বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) নিজ দপ্তরে বাংলাদেশে নবনিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াটলি'র সঙ্গে সাক্ষাত শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে তাদের বিভিন্ন প্রজেক্ট আছে সেগুলো নিয়ে আলাপ হয়েছে। আমাদের ভিলেজ কোর্ট নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ইউরোপের কয়েকটি দেশ আমাদের ফাইন্যান্স করে এবং টেকনোলজিক্যাল সহায়তা করে। আমাদের কয়েকটি জেলায় এটি পাইলট প্রজেক্ট আকারে চলছিল, আমি তাদের অনুরোধ করেছিলাম তারা সারা বাংলাদেশে একসঙ্গে ভিলেজ কোর্ট চালু করতে চাচ্ছি। এটি চালু করার জন্য তাদের আর্থিক সাহায্যের জন্য বলেছিলাম। বাংলাদেশ সরকার এবং তারাও সেটি করবে। তারা শেষ পর্যন্ত রাজি হয়েছে, তারা ২৮.৩৭ মিলিয়ন ডলার দেবে আর ২৫ মিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ সরকার দেবে।
মন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকটি ইউনিয়ন পরিষদে একটি কোর্ট থাকবে। ভিলেজ কোর্টের আইনও হয়েছে, সেমিনার হয়েছে। গ্রামে যে ছোট সমস্যাগুলো হয়, যেগুলো মামলা মোকাদ্দমা হলে কোর্টে গেলে উভয়পক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, অনেক সময় ব্যয় হয় এবং কোর্টের ওপর চাপ পড়ে। সেটি যাতে এ পর্যায়ে নিষ্পত্তি করা যায়। আমরা একসঙ্গে মিলে গ্রাম্য আদালত চালু করব।
তিনি আরও বলেন, লোকাল গভর্নমেন্ট ইনেশিয়েটিভ অন ক্লাইমেট চেঞ্জ প্রজেক্টের জন্য তাদের ফাইন্যান্স ছিল। এখন এটাও শেষের পথে। এটি মূলত কোস্টাল এড়িয়াতে যে সমস্ত সাইক্লোনসহ দুর্যোগে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তারা যাতে মাইগ্রেট না করে অলটারনেটিভ জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা করা যায়- এ ধরনের কাজের জন্য তারা দ্বিতীয় ধাপে অর্থায়ন করতে সুইডিস রাষ্ট্রদূত, ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূতসহ কয়েকজন আমার সঙ্গে বসার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
তিনি আরও বলেন, কোস্টাল এড়িয়াতে শুকনো সময় আমাদের পানি স্বল্পতা থাকে, পান করার পানির খুব অসুবিধা হয়। সেকারণে এখানে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়। এগুলোর জন্য আমি নিজে উদ্যোগ নিয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে টেকনোলজি সংগ্রহ করেছি। স্যালাইন ওয়াটারকে স্যোলার বিদ্যুতের মাধ্যমে ময়েশ্চার তৈরি করা হবে। সেটিকে পানি বানাবে, স্কুলগুলোতে যেনো পানি দেয়া যায় সেজন্য পরীক্ষাষা নিরীক্ষা করছি। এটার ভালো রেজাল্ট আমাদের কাছে আছে। আমরা তাদের বলেছি আমরা একটি প্রজেক্ট করতে চাচ্ছি যেখানে ৫০০ কিংবা এক হাজার কোটি টাকা আপাতত লাগবে, সেটি যদি তারা অর্থায়ন করতে চায়। তারা সে বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে, তারা নিজেদের মধ্যে আলাপ করে যদি আর্থায়ন করে আমাদের সঙ্গে জয়েন করে তাহলে আমরা কাজটি করব। টেকনলজিটা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে কোস্টাল এরিয়ার স্কুলগুলোতে বাচ্চারা ড্রিংকিং ওয়াটারটা পাবে।
আরও পড়ুন: দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে সরকার: স্থানীয় সরকারমন্ত্রী
ইইউ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে রাজনৈতিক কোন বিষয়ে আলাপ হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, গতকাল বিএনপির সাথে কি মিটিং করেছে আমি জানি না। আমার এখানে আলোচনাতে এইটুকু কথা বলেছে আর্মস্টারডমের চেয়ে বাংলাদেশকে এখন অনিরাপদ মনে করা যায় না এ মূহুর্তে। বিচার বহির্ভূত হত্যার বিষয়ে তিনি বলেছেন, গত আর্মস্টারডমে একজন টেরোরিস্ট একজনকে গলায় ছুড়ি ধরে কেটে ফেলেছিল। পুলিশ তাকে তাৎক্ষণিক গুলি করে মেরেছে। আমি বলেছি বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত এখানে অনেক টেরোরিজম ছিল, অনেক আইনগত ত্রুটি ছিল। এসমস্ত কারণ হয়ত আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর লোকেরা এ রকম পরিস্থিতি কখনো কখনো মোকাবিলা করেছে। এখন তো দেশের এ অবস্থা নাই। আমাদের দেশ তো এখন ইউরোপের অনেক দেশের মতোই নিরাপত্তা অনেকটা উন্নত হয়েছে। এ বিষয়ে তারা সন্তোষ প্রকাশ করেছে।
জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কথা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচন নিয়ে তো তার কথা বলার কথা না। কারণ জাতীয় নির্বাচন আমাদের দেশের নির্বাচন। আমরা হয়ত কোন কোন ব্যাপারে তার সঙ্গে শেয়ার করতে পারি। কিন্তু ভোট নিয়ে বাইরের কেউ কথা বলুক এটা আমার নিজেরও অপছন্দের। সারা পৃথিবীতে নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক আছে, আমাদের দেশেও নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক আছে। কোথাও যদি কখনো দরকার হয় আমরা ব্যাখ্যা করি। জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কারো আগ্রহ থাকলে কেউ জানাতে পারে। কিন্তু এখানে কারো খবরদারি করা বা নাক গলানো আমাদের মর্যাদাহানীকর। পৃথিবীতে যেখানে যেখানে তারা নাক গলিয়েছে সেখানে শান্তি নাই। এক্ষেত্রে ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া, আফগানিস্তানের কথা বলতে পারি, তারা কি শান্তি পেয়েছে।
বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বিএনপি সংলাপ করে নালিশ দিচ্ছেন, আপনি এ বিষয়টিকে কিভাবে দেখছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিএনপি একটি রাজনৈতিক দল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে জিয়াউর রহমান সাহেবের হাত ধরে, তিনি সামরিক শাসক হিসাবে এই দলেলে আত্মপ্রকাশ করেছেন। আমরা আওয়ামী লীগ দেশের স্বাধীনতার নেতৃত্ব দিয়েছে। যারা দেশটা চেয়েছে তাদের কাছে তো দেশটা গুরুত্বপূর্ণ। আর যারা চায়নি তাদের কাছে দেশের যেকোন কিছু হলে তো অসুবিধা নেই। অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নিজেরা আলোচনা না করে বাইরে গিয়ে আলোচনা করলে দেশকে ছোট করা হয়। সারা বিশ্বে ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে দ্রব্যমূল্য বাড়ায় মানুষের অনেক কষ্ট হচ্ছে। সে তুলনায় আমাদের এখানেও দ্রব্যমূল্য বেড়েছে, কিন্তু পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশের তুলনায় আমাদের অবস্থা ভালো আছে।
আরও পড়ুন: বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পদ্মা সেতু দুই যুগেও হতো না: স্থানীয় সরকারমন্ত্রী