতিয়ে দেখা জরুরি। চাকার কভার, হর্নের শব্দ এমনকি আয়নার মতো ছোট ছোট ব্যাপারও এ সময় এড়ানো যাবে না।
ইঞ্জিন, ট্রান্সমিশন ও ব্যাটারি
আসল যাচাইকরণ শুরু হবে ইঞ্জিন থেকে, যা বাইক স্টার্ট দেওয়ার সময়ই টের পাওয়া যাবে। ঠকঠক বা অস্বাভাবিক শব্দ হলে বোঝা যাবে বিয়ারিং বা ভালভে সমস্যা আছে। এর মাধ্যমে গিয়ারগুলো ঠিকমতো কাজ করছে কি না তথা ট্রান্সমিশনটাও যাচাই হয়ে যাবে।
ইঞ্জিন চালু করার সঙ্গে সঙ্গেই ইগ্নিশন লাইট জ্বলে উঠে কয়েক সেকেন্ড পর বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু লাইট জ্বলে থাকলে বুঝতে হবে ইঞ্জিনের বৈদ্যুতিক ব্যবস্থায় সমস্যা আছে। কোথাও কোনো রকম সংযোগ বিচ্ছিন্নতা কোনোভাবেই উপেক্ষা করা যাবে না। হেডলাইটের ক্ষীণ বা নিভু নিভু আলো মানেই দুর্বল ব্যাটারি। ব্যাটারির টার্মিনালগুলো পরীক্ষার জন্য সঙ্গে মাল্টিমিটার রাখার প্রয়োজন হবে। একটি সম্পূর্ণ চার্জযুক্ত ব্যাটারির হাইড্রোমিটার রিডিং ১২ দশমিক ৬ ভোল্ট হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন: বাজাজ পালসার এন-২৫০: বাংলাদেশের প্রথম ২৫০ সিসি বাইক
ক্লাচ, ব্রেক ও সাস্পেনশন
স্টার্ট থেকে শুরু করে গিয়ার ধরতে পারছে কি না তা যাচাইয়ের জন্য ধীরে ধীরে ক্লাচে চাপ বাড়িয়ে আবার একই ভাবে আস্তে করে ছেড়ে দিতে হবে। এই পুরো প্রক্রিয়ায় কোথাও জ্যাম অনুভূত হলে বা বাইকের বডি কেঁপে উঠলে ক্লাচে সমস্যা আছে। ভালো ক্লাচের ক্ষেত্রে বাইক চালু করার পর প্রথম গিয়ারে থাকাকালীন হাল্কা কম্পন দিয়ে ধীর গতিতে সামনে এগোনোর কথা।
এ অবস্থায় আলতো করে ব্রেক চেপে দেখে নেওয়া যেতে পারে তা কতটা মসৃণভাবে কাজ করছে এবং কোনো শব্দ না করে বাইক থেমে যাচ্ছে কি না। ভালো ব্রেকিং সিস্টেমে ব্রেক ছেড়ে দিলে বাইক মসৃণভাবে আগের গতিতে ফিরে যায়।
ব্রেক টানার সময় সাস্পেনশনটারও পরীক্ষা হয়ে যাবে। শক অ্যাবজরভার ভালো থাকলে খুব বেশি ঝাকুনি অনুভূত হবে না। এছাড়া থেমে থাকা অবস্থাতেও সিটে বসে হাল্কা বাউন্স করে দেখা যেতে পারে। এ সময় সিট সমেত বাহকের শরীর স্প্রিং না করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।
আরও পড়ুন: বিআরটিএ স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স যেভাবে করবেন
চাকা ও টায়ার
যত্ন নেওয়া মোটরবাইকগুলোর চাকা ও টায়ারগুলো বেশ নতুনের মতো থাকে। টায়ার রাবারের পুরুত্ব কমপক্ষে ১/১৬ ইঞ্চি হয়ে থাকে। এগুলো অনেক বছর হয়ে গেলে বা অযত্নে ব্যবহার হলে ছিড়ে যায়। অধিকাংশ মোটরসাইকেলের টায়ার প্রায় ৬ বছর পরে বদলে নিতে হয়। তাই টায়ার বদলের সময় কাছাকাছি হলে বিষয়টিকে বাইকের দরদামের সময় উত্থাপন করা যেতে পারে।
ছোট ছোট গর্ত বা কার্ব থাকা চাকা নেওয়া যাবে না। সামনের ও পেছনের চাকাগুলোর অ্যালাইনমেন্ট ঠিক আছে কি না তা যাচাই করতে হবে। ঘোরার সময় কোনো বাধা ছাড়াই চাকাগুলো ঘুরতে পারছে কি না সেদিকটাও দেখা দরকার।
রাস্তাঘাটে মোড় নেওয়ার জন্য বাইকের স্টিয়ারিং ডানে-বামে নিরবচ্ছিন্নভাবে ঘোরাতে পাড়াটা জরুরি। এটি পরীক্ষা করতে বাইককে কেন্দ্রীয় স্ট্যান্ডের উপর রাখলে সামনের অংশ মাটি থেকে কিছুটা উপরে উঠে যাবে। এতে বোঝা যাবে সামনের চাকা এবং হ্যান্ডেলবারগুলো মুক্তভাবে এদিক-ওদিক ঘোরানো যাচ্ছে কনা।
আরও পড়ুন: ২০২৩ সালে বিশ্বের শীর্ষ ১০ বিলাসবহুল গাড়ি
জ্বালানি ট্যাংক
অনেক পুরনো হয়ে গেলে জ্বালানি ট্যাংকের ভেতরটা অন্ধকার হয়ে যায়। ব্যবহারযোগ্য ট্যাংকে জ্বালানি থাকলে তা উজ্জ্বল দেখায়। এই রঙ বোঝার জন্য ট্যাংকের ক্যাপ খুলে টর্চ লাইটের সাহায্যে ভেতরে একদম নীচ পর্যন্ত ভালোভাবে দেখে নিতে হবে।
ফ্রেম
প্রথম দর্শনে এক নজরে দেখার সময়ই চোখে পড়বে বডির দাগ বা মরিচাগুলো। পরবর্তীতে বাইকের সামনে হ্যান্ডেলবার এবং ফর্কগুলোর অ্যালাইনমেন্ট যথাযথভাবে যাচাই করে নিতে হবে। এছাড়া বাইকের হেড টিউব বাইকের সিট বা আসন টিউবের প্রেক্ষিতে কিভাবে বেঁকে আছে- তা দেখতে হবে। কেননা এখানেও অ্যালাইনমেন্ট থাকা আবশ্যক। এছাড়া বিচ্ছিন্নতা বা ফাটল খুঁজে বের করার জন্য স্টিয়ারিং হেড বিয়ারিংও পরীক্ষা করে নেওয়া প্রয়োজন।
সার্ভিস রেকর্ড
মোটরসাইকেলের যন্ত্রাংশ নিরীক্ষণ শেষে এবার কাগজপত্র দেখার পালা। বাইকের পূর্বের অবস্থা যেমন- দুর্ঘটনা, নেমপ্লেট পরিবর্তন, ও কোনো অংশ মেরামতো হয়েছে কি না- সে ব্যাপারে সম্যক ধারণ দিতে পারে সার্ভিস রেকর্ড। পাশাপাশি বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলার সময় কিছু প্রশ্ন উত্থাপন করা যেতে পারে যেমন, বাইকটি বিক্রি করা হচ্ছে কেন, শেষ কবে বাইকটি চালানো হয়েছিল এবং কোন পার্টস মডিফাই বা পরিবর্তন করা হয়েছে কি না ইত্যাদি। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে- বাইকের মালিকানা এ পর্যন্ত কতবার পরিবর্তন হয়েছে।
আরও পড়ুন: আপনি কি মার্কিন ডলার না কিনে বিদেশে ভ্রমণ করতে পারবেন?
অনেক বার হাতবদল হয়ে থাকলে সাধারণত বাইকের পূর্বাবস্থার সম্পূর্ণ বিবরণ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। এর সঙ্গে মোটরসাইকেলের মেরামতের রেকর্ডও সম্পর্কিত। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ রেকর্ড মানে পূর্ববর্তী মালিকরা সময়মতো বাইকের সঠিক যত্ন নিয়েছিলেন।
কাগজপত্রের বৈধতা
একটি ঝামেলাহীন মোটরসাইকেল বেছে নেওয়ার জন্য এর কাগজপত্রের বৈধতা যাচাইকরণ অত্যাবশ্যক। এক্ষেত্রে প্রথমেই দেখতে হবে নিবন্ধন কার্ড এবং হালনাগাদকৃত ট্যাক্স টোকেন। বাইকের ইঞ্জিন এবং চেসিস নাম্বার নিবন্ধনপত্র বা কার্ড ও ট্যাক্স টোকেনের সঙ্গে মিলিয়ে নেয়া যেতে পারে। মেয়াদ উত্তীর্ণ নিবন্ধন বা ট্যাক্স টোকেন কোনো ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
সেই সঙ্গে যাচাই করতে হবে এই কাগজগুলোর সঙ্গে কোনো আইন সংক্রান্ত জটিলতা আছে কি না। মোটরবাইকটি কোনো মামলার সঙ্গে জড়িত আছে কি না, থাকলে তা নিষ্পন্ন হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখতে হবে। এক্ষেত্রে একটু অসাবধানতায় সমূহ বিড়ম্বনার শিকার হতে পারেন বাইকের নতুন মালিক।
আরও পড়ুন: নারীর একাকী ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ ১০ শহর
টেস্ট ড্রাইভ
যাবতীয় যন্ত্রাংশ খুটিয়ে দেখার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌছার আগে নিজে একবার মোটরসাইকেলটি চালিয়ে নেয়া উত্তম। এই টেস্ট ড্রাইভের জন্য অবশ্য বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকা আবশ্যক।
এই ব্যবহারিক নিরিক্ষণে ইঞ্জিন থেকে শুরু করে ব্রেক, ট্রান্সমিশন, সাস্পেনশন সবকিছুর কার্যকলাপ পরিষ্কারভাবে বোঝা যাবে। কিছুটা সময় নিয়ে চালানোর সুযোগ থাকলে মাইলেজের ব্যাপারেও একটা প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যাবে। সর্বতভাবে এই অভিজ্ঞতার আলোকেই ক্রেতা ঠিক করতে পারবেন যে, আসলেই বাইকটি তার কেনা উচিৎ কি না।
পরিশিষ্ট
পুরাতন মোটরসাইকেল কেনার সময় এই ১০টি বিষয় সামগ্রিকভাবে সঠিক যানবাহনটি বেছে নিতে সাহায্য করবে। এখানে ক্লাচ, ব্রেক, সাস্পেন্শন, চাকা ও বৈধ কাগজপত্র নিশ্চিত করবে সার্বিক নিরাপত্তার দিকটা। ব্যবহৃত যানটি আর কতদিন চালানো যাবে তা ঠিক হবে ইঞ্জিন, ব্যাটারি ও জ্বালানি ট্যাংকের মানের নিরিখে।
অবশ্য একটি মোটরযানের ন্যূনতম যোগ্যতার প্রত্যেকটি পূরণ করলেও পূর্ব ব্যবহারের ভিত্তিতে যান্ত্রিক ত্রুটির কমবেশি হয়ে থাকে। উপরন্তু, শতভাগ ত্রুটিহীনতার সম্ভাবনা থাকে না মেনে নিয়েই সকলে কিনে থাকেন সেকেন্ড হ্যান্ড মোটরসাইকেল।
আরও পড়ুন: ঢাকায় গাড়ি চালানো শেখার জন্য কয়েকটি নির্ভরযোগ্য ড্রাইভিং ট্রেনিং সেন্টার