বুধবার ক্ষতিপূরণের অর্থ দেয়ার অগ্রগতি নিয়ে শুনানিতে বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের বেঞ্চ গ্রিন লাইনের আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা অনেক নমনীয়ভাবে কথা বলেছি। গ্রিন লাইন কর্তৃপক্ষ কখনো বলেনি যে আমাদের এই সমস্যা, আমরা এত টাকা দিতে পারব না। আবার রাসেলের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি মীমাংসা করারও চেষ্ট করেনি। যারা ব্যবসা করেন তাদের মানবিক মূল্যবোধ থাকা উচিত। কিন্তু এ ক্ষেত্রে গ্রিন লাইন কর্তৃপক্ষের আচরণ আমাদের কাছে ভালো লাগেনি।’
শুনানির শুরুতে গ্রিন লাইনের আইনজীবী মো. ওজিউল্লাহ জানান, পরিবহন কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষ তার সাথে যোগাযোগ করেনি। আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নের বিষয়েও বলেনি। তাদের আচরণে তিনি খুশি নন। তাই গ্রিন লাইনের পক্ষ থেকে মামলা পরিচালনার ক্ষমতা প্রত্যাহার করার কথাও বলেন এ আইনজীবী।
এ সময় আদালত বলে, ‘আপনি আনুষ্ঠানিকভাবে আপনার যা মত, তা করতে পারেন। আমরা পর্যালোচনা করে পদক্ষেপ নেব।’
ওজিউল্লাকে আদালত আরও বলে, ‘আপনি যেহেতু এখন পর্যন্ত তাদের আইনজীবী আছেন, আপনি তাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। নমনীয়তাকে দুর্বলতা মনে করার কোনো কারণ নেই। আমাদের কঠোর হতে বাধ্য করবেন না।’
পরে আদালত এ বিষয়ে শুনানির জন্য অবকাশকালীন ছুটির পর ২৫ জুন পরবর্তী তারিখ ধার্য করে।
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এম সাইফুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
গত ১০ এপ্রিল রাসেলকে ক্ষতিপূরণ বাবদ পাঁচ লাখ টাকার চেক দেয় গ্রিন লাইন। সেই সাথে কোম্পানিটির সময় আবেদন মঞ্জুর করে বাকি ৪৫ লাখ টাকা ৩০ দিনের মধ্যে দিতে নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। এছাড়া, দেশের মধ্যে যেখানে কৃত্রিম পা সংযোজনসহ ভালো চিকিৎসা হয় সেখানে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে বলা হয়। কিন্তু বাকি টাকা আর পরিশোধ করেনি গ্রিন লাইন।
রাসেল সরকার (২৩) ভাড়ায় চালিত প্রাইভেট কারের চালক। গত বছরের ২৮ এপ্রিল রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের ধোলাইপাড় এলাকায় গ্রিন লাইন পরিবহনের একটি বাস তার গাড়িকে ধাক্কা দেয়। পরে গাড়ি থামিয়ে বাসের সামনে গিয়ে বাসচালককে নামতে বলেন রাসেল। তখন বাসের চালক ও রাসেলের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে গ্রিন লাইন পরিবহনের চালক কবির হোসেন বাস চালানো শুরু করেন।
তখন রাসেল সরতে গেলে ফ্লাইওভারের রেলিংয়ে আটকা পড়েন। তার পায়ের ওপর দিয়েই বাস চলে যায়। এতে তার বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এরপর পথচারীরা রাসেলকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে গাড়িসহ চালক কবিরকে আটক করে।
এ ঘটনায় হাইকোর্টে রিট করেন সংরক্ষিত আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য উম্মে কুলসুম স্মৃতি। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ১৪ মে রাসেলকে কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে হাইকোর্ট।
পরে গত ১২ মার্চ হাইকোর্ট রাসেলকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার পাশাপাশি তার চিকিৎসার খরচ দিতে গ্রিন লাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়। এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে গিয়ে ৩১ মার্চ বিফল হয় গ্রিন লাইন।